বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-২২ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
887

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২২
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

ক্লাসে বসে আছে হুর।তবে মনোযোগ ক্লাসে নেই। তার মস্তিষ্কের বিচরণ করছে রূপের কথা। গতকাল রাত থেকে নারী পাচারকারী শব্দটি নিতে পারছে না সে। রুদ্ধকে সে যথেষ্ট বিশ্বাস করে। কিন্তু যখন থেকে নারী পাচারকারী শব্দটি কর্ণকুহরে পৌঁছেছে তখন থেকেই বিশ্বাসের সিঁড়ি কিছুটা নড়ে চড়ে উঠেছে।সময়টা এখন টিফিন পিরিয়ডের। সবাই একত্রে এক ক্যান্টিনে বসেছে। মেয়েরা এক সাইডে অপর পাশে ছেলেরা। হুরকে এত চিন্তিত দেখে আকাশ প্রশ্ন করলো।

“তুমি কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত হুর?

ধ্যান ভেঙ্গে গেল হুরের।বন্ধুবান্ধবদের মাঝে উপস্থিত থাকলেও তার মস্তিষ্ক উপস্থিত ছিল না। শুধু মস্তিষ্ক না মনও উপস্থিত ছিল না। মন মস্তিষ্ক পড়ে আছে রুদ্ধের কাছে।আকাশের কথা শুনে হুর চিন্তিত মুখটি দমিয়ে রাখলো। স্মিত হেসে বলল,

“আরে তেমন কিছুই না।একটু চিন্তিত আছি তা পরীক্ষার জন্য।

আশ্বাস দিল আকাশ,
“এত চিন্তা করো না।বেশি চিন্তা করলে মনে ভয় ঢুকে থাকবে। পরীক্ষা ভালো করে দিতে পারবে না।

মাথা নাড়ালো হুর। আর কিছু বলল না। চুপ করে বসে রইল।একে অপরের সাথে সবাই কথা বলছে। এবং হুর তা চুপচাপ শুনছে।টেবিলে খাবার আসলেও অমনোযোগী হয়ে খাবার খেলো।কোন রকমে কলেজের সময় অতিক্রম করল। বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই সোফায় গা এলিয়ে দিল। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত লাগছে। তা অবশ্য প্রচুর দুশ্চিন্তা করার জন্য।আগমন ঘটলো লিলির,

“ক্লান্ত মনে হচ্ছে। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার খেয়ে নেবে।

কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসলে হুর। আলমারি থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে রইল। চোখ বন্ধ করে দুশ্চিন্তা কমাতে চাইলো। ৩০ মিনিট সময় নিয়ে গোসল শেষ করলো।নিচে নেমে আসতেই দেখলো রুদ্ধ সদর দরজা দিয়ে ভেতর প্রবেশ করছে। খেয়াল করলো তার সাদা শার্টের দিকে। ফোঁটা ফোঁটা রক্তের ছিটে। আতঙ্কিত হল হুর। দৌড়ে রুদ্ধের কাছে আসলো। বিচলিত হয়ে কোন প্রশ্ন করবে তার আগের রুদ্ধতাকে থামিয়ে দিল।

“ডাইনিং এ বস আমি আসছি।

বড় বড় পা ফেলে চলে গেল তার রুমে।হুর শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে। মনের ভেতর তার হাজারও প্রশ্নের মেলা। তবে এই মেলা থেকে প্রশ্ন কিনতে কেউ আসছে না।কিছুক্ষণ পূর্বের চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে যায় ডাইনিং টেবিলে।বসে রুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।দশ থেকে বারো মিনিট পর রুদ্ধ আসে। তার চেয়ারে বসে পড়ে।হুর তাকে প্রশ্ন করতে চায়। কিন্তু বারবার আটকে যাচ্ছে।হুরকে উৎসুক করতে দেখে রুদ্ধ নিজেই জিজ্ঞেস করল।
“কি বলতে চাও?

