বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-২০ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
925

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২০
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

সকাল অনেক আগেই হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ টের পাচ্ছে না। তার কারণ রুমের মধ্যে কোন আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারছে না। রুমের সব জানালা বন্ধ। এবং জানালার ওপর পর্দা ঘেরা। তাইতো আলো বাতাসের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। একটু একটু করে ঘুম ছুটে যাচ্ছে হুরের। পিটপিট করে চোখ খুলতে চাইল। তার আগে মাথা বাঁকা করে একটু ঘুরাতে চাইলো। মাথার এক পাশ ব্যথা হয়ে আছে।মাথার সাথে শরীর নাড়াতে চাইলে বুঝতে পারলো তার শরীর নাড়াতে পারছে না। বুঝতে পারল তার শরীরের ওপর বিরাট ভারি একটা বস্তু রাখা আছে।হঠাৎ গতকাল রাতের কথা মনে পড়ল। সাথে সাথে চোখ বড় করে তাকালো। হালকা মাথা উঁচু করে নিজের শরীরের দিকে তাকালো। ঝটকা খেলো। গতকাল রুদ্ধ যেভাবে ঘুমিয়ে ছিল একইভাবে এখনো সে হুরের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। তার অবস্থান অপরিবর্তন। তার মানে লোকটা কি ঘুমের ঘোরে একটুকু নড়াচড়া করেনি?রুদ্ধকে নিজের সাথে এত গভীর ভাবে মিশে থাকতে দেখে আচানক অস্বস্তি হচ্ছে। রুদ্ধকে নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে ইচ্ছে করছে। তবে কিভাবে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছে না।গতকাল রাতেও তো চেষ্টা করেছিল তাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেয়ার। কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে। আগে শুনেছিল পুরুষ মানুষরা মহিলাদের থেকে ভারী হয়। সাথে বেশ শক্তিশালী ও হয়। তবে এতটা ভারী এবং শক্তিশালী তা কখনো টের পাইনি হুর। রুদ্ধকে দেখে সে হারে হারে টের পাচ্ছে ভারী এবং শক্তিশালী পুরুষ কাকে বলে।রুদ্ধের উন্মুক্ত পিঠে হাত ছোঁয়ালো সে। তার শরীর হিমশীতল ঠান্ডা হয়ে আছে। শরীর এত ঠান্ডা হওয়ার কারণ বুঝতে পারছে না সে। মনে করলো হয়তো জ্বর এসেছে।কিন্তু জ্বর আসলে তো শরীর গরম হয়ে থাকবে। তবে এটাতো উল্টো মনে হচ্ছে। জ্বরের কথা মাথায় আসতেই রুদ্ধের কপাল স্পর্শ করল সে।গায়ের সাথে সাথে তার কপাল ,মুখ সবটাই ঠান্ডা হয়ে আছে। বোঝা গেল তার জ্বর আসেনি।

এক হাত বাহুতে অন্য হাত রুদ্ধের কাঁধে রেখে তাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছে সে। তবে পারছেনা। নিজের শরীরের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে তার। রুদ্ধকে নিজের কাছ থেকে সরাতে পারছে না দেখে তাকে ধাক্কাতে লাগলো। এক সময় রুদ্ধ নড়ে চড়ে উঠলো। হুর মনে করেছিল রুদ্ধের ঘুম ভেঙে গেছে। তবে রুদ্ধ তাকে ভুল প্রমাণিত করে হুরের বুক থেকে মাথা সরিয়ে হুরের শরীরের সাথে ঘষা দিয়ে মাথা তুলে তার গলায় মুখ ডোবালো।হতভম্ব হয়ে গেল সে ।কি চাইছিল আর হয়েছেটা কি!চোখ গেল দেয়াল ঘড়ির দিকে। দশটা বেজে পনেরো মিনিট। এত দেরি করে না ঘুমায় রুদ্ধ, আর না ঘুমায় সে।ব্যর্থতায় এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। হঠাৎ মনে হল তার গলায় সুরসুরি লাগছে।কারণ রুদ্ধের গরম নিঃশ্বাস তার গলা ঘাড়ে আচড়ে পড়ছে। এবং তার বড় দাড়িতেও সুরসুরি লাগছে। না, চাইতেও শরীর দুলিয়ে হেসে উঠলো। কিছুটা শব্দ করেও হাসলো। হাসতে হাসতে ডান হাত রুদ্ধের কাঁধে রাখল। ধাক্কা দিতে দিতে বলল,

