বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প #পর্ব-২৭ #লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

0
917

#বৃষ্টিস্নাত প্রেমের গল্প
#পর্ব-২৭
#লেখনীতে-আসমিতা আক্তার ( পাখি )

সকালে তাড়াহুড়ার সহিত রেডি হচ্ছে হুর।কলেজের টাইম হয়ে গেছে। আজ ঘুম থেকে উঠতে লেট না হলেও রুদ্ধের কারণে বিছানা ছাড়তে লেট হয়েছে। রুদ্ধ তাকে কোনমতেই ছাড়ছিল না। শেষমেষে হুর জবরদস্তি করে রুদ্ধকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে উঠেছে।ডান পাশে কাত হয়ে হুরকে রেডি হতে দেখছে রুদ্ধ।চোখে তার লেগে আছে এখনো ঘুমের বেশ। মেডিসিনের পাওয়ার অনেক। তাই ঘুম দুদিন ধরে বেড়ে যাচ্ছে।হুর জামা পাজামা পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল বাধছে। সে মনে করেছিল রুদ্ধ ঘুমিয়ে আছে। তাই বুকে ওড়না নেয়নি।সেভাবেই রেডি হতে শুরু করে দিয়েছে।

একধ্যানে হুরের পিঠের দিকে তাকিয়ে আছে রুদ্ধ। পাতলা রঙা সাদা জামার ভেতর থাকা ছোট কাপড়ের অবয়ব বোঝা যাচ্ছে।ঘুম জড়ানো চোখ নিয়ে রুদ্ধ সেদিকেই তাকিয়ে আছে।অন্যমনস্ক হয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো জেগে আছে। এবং তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অদ্ভুত চাহনি। রুদ্ধের এমন চাহনি দেখে ভেতর কেঁপে উঠলো হুরের। খেয়াল করলো তার গায়ে ওড়না নেই।তাই দ্রুত গায়ে ওড়না জড়ালো। আড় চোখে আয়নার দিকে তাকিয়ে রুদ্ধকে দেখল। রুদ্ধ এখনো তারই দিকে তাকিয়ে আছে।চোখের চাহনিটাও আগের। দুরু দুরু মন নিয়ে রেডি হয়ে নিল হুর।পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে নিজের ব্যাগে বইপত্র গোছাতে লাগলো। মিনমিনিয়ে বলল,

“উঠুন ঔষধের সময় পার হয়ে যাচ্ছে।

চোরা চোখে আবার রুদ্ধের দিকে তাকালো। বুঝতে পারল না রুদ্ধের এমন চাহনি। তার দিক থেকে পলকই সরছে না। রুদ্ধের এমন চাহনি দেখে ভেতর আত্মা কেঁপে উঠল হুরের। লোকটা আজকাল কিভাবে করে তাকায়!তার এই তাকানোতে হুরের শরীর তরতর করে কেঁপে উঠে।এলোমেলো হয়ে যায় মস্তিষ্ক।রুদ্ধর এই চাহনি থেকে পালানোর জন্য জলদি ব্যাগ গুছিয়ে কাঁধে ঝুলিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে,

“আপনি ফ্রেশ হয়ে জলদি নিচে নামুন। ডাইনিং এ আমি আপনার অপেক্ষা করছি। হাতে বেশি সময় নেই, কলেজের সময় হয়ে যাচ্ছে।

বলে আর এক সেকেন্ডও সেখানে দাঁড়ায়নি। হুরের এই মিছে ব্যস্ততা দেখে হাসলো রুদ্ধ।বিছানা ছেড়ে চলে গেল ফ্রেশ হতে।

———————
কলেজ গেইটের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পিছনের সিটে হুর আর রুদ্ধ বসে আছে। ড্রাইভার আপাতত গাড়ির মধ্যে উপস্থিত নেই। রুদ্ধতাকে বের হওয়ার আদেশ জানালে সেও দ্বিধাহীন ভাবে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। দীর্ঘ কয়েক মিনিট ধরে কথা বিহীন বসে আছে দুজন। কারন ছাড়া গাড়িতে বসিয়ে রাখার কারণ বুঝতে পারছে না হুর। বিরক্তী ছেয়ে যাচ্ছে তার মুখশ্রীতে। বসিয়ে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করতেও ভয় লাগছে। রুদ্ধের মুখশ্রী কঠিন। রেগে আছে নাকি বিরক্ত আছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। সাহস জুগিয়ে রুদ্ধকে প্রশ্ন করেই বসে।

“আমাকে অযথা বসিয়ে রাখার কারণ কি?

