#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-১৫
#লেখনীতে- আসমিতা আক্তার ( পাখি )
গাড়িতে অবস্থান করছে রুদ্ধ আর হুর। হুর কে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবে রুদ্ধ।প্যাঁচার মত মুখ করে জানালার বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঘোর কাটলো রুদ্ধের কথায়,
“কলেজ ছুটি কয়টায় হবে?
হাত ঘড়ির থেকে একবার চোখ বুলিয়ে নিল সে। তারপর সময় ক্যালকুলেট করে বলল,
“দুইটার আগেই ছুটি হয়ে যাবে।
রুদ্ধ ফোনের দিকে চোখ স্থির রেখে বলল,
“নিতে আসবো আমি তোমায়।
সাথে সাথে হুর বলে উঠলো।
“কেন?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে হুরের দিকে তাকাল রুদ্ধ।রুদ্ধের এমন দৃষ্টি দেখে কিছুটা নিভে গেল সে।দৃষ্টি নত করে হাত কচলাতে লাগলো। শান্তস্বরে রুদ্ধ বলল,
“তোমার কলেজে আমার কিছু কাজ আছে। তাই সেখানে যাব,আর তোমাকেও পিক করে নিব।
মাথা ঝাঁকালো হুর।পুনরায় দৃষ্টি জানালার বাহিরে দিল।গাড়ি এসে থামল কলেজের গেইটের সামনে।গাড়ি থামতেই পিছনে থাকা গার্ড’স গাড়ি থেকে দুজন গার্ড’স নেমে বের হল।রুদ্ধের গাড়ির কাছে এসে রুদ্ধ আর হুরকে নামার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দিল।নেমে দাঁড়ালো দুজন।বাঁকা চোখে একবার রুদ্ধকে দেখে সামনে এগোতে লাগলো হুর।হুর রুদ্ধের পিছে পিছে যাচ্ছে এবং তার পিছে আসছে গার্ড’স।মাঠের মাঝে আসতেই রুদ্ধের ফোন কল আসলো। পকেট থেকে ফোন বের করে নাম্বারটি দেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ল। কল রিসিভ করে একটু দূরে যেতে লাগলো।পিছে গার্ডরাও আসতে চাইলো। হাত দেখিয়ে রুদ্ধ তাদের বারণ করল।আর বোঝালো হুরের দিকে নজর রাখতে।আরেকটু কাছে যেতেই হুরের দেখা হয়ে গেল তার দলবলের। তারাও মাঠের দিকে এগিয়ে আসছে। সম্ভবত তারা ক্লাস রুম থেকেই ফিরে এসেছে। কাঁধে তাদের ব্যাগ ঝোলানো। হুর তাদের কাছে যেতেই জিজ্ঞেস করল।
“কি হলো তোমরা এখানে আসছো কেন ক্লাসে যাবে না?
আকাশ বলল,
“আজকে জুনায়েদ স্যার আসবে না। আর ক্লাসও হবে না। তাই ক্লাস থেকে বের হয়ে আসছি। বাহিরে একটু আড্ডা দিলে মন্দ হয় না।
হুর বলল,
“তা কোথায় যেতে চাচ্ছো?
ফিহান বলল,
“পাশে একটা পার্ক আছে চলো সেখান থেকে ঘুরে আসি।
মিম বলল,
“বাচ্চাদের পার্কে গিয়ে আমরা কি করব?
“আরে সেখানে বসার খুবই ভালো প্লেস আছে।মনমুগ্ধকর এক পরিবেশ। আমরা না হয় কিছু কিনে সেখানে বসে খাব আর গল্প করব।
তাল মেলালো স্নেহা। বলল,
“চল না একবার গিয়েই দেখি কেমন লাগে।এমনিতেও অনেকদিন হলো কোথাও ঘুরতে যেতে পারছি না।
বাধ সাধলো হুর,বললো
“কিন্তু আমি এই মুহূর্তে কোথাও যেতে পারবো না।
ভ্রু কুচকে আকাশ জিজ্ঞেস করল,
” কেন?
গলার স্বর নিচু রেখে হুর বলল।
“আরে আজ আমার সাথে উনি এসেছে।
এবার আকাশের সাথে সাথে সবার ভ্রু কুঁচকে এলো। তারা বুঝতে পারছে না হুর কার কথা বলছে।মুক্তা তো জিজ্ঞেস করেই বসলো।
“কার কথা বলছিস?
