#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-৫
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )
রুদ্ধ জগিং করে এসে জেরিনকে বলল হুরকে বলতে রেডি হয়ে নিতে। নাস্তা শেষে সে হুরকে নিয়ে কলেজে তাকে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে।জেরিন রুদ্ধের কথা মান্য করে চলে গেল উপরে। হুরের রুমে প্রবেশ করতেই দেখল হুর সবে মাত্র ঘুম থেকে উঠে বিছানায় গোল হয়ে বসে আছে।জেরিন বিছানার কাছে গিয়ে বলল।
“এখন উঠো আর কত ঘুমাবে? স্যার বলেছে তোমাকে রেডি হয়ে নিচে যেতে।কলেজে নাকি নিয়ে যাবে ভর্তি করানোর জন্য!
টনক নড়ে হুরের। আসলে তো আজ রুদ্ধ বলেছিল তাকে কলেজে ভর্তি করাতে নিয়ে যাবে। এ কথা একদমই ভুলে গিয়েছিল হুর।চট জলদি বিছানা ছেড়ে উঠে দৌড়ে চলে যায় আলমারির কাছে।তাড়াহুড়া এবং এক্সাইটমেন্টের জন্য ড্রেস চুজ করতে পারছে না হুর।এক একটা ভাঁজ করা ড্রেস নিচ্ছে আর এলোমেলো করে দেখছে। আবার এলোমেলোভাবে আলমারির ভেতরে ঢুকিয়ে রাখছে।হুরকে এমন করতে দেখে জেরিন জিজ্ঞেস করল।
“কি হলো কাপড় এভাবে রাখছো কেন? নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তো কাপড়!
হুর ড্রেস চুজ করতে করতে বলল।
“কি পড়ে কলেজে যাব তাই ভেবে পাচ্ছিনা।আমার জন্মগত এই একটা সমস্যা।কোন জায়গায় যেতে হলে ড্রেস চুজ করতে পারিনা। ১ ঘন্টা সময় লেগে যায় ড্রেস চুজ করতে।
নিজের কপালে ঠা’স করে এক বারি মারলো জেরিন।কপালে বারি মারার শব্দে নিজের কাজ বিরত রেখে জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখল জেরিন কপালে হাত দিয়ে আছে।হুর বলল,
“কি হলো আপু কপালে হাত দিয়ে রেখেছো কেন? তুমি কি ব্যথা পেয়েছো?ঔষধে লাগিয়ে দেই আমি।
জেরিন বাঁকা চোখে দূরের দিকে তাকিয়ে বলল।
“লাগবে না কোন ঔষধ ব্যাথা লাগেনি আমার।তোমার কথা শুনে আমার কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে।শুধু কপাল চাপড়াতে মন চাচ্ছে না কপালকে দুই ভাগে বিভক্ত করতেও মন চাচ্ছে।সামান্য একটা ড্রেস চুজ করতে তোমার এত সময় লাগে?দেখি সরো তোমাকে ড্রেস চুস করতে হবে না আমি করে দিচ্ছি।দেখা যাবে ড্রেস চুজ করার চক্করে স্যার রেগে গিয়ে তোমাকে কলেজেই নিয়ে যাবে না।
হুর তড়িঘড়ি করে বলল।
“না না আপু এমন করে বলো না।আমার খুব শখ পড়ালেখা করার।এখন যদি স্যার রেগে গিয়ে আমাকে কলেজে না নিয়ে যায় তাহলে পড়াশোনা আর এই জগতে করতে পারবোনা।আমার খুব ইচ্ছে বড় হয়ে ডাক্তার হব।
জেরিন কিছুক্ষণ হুরের দিকে তাকিয়ে থেকে আলমারির কাছে গিয়ে কালো কালার একটা জিন্স,আর কালো আর সাদা মিশ্রণের একটি টপ্স বের করে হুরের হাতে দিল।হুর ড্রেস গুলোর দিকে একবার তাকিয়ে আবারও জেরিনের দিকে তাকালো।থমথমে গলায় প্রশ্ন করল।
“এগুলো আমি পড়ব?
