খুব করে চাই তোকে পর্বঃ ৩য় লেখিকাঃ লিজা

0
611

গল্পঃ খুব করে চাই তোকে
পর্বঃ ৩য়
লেখিকাঃ লিজা

হৃদ ভাইয়ার সামনে খাতা কলম হাতে বসে আছি।আমার চোখে মুখে অস্বস্তির ছাপ দেখতে পেয়ে উঠে দাড়িয়ে পরলো সে।ঘুরে এসে আমার পেছনের থেকে হাতের আঙুলগুলো কলমে বাঁধিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো।আমি ব্যাথা পেয়ে উহু বলে উঠলাম। আমার মুখটা চেপে ধরে ধমক দিয়ে বলল,

—“লেখাপড়ায় মন নেই? ডাক্তার হওয়া এতো সোজা? আগের সেমিস্টারে টেনেটুনে পাশ করেছিলি।এখন কোনো ফাঁকি বাজি চলবে না।নূরও নেই। দরকার পড়লে সারা রাত তোকে আমি পরাবো।নে খাতা বের কর।আর যা বলি তাই নোট কর।”

আমার এখন কান্না পাচ্ছে খুব।এতো নিষ্ঠুর কেন এই মানুষটা? আমি পড়বো না তাও পড়াবে।বাইরে সবাই কত্ত আড্ডা দিচ্ছে।কত্ত মজা করছে।আর এই মানুষটা আমাকে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছে।এগুলো বই? মনে তো হচ্ছে এক একটা পাহাড়। যা আমার মাথার উপর ভেঙে ভেঙে পরছে।

আমাকে পিঠে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো,

—“এখনো বসে আছিস তুই?”

আমি ভয়ে ভয়ে খাতা খুললাম। তারপর যেটা দেখলাম সেটা দেখে আমার হিচকি উঠতে লাগলো।খাতাটা বন্ধ করতে গেলাম আমি।আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো সে।এক টানে খাতাটা আমার হাত থেকে নিয়ে নিলো।মনে মনে বলছি আজ আমি শেষ।কে করলো এমন একটা কাজ?

হৃদ ভাইয়া আমার হাত ধরে জোরে টেনে দাড় করালো।আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কাগজটা সামনে ধরে বলল,

—“কি এসব?”

হৃদ ভাইয়ার চোখদুটো রাগে গজগজ করছে।ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।কিভাবে বাঁচবো আজ? আমি আমতা আমতা করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

—“কি এসব?”

আমাকে এক ধাক্কায় টেবিলের উপরে ফেললো।দুই হাত দিয়ে কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরলো।মুখের সামনে মুখটা এনে আস্তে করে বলল,

—“তুই কি ছেলেটাকে ভালোবাসিস?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে না অর্থ বোঝালাম। আমাকে আবারও প্রশ্ন করলো,

—“পরে তো বাসতে পারিস।আজ চিঠি দিয়েছে পরে অন্য কিছু দেবে।এভাবে তোর মনে জায়গা করে নেবে ছেলেটা একদিন।তুই ভালোবাসবি ওই ছেলেটাকে? বল ফুল ছেলেটার প্রতি তোর মনে কোনো ভালো লাগা কাজ করে?”

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে আবারও না অর্থ বোঝায়।হৃদ ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা উঠিয়ে এক কোণায় গিয়ে কার সাথে যেন কথা বলতে থাকে।আমি কাগজটার দিকে তাকায়।কাগজটায় লেখা আছে,

—“প্রিয় ফুল।আমার ফুল।তোমাকে আমি যতোই দেখি ভালো লাগে।আমি জানি তোমার মনেও আমাকে নিয়ে অনুভূতি কিছু আছে।তাই তো তোমার সামনে এসে দাড়ালে আমার বুকটা ধরফর ধরফর করে।তোমাকে আমি ফুলের মতোই ভালোবাসি।তুমিও যদি আমায় ভালোবাসো তাহলে বলোনা ভালোবাসি নাহিদ।তোমার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়তমা।”

কাগজটা যতো পরছি মেজাজটা ততোই খারাপ হচ্ছে আমার।মনে মনে বলছি,

—“নাহিদের বাচ্চা নাহিদ।একবার এখান থেকে বের হই তোর পিরিতের গুষ্টি আমি উদ্ধার করবো।”

ফোনে কথা বলার পরে হৃদ ভাইয়া আমার পাশে দাড়ালো।আমার হাতটা ধরে বললো,

—“নূরকে ফোন করেছি ও চলে আসবে। আমাদেরকেও পৌঁছাতে হবে চল।”

আমি জানতে চাইলাম,

—“কোথায় যাবো?”

