এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️ #লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️ — পর্বঃ১১

0
396

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১

স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে আছে আদ্রিতা। মাত্র কি ঘটলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। আদ্রিতা থমথমে চেহারা নিয়ে সামনে তাকালো।
তার থেকে কিছুটা দূরেই ফারিশ দাঁড়ানো।’

এদিকে,
ফারিশ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। রাগে তার মাথা গজগজ করছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে কিন্তু মারছে না। কতক্ষণ আগেই ফারিশ আদ্রিতার থেকে উঠে প্যান্ট শার্ট পড়ে নেয়। আদ্রিতা তখনও হতভম্ব হয়ে শুয়ে থাকে। তিনমিনিট আগেই উঠে বসে সঙ্গে দেখে ফারিশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। তার চুল দিয়ে এখনো পানি গড়িয়ে পড়ছে। ফারিশ মুখ খুললো। অবশিষ্ট শার্টের বোতামটি আঁটকে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,“আপনি এই রুমে কি করছেন? একটা অপরিচিত হোটেল রুমে কেউ এইভাবে ঢুকে পড়ে।”

আদ্রিতা মাথা নিচু করে ফেলে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুনমুনই তো বলেছিল তারা রুম নাম্বার ৪০৬ মানে 406 এ আছে। আদ্রিতার নিশ্চুপতায় ফারিশ গর্জে উঠলো। ধমকের স্বরে বললো,“কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

ফারিশের কণ্ঠস্বরে কেঁপে ওঠে আদ্রিতা। থরথর করে বললো,“বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারি নি আমি ভেবেছিলাম এটা রুম নাম্বার 406.”

ফারিশ কিছু বলে না কালকে হোটেল রুমে ঢোকার সময় ফারিশ খেয়াল করে নি এটা কয় নাম্বার রুম। আদিবই রুমটুম আগে বুক করে রাখে। এমনকি কাল রাতে আদিবই তার রুমের দরজা খুলে সে শুধু ফোনে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকে যায়। রুম নাম্বার আর খেয়াল করে না। ফারিশ আদ্রিতার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরে যেতে নেয়। যাওয়ার আগে তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,“এক পাও বের হবেন না।”

আদ্রিতা শোনে বিনিময়ে শুধু হা বোধক মাথা নাড়ায়। মুখে কিছু বলে না। ফারিশ দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে রুম নাম্বারের দিকে। তার রুম নাম্বার 408. কিন্তু এইটের উপরের অংশের এক কনার্রের লেখাটা হাল্কা মুছে গেছে। যার কারনে কিছুটা ছিস্কের মতো লাগে। আদ্রিতা একটু ক্লান্তিতে থাকায় বিষয়টা বুঝতে পারে নি। ফারিশ কিছু একটা ভেবে ভিতরে ঢুকলো। অাদ্রিতা তখনও ঠায় বসে। ফারিশ বললো,“চোখে চশমা লাগাচ্ছেন না কেন?”

আদ্রিতা তার ধ্যান থেকে বেরিয়ে এলো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,
“মানে,
“এটা রুম নাম্বার ৪০৮।”

সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো আদ্রিতা। তড়িৎ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তবে কি সত্যি তার চোখে সমস্যা হয়েছে! আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারে না। ফারিশ বলে,“বাসায় গিয়ে চশমা পড়ে নিবেন।”

আদ্রিতা কিছু বলবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। মুনমুন কল করেছে। আদ্রিতা এক পলক ফারিশের দিকে তাকিয়ে ফোনটা তুললো। ‘হ্যালো’ বলতেই অপরপাশে থাকা মুনমুন বলে উঠলো,“তুই কি রুম খুঁজে পাস নি আদু নাকি এখনও রুমের দিকে আসিস নি। আমি গোসল করতে যাবো তোর জন্য সেই কখন থেকে বসে আছি তুই আসলে ওয়াশরুমে ঢুকবো। তোর কি খুব দেরি হবে আমি দরজা আঁটকে ওয়াশরুমে যাবো?”