জেরিন ত্যাড়ামো স্বরে বলল।
“আরে না তুমি কেন পড়বে?এই কাপড়গুলো তো আমি বের করেছি পাড়া-প্রতিবেশীদের বিলানোর জন্য।শুধু শুধু আলমারিতে রেখে লাভ কি যদি নাই পড়া হয়?
হুর চেহারায় বো’কা ভাব এনে বলল।
“সত্যি তুমি আমার কাপড় পাড়া-প্রতিবেশীদের বিলিয়ে দিবে।
আবারও কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করলো জেরিনের।এই মেয়েটা এত বো’কা কেন?মজা করে বলা কথাগুলো ও কি বুঝতে পারে না?মনে মনে বো’কা মেয়ে বলে জেরিন হুর কে বলে।
“না, তোমার কাপড় চোপড় আমি কাউকে দেবো না।এসব কাপড় আমি তোমার জন্যই বের করেছি। এখন বেশি কথা না বলে যাও রেডি হতে।
হুর ঠোঁট উল্টে বলে।
“কিন্তু আমি তো এর আগে কখনো এসব কাপড় পড়িনি।
জেরিন এবার কিছুটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল।
“দেখো হুর আমাদের জীবনে অনেক কিছুই অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যায়।আগে তুমি গ্রামে ছিলে তখন না হয় মানতাম তুমি ঐসব পড়তে না। কিন্তু তুমি এখন শহরে বসবাস করছো।শহরে বসবাস করতে হলে নিজের মধ্যে একটু উন্নতি আনতে হবে।আজকাল শহরের ছেলেরা গ্রাম্য কোন মেয়েকে দেখলে তাদের গেও বলে আখ্যায়িত করে।তাই নিজের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনো।আর আমি তো তোমাকে ছেড়া ফাটা কোন কিছু পড়তে দেয়নি।তাহলে এত অস্বস্তি কেন?
হুর কিছুক্ষণ ঠোঁট ফুলিয়ে জেরিন এর দেয়া কাপড় নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে।জেরিন চলে আসলো রান্না ঘরে।ডাইনিং টেবিলে রুদ্ধ সবে মাত্র বসেছিল চেয়ারে।কিন্তু হঠাৎ করে চোখ যায় তার সিঁড়ির কাছে।হুর স্কার্ফ ঠিক করতে করতে নিচে নেমে আসছে।এই দুই দিনে রুদ্ধ হুরকে দেখে নি থ্রী পিছ এর বাহিরে কিছু পড়তে দেখে।তাই হুরকে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তে দেখে অবাক হলো।থ্রী পিছ এ কিছুটা বড় লাগলেও জিন্স আর টপ’স এ বাচ্চা লাগছে।বেশি সময় তাকালো না সে। চোখ নামিয়ে নিজের কাজে মন দিল রুদ্ধ।হুর ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দেখল জেরিন টেবিলে খাবার রাখছে।হুর জেরিনের কাছে এসে দু সাইডে টপস ধরে গোল গোল ঘুরে জিজ্ঞেস করল।
“আমাকে কেমন লাগছে আপু?
নিজের কাছ থেকে মনোযোগ সরিয়ে হুরের দিকে তাকালো জেরিন।হুর কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে স্মিত হেসে বলল,
“সুন্দর লাগছে। এমনিতেই তো আপনি অনেক পিচ্চি এই ড্রেসে আরও আপনায় পিচ্চি লাগছে।একদমই পুতুলের মত।
প্রশংসা করায় কিছুটা লজ্জা পেল হুর। কিন্তু জেরিনের ছোট বলায় ক্ষেপেও গেল।প্রতিবাদী স্বরে বলল।
“আমায় একদম পিচ্চি বলবে না আপু। আমি মোটেও পিচ্চি না।আমার বয়স এখন ১৮।কোন দিক থেকে আমাকে পিচ্চি মনে হয়?
