#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার (পাখি )
”
”
”
”
”
সারারাত জমজমাট বৃষ্টি থাকার পর সকাল ভোরে বৃষ্টি থামল।বৃষ্টি থেমে গেলেও বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব এখনও রয়ে গেছে।বৃষ্টি শেষের স্নিগ্ধ বাতাস শরীরে লাগলেও যেন প্রশান্তি ছেয়ে যায় সমস্ত হৃদয় জুড়ে।প্রায় অনেকক্ষন যাবত রুদ্ধ বিরক্ত হয়ে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে আছে।বিরক্তির মাত্রা অতিক্রম হতেই চিল্লিয়ে উঠে।
“কি হলো সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছি তোমার নাম কি, কোথায় থাকো?তার উত্তর না দিয়ে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদার কারন আমি দেখছি না।লুক এসব ন্যাকামি সহ্য করার শক্তি আমার মাঝে নেই।তাই ভালোয় ভালোয় যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দাও।নাহলে একবার আমার হাত উঠলে কেউ থামাতে পারবে না।
অটোমেটিকলি কান্না বন্ধ হয়ে গেল মেয়েটির।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে গালের নোনা জল মুছলো।তবে লাভ হলো না কোনো!চোখের পলক ঝাপটা দিতেই আবারও গাল বেয়ে অশ্রু ঝড়ে পড়লো।মেয়েটি মাথা নিচু করে বলতে থাকে।
” আমার নাম উম্মে তাহিয়্যাহ্ হুর।গ্রামের বাড়ি নিতাইগঞ্জ।বাবা-মায়ের এক মাত্র সন্তান আমি।বয়স ১৭ পেরিয়ে ১৮ এর ঘরে।অর্থ কম থাকলেও আমাদের পরিবারে সুখ শান্তির কখনও কমতি হয় নি।বাবা সামান্য এক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন,মা ছিলেন গৃহিণী।বেশ শান্তির সাথে আমাদের জীবন চলছিল।কিন্তু এই শান্তি বেশিদিন টিকতে পারলো না।জীবনে নেমে আসলো আজমল নামক ঝড়।সবে মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পা দিয়েছিলাম।তখন থেকে আজমলের নজরে পড়ে যাই আমি।প্রতিদিন কলেজের বাহিরে অপেক্ষা করা, বিভিন্ন ধরনের প্রেমের ইঙ্গিত দেয়া সব কিছুই করতো।সে সবে পাত্তা দিতাম না আমি। সে পাত্তা না পেয়েই বোধহয় আরও বেশি করে আমার পিছু নেয়া শুরু করে।এক সময় আমি বিরক্ত হয়ে বাহিরে যাওয়া কমিয়ে দেই।যেদিন সরাসরি আজমল আমায় প্রেমের বার্তা দেয় সেদিন বাসায় জানিয়ে দেই।বাবা প্রথমে অনেক রেগে গিয়েছিলেন এসব শুনে।কয়েকদিন কলেজে যেতে মানা করলে আমিও বিনা দ্বিধায় তা মান্য করি।বেশিদিন কলেজ না গিয়ে থাকতে পারিনি সামনে পরিক্ষা বলে কথা।প্রায় এক সপ্তাহ পর কলেজে যাই তাও বাবা কে নিয়ে। বাবা সাথে থাকায় আজমল প্রথম প্রথম আমায় বিরক্ত করতো না।চান্স পেত না!কারন দিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে যাওয়া বাবাই করতো। তা ছাড়া আমিও আর বের হতাম না কলেজ থেকে।সে যে আমার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করতো তা ভালো করেই বুঝতে পারতাম। কিন্তু বুঝেও অবুঝ হয়ে থাকতাম।কারন একটাই তাকে আমি পছন্দ করতাম না।তিনি ছিলেন বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান।গুন্ডামী যেন তাদের রক্তের সাথে মিশে ছিল।কথা বলার স্টাইল, চলার স্টাইল সব কিছু দিয়েই তাকে গুন্ডা বলে গণ্য করা যায়।অর্থের সাথে পাওয়ার ও তাদের অনেক ভালোই আছে গ্রামে।এমন কি খু’ন করলেও তাদেরকে কেউ প্রশ্ন করতে আসবে না।কোনো মতে পেরিয়ে যায় তিন মাস।প্রতিদিনের মতো সেদিন ও কলেজে যাই বাবার সাথে।কলেজ শেষে ফেরার সময় বাবার সামনেই আজমল আসে।বাবা স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করে।
“কি হয়েছে ছোট চৌধুরী আপনি পথ আটকে দাঁড়ালেন যে?
