#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১০
সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ভরপুর চারপাশ। রোদের তাপে পঞ্চমুুখ পুরো রুম। ফারিশ ঘুমোচ্ছে। গভীর ঘুমে মগ্ন সে। হঠাৎই ঘুমের ঘোরে কারো মুখ ভেসে উঠলো। ফারিশ নড়েচড়ে উঠলো। আবারও কারো মুখ ভাসলো। কেউ তার কাছে এসে বলছে,
“এই যে মিস্টার বখাটে এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন কেন?”
ফারিশ চোখ মুখ কুঁচকেই রাগী রাগী কণ্ঠ নিয়ে ঘুমের ঘোরে বললো,“আমি বখাটে নই।”
ফারিশের কথা শুনে মেয়েটি হাসতে হাসতে জবাব দিলো,“উম্! বললেই হলো আপনি বখাটে নন।”
ফারিশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“বলছি না আমি বখাটে নই।”
“মাঝরাতে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে উৎতক্ত কারা করে জানেন বখাটেরা। আপনি একটা বখাটে ছেলে। বুঝেছেন আপনি একটা বখাটে।”
এবার ফারিশের ঘুম ভাঙলো। শোয়া থেকে উঠে রাগী রাগী কণ্ঠে আচমকাই চেঁচিয়ে বলে উঠল,“বলছি না আমি বখাটে নই।”
ফারিশ থতমত খেয়ে গেল কথাটা বলে। আশেপাশে তাকালো। কক্সবাজারের একটা হোটেল রুমে শোয়া ছিল ফারিশ। ফারিশ হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। চুপ করে রইলো অনেকক্ষণ। এই মাত্র কি হলো তার সাথে? তাই ভাবছে। এমন ঘটনা তার সাথে কখনো ঘটে নি। ওই ডাক্তার মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলো ফারিশ। কেন দেখলো! ফারিশের মস্তিষ্ক হঠাৎ এলেমেলো হলো। কি ঘটলো তার সাথে? কেনই বা ঘটলো? প্রশ্ন দুটো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু। ফারিশ চোখ মুখ চেপে বসে রইলো। মেয়েটা বার বার বখাটে বলে তাকে বিরক্ত করছে। এটা তো ঠিক হচ্ছে না। এই বখাটে নামটা ফারিশ কিছুতেই মেনে নিবে না। সময় গড়ালো ফারিশের ফোন বাজলো। ফারিশ ফোনটা তুললো। ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো,
“হ্যালো।”
আদিব খানিকটা ঘাবড়ে গেল। চিন্তিত স্বরে বললো,“কিছু কি হয়েছে ভাই?”
আদিবের কণ্ঠটা কানে ভাসতেই ফারিশ নিশ্চুপ হলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। শান্ত স্বরে বললো,
“না কিছু হয় নি।”
আদিব কিছুটা দমলো। বললো,
“ঠিক আছে। ভাই আগে কোথায় যাবেন? গাছের কাছে নাকি গোডাউনে।”
ফারিশ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“গোডাউনে।”
“ঠিক আছে। কতক্ষণে বের হবেন?”
“দু’ঘন্টা পর।”
“আচ্ছা ভাই।”
ফোন কাটলো ফারিশ। তার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছোঁয়া। ফারিশ আস্তে করে তার ফোনটা বিছানায় রাখলো। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলো। পুরো কক্ষে হাঁটাহাঁটি করলো। কিন্তু তার ভালো লাগছে না। ফারিশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা উঠালো। আদিবকে কল করলো। আদিব তার সোজাসুজি কক্ষেই আছে। আদিব ফোনটা তুলতেই ফারিশ দ্রুত বললো,“রুমে আসো তো আদিব।”
আদিব তিন মিনিটের মাথাতেই দরজায় নক করলো। ফারিশ গিয়ে দরজা খুললো। আদিব হতভম্ব হয়ে বললো,
“কি হয়েছে ভাই?”