বলে মুখ ফোলালো।জেরিন শব্দ করে হাসতে চাইলেও হাসতে পারল না রুদ্ধের কারণে।মেয়েটা এমন এমন কথা বলে যে মানুষ না হেসে পারবে না।এমনিতেই তো এই ড্রেসে তাকে বাচ্চা লাগছে তার ওপর মুখ ফুলিয়ে রাখায় মারাত্মক কিউট লাগছে তাকে।আরও একটু প্রশংসা করতে চাইল জেরিন।কিন্তু রুদ্ধ যদি ধমকে উঠে সেই ভয়ে আর কিছু বলল না।জেরিন দ্বিতীয়বার হুরকে পর্যবেক্ষণ করতে তার ভ্রু কুচকে এলো।মেয়েটার চুলে খোপা বেঁধে তার মাঝে কাঠি দেওয়া।মেয়েটা সব সময় চুল এইভাবে খোঁপা বেঁধে রাখে। এই ড্রেসের সাথে চুল খুলে রাখলে আরো বেশি সুন্দর লাগবে তাকে। ভাবতেই টেবিলে খাবার রেখে হুরের কাছে এসে বলল ।
“চুল খুলে রাখলে আপনাকে আরো অনেক সুন্দর লাগবে।
বলেই হুরকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হুরের চুলের মাঝে কাঠি টান দিল।ঝর ঝর করে চুল গুলো খুলে গেল হুরের।চুল গিয়ে ঠেকলো হাটুর নিচ অব্দি।জেরিন হুরের চুলের কাঠি খুলে নিজেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।মেয়েটার চুল যে এত বড় তা তিন রাত এবং দুদিন তার সাথে কাটিয়েও বুঝতে পারল না।জেরিন যেন ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে হুরের চুল দেখে। যেমন লম্বা তেমনি ঘন।তার ঘোর ভাঙ্গে হুরের কান্নার শব্দে।ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে হুর।দশ মিনিট চুলের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে সে চুল বেঁধেছিল।এই চুলের ঝামেলা সে মোটেও পছন্দ করে না।মেডিসিনের সাথে সাথে চুলও হচ্ছে তার দ্বিতীয় শত্রু।সে লম্বা চুল কখনো সামলাতে পারে না।মা থাকতে মা ই তাকে চুল বেধে দিত চুলে তেলও লাগিয়ে দিত এমনকি শ্যাম্পু করে দিত।চুলের সবটা যত্ন তার মা ই করেছে।এবং মায়ের জন্যই তার এত বড় চুল রাখা।তার মা লম্বা চুল ভীষণ পছন্দ করত।তাই মায়ের শখ পূরণ করার জন্য এই হুরের এই লম্বা চুল।হুরকে কান্না করতে দেখে জেরিন ফ্যালফ্যাল নয়নে হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কি হয়েছে তুমি কান্না করছ কেন?