“এই উঠুন, আমি সুড়সুড়ি পাচ্ছি তো।

ঘুম কিছুটা ছুটে এলো রুদ্ধের। তবে বেশ বিরক্তও হল। বিরক্ত স্বরে বলল,
” উম…হুর ঘুমোতে দাও।

“আপনার ঘুমোতে হলে আপনি ঘুমান ।কিন্তু দয়া করে আমায় ছেড়ে দিন। আপনার জায়গায় গতকাল রাতে ভালোভাবে ঘুমোতে পারিনি। এখনো আমায় জ্বালাচ্ছেন । প্লিজ উঠুন। আমি আর সুড়সুড়ি কন্ট্রোল করতে পারছি না।

হুরের গলা থেকে নিজের মুখ তুলে নিল রুদ্ধ।হুরের মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল।
“সুড়সুড়িকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখো।প্রতিদিন এমন একটু আধটু তোমায় সুড়সুড়ি পেতে হবে। তাই অভ্যাস করে নেয়াটা খুব ভালো।

হুর চোখ বড় বড় করে বলল,
“কি!
” কি না জ্বি।

হুরের ওপর থেকে সরে আসে রুদ্ধ।নিজেকে হালকা মনে হচ্ছে হুরের। এতটাই হালকা মনে হচ্ছে যে,কেউ যদি তাকে ফু মারে তাহলে সে বাতাসের সাথে উড়ে ভেসে যাবে।শোয়া থেকে উঠে বসতেই মনে হল কোমর এবং পায়ের হাড্ডির বেহাল অবস্থা। পা নাড়াতে চাইলে মনে হল ভারী হয়ে আছে। হালকা ঝিনঝিন ও ধরে গেছে।কিছুক্ষণ বসে রইল ঝিনঝিন শেষ হওয়ার অপেক্ষায়।ততক্ষণে রুদ্ধ কাবার্ড থেকে নিজের কাপড় চোপড় নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমে। হুর নিজের শরীরকে টেনেটুনে বহুৎ কষ্টে তার রুমে নিয়ে আসলো। রুমে এসে একটু ব্যায়াম করে নিজের শরীরকে সতেজ করার চেষ্টা করল। একটু হলেও পুরোটা হয়নি। তবে তাতেই সে সন্তুষ্ট।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার সময়টা দেখে নিল। এখন আর ক্যাম্পাসে গিয়েও লাভ নেই।একটা ক্লাস অলরেডি শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন তার রেডি হতে খাবার খেতে খেতে আরও একটা ক্লাস শেষ হয়ে যাবে। তাই আর আজ সে যাবে না ভেবেছে। ডিরেক্ট কোচিংয়ে চলে যাবে।

ডাইনিং এ আসতেই লিলি তার প্রশ্নের পাহাড় জুড়ে বসে পড়ল হুরের সামনে। বারবার জিজ্ঞেস করছে এত সময় কেন লেগেছে ঘুম থেকে উঠতে। তবে ওর একটা কথা বলে কাটিয়ে দিয়েছে যে সে গতকাল রাতে বেশ দেরি করে ঘুমিয়েছে। তাই সকালে উঠতে লেট হয়েছে। লিলি মস্তিষ্কের আরেকটা প্রশ্ন আসতে সে আবার প্রশ্ন করে।

“হুর তোমারটা না হয় বুঝলাম তুমি গতকাল রাতে লেট করে ঘুমিয়েছো তাই উঠতে পারোনি। কিন্তু রুদ্ধ স্যারের ব্যাপারটা ঠিক হজম হচ্ছে না। রুদ্ধ স্যার তো কখনো এত বেলা অব্দি ঘুমায় না। তাহলে আজ এত লেট হচ্ছে কেন?