ফারিশ তখনকার স্বপ্নটা নিয়ে বলতে নিলো পরমুহূর্তেই থেমে গেল। এটা কি করতে যাচ্ছিল? ফারিশ থেমে গেল আদিব তার দিকে তাকিয়ে। আদিব আবার বললো,“কি হলো ভাই কিছু বলবেন না?”
ফারিশ বাহানা দেয়ার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। আদিব আবার বলে, কি হলো ভাই কিছু বলছেন না কেন?”
ফারিশ ফট করে বলে উঠলো,“তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে রেডি হও আমরা বের হবো।”
কথাটা বলেই টাওয়াল হাতে বাথরুমে ঢুকে পড়লো ফারিশ। আর আদিব পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো ফারিশের যাওয়ার পানে। বিষয়টা কি হলো? আদিব ঠাহর করতে পারলো না। আদিব ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মাত্র কি ঘটলো তা যেন এখনো তার মাথায় ঘুরছে। সে তো একটু আগেই যাওয়ার কথা বলতে ফারিশ ভাইকে কল করলো তাহলে ফারিশ ভাইয়ের তাকে দ্বিতীয়বার কল করে রুমে ডেকে এনে ‘বের হবো’ কথাটা বলার মানে কি ছিল!’
আদিবের একটা কল আসলো সে বিস্ময়কর চেহারা নিয়ে ফোনটা তুললো। তারপর ধীর পায়ে ফারিশের কক্ষের দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
—-
লাবনী বিচ থেকে খানিকটা দূরে একটা বড়সড় হোটেলে দাঁড়িয়ে আছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। ছয়জনই জার্নি করে বেশ ক্লান্ত। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা ছাড়িয়ে। তারা প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই পৌঁছেছে কক্সবাজারে কিন্তু ভালো হোটেল না পাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়তে হলো তাদের। শেষমেশ বিচ থেকে খানিকটা দূরে এই হোটেলে আসলো। রিসিপশনের লোকটা তাদের তিনটে কক্ষের চাবি দিল চারশো ছয়, চারশো সাত আর চারশো দশ। একটাতে আশরাফ, মৃদুল আর রনি থাকবে। একটাতে চাঁদনী একা আর বাকি একটায় মুনমুন আর আদ্রিতা। তাদের ইচ্ছে ছিল তিন বেড ওয়ালা দুটো রুম নিবে কিন্তু পায় নি। শেষমেশ চাঁদনীকে একা থাকতে হলো। তবে এটা শুধু রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রেই। আদ্রিতার একটা কল আসলো হাসপাতাল থেকে। আদ্রিতা অবাক হয়ে বন্ধুদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো। এদিকে বাকিরা রুমের চাবি নিয়ে রুমে যেতে লাগলো। মুনমুনও আদ্রিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,“আদু আমাদের রুম নাম্বার হলো চারশো ছয় চারতলায়। তুই কথা শেষ করে আয় আমি যাচ্ছি।”
আদ্রিতাও মুনমুনের কথার পিঠে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।”
মুনমুন চলে গেল। তার বেশ টায়ার্ড লাগছে। রুমে গিয়েই একঘন্টার একটা লম্বা সাওয়ার নিবে।”
—-
“চিন্তা করবেন না স্যার আমি কাজটা সেরেই বাড়ি ফিরবো। আপনি হসপিটালের লোকেশনটা পাঠিয়ে দিবেন।”
আদ্রিতার কথা শুনে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটিও বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আপাতত ইনজয় করো।”
বিনিময়ে মৃদু হাসে আদ্রিতা। বলে,
“আচ্ছা স্যার। আর আপনি চিন্তা করবেন না আমি সার্জারীর কাজটা কমপ্লিট করেই বাড়ি ফিরবো।”
“ঠিক আছে।”