কান্না থামছে না হুরের।হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নাক টানতে টানতে বলল।
“দশ মিনিট ধরে আমি চুল বেঁধেছি।আর তুমি আমার সব পরিশ্রম বিফল করে দিলে।এখন চুল বাধতে গেলে আবারো অনেক সময় লাগবে। একবার বাধতে গিয়ে হাত ব্যথা হয়ে গেছে আমার।দ্বিতীয় বার বাঁধার মতো হাতে শক্তি আমার নেই। এখন আমি কি করবো।কলেজে যেতেও তো লেট হয়ে যাবে।এ্যা এ্যা
আবারো কান্না জুড়ে দিল হুর।হুরের লম্বা ঘন চুল দেখে হুরের কান্না করার কষ্ট কিছুটা আচ করতে পারল।মনে মনে জেরি নিজের প্রতিই এখন বিরক্ত। কি দরকার ছিল আগ বাড়িয়ে এই মেয়েটার চুলের কাঠি খোলার?মিনিটের মাঝে মেয়েটা কান্না করে নিজের চোখ মুখের করুন অবস্থা করে ফেলেছে।হুরের কান্না বন্ধ করার জন্য জেরিন অসহায় চেহেরা বানিয়ে সান্ত্বনা স্বরূপ বলে।
“কেঁদো না হুর তুমি আসো আমি তোমায় চুল বেঁধে দিচ্ছি।
কান্না বন্ধ করে দিল হুর।জেরিন হুরকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে চুলে হাত লাগালো।চুলগুলো খুব সিল্কি।একবার, দুবার, তিনবার করতে করতে প্রায় ছয় বারের মতো চেষ্টা করল চুল খোপা করার কিন্তু কোন বারই সফল হলো না।সামান্য একটা খোপা করতে না পারায় আবারো বিরক্তি ছেয়ে গেল জেরিনের সারামুখে।মেয়েটার চুল খুব বেশি সিল্কি দেখে খোপা বারবার ঝরে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ আগের হুরের কষ্টটা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে জেরিন।আরো কয়েকবার চেষ্টা করে সফল না হতে পেরে ক্লান্ত হয়ে চুল থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল সে।ইতিমধ্যে তার ও হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে।হুরের মত এখন তারও কান্না করতে মন চাচ্ছে।পরে জেরিনের মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই হুট করে হুরের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল হয় বলে।
“আপনার আজ কলেজে খোপা করে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।আপনাকে লম্বা চুলে অনেক সুন্দর লাগছে।আর এত সুন্দর চুল খোপা করে সব সময় রাখেন কেন?আমার এমন চুল হলে আমি দিনরাত সবাইকে দেখিয়ে বেড়াতাম।কিন্তু আফসোস আমার লম্বা চুল নেই।
হুর ঠোঁট উল্টে বলে,
“অনেক গরম পড়েছে আপু আমি কোন মতেই চুল সামলাতে পারবো না।পরে খোলা চুলে গিট্টু লেগে গেলে আবার আরেক ঝামেলা।
“১৫ মিনিটের মধ্যে চুল বেঁধে আসো।
পুরুষালী শক্ত কণ্ঠ। ছিচকাঁদুনে হুর রুদ্ধের এমন শক্ত স্বর শুনে নিজের কান্না বন্ধ করে দিল।রুদ্ধের আদশ মান্য করার জন্য চলে গেল নিজের রুমে।প্রায় ১২ মিনিটের মাথায় পুনরায় চলে আসলো ডাইনিং টেবিলে।হাস্য উজ্জল চেহেরা নিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে বলল।
“চলুন আমি একদম রেডি।
রুদ্ধ হুরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল।
“ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট কর।
এক্সাইটমেন্টের জোটে হুর ভুলে গিয়েছিল তার এখনো নাস্তা করা হয়নি।রুদ্ধের খাবারের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই হুরের পেটে গুর গুর করে আওয়াজ আসলো।হুর বুঝল এখন খাবার খাওয়া অত্যাবশক।তাই দেরি না করে চেয়ারে বসে কথা না বলে গবাগব নাস্তা সেরে নিল।খাবার খেয়ে তড়িঘড়ি করে রুদ্ধের সামনে এসে বলল।
“এখন চলুন!