আদ্রিতা বিনিময়ে বলে,
“যাস না আমি আসছি।”
“ঠিক আছে জলদি আয়।”
“হুম আসছি।”

কান থেকে ফোন সরায় আদ্রিতা। থমথমে কণ্ঠে বলে,“আমি খুব দুঃখিত। আমি বুঝতে পারি নি।”

আদ্রিতা এমনভাবে কথাটা বললো যে ফারিশ চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না। ফারিশ বললো,“ঠিক আছে যান।”

আদ্রিতা যেতে নিলো। আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। দ্বিধাহীন স্বরে বললো,
“আপনার পিঠের ক্ষতটা কি সেরেছে?”

ফারিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার দিকে। বলে,
“এত জেনে কি করবেন?”
“আমি একজন ডক্টর। এগুলো জানা আমার অধিকার আছে।”

ফারিশ হাসে। কি নিদারুণ দেখায় সেই হাসি। আদ্রিতার চোখ আটকায় সেই হাসিতে। ছেলেটা চমৎকার হাসে। উজ্জ্বল শ্যামবর্নের পুরুষটি হাসলে আরো দারুণ দেখায়। ফারিশ বলে,
“আমি আপনার পেশেন্ট নই যে অধিকার দেখাবেন।”
“আজ নন ঠিক আছে কিন্তু কিছুদিন আগে তো ছিলেন।”
“আগের দিন ভুলে যান। বর্তমান নিয়ে ভাবুন।”
“বর্তমান নিয়ে ভাববো ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে অতীত ভুলে যাওয়ার কি দরকার।”
“ফারিশ মনে রাখার মতো মানুষই নয়।”
“মনে রাখলে কি খুব ক্ষতি হবে?”
“মৃত্যুও ঘটতে পারে অকালে।”

আদ্রিতা চমকে উঠলো। বললো,
“আচ্ছা ফারিশকে মনে না রাখার কারণটা কি জানা যায়?”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“এত কারন আপনায় বলতে আমি বাধ্য নই।”

আদ্রিতা দমে যায়। এই ছেলের সাথে কথা বলে সে যেন পেরে উঠবে না। আদ্রিতা চলে যেতে নেয়। দরজা পর্যন্ত যেতেই ফারিশ বলে উঠল,
“এই যে শুনুন,

আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছন ঘুরে শান্ত স্বরে শুধালো,“জি বলুন,”

ফারিশ কেমন একটু করে যেন বললো,“আমার সামনে আর আসবেন না। আপনাকে আমি দেখতে চাই না আর।”

আদ্রিতা কিছু বলে না। এই কথা নতুন কি। এটা তো প্রতিবারই বলে ফারিশ। আদ্রিতা বেরিয়ে যায়। ফারিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে। তার চোখে ভাসলো তখনকার সেই দৃশ্য। বিছানায় লেপ্টে থাকা তার আর আদ্রিতার মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য। ফারিশ তার চোখ বন্ধ করলো। মেয়েটা কেন যেন তাকে শান্তি দিচ্ছে না। বার বার দেখা কেন হচ্ছে?”

কতক্ষণ যেতেই দরজায় নক করলো আদিব। ফারিশের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। আদিব ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো,“গাড়ি কি বার করবো ভাই? খাবার খেয়েই বের হবেন?”

ফারিশ চমকে উঠলো নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
“কি বললে?”
“গাড়ি কি বার করবো ভাই?”
“হুম বার করো।”
“আচ্ছা আপনি খাবারটা খেয়ে নিন আমি বার করছি।”

আদিব খাবারগুলো বিছানার ওপর রেখে চলে যেতে নিলো। ফারিশ তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। কতক্ষণ আগের ঘটনা কিছুতেই মাথা থেকে বের হচ্ছে না। ফারিশ আদিবের দিকে না তাকিয়ে বললো,“আদিব শোনো,”

আদিব দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,“
“জি বলুন ভাই।”
“হোটেল কতৃপক্ষকে বলবে রুম নাম্বার ঠিক করতে।”

