বেলী_ফুলের_সুবাস #পর্ব:২৯ #মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

0
145

#বেলী_ফুলের_সুবাস
#পর্ব:২৯
#মেঘকন্যা (ছদ্মনাম)

দেখতে দেখতে সময় চলে যায়।সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সুবাস পুরো পুরি সুস্থ।সামিয়া নিজ জীবন নিয়ে ব্যাস্ত। নিহাল আর ফিহার বিয়ে ঢাকাতেই হবে।তাদের বিয়ের আর মাত্র সাত দিন বাকি।সামনে সপ্তাহে শুক্র বার তাদের বিয়ে।কাল রাতে ডক্টর ফারদিনের বাবা নিজাম আহমেদ আমজাদ হোসেনের কাছে ফোন দিয়েছেন।বলা চলে বিশেষ কারণে তিনি ফোন দিয়েছেন।কারণ হলো এতো দিনের বন্ধুত্ব কে তিনি সম্পর্কে রূপান্তর করতে চান।

তিনি ফারদিনের জন্য মেয়ে পছন্দ করেছেন তাও আবার আমজাদ হোসেনের পরিচিত মেয়ে।কিন্তু এ কথা বলতে হবে যে মেয়ে তিনি নয় স্বয়ং ফারদিন পছন্দ করেছে।মেয়ে আর কেউ না সাজিয়া।সাজিয়াকে নাকি মনে ধরেছে ফারদিনের।নিজাম আহমেদ আরো জানিয়েছেন সব কিছু ঠিক থাকলে আজ তারা আংটি পড়বেন আমজাদ হোসেন সরাসরি মিতু চৌধুরী কে ফোন দিয়ে বলেন এই ব্যাপারে।সাথে তিনি ছেলের গ্যারেন্টি দেন যে ছেলের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই পাশাপাশি ফ্যামিলি ভালো। মিতু চৌধুরী তাদের কে আসতে বললেন।সাথেই আমজাদ হোসেনকে পুরো পরিবার নিয়ে দাওয়াত দিলেন।

তাই আজ সকলে তাদের বাসায় যাবে।শুধু যাবে না সুবাস।তার নাকি ইম্পর্ট্যান্ট ডিল ফাইনাল করতে হবে পাশাপাশি ইয়াসিরের দিক টাও তাকে দেখতে হবে।কারণ সাজিয়ার বিশেষ দিনে ভাই হিসেবে ইয়াসিরের অফিসে থাকা মানান সই নয়।বেলী যাবে না কারণ কয়েক দিন পর ইয়ার ফাইনাল।এখনো অ্যাসাইন্মেন্ট কমপ্লিট করা হয় নি।কমপ্লিট করতে হবে।তাই বেলী যাবে না।অবশ্য এ নিয়ে সাজিয়া রাগ করেছিল কিন্তু সে তাকে মানিয়ে নিয়েছে।

-“রেডি হচ্ছেন?”

সুবাস আয়নার সামনে টাই বাঁধছিলো।বেলী চোখ খুলে সুবাসের দিকে তাকিয়ে বললো।বেলী ঘু’মু ঘু’মু চোখে সুবাসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।সুবাস কে জড়িয়ে ধরলো।এই লোককে আগে বেলীর সহ্য হতো না কিন্তু এখন কি হয় সে জানে না।শুধু লোকটার পাশাপাশি থাকতে মন চায়।বিনা কারণে ছুঁয়ে দিতে মন চায়।চোখের মায়ায় ডুব দিতে মন চায়।সারাদিন লোকটাকে পাশে পেতে মন চায়।লোকটাকে দু চোখ ভরে দেখতে মন চায়।

এ সব কিছু যে এক বিশেষ কারণে হচ্ছে তা বেলী ভালো করেই জানে।কারণ হচ্ছে ভালোবেসে ফেলেছে সে সুবাসকে।না ভালোবাসে না গভীর ভাবে ভালোবাসে।কথাগুলো ভেবে লজ্জায় লাল হয়ে গেলো বেলী।

-”কি ব্যাপার বউ দেখি সকাল সকাল লজ্জা পাচ্ছে। তাও আবার রাতে কিছু না করতে।”

-” একটু জড়িয়ে ধিরেছি দেখে আপনি দেখি লজ্জা দিচ্ছেন।এমন করলে কিন্তু জড়িয়ে ধরবো না”

– “আচ্ছা রাগ করো না।তুমি কি আমার সাথে ভার্সিটি যাবে?”

