নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ৩০

0
411

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩০

সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামল সুন্দরনগরে এসেছে ইমদাদ হোসেন মৃধা। তিস্তার বিয়ের সময় তাকে ডিপার্টমেন্ট থেকে ছুটি দেওয়া হয়নি। তাছাড়া কাজের অনেক চাপ ছিল। এখন চাপ কম থাকার কারণে তিস্তার জন্য উপহার নিয়ে এসেছে। ট্রেশন থেকে সোজা ব্রিজের সামনে এসে রিকশা থামে। ইমদাদ হোসেন রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। আহসান বাড়িটা নদীর এপার বলে ব্রিজ পর্যন্ত যেতে হয় না। তবে ব্রিজের কাছে না গেলে রিকশা পাওয়া যায় না। এজন্য ব্রিজের কাছে যেতে হয়। তবে মৃধা বাড়ি ওপাড় বলে ব্রিজ দিয়ে নদী পাড় হতে হয়। ইমদাদ হোসেন প্রথমে নিজের বাড়িতে যেতে চায়। ব্রিজের দুইপাশেই সারিবদ্ধ দোকান। ইমদাদ হোসেনকে দেখে দোকানদার চা বানানো রেখে বলে, “মৃধা সাহেব, মেয়ে নিখোঁজ কাল থেকে আর তুমি আজকে আসলে?”

“মেয়ে নিখোঁজ মানে?”

“তোমার মেয়ে আরুর কথা বলছি গো। কেন তুমি জানো না? তোমার মেয়েটার ভাগ্যে কী লেখা আছে, কে জানে। গতবার তানারা তোমার মেয়েকে নিয়ে গেল। এবার একদল ছেলে তোমার মেয়েকে নিয়ে গেল। পুলিশ সকালে এসে খোঁজ করেছিল, তখনই জেনেছি।”

ইমদাদ হোসেন বাক্যরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আরুদের বাড়িতে কোনো ফোন নেই। আরুর বড় চাচার ঘরে একটা ল্যান্ডফোন আছে, সেটা দিয়ে কথা বলে ইমদাদুল। কিন্তু গতকাল কেউ তাকে ফোন করে আরু নিখোঁজের ব্যাপারটা জানায়নি। ইমদাদ হোসেন ছুটে বাড়ির দিকে চলে গেলেন। যেতে যেতে হোঁচট খেয়ে এক জোড়া স্যান্ডেজ ছিঁড়ে ফেললেন। জুতা জোড়া হাতে নিয়ে ছুটে বাড়িতে পৌঁছে গেলেন। দেখতে পেলেন, অয়ন তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে খেলাধুলা করছে। ‘বোনের দুর্দশায় ভাই হোক ছোট বা বড়ো’ – সে থাকবে টঠস্ত। কিন্তু অয়নের এমন ভাব দেখে ইমদাদ হোসেন ভাবলেন, মশকরা করেছে লোকজন। রোয়াকে জিনিসপত্র রেখে বলে, “তোর বুবু আর মা কোথায় অয়ন?”

“মা পশ্চিম পাড়ায় বুবুর জন্য কাঁদছে। পরশুদিন তিয়াস ভাই সুমি ভাবীকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। কালকে শেফালী বুবু বি/ষ খেয়েছিল। সবাই শেফালী বুবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় বুবু পিছনে পিছনে গিয়েছিল। তখন থেকে বুবু নিখোঁজ। সবাই বলছে ওকে কেউ অ/পহ/র/ণ করেছে।” খেলতে খেলতে বলে অয়ন। পরপর তিনটি ঘটনায় ইমদাদ হোসেনের মাথায় স্বচ্ছ পরিবেশের মধ্যেও বাজ পড়ে। প্রতিবার তার আগমনে ছেলে ও মেয়ের মাঝে আনন্দের আমেজ পড়ে। ছেলের এমন গুরুত্বহীন কাণ্ডে ইমদাদ হোসেন ধরে নেয়, আরুকে হিং/সার কারণ। ইমদাদ হোসেন পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস করলে একটা পেয়ারা তার মাথায় পড়ে। ইমদাদ হোসেন গতি রোধ করে উপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই একটা তাবিজ ঝুলন্ত অবস্থায় দেখল গাছের মগডালে। হাত বাড়িয়ে নাগালে পেল না তাবিজখানা। গাছে উঠে তাবিজখানা নামানো জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করতেই ভেসে এলো চিৎকার। ইমদাদ হোসেন স্থির না থেকে ছুটে গেলেন পাড়ায়। পারুল আরুর শোকে কাঁদছে আর বড়ো বউ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

“আমার মেয়েটা কোথা গেল ভাবী? কালরাত থেকে খুঁজে পাচ্ছি না। কালরাতে অয়নকে দুধ দেয় নি, এজন্য মেয়েটাকে আমি চ/ড় মেরেছি। অনেক কথা শুনেছি। মেয়েটা মনে হয় রাগ করে কোথাও চলে গেছে।” প্রলাপ ব/কে চলেছে পারুল। বড়ো বউ সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “তাহলে মেয়েটা যখন কাছে থাকে, তাহলে কেন ওকে মারো?”