হুর এবার মেজাজ দেখিয়ে বলল।
“তোমার রুদ্ধ স্যারের কথা আমায় কেন জিজ্ঞেস করছ? তোমার রুদ্ধ স্যার যখন তার গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে তোমার সামনে হাজির হবে তখন তাকেই না হয় জিজ্ঞেস করে নিও।

এমন সময় লিলি দেখতে পেল রুদ্ধ সিঁড়ি থেকে নেমে আসছে। তাই আর হুরকে কোন প্রশ্ন করল না। রুদ্ধ নিজের অ্যাটিটিউড বজায় রেখে হুরের মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়লো। আড় চোখে হুরকে দেখলো। হুর কে কঠিন দেখাচ্ছে। কারণটা ধরতে পারল না সে। মাথা ও ঘামালো না। নিজের মতো করে প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে লাগলো।ডাইনিং থেকে চলে গেল লিলি। জুসের জগ নিয়ে রান্নাঘর থেকে ডাইনিং টেবিলের কাছে আসলো জেরিন। দুজনেই অসময় ঘুম থেকে উঠেছে এবং নাস্তা করছে। তা দেখে এসে বলল,

“ব্যাপার কি ম্যাম আজ আপনি এত লেট করে ঘুম থেকে উঠেছেন?

আবার ফুসে উঠল হুর। বলল,
“গতকাল রাতে এক জল হস্তি আমায় ঘুমোতে দেয়নি। সারা রাত জ্বালিয়ে মেরেছে। তাই ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে।

“জেরিন ভড়কে গেল হুরের কথা শুনে।জেরিন আমতা আমতা করে বলতে লাগলো।
“জল হস্তি মানে! কোন জল হস্তির কথা বলছো তুমি?

নিজের মুখভঙ্গি সিরিয়াস করে হুর। বলে,
“দেখো জেরিন আপু তুমি আমায় আর কখনো আপনি বা তুমি এর মধ্যে গুলিয়ে ফেলবে না। আমি তোমার অনেক ছোট। সে ক্ষেত্রে তুমি আমায় তুমি করেই বলবে। কেউকে ভয় পেয়ে ম্যাম বা আপনি বলে সম্বোধন করবে না।

রুদ্ধের দিকে আড় চোখে তাকালো হুর আর জেরিন।রুদ্ধের মুখশ্রী স্বাভাবিক। তা দেখে হুর আর জেরিন দুজনই স্বস্তি পেল।রুদ্ধ খাবার খেয়ে চলে গেল তার অফিসে।বাড়ির ভেতর রয়ে গেল জেরিন হুর আর লিলি। তিনজন গল্প করছে। গল্পের মাঝে জানতে পারে লিলি বিবাহিত।সাথে এটাও জানতে পারে যে তার সাথে তার হাজবেন্ড থাকে না। কারণ একটা সে মা হতে ব্যর্থ। এ কারণে তার হাজবেন্ড তাকে ছেড়ে গেছে।
নিলির কথা শুনে জেরিন আর হুর দুজনই কষ্ট পেল। সান্তনা দেয়ার মত কিছুই পেল না। কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ তাদের ইছে জাগলো ফিল্ম দেখবে। উৎসাহিত হয়ে তিনজন গোল হয়ে বসলো। তিনজনের মস্তিষ্কে একটাই কথা বিচরণ করছে। তা হল কি ছবি দেখবে!জেরিদের হঠাৎ মাথার বাতি জ্বলে উঠল। না, না মাথার বাতি না বুদ্ধির বাতি জ্বলে উঠল। প্রফুল্ল মুখশ্রী নিয়ে বলল,

“পেয়েছি।
উৎসুক হয়ে লিলি আর হুর জেরিনের দিকে তাকালো। তা দেখে জেরিন বলল,
“আজ একটা রোমান্টিক ফিল্ম দেখব।

রোমান্টিক ফিল্মের কথা শুনতেই হুরের মুখ ছোট হয়ে আসলো। বড় দুই আপুর সামনে রোমান্টিক ফিল্ম কিভাবে দেখবে তা ভেবে অস্বস্তি হতে লাগলো।অস্বস্তি নিয়ে বলল,

” আব…আপু রোমান্টিক না দেখলে হয় না?চল না আমরা কোন কমেডি ফিল্ম দেখি!