– “নাহ! একাই যেতে পরবো।”

-” আচ্ছা আমি যাচ্ছি তাহলে।”
সুবাস রুমের দরজার সামনে আসতেই শুনতে পেল
-”শুনুন”
বেলীর মতো করেই জবাব দিলো সুবাস
-”বলুন”

বেলী এগিয়ে এসে এবারও সুবাসকে জড়িয়ে ধরলো।সুবাসের গালে ও ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ালো।সুবাস তো কয়েক সেকেন্ড এর জন্য থমকে গেলো।বেলীর দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। গোল গোল চোখে বেলীকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।বেলী সুবাসকে ছেড়ে দিলো।

-”বউ কি চাচ্ছে না আমি অফিসে যাই?বউ কি রোমান্টিক মুডে আছে নাকি?নাকি লিটল বেলীকে আনতে চাইছে?বউ কে বলতে চাই এখন আমার অফিস যেতে হবে। এবার কিন্তু আমি নিয়ন্ত্রণ হারা হলে এই বেসা’মাল আমিকে বউ সামলাতে পারবে না।”

বেলীর বলতে ইচ্ছা করলো,আমি তো আপনার নিয়ন্ত্রণ হারা আলি’ঙ্গন চাই।আমি তো বেসা’মাল আপনাকে সামলাতে চাই।আপনার বেসামাল ভালোবাসা পেতে চাই।আপনার অবাধ্য ছোয়া পেতে চাই।কিন্তু না লজ্জার কারণে বলতে পড়লো না।নিজেকে সংযত রেখে বললো

-”আপনি কিন্তু আমায় আবার লজ্জা দিচ্ছেন।কথা নেই আপনার সাথে”

-”আচ্ছা রাগ করো না।আমি যাচ্ছি।”

বলেই সুবাস বেলীর কপালে চুমু খেয়ে বের হতে নিলেই শুনতে পেলো
-”শুনুন”

ফির বেলীর দিকে তাকালো সুবাস।মেয়েটা কি কিছু বলতে চাইছে?তার সঙ্গ চাচ্ছে?

-”সাবধানে যাবেন।তাড়াতাড়ি ফিরে আসবেন।”

-”হুম।আল্লাহ হাফেজ”
বলেই সুবাস চলে গেলো।

___________

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ায় সময় চলছে।সাজিয়াদের বাসায় সকলে উপস্থিত হলো। ফারদিন তার বাবা মা ও ছোট বোন এসেছে। বসার ঘরে সকলে বসে কথা বলছে।ইয়াসির বসে ফারদিনের সাথে কথা বলছে।হাজার হলেও বোনকে তো আর এভাবেই কারো হাতে তুলে দেয়া যায় না।আজীবনের ব্যাপার।তাইতো এটা সেটা জিজ্ঞাস করছে ফারদিনকে ইয়াসির।বড়রা নিজেদের মতো কথা বলছে।

বেশ কিছু ক্ষন পর সাজিয়াকে নিয়ে আসা হলো বসার ঘরে।পরনে মেরুন রঙের শাড়ি।হাতে চুড়ি।চুল গুলো হালকা খোঁপা করে মাথায় শাড়ির অচল টেনে দেয়া। চোখে কাজল।ঠোঁটে হালকা কালার লিপস্টিক।সাজিয়াকে বসানো হলো।সাজিয়ার বেশ অসস্তি হতে লাগলো।একেতো প্রথম এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো। দ্বিতীয় এক জোড়া চোখ যে তাকে বেশ কিছু ক্ষন যাবৎ পলকহীন ভাবে দেখেই চলছে তাও বুঝতে পারলো।

সাজিয়ার পাশে ফারদিনের ছোট বোন নূপুর বসলো
-”ভাইয়ার কিন্তু সেই লেভেল এর চয়েস। ভাবি কিন্তু একদম পারফেক্ট।”