“গুনধর পুত্রকে দুধ দেয়নি, এজন্য মে/রেছে। আমার মেয়েটাকে একদম সহ্য করতে পারে না।” বিরক্ত নিয়ে বলে ইমদাদ। পারুল স্বামী দিকে তাকিয়ে কান্নায় প্রবল ভেঙে পড়ে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে তৃতীয় ব্যক্তিকে নিষিদ্ধ করে বড়ো বউ চলে গেল। পারুল তখন কাঁদতে কাঁদতে ইমদাদকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি এসেছ, যেভাবে হোক আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমি আর কখনো ওর গায়ে হাত দিবো না।”

“কেঁদো না। আমি আছি। সব ঠিক করে দিবো। আর নিখোঁজের ব্যাপারটা তুমি আমাকে কেন জানলে না, পারুল?”

“তুমি ঢাকাতে থাকো। তুমি চিন্তা করবে, এজন্য আমি কিছু জানাইনি।”

“সন্ধ্যা হয়ে গেছে। হাঁস মুরগি খোপরে ঢুকিয়ে আহসান বাড়িতে চলো। তোমাকে এখানে একা রাখতে আমার ভয় করছে এমন। ভাইজানের সাথে কথা বলতে হবে।”

“ছাগলদের গোয়ালে দিয়েছে, হাঁসমুরগির খোপরে দিয়েছি। এখন আর কোনো চিন্তা নেই। আর ভাইয়া বলেছে, যেভাবে হোক আরুকে খুঁজে নিয়ে আসবে।”

অতঃপর বাড়িতে লম্বা একটা তালা ঝুলিয়ে ইমদাদ ও পারুল আহসান বাড়ির দিকে গেল। অয়নের ভাব দেখে তার দাদির কাছে রেখে আসল।
__

চিনের তৈরি চৌচালা ঘর কালাচাঁনদের। সেই বড়ো ঘরে কালাচাঁন ও তার বৃদ্ধ মা থাকে। কালাচাঁনের আম্মা সুন্দরী ভর সন্ধ্যায় উঠান ঝাড়ু দিতে ব্যস্ত। তখন সেখানে প্রবেশ ঘটে অপূর্বদের। আশেপাশে তাকিয়ে তিস্তা বলে, “এটাই কালাচাঁন বাড়ি আর উনি কালাচাঁনের মা‌। আগেরবার ওনার কাছেই কালাচাঁনের নামে বিচার দিয়েছিলাম।”

“তোরা থাক, আমি ছলেবলে কথা শুনে আসছি।” বলেই অপূর্ব এগিয়ে যায়। কালাচাঁন মা সুন্দরী অপূর্বকে দেখে ঝাড়ু দেওয়া বন্ধ করে বলে, “তুমি কে বাবা, আমার বাড়িতে কী করো?”

“আমি কালাচাঁনের বন্ধু। কালাচাঁন বাড়িতে আছে‌ চাচি?”

“না বাজান, কালাচাঁনরে বাড়িতে পাওয়া যায় না। ও সারাদিন রাস্তায় টইটই করে। শুধু ওয়াক্ত মতো একে গিলে যায়।” বলতে বলতে আবার সুন্দরী ঘর ঝাড়ু দিতে থাকে। কালাচাঁনের এই বাড়িটি একদম ভেতরের দিকে এবং এদিকে কোনো ঘর নেই। এরমধ্য লম্বা দৈত্যের মতো ছায়া বাড়ির উঠানে পড়ে। অপূর্ব কান পেতে শুনতে পারল পাতার উপরে হাঁটার শব্দ। তাই তিস্তাদের কাছে গিয়ে আড়াল হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রকট হয় কালাচাঁন। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে উঠানে এসে সুন্দরীকে বলে, “কী রান্না করেছ আম্মা?”