মিন মিন করে হুর উত্তর দিল।
“রুদ্ধ স্যারের কথা বলছি।
ফট করে মিম প্রশ্ন করল,
“উনি না তোর কাজিন হয়?তাহলে উনাকে ভাইয়া না বলে স্যার কেন বলছিস?
চমকে উঠল হুর।এভাবে যে ধরা খেতে হবে তা বুঝতে পারেনি। চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।আনমনেই তার তর্জনী আঙুল মুখে চলে গেল।বাচ্চাদের মতো মুখে আঙ্গুল দিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেল সে। ভাবান্তর শেষ হলে আচানক মুখ থেকে হাত সরিয়ে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বলে।
“আরে ওনার যে চামচিকা গুলো আছে না সবাই সব সময় তাকে স্যার স্যার বলে মাথা খেয়ে নেয়।তাদের এই স্যার শব্দ শুনতে শুনতে আমিও ভুলে রুদ্ধ ভাইয়া কে রুদ্ধ স্যার বলে ফেলেছি।
স্নেহা বলল,
“তা এখন যেতে পারবে না কেন?
হুর ভাবছে সে যদি বাহিরে ঘুরতে যায় তাহলে রুদ্ধ তাকে কিছু বলবে কিনা।অনেক কিছু বিবেচনা করে হুর ভাবলো সে যাবে। কারণ রুদ্ধ আজ অবধি তাকে কোন কিছুতে বারণ করেনি।সে নিজের মন মত চলেছে। তাই আর এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালো না সে।
“আরে ওটা তো আমি ফাইজলামি করে বলেছিলাম।এখন চলো নইলে বেশি সময় সেখানে কাটাতে পারব না।আর হ্যাঁ আমি কিন্তু ফুচকা আর ঝাল মুড়ি খাব।
হুরের খাবারের বায়না শুনে সবাই হেসে দিল।এ কথা ও কথা বলতে বলতে গেইটের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। তবে একটা ডাকে সবার পা স্থির হয়ে গেল। একসাথে সবাই পিছন ফিরল। রুদ্ধকে তাদের কাছে আসতে দেখা গেল। রুদ্ধ এক এক করে সবাইকে এক নজর দেখে নিল। অত:পর হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কোথায় যাচ্ছো?
থমকে গেল হুর।বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে চোখ রুদ্ধের দিকে রাখলো।অপেক্ষা উত্তরের।তবে হুরের গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না।যদিও জানে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললে দ্বিমত করবে না। তাও কেন জানি বলতে গলায় বাজছে।হুরকে উত্তর দিতে না দেখে পাশ থেকে মুক্তা বলে উঠল,
“ভাইয়া আমরা একটু ঘুরতে যাচ্ছি।
রুদ্ধ মুক্তার দিকে তাকালো।আবার হুরের দিকে চেয়ে রইলো তার মুখ থেকে উত্তর শোনার জন্য। তা বুঝলো হুর।বললো,
” আমরা পাশের পার্কে ঘুরতে যাচ্ছি।
“আর ক্লাস?
” আজ জুনায়েদ স্যার আসবেন না। তাই পার্কে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সবাই।
“আসো।
বলেই হাটা ধরলো। হুর এবং তার বন্ধুরা রুদ্ধের কথার মানে বুঝতে পারলো না। তাই আক্কেল হীন ভাবে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। রুদ্ধ হাটতে হাটতে পিছন ঘুরলো। হুরকে আসতে না দেখে ভ্রু কুচকে তাকালো।পীপিলিকার মতো পিলপিল করে রুদ্ধের পিছে আসলো সে। হুরের সঙে তার বন্ধুরাও আসলো। গাড়ির কাছে এসে থামলো রুদ্ধ। রুদ্ধর সাথে সাথে হুর এবং তার বন্ধুরা ও দাঁড়িয়ে পড়ল। রুদ্ধ হুরের বন্ধুদের পিছনে থাকা গাড়ি দেখিয়ে বলল।
“তোমরা সবাই ওই গাড়িতে বসো।
রুদ্ধের আদেশ মান্য করল সবাই।একে একে করে সবাই গাড়িতে বসতে লাগলো। সাথে যেতে চাইল হুর ও। তা দেখে রুদ্ধ প্রশ্ন করল,
” তুমি কোথায় যাচ্ছ?
