ডুবেছি_আমি_তোমাতে #লেখিকা_Aiza_islam_Hayati #পর্ব_০৮

0
267

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#লেখিকা_Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_০৮
“কোন হা’রা’ম’জা’দা রে আমার বাইকের সামনে এসে ব’জ্জা’তে’র মত গাড়ি থামায়।আমার মেজাজ আজ এমনিতেই তুঙ্গে উঠে আছে তুই আমার মেজাজ সপ্তমে পৌঁছে দিয়েছিস হা’রা’মী।তোর গাড়ির উপর আমি বুলডোজার চালিয়ে দিবো।তোর গাড়ি আমি বো’ম দিয়ে উড়িয়ে দিবো।শা’লা আজকে যদি একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যেত কী হতো?আমি যদি টপকে যেতাম আমার ভবিষৎ জামাই তো বিধবা হয়ে যেত।”,লায়ানা চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে।

লায়ানা আবার থেমে গিয়ে বিড়বিড় করে বলে,” বিধবার মেল ভার্সন কী?”

লায়ানা পুনরায় চেঁচিয়ে বলে উঠে,” তুই গাড়ির থেকে বেরিয়ে আসবি নাকি আমি তোকে বের করে আনবো?বেরিয়ে আয় বলছি।এমন ক্যা’লা’নি ক্যা’লা’বো না তোর ৩৬ গুষ্টির নাম তোকে মনে করিয়ে দিবো।”

গাড়ি থেকে আহনাভ বেরিয়ে আসে।আহনাভকে দেখে লায়ানার মুখের শাটার পুরোই বন্ধ হয়ে যায়।
আহনাভ লায়ানার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,”আমি ঠিক দেখেছি তাহলে।”

আহনাভ বড় বড় পা বাড়িয়ে লায়ানার ঠিক সামনে এসে দাঁড়ায়।লায়ানা শান্ত চাহনিতে আহনাভের দিকে তাকিয়ে আছে।(লায়ানার পরনে কালো ক্রপ টপ তার উপর কালো জ্যাকেট,কালো জিন্স।জ্যাকেট এর হাতের দিকটা ফোল্ড করায় বা হাতের কে’টে যাওয়া অংশ টা স্পষ্ট হয়ে আছে।চুল গুলো উন্মুক্ত এলোমেলো হয়ে আছে।কপালের বা দিক ফেঁ’টে ফিনকি দিয়ে র’ক্ত বেয়ে বেয়ে গাল ঘেঁষে পড়ছে।চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। )

আহনাভ চেঁচিয়ে বলে,” কুইক তমাল গাড়ির ডিকি থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে অনো।”

লায়ানা চমকে যায় আহনাভ কে এইভাবে চেঁচাতে দেখে।

দুজনের মাঝের যা দুরত্ব ছিল তা ঘুচিয়ে আহনাভ এগিয়ে এসে বলে উঠে, ” কপাল ফে’টে র’ক্ত পড়ছে হাতের কত খানি কে’টে ভিতরের মাং’স দেখা যাচ্ছে,এইসব কী হাল করেছো হায়া।এই অবস্থায় বাইক চালাচ্ছো কিভাবে?কিভাবে হলো এইসব?”

লায়ানা আহনাভের ঘাবড়ে যাওয়ার মুখ দেখে হেসে উঠে।লায়ানাকে হাসতে দেখে আহনাভ ভ্রু কুঁচকে ফেলে।লায়ানা হাসি থামিয়ে বলে,”যেভাবেই হোক না কেনো তোমাকে কেনো বলবো?আর আমার কিছু হলে তো তোমারই সুবিধা হবে তোমার পিছনে কেউ টো টো করে ঘুরবে না।না তোমার মাথা চিবিয়ে খাবে বকবক করে।”

“জাস্ট শাট আপ হায়া।”

লায়ানা ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলে,” লায়ানা ইউ জাস্ট শাট আপ।”