আমার কোনো কথার উত্তর দিলো না।অথচ আমাকে ধমক দিয়ে নিজের সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।গাড়িতে উঠেও অনেকবার জানতে চেয়েছি কিন্তু কোনো উত্তর নেই।বেশি কথা বললে চোখ রাঙানো আর ধমক তো আছেই। গাড়িটা এসে কাজি অফিসের সামনে দাড় করিয়ে বলল আমাকে নামতে।আমি কথা মতোন নামলাম। ভয় পাই বলে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না।আপুকে দেখতে পেলাম। আপুর কাছে হৃদ ভাইয়ার সামনে কিছু জিজ্ঞাসাও করতে পারছি না আমি।আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলে কাজি বলে উঠলো বর, কনে কোথায়? আপু আমাকে আর হৃদ ভাইয়াকে দেখিয়ে দিলো।আমি অবাক। হা হয়ে আছি।আজ আমার কেমন করে বিয়ে?

একটা কথা বলারও সুযোগ দিলো না হৃদ ভাইয়া আমাকে।যা যা বলল অক্ষরে অক্ষরে মানলাম।বিয়ে সম্পুর্ণ হলো।আপু আমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেলো।গাড়িতে বসে আছি দুজনে।হৃদ ভাইয়া হঠাৎ করে বলে উঠলো,

—“আমাদের বিয়ের কথাটা যেন বাড়িতে কেউ না জানে ফুল।তাহলে সবাই খুব কস্ট পাবে।এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত সবাইকে না জানিয়ে কাজটা যখন করেই ফেলেছি।”

এখন আমার একটু সাহস জাগলো মনে।আমি সংশয় কাটিয়ে বলে উঠলাম,

—“বিয়েটা কেন করলে তুমি?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“তোর ক্যারিয়ারের কথা ভেবে।আমি চাই না তুই নস্ট হয়ে যাস।যে কোনো ছেলের সাথে রিলেশনে জড়িয়ে নিজের সময়টা নস্ট করিস।তোকে একজন বড় ডাক্তার হতে হবে।ভালোভাবে লেখাপড়া করতে হবে।ওইসব ছেলেরা শুধু প্রেম করবে সময় কাটানোর জন্য। কাল তোকে ভালো লাগবে না অন্য কাউকে নিয়ে সময় কাটাবে।তোর এই ছোট্ট মনটা একটা বারের জন্যও ভাঙুক সেটা আমি চাই না।”

আমি বললাম,

—“কেন চাও না? কেন তোমার জীবনের সাথে আমাকে জড়ালে তুমি?”

একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

—“তোকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয় তাই।”

আমি বললাম,

—“শুধু চিন্তা হয় বলে বিয়ে করে নিলে?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“হ্যাঁ।তোর কখনো ভালোবাসতে ইচ্ছে করলে আমাকেই বাসিস।আমি কখনো তোর মন ভাঙবো না।”

আমি বললাম,

—“ভালোবাসবো তোমায়?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“বাসিস।কাউকে নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করলে আমাকে নিয়েই ভাবিস।”

কথাটা বলে হৃদ ভাইয়া গাড়ির পেছনের সিট থেকে একটা বই নিজের সামনে আনলো।বইয়ের ভাজে রাখা একটা ছবিতে আলতো করে হাত বুলিয়ে ছবিটা ছিড়ে টুকরো গুলো জানালার কাঁচ দিয়ে বাইরে ছুড়ে মারলো।

ছবিটা কার ছিলো? আমার দেখতে খুব ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু সাহস হয় নি ছিড়ে ফেলার আগে হাত থেকে টান দিয়ে দেখে নিতে।

