#তোমার_হতে_চাই ২
part : 5
writer : Mohona
.
মেরিন : থাকবো আমি।
তখন নীড় বই হাতে ওর টেন্ট থেকে বের হলো। ওকে দেখে মেরিনের হিচকি উঠলো।
হানি : ওয়েট তোমার জন্য পানি নিয়ে আসি।
নীড় কিছু না বলে নিজের টেন্ট থেকে পানির বোতল নিয়ে এলো। বেরিয়ে দেখে মেরিন নেই। সবাই খাওয়া দাওয়া করলো । ২টা গ্রুপ সবাই সবার সাথে পরিচিত হলো। নীড় এক কোনে বসে বই পড়ছে । আর মেরিন টেন্টের ভেতর। নীড় বই পড়ার ফাকে ফাকে মেরিনের টেন্টের দিকে নজর রাখছে। সবাই আনন্দ করছে। আড্ডা দিচ্ছে । কাপলরা রোম্যান্স করছে।
নীড় : যদিনা আমাদের জীবনে ঝামেলা হতো আমাদের জীবনটাও আর ৫টা কাপলের মতো রঙ্গীন হতো। তবে হয়তো ফাটাফাটি যুদ্ধ হতো রোজ। কখনো ও আমার মুখ ফাটাতো আবার আমি ওর নাক ফাটাতাম।
বলতে বলতে নীড় নিজেই হেসে দিলো।
নীড় : অদ্ভুত তুমি আমি।
বেশ কি়ছুক্ষন থেকে নীড় নিজের টেন্টে গেলো।
নীড় : যথেষ্ট ঠান্ডা তো। কে জানে লালঝুটি কাকাতুয়া ব্ল্যাংকেট এনেছে কিনা? সোয়েটার পরেছে তো? লেট মি চেক।
নীড় টেন্ট থেকে বেরিয়ে ভরভর করে মেরিনের টেন্টে ঢুকে গেলো। মেরিন উল্টো দিকে ঘোরা। কারো আভাস পেয়ে পেছন ফিরলো। দেখে নীড় দারিয়ে আছে। চিল্লানি মারতে নিলে নীড় ওর মুখ চেপে ধরলো।
নীড় : আরে নানীআম্মা এটা আমি। তোমার ক্ষীরবাদুর। রিল্যাক্স ।
মেরিন : তুমি আমার টেন্টে না বলে ঢুকলে কেনো?
নীড় : তোমার টেন্টে ঢুকতে হলে আমাকে বলতে হবে কেনো?
মেরিন : কেনো মানে? কোনো মেয়ের টেন্টে তুমি না বলেই ঢুকে যাবে?
নীড় : তুমি মেয়েনাতো। তুমি তো লালঝুটি কাকাতুয়া।
মেরিন : আমি কি?
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া।
মেরিন : কি?
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া।
মেরিন : আবার বলো।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া লালঝুটি কাকাতুয়া লালঝুটি কাকাতুয়া।
মেরিন মনেমনে হাসলো।
মেরিন : আর তুমি ক্ষীরবাদুর। এখন যাও আমি ঘুমাবো।
নীড় : থাকতে আসিনি তোমার টেন্টে।
মেরিন : থাকতে দিবোনা তোমাকে আমার টেন্টে।
নীড় : ইউ আর ডিসগাস্টিং।
মেরিন : সেইম টু ইউ। হুহ।
নীড় নিজের গায়ের জ্যাকেটটা খুলতে লাগলো। মেরিন বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।
মেরিন : ককি করছো তুমি? জ্যাকেট খুলছো কেনো? আমি কিন্তু চেচাবো।
নীড় : ওয়… ব্রেইনলেস বিমবো। ১টা থাপ্পর দিবো। নরমাল কিছু মাথায় আসেনা? বাদর কোথাকার।
মেরিন : তুমি তুমি তুমি।
নীড় : আরেকটুখানি এই টেন্টে থাকলে পাগল হয়ে যাবো।
মেরিন : থাকতে বলেছে কে তোমাকে?
