বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব :২৮ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
147

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব :২৮
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

আজ সুবাস কে ডিসচার্জ করা হয়েছে।এতো দিনে সবার প্রাণ ফিরে এসেছে।সামিয়াকে বেশ কিছু দিন আগেই ডিসচার্জ করা হয়েছে।আগের থেকে ভালো অবস্থা সামিয়ার।সুবাসেকে রুমে নেয়া হলো।

-”আমার একটু সাওয়ার নেয়া প্রয়োজন। কতো দিন ধরে ঠিক মতো শাওয়ার নেয়া হচ্ছে না।”

– “আপনি একা একা পারবেন?আমি আপনাকে সাহায্য করি?”

– “বাহ বউ দেখি দিন দিন রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে।ভালো হবে এক সাথে শাওয়ার নেয়ার বাহানায় রোমান্স করা হয়ে যাবে।”

– “আপনি না অসুস্থ। তাও আপনার মাথায় এমন আজগুবি কথা কেনো চলে?”

– “আমি আবার কি করলাম।তুমি তো বললা যে,এক সাথে শাওয়ার নেয়ার কথা।”

– “আমি শুধু বলেছি যে আপনাকে শাওয়ার নিতে সাহায্য করবো।আপনি তো দেখি কথার উল্টো মিনিং বের করেন।”

– “লজ্জা পেও না বউ।লজ্জা পেলে তোমাকে গিলে খেতে মন চায়।”
বলেই সুবাস শাওয়ার নিতে চলে গেলো।
সুবাস শাওয়ার নিয়ে বের হলে বেলী সুপ নিয়ে আসে।অসুস্থ অবস্থায় সুপ খেলে যেমন ভালো লাগে ঠিক তেমন মুখে রুচি আসে।
-”খেতে পারবেন একা?”

সুবাস আফসোসের সুরে বলল, “আমার কি আর সেই কপাল যে বউ খাইয়ে দিবে।”

বেলীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আজ কাল সুবাসের এই আবদার গুলো খুব ভালো লাগে।তিন বেলা টাইম করে বেলীর খাইয়ে দিতে হয়। টাইম টু টাইম ওষুধ হাতে ধরিয়ে দিতে হয়।সুবাসের যা প্রয়োজন সব কিছু বেলীর করতে হয়।কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুবাস বলে যে, সে করতে পড়বে তাও বেলী শুনতে নারাজ। বেলীর এই কাজ গুলো করলে এক অন্য রকম প্রশান্তি লাগে।ভালো লাগা সৃষ্টি হয়।সুবাসে খাইয়ে দিয়ে বেলীর রেডি হলো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।বেশ অনেক দিন হলো ভার্সিটি যাইয়া হয় না।সামিয়াকেও প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করানো হয়েছে।
__________

-”মা আমাকে মাফ করে দাও।আমি তখন তোমাকে কিছু বলতে পারি নি।কিভাবে বলবো বলো?তুমি এতো খুশি ছিলে আর আমি তোমাকে বহুবার বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারি নি।”

-”দেখো নিহাল তুমি খুব বড় ভুল করেছো।নাহ ভুল না অপরাধ করেছো।তুমি ভাবতে পরো সামিয়ার উপর দিয়ে কি গিয়েছে?মেয়েটা পুরো ভেঙে গিয়েছে।তোমার জন্য সম্মান নষ্ট হয়েছে।তুমি একবার আমাকে সাহস করে বললে এতো কিছু হতো না।”

মনিরা বেগম মিতা বেগমর উদ্দেশ্য করে বললেন, -”আপা এখন তো যা হবার হয়ে গিয়েছে।আপনি নিহাল ও ফিহার বিয়ের ব্যাবস্থা করুন।শুধু শুধু বাচ্চাদের কষ্ট দিয়ে কোনো লাভ নেই।”

-”ঠিক আছে নিহাল তুমি আগে সামিয়ার কাছে মাফ চাও।সে যদি তোমাকে মাফ করে দেয় তাহলে আমি তোমার ও ফিহা বিয়ের বেবস্থা করবো।”
বলেই মিতা বেগম বসার ঘর থেকে চলে গেলেন।

