#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৭
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)
সেদিন আমি পুরো পুরি রেডি হয়ে পার্লার থেকে বের হই।বের হওয়ার পর ড্রাইভার কে কল দিবো ঠিক তখন তার সামনে একটা মাইক্রো আসে।চার জন ছেলে বের হয়।আমার হাত ধরে টেনে গাড়ির ভিতর নিতে চায়। আমি চিৎকার করতে নিলে আমার মুখে এসপ্রে করে।তার পর আমার কিছু মনে নেই।বেশ কিছু ক্ষন পর আমার জ্ঞান ফিরে।
কথা গুলো বলেই কাদতে লাগলো সামিয়া।কিছুক্ষন পর আবার বলতে শুরু করলো।
আমি দেখি একটা অন্ধকার রূমে আমার হাত বাঁধা।দেখি তিন জন আমার দিকে তাকিয়ে আছে।তারা আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
-“আমাকে প্লীজ ছেড়ে দিন।আমি কি করেছি আপনাদের?”
– “আরে সুন্দরী এতো তাড়া কিসের?আমাদের সাথে একটু সময় কাটাও। দেইখো ভালো লাগবো।”
– “আমি তো কোনো ক্ষতি করি নি আপনাদের।কেনো আমাকে ধরে রেখেছেন?”
– “তুই কোনো ক্ষতি করিস নি কিন্তু তোর ভাই যে ঐই দিন মেলায় আমগোরে মা*রলো না।মনে নাই?আজ আমরা তোর লগে সব করুম।দেখুম তোর ভাই কি করে?”
– “প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন।আমি কেউ কে কিছু বলবো না।আমাকে যেতে দিন।”
– “যাইতে তো দিমু আগে একটু মজা কইরা লোই।”
– “আমাকে যেতে দিন।আমার ভাই ওই দিন আপনাদের মে*রেছে তার জন্য আমি মাফ চাচ্ছি।মাফ করে দিন।আপনাদের ঘুরেও তো মা বোন আছে।আমি তো আপনাদের বোনের মতো। ছেড়ে দিন আমায়।দু হাত জোড় করে বলছি।”
– “আরে ছাইড়া তো দিমু। আর তুই তো আমগো বইন না।তুই ও মজা পাবি।আমরাও মজা পামু।”
– “আমার এতো বড় সর্বনাস করবেন না।দু হাত জোড় করে বলছি।”
বলেই তারা হাসতে লাগলো।এগিয়ে গেলো সামিয়ার দিকে।তারা কেউ সামিয়ার কথা শুনে নি।সামিয়ার উপর প্রথমে একজন ঝাঁপিয়ে পড়ে।সামিয়া সাথে জোড়া জুড়ি শুরু করে।কিন্তু ভাগ্য ভালো যে তিন জন নেশা গ্রস্থ অবস্থায় আছে।পাশেই ছিল ম*দের বোতল।সামিয়া প্রথম জনের মাথায় বোতল দিয়ে বেশ জোড়ে বারি মারে।প্রথম জনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।সামিয়া দৌড় দিতে নিলে পিছন থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় জন তার সাথে জোড়া জুড়ি শুরু করে।blous ছিঁড়ে যায়।পা কেটে যায়। দ্বিতীয় জনের পুরুষালি অঙ্গে লাথি দেয় সামিয়া।ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে সেই লোক। তৃতীয় জন সামিয়ার পিছু নেই। ভাগ্য ভালো তখন চতুর্থ জন ছিল না।সামিয়া দৌড়ে মেইন রোড চলে আসে।এক গড়ির সাথে ধাক্কা খায়। গাড়ি ছিল ইয়াসিরের।
কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে দেয় সামিয়া। কান্নার বেগ যেনো বেড়েই চলছে।কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায় সামিয়ার।
-“আপনারা প্লিজ আর কোনো প্রশ্ন করবেন না। প্লিজ!সামিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।আপনারা প্লিজ বাইরে ওয়েট করুন।”
ডক্টর মিতালীর কথা শুনে সকলে রূমে থেকে বের হয়ে যায়। পুলিশ অফিসার চলে যায়।
-“সামিয়ার আব্বু , এক কাজ করো তুমি কেস উঠিয়ে নাও।আমি চাই না আমার মেয়ের সম্মানে প্রশ্ন উঠুক।”
কাদতে কাদতে বললেন রাজিয়া বেগম।
-“এ তুমি কেমন কথা বলো তুমি বউ মা ?সামিয়ার সম্মানে কোনো প্রশ্ন উঠবে না”(বিলকিস বেগম)
– “রাজিয়া তুমি এ কি কথা বলছো?সামিয়ার সাথে যা হয়েছে তার জন্য তাদের পর্যাপ্ত শাস্তি দিয়ে হবে।”(মনিরা বেগম)
-” নাহ আমি কোনো শাস্তি দিতে চাই না।শাস্তি দিতে গেলে আমার মেয়ের সম্মানে কথা উঠবে।আমরা জানি তার সাথে কিছু হয় নি।কিন্তু মানুষ বুজবে না।তার উপর মানুষ প্রশ্ন তুলবে।না,না আমি কখনোই চাই না আমার মেয়ের উপর কেউ প্রশ্ন তুলুক।”( কাদতে কাদতে বললেন রাজিয়া বেগম)
-” চাচী শুনো।আমার দিকে তাকাও।দেখো আমরা জানি সামিয়ার সাথে কিছু হয় নি।যেখানে আমরা সত্য জানি সেখানে মানুষের কথা ভেবে কেনো আমরা অপরাধীকে শাস্তি দিবো না।আজ যারা এই কাজ করেছে কাল দেখবে তারা অন্য সামিয়ার সাথে ঠিক এমন বা এর চেয়ে বাজে কিছু করবে।আমাদের সামিয়া তো রক্ষা পেয়ে গিয়েছে।কিন্তু হতে পারে অন্য সামিয়া রক্ষা পাবে না।আমরা যদি তাদের ছেড়ে দেই তবে দেখা যাবে তাদের জন্য আমাদের সমাজে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হবে।মেয়েদের প্রতিনিয়ত যৌ*ন হয়রানির শি*কার হতে হবে।বলো চাচী, তুমি কি চাও এই নিকৃষ্ট কি*ট গুলো প্রতিনিয়ত মেয়েদেরকে নানা ভাবে কষ্ট দিক ?তাদের সম্মান নিয়ে খেলা করুক?”