চোখ মুখে হুরের দিকে তাকালো রুদ্ধ। যেন তার প্রশ্ন করাটা বড় অপরাধ হয়ে গেছে।এই মুহূর্তে প্রশ্নটা করা যেন বেমানান। রুদ্ধের ভাব ভঙ্গি দেখে ঘাবড়ে গেল হুর। তারপরও রুদ্ধের দিক থেকে দৃষ্টি সরালো না। তাকিয়ে রইল। বিরক্তি নিয়ে রুদ্ধ গম্ভীর স্বরে উত্তর দিল।

“খুব কি জরুরী ছিল আজকের ক্লাস অ্যাটেন্ড করা?

হতবিহ্বল হয়ে রুদ্ধের দিকে তাকিয়ে আছে হুর।বোধগম্য হলো না রুদ্ধের কথা।তাই মুখ থেকে কথা না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জানালো।রুদ্ধের মুখশ্রীতে আরো বিরক্তি ভাব দেখা গেল।দাঁত পিষে বলে,

“জরুরী তো হবেই!কলেজে এসে হা হা,হি হি করতে পারো। আর আমার সামনে তো বোবা হয়ে থাকতে হয়।

বাকরুদ্ধ হুর।এ কি কথা বলছে রুদ্ধ!সে কি কলেজে আসে হাসার জন্য?আর তার সামনে বোবা হয়ে কেন থাকতে হয় তা কি রুদ্ধ বুঝে না?রুদ্ধ রেগে যাচ্ছে ভেবে হুর গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলে,

” দু দিন পর আমার পরিক্ষা।

চুপ হয়ে যায় রুদ্ধ।তবে একটু অভিমান হয়। বিয়ের পর দিনই বউ কলেজে চলে যাবে তাকে ছেড়ে। ভাবতেই রাগ লাগছে। আর এই পরিক্ষাটাও আসার সময় পেল না। বেছে বেছে বিয়ের পর পরই আসতে হলো।দৃষ্টি জানালার বাহিরে রাখলো। হুর কিছুই বুঝতে পারলো না। একবার রেগে যায়,আবার চুপ হয়ে যায়। লোকটা এমন করছে কেন বোঝা দায় হয়ে যাচ্ছে হুরের।

“আমি লাঞ্চের আগেই চলে আসব।

গাড়ি থেমে নেমে কলেজের ভেতর চলে গেল হুর।অনেক দিন পর বন্ধু মহলে আসতে পেরে মন আনন্দিত হয়ে গেল।আকাশ হুরকে দেখে বহু দিনের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।হুর সবার সাথে হেসে কথা বলছে।এর মাঝে সবার কাছ থেকে নোটস ও কালেক্ট করে নিয়েছে।

হুর তার কথা রেখেছে।লাঞ্চের আগেই চলে এসেছে।বাড়িতে এসে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা চলে গেল রুমে। রুদ্ধের রুমে। দেখলো রুদ্ধ সোফায় বসে ফাইল চেক করছে।মুখের আদল পরিবর্তন।হুর ব্যাগ রাখলেও টেবিলের ওপর। গলায় থাকা স্কার্ফ দিয়ে মুখমন্ডল মুছতে লাগলো। কিছুটা ঘেমে এসেছে। ক্লান্ত স্বরে রুদ্ধকে বললো,