নীড় নিজের জ্যাকেটটা মেরিনের দিকে এগিয়ে দিলো।
নীড় : এটা রাখো। আরো ঠান্ডা পরবে ।
মেরিন : এক্সকিউজ মি তুমি আমাকে কি মনে করো?
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া।
মেরিন : তোমার কি মনেহয় আমি শীতের পোশাক ছারাই এখানে এসেছি?
নীড় : যা পরে আছো তাতে কতোটুক শীত কমবে জানা আছে।
মেরিন ব্যাগ থেকে আরো ১টা লং জ্যাকেট বের করে আনলো।
মেরিন : আমার কাছে আরো আছে বুঝেছো? সো আই ডোন্ট নিড ইউরস।
নীড় : ওকে ওকে। গুড নাইট।
মেরিন : গুড নাইট।
নীড় : চেইন টেনে দাও টেন্টের।
মেরিন : তুমি না বললেও দিবো।
নীড় : এতোক্ষন টাননি কেনো তাহলে?
মেরিন : জেগে ছিলাম তাই।
নীড় : ঘুমানোর পর লাগাবা?
মেরিন : হামম।
নীড় : তুমি কি লেভেলের ইডিয়ট সেটা জানো?
মেরিন : হ্যা জানি।
নীড় বেরিয়ে যেতে নিলো।
মেরিন : দারাও।
নীড় : কি হলো?
মেরিন ওর ফ্লাস্ক নীড়ের দিকে এগিয়ে দিলো।
মেরিন : ধরো।
নীড় : এটা আমাকে দিচ্ছো কেনো?
মেরিন : কারন রাতে ঘুমানোর আগে তোমার কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে।
নীড় : তো?
মেরিন : তো মানে কি? কফি এনেছো । বাট ফ্লাস্কতো আনোনি। খাবে কি করে কফি?
নীড় : হাও ডু ইউ নো?
মেরিন : ২১বছর ধরে চিনি তোমাকে। ২২এ পরেছে।আমি জানিনা তুমি কি? ধরো।
নীড় কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো মেরিনের দিকে । এরপর চলে যেতে নিলে মেরিন নীড়ের হাত ধরলো। ওর হাতে ফ্লাস্কটা দিয়ে দিলো । নীড় আর এক মুহুর্তও দেরি করে নীড় চলে গেলো।
.
সকাল ১০টা…
মেরিনকে ডেকে ডেকে হানির গলা ভেঙে গেলো তবুও মেরিনের ঘুম ভাঙেনা। হানির চিৎকারে নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো । ও বেরিয়ে এলো।
হানি : ক্যাম্পিং এ এসে কেউ এতো ঘুমায় মেরিন? তুমি তো এতো ঘুমাওনা মেরিন । আজকে হঠাৎ কি হলো? ও মেরিন…
নীড় মনেমনে : এই মাথামোটা বলে কি? লালঝুটি কাকাতুয়া এতো ঘুমায়না! চিনেইনা আমার কাকাতুয়াকে। আর আমি একে কি ভেবেছিলাম?
মেরিন বেরিয়ে এলো।
মেরিন : কি হলো হানি এতো চিল্লাচ্ছো কেনো?
হানি : এতো লেইট করে কেউ ওঠে ক্যাম্পিং এ? তোমার কাছ থেকে এমন ইমম্যাচ্যুরিটি এক্সপেক্ট করিনি মেরিন।
মেরিন : এই যে হ্যালো আমি যখন ঘুম থেকে উঠেছিনা তখন তোমরা কেউ ওঠোনা। উঠে চারদিক ঘুরে একটু আগে শুয়েছি। হেডফোন ছিলো কানে , আর চোখটাও লেগে গিয়েছিলো।
হানি : ওহ। আচ্ছা তুমি কি এখন বের হবে আমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট করে?
মেরিন : হামম। তুমি যাও। আমি আসছি।
হানি চলে গেলো।
নীড় : যা বললেম তা কতোটুকু সত্যি?
