আলো_আধারের_খেলা পর্ব_১০

0
318

আলো_আধারের_খেলা
পর্ব_১০
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

শোনো জান্নাত!রুয়েল কিন্তু রং চা পছন্দ করে।ওকে আবার ভুল করে দুধ চা দিও না।আদা দিয়ে রং চা ওর ভীষণ পছন্দের।
–জ্বি মা।
–আমাকেও এক কাপ লাল চা দিও।বাকি সবার দুধ চা পছন্দ।
–জ্বি মা।
–রুয়েল তো মনে হয় এখনো ওঠে নি।ও উঠতে উঠতে আরো তিন ঘন্টা বাকি।বারোটার আগে সে কোনোদিনই ওঠে নি।সেজন্য ওর চা টা পরে তৈরি করিও।আর হ্যাঁ আরেকটা কথা।
–জ্বি মা বলুন।
জান্নাতের শাশুড়ী সেই কথা শুনে জান্নাতের কাছে এগিয়ে এলো আর জান্নাতের হাত ধরে বললো,কাল থেকে যেনো আর বলে দিতে না হয়।সকালে উঠে তোমার ভাবীকে নাস্তা বানাতে সাহায্য করবে।এ বাড়িতে তোমরা দুইজনই বউ।আমি চাই মিলেমিশে থাকবে।আর একসাথে সংসারের কাজ করবে।তোমাদের সাহায্য করার জন্য তো হেনা আছেই।

–জ্বি মা।এই বলে জান্নাত চা বানাতে রান্নাঘরে গেলো।যেহেতু আজকেই তার রান্নাঘরে ফাস্ট দিন সেজন্য সে কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলো না।সে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।হঠাৎ রুয়েল পিছন দিক থেকে ডাক দিলো জান্নাতকে।
জান্নাত!আপনি রান্নাঘরে কি করছেন?
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে একদম চমকে উঠলো। সে রুয়েলের পাশ হয়ে বললো,মা সবার জন্য চা বানাতে বললো।
রুয়েল সেই কথা শুনে জোরে করে একটা হাসি দিয়ে বললো,আপনি চা বানাবেন?চা বানিয়েছেন কখনো?
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো না বানায় নি।তবে কিভাবে বানায় সেটা জানি।
রুয়েল তখন বললো,আপনি রুমে যান।আমি হেনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।এই বলে রুয়েল চলে যেতে ধরলো। কিন্তু জান্নাত তখন রুয়েলের হাত টেনে ধরে বললো, না না।আপনি হেনাকে ডাকবেন না প্লিজ।মা আমাকেই বানাতে বলেছে।আজ তিনি আমার হাতের বানানো চা খেতে চান।
রুয়েল তখন বললো,আপনি আগে ভালোভাবে শিখে নিন জান্নাত।তারপর সবার জন্য বানিয়েন।যদি আবার খারাপ চা বানান,সবাই হাসাহাসি করবে।
–হাসাহাসি করলে কি হবে?ভুল থেকেই তো মানুষের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
–ওকে আপনি যখন আজকেই চা বানাতে চাচ্ছেন তখন আমি হেল্প করছি।এই বলে রুয়েল চা পাতি,চিনি,দুধ সব খুঁজে বের করলো।আর একটা পাতিলে পানি দিয়ে গ্যাসের চুলায় বসিয়ে দিলো।

হঠাৎ ঊর্মি এলো রান্নাঘরে।
ঊর্মিকে এভাবে হঠাৎ রান্নাঘরে আসা দেখে রুয়েল
তাড়াতাড়ি করে রান্নাঘর থেকে বের হলো।

রুয়েলকে দেখামাত্র ঊর্মি বললো,বারোটা কি বেজে গেছে নাকি?
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, না বাজে নি।আরো তিনঘণ্টা বাকি আছে।
ঊর্মি তখন বললো আমি তো তোকে দেখে ভাবলাম বারোটা বেজে গেছে।এই বলে ঊর্মি নিজেও রান্নাঘরে প্রবেশ করলো।
জান্নাতকে দেখে বললো, ওমা জান্নাত দেখি রান্নাঘরে।কি বানাচ্ছো?
–সবার জন্য চা বানাচ্ছি।
–খুব ভালো করেছো।আমি তো চা বানাতেই এলাম।তোমার ভাই নাস্তা খাওয়ার পর পরই চা খায়।তার চা ছাড়া এক দিন ও চলে না। তুমি যখন বানাচ্ছোই তাহলে আমি আজ আর বানাই না।

