#মিশে_আছি_তোমাতে ❤
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_12
তিশা ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে আবির রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য।
“একি আপনি ফ্রেশ হবেন না?”
“ফ্রেশ হয়ে নিয়েছি অন্য ওয়াসরুম থেকে।”
“ওও আচ্ছা! আমাকে কলেজে একটু দিয়ে আসবেন। গতকাল তো কলেজে যেতেই পারি নি।”
আবির চোখ বড় বড় করে তিশার দিকে তাকিয়ে অভিনয় করে বলে, “এই কি আমি শুনলাম তুমি আমাকে বলছো তোমায় কলেজে দিয়ে আসার জন্য। আমি সত্যি শুনেছি নাকি স্বপ্ন দেখছি।”
“শুনুন এত অভিনয় করবেন না কলেজে আমাকে দিয়ে আসতে পারবেন কি না আমাকে সেটা বলেন?”
“আচ্ছা বাবা সরি তোমাকে আমি কলেজে দিয়ে আসব। তুমি রেডি হয়ে নিচে আসো।”
আবির হাতে করে কোট নিয়ে ঘর থেকে চলে যায়। তিশা রেডি হয়ে নিচে যায় আর সবাই ব্রেকফাস্ট করে বের হয়। আবির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে নিরব পিছনের সিটে বসে। তিশা পিছনে বসতে যাবে তা দেখে আবির গম্ভীর গলায় বলে ওঠে।
“আমি কি তোদের ড্রাইভ নাকি যে সবাই পিছনে গিয়ে বসছিস।”
নিরব বলে, “ভাইয়া তুমি এটা কি বলছো তুমি ড্রাইভ হতে যাবে কেন?”
“তাহলে দুজনেই পিছনে গিয়ে বসেছিস কেন?”
“ওওও আচ্ছা এই ব্যাপার। ভাবি তুমি ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসো আমি এখানে বসছি।
তিশা কাঁধ নাচিয়ে বলে, “ঠিক আছে।”
তিশা আবিরের পাশে এসে বসে। আবির লক্ষ্য করে তিশা সিট বেল্ট লাগাই নি তার জন্য আবির তিশার কাছে যায়। আবির তিশার কাছে যাওয়ার সাথে সাথে তিশা নিজের দু চোখ বন্ধ করে ফেলে। তিশা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আবির সিট বেল্ট লাগিয়ে দিছে। আবির তিশার কাছ থেকে সরে এসে বলে।
“সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিলাম। অন্য কিছু করার মতলব নেই আমার তাই ওসব ভাবার দরকার নেই।
তিশা বড় বড় চোখ করে আবিরের দিকে। বলে কি এই লোক? পেছনের সিটে যে ছোট ভাই বসে আছে সে খেয়াল কি নেই। তিশা এখন নিজেকে বকতে ইচ্ছে করছে মনে মনে বলে।
“উফফ তিশা তুই যে সবসময় কি যে ভাবিস তোর মাথাটাই গেছে পুরো।”
নিরব বলে, “ভাবি তুমি তো কলেজে যাবে তাই তো।”
“হে নিরব! তুমি কোথায় যাচ্ছ অফিসে?”
নিরব মন খারাপ করে বলে, “হে ভাবি মাত্র দেশে ফিরেছি আর ভাইয়া এখনেই অফিসে বসিয়ে দিছে আমাকে।”
“আহারে বেচারা। কষ্ট পেয়ো না।”
আবির তিশার কলেজের সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে বলে, “কলেজ এসে গেছে নামো।”
“ধন্যবাদ।”
“কলেজে ছুটির পর আমি তোমাকে নিতে আসবো আমি যতক্ষন না আসবো ততক্ষন তুমি কলেজ থেকে বের হবে না।”
“ঠিক আছে। আসি এখন।”
তিশা যতক্ষণ না কলেজের ভেতরে না ঢুকেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আবির কলেজের সামনে থেকে যায় নি। নিরব পেছনের সিট থেকে এসে সামনের সিটে বসে। আবির আর নিরব অফিসে চলে যায়।
তিশা কলেজে ঢুকার সাথে সাথে কেউ ওকে ডাক দেয় তিশা তাকিয়ে দেখে ওর ফ্রেন্ড রিয়া। রিয়া হাসি মুখে বলে, “দোস্ত কেমন আছিস?”
“ভালো।”
“আচ্ছা! চল ওই খানে গিয়ে বসি।”
“ক্লাসে যাবি না।”
“আজকে ক্লাস হবে না।”
“কেন?”
“দুদিন পরে কলেজে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তার জন্য।”
“ওও আচ্ছা।”
“দোস্ত তুই কি এখনও আবির রহমানের সাথেই থাকিস?”
“হুম।”
“আঙ্গেল আন্টি কি বিয়েটা মেনে নিয়েছে।”
“না।”
“তাহলে তুই চলে আসছিস না কেন ওখান থেকে?”
“আমি বাঁধা পড়ে গেছি রে তাই ওখান থেকে আমি আর কোনো দিন বের হতে পারব না।”
“বাঁধা পরে গেছিস মানে?”
তিশা রিয়াকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার ঘটনাটা খুলে বলে। রিয়া তা শুনে শুনে বলে, “তুই এরকম শর্ত কেন রাখলি?”