মেরিন : নন অফ ইউর বিজনেস।
বলেই মেরিন টেন্টে ঢুকলো।
নীড় মনেমনে : কেনো যেনো মনে হচ্ছে এও আমার মতো সবার সামনে নিজেকে সিরিয়াস প্রমান করে। কিন্তু মূলঘরে যা ছিলো তাই আছে।
সবাই ঘুরতে বের হলো। মেরিনের সব অদ্ভুত কর্মকান্ড আর কারো চোখে না পরলেও নীড়ের চোখ এরালোনা। খুব হাসি পাচ্ছে নীড়ের।
নীড় : ইউ আর মাই লালঝুটি কাকাতুয়া। কিভাবে তোমাকে ভালো না বেসে থাকা যায় বলো তো আল্লাহ? এই এক পিস মাস্টারপিস।
.
বিকালে…
মেরিন : ওদের তো বলে টলে এলাম যে আমি একা যেতে পারবো। ভয় পাইনা। কিন্তু ভয়ের চোটে গলা তো গলা মস্তিষ্ক পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছে। পানি। ওহ আল্লাহ পানির বোতল পর্যন্ত আনিনি। ওটা কিসের শব্দ? শিয়াল না বাঘ? না না এখানে শিয়াল বাঘ আসবে কোথায় থেকে? বেশি ভাবছি। ভয় পেলে মানুষ কি কি না ভাবে। আমি ভাবছি ক্ষীরবাদুরের কথা। মানলাম স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এখন নেই। কিন্তু ১টা অদ্ভুত সম্পর্ক তো আছে আমাদের। একটু এলোওনা সাথে। আআ… সাপ সাপ সাপ। না না এটা তো ১টা ডাল। এক কাজ করি এই ডালটা হাতে রাখি। আচ্ছা আমি ঠিক পথে এগোচ্ছি তো? দেখি তো ম্যাপ । ঠিকই আছে। আমি কি বোকা নাকি!
বকবক করতে করতে মেরিন যাচ্ছে। হঠাৎ দেখে গাছে একটা সাপ।
মেরিন : আআ…
মেরিন উল্টা দিকে দৌড় মারলো। একটু যেতেই দেখে নীড় আসছে। ছুটে গিয়ে লাফিয়ে বানরের মতো করে নীড়ের কোলে চরলো। নীড় ঢোক গিলল। মেরিন এতো কাছে!
নীড় : কি হলো?
মেরিন : সাপ।
নীড় : ইটস কমন হেয়ার। নামো।
মেরিন : উহু।
নীড় : নামো।
মেরিন : উহু…
নীড় : আশ্চর্য্য ।
মেরিন : পানি খাবো।
নীড় : নামো তো।
মেরিন : উহু।
নীড় : পাবো কোথায় পানি? মিডিলে আছি। এখান থেকে গ্রুপ যতো দূর টেন্টও ঠিক ততোটাই দূর । আচ্ছা টেন্টের দিকেই যাই।
মেরিন : ওদিকে সাপ।
নীড় : শাট আপ।
নীড় ওভাবেই হাটতে লাগলো । মেরিন এতোকাছে এভাবে থাকায় অদ্ভুত সব অনুভূতির আন্দোলন চলছে। তারওপর মেরিন ওর দিকে তাকিয়েই আছে। নীড় বারবার ঢোক গিলছে । দুজন একইসাথে বলে উঠলো…
নীড় : তুমি একটু অন্যদিকে তাকাবা প্লিজ।
মেরিন : তুমি বারবার ঢোক গিলছো কেনো?
দুজন থেমে গেলো।
মেরিন : তুমি বারবার ঢোক গিলছো সেটাই দেখছিলাম ।
নীড় : তুমি খুব ভারী তাই বারবার ঢোক গিলছি।
মেরিন : আমি ভারী? তাহলে ওই শাকচুন্নীটা কি শুনি?
নীড় : কোন শাকচুন্নী?
মেরিন : ওই যে ওই এয়ারপোর্টের শাকচুন্নী।
নীড় : ইউ মিন হিয়া!