হঠাৎ হিয়া এসে রুয়েলকে বললো,চাচ্চু আমাকে একটু তোমার ফোনটা দাও না?
–ফোন তো ঘরে।তা তুমি ফোন দিয়ে কি করবা মামুনি?
–গেম খেলবো।আব্বুর ফোনটা হৃদয় নিয়েছে।আম্মুর ফোনটা নষ্ট হয়েছে।এখন আমি তোমার ফোনটা নিয়ে গেম খেলবো।

রুয়েল হিয়ার কথা শুনে ভীষণ অবাক হলো।সে তখন ঊর্মিকে বললো,ভাবি তোমার ফোন নষ্ট হয়েছে?

–হ্যাঁ।হঠাৎ করে কেনো জানি কাজ করছে না।ফোন নষ্ট হয়ে কি বিপদের মধ্যে যে পড়েছি।কারো সাথে ঠিক করে যোগাযোগ করতে পারছি না।তোর কাছে কি এক্সট্রা কোনো ফোন আছে?
রুয়েল ঊর্মির কথা শুনে চুপ করে রইলো।কারণ তার কাছে একটাই ফোন আছে।যেটা সে জান্নাতকে গিফট করতে চায়।
ঊর্মি তখন বললো কি হলো? চুপ হয়ে গেলি কেনো?থাকলে দিস তো আমাকে।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো,ভাইয়াকে বললেই তো হয় একটা নতুন ফোন কিনতে।
–না,না তোর ভাইয়াকে বলা যাবে না।একেবারে আমাকে শেষ করে ফেলবে।বলবে কয় দিন আগেই না ফোন নিয়েছি,এই কয়দিনে কিভাবে নষ্ট হয়ে যায়?তাছাড়া এদেশের ফোন ইউজ করতে ইচ্ছে করে না।

রুয়েল তখন বললো,আমার কাছে এক্সট্রা কোনো ফোন নেই।নতুন ফোন নিতে হলে বিদেশ যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।এই বলে রুয়েল হিয়াকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।

ঊর্মি জানে রুয়েলের কাছে এক্সট্রা ফোন আছে।সেজন্যই সে মিথ্যা ফোন নষ্ট হওয়ার অভিনয় করছে।রুয়েল যখন ঊর্মির মুখের উপরই না করে দিলো সে ভীষণ রেগে গেলো।আর মনে মনে ভাবলো জান্নাতের সামনে এভাবে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারলো রুয়েল?
ঊর্মি নিজেও আর থাকলো না রান্নাঘরে। চলে গেলো তার রুমে।আর এদিকে জান্নাত একা একা চা বানাতে লাগলো।

চার কাপ দুধ চা নিয়ে জান্নাত প্রথমে ঊর্মির ঘরের দিকে যেতে ধরলো।সে রুমের ভিতরে না ঢুকে দরজাতে ঠকঠক করে আওয়াজ করলো।ঊর্মি শব্দ শুনে বের হয়ে আসলো।জান্নাত তখন বললো ভাবি আপনাদের চা।ঊর্মি চায়ের ট্রে টা হাতে নিয়ে বললো রুমে এসো জান্নাত।জান্নাত তখন বললো, না ভাবি।এখন যাবো না।পরে আসবো।মার চা টা দিয়ে আসি আগে।এই বলে জান্নাত তার শাশুড়ীর রুমে চলে গেলো।আর ওনার রং চা টা দিয়ে দিলো।

জান্নাত এবার রুয়েলের আদা দিয়ে রং চা নিয়ে রুমে প্রবেশ করলো।রুয়েল ছিলো না রুমে।জান্নাত তখন খুঁজতে খুঁজতে রুয়েলকে বেলকুনিতে খুঁজে পেলো।
জান্নাত কে দেখামাত্র রুয়েল চায়ের কাপটা তার হাতে নিয়ে বললো,শুধু আমার জন্যই এনেছেন?আপনি খাবেন না?
জান্নাত মাথা নিচু করে বললো,না খাবো না আমি।আপনিই খান।এই বলে জান্নাত চলে যেতে ধরলো।