আমাকে বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে হৃদ ভাইয়া হসপিটালে ফিরে গেলো।বলল কাউকে না বলতে বিয়েটার কথা।আমার পেটে আবার কথা থাকে না বেশিক্ষণ। বিয়ে করলাম বেস্ট ফ্রেন্ডদের জানাবো না? দিলাম মিনি, নিশিকে কল আর বললাম হৃদ ভাইয়া আমাকে বিয়ে করে নিয়েছে।কথাটা শুনে ওদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা।আমি বেশ মজাই আছি।হৃদ ভাইয়া আমার স্বামী। উফফ দারুণ তো ব্যাপারটা। মিনি, নিশির ক্রাশ এখন শুধুই আমার।ভাবতে বেশ খুশি খুশি লাগছে।আমার কারণে ছ্যাঁকা খেলো দুজনে।ভালোবাসতে বলেছে হৃদ ভাইয়া আমাকে। ভাবতেও বলেছে। কিন্তু কি ভাবা যায়?

বিছানার উপরে গিয়ে গুটিশুটি হয়ে বসলাম। চোখ বন্ধ করলাম এবার। দেখতে পেলাম হৃদ ভাইয়ার রাগান্বীত মুখটা, ধমকানো কন্ঠস্বরটা।আমাকে ধমকিয়ে বলছে পড়া শেষ না করলে পড়ার টেবিলের থেকে উঠতে দেবে না।আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে।চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসতেই দিচ্ছে এক চড়।রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছে রাতে কোনো ঘুম নাই।শুধু পড়া আর পড়া।এমন সময় কাকিমণি আর মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম।চোখ মেলে তাকালে তাদের হাসিমুখটা দেখলাম।আমার পাশে বসে দুজনে একসাথে বলে উঠলো,

—“বিয়ে করবি ফুল? ভালো একটা ছেলে আছে। বি সি এস ক্যাডার।নূরের বিয়েতে তোকে একবার দেখে পছন্দ করে ফেলেছে।ছেলেটা মেঘেরই কাজিন হয়।বাবা-মাকে পাঠিয়েছে প্রস্তাব নিয়ে।তুই চাইলে একবার দেখতে পারিস।”

তাদের কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম। মা আমার হাতটা টেনে ধরে বলল,

—“কিরে চল।”

আমি মাথা নাড়িয়ে।হাতটা ছাড়িয়ে কাকিমণির দিকে তাকিয়ে বললাম,

—“আমি বিয়ে করবো না এখন।”

কাকিমণি বলল,

—“কেন করবি না? এতো ভালো ছেলে। আচ্ছা ফুল তুই কোনো রিলেশনে জড়িয়েছিস নাকি?”

আজব প্রশ্ন তো।এ কোন বিপদে পরলাম আমি? না থাক, এখন কিছু বলা যাবে না।যা করার হৃদ ভাইয়া করুক।আমার এতো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার থেকে যা বলছে তাই শোনায় উত্তম। মা আর কাকিমণিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইশারায় বললাম চলো।আমাকে দেখে যখন জিজ্ঞাসা করলো আমি রাজি কিনা আমি ঝট করে হ্যাঁ বলে রুমে চলে আসলাম। বাইরে কি কথা হচ্ছে তা আমার জানার দরকার নেই।

____________

________

রাত ১ঃ০০ বাজে। সকলেই ঘুমিয়ে পরেছে।হৃদ ভাইয়া ডিনারের সময় কথাটা জানতে পেরে খাবার ঠেলে নিজের রুমে চলে গেছে।তারপর আর রুম থেকে বের হতে দেখিনি।আমিও যাই নি তার কাছে।এখন পড়ার টেবিলে বসে হাই তুলছি আমি।ঝিমাচ্ছি কিন্তু ঘুমাচ্ছি না।অপেক্ষা করছি যদি হৃদ ভাইয়া আসে।হঠাৎ দরজার কড়াঘাত শুনতে পেলাম। আমি ছুটে গিয়ে দরজাটা খুললাম।দেখলাম হৃদ ভাইয়া খুব রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি কিছু বলতে যাবো আমাকে এক ধাক্কায় ঘুরিয়ে নিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরলো।এবার আমার মুখের দিকে তাকালো।আমি নিশ্চুপ হয়ে আছি।আমাকে ঝাঁকিয়ে বলল,

—“কোন সাহসে তুই বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলেছিস? চুপ করে আছিস কেন উত্তর দে? এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোকে আমি দিয়েছে?”