“আপনি ডাইনিং এ গিয়ে বসুন, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ভোতা মুখ করে বসে রইল রুদ্ধ। হুরের কথায় পরোয়া করলো না। সেদিকে লক্ষ্য না করে ব্যস্ততার সহিত আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল হুর।স্কার্ট আর টি-শার্ট পড়ে গোসল সেরে নেয়। মাথায় তোয়ালে পেচানো।গলায় ম্যাচিং ওড়না। শরীরের উন্মুক্ত জায়গায় পানির ছিটে।টি-শার্ট এর হাতা শর্ট থাকায় মসৃণ ফর্সা হাত দেখতে দেখতে খুবই অ্যাট্রাক্টিভ লাগছে।রুদ্ধ সোফায় বসে ভোতা মুখ করে এতক্ষণ হুরকে স্ক্যান করছিল। হুর প্রথমে লক্ষ্য করেনি যে রুদ্ধ সোফায় বসে আছে। যখন লক্ষ্য করলো তখন ভ্রু কুচকে তাকালো।সে মনে করেছিল রুদ্ধ ডাইনিং এ চলে গিয়েছে।

হুর আয়নার সামনে দাঁড়া হয়ে মাথায় থাকা তো অনেক খুলে দিল। ঝর ঝর করে চুল পীঠ ছড়িয়ে হাঁটু ছুয়ে দিল। যত্ন সহকারে চুল মুছতে লাগলো ওর। মাঝে মাঝে থেমে যাচ্ছে। হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে চুল মুছতে মুছতে। থেমে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় আবার মাথা মুছতে লাগে। কোন রকমে চুল মুছে আঁচড়ে নিল। রুদ্ধর সামনে এসে বলল,

“আসুন!

হুর কে মাথা থেকে পা অব্দি দেখে নিল রুদ্ধ।উঠে দাঁড়ালো সোফা ছেড়ে। সামনে এগোতে লাগলো হুর। পিছে পিছে আসছে রুদ্ধ। চোখ স্থির হয়ে আছে হুরের লম্বা ভেজা চুলের ওপর।যা হাটার সাথে সাথে দোল খাচ্ছে। চুলের আগায় পানির কণা লেগে আছে। হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়ে পড়বে। ডাইনিং টেবিলে বসতেই হুর রুদ্ধকে খাবার সার্ভ করে দিল। কারণ জানে রুদ্ধ তাকে খাবার সার্ভ করতে বলবে। তাই নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে আগেই রুদ্ধকে খাবার সার্ভ করে দিল। খাবার সার্ভ করার সময় হুর অতি নিকটে চলে আসলো রুদ্ধের কাছে। একটু নুইয়ে খাবার সার্ভ করার ফলে খুলে রাখা ভেজা চুল পিট ছাড়িয়ে ডান হাত আর এক গাল ঢেকে গেল।

হুরের এক হাতে খাবারের বাটি আর অন্য হাতে চামচ।এক পলক সেদিকে তাকিয়ে সোজা হয়ে চুল ঠিক করার চেষ্টা করলো। তবে হল না। উল্টো আরো চুল সামনে চলে এলো। বিরক্ত হয়ে হাত থেকে বাটি আর চামচ রাখতে গেল। তার আগেই রুদ্ধ চুল সরাতে লাগলো। ভেজা চুল গলায়ও লেপ্টে ছিল। সেখান থেকে সরিয়ে গলায় দু আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।শিউরে উঠলো হুর।স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।অন্যরকম তার চাহনি।রুদ্ধ হুরের গলায় স্লাইড করতে করতে গলার একটু নিচেও স্লাইড করতে লাগলো। লাগাতার উপর থেকে নিচ স্লাইড করছে।রুদ্ধের শীতল হাত। শীতল হাতের ছোঁয়া পেয়ে বারবার কেঁপে উঠছে হুর। হুরের কাঁপাকাঁপি টের পেয়ে রুদ্ধ তার এক হাতে দিয়ে হুরের হাত থেকে চামচ আর বাকি টেবিলের রাখে। তবে দৃষ্টি তার হুরের দিকেই সীমাবদ্ধ।