“আজমল আমার দিকে একবার তাকিয়ে বাবার দিকে চোখ রেখে বলে।
“দেহেন লিয়াকত আলী আমি এত ঘুরায় প্যাচায় কথা কইতে পারি না। তাই সোজাই কইতাছি আপনার মেয়েরে আমার পছন্দ হইছে।ওরে আমি বিয়া করবার চাই।আজ সন্ধায় আমার বাসার মানুষ যাইবো আপনাগো বাসায় বিয়ার তারিখ ঠিক করানোর লেইগা।সব কিছুর প্রস্তুতি নিয়া রাইখেন গেলাম।
“বাবার কথার জবাব না শুনেই জায়গা ত্যাগ করে আজমল।বাবা আর আমি অনেক বিস্মিত হয়েছিলাম আজমলের কথা শুনে।এভাবে যে হুট করে বিয়ের কথা বলবে তা আঁচ করতে পারিনি আমরা।বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।
” চিন্তা করো না আম্মু আমি আছি তো!আমি বেঁচে থাকতে কখনও ওই গুন্ডাটার সাথে তোমার বিয়ে হতে দিব না।আজ আসতে দাও তার পরিবারকে আমিও আজ চুপ করে থাকবো না।
“দুশ্চিন্তা নিয়ে বিকেল অব্দি বসে ছিলাম রুমের মধ্যে।অনেক মানুষের শোরগোল এর শব্দ শুনে বুঝতে পেরেছিলাম আজমলের পরিবারের মানুষরা এসেছেন।পরে কি হবে ভাবতেই ভয় হতে লাগলো।বাহিরে কি হচ্ছে জানার জন্য রুম থেকে বের হলাম।বসার ঘরে সবাই বসে ছিল।কেউর নজর যেন না পড়ে আমার দিকে এমন ভাবে এক কোনায় লুকিয়ে তাদের কথা শুনছিলাম।
” দেখুন চৌধুরী সাহেব আমি আমার মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে রাজি নই।আপনি অন্য কোথাও গিয়ে আপনার ছেলের জন্য বউ খুজুন। কিন্তু আমার মেয়ের দিকে আর নজর দিবেন না দয়া করে।
বড় চৌধুরী বাবার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললেন।
“কেন আমার ছেলের মধ্যে কি কমতি আছে যে তুমি আমার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছো?