আমি চোখ বন্ধ করে আস্তে করে বললাম,

—“এতে আমার কি দোষ, হৃদ ভাইয়া? কি বলতাম আমি?”

আমাকে ছেড়ে দিলো।আমি চোখ খুলে দেখলাম হৃদ ভাইয়ার চোখের চাহনীতে রাগ নেই।আমি এবার বললাম,

—“আমার খুব ভয় লাগে হৃদ ভাইয়া। এভাবে কেন কথা বলো আমার সাথে সবসময়?”

হৃদ ভাইয়া বলল,

—“ভয় পাওয়ার কি আছে।আমি তোর স্বামী।আমার কাছে না শুনে তুই কিচ্ছু করবি না।”

আমি বললাম,

—“স্বামী? কখনো সেই ভাবে কথা বলেছো আমার সাথে তুমি? যখনই সামনে আসো চিৎকার, চেচামেচি আর রাগ।জোর করে কখনো নিজের স্বীদ্ধান্ত চাপিয়ে দাও আমার উপর।তো কখনো ইচ্ছার বিরুদ্ধে একশটা আদেশ চাপিয়ে দাও। ভালোবাসার কখনো সুযোগ দিয়েছো?”

কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ছুটে বিছানার এপাশে এসে বসলাম। মুখটা টিপে ধরে রেখেছি। এভাবে কখনো হৃদ ভাইয়াকে বলবো আগে ভাবি নি।এখন হৃদ ভাইয়া কি বলবে সেটা শুনার অপেক্ষা।

হৃদ ভাইয়া এসে একটানে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।ভয় করছে আমার।হাত, পা কাঁপছে থরথর করে।আমাকে অবাক করে দিয়ে দু’গাল আকড়ে ধরে বলল,

—“আর ভয় পেতে হবে না আমাকে।এখন থেকে স্বামী মনে করে যা বলতে ইচ্ছে হয় আমাকে বলিস।”

কথাটা যেন নেশার মতোন টানতে লাগলো।আমি এক ঘোরের মধ্যে ডুব দিলাম। হৃদ ভাইয়ার চোখে চোখ রাখলাম। ট্রি শার্টটা খামচে ধরে বললাম,

—“কিস মি।”

আমাকে সরিয়ে দাড়িয়ে পরল হৃদ ভাইয়া।মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,

—“কি বলছিস ফুল? রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পর।”

আমি নড়েচড়ে উঠলাম।হৃদ ভাইয়া রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।কিছুটা এগিয়ে থেমে গেলো। ঘুরে এসে আমার পাশে বসলো।আমার গালটা শক্ত করে আকড়ে ধরে আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট জোড়া মিলিয়ে দিলো।মুহূর্তের মধ্যে কিছু বুঝতে পারলাম না।চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। তখনই ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে বলল হয়েছে? আমি মাথা ঝাঁকালাম। আস্তে করে বললাম,

—“কিছুই বুঝলাম না।কি হলো এটা?”

হৃদ ভাইয়া আমার চুলের ভাজে হাত ডুবালো।মাথাটা শক্ত করে আকড়ে ধরে সারা গালে, বুকে আর গলায় ঠোঁটের আলতো পরস ছুঁইয়ে দিয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো।যখনই উঠে দাড়ালো আমি হাতটা ধরে মুখটা মলিন করে বললাম,

—“যেও না হৃদ ভাইয়া।”

হৃদ ভাইয়া মৃদু হেসে বলল,

—“তুই একটু অপেক্ষা কর।আমি দরজাটা বন্ধ করে আসছি।”

আমি হাতটা ছেড়ে দিলাম। হৃদ ভাইয়া দরজাটা বন্ধ করে এসে আলোটা নিভিয়ে দিলো।

চলবে,,,

পরবর্তী পর্বের জন্য সবাই লাইক/কমেন্ট আর ফলো দিয়ে একটিভ থাকুন 🔥❤️
পেইজ – নিবেদিতা ❤️

পর্ব – ৪
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=998689278205904&id=100041945238687&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here