বেলীর কোথায় রাজিয়া বেগম চুপ হলেন।কিন্তু চেহারায় চিন্তার ছাপ বিদ্যমান।
-“তোর কথা বুঝলাম বেলী।কিন্তু মা তো আমি।মেয়ের সম্মান এভাবে নষ্ট হবে তা আমি চাই না।তোর কথা যদি মেনেও নেই তবে কে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে?”
– “আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।তিনি উত্তম পরিকল্পনা করি।তিনি যার জন্য সামিয়াকে তৈরি করেছেন সঠিক সময়ে সে হয়তো সামিয়ার কাছে বা সামিয়া হয়তো তার কাছে পৌঁছে যাবে।তিনি যখন যার সাথে চাইবেন তার সাথেই সামিয়ার বিয়ে হবে।সব কিছুই তো আল্লাহর হাতে।দেখে নিও আমাদের সামিয়াকে রাজ কুমার এসে নিয়ে যাবে।”
এবার রাজিয়া বেগম বেলীর কথায় কিছু টাও হলে সস্তি পেলেন।ঠিক আল্লাহ যা করবেন ভালোর জন্য করবেন।উত্তম হবে অপরাধীকে শাস্তি দেয়া।
রাত এগারোটা।বেলী সুবাসের পাশে বসে আছে।সব ঘটনা সুবাসে খুলে বললো বেলী।সুবাসের বুঝতে বাকি রইলো না যে ,মেলার ওই ব*দ মাইশ গুলোর কাজ এটা।
-“কেমন আছে সামিয়া?”
-“আগের থেকে একটু ভালো।”
– “আপনার এখন কেমন লাগছে সেটা বলুন?”
– “তুমি পাশে থাকলে আমি এমনি খুব বেশি ভালো থাকি।তার উপর আবার সকালের চু’মুতে বেশি ভালো হয়ে গিয়েছি।”
– “কি সব বলছেন।”
-“বউ তোমার চু’মু তে জাদু আছে।ওষুধের চেয়ে ভালো কাজ করে।আরো যদি এইটা চু’মু দাও আরো বেশি ভালো হয়ে যাবো।এক কাজ করো সকাল বিকাল দুপুর তিন বেলা দশটা করে ত্রিশটা চুমু দিও তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবো।”
– “আপনি চুপ করুন এটা বাসা না।হসপিটাল কেউ শুনলে কি ভাববে?”
– ভাবার কি আছে?তুমি আমার বউ।দুই দিন পর আমার বাচ্চার মা হবা। তোমকে চুমু খাবো না তো কি অন্য মেয়েকে চু’মু খাবো ?
তাদের কথার মাঝে উপস্থিত হলো ডক্টর ফারদিন।
-“কি অবস্থা সুবাস?কেমন ফিল হচ্ছে?”
– “ফিল বেটার।বউ পাশে থাকায় দ্রুত রিকোভার হচ্ছে।”
– “ওহ ভবি তাহলে ওষুধের মত কাজ করছে।”
– “ওষুধের থেকে দ্রুত কাজ করে”
– “বায় দা ওয়ে।ওষুধ গুলো কিন্তু ঠিক মতো নিতে হবে।সব কিছু ঠিক ভাবে মেইন টেইন করতে হবে।তবেই আরো তাড়াতাড়ি রিকোভার হবে।”
-” ধন্যবাদ! ফারদিন, চারদিন । আই উইল বি সিওর অবউৎ টেকিং মেডিসিন রেগুলারলি।”
সুবাসে কোথায় হাসলো ফারদিন। ছোট বেলা থেকেই সুবাস ফারদিনকে ফারদিন চারদিন বলে। এখনও সেই অভ্যাস থেকে গেছে।
-“তুই আর ভালো হবি না।একটা কথা বলতে হবে ভাবি তোকে খুব ভালোবাসে করে।তোর অপারেশন পরে একে তো এক গাদা প্রশ্ন ছুঁড়েছে আমার উপর তার উপর আবার নিজে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল।”
বেলী এবার তাদের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেল।সামিয়াকে দেখার কথা বলে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।
– “দেখেছিস তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ফল।তুই ও বিয়ে করে নে। আর কত দিন সিঙ্গেল থাকবি?”
-” হুম এবার করে নিবো।”
– “মেয়ে দেখবো?নাকি কেউ আছে পছন্দের?”
– “পছন্দের কেউ নেই তবে একজনকে চোখে ধরেছে।এবার বিয়েটা করেই ছাড়বো।”
– “তাড়াতাড়ি কর। চাচ্চু ডাক শুনতে চাই।”
– “বিয়েটা আগে তুই করেছিস সেই হিসেবে আগে চাচ্চু ডাক শুনার অধিকার আমার।”
– “হুম হুম সময় হলেই শুনতে পারবি।বউ আমার ছোট তাই এখন এগুলো ভাবছি না।”
ফারদিন আরো কিছুক্ষন সুবাসের সাথে কথা বলে চলে গেলো।সুবাস বেলীর জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।
(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই? আজ কিন্তু গল্প বড় দিয়েছি।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ 😊)
চলবে……?