“প্রথমত আমার মেয়ে এখন অনেক ছোট।এখনও কলেজের গন্ডি পার করেনি। বিয়ে নিয়ে এখনও কোনো কিছু ভাবিনি।আর যদিও মেয়ের বিয়ে নিয়ে ভাবি তাহলে কখনও আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি নই।কারন আমার মেয়ের মতো নম্র, ভদ্র,শিক্ষিত মেয়ের জন্য আপনার ছেলের মতো উগ্র,বেয়াদব, লাজহীন,অশিক্ষিত ছেলের হাতে কখনই আমি আমার মেয়ে তুলে দিব না।আপনাদের প্রচুর অর্থ আছে তার মানে এই না যে আমি আমার মেয়েকে নরকে ঠেলে দিব।আপনারা মানুষ খু’ন করতে দ্বিতীয় বার ভাবেন না। এমন পরিবারে আমি আমার ফুলের মতো মেয়েকে কখনও বিয়ে দিব না।
বাবার কথা শুনে চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্য রেগে যায়।বড় চৌধুরী অনেক রাগ নিয়ে বললেন।
“রীতিমতো তুমি আমাদের অপমান করছ লিয়াকত আলী।তুমি কি ভুলে গেছো তুমি কার সাথে কথা বলছো?আমার ছেলেকে বেয়াদব অশিক্ষিত বলার সাহস কোত্থেকে পাও তুমি?চাইলে আমি এই মুহূর্তে তোমার জিভ টেনে কুকুরদের খাওয়াতে পারি।কিন্তু একমাত্র আমি আমার ছেলের কারণে এসব কোনো কিছু করতে পারছি না। আমার ছেলের প্রাণ ভোমরা তোমার মেয়ে। অনেক ভালোবাসে তোমার মেয়েকে।আমাদের বাড়িতে তোমার মেয়ে থাকলে রানীর মত হয়ে থাকবে।আর তুমি জানো চৌধুরীরা একবার কোন কথা বললে তা না করে ছাড়ে না।আমার ছেলে যেহেতু বলেছে তোমার মেয়েকেই বিয়ে করবে তাহলে তোমার মেয়েই হবে আমার পুত্রবধূ।
“আমি কখনো আপনার ছেলের মত অমানুষের হাতে আমি আমার মেয়েকে তুলে দিব না।আপনি একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হয়ে এসব কিভাবে বলতে পারেন? আপনি কি জানেন না আপনার ছেলে কেমন?নিজে শিক্ষিত হয়েছে কিন্তু ছেলেকে শিক্ষিত করতে পারেননি।সে যাই হোক এসব আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না কিন্তু আপনার ছেলেকে বলে দিবেন আমার মেয়ের পিছু যেন না নেয়। আমি কোন মতেই আপনার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে হতে দিব না।
আফজল আগে থেকেই রেগে ছিল।এখন এসব শুনে আফজল আরো অনেকটা রেগে যায়।বসা থেকে উঠে বাবার কাছে এসে গলা চাপ দিতে গিয়েও দেয় না।রক্তচক্ষু নিয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বলে।
“অনেক হইছে লিয়াকত আলী অনেক কইছস তুই।তোর বুকের পাটা দেইখা আমি অবাক হইতাছি। তুই কার সাথে কথা বলতাছোস, কার সামনে কথা বলতেছস তাকে তুই ভুইলা গেছোস?আর তুই কি মনে করছিস তুই তোর মাইয়ারে আমার কাছে বিয়া না দিলেই বিয়া হইবো না?বিয়া তো অবশ্যই হইবো তাও আবার তোর মাইয়ার লগেই।সামনে শুক্রবারেই তোর মাইয়ার লগে আমার বিয়া হইবো।তোর ইচ্ছাতে না হইলে জোর কইরা হইবো। তাও এই বিয়া হইবো।
কথা শেষে আজমল চলে গেল আজমলের সাথে সাথে চৌধুরী বাড়ির সব সদস্য ও আজমলের পিছু পিছু গেল।এদিকে বাবা, আমি, আম্মু তিনজনই আজমলের কথা শুনে ভীষণ ভয় পেয়ে যাই।আজমল যেহেতু একবার বলেছে এ বিয়ে হবে তাহলে এই বিয়ে হয়েই ছাড়বে। বেশ দুশ্চিন্তায় যাচ্ছিল আমাদের সেই সময়টা।প্রায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।বাবা কোন কিছু না বলে সোজাতার কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন।যখনই বাবার কোন দুশ্চিন্তা হয় তখন তিনি একা থাকতে পছন্দ করেন।তাই আমরাও এ নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না।মধ্যরাতের সময় বাবা কক্ষ থেকে বের হয়ে আমাদের সামনে এসে বসেন।
