হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৬) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

0
767

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৬৬)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(১৫৩)
কুশল অবাক স্বরে বললো….
—“তরুনিমা….রাজবীরের ছবি তোমার বোনের ডায়েরির ভাঁজে কি করছে!”

কুশলের এরূপ কথা শুনে তরু বেশ অবাক হয়। ‘কোথায় দেখি’ শব্দ দু’খানা উচ্চারণ করে দ্রুত পায়ে কুশলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত থেকে ছবিটা নিয়ে নিজে দেখে। তরু কিছুসময় নিরব থাকার পর বললো…

—“এই কারণে আমার এমনটা মনে হয়েছিলো সেদিন।”

—“মানে!”

—“৫ বছর আগে বড়পু বেঁচে থাকাকালীন যখন আমি প্রথম তার এই ডায়েরিটা হাতে নিয়েছিলাম তখন ডায়েরির ভাঁজে আমি ওনার ছবিটা দেখেছিলাম। আপু আমার হাতে ওনার ছবি আর আপুর ডায়েরিটা দেখার পর আমার হাত থেকে জিনিস দু’টো ছিনিয়ে নিয়েছিলো আর অনেকটা রেগে গিয়েছিলো। এরপরই আমি আর আপুর ডায়েরিতে হাত দেই নি। সেদিন আপনার কাজিনকে যখন সামনা-সামনি তখন এই কারণেই আমার মনে হয়েছিলো যে আমি তাকে এর আগেও হয়তো কোথাও দেখেছি। কিন্তু মনে করতে পারছিলাম না তখন যে ওনাকে আমি কোথায় দেখেছি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপুর সাথে ওনার সম্পর্ক কি ছিলো!”

—“আমাদের এই ডায়েরিটা খুলে দেখা উচিত। হয়তো এই ডায়েরি রাজবীরের ছবির পাশাপাশি আরো এমন কিছু আছে যা থেকে আমরা এটা জানতে পারবো যে তোমার আপুর সাথে রাজবীরের সম্পর্ক কি ছিলো!”

তরুনিমা কিছুটা সংকোচ বোধ নিয়ে বললো….
—“কিন্তু এটা করাটা কি ঠিক হবে!”

—“ধোয়াশা ক্লিয়ার করার জন্য আমাদের এই কাজটা করতেই হবে তরুনিমা।”

তরু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“ঠিক আছে।”

কুশল তরুনিমার হাত ধরে অরুর বিছানায় গিয়ে পাশাপাশি বসে ডায়েরিটা খুলতেই প্রথম পৃষ্ঠায় দেখতে পায় বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘অরুর জীবনের কিছু স্মরণীয় মুহূর্ত’। পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতেই যা দেখতে পায় কুশল তা পড়তে শুরু করে….

—“২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর…….
আজকের এই দিনটি আমার জীবনে অনেক স্পেশাল। আজকের আমি আমার কর্মজীবনের ১ম মাসের স্যলারি হাতে পেয়েছি। অর্থের পরিমাণ কম হলেও আমি এই সামান্য অর্থ দিয়ে আমার মা-বাবা আর আমার ছোট্ট মিষ্টি বোনের জন্য টুকটাক কিছু কিনতে পেরেছি। মা-বাবা সারাজীবন ধরে আমাদের জন্য তাদের সবটা উজার করে দিয়েছেন। আজ তাদেরকে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে কিছু কিনে দিতে পেরে, তাদের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে থাকতে দেখে আমার মনের ভিতরে কি যে শান্তি কাজ করছিলো তা বলে বোঝাতে পারবো না। তাই আজকের এই স্পেশাল মুহূর্ত টুকু নিয়ে আমার ডায়েরির পাতায় কয়েক লাইন লিখে রাখলাম।”

এরপর কুশল আরো কয়েকটা পেইজ পাল্টায়। আর প্রতিটি পেইজেই অরু নিজের জীবনে স্পেশাল মনে করেছে যে দিনের মূহূর্ত গুলো সেগুলো সাল ও তারিখ সহ লিখে রেখেছে। এভাবে আরো কয়েকটা পেইজ উল্টে পাল্টে পড়ার পর একটা পেইজে এসে কুশল থেকে যায়। সেখানে লেখা ছিলো……