রুদ্ধ একবার হুরের দিকে আপাত মস্তক দেখে কোন কিছু না বলে দরজার দিকে এগোতে লাগলো।পিছু পিছু যেতে লাগলো হুর।বাইরে বের হয়েই হুরের চোখ ছানাবড়া।সে যে এতদিন রাজ প্রাসাদের মধ্যে ছিল তা তো বুঝতেই পারল না।চারিপাশে গাছ-গাছালি দিয়ে ভরা।একসাইডে নানান ধরনের গাছ আরেক সাইডে বাগান করা।বিমোহিত হয়ে হুর চারপাশটা দেখছে।আশপাশটা দেখতে দেখতে গাড়ির কাছে আসতেই বডিগার্ড গাড়ির দরজা খুলে দেয়।ব্যাক সিটে বসে আছে রুদ্ধ আর হুর। মাঝে তাদের অনেকটা গ্যাপ।রুদ্ধ আর হুর কেউই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে না।রুদ্ধ তার ফোন স্ক্রল করছে আর হুর গাড়ির কাছে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছে। এভাবে করে কখনো সে শহর দেখেনি। সৌভাগ্য হয়নি।কিন্তু আজ তার সৌভাগ্য হয়েছে তাই সবকিছু মোহগ্রস্ত হয়ে দেখছে।গাড়ি থামে কলেজের গেইটের সামনে।রুদ্ধ গাড়ি থেকে বের হয়ে সানগ্লাস তার চোখে লাগায়। এক হাত পকেটে গুজে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।পিছু পিছু যায় হুরও।হঠাৎ হুরের মনে হলো হুরের পিছে পিছে আরো কয়েকজন আসছে।সন্দেহ দূর করার জন্য হুর পিছে তাকিয়ে দেখে দুজন বডিগার্ড তাদের সাথেই আসছে।হুর সামনে তাকিয়ে আবার রুদ্ধের কদমের সাথে কদম মিলিয়ে চলছে।রুদ্ধকে চেনে এমন মানুষ খুব কমই আছে।কারন রুদ্ধ সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখে।তবে আজ রুদ্ধের সুন্দর চেহারা আর রুদ্ধের স্টাইল দেখে অনেকেই ফিদা হয়ে গেছে।কয়েকটা ছেলে ও রুদ্ধের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।রুদ্ধ সোজা প্রিন্সিপালের ক্যাবিনে গিয়ে তার পা থামায়।প্রিন্সিপাল রুদ্ধকে দেখে হকচকিয়ে নিজ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়।প্রিন্সিপাল খুব ভালো করেই রুদ্ধকে চেনে।হঠাৎ রুদ্ধের দর্শনে খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছেন সে। ঘাবড়ানো স্বরেই বললেন,
“রুদ্র স্যার আপনি? এখানে? হঠাৎ করে? কোন কিছু কি হয়েছে?
রুদ্র একবার প্রিন্সিপালের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে প্রিন্সিপাপের মুখোমুখি থাকা চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো।এক হাত চেয়ারের হ্যান্ডেইলে পুরোপুরিভাবে এলিয়ে দিয়ে অন্য হাতের কনুই হ্যান্ডেল স্পর্শ করে হাত ভাঁজ করে হাতের তালু-গাল স্পর্শ করল।হাতের ইশারায় প্রিন্সিপাল কে বসতে বললে প্রিন্সিপাল ও বসে যায়। তবে মনে তার ভয়ের বাসা বেঁধে দোতালা হয়ে গেছে।প্রিন্সিপাল যে রুদ্ধকে দেখে অনেকটা ঘাবড়ে গিয়েছে তা বেশ ভালো করে বুঝতে পারলো রুদ্ধ।টেবিলে থাকা টিস্যুর বক্স দেখিয়ে বলল।
“ঘাম মুছে নিন।এন্ড রিল্যাক্স আমাকে দেখে ভয় পেতে হবে না।কিছু কাজের জন্য এখানে এসেছি।
আরো ঘাবড়ে গেলেন প্রিন্সিপাল।রুদ্ধ কোন কাজের জন্য এখানে এসেছে তাহলে মনে হয় কোন ভয়ঙ্কর কিছুই ঘটবে।এমনটা মনে করে বসে আছেন প্রিন্সিপাল।প্রিন্সিপাল কে এভাবে ভয় পেতে দেখে মনে মনে একটু হাসলো রুদ্ধ।রুদ্ধ আশ্বাস দেয়ার মতো করে বলে।