মেরিন : হিয়া না টিয়া তা জানিনা। শাকচুন্নী তা জানি। ও কোলে উঠলে খুব ভালো লাগে তাইনা? ওই মাতাল শাকচুন্নীকে পিঠে করে নিয়ে ঘুরতেও ভালো সমস্যা নেই। তাইনা?
নীড় : ১মিনিট ১মিনিট তুমি কি সেদিন ওই রেস্টুরেন্টেও ছিলে নাকি?
মেরিন : হ্যা ছিলাম। খুব ভালো লাগে হিয়া হিয়ার মধ্যে ঢুকে গেলে।
নীড় : নাথিং লাইক দ্যাট। এয়ারপোর্টে তো আর আমি ওকে ইচ্ছা করে কোলে নেইনি। ও লাফিয়ে এসেছিলো । আর ওকে আমি ঝাড়ি দিয়ে নামিয়েও দিয়েছিলাম।
মেরিন : আরে একদম মিথ্যা কথা বলবেনা বলে দিলাম।
নীড় : মিথ্যা বলছিনা। সত্যিই ওকে ঝারি মেরে নামিয়েছিলাম। আর তাইতো ও রাগ করে মাতাল হয়ে মাতলামো করছিলো। ওখানে থাকলে আরো বেশি মাতলামো করতো। তাই তখন জোর করে ওকে ওভাবে নিয়ে যাই।
মেরিন : আহাহা… ও জাহান্নাম করুক তাতে তোমার কি? ভালোবাসো বললেই পারো।
নীড় : নো নো নো। আমি ওকে ভালোবাসিনা। ট্রাস্ট মি। আমি ওকে বিন্দুমাত্রও ভালোবাসিনা। আমি তো…
নীড়ের কথা বলতে বলতে খেয়ালই যে ১টা গাছের দিকে যাচ্ছে। মেরিন গাছের সাথে পিঠে বারি খেলো।
মেরিন : আ…
নীড় : ওহ সরিসরি। আসলে খেয়ালই করিনি।
মেরিন : হুহ।
ওরা ক্যাম্পসাইটে পৌছালো। মেরিনকে বসিয়ে নীড় পানি আনতে গেলো।
মেরিন : ক্ষীরবাদুর ওই শাকচুন্নীকে ভালো লাগেনা। কি মজা কি মজা কি মজারে রে রে।
লাফাতে লাফাতে দেখে নীড় ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
নীড় : তুমি কি এলিয়েন?
মেরিন কিছু না বলে টেন্টের ভেতর চলে গেলো।
.
২পরদিন…
নীড় কেবল খাবার মুখে দিতে নিলো। তখন মেরিন এসে ওর হাত থেকে খাবারটা নিয়ে নিলো।
নীড় : তুমি নিলে কেনো আমারটা?
মেরিন : এটাতে পিনাট বাটার আছে। যেটাতে আপনার অ্যালার্জী আছে ক্ষীরবাদুর আংকেল।
নীড় : আংকেল!
মেরিন : হামম আংকেল।
নীড় : যাই গিয়ে অন্য খাবার নিয়ে আসি ।
মেরিন : যাও যাও।
নীড় গিয়ে দেখে দুপুরের খাবারের আয়োজন হচ্ছে। ক্যাপসিকাম , মাশরুম।
নীড় : এই যে মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
হানি ছারা আশেপাশে আর কেউ নেই ।
নীড় : তোমাকেই ডাকছি। কাম।
হানি এলো ।
হানি : আমার নাম হানি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নয়।
নীড় : হানি তো। এই মাশরুম আর ক্যাপসিকাম কেনো?
হানি : লাঞ্চের জন্য।
নীড় : সবকিছুতেই এসব থাকছে?
হানি : হামম।
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়া না তো এগুলো খায় আর না সহ্য করতে পারে। মাশরুমে তো অ্যালার্জীও আছে । সো অন্যকিছুর ব্যাবস্থা করো।
হানি : সে না হয় করবো। কিন্তু লালঝুটি কাকাতুয়াটা কে?