দ্বিধায় ভুগছে সে। রুদ্ধকে প্রশ্ন করবে কি করবে না তাই ভাবছে।তার প্রশ্নে কি রিঅ্যাক্ট করবে রুদ্ধ!তবে মাথায় এত প্রশ্নের ভান্ডার নিয়ে এসে ঘুরতে পারবে না। এত দুশ্চিন্তা সে নিতে পারছে না। সিদ্ধান্ত নিল রুদ্ধকে সে প্রশ্ন করবে।যেই না প্রশ্ন করতে যাবে সেই মুহূর্তে বিকট শব্দ তুলে রুদ্ধের ফোন বেজে উঠল। খাবার চিবুতে চিবুতে ফোনের স্ক্রিনে নাম্বার দেখে নিল রুদ্ধ। সাথে সাথে স্বাভাবিক মুখশ্রী কঠিন এ পরিণত হয়।তখন রাত ফোন রিসিভ করে কানে দেয়। ফোনের অপর পাশের কথা শুনে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। মুখের খাবার গিলে আদেশ করে বলে,

“বিকেল অব্দি সামলে রাখো। তারপর যা করার আমি করব।

হুর নিজের খাওয়া বন্ধ রেখে এতক্ষন রুদ্ধের কথোপকথন শুনছিল।রুদ্ধ কান থেকে ফোন সরিয়ে হুরের দিকে তাকালো। ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,
“রাতে কথা হবে।

নিজের খাবার কমপ্লিট না করেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। রুমে গিয়ে কোনমতে রেডি হয়ে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। হুর শুধু সবটাই চেয়ে চেয়ে দেখলো।খাদক হুর আজ ভালোভাবে খেতে পারেনি। মন ভালো না থাকলে সবকিছুই বিষাদ মনে হয়।আজ তার মন ভালো নেই। তাই খাবারের প্রতি রুচি আসছে না।

———————-
সন্ধা থেকে রুদ্ধের জন্য ড্রয়িং রুমে অপেক্ষা করছে হুর।লিলি ও অনেকক্ষণ বসে ছিল হুরের সাথে। কিন্তু তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে যাওয়ায় তার রুমে চলে গেছে। বোরিং হচ্ছিল তাই বই পত্র নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে পড়ল সে। পড়া পড়ছে আর মেইন দরজার দিকে চোখ রাখছে।সেকেন্ড, মিনিট এবং কি ঘন্টা ও বেরিয়ে যাচ্ছে। তারপরও রুদ্ধের দেখা মিলছে না। অবশ্য এত জলদি রুদ্ধর দেখা মেলার কথাও না। তবুও হুর আশাহত হয়ে রুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করছে।অপেক্ষা করতে করতে ডিনারের সময় চলে আসে। তবে হুল ডিনার করে না। সে ভেবেছে রুদ্ধকে নিয়ে এক সাথে খাবে। তাই অপেক্ষা করতে লাগলো।

ফোনের মেসেঞ্জারের মেসেজ নোটিফিকেশন বেজে উঠলো। ফোন চেক করে দেখলো সবাই গ্রুপ মেসেজে জয়েন হয়েছে।সবাই একে অপরের সাথে কথা বলছে।ঠাট্টামি করছে তো একে অপরের সাথে লেগেও যাচ্ছে।মৈনব্রত পালন করছে হুর আর আকাশ। সর্বদা তারা তাদের ঝগড়া দেখে এসেছে। ঝগড়ার মাঝে এক প্রকার বিনোদন খুঁজে পেয়েছে। সর্বদা তাদের ঝগড়ায় মন ফুরফুরে হলে এখন হুরের মন ফুরফুরে হতে পারছে না।তাই ভাবল সবার সাথে কথা বলে মন ফুরফুরে করবে। তাই নিজেও টুকটাক মেসেজ করতে লাগলো।রুদ্ধ বাসায় আসলো রাত এগারোটার পর। ড্রয়িং রুমের সোফায় হেলে পড়ে যেতে দেখল হুরকে।দ্রুত গতিতে হুরের কাছে এসে হুরকে ভালোভাবে শুয়ে দিল সে। হুরের এখানে ঘুমানোর কারণ রুদ্ধ বুঝতে পারছে না।সেন্টার টেবিলে দেখল হুরের বই পত্র রাখা আছে। ভ্রু কুঁচকে এল রুদ্ধের। হুরকে এখানে ঘুমিয়ে থাকতে দেখা সাথে টেবিলের ওপর বই দেখে সমীকরণ মেলাতে চেষ্টা করল রুদ্ধ। যা বুঝলো হুর তার জন্যই অপেক্ষা করছে। অপলক চেয়ে রইল ঘুমরত হুরের দিকে। একেবারে শান্তশিষ্ট। এমনিতেও তার সামনে আসলে শান্তশিষ্টই থাকে। কথা বলতে গেলেও যেন কণ্ঠনালী কেঁপে ওঠে। হুরের কপালে চুম্বন এঁকে দিল সে। সরে আসতে নিলে খেয়াল করল ওহুর তার চোখ খোলার চেষ্টা করছে। আখি পল্লবে রুদ্ধকে দেখে তৎক্ষণাৎ শোয়া থেকে উঠে বসল হুর। রুদ্ধকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলো। না, সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। স্বস্তি পেল যেন। প্রশ্ন ছুড়ে দিল তার দিকে।