“আজমল একবার যা বলে তা করেই ছাড়ে। তারমানে সে হুরকে বিয়ে করেই ছাড়বে।আর আমি জীবিত থাকা অবস্থাতে কোন মতে আমি আমার মেয়েকে ঐ গু’ন্ডার সাথে বিয়ে দিব না।তাই আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আমার বন্ধু রফিকের ছেলের সাথে হুরের বিয়ে দিব।ছেলেটাকে সবদিক থেকেই আমার ভালো লাগে।নম্র ,ভদ্র ,শান্ত -শিষ্ট ,দেখতে সুন্দর, শিক্ষিত এবং কি এখন সে তার বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে।আমি রফিকের সাথে হুরের ব্যাপারটা আলোচনা করেছি। রফিক ই আমাকে এই সম্বন্ধটা দেয়।তাই আমিও আর দ্বিমত করিনি।শুক্রবার এর আগে আগেই চাচ্ছি তারিফের সাথে হুরের বিয়েটা সেরে ফেলতে।ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হলে মানুষ জানাজানি হবে না।পরশুদিন ই রফিক আসছে তার ছেলেকে নিয়ে। সেদিন ই বিয়ে দিয়ে মেয়ে বিদায় দিয়ে দিব।আমার সিদ্ধান্তে তোমার মত আছে তো হুর?
“তুমি যা বলবে বাবা তাই হবে। আমি জানি তুমি কখনো আমার খারাপের জন্য কোন কিছু করবে না।
দু’দিন কেটে গেল।শান্তিতে দিন না কাটলেও অশান্তি নামক আজমলের দেখা মিলে নি।আজ রফিক কাকাদের আসার কথা।বিয়ে এবং আজমলকে নিয়ে ভীষণ ভয় হচ্ছিলো।একবার যদি আজমলের কানে যায় বিয়ের খবর তাহলে সব কিছু লণ্ডভণ্ড করতেও পিছু পা হবে না।সন্ধ্যা ৭:০০ টায় রফিক কাকারা চলে আসেন। সাথে করে কাজী ও নিয়ে আসেন।খুব দ্রুত বিয়ে পড়ানো হবে দেখে আম্মু আমাকে বলে রেডি হয়ে নিতে। তাদের আনা কাপড় গহনা আম্মু আবার পরিয়ে রেডি করিয়ে দেন।কিছু সময় পর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বসার ঘরে।আড়চোখে একবার সবার দিকে তাকিয়ে সবাই কে দেখলাম।বেশি মানুষ আসে নি ছেলে সহ ৬ জন এসেছে।কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে।যে মুহূর্তে কবুল বলতে যাব তখনই ঠা’স করে বসার ঘরের দরজা ভেঙে আজমকল হাজির হয়।আজমল কে দেখে আমরা সবাই ভয় পেয়ে যাই।আজমল বাবার কাছে এসে চিল্লিয়ে বলে।
“ওই তুই কোন সাহসে হুরের বিয়া ঠিক করছোস?আমি তোরে কই নাই হুর শুধু আমার বউ হইবো?তারপরেও তুই ওর বিয়া ঠিক করলি কেন?তোরে তো আমি..
বলেই বাসার সব আসবাবপত্র ভাঙা শুরু করে।তারিফ এগিয়ে এসে কোনো কিছু বলতে নিলে আজমলের চা’মচা রা সবার মাথায় বন্দুক ঠেকায়।আজমল তারিফের কাছে গিয়ে শক্ত হাতে মা’রতে থাকে।তারিফ শত চেয়েও আজমল কে আটকাতে পারে না।বাবা নিজের রাগ সামলাতে না পেরে আজমল কে ঠা’টিয়ে এক চ’ড় মারে।এই চ’ড়টাই যেন জীবনের সব চেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনলো।আজমল পরপর বাবাকে পাঁচটা চ’ড় মারলো।হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি আর আম্মু।আমরা ভাবতে পারিনি আজমল বাবার গায়ে হাত তুলবে।আজমল বাবার গাল চেপে ধরে বলে।
” কু**বাচ্চা আমি তোর সাহস দেইখা অবাক হইতাছি।তুই কার গায়ে হাত দিছোস তুই কি ভুইলা গেছোস?কোন হাত দিয়া আমারে মারছোস?এই হাত দিয়া না?