নীড় : মেরিন।
এই ক্যাম্পিং এ নীড়-মেরিন অনেকটা আগের মতো হয়ে গিয়েছে একে অপরের সাথে।
.
পরদিন…
নীড় মোবাইলে মেরিনের ছবি দেখছে।
নীড় : আবার নতুন করে তোমার প্রেমে পড়েছি । তুমি কি পরেছো? এবার আর আগের ভুল করবোনা। ভালোবাসার কথা বলে দিবো তোমাকে। যা হয়েছে যা হবে আই ডোন্ট কেয়ার। ভালোবাসি সেটা বলে দিবো।
মেরিন : আ…
নীড় : লালঝুটি কাকাতুয়ার আওয়াজ না!
নীড় ছুটে বের হলো। দেখে মেরিন মাথায় হাত বুলাচ্ছে। আরেক হাতে বল।
নীড় : আর ইউ ওকে?
মেরিন : হামম।
হানি ছুটে এলো।
হানি : সরি মেরিন।
মেরিন ছোট করে হাসি দিলো।
হানি : গিভ মি দ্যা বল প্লিজ ।
মেরিন : বল…
হানি : হামম।
মেরিন পেছন দিকে বলটা ছুরে মারলো।
হানি : টু রুড সফ্টি। ।
মেরিন : হুহ।
বলেই মেরিন চলে গেলো।
হানি : এখন আমি বলটা কোথায় খুজবো? ধ্যাত। এই মেয়ে বড্ড একরোখা।
আড্ডায় আড্ডায় রাত হয়ে গেলো। সবাই বোন ফায়ারের সামনে বসে আছে। পাসিং দ্যা পার্সেল খেলছে । নীড়ের কাছে পার্সেল এলো। ওকে বলা হলো গান গাইতে ।
মেরিন মনেমনে : এর গানের কন্ঠ যে খারাপ এ আবার কি গান গাইবে? অবশ্য জীবনে তো একে গান গাইতে শুনিইনি।
নীড় গান গাইতে লাগলো।
🎶🎵🎶
সারারাত ভোর
চোখের ভেতর
স্বপ্নে তোমার আনাগোনা
নেমে আসে ভোর
থাকে তবু ঘোর
হাওয়ায় হাওয়ায় জানাশোনা
তুমি দেখা দিলে তাই
মনে জাগে প্রেম প্রেম কল্পনা
আমি #তোমার_হতে_চাই
এটা মিথ্যে কোনো গল্পনা।
🎶🎵🎶
নীড় গানটা গাইলো আর একটু পরপর মেরিনের দিকে তাকালো।
মেরিন মনেমনে : যদি তোমার গানের কথা হতে পারতাম! আমার জন্যই কি তোমার এই গান? না না। সেকি করে হয়? বেশি আশা করা ভালোনা মেরিন। কষ্টও বেশি হবে। পরে সহ্য করতে পারবিনা।
.
২ঘন্টাপর…
সবাই ঘুম । মেরিন দারিয়ে আছে। চুলগুলো উড়ছে। এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও এক অস্থিরতা কাজ করছে। ঘেমে যাচ্ছে। তখন এক ঝলক শীতল হাওয়ার মতো নীড় পাশে এসে দারালো।
নীড়: ভয় করছেনা…! কেনো একা একা দারিয়ে আছো?
মেরিন : এমনি। গুমোট লাগছিলো। তাই এখানে এলাম।
নীড় : হামম।
মেরিন : গুড নাইট।
বলেই মেরিন চলে যেতে নিলো। তখন নীড় ওর হাত ধরলো।
মেরিন : আমার হাত ছেরে দাও ক্ষ… নীড়।
নীড় : নীড়!