“চিন্তা নেই গতবারের মতো এবার কোনো কিছুই হবে না।সে যাগ গে অতীতের কথা না হয় নাই তুললাম।আপনার কলেজের জন্য একজন শিক্ষার্থী নিয়ে উপস্থিত হয়েছি।আই মিন ও এখন থেকে আপনার কলেজে পড়বে।
হুরকে আঙ্গুলের ইশারায় দেখালো।স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন প্রিন্সিপাল।হয়তো এই স্বস্তি নিঃশ্বাস কেউই বুঝতে পারেনি।প্রিন্সিপাল রুদ্ধের বলা কথা অনুসরণ করে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল একজন কিশোরী তাদের দিকেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।কিশোরীকে দেখে মোহগ্রস্ত হয়ে যায় প্রিন্সিপাল।মেয়েটার চেহারায় মোহ আছে।বেশ অনেক সময় নিয়ে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণ করলেন প্রিন্সিপাল।ভেতরে ভেতরে সে কিছুটা থমকে গিয়েছেন।আজ রুদ্ধ কোন গোলমাল ছাড়াই এই কলেজে এসেছে।তাও আবার একজনকে ভর্তি করানোর জন্য।খটকা লাগছে ব্যাপারটা।প্রিন্সিপাল রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বলে।
“যেহেতু এখন বছরে প্রায় মাঝপথে তাই এ সময় এখন এডমিশন নেয়া হয় না।শুধুমাত্র আপনার জন্য আমি তাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি।
বলেই তিনি এডমিশন পেপারস বের করলেন।হুরের নাম তার বাবার নাম, মায়ের নাম আরো কিছু তথ্য জিজ্ঞেস করলে হুর নিম্ন স্বরে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়।লেখালেখির মাঝে কয়েকবার আড়চোখে প্রিন্সিপাল রুদ্ধকে অনুসরণ করলেন।মনটা তার খচখচ করছে।জানতে ইচ্ছে করছে এই মেয়েটা কে?কি সম্পর্ক তাদের?শুধু কি তাকে কলেজে এডমিশন করিয়ে দেয়ার জন্যই এখানে এসেছে।নাকি তার পেছনে আরো কিছু কারণ আছে।এসব ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে গেল প্রিন্সিপালের মন।বরংবারই প্রিন্সিপাল রুদ্ধকে খুব ভয় পান।ভয় পাওয়ার কারণটা না হয় অন্য আরেকদিন জানানো যাবে।লেখালেখির মাঝে প্রিন্সিপাল মুখ উঠিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে নিজের মনকে কয়েক দফা প্রস্তুত করে নিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“মেয়েটি আপনার কি হয় স্যার?
শীতল চোখে রুদ্ধ ও প্রিন্সিপালের দিকে তাকালো।রুদ্ধের এমন শীতল চোখ দেখে মনে মনে কান্না করে দিলেন প্রিন্সিপাল।ভুল জায়গায় ভুল প্রশ্ন।এমন তো কখনো তার দ্বারা হয় না। তাহলে সব সময় রুদ্ধের সামনেই কেন ভুল প্রশ্ন করে!খুব কি জরুরী ছিল এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার? অবশ্যই জরুরি ছিল।এডমিশন পত্রে অভিভাবক শিক্ষার্থীর কি হয় তা অত্যাবশক লেখা জরুরী।সেক্ষেত্রেই প্রশ্নটি করা।তবে প্রশ্ন করে মনে হয় প্রিন্সিপাল ফেঁসে গেছে। এমনটা ধারনা তার।প্রিন্সিপালের প্রশ্নে হুর ও রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে ছিল।মূলত সে জানতে চায় রুদ্ধ প্রিন্সিপালের প্রশ্নের উত্তর কি দিবে!সে তো রুদ্ধের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে থাকে। তাহলে কি রুদ্ধ তাকে আশ্রিতা হিসেবে পরিচয় দিবে?হুরের এসব চিন্তার মাঝে প্রিন্সিপালের এর কথা কর্ণপাত হয়।
“না, মানে বলছিলাম অভিভাবক হিসেবে তো আপনি সবকিছুর রেস্পন্সিবিলিটি নিয়েছেন।তাই জিজ্ঞেস করছিলাম আর কি!