রুয়েল তখন জান্নাতের হাত ধরে বললো, কই যাচ্ছেন আপনি?থাকেন এখানে।চা খাই আর গল্প করি।
জান্নাত তখন বললো, আমার কাজ আছে এখন।হেনা দুপুরের খাবার রেডি করছে।আমাকে ওর সাথে থাকতে হবে।
–বাহঃ,একদিনেই দেখি সংসারে বেশ মনোযোগী হয়েছেন?কিছুদিন একটু রেস্ট নিন।নতুন বউ এর এতো কাজ মানায় না।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে চুপ করে রইলো।সে আর তার শাশুড়ীর কথা বললো না।তার শাশুড়ী যে তাকে রান্না করার সময় হেনার সাথে কাজ করতে বলেছে কথাটা গোপনই রাখলো জান্নাত।

হঠাৎ রুয়েল জান্নাতের মুখের উপর থেকে কাপড় টা সরিয়ে দিয়ে বললো,এখনো চাঁদের মতো মুখখানা ঢেকে রাখতে হবে?আমাকে কবে আপনি আপন মানুষ ভাববেন জান্নাত?আমি তো আপনার স্বামী হই তাই না?

জান্নাতের মনেই ছিলো না সে রুয়েলের রুমে এসেছে।তার এখন মুখ টা খুলে রাখা উচিত।রুয়েল তখন জান্নাতের মাথা থেকেও কাপড়টা সরিয়ে দিলো আর বললো,আমার রুম থেকে যখন বাহিরে যাবেন তখন যা মন চায় পড়বেন,বোরকা,নিকাব,হিজাব যা ভালো লাগে পড়বেন।বাট আমার সাথে যখন থাকবেন তখন একদম এসব ঘোমটা পড়ে থাকবেন না।
জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।সে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।হঠাৎ রুয়েল জান্নাতের মুখখানা হাত দিয়ে উপরে ওঠালো আর বললো,আমার বউ এর মুখখানা দেখলে আমার শান্তি লাগে।ভীষণ ভালো লাগে আমার।বুঝেছেন?

জান্নাত সেই কথা শুনে মুচকি একটা হাসি দিলো।আর রুয়েল তা দেখে বললো, এই যে হাসি টা দিলেন,এই হাসিটা দেখার জন্য এতোক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম।এই বলে রুয়েল চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললো, মাশাল্লাহ খুব সুন্দর চা বানায়ছেন।আমি তো ভেবেছিলাম পারবেন না।

জান্নাত সেই কথা শুনে আরো একটা মুচকি হাসি দিলো।
রুয়েল হঠাৎ জান্নাতকে তার কাছে টেনে নিলো আর তার ঠোঁটে একটা কিস করলো।জান্নাত এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।সে রুয়েলের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।
রুয়েল তখন আবার জান্নাতকে তার কাছে নিলো আর বললো জান্নাত আপনি কি আমাকে মন থেকে পছন্দ করেছেন?সত্যি করে বলবেন প্লিজ।
জান্নাত মাথা নাড়িয়ে বললো হ্যাঁ।
রুয়েল তখন জান্নাতকে জড়িয়ে ধরে বললো, তাহলে এতো দূরে দূরে থাকেন কেনো?সত্যি কি আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছেন?