ডান হাত ধরে সাথে সাথে গু’লি করে দিলো।প্রায় সাথে সাথে সবাই চিল্লিয়ে উঠি।আমি আর আম্মু হাউমাউ করে কান্না করা শুরু করে দিয়েছি।বাবা তার ডান হাত ধরে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কাতরাচ্ছে।গলগল করে রক্ত ঝরে পড়ছে।আমি বাবার কাছে এগিয়ে যেতে চাইলে আফজল আমাকে ধরে নেয়।হাত মুচড়ে ধরে বলে।
“অনেক শখ না বিয়া করার?তোরে কইছিলাম না শুক্রবারে তোরে আমি বিয়া করমু?তারপরও কোন সাহসে তুই আজ এই ব্যাটার লগে বিয়া করতাছোস?তোরে কে কইছে বিয়া করতে?এই মা** বাচ্চা?আইজ তো আমি ওরে ছাড়মু না।
বলেই আমাকে ছেড়ে ইচ্ছে মতো বাবাকে মারতে শুরু করলো।আমি বাবার কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছি কিন্তু আফজলের লোকরা আমায় ছাড়ছে না।এদিকে আম্মু আফজলের পা ধরে কান্না করতে করতে বলে।
” বাবা আমার স্বামীরে তুমি ছেড়ে দাও।অনেক কষ্ট হচ্ছে উনার।দোহাই লাগে বাবা ছেড়ে দাও উনারে।
থেমে গেল আফজল।আমার দিকে তাকিয়ে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে তার সাথে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি বারবার তার হাত নিজের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।এক সময়ে হাতে কামড় দিয়ে দৌড়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরি।বাবার দিকে চোখ যেতেই বাবার কাছে যেতে নিলে আবারও আফজল আমার হাত ধরে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সবার চোখ দিয়ে ইতিমধ্যে গড়গড় করে পানি পড়ছে।বেদনাদায়ক চোখের পানিগুলো আফজলের চোখে পড়ছে না।আফজল এবার আমার কাছে এসে অতি শান্ত স্বরে বলল।
“হুর তুমি চলো আমার লগে।তোমার বাপের মত আমি তোমারে মারতে চাই না।তুমি জানো না আমি তোমার কত ভালবাসি?এখন সুন্দর মাইয়ার মতো আমার লগে চলো। নাইলে দ্বিতীয় গু’লি তোমার বুকে পড়বো।
আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আফজলের কলার ধরে চিল্লিয়ে বলি।
“মেরে ফেলুন আমায় তবু আমি আপনার সাথে যাব না।আপনি পাষাণ!আমার বাবাকে গু’লি করার আগে কি একবারও হাত কাপলো না?আপনি না আমায় ভালোবাসেন?তাহলে কিভাবে আপনার ভালোবাসার মানুষের বাবাকে গু’লি করতে পারেন?আমি ম’রে যাব তাও আপনাকে বিয়ে করবো না।বাবা ঠিকই বলতো আপনি একটা বেয়াদব, লম্পট, অশিক্ষিত, খু’নি।খু’নিরা কখনো কাউকে ভালবাসতে পারে না।আপনি একটা খু’নি।হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি খু’নি।
আফজল তখন খু’নি শব্দটা নিতে না পেরে..
থেমে গেল হুর।রুদ্ধ কঠিন গলায় বলল।
” তারপর?