হুর তার বন্ধুদের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলল।
“ওদের সাথে।
“তুমি আমার সাথে আমার গাড়িতে যাবে।
গার্ড গাড়ির দরজা খুলে দিলে বিনা বাক্যে ব্যাক সিটে বসে পড়ল হুর। বসে পড়লো রুদ্ধ ও। রুদ্ধের গাডির পিছনে দুটি গাডি আসতে লাগলো। একটাতে আছে হুরের বন্ধুরা,অন্যটিতে গার্ডরা।আর একটাতে হুর আর রুদ্ধ,সাথে ড্রাইভার ও। গাড়ি এসে থামলো হুরদের বলা পার্কে। গার্ড’স এসে গাড়ির দরজা খুলে দিতেই সবাই নেমে পড়লো। মিম গদগদ হয়ে বললো,
” থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া আমাদের লিফট দেয়ার জন্য। নাহলে হেটে আসতে গেলে অনেক সময় লেগে যেত।
চুপ রইলো রুদ্ধ। থ্যাঙ্কিউ এর বিপরীতে যে কিছু বলতে হয় বোধহয় তার জানা নেই। এমন ভাবনা সবার। হুর বললো,
” চল ভেতরে যাই,আর রুদ্ধ স..আব রুদ্ধ ভাইয়া ধন্যবাদ এখানে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
বলেই হাটা ধরলো।থামিয়ে দিল রুদ্ধ, বললো
“থামো।
থেকে হুরের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো,
” তোমায় যাও ও আসছে।
মিম,মুক্তা,স্নেহা হুরের দিকে তাকালো। চোখের চাহনি দ্বারা হুর বোঝাল যেতে। তারা ভেতরে যেতেই রুদ্ধ হুরের ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।দাঁত পিষে বললো,
“হু ইজ ইয়র ভাইয়া?
এটারই ভয় পাচ্ছিল হুর। সিংহের গুহায় এসে সিংহকে ক্ষেপিয়ে কেটে পড়তে চেয়েছিল সে। কিন্তু সে ভাবতে পারেনি সিংহ তাকে এভাবে থাবা দিবে। নিজের প্রতি আফসোস হচ্ছে তার। কেন যেচে গিয়ে যে কৃতজ্ঞতা পোষণ করতে গেল!শুকনো এক ফাকা ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,
“ওরা তো জানে আপনি আমার কাজিন। তাই আপনাকে ভাইয়া বলেছি। দুঃখিত স্যার আমি আপনায় আর কখনো ভাইয়া বলবো না।
শক্তির জোর বাড়িয়ে হুরের হাত আরেকটু চেপে ধরল রুদ্ধ। কঠিন গলায় বলল,
“ডোন্ট কল মি স্যার।
ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে রইল হুর।চোখের পলক কয়েকবার ঝাপটা মেরে বলল।
“ঠিক আছে ভাইয়া।
রাগ দমিয়ে রাখতে চাইলেও দমাতে পারছে না রুদ্ধ। মেয়েটা বারবার রাগিয়ে দিচ্ছে তাকে। এবার আর নিজের রাগ দমন করলো না সে। ধমকে উঠলো,
“আর একবার ভাইয়া বললে,এক থাপরে সব দাঁত উপড়ে ফেলবো।স্যার এবং ভাইয়া ব্যতীত যা বলতে পারো বলো। তবে নেক্সট টাইম এই দুটো শব্দ যেন তোমার মুখ থেকে আমি না শুনি।
বিপাকে পড়ে গেল হুর। ভাইয়া এবং স্যার না বললে কি বলে তাকে সম্বোধন করবে সেটাই বুঝতে পারছে না।তাই টুকুর টুকুর নয়নে রুদ্ধর দিকে তাকিয়ে রইল। বোঝার চেষ্টা করল রুদ্ধকে কি নাম ধরে ডাকবে।এমন কোন নাম খুঁজে পেল না। ভাবতে ভাবতে আনমনে জিজ্ঞেস করল।
“তাহলে আমি আপনায় কি বলে ডাকবো?ভাইয়া বা স্যার কোনোটাই তো বলতে নিষেধ করলেন। নাম ধরে তো আপনায় কোন কালেই আমি ডাকতে পারবো না। বয়সে বোঝা যায় আপনি আমার থেকে অনেক বড়। তাই নাম ধরে ডাকা যাবেনা। আপনি যদি চান আমি আপনায় চাচা বলে ডাকতে পারি।কিন্তু চাচার মতো বয়স আপনার হয়নি।তবে আপনি চাইলে আমি বলতে পারি।