আহনাভ বড় এক নিশ্বাস ফেলে বাইক থেকে বাইকের চাবি খুলে নিজের পকেটে নিয়ে নেয়।

লায়ানা ভ্রু কুচকে বলে উঠে,” এই আমার বাইকের চাবি নিলে কেনো?আমার এখন তোমার সাথে প্রেমালাপ বা তোমাকে এখন জ্বালানোর একদম ইচ্ছে নেই।চাবি দাও বাড়ি যাবো আমি।”

আহনাভ তর্জনী তুলে ধমকের স্বরে বলে,”একদম চুপ কোনো কথা না।”

“আমার পক্ষে এইখানে থাকা আর সম্ভব না আমার বাইকের চাবি দাও বলছি।আমি বাড়ি যাবো আমার এখন বাড়ি যাওয়া প্রয়োজন।”

তমাল ফার্স্ট এইড বক্স আনতেই আহনাভ ফার্স্ট এইড বক্স থেকে তুলো বের করে লায়ানার কপালের বা দিকে চেপে ধরে।লায়ানা ব্যাথায় মৃদু স্বরে ‘আহ’ করে উঠে।আহনাভ ঘাবড়ে গিয়ে বলে,” বেশি ব্যাথা লাগছে?”

লায়ানা মুখ ফুলিয়ে বলে,” ব্যাথা দিয়ে বলছে ব্যাথা লাগছে কিনা , ব’জ্জা’ত লোক।”

আহনাভ ভ্রু কুচকে তাকায়।লায়ানার কপালের দিকের রক্ত মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তারপর হাত ধরতেই লায়ানা দুষ্টু হেসে বলে,”হাউ রোম্যান্টিক আহনাভ!”

আহনাভ গরম চোখে তাকায় লায়ানার দিকে।লায়ানা ঠোঁট টিপে হাসে।আহনাভ লায়ানার হাতে ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে, ” নিজের এই অবস্থা কিভাবে করেছো?”

“উষ্টা খেয়ে পড়ে গেছিলাম।”

” তুমি কী আমাকে বলদ ভাবো? এমন আজগুবি কারণ বলবে আমি বিশ্বাস করে নিব?সত্যি করে বলো কিভাবে হয়েছে হাতের কেটে যাওয়া দাগ দেখে মনে হচ্ছে ছুরি দিয়ে আঘাত লেগেছে।”

” তুমি জেনে কী করবে কিভাবে কী হয়েছে?”

আহনাভ লায়ানার হাতের ব্যান্ডেজ করে লায়ানাকে টেনে বাইক থেকে নামিয়ে দাড় করিয়ে দেয়।

“কী হলো বাইক থেকে নামলে কেনো?”

“আমি এই অবস্থায় তোমাকে বাইক চালিয়ে যেতে দিবো না।তাই তুমি আমার সাথে যাবে।আমি তোমাকে বাড়ি ড্রপ করে দিবো।”

“আহনাভ এমন গাঁজাখুরি কথা বলো না তো।আমি তোমার সাথে গেলে আমার বাইকের কী হবে।আর এইটা আমার পছন্দের বাইক আমি এইটা এইখানে রেখে যাবো না।”

আহনাভ বিড়বিড় করে বলে,” এমন ভাব করছে যেনো কোনো পিচ্চির থেকে তার খেলনা নিয়ে নিচ্ছে।” আহনাভ পকেট থেকে বাইকের চাবি বের করে তমালের হতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,” তমাল তুমি হায়ার বাইক টা নিয়ে আসো।”

“মানে?” লায়ানাকে কিছু বলতে না দিয়ে লায়ানার হাত ধরে আহনাভ গাড়ির সামনে নিয়ে আসে।লায়ানা আবার কিছু বলতে নিবে তার আগেই আহনাভ লায়ানাকে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে দেয়।আহনাভ ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে অতঃপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।

লায়ানা সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,” এই ব্যান্ডেজ এইসবের প্রয়োজন ছিল না।আমাকে ঐভাবে যেতে দিলেও কিছু হতো না।আমি ঠিক চলে যেতে পারতাম।আমার জন্য এত্ত না করলেও হতো।”

আহনাভ স্টেরিং ঘুড়িয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে , “তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও আমি হেল্প করতাম তো এত্ত না ভেবে নিজের ব্রেইন টাকে শান্তি দাও।”

লায়ানা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো কোনো উত্তর দিলো না সে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।আহনাভ লায়ানার দিকে একবার তাকালো মলিন কণ্ঠে বলল,” হায়া ঠিক আছো?”