“ওরা মে’রে ফেলেছে আমার বাবা মাকে।সবাইকে মে’রে ফেলেছে।আমাকেও চেয়েছিলো মে’রে ফেলতে কিন্তু পারে নি।তার আগেই গ্রামের এক মহিলার সাহায্যে পালিয়ে আসি।মাঝে শিকার হই নরপশুদের হাতে।কোনরকমে নিজেকে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে দৌড় লাগাই।দৌড় লাগাতে লাগাতে এক সময় কাউকে দেখতে পেয়ে ভরসার আলো জ্বলে উঠে।তাই জাপটে ধরি তাকে তারপর আর কোন কিছু মনে নেই ।
ফুপিয়ে কাঁদা এখনো বন্ধ হয়নি হুরের।মাথা নিচু করে এখনো কান্না করেই যাচ্ছে।রুদ্ধ লেডি সার্ভেন্টকে ইশারায় টেবিলে খাবার দিতে বলে হুরের মুখ পানে চাইল। অতি শান্ত স্বরে বলল।
“তাহলে এখন কি করবে কোথায় যাবে কি করার চিন্তা আছে?
অশ্রুসিক্ত নয়নে মাথা তুলে এ তাকালো হুর।লোকটার চেহারা দেখে অনুমান করা যাচ্ছে সে হুরের কথা আদৌ বিশ্বাস করেছে কি না!হুর অনুরোধে স্বরে বলল।
“আমাকে দয়া করে আপনি থাকার একটা জায়গা করে দিন।আমার থাকার মত এখন কোন জায়গা নেই।এই অচেনা শহরে কেউ আমার আপন নেই।দরকার হলে আমি ছোটখাটো কোন জব করব।জব করে নিজের ভরণপোষণ চালাবো।কিন্তু তার আগ অবদি আমায় থাকার কোনো ব্যবস্থা করে দিন প্লিজ।
রুদ্ধ সোফা থেকে উঠে নিজের পোশাক ঝাড়তে ঝাড়তে বলে।
“যতদিন ইচ্ছে এই বাড়িতে থাকতে পারো।চাওয়ার আগে সবকিছু পেয়ে যাবে। কোন জব করার দরকার নেই।আর হ্যাঁ আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।এখন এসো নাস্তা খেয়ে নিবে।খাবারের পর মেডিসিন ও আছে তোমার।
হুর সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতেই পায়ে ঝিলিক দিয়ে ব্যথা জানান দিল।হালকা স্বরে আর্তনাদ করে উঠলো।রুদ্ধ সেদিকে একবার তাকিয়ে লেডি সারভেন্টকে ডাক দিল। লেডি সারভেন্ট আসতেই তাকে বলল।
“উনাকে ধরে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসুন।এখন থেকে ওর সাথে যেন কেউ না কেউ সর্বদা থাকে।পায়ে চোট পেয়েছে হাঁটাচলা করতে পারবেনা। কখন কি প্রয়োজন হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
লেডি সারভেন্ট মাথা নিচু করে “জ্বি স্যার” বলল।হুরকে ধরে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আসলো।প্রায় ১২ জন বসার মত একটা ডাইনিং টেবিলে শুধুমাত্র ২জন নাস্তার জন্য বসে আছে ।ব্যাপারটা ওর কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং লাগলো।সার্ভেন্ট ব্যতীত এখন অব্দি ঘরের মানুষদের চোখ পড়েনি হুরের।হুরকে খাবার খেতে না দেখে রুদ্ধ ভ্রু জোড়া কিঞ্চিত উঁচু করে বলল।
“কি হলো খাচ্ছ না কেন?