জান্নাত কি উত্তর দেবে ভেবে পাচ্ছিলো না।সে মনে মনে ভাবলো আমি যেমন বর আশা করেছিলাম তার থেকেও হাজার গুন ভালো বর পেয়েছি।এই কথাটা আপনাকে কি করে বোঝায়?আপনি অনেক ভালো একজন বর।আমিও আপনাকে ভীষণ পছন্দ করি।
হঠাৎ রুমের মধ্যে হিয়া প্রবেশ করলো,সে চিৎকার করে ডাকলো চাচ্চু কই তুমি?তোমার ফোনটা নাও।

হিয়ার ডাক শুনে জান্নাত রুয়েলের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।আর তাড়াতাড়ি করে গায়ে মাথায় ভালো করে ওড়না টা দিয়ে নিলো।হিয়া রুমে না পেয়ে সেও বেলকুনিতে চলে এলো।

রুয়েল হিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বললো,মামুনি গেম খেলা শেষ হলো তোমার?
–হ্যাঁ চাচ্চু।এখন আমি আসি।আব্বুর সাথে এখন আমরা শোরুমে যাবো।এই বলেই হিয়া দিলো এক দৌঁড়।
জান্নাত তখন বললো,আমাকেও এখন যেতে হবে।
–না যাবে না তুমি।দাঁড়াও একটু।এই বলে রুয়েল আলমারি থেকে একটা ফোন বের করে জান্নাতের হাতে দিলো।আর বললো,এটা আজ থেকে আপনি ইউজ করবেন।যখন মন চাইবে তখন ই বাড়িতে ফোন দিবেন।তাহলে ভালো লাগবে আপনার।আর ওদের জন্য মন খারাপও হবে না।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, আমি ফোন দিয়ে কি করবো?লাগবে না আমার।তারচেয়ে বরং ফোনটা ভাবিকে দিয়ে দিন।তখন যে বললো ওনার ফোন নষ্ট হয়েছে।
রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, এটা আমি আপনার জন্যই এনেছি জান্নাত।ভাবি আর ভাইকেও নতুন ফোন দিয়েছে।
জান্নাত তখন বললো আমার এতোবেশি দরকার নেই ফোনের।আপনি ওটা ভাবিকেই দিয়ে দিন।

রুয়েল আর একবারও রিকুয়েষ্ট করলো না।সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
জান্নাত তা দেখে ভীষণ কষ্ট পেলো।সে বুঝতে পারলো রুয়েল মন খারাপ করেছে।কিন্তু জান্নাত চিন্তা করেছে অন্যটা।সে মনে মনে ভাবলো,ভাবি যখন তার হাতে নতুন ফোনটা দেখবে তখন নিশ্চয় তিনি মন খারাপ করবেন।যেটা মোটেও ভালো দেখাবে না।অন্যদিকে আবার রুয়েল ভালোবেসে তাকে গিফট করতে চাচ্ছে সেজন্য না নিলে উনি আবার মন খারাপ করবেন।সেজন্য জান্নাত ভীষণ টেনশনের মধ্যে পড়ে গেলো।

দুপুরের খাবার রেডি করছে ঊর্মি আর হেনা।জান্নাত আর রুমে না থেকে তাড়াতাড়ি করে নিজেও রান্নাঘরের দিকে গেলো।কারণ জান্নাতকে কেউ না ডাকলেও তার শাশুড়ী বলেছে সে যেনো একা একাই রান্নাঘরের দিকে যায়।আর নিজের থেকে সাহায্য করে ওদের।
জান্নাত রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ঊর্মি রান্না করছে।আর হেনা সবজি কাটছে।জান্নাত কি কাজ করবে বুঝতে পারলো না।সে তখন নিজেই বললো,ভাবি আমাকে দিন।আমি রান্না করি।ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো,তুমি রান্না করবে?পারবে রান্না করতে?
–না তেমন একটা পারি না।তবে চেষ্টা করবো ভাবি।
ঊর্মি সেই কথা শুনে বললো আরেকদিন চেষ্টা করিও।আজ তোমার ভাই বাহিরে যাবে।সেজন্য তাড়াতাড়ি রান্নাটা শেষ করতে হবে।
জান্নাত সেই কথা শুনে হেনাকে বললো,আমাকে দিন সবজিগুলো।আমি কেটে দিচ্ছি।
হেনা সেই কথা শুনে জান্নাতকে বটি আর সবজিগুলো দিয়ে দিলো।