—“২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর……
জীবনে সাংবাদিকতার পেশা বেছে নেওয়া কোনো সহজ বিষয় না। সব পেশাতেই নিজের কাজের প্রতি সবার লয়াল থাকা উচিত। যেদিন আমি প্রথম এই পেশায় এসেছিলাম সেদিন আমি নিজের কাছে নিজেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম যে আমি আমার কাজের প্রতি সবরকম পরিস্থিতিতে লয়াল থাকবো। লয়াল থাকতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়েই জীবনের মায়া ত্যগ করে সবরকম তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে আর সেই তথ্যগুলো সঠিক হাতে তুলেও দিতে হয়েছে। আমাদের চারপাশে ভালো-খারাপ-খুব ভালো-জ*ঘ*ন্য*তম খারাপ এমন চার শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। এদের ভিতর কিছুজন এমন আছে যারা আমাদের সামনে খুব ভালো মানুষের মু*খো*শ পড়ে চলাফেরা করবে আর আড়ালে নি*কৃ*ষ্ট রূপ ধারণ করে বিভিন্ন পা*প কর্মে লিপ্ত হবে। আর আমরা যেনো তাদের কোনোভাবেই সন্দেহ করতে না পারি সেদিকেও তারা পুরো সতর্ক থাকবে। এরপর একদিন জানতে পারলাম কয়েক মাস ধরে গ্রামের মেয়েরা হুট করে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে! পরবর্তীতে তাদের আর কোনো খোজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে আমার মনে বড় ধরনের সন্দেহ কাজ করে। আর আমি মনে মনে ঠিক করি এই জ*ঘ*ন্য কাজের পিছনে যে বা যারা দায়ী তাদের মুখোশ আমি সমাজের সকলের সামনে খুলে ফেলবো। এরপর আমি একটা পরিকল্পনা করি। গোপনীয়তা বজায় রেখে নিজের জীবনের ঝুঁ*কি নিয়ে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি কাজ করে মেয়েদের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য গুলো সংগ্রহ করতে সক্ষম হই। প্রমাণ হিসেবে আমার কাছে একটা ভিডিও ক্লিপ ছিলো যেখানে আমি রেকর্ড করেছিলাম শহর থেকে অনেকদূরে একটা গহীন জঙ্গলের ভিতর পোড়া বাড়িতে কিছু অসহায় মেয়েকে হাত-পা, মুখ বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। সেইসময় চৌধুরী গ্রুপ অফ কোম্পানির বর্তমান CEO মি.সায়মন চৌধুরীর ছোট ভাই রিজভী চৌধুরীর একমাত্র ছেলে রাজবীর চৌধুরী তার কিছু সহচরদের সাথে নিয়ে সেখানে এসে সেই অসহায় মেয়েগুলোর উপর নির্মম ভাবে অ*ত্যা*চা*র করে। এমন দৃশ্য দেখে আমি অনেক বেশিই অবাক হয়েছিলাম। কারণ এই চৌধুরী পরিবারের সাথে পারিবারিক আর ব্যবসায়িক দিক থেকে আমাদের মাঝের বন্ডিংটা যথেষ্ট ভালো ছিলো। বিগত বছর গুলো ধরে আমি আর আমার পরিবার এমন নি*কৃ*ষ্ট মানুষের সাথে উঠাবসা করে এসেছি ভাবতেই আমার সর্বশরীর রাগে-ঘৃ*ণা*য় রি রি করে উঠেছিলো। সেদিন আমি ভিডিও ফুটেজটি নিয়ে সাবধানতার সাথে বাড়ি ফিরে আসি। এরপর খুব ভালো ভাবে খোঁজ-খবর নেওয়ার পর জানতে পারি যে রাজবীর চৌধুরী লোক লাগিয়ে বিভিন্ন অজ পাড়া-গাঁ থেকে গরীব, অসহায় মেয়েদের ভালো