বলে তিনি বো’কাদের মত হাসতে লাগলেন।এমন হাসির মানে বুঝতে পারল না রুদ্ধ।তবে কিছু বললো ও না।শীতল চোখ জোড়া প্রিন্সিপালের দিকে তাকিয়েই বলল।
“শী ইজ মাই কাজিন।
প্রিন্সিপাল আরো অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলেন।যেমন,তার আত্মীয়স্বজন বলতে কেউ নেই।তাহলে কাজিন কোথা থেকে হুট করে চলে আসলো?আর যদিও এই মেয়েটি তার কাজিন হয় তাহলে রুদ্ধই বা তাকে কেন কলেজে ভর্তি করাতে নিয়ে আসলো।আচ্ছা, মেয়েটি তার কেমন কাজিন?মেয়েটি কি তার সাথে একই বাড়িতে থাকে?এসব হাজার প্রশ্ন করতে মন চাইছে প্রিন্সিপালের।কিন্তু তার হাত পা বাধা এমনকি মুখ ও বাধা।তাই ইচ্ছা সত্বেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছেন না।প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করার পর যদি রুদ্ধের পছন্দ না হয়।তখন যদি সে তাকে শুট করে দেয় তখন কি হবে?প্রিন্সিপাল তার শত্রুদের বিশ্বাস করতে পারবেন কিন্তু এই রুদ্ধকে কখনো বিশ্বাস করতে পারবেন না। হুটহাট গু’লি করা ,ছু’রি দিয়ে কোপ মারা এসব নিত্যদিনের কাজ রুদ্ধের। এসবে সে বেশ পারদর্শী।তাই আগ বারিয়ে সে গু’লি খেতে চায় না।এডমিশন পেপারস ফুল ফিল ভাবে কমপ্লিট হওয়ার পর রুদ্ধ একবার প্রিন্সিপালের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেল।আবারো রুদ্ধকে অনুসরণ করে হুর তার পিছু পিছু গেল।ক্যাবিনের বাহিরে থাকা দুজন বডিগার্ড স্ট্রং হয়ে তাদের পিছে পিছে আসতে লাগলো।হুর বডিগার্সদের ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।দুজনেরই গায়ে কালো স্যুট প্যান্ট।চকচকে কালো জুতো।চুলের আকার খুবই ছোট।মুখে রয়েছে সারাবিশ্বের গম্ভীরতা।চোখে তাদের সানগ্লাস নামক বড় বড় চশমা।উচ্চতায় ও অনেক লম্বা।হুর আড়চোখে একবার রুদ্ধের দিকে তাকালো।পুনরায় বডিগার্ডের দিকে তাকিয়ে বুঝল রুদ্ধ আর বডিগার্ডস এর উচ্চতা একই সমান।রুদ্ধের থেকে বডিগার্ডস’রা একটু মোটা।দেখতে খুব শক্তপোক্ত মনে হচ্ছে।সাথে কিছুটা স্টাইলিশ ও।বডিগার্ডের পর্যবেক্ষণ করার মাঝেই তারা চলে আসলো গাড়ির কাছে।গাড়িতে বসে রওনা দিল রুদ্ধ ম্যানশনে।হুরকে রুদ্ধ ম্যানশনে পৌঁছে দিয়ে রুদ্ধ সে গাড়ি করেই চলে গেল তার অফিসে।
( See you in the next episode )