মুচড়ে ধরা হাত মোচরে ধরেই পিছনে ঘোরালো হুরকে। মোচড়ানো হাত হুরের পিঠের সাথে ঠেকিয়ে ধরলো। আগের তুলনায় এখন অনেক ব্যথা পাচ্ছে সে। ব্যথায় আর্তনাদ ও করে উঠেছে। সেদিকে বিন্দুমাত্র ও খেয়াল নেই রুদ্ধের।সে রাগে এখন পঞ্চমুখ। ইতিমধ্যে রাগে তার চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে। সেই সাথে মুখে সাদা চামড়ায় ও লাল আবরণ ধারণ করেছে।রুদ্ধের রাগান্বিত চেহেরা হুরের চোখে পড়ছে না।কারণ রুদ্ধ তাকে উল্টো করে চেপে ধরে রেখেছে। হুর এবার নিজের কষ্ট সহ্য করতে পারল না। আর্তনাদ করার সাথে সাথে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল।
“আহ্,ব্যথা পাচ্ছি তো আমি। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আমি আর কখনো আপনার সাথে ফাইজলামি করবো না। আপনাকে কখনো চাচা বলবো না। প্লিজ এবারের মত ক্ষমা করে দিন। আমি হাতে খুব ব্যথা পাচ্ছি।
ঝটকা দিয়ে হুরকে ছেড়ে দিল রুদ্ধ। এমনভাবে ঝটকা মেরেছে যে হুর হুমড়ি খেতে খেতে বেঁচে গিয়েছে।রুদ্ধ থেকে ছাড়া পেতেই বড় এক নিঃশ্বাস নিল। এতক্ষন নিশ্বাস আটকে আসছিল তার। হাতে ব্যথা অনুভব হলো। ডান হাত সামনে এনে হাতে চোখ বুলালো। রক্ত জবার ন্যায় লাল টকটকে হয়ে আছে, তার হাত। রুদ্ধের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ স্পষ্ট। হাতের এমন বেহাল অবস্থা দেখে কাঁদো কাঁদো হয়ে আসলো তার মুখশ্রী।জ্বলছে খুব। হাতে একটু পানি লাগালে বোধ হয় কিছুটা শান্তি পাওয়া যেত। কিন্তু আফসোস আজকে ব্যাগে করে পানি নিয়ে আসতে ভুলে গেছে। নেত্রকোনে জলের ঢেউ বইছে। টলমলো চোখ নিয়ে রুদ্ধের দিকে তাকালো সে। রুদ্ধর চাহনি তখনো তীক্ষ্ণ এবং গম্ভীর।তাই চেয়েও আর প্রশ্ন করার সাহস কুলাতে পারেনি হুর।মাথা নিচু করে নিজের হাত দেখছিলাম আবার। কর্ণপাতে আসলো রুদ্ধের পুরুষালী শক্ত কণ্ঠ।
“চলো!
রুদ্ধের পিছু পিছু আসতে লাগলো সে। এবং তার পিছে পিছে আসতে লাগল গার্ড। দুজনের পা এসে থামল হুরের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে যেতে। হুর দেখল তারা খাবারের আয়োজন করে রেখেছে। তার জন্য ফুচকা এবং ঝালমুড়ি ও আনা হয়েছে। ফুচকা এবং ঝাল মুড়ি দেখে কিছুক্ষণ পূর্বের হাতে ব্যথা তৎক্ষণাৎ ভুলে গেল। মুখে পানি চলে আসলো। খুশিতে আটখানা হয়ে বলল,
“তোমরা আমার জন্য ফুচকা আর ঝালমুড়ি এনে রেখেছো!
মুচকি হেসে জবাব দিল আকাশ।
“হ্যাঁ, তোমার জন্য আনা হয়েছে। নেও এখন খাও।
ফুচকার প্লেট হুরের দিকে এগিয়ে দিল সে। হুর তার দুহাত সামনে বাড়িয়ে ফুচকার প্লেট নিতে ধরলেই আকাশ হুরের ডান হাতের অবস্থা দেখে আৎকে উঠলো। বিচলিত হয়ে বলল,
“হুর তোমার হাতের এই অবস্থা কেন? কিছুক্ষণ আগে তো ঠিকই ছিল।
হাত থেকে ফুচকার প্লেট রেখে হুরের হাত ধরতে নিলেই রুদ্ধ আকাশের হাত ধরে নেয়৷নিজের হাতের ওপর পুরুষালী হাতে দেখে মাথা তুলে উপরে তাকালো আকাশ। রুদ্ধকে দেখতে পেয়ে খানিক ঘাবড়ে গেল। রুদ্ধ আকাশের হাত ছেড়ে দিয়েছি শীতল গলায় বলল।
“বিনা অনুমতিতে কেউ কে স্পর্শ করা উচিত না। তা কি জানোনা?