“ছিপ ফেলে শোল মাছ ধরেছিলাম বাড়ির পেছন থেকে। সেটাই রান্না করেছি। তুই আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে এলি যে, তোকে তো রাত দশটার আগে বাড়ির আশেপাশে দেখা যায় না।”

“বিলের মাঝখানে আমাদের সে আম বাগান আছে না? লোকেরা না-কি আম পেরে বিক্রি করছে, খবর পেয়েছি। তাই একজন বন্ধুকে নিয়ে সেখানে থাকব। সেখানে তো ঘর করা আছে, আমাদের অসুবিধা হবেনা। এখন রাতের জন্য খাবার নিতে এসেছি। নিয়েই ফিরে যাবো। যা রেঁধেছ, নিয়ে এসো। হাতে একদম সময় নেই।” কালাচাঁনকে প্রচণ্ড ভয় পায় সুন্দরী। ছেলের মুখের উপর কোনো কথা না বলে ঝাড়ু রেখে ঘরে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর গামছা মুড়িয়ে খাবার নিয়ে এসে কালাচাঁনের হাতে দেয়। কালাচাঁন খাবার নিয়ে পূর্বের পথ ধরে চলে যায়। পরক্ষণে ছেলের গমন পথের দিকে তাকিয়ে ঘরে ঢুকে খিল তুলে দিলেন সুন্দরী‌। আড়াল থেকে অপূর্বরা বেরিয়ে আসে। তুর সন্দেহ নিয়ে বলে, “আমার মনে হয়, ঐ বিলের মাঝেই আরুকে ব/ন্দি করে রাখা হয়েছে।”

তিস্তা বলে, “হতে পারে, নাহলে যে কালাচাঁন বাড়ির কোনো খবর নেয় না, কাজ করে না। সে হঠাৎ রাস্তায় আড্ডা দেওয়া রেখে কেন বিলের মাঝে থাকবে? আমাদের গিয়ে দেখতে হবে।”

কালাচাঁনদের বাড়ির পাশ গিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদীর পানি জোয়ারের জন্য ক্ষেতে উঠে আবার ভাটায় নেমে যায়‌। বারো মাস ভিজে থাকে। এখন জোয়ার বইছে তাই ভিটার চারপাশের ছোটো নালাতে পানি জমে আছে। কালাচাঁন লাফ দিয়ে সেই নালা পেরিয়ে পানির মাঝে ছোপ ছোপ করে হেঁটে চলেছে। আলো বিম্ব জানাচ্ছে কালাচাঁনের গতিপথ। অপূর্বর নালা সম্পর্ক কোনো ধারণা নেই। তাই কদম ফেলে কালাচাঁনের পথ ধরতেই নালার ভেতরে পড়ে গেল। বেকায়দায় পড়ে পা মচকে ফেলেছে। অপূর্ব সেখানে পড়ে চাপা আর্তনাদ করতেই তিস্তা ও তুর ধরে তুলে অপূর্বকে। অপূর্ব পায়ের দিকে না তাকিয়ে ক্ষেতের দিকে তাকাচ্ছে। ততক্ষণে কালাচাঁন মিলিয়ে গেছে অন্ধকারে। অপূর্ব পা ফেলতে পারছে না ব্যথায়।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

কখনো কাউকে কিছু না বললেও আজকে বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভালো না লাগলে ইগনোর করুন।
১. গল্পটা আগে ভালো লাগত, এখন না-কি আপনাদের বেহুদা লাগে?
-যেই পর্যন্ত বেহুদা লাগে না, সেই পর্যন্ত পড়ুন। যেগুলো বেহুদা লাগে, সেগুলো ইগনোর করার অনুরোধ।

২. আপনারা গল্প পড়তে আসেন তৃপ্তির জন্য, কিন্তু আমার গল্প পড়ে কষ্ট পান?
-আপু, জীবনে মুস্কিলের পর আসান, আসনের পর মুস্কিল। এভাবে চলতেই থাকে। মানুষের চরিত্র নিয়ে যখন লেখছি, তাই সমস্যা ও সমাধান দুটোই থাকবে। আমি যেহুতু রম্য গল্প লিখছি না, তাই দুঃখ থাকবেই।

৩. আপনাদের জন্য আমি ‘এ শহরে তুমি নেমে এসো’ (অপূর্ব আরু) গল্পটা যথেষ্ট থিম থাকার পরেও ৪৩ পর্বে ইন্ডিং টেনেছি। অনেক পাঠক, আমাকে অনুরোধ করেছিল গল্পটা সম্পূর্ণ লিখে শেষ করতে। অনেক মেসেজ থেকে এই গল্পটি লিখছি তাদের জন্য।

বিদ্র: এই গল্পের যতটা থিম আছে‌(আমি ভেবে রেখেছি)। আমি সম্পূর্ণ লিখে গল্প শেষ করব। ধন্যবাদ সবাইকে💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here