লিলি বলল,
“এই বয়সে তোমার উচিত বেশি করে রোমান্টিক ফিল্ম দেখা।এন্ড চিল আমাদের সামনে এত অস্বস্তি পেতে হবে না। তুমিও মেয়ে, আমরাও মেয়ে। তাই এই অস্বস্তি- ফস্বস্তিকে সাইড রেখে ফিল্মের মজা নিবে।আমরা আমরাই তো!

শেষের কথা চোখ টিপ মেরে বলে লিলি।লিলির কথা শুনে কিছুটা অস্বস্তি কমে আসলো তার।তখন আবার লিলি বলল,
“তো বলো জেরিন কোন ফিল্ম দেখতে চাচ্ছো?

জেরিন শরম পেয়ে বলল,
” কবির সিং!
হালকা হাসলো লিলি। বলল,
“আচ্ছা, ঠিক আছে যাও প্লে করো।

জেরিন উঠে চলে গেল ড্রয়িং রুমে থাকা বড় টিভির কাছে।টিভি সচরাচর কেউর-ই দেখা হয় না। ওয়াইফাই এর লাইন কানেক্ট করে চলে গেল ইউটিউবে। সেখানে সার্চ অপশন এ গিয়ে কবির সিং লিখল।ছবিটি আসতেই প্লে করল।উত্তেজনা কাজ করছে হুরের মনে। কারণ কখনো সে রোমান্টিক ফিল্ম দেখেনি। এই প্রথম সে দেখছে। তাও আবার দুটো বড় আপুকে নিয়ে। কবির সিং ফিল্ম নিয়ে তার কোন ধারনা নেই। এমন নামে যে একটি ফিল্ম তৈরি করা হয়েছে তাও সে জানে না।তবে ফিল্ম যখন প্লে করা হল তখন শুরুতে ভেসে আসলো ফিল্মের সব ডিটেলস। তাতে বুঝল ফিল্মটি একটি হিন্দি ফিল্ম।জেরিনকে ফিল্ম প্লে করতে বলে লিরি চলে গিয়েছিল পপকর্ণ এবং চিপস, জুস আনতে।লিলি সবকিছু নিয়ে এসে দেখল ফিল্ম এখনও শুরু হয়নি। তাই সে টি টেবিলের ওপরে সব খাবারে জিনিস রেখে বসে পড়লো সোফায়। মাঝে বসে আছে হুর এবং দু’পাশে জেরিন আর লিলি। দুপা ভাঁজ করে সোফায় বসে আছে হুর। লিলি তখন তার হাতে পপকর্ণ থামিয়ে দিল। একটা একটা করে পপকর্ণ মুখে দিচ্ছে সে। হঠাৎ চোখে ভেসে আসলো অপ্রত্যাশিত ছবির একটা অংশ। সাথে সাথে হতভম্ব হয়ে যায় হুর। মনে পড়ে যায় গতকাল রাতের ঘটনা৷ ছবি এবং তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় একটাই পার্থক্য।তা হলো ছবিতে থাকা মেয়েটি শুয়ে আছে ছেলের উপর এবং রুদ্ধ শুয়ে ছিল তার উপর।হুর লিলি আর জেরিনের দিকে তাকালো। তারা হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে।মজা করে দেখছে তারা।হুর অস্বস্তি নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই দেখে সে দৃশ্যটি শেষ হয়ে গেছে।স্বস্তি পেল সে।