আদিব খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
“কেন ভাই?”
“আটকে ছয় ভেবে মানুষ ভুল করবে।”
—-
রুমে ঢুকেই আদ্রিতা আয়নার দিকে তাকালো। তার চোখে সত্যি সমস্যা হয়েছে, না হলে এইটের উপরের অংশটি মুছে গিয়ে ছিল সে কেন বুঝতে পারলো না। সত্যি কি চশমা পড়া দরকার তার। আসার সময় সে রুম নাম্বারটা দেখে মিনিটের মাঝে নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যেদিন থেকে ফারিশ নামক ছেলেটা তার জীবনে এসেছে সেদিন থেকে তার সাথে সব উল্টোপাল্টা ঘটছে।

ফারিশ নামের ছেলেটাকে বড্ড অদ্ভুত লাগে আদ্রিতার। কিছু তো একটা রহস্য আছে ওই ছেলেটার মাঝে যা ফারিশ সবার থেকে লুকাতে চাচ্ছে। কিন্তু কেন? বিখ্যাত ঔষধ কোম্পানির মালিক কেনই বা কিছু লুকাতে চাইবে। কেন নিজেকে আড়াল করতে চাইবে। আদ্রিতা আর ভাবলো না। এই মুহূর্তে তার প্রথম ভাবনা যে ক’দিন তারা কক্সবাজার থাকবে সে ক’দিন রুম নাম্বার ৪০৮ এর ধারেকাছেও যাবে না। কিছুতেই যাবে না।”
—-
বেলা প্রায় দুপুর সাড়ে তিনটার কাছাকাছি। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় দু’ঘন্টার পথ পেরিয়ে একটা বড়সড় গোডাউন ঘরের একটা চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে ফারিশ। তাকে ঘিরেই দূরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার লোকজন। সবার হাতেই বড় বড় পিস্তল। ফারিশ নির্বিকার হয়ে বসে। তার সামনেই কিছুটা দূরে চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় বসে আছে সেই পালিয়ে যাওয়া নতুন ছেলেটি। নাম মোশারফ সুলতান। তাকে মারধর করা হয় নি। তবুও ক্লান্তি আর ভয়ে মোশারফ থরথর করে কাঁপছে।

একটা ছেলে এগিয়ে আসলো ফারিশ তার থেকে একটা সিগারেট নিলো। ছেলেটির হাতের লাইটার দিয়ে সেটা জ্বালালো। দু’ তিনবার ফুঁ উড়িয়ে তার লোকেদের ইশারা করলো মোশারফকে তার একদম সামনে আনতে। দু’জন লোক চেয়ারসহ মোশারফকে উঠিয়ে একদম ফারিশের মুখোমুখি বসালো। মোশারফ আরো ঘাবড়ে গেল। থরথর করে বললো,“আমায় ক্ষমা করে দিন বস। আর এমন হবে না।”

ফারিশ সিগারেটে ধুয়ো উড়ালো। সোজা গিয়ে পড়লো মোশারফের চোখে মুখে। ফারিশ বললো,“তিনটে প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিতে পারলে তোর মুক্তি।”

মোশারফ কি বলবে বুঝচ্ছে না। শুধু কাঁপছে। ফারিশ সিগারেটটা মোশারফের সামনে থেকে সরিয়ে বললো,“সমস্ত কিছু প্লান কার ছিল?”

মোশারফ জবাব দিলো,“আমি কিছু জানি না।”

ফারিশ হাসলো। বললো,
“গুড এন্সার।”

কথাটা বলেই মোশারফের ডানহাতে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো ফারিশ। মোশারফ থর থর কাঁপছে। হাতে যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর। ছটফট করছে মোশারফ। সে আপনাআপনি থর থর করে বলে উঠল,
“এক লোক আমায় শুধু কল করে বলেছিল আমি যেন আপনার ট্রাকে মেয়ে রেখে আপনায় ফাঁসাই বিনিময়ে অনেকগুলো টাকা দিবে।”

ফারিশ সিগারের সরায়। বলে,
“ওহ আচ্ছা। তা কত দিলো?”
“১০ লাখ দিবে বলেছিল ৫ লাখ পাঠায় বাকি টা..

বলার আগেই আবারও জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে ফারিশ। ছেলেটা যন্ত্রণায় কাতরায়। চেঁচিয়ে উঠে ভয়ংকরভাবে। আদিব পিছন ঘুরে যায়। তার এসব একদমই ভালো লাগে না।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here