ফোন কাটলো অপরপাশের ব্যক্তিটি। আদ্রিতা শুঁকনো নিশ্বাস ছাড়লো। দু’দিন পর কক্সবাজারের একটা হসপিটালে তার কিছু কাজ পরে গেছে। হয়তো বাড়িটা তাকে একাই ফিরতে হবে। আদ্রিতা তিন মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে রুমে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। তার ব্যাগপত্র মুনমুন নিয়ে গেছে। আদ্রিতা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। তার মনে আছে মুনমুন তাকে বলেছিল চারতলায় তাদের রুম। রুম নাম্বার হলো চারশো ছয়। আদ্রিতা দ্বিধাহীন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।
অন্যদিকে ফারিশ নিজের রুমে সাওয়ার নিচ্ছে লাগাতার।’
আদ্রিতা চারতলায় উঠতে উঠতেই হাঁপিয়ে গেল। পা যেন অবশ অবশ লাগছে নিশ্বাসও ভাড়ি হয়ে গেছে। আদ্রিতা ডানদিকে গেল। হঠাৎই চোখ গেল রুম নাম্বার চারশো ছয়ের দিকে। তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো ফাইনালি রুমে আসলো। আদ্রিতা দরজায় একবার নক করতেই দরজা খুলে গেল। আদ্রিতা অবাক হলো। মুনমুনের বাচ্চা দরজা না আঁটকেই রুমে বসে আছে। আদ্রিতা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ভিতর থেকে দরজা আঁটকে দিল। পুরো রুমে চোখ বুলালো। কিন্তু কোথাও মুনমুনকে পেল না। আদ্রিতা আওয়াজ করলো। বললো,“মুন কোথায় তুই?”
কোনো কথার শব্দ আসলো না। হঠাৎ বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসলো। আদ্রিতা বুঝলো মুনমুন হয়তো গোসল করছে। আদ্রিতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,“ওহ তুই বাথরুমে।”
আদ্রিতা তার হাতের ফোনটা সামনের ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখলো। তারপর ধপাস করে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো। ফাইনালি শান্তি। প্রায় মিনিট দশেক সময় ওভাবেই গেল। আদ্রিতা উঠে বসলো এবার একটু ফ্রেশ হতে হবে তাকে। তার ব্যাগ-ট্যাগ কোথায় রেখেছে মুনমুন কে জানে! বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো আদ্রিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে বলতে নিলো,
“এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি ঘুমাচ্ছি..
পুরো কথা শেষ করার আগেই টাওয়াল গায়ে সদ্য গোসল করে বের হওয়া ফারিশকে দেখে তড়িৎ চমকে উঠলো আদ্রিতা। ঘাবড়ে গেল প্রচুর।”
অন্যদিকে,
ফারিশ সেও হতভম্ব। তার রুমে ওই ডাক্তার ম্যাডাম কিভাবে এলো। ফারিশ হতভম্ব হয়ে বললো,
“আপনি এখানে কি করছেন?”
আদ্রিতা খানিকটা ঘাবড়ানোর স্বরে বললো,
“মিস্টার বখাটে আপনি। আপনি এই রুমে কি করছেন?”
মুহুর্তের মধ্যে ফারিশের মাথা গরম হয়ে গেল। এই মেয়ে পেয়েছে তা কি কথায় কথায় তাকে বখাটে বলে কেন! ফারিশ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আদ্রিতার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,“এই মেয়ে সমস্যা কি আপনার কথায় কথায় আমায় ব..
বাকি কথা বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই ভেজালো পায়ে স্লিপ কেটে ফারিশ গিয়ে পড়লো আদ্রিতার গায়ের ওপর। আচমকা বিষয়টা ঘটায় আদ্রিতাও ফারিশের শরীরের ভাড় নিতে না পেরে পড়ে গেল বিছানায়। অতঃপর ধবধবে সাদা বিছানায় ধপাস করে পড়লো আদ্রিতা আর ফারিশ। আদ্রিতা নিচে আর তার ওপর ফারিশ। ঘটনাক্রমে দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো একে অপরের দিকে।’
#চলবে….
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আমি রোজই চেষ্টা করি গল্পটা দেয়ার কিন্তু পারি না। তোমরা কেউ রাগ করো না। আমি খানিকটা ব্যস্ততার মধ্যে আছি তাই এমন লেট।🙂]
#TanjiL_Mim♥️.