লায়ানা চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”এইটাও কী মানবতা দেখিয়ে বলছো?” আহনাভ কিছু বলল না। আহনাভের উত্তর না পেয়ে লায়ানা চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আহনাভ সামনে দৃষ্টি রেখে গাড়ি চালাতে ব্যাস্ত।

লায়ানা বলে উঠে,” তমাল কী আমার বাইক নিয়ে আসছে? ও কী আমাদের পিছনেই আছে?”

” হ্যা।”

“তাহলে গাড়ি থামাও।এই লায়ানা করো মানবতা দয়া নেয়ার জন্য বসে থাকে না।আমি নিজেই চলে যেতে পারি।”

আহনাভ ভ্রু কুচকে তাকায়।লায়ানা জোরে বলে উঠে,” বলছি গাড়ি থামাতে গাড়ি থামাও আহনাভ।আমার মেজাজ এমনিতেই তুঙ্গে উঠে আছে আর রাগবে না।”

আহনাভ মনে মনে হাসলো লায়ানাকে রাগাতে পেরে।

আহনাভ ধমকের স্বরে বলে উঠে,” একদম পেঁচাল পারবে না চুপচাপ বস।” আহনাভ থেমে আবার বলা শুরু করে,” আচ্ছা তখন কী গালি গুলো যেনো দিচ্ছিলে? কী যেনো বলেছিলে আমার গাড়ি বুলডোজার আর বো’ম দিয়ে উড়িয়ে দিবে?আর কী যেনো বলছিলে”

লায়ানা মুখ ফুলিয়ে বসে বলে , “তো কী আর বলতাম ঐভাবে গাড়ি এসে থামালে মন তো চাইছিল তুলে আছার মারি।তোমার জায়গায় অন্য কারো গাড়ি থাকলে নিশ্চিত আমি ওকে পানি তে চুবিয়ে ধরে রাখতাম।এমন জম্পেশ ক্যা’লা’নি ক্যা’লা’তাম যে ওর ৩৬ গুষ্টির নাম মনে করিয়ে দিতাম।”

“মাঝে মধ্যে আমার কী মনে হয় জানো?”

“আমাকে নিয়ে তোমার আবার কী মনে হতে পারে।ঐযে মনে হয় যে আমি বেশরম,বেহায়া।”

“তোমার মুখের শাটার অফ দাও।আমার কথা শুনো ।আমার মনে হয় তুমি কোনো গুন্ডার ফিমেল ভার্সন।মনে হয় ওই আ’ন্ডা’র গ্রা’উ’ন্ড মা’ফি’য়া গুলো হয় না ওদের মত একেবারে সারাক্ষণ মেজাজ তুঙ্গে তুলে রাখো কথায় কথায় মে’রে ফেলার হু’ম’কি দাও।”

“তোমার যা ইচ্ছে মনে হয় তাই ভাবতে পারো।”

আহনাভ মুখে মিথ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে,”মানে আমার পিছনে এক মাফিয়া গার্ল ঝুলে আছে!”

লায়ানা আড় চোখে তাকিয়ে বলে,” বেশি ভেবে ফেলছ না।”

” মজা করলাম।”

“তুমি আবার মজা করতে পারো।পারো তো সবসময় খ্যাট খ্যাট করতে।”

“তাহলে কী তোমার সাথে প্রেমালাপ করবো?”

লায়ানা মুচকি হেসে বলে,” করতেও পারো আমি কিছু মনে করবো না।”

আহনাভ আড় চোখে তাকিয়ে বলে,”তুমি মেয়েটা আসলেই বেশরম।”আহনাভ গাড়ি ব্রেক করে বলে,”বের হও গাড়ি থেকে।”

লায়ানা ভ্রু কুচকে বলে,”কেনো?”

“গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখো।”

লায়ানা গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে গাড়ি ওদের বাড়ির সামনে এসে থেমেছে।লায়ানা আহনাভের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।লায়ানা বলে,”আসার সময় আমি তো একবারও বাড়ির রাস্তা দেখায়নি চিনলে কিভাবে?”

“এর আগে একবার মুরাদ মামাকে পিক করার জন্য এই বাড়ির সামনে এসেছিলাম।” বলেই গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হন করে গাড়ি নিয়ে চলে যায় আহনাভ।

লায়ানা হা করে আহনাভের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তমাল লায়ানার বাইক নিয়ে লায়ানার সামনে এসে বাইক থামিয়ে বলে,” ম্যাম আপনার বাইক।”

“ওহ।আচ্ছা তমাল তোমার এই ব’জ্জা’ত স্যার কী সবসময় এমনি বাংলার পাঁচের মতো মুখটা ঝুলিয়ে রাখে।”

তমাল ঠোঁট টিপে হেসে বলে,” ম্যাম স্যার তো অলওয়েজ তার মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখে কিন্তু আপনার সামনে এইভাবে বাংলার পাঁচের মতো মুখটা ঝুলিয়ে কেনো রাখে আমি বুঝি না।”

“ভাবনার বিষয় তমাল!আচ্ছা তমাল আমি কী দেখতে খুব খারাপ জে তোমার স্যার আমাকে পাত্তা দেয় না।”

তমালের কানে ওয়ারলেস ব্লুটুথ।আহনাভ তমাল কে ফোন করলে তমাল ওয়ারলেস ব্লুটুথের সাহায্যে ফোন রিসিভ করে কিছু বলবে ঐপাশ থেকে আহনাভ বলে উঠে,”কী কথা বলছো ওর সাথে?আমি চলে যাই নি।আমি রাস্তার এপাশেই গাড়ি থামিয়ে রেখেছি তুমি আসো তমাল।”

তমাল কিছু বলবে।লায়ানা বলে উঠে,”কী হলো আমি সুন্দর না বলে কী কিছুই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে না তোমার।”

“ম্যাম আপনি মাশাল্লাহ খুব কিউট।”

“কই আমি তো দেখতে কালো।”

” ম্যাম আপনি হচ্ছেন শ্যামবতী।আপনার এই রূপের বর্ণনা করতে গেলে রাত পেরিয়ে যাবে।”

লায়ানা প্রসন্ন হেসে বলে,” জানো তমাল তোমার মত আমার একটা ভাই আছে।ও দেখতে অনেকটা তোমার মত।গায়ের রঙ টা তোমার মতোই ফর্সা ওর নাম আহান ও কানাডা থাকে ওকে যদি বলি আমি সুন্দর না ও সবসময় বলে আমার শ্যামবতী বোন তুই।তোমার কথা শুনে ওর কথা মনে পড়ে গেলো।”

তমাল হেসে কিছু বলবে ঐপাশ থেকে আহনাভ বলে উঠে,”হায়ার সাথে দাড়িয়ে রূপ নিয়ে কীসের কথা তোমার?ওর রূপের বর্ণনা তোমার দিতে হবে না।এক্ষুনি ওর বাইক ওকে বুঝিয়ে দিয়ে ফাস্ট আস।নাহলে আমি বেরিয়ে আসলে তোমার রূপের ক্লাস নিব।”

তমাল বাইক থেকে নেমে বলে,” ম্যাম এইযে আপনার বাইক আমি যাই।”বলেই তমাল বাইক থেকে নেমে রাস্তার ওইপাশে দৌড় লাগায়।

লায়ানা ভ্রু কুচকে বলে,” এর আবার কী হলো?”

লায়ানা বাইকের চাবি দারোয়ান কে দিয়ে বাইক গ্যারেজে রেখে দিতে বলল।অতঃপর বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে অগ্রসর হলো।বাড়ির ভিতর ঢুকাতে ঢুকতে ভাবতে লাগলো আজ তার সাথে কী কী হয়েছে

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here