ঘাবড়ানোর মাত্রা বেড়ে গেল।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা দেখা মিলল। আমতা আমতা করতে লাগলো আকাশ।অস্বস্তি ও হতে লাগলো। বারবার তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অস্বস্তি নিয়ে কোনমতে বলল,
“সর্যি!
হুরের দিকে তাকিয়ে কোমল স্বরে বললো,
” এখন বলো কিভাবে হলো?
আড়চোখে রুদ্ধের দিকে তাকালো। ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বললো,
“গাড়ির সাথে হাত চেপে বসেছিলাম। তাই হয়তো এমন হয়ে গেছে।
আহত দৃষ্টিতে তাকালো আকাশ।মোলায়েম কন্ঠে বললো,
” আসো আমি তোমায় অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি।
আবারও হুরের হাত ধরতে চাইলো। তবে রুদ্ধের
কথায় থেমে গেল।
“তোমায় কষ্ট করে ওর হাতে মলম লাগিয়ে দিতে হবে না। ওর ঘা এ মলম লাগানোর দায়িত্ব আমার। তুমি অন্য কাউকে মলম লাগিও।
থেমে গার্ড কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স রাখা আছে নিয়ে আসো।
রুদ্ধের আদেশ মান্য করে গাড়ি থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসলো গার্ড। রুদ্ধ বক্স থেকে একটি মলম বের করে হুরের হাত স্পর্শ করল। লাল হয়ে যাওয়া জায়গায় মলম স্পর্শ করতেই কেঁপে উঠলো হুর। একটু জ্বলছে। তার ওপর রুদ্ধ তার শক্ত হাতে হুরের নরম হাত স্পর্শ করেছে। রুদ্ধ হঠাৎ খেয়াল করল হুরের নরম হাত তুলোর মতো তার হাতের মুঠোয় চুপসে যাচ্ছে। হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগানো শেষ হলে হুর বন্ধুদের সাথে ঘাসের ওপর বসে পড়ে। এবং তার পছন্দের ফুচকা হাতে নিয়ে গপাগপ খেতে শুরু করে।হুর কে এভাবে খেতে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় রুদ্ধ। মেয়েটা যে খাদক ছিল তা সে ভালো করেই জানতো। কিন্তু তাই বলে এভাবে রাক্ষসের মত খাবে!সেদিকে আর লক্ষ্য না করে অন্যদিকে চলে গেল রুদ্ধ। ভরপুর খাওয়া চলছে তাদের মাঝে। সাথে আছে আনলিমিটেড গল্প ।হুর বরাবরের মতো খাওয়ার সময় কথা কম বলছে। আর খাওয়ার ওপর ভাবনা এমন যে,সে যদি খাবারে বিরতি রাখে তাহলে তার ভাগের খাবার অন্যরা খেয়ে ফেলবে। তাই সে কখনো খাওয়ার সময় তেমন কথা বলে না। ফুচকা শেষ করে হামলে পড়ল ঝাল মুড়ির ওপর। ঝাল মুড়ি খাচ্ছে আর হুহা করছে ঝালে ।ফুচকা এবং ঝালমুড়িতে অনেক ঝাল দিয়ে বানানো হয়েছে। এত ঝাল খেয়ে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে হুরের।তবুও খাওয়া বন্ধ করছে না।মুক্তা মুখে বুট ভাজা পুড়ে দূরে থাকার রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে প্রফুল্ল স্বরে বলল।
“তোর কাজিনটা বেশ হ্যান্ডসাম হলেও অনেকটা মুডি।এ নিয়ে দুবার তাকে চোখে পড়লো। গতবারের চেয়ে এবার দেখার সুযোগ বেশি পাচ্ছি। তবে তার মুখে হাসি দেখতে পাচ্ছি না। ব্যাটা কি কখনো হাসে না নাকি?
হুর হতাশ স্বরে বললো,
“আমার মনে হয় লোকটা কে জন্ম হওয়ার পর পরই ডাক্তার তাকে উল্টো লটকিয়ে রেখেছিল। তাইতো সবসময় তার মুখ লটকে থাকে।
( ফিরে আসছি পরবর্তী পর্ব তে )