আস্তে আস্তে মেইন কাহিনীতে চলতে লাগলো ছবি। হুর বুঝলো এটা একটি মেডিকেল লাইফের কাহিনী। নায়ককে মোটামুটি ভালো লাগলো তার। ফিল্মটা ভালো লাগতে লাগলো তার।তবে মাঝে মাঝে রোমাঞ্চকর কিছু দৃশ্য দেখে লজ্জা এবং অস্বস্তি ও হতে লাগলো। লজ্জা এবং অস্বস্তি বোধ হয় তার মাঝেই আছে শুধু। লিলি আর জেরিন তারা তো হা করে দেখছে।হুর মাঝে মাঝে দুজনকে আড় চোখেও দেখছে। তাদের রিঅ্যাকশন দেখার জন্য। তবে তাদেরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে এসব খুবই কমন। বা তারা আগে এই ফিল্মটি দেখেছে। এতক্ষণ ভালোই চলছিল। মাঝে মাঝে রোমাঞ্চকর কিছু অদৃশ্য ও দেখা যাচ্ছিল। তবে বিপত্তি ঘটলো নায়ক যখন নায়িকাকে নিয়ে বয়েজ হোস্টেলে নিয়ে গেল।সেখানে কিছু আপত্তিকর দৃশ্য দেখে হুর থমকে গেল। বারবার জেরিন আর লিলির দিকে তাকাচ্ছে। তবে তাদের কোন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাচ্ছে না। চোখে মুখে তাদের উৎসুক উৎসুক ভাব। পরবর্তী সিন দেখার জন্য অতি আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।হুর জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখল জেরিন মুখে পপকর্ণ নিয়ে হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। না,সে চোখের পলক ফেলছে আর না পপকর্ণ চিবিয়ে খাচ্ছে।আকস্মিক জেরিন হুরের বাহু ধরে তাকে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল।

“ওয়াও হুর,অনেক রোমান্টিক তাইনা বলো!

এ প্রশ্নের উত্তর হুর কি দিবে বুঝতে পারছে না। তবে না চাইতেও সে উত্তর দিল,
“হুম!

হুর যখন দেখল লিলি আর জেরিন তার দিকে ধ্যান না দিয়ে শুধু টিভির দিকে তাকিয়ে আছে তখন সেও টিভিতে মনোযোগ দিল। টিভিতে রোমাঞ্চকর সিন সেও উপভোগ করতে লাগল। তখন মস্তিষ্ক এবং তার মন একই কথা বারবার বলতে লাগলো।

” ইশ!এমন একটা কবির সিং যদি আমার লাইফে থাকতো!

এক হাত গালে ঠেকিয়ে সেই রোমাঞ্চকর দৃশ্য দেখতে লাগলো।মাঝে মাঝে তার শরীরেও শিহরণ বইছে। বারবার রুদ্ধের কথা স্মরণ হচ্ছে। রুদ্ধের কথা মনে পড়তেই চোখ মুখ বারবার দুদিকে মাথা নাড়িয়ে যাচ্ছে সে। রুদ্ধকে মস্তিষ্ক থেকে সরানোর প্রচেষ্টা। হঠাৎ তার চোখ গেল সোফার কোনে থাকা আয়না দ্বারা বানানো একটি ফুলদানির উপর। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেইন দরজার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে হুর সে দিকে তাকালো।তাকাতেই সে চমকিত হল। রুদ্ধ!দুহাত ভাঁজ করে বুকের সাথে ঠেকিয়ে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। চোখ তার স্থির এখন হুরের পানে। হুর একবার চোখ বড় বড় করে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আবার টিভির দিকে তাকালো। টিভিতে এখনো রোমাঞ্চকর দৃশ্যগুলো ভেসে আসছে। জেরিন আর লিলি ফুল ফিলিংস এর সাথে টিভি দেখছে। অন্যদিকে যে রুদ্ধ পাহারাদার হিসেবে বাড়ির চৌকাঠে দাড়ি আছে সেদিকে কোনই খেয়াল নেই। ফট করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হুর চিল্লিয়ে ওঠে।

“আরে রুদ্ধ স্যার আপনি!কখন এলেন? আপনি তো এত দ্রুত বাড়িতে আসেন না। তাহলে আজ এই অসময় চলে আসলেন যে?

তীক্ষ্ণ চোখে দূরের দিকে তাকাতেই হুর আবার বলে।
” আব…মানে আপনার বাড়ি, আপনার ঘর, আপনার ইচ্ছে।আপনার যখন মন চায় তখনই আসবেন। এতে আমি বলার কে?