নূপুর কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই।সাজিয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল। রিপা (ফারদিনের মা) বেশ কিছু ক্ষন কথা বললো সাজিয়ার সাথে।তাদেরকে কথা বলার জন্য আলাদা পাঠানো হলো।

-”আপনাকে কিন্তু ভীষণ সুন্দর লাগছে মায়াপরি।”

ফারদিনের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেল সাজিয়া।ঠোঁট অনবরত কাপতে লাগলো।কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো।চেয়েও কিছু বলতে পারলো না সাজিয়া।

-”এই যে বারং বার আপনার রূপে কেউ একজন ভীষণ ভাবে ঘায়েল হচ্ছে তার কি খেয়াল রেখেছেন?”

ফারদিনের কথায় চোখ তুলে তাকালো সাজিয়া।ঠোঁটে ফুটে উঠলো এক চিলতে হাসি।

-”এই যে আপনার হাসিতে কেউ যে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে তার খবর কি রাখছেন?”

পর পর এমন প্রশ্নে লজ্জায় লাল হয়ে গেল সাজিয়া।তার কাছে এই প্রশ্নেই কোনো উত্তর নেই।কিভাবে দিবে সে প্রশ্নের উত্তর যেখানে তার ঠোঁট দুটো কেপেই যাচ্ছে।হাঁটু গুলো বাজে ভাবে কাপছে।দাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।সাজিয়া সাভাবিক করার জন্য ফারদিন বললো

-”আমার দিকে তাকান মিস সাজিয়া”
সাজিয়া ফারদিনের দিকে তাকালো।এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।ফারদিন হাসলো সাজিয়ার কাণ্ডে।

-”আপনি ভীষণ লাজুক সাজিয়া।এই লাজুকতায় আমি ভীষণ ভাবে তলিয়ে যাচ্ছি।নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না।নিজেকে ধরে রাখা কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে।”

বলেই ফারদিন সামনের দিকে পা বাড়ালো।হঠাৎ পিছন ঘুরে বললো

-”তৈরি থাকবেন মিস সাজিয়া।খুব শীগ্রই আপনাকে নিয়ে যাবো আমি।আমাকে সামলানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।”

বলেই ফারদিন চলে গেলো। সাজিয়া গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো ফারদিনের যাওয়ার পানে।ফির ফারদিনের বলা কথা ভেবে হাসলো।এই এতটুক সময়ের মধ্যে সাজিয়া বুঝে গিয়েছে লোকটার মধ্যে কিছু একটা আছে যা তাকে টানছে।লোকটার কথা বলার ধরন,তাকানো,চলা ফেরা সব কিছু ভীষণ ভাবে টানছে সজিয়াকে।
________

সুবাস আজ বাইরে থেকে ডিনার করে আসবে বলেছে।মিটিং আছে বলে সকলকে এক সাথে ডিনার করতে হবে।বেলীকে সুবাস অনেকে বার সরি বলেছে কিন্তু বেলী কিছু মনে করে নি।কাজ করতে গেলে এমন হবেই।এটাও আর আহামরি কিছু না।সামান্য ডিনার।এতে অবশ্য বেলীর জন্য ভালো হয়েছে যা করতে চাইছে তা সহজে করতে পারবে।

বাসায় ফিরলো সুবাস।চোখে মুখে ক্লান্তি স্পষ্ট।।বেশ কয়েকবার কর্নিং বেল দেয়ার পর যখন বেলী দরজা খুললো না তখন সুবাস চিন্তায় পড়ে গেল।পকেট থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলে সোজা রুমে গেলো। রূমে গিয়ে যা দেখলো তাতে বিস্ময়ে চোখ দুটো যেনো বের হয়ে আসবে সুবাসের।
(আসসালামুআলাইকুম।কেমন আছেন সবাই। সবাই প্লিজ একটু রেসপন্স করবেন।আপনারা একটু রেসপন্স করলে আমার লিখার আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট এবং শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ)
চলবে……….?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here