কেঁপে উঠল হুর।লোকটার বলা হঠাৎ ই কথাগুলো অন্তর আত্মা কাপিয়ে দেয় হুরের।লোকটা এভাবে কাঠ কাঠ গলায় কথা বলে কেন তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে হুরের।কিন্তু জিজ্ঞেস করার পর যদি আবার ধমকে উঠে তখন কি করবে সে?হয়তো ভয় পেয়ে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা শুরু করে দিবে।কিন্তু হুর তো কাঁদতে চায় না।গতকাল থেকে কান্না করতে করতে মাথা ব্যথার সাথে সাথে চোখ ব্যথা ও শুরু হয়ে গেছে।এখন যদি আবার কান্না করে তাহলে চোখ আর মাথাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।তাই আপাতত কোন কথা না বলাই শ্রেয় মনে করে হুর চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো।খাবার যেন গলা দিয়ে নামতে চাইছে না।এমন শুকনো খাবার খাওয়া যায় বুঝি?এই খাবার দেয়া থেকে ভাল খাবার নাই দিত।খাবার দেখতে হুরের কাছে তেমন একটা সুস্বাদু মনে হচ্ছে না।তবু টেস্ট না করা অব্দি বিবেচনা করা উচিত না তাই খাবার একটু মুখে নিল।পাংশুটে হয়ে গেল মুখ।মুখের ভঙ্গিমাও কিছুটা চেঞ্জ হলো।খাবারে রাখা জ্যাম পাউরুটি,ওটস,তেল ছাড়া রুটি,সবজি, সিদ্ধ ডিম আর দুধ।গতকাল বিকেল থেকে খাবার না খেয়ে আছে হুর।এখন এসব অখাদ্য খাবার খেলে নির্ঘাত সে বমি করে পুরো ডাইনিং টেবিল ভাসিয়ে দিবে।কোনমতেই তার এসব খাবার দিয়ে পেট ভরবে না।তাই চুপচাপ জ্যামসহ পাউরুটিতে কয়েক কামড় খেয়ে প্লেটে রেখে দিল।সামনে তাকিয়ে দেখল রুদ্ধ তার দিকেই এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।লোকটার চাহনি খুবই অদ্ভুত!বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না হুর। চোখ নামিয়ে কাচুমাচু করে বলল।
“আমি সকাল সকাল এসব খাবার খেতে পারি না।গা গুলিয়ে আসে।
কিছু বলল না রুদ্ধ লেডি সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতেই লেডি সার্ভেন্ট হুর কে জিজ্ঞেস করে।
“আপনি কি খেতে চান ম্যাম আমাকে বলুন? আমি এক্ষুনি বানিয়ে নিয়ে আসছি!
খুশির ফুলকি জ্বলে উঠলো হুরের মুখে।দ্রুত বেগে মাথা উঁচু করে লেডি সার্ভেন্টের দিকে তাকিয়ে গদগদ হয়ে বলল।
“গরম ভাত, ডাল,ঢেঁড়স ভাজি আর চিংড়ি মাছের ভর্তা।
হুরের খাবারের আইটেমের নাম শুনে রুদ্ধ এবং লেডি সার্ভেন্ট তীক্ষ্ণ চোখে হুরের দিকে তাকালো।ওদেরকে এভাবে তাকাতে দেখে হুর কিছুটা ভড়কে গেল।কিছু না বলে চোরা চোখ নিয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো।লেডি সার্ভেন্ট রুদ্ধের দিকে তাকালেই রুদ্ধ আবারও চোখের ইশারায় কিছু একটা বলে।তা বুঝতে পেরে লেডি সার্ভেন্ট মুচকি হেসে হুরের উদ্দেশ্যে বলে।
“ওকে ম্যাম গিভ মি থার্টি মিনিটস।
হুর বো’কার মত মাথা নাড়ালো।রান্না ঘরে চলে গেলেন লেডি সারভেন্ট।হুর বাচ্চাদের মত গুটিসুটি মেরে চেয়ারে বসে রইল।অপেক্ষা করতে লাগল তার পছন্দের খাবারের।
( অনেক কষ্ট করে, অনেক সময় ব্যয় করে নায়ক এবং নায়িকার নাম খুজেছি। )