জান্নাত সাহস করে কাটা শুরু করলো সবজিগুলো।যদিও সে মাঝে মাঝে হেল্প করতো তার মাকে।
তার মা সবসময় শুধু বলতো রান্নাবান্না না শিখলে মানুষের বাড়িতে গিয়ে দিনরাত গাল খেতে হবে।সেজন্য এখনি শিখে নি সব।জান্নাত রান্নাবান্না শেখার জন্য আগ্রহ দেখালেও জান্নাতের বাবা আবার কাজ করতে দিতো না তাদের।তিনি সবসময় বলতেন যখন সময় হবে তখন এমনিতেই শিখে নেবে।এখন একটু আরাম আয়াশেই কাটাক।পরের বাড়িতে গেলে তো আর বসে রাখবে না।এজন্য জান্নাত রান্নাবান্না কিছু পারে না।তবে মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে তার মায়ের রান্না করা দেখতো।তার বাবা বাসায় না থাকলে মাঝে মাঝে নুডুলস,ডিম ভাজি,খিচুড়ি এগুলো বানাতো।এই পর্যন্ত
জান্নাতের দৌঁড়।

জান্নাত ধীরে ধীরে সবজিগুলো কাটতে লাগলো।তা দেখে ঊর্মি বললো হেনা তাড়াতাড়ি সবজি গুলো কেটে নে।জান্নাতের অনেক দেরী হবে।ও যেভাবে কাটছে দুপুর পার হয়ে বিকাল শুরু হবে।
সেই কথা শুনে হেনা হো হো করে হেসে উঠলো। আর জান্নাতের থেকে সবজি আর বটি নিয়ে নিজেই আবার কাটা শুরু করলো সবজিগুলো।
ঊর্মির কথা শুনে জান্নাত ভীষণ কষ্ট পেলো।সে বুঝতেই পারছে না রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থেকে সে করবে টা কি?

হঠাৎ জান্নাতের শাশুড়ী আসলো রান্নাঘরে।তিনি এসেই বললেন,জান্নাত ঘর থেকে আমার চায়ের কাপ টা এনে ধুয়ে রাখো।আমার জমিয়ে রাখা কাজ একদম ভালো লাগে না।যখনকার কাজ তখনি করবা।আর হ্যাঁ চা পাতি আর চিনিটা একটু বেশি হয়েছে।পরবর্তীতে একটু কম করে দিবে।
জান্নাত সেই কথা শুনে তার শাশুড়ীর ঘর থেকে চায়ের কাপ টা আনতে গেলো।সে যখন চায়ের কাপ টা নিয়ে বেসিনের দিকে আসছিলো তখনি তার ঊর্মির কথা কানে গেলো।
ঊর্মি তার শাশুড়ী কে বলছে,এমন অকর্মা মেয়ে জীবনেও দেখি নি মা।আমাদের জন্য যে দুধ চা বানায়ছে তা ভালো করে একটু জালও দেয় নি।কাঁচা দুধ দুধ গন্ধ।রুবেল তো খেতেই পারে নি।বাচ্চারাও খায় নি।ওকে আবার বলেন না মা।
–তোমরাই তো চয়েজ করেছো এই মেয়ে।এখন আবার এরকম করছো কেনো?
–আমরা কি আর জানতাম এতো অকর্মা।তাছাড়া আমি তো জানি গ্রামের মেয়েরা সব কাজই পারে।তারা ছোটো থেকে রান্নাবান্না শেখে।

ঊর্মির কথা শুনে জান্নাতের চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।সে তবুও নিজেকে সামলিয়ে নিলো।তারপর কাপটা পরিষ্কার করে রেখে দিলো।সে আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে চলে গেলো।

জান্নাতের শুধু বার বার ঊর্মির কথাগুলোই মনে হচ্ছে।সে মন খারাপ করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।তার কেনো জানি খুব খারাপ লাগছে।চোখ দিয়ে এমনিতেই টপটপ করে পানি পরছে।

হঠাৎ রুয়েল প্রবেশ করলো রুমে।সে জান্নাতকে জানালার রেলিং ধরে হেলান দিয়ে থাকা দেখে বললো, জান্নাত কি হয়েছে আপনার?শরীর কি ঠিক আছে?এই বলে রুয়েল জান্নাতের কাছে এগিয়ে এসে ওর কপালে হাত দিলো।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here