কাজ দেওয়ার লো*ভ দেখিয়ে শহরে আনতেন আর তাদের এভাবেই গু*ম করে দিতেন। আর এতোবড় পা*প কাজের পিছনে যে তিনি দায়ী তা সম্পর্কে কেও যেনো কখনও বিন্দুমাত্র সন্দেহ করতে না পারে সেই ব্যবস্থাও করে রাখতেন। আজ সকালে আমি সেই ভিডিও ফুটেজটি আর সংগ্রহ করা বাকি তথ্যগুলো নিয়ে অফিসে গিয়ে আমার বসের সাথে পারসোনালি কথা বলি। বস মনোযোগ সহকারে আমার সব কথাগুলো শোনার ও ভিডিও ফুটেজটি দেখার পর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললেন আমি যেনো এই বিষয় নিয়ে আর ঘাটাঘাটি না করি। রাজবীর চৌধুরী অনেক বড় মাপের মানুষ। বড় বড় মন্ত্রী, পুলিশ অফিসারদের তিনি কিনে নিয়েছেন। আর অত্যন্ত নিপুনতার সাথে বহু বছর ধরে তিনি এই কাজটি করে আসছেন। এর আগেও নাকি আরো একজন পুরুষ সাংবাদিক রাজবীর চৌধুরী এই কাজের সম্পর্কে নানান প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলো কিন্তু ২-৩ দিনের মাথায় গলির নর্দমায় তার গলা কা / টা লা*শ পাওয়া গিয়েছে। সেই সাংবাদিক তো নিজের জীবন হারিয়েছেই তার পাশাপাশি যে কাজের জন্য তার পরিণতি ওমন হয়েছিলো সেই কাজের সব প্রমাণ খুব যত্নসহকারে রাজবীর চৌধুরী মুছে ফেলেছিলেন। আমি যে তার কাজের এতো বড় প্রমাণ সংগ্রহ করেছি আর এই প্রমাণ যদি আমার চ্যনেল থেকে প্রচার করা হয় তবে তিনি আমাদের সকলকেই পুরোপুরি ভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আমি বসকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে এখন যদি আমরা রাজবীর চৌধুরীর এই পা*প কাজকে দ*মি*য়ে দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহন না করি তাহলে আগামী বছর গুলোতে যে আমাদের ঘরের মা-বোনেরা তার শি*কা*র হবেন না তারই বা কি নিশ্চয়তা আছে! কিন্তু বস আমার কোনো কথা শুনেন নি। আমি রাগের বশে তাকে বলে দেই আপনারা এই অন্যায় মুখ বু*জে সহ্য করলেও আমি করবো না। তখন বস আমায় বললেন আমি যেনো তার কাছে রিজাইন লেটার জমা দিয়ে তারপর যা করার করি। আমিও তাই রিজাইন লেটার জমা দিয়ে আজ বাসায় চলে এসেছি। ২দিন পর আমার ছোট বোন তরুনিমা এঙ্গিয়েজমেন্টের অনুষ্ঠান আছে। অনুষ্ঠানের দিন রাজবীর চৌধুরী সহ শহরের নামি-গুণি শতশত মানুষ উপস্থিত হবেন। আর সেদিন সবার সামনে আমি এই ভিডিও ফুটেজটি বড় পর্দায় প্লে করবো। তখন রাজবীর চৌধুরীর আর করার মতো কিছুই থাকবে না।”

কুশল এরপরের পৃষ্ঠাগুলো উল্টে-পাল্টে দেখে আর কিছুই লেখা নেই সেই পৃষ্ঠাগুলো সম্পূর্ণ সাদা। তরু স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। কুশল বললো….

—“এর মানে তোমার বোনের মৃ*ত্যু*র জন্য দায়ী আর কেও না রাজবীর নিজেই। আর এই কারণেই ৫বছর আগে রাজবীর কাওকে কিছু না জানিয়ে হুট করেই আমেরিকাতে চলে গিয়েছিলো। আর ৫বছর ধরে সেখানেই থেকেছে সে।”

#চলবে ইনশাআল্লাহ…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here