মেরিন : হামম নীড়। আমরা এখন আর অবুঝ দিনে নেই। হাত ছারো ।
নীড় : হামম ছারবো তো। কিন্ত তার আগে …
নীড় মেরিনকে খানিকটা নিজের কাছে এনে নিজের দিকে ঘুরালো ।
নীড় : আমার কিছু বলার ছিলো ।
মেরিন : আমার কিছু শোনার নেই। ছারো।
নীড় : তোমার মুখ বলছে তুমি জানো আমি কি বলতে চাই।
মেরিন : আমি কিছু জানিনা।
নীড় : আমার দিকে তাকাও ।
মেরিন তাকালো । নীড় মেরিনের গালে হাত রাখলো ।
নীড় : আমরা কি আবার এক হতে পারিনা!
মেরিন নীড়ের হাত সরিয়ে দিলো।
মেরিন : না। আমরা কোনো প্রেমিকযুগল ছিলামনা যে যাদের ব্রেকআপ হয়েছিলো। আমরা স্বামী-স্ত্রী ছিলাম। ডিভোর্স হয়েছে। সো আমাদের কাছে কোনো অপশন নেই। আর তাছারাও আমার জীবনে কেউ আছে। আর তাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি।
নীড় : মিথ্যা কথা।
মেরিন : সত্যি কথা।
নীড় : আমার চোখে চোখ রেখে বলো।
মেরিন চোখে চোখ রেখে বলল। নীড়ের চোখ ছলছল করে উঠলো।
নীড় : এটা হতে পারেনা। কিছুতেই হতে পারেনা । তুমি আমার। শুধু আমার। আমি ভালোবাসি তোমাকে।
মেরিন : ছারো আমার হাত।
নীড় : না ছারবোনা।
মেরিন : বললামনা ছারো হাত।
নীড় : না ছারবোনা । তুমি আমার। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মেরিন : আর আমি তোমাকে ঘৃণা করি।
নীড়ের হাত থেকে মেরিনের হাত ছুটে গেলে। আর নীড়েরও ঘুম ভেঙে গেলো। নীড় উঠে বসলো। জোরেজোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। ব্ল্যাংকেটটা ছুরে মারলো শরীর থেকে। সোয়েটার খুলল। ঘেমে অস্থির হয়ে গিয়েছে।
নীড় : স্বপ্ন ছিলো। নিছক স্বপ্ন । খারাপ স্বপ্ন। খুবই খারাপ স্বপ্ন । লালঝুটি কাকাতুয়ার জীবনে কেউ আসতে পারেনা। ও কেবল আমাকে ভালোবাসে। হ্যা আমাকে ভালোবাসে। আমি জানি। জানি আমি।
.
বাংলাদেশে…
কবির : কেনো বিয়ের পেছনে পরলে বলো তো কনা?
কনিকা : তো কি করবো? মেয়েটা কি সারাজীবন এমনই একা থাকবে? বিয়ে তো দিতে হবে নাকি? কথা তো বলতে হবে নাকি? জীবন তো আর শেষ হয়ে যায়নি।
কবির : আমি মামনির সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবোনা।
কনিকা : বাবু তুই?
রবিন : সরি আপু। আমিও পারবোনা। আমার পক্ষেও সম্ভব নয়।
সনি : আমি একটা কথা বলি?
কনিকা : বলো।
সনি : ভাইয়া , রবিন তোমরা মেরিনকে এগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেনা বুঝলাম। কিন্তু… মেরিন কি কখনো মুখ ফু্টে বলবে আমি বিয়ে করতে চাই? কোনো মেয়ের পক্ষে কি বলা সম্ভব? ট্রাই তো করা উচিত আমাদের ।
রবিন : বুুঝতে পারছি তুমি কি বলতে চাইছো। কিন্তু কোন সাহসে কোন মুখে বলবো বলো তো? কিভাবে বলবো। ওর জীবনটা এমন ছন্নছারা হওয়ার জন্য আমিই দায়ী। আমার জন্যই সব হয়েছে। আমিই ছক কষেছিলাম।
কবির : কেনো নিজেকে দোষ দাও বারবার বলো তো? তোমার দোষের সাথে আমারও দোষ।
কনিকা :দোষ কারোনা। ওসব ভাগ্য। তা না হলে বিয়ে থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরও কারো বিয়ে হয়? তোমরাই বলো।
.
চলবে…