“কখন আসলেন ?

“যখন তুমি সোফা থেকে হেলে দুলে পড়ে যাচ্ছিলে।
কথাটা কি রুদ্ধ অপমান করে বলল?বুঝতে পারো না হুর।তাই আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। বলল,

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার গরম করছি।

রুদ্ধ তীক্ষ্ণ চোখে হুরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।
“তুমি খেয়েছ?
“না, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আপনি আসুন একই সাথে খেয়ে নিব।
কথা না বাড়িয়ে রুদ্ধ চলে গেল তার রুমে।এদিকে হুর রান্নাঘরে গিয়ে ওভেনে খাবার গরম করে নিল।বেশি সময় লাগলো না রুদ্ধের আসতে। চট জলদি ফ্রেশ হয়ে দ্রুত চলে আসলো, ডাইনিং এ।হুর রান্নাঘর থেকে দ্রুত পা চালিয়ে বাটিতে করে তরকারি নিয়ে আসছে।তরকারির বাটি রেখে আবার ছুটল রান্নাঘরে।হুরের ছুটাছুটি গভীর নয়নে দেখতে লাগল রুদ্ধ।হুর এক এক করে সব খাবার টেবিলে রেখে নিজেও চেয়ারে বসে পড়লো।রুদ্ধের দিকে তাকাতেই দেখলো রুদ্ধের দৃশ্য তার দিকেই নিবদ্ধ।চাহনি শীতল।হুর নিজেও তাকিয়ে রইলো। বারবার মন বলছে এটাই শেষ দেখা।ভেতর আত্মা বলছে “যত দেখার এখনই দেখে নে রুদ্ধকে।না,হলে সময় পেরিয়ে গেলে আর দেখতে পাবি না” চমকিত হল হুর।এমন ভাবনাতে সে আসলেই খুব চমকেছে।চমকানোর ঘোর কাটে রুদ্ধের কথায়।

“সার্ভ করে দাও!

আরো চমকে উঠলো হুর। কারণ রুদ্ধ কখনও কাউকে বলে না খাবার সার্ভ করে দিতে।তাহলে আজ হঠাৎ?মনের মধ্যে সংশয় থাকলেও তা প্রকাশ করে না হুর। নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, রুদ্ধের পাশে এসে দাঁড়ায়। রুদ্ধের প্লেটে খাবার সার্ভ করতে থাকে।এতদিন রুদ্ধের সাথে থেকে ভালো করেই হুরের জানা হয়ে গেছে রুদ্ধ কি কি খায় এবং কতটুকু খায়।প্লেটে খাবার সার্ভ করা হলে হুর যেতে নেয় তার চেয়ারে। থামিয়ে দেয় রুদ্ধ,

” আমার পাশে বসো!

হুর বুঝতে না পেরে বলে,
“হু?

ইশারায় নিজের পাশের চেয়ার দেখায় রুদ্ধ। রোবটের ন্যায় বসে পড়ে হুর।রুদ্ধ নিজের প্লেটে একটু ভাত নেয়,সাথে তরকারি।হুর ফ্যালফ্যাল চোখে রুদ্ধের কান্ড দেখছে। রুদ্ধ ভাতের সাথে তরকারি মাখিয়ে হুরের মুখের সামনে ধরে।হতভম্ব দৃষ্টি হুরের।হুরকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে হালকা হাসলো রুদ্ধ। বলে,

” খেয়ে নাও হুরপাখি…ধরে নাও এটাই আমার হাতে প্রথম এবং শেষ খাবার খাচ্ছো।

বিঃদ্রঃপরবর্তী পর্ব তে ধামাকা হতে পারে 🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here