সামিয়া সাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। ভার্সিটি যাচ্ছে সব কিছুই আগের নিয়মে চলছে পাশাপাশি মানুষের কটু কথা স্বীকার ও হয়েছে। আমাদের সমাজের মানুষ গুলোই এমন।পুরো কথা যা জেনেই ভুল তথ্য নিয়ে মানুষকে খোঁচা মারে।একবার কথার সত্যতা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করে না। আর মেয়ে মানুষের সাথে কিছু হলে তো সেই কথা বাতাসের আগে ছড়ায় হোক সে কথা মিত্থা।আর সামিয়ার সাথে তো কতো কিছুই হয় গেলো।শুধু মাত্র আল্লাহর রহমত যে সম্মানে দাগ লাগে নাই।তবে এ কথা বললে ভুল হবে যে সত্য তার ফ্যামিলি জানে কিন্তু বাইরের মানুষের তো যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছে।
তার নাকি বিয়ে হবে না,সে নাকি ধ*র্ষিতা,কে করবে বিয়ে এমন মেয়ে কে?কেউ করবে না এমন মেয়ে কে বিয়ে।এমন মেয়ের নাকি বাঁচার অধিকার নাই।এসব মেয়ের জন্য নাকি সমাজ নষ্ট হয়।হয়তো তার চরিত্রে সমস্যা যার জন্য নিহাল বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। সে নাকি খারাপ মেয়ে,আর কত কি।তবে সামিয়া এখন এগুলো মেনে নিয়েছে।কি করার মেয়েদের নিয়তি এমন সব কিছু মেনে নিতে হিয়।প্রথম প্রথম খুব খারাপ লাগতো এখন মানিয়ে নিয়েছে।তবে বলতে হবে সামিয়ার ফ্যামিলি সবাই খুব সাপোর্টিভ।তাকে খুব সাপোর্ট করে।কেউ কিছু বললে মুখের উপর জবাব দিয়ে দেয়।বিশেষ করে বেলী।মেয়েটা যে তাকে এতো ভালোবাসে তা বলার বাইরে।মেয়েটা একদম তাকে নিজের বোনের মতো করে আগলে নিয়েছে।সব কিছু খেয়াল করে।

সামিয়া নিজের রোমে বারান্দায় দাড়িয়ে কথা গুলো আনমনে ভেবে চলছিলো।তখন উপস্থিত হয় নিহাল।

-”সামিয়া তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার।”

সামিয়া জানে কি বলবে নিহাল তাকে।সব কিছু শুনেছে সে।
-”বলুন!”

– “বিয়ের দিনের ঘটনার জন্য আমি খুব দুঃখিত।এবং আমি লজ্জিত।আমাকে মাফ করে দাও।আমার জন্য আজ তোমার এত কিছু ফেস করতে হচ্ছে।তোমার সাথে যা হয়েছে কোথাও না কোথাও আমিই দায়ী।হয়তো আমার ভুলের জন্য তোমার সাথে এমন হলো।আমি আগেই আম্মুকে বলে দিলে এমন কিছু হতো না।আমি সত্যিই দুঃখিত।আমাকে ক্ষমা করে দাও সামিয়া।”

গর গর করে বলে থামলো নিহাল।

-“দেখুন যা হয়েছে সব কিছু ভুলে যান।আমিও ভুলার চেষ্টা করছি।আমাদের বিয়ে একসাথে লিখা ছিলো না বিধায় হিয় নি।আমার সাথে যা হয়েছে তা আমার ভাগ্যে লিখা ছিলো।আমার আপনার উপর কোনো রাগ নেই।উপর ওয়ালা যা করেন ভালোর জন্য করেন হয়তো আমাদের জন্য কিছু ভালো রেখেছেন তিনি ।আপনি নির দ্বিধায় আপনার মনের থেকে সকল সংকোচ দুর করে ফেলুন।নিজেকে অপরাধী ভাববেন না।আপনি নিশ্চিন্তে ফিহা আপুকে বিয়ে করতে পারেন।আমিও চাই আপনার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক।সবার তো আর আপনার মতো ভাগ্য না যে ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।আপনার জন্য খুব খুব শুভঃ কামনা।”
বলেই সামিয়া চলে গেলো।

সব কিছু শুনে মিতা বেগম ফিহার ফ্যামিলির সাথে কথা বলেন।যেহুতু ফিহাদের বাসা ঢাকা তাও মিতা বেগম ঠিক করেছিলেন বিয়ে সিলেটে হবে কিন্তু আমজাদ হোসেন বলে দিয়েছেন যে , সুবাস ও সামিয়া দুজনেই ঠিক আছে তাই বিয়ে ঢাকাতেই হবে।প্রথমে মিতা বেগম আপত্তি করেন, পরে সবাই বুঝানোর পর রাজি হোন যে বিয়ে ঢাকাতেই হবে।সব কিছু চিন্তা করে ঠিক করা হয় যে ,সামনে মাসের বিয়ে পড়ানো হবে।সকলেই মন থেকে দোয়া করে যেনো এবার সব কিছু ঠিক হয়।
(আসসালামুআলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। ধন্যবাদ সবাইকে এতো সাপোর্ট করার জন্য।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন।)
চলবে…….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here