রুদ্ধ তার বাম হাতে দিয়ে ওরে ডান হাত স্পর্শ করে। বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে হাতের তালু স্লাইড করে। আলগোছে হুরকে নিজের নিকটে নিয়ে আসে। ঢিলে হয়ে যাওয়া হুরের শরীর কয়েক কদম এগিয়ে রুদ্ধের সমীপে আসে।নিজের চেয়ার থেকে আরেকটু ঘুরে বসে থেকেই হুরকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রুদ্ধের মাথা গিয়ে ঠেকে হুরের বুকে। দুহাত দিয়ে পাতলা কোমর চেপে ধরে। বড় একটা নিঃশ্বাস টেনে হুরের শরীরের ঘ্রান নেয়।তারপর ইচ্ছাকৃতভাবে হুরের উন্মুক্ত গলায় নিজের গরমে শ্বাস ছাড়ে। মারাত্মক শিহরণে দুই হাত দিয়ে রুদ্ধের চুল খামচে ধরে হুর। এক প্রকার ঘাবড়েও আছে। কারণ এখন তাদের অবস্থান ডাইনিং টেবিলে। যেকোনো মুহূর্তে জেরিন আর লিলি চলে আসতে পারে। রান্নাঘরের দিকে চোখ বুলিয়ে দুহাতে দিয়ে রুদ্ধের মাথা উঁচু করতে চাইল। কিন্তু রুদ্ধের শক্তিতে পেরে উঠতে পারল না। বাধ্য হয়ে ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল,

“প্লিজ আমাকে ছাড়ুন। জেরিন আপু বা লিলি আপু চলে আসবে।

হুরের কথা গ্রাহ্য করল না রুদ্ধ।শরীরের আনাচে-কানাচে ফিলিংস দিয়ে ভরপুর তার। যা সে এই মুহূর্তে দমিয়ে রাখতে চাইছে না।হুরের কথা উপেক্ষা করে ঘোর লাগা কণ্ঠে হুরকে ডাকলো।

“বউ…

কান্না চলে আসছে হুরের। যখন থেকে বিয়ে হয়েছে তখন থেকেই লোকটা তাকে আদুরে গলায় বউ ডেকে ডেকে কাপিয়ে দিচ্ছে। বউ ডেকে বারবার তাকে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। রুদ্ধের কথার প্রতি উত্তর করল হুর।

” হুম
“আদর করতে ইচ্ছে করছে।
থমকে যায় হুর। গোল গোল করে মাথা ঘুরতে লাগলো। যেন যেকোনো মুহূর্তে মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। লোকটার প্রবাচন দুদিন ধরে তার ভালো ঠেকছে না। হুটহাট কাছে চলে আসা এবং বউ বলে সম্মোধন করা। তাও মোহনীয় কন্ঠে। রুদ্ধের আমার কথা শুনে নিঃশ্বাসের গতি বেড়ে গেল হুরের। হৃদয়ের স্পন্দনও বেড়ে গেছে। টের পেল রুদ্ধ। হুরের বুকে নিজের মুখ গভীর ভাবে মিশিয়ে বলল,

“তোমার হার্ট এত জোরে জোরে বিট কেন করছে?

নিরত্তর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে হুর। নিজেই হার্টের গতি বাড়িয়ে নিজেই প্রশ্ন করছে কেন বেড়েছে!নিতান্তই এটা একটা বোকামি প্রশ্ন। রুদ্ধ ও হুরের কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে হুরের ডান হাত নিজের চুল থেকে ছাড়িয়ে নিজের বক্ষস্থলে রাখে।হুরের হাতের উপর নিজের হাত চেপে ধরে বলে ,

“দেখো তোমার মত আমারও হার্টবিট খুবই দ্রুত চলছে।

মনোযোগ দিয়ে রুদ্ধের হার্ট বিট গুনতে লাগলো হুর। টের পেল সত্যিই রুদ্ধের হাটবিট খুবই দ্রুতগতিতে চলছে। একদম ঠিক তার মত। হাত দিয়ে হুরের হাত চেপে ধরা অবস্থাতেই নিজের বুকে হুরের হাত দিয়ে ঘষা দিল। রুদ্ধের বুক খামচে ধরলো হুর। নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে রুদ্ধ বলল,

“হুরপাখি.. আমি কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছি।ডুবে যেতে ইচ্ছে হয়েছে তোমার মাঝে। এমনিও তো তোমার সাথে আমার বাসরটা কমপ্লিট হয়নি। এই বাহানায় না হয় বাসরটা সেরে ফেলবো।

( প্রচুর মাথা ব্যাথা,গল্প কয়েকদিন লেট করে পাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here