“তাহলে আমি কি করতাম বল আমি ভেবেছিলাম আমি ওই বাড়ি থেকে বের হতে পারবো কিন্তু বের হতে পারি নি। তবে মানুষটা ভালো এতটাও খারাপ নয়।”
“ও মা তাই নাকি প্রেমে পড়ে গেলি নাকি অবশ্য প্রেমে পড়ারি কথা। তোর জামাই যা সুন্দর আর হ্যান্ডসাম দেখতে যেকোনো মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়ে যাবে।
“উফফ এসব এসব কথা বাদ দে তো।”
“ঠিক আছে। দোস্ত তোর হাতের আংটিটা কিন্তু জোস। তোর জামাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।”
তিশার চোখ যায় কলেজের গেইটের দিকে গেইটের পাশ দিয়ে ওর বাবা ইকবাল আহমেদ হেঁটে চলে গেছে। তিশা ওর বাবাকে দেখা মাত্রই দৌঁড় দিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে পড়ে। পেছন পেছন রিয়াও যায়। তিশা দৌঁড়ে গিয়ে ওর বাবার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে।
“বাবা।”
ইকবাল আহমেদ তিশাকে দেখেও কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে। তিশা বাবার পেছন পেছন যেতে যেতে বলে।
“বাবা প্লিজ তুমি আমার কথাটা একটু শুনো।”
ইকবাল ইসলাম দাঁড়িয়ে রাগী গলায় বলে, “কে তোর বাবা আমি তোর বাবা না দূরে সরে যা আমার কাছ থেকে। আর একবার যদি তুই আমাকে তোর ওই মুখ দিয়ে বাবা ডাকিস তাহলে তুই আমার ম রা মুখ দেখবি।”
“না বাবা প্লিজ এমম কথা বলো না তুমি।”
“চুপ একদম চুপ তোর মতো মেয়ের বাবা যেন আর কেউ না হয় আমি এই দোয়া করি আল্লাহর কাছে।
ইকবাল ইসলাম এই কথাটা বলে রিকশাতে উঠে বসে। রিয়া তিশার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, “তিশা কি হলো এভাবে দৌঁড়ে বের হয়ে গেলি কেন?”
তিশা কান্না করতে করতে বলে, “বাবা আমাকে এভাবে বলতে পারল এই কথা গুলো।”
“দোস্ত তুই শান্ত হ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
“কিছু ঠিক হবে না আজকে ওই লোকটার জন্য আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে গেছে। প্লিজ রিয়া তুই আমাকে ছাড় আমার ভালো লাগছে না।
তিশা রিকশাতে উঠে বসে। রিয়া চিৎকার করে বলে, “তিশা তুই কোথায় যাচ্ছিস? তিশা আমার কথাটা শুন।”
_______
এদিকে আবির নিরবকে নিরবের নামে যেই কোম্পানিটা আছে সেটাতে এমডি বানিয়ে দিয়ে তিশার কলেজের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়। আবির তিশার কলেজের সামনে এসে তিশাকে ফোন করে কিন্তু তিশা ফোন তুলছেই না বেজেই যাচ্ছে তিশার ফোন। আবির অনেক বার তিশাকে ফোন করে কিন্তু তিশা ফোন তুলছে না।
আবির খুব চিন্তায় পড়ে যায় তিশা ফোন না ধরাতে। আবির কলেজে ঢুকে সারা কলেজে ভালো করে খুজে কিন্তু তিশাকে কোথায় দেখতে পায় না। আবিরের নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।
আবির তাড়াতাড়ি করে নিরবকে ফোন করে।
“হে ভাইয়া বলো।”
“তিশাকে পাওয়া যাচ্ছে না নিরব।”
“কি বলছো কি তুমি ভাইয়া ভাবি কলেজে নেই।”
“না আর ও ফোনও ধরছে না। আমি কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না।
“ভাইয়া তুমি শান্ত হও আমি ও ভাবিকে খুজতে বের হচ্ছি। ভাইয়া ওই রবিন কিছু করে নি তো।”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “রবিন তিশাকে যদি কিছু করে তাহলে আজকে ওকে আমি মাটিতে পুতেই ফেলব।”
“ভাইয়া তুমি আমার কথাটা শুনো। তুমি টেনশন করো না।”
আবির ফোন কেটে সিয়ে গাড়িতে উঠে গাড়ি ড্রাইভ করে আবির রবিনের অফিসে এসে গাড়ি ব্রেক করে। আবির গাড়ি থেকে বের হবে এমন সময় নিরবের কল আসে। আবির ফোনটা রিসিভ করতেই নিরব বলে।
“ভাইয়া ভাবিকে পাওয়া গেছে।”
“কোথায়?”
“ভাবি বাড়িতে মাত্র এসেছে ফোন করে বললো সোহেল।”
“ঠিক আছে আমি এক্ষুনি আসছি।”
আবির কথাটা বলে গাড়ির সিটে মাথাটা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ বসে থাকে। নিজেকে শান্ত করে আবির গাড়ি ড্রাইভ করে বাড়িতে এসে সোজা ঘরে যায় আর ঘরে গিয়ে যা দেখে।
#চলবে