মুখে টেনে আনলো জোরপূর্বক হাসি। রুদ্ধ এসেছে শোনা মাত্রই জেরিনা আর লিলি চমকিত হয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো। জেরিনের হাতেই রিমোট ছিল। রিমোট দিয়ে টিভি বন্ধ করে দিল। তারপর একে অপরের সাথে কাজ নিয়ে কিছু কথা বলে চলে গেল রান্না ঘরের দিকে। রয়ে গেল হুর আর রুদ্ধ। একটু একটু করে হুরের দিকে এগিয়ে আসছে সে। রুদ্ধকে এগিয়ে আসতে দেখে পিছন ঘুরে তার রুমে যেতে চাইলে রুদ্ধের কথায় থেমে যায়।

“ওয়েট!

থেমে যায় সে। পিছন ঘুরে তাকায়। রুদ্ধ একেবারে হুরের সামনে চলে আসে। ব্যবধান কয়েক ইঞ্চির।রুদ্ধ হুরের মুখ পর্যবেক্ষণ করতে লাগে মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে।সেসবে গুরুত্ব দিলো না সে। নিজ মনে থাকা প্রশ্ন করে বসলো।

“কবির সিং..হুম!নাইস মুভি! তো কি মনে করে ছবিটা দেখা হচ্ছিল শুনি?

ঘাবড়ানোর মাত্রাটা এতটাই বেশি ছিল যে,হুরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা জড়ো হল।তা দেখে রুদ্ধ আবারো বলল,

“ইশ্ কতটা ঘাবড়ে গেলে তুমি!ওহ্ সর‍্যি সর‍্যি ঘাবড়ে তো যাওনি। ঘেমে গিয়েছো। তা তোমার এত ঘেমে যাওয়ার কারণটা দেখতে পারছি না। ঘেমে যাওয়ার কথা তো ফিল্মে থাকা নায়ক নায়িকার।

হাতের তালু দিয়ে কপালে জমে থাকা ঘাম মুছে নিল হুর। তারপর গলার স্বর কিছুটা বাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা করল। পারলো না। তাই নিচু রেখেই বলল,
“আমি ওই ফিল্ম দেখতে চাইনি ।লিলি আপু আর জেরিন আপু দেখতে চেয়েছিল। আমি মানা করেছিলাম কিন্তু আমার কথা তারা শুনে নি।তাই আমি আর বাধা…

“তাই তুমি আর বাধা দিতে পারোনি তাই না?

উপর-নিচ মাথা দুলাল হুর।তা দেখে রুদ্ধ মুচকি হাসলো। এই প্রথম। এই প্রথম বার হুর রুদ্ধকে হাসতে দেখল। যদিও তা ছিল মুচকি হাসি। তবে এই হাসি যেন হুরের কাছে অনেক। এখানে এসেছে চার মাসের মত হয়ে যাবে। কিন্তু এই লোকটিকে একবারও হাসতে দেখতে পায়নি সে।মাঝে মাঝে নিজের মনেই প্রশ্ন করতো।”আচ্ছা, এই মানুষটি কি কখনো হাসে না?হাসতে পারে না?সব সময় এত কঠিন মুখশ্রী নিয়ে থাকার কারণ কি?মনকে প্রশ্ন করলেও উত্তর কখনো হুর পায় না। আর রুদ্ধকে জিজ্ঞেস করার মতও সাহস পায় না। তাই কখনো জিজ্ঞেস করেনি। তবে আজ এতটা মাস পর রুদ্ধকে হাসতে দেখে মনের মাঝে এক শীতল স্রোত বয়ে গেল। কিছুটা প্রশান্তি লাগলো। যা প্রকাশ করার মত নয়।রুদ্ধ দেখল হুর তার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তা দেখে সে গলা খাঁকারি দিল। ধ্যান ভেঙ্গে গেল হুরের। রুদ্ধ জিজ্ঞেস করল,

“তা কেমন লাগলো কবির সিং কে দেখে?

রুদ্ধের প্রশ্নে যে প্যাঁচ লুকিয়ে আছে তা ধরতে পারল না হুর।ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে উত্তর দিল,
“হুম, ভালো লাগলো।

নিজেদের দূরত্ব কমিয়ে এনে রুদ্ধ হুরের কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসলো।মাদকতা নিয়ে বলল,
“বি প্রিপেইড ফর বেয়ার দ্যা টর্চার অফ কবির সিং!

**তেমন ভাবে রি-চেক করিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here