#বিষন্ন_রাত💖,পর্বঃ__২
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
দ্বিতীয় বিয়েটা করা যে ভুল হলো তা ভালো করেই বুঝতে পারছে রুদ্র চৌধুরি। এই দ্বিতীয় বিয়ে যে তার আর রাতের মাঝে দুরুত্ব বাড়িয়ে দিচ্ছে ধিরে দিরে।
যদিও বিয়ের আগেই রাত তার বাবার দ্বিতীয় বিয়ে সম্পর্কে দ্বিমত পোষন করেছিলো।
রাতে ছাদের এক কোনে দু,পা ঝুলিয়ে বসে আছে রাত। হাতে আছে গিটার টা। আর তার পাশেই পরে আছে একটি ছোট্ট ডায়রি। আগে ডায়রি লিখায় তেমন অভ্যস্ত ছিলোনা রাত। ইদানিং তার অনুভুতি গুলো ডায়রি বন্ধি করে রাথছে।
হটাৎ মনে পরলো বৃষ্টির কথা। মাথা ঝাকিয়ে একটা হাসি দিলো সে। এই মেয়ে জাতির কারণেই তার জীবনটা বিষন্নতায় ঘেরা। সবাই তো আর এক মন মানশিকতার মানুষ নয়। তাহলে মেয়েদের প্রতি তার কিশের এতো এলার্জি?
বসে বসে গিটারের সুরে হারিয়ে যেতে ব্যাস্ত সে। মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখথে শহরের কিছুটা অংশ। যতদুর দেখা যায়। দিন ও সন্ধার তুলনায় শহরটাও স্তব্দ হয়ে গেছে। যেনো তার মতো এটাও একটা বিষন্ন শহর।
পেছনে তার বাবা রুদ্র চৌধুরিকে দেখেই উঠে দাড়ায় সে।
তার বাবা তার পাশে এসে দাড়িয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,
– রাত তো বেশ গভির হয়ে উঠেছে এখনো ঘুমাস নি যে।
– ঘুম আসছেনা তাই।
– রাত জাগলে তো শরির খারাপ করবে।
– চোখের ঘুম অনেক আগেই হারিয়ে গিয়েছে বাবা। মা হারা ছেলের সবচেয়ে বড় ভরশা তাকে তার বাবা। আর সেই বাবাকেও যদি অন্য কেও নিয়ে নেয় তাহলে তার কি বা থাকে? আমি এতিম হয়ে গেছি অনেক আগেই আর এতিমের জন্য চিন্তা করার মানুষ খুব কমই।
আর কিছু বললো না রুদ্র চোধুরি। একটা বড় দির্ঘশ্বাস পেললো সে।
রাত গিটার আর ডায়রিটা নিয়ে সোজা চলে গেলো নিচে।
রুদ্র ভালোভাবেই বুঝতে পারছে আজও পলি রাতকে কিছু বলেছে। হাটা দরলো সে ও।
ওদিকে রাতের আইডি খুজেই চলছে বৃষ্টি। একটু আগে মা এসে বকাঝকা করে গেলো সাজিদ ভাইয়ার সাথে নাকি ভাব দেখাই তাই। মা কে ভালোভাবেই জব্দ করে নিয়েছে ওই সাজিদ হারামজাদা। মামাতো ভাই দেখে কিছু বলতেও পারে না বৃষ্টি।
রাতের আইডি খুজে না পেলেও তার বন্ধু রাফির আইডি টিকই খুজে পেলো বৃষ্টি। যাক তার কাছ থেকেই নেওয়া যাবে নাম্বার ও পেসবুক আইডি।
ছাদ তেকে নিচে নেমে সেজা পলির রুমে চলে যায় রুদ্র। রুদ্রর রাগি লুক দেখে সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করে পলি,
– কি হয়েছে তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
– রাত তোমার নিজের ছেলে না হলেও সম্পর্কে তো ছেলে তাই না? তার সাথে ব্যাবহারটা ভালো একটু ভালো করবে। আমার মায়ের কারনেই তোমার এই বাড়িতে আশা। নাহয় আমি আমার ছেলের সাথেই ভালো থাকতে পারতাম।
– ও তার মানে তোমার কাছে বিচার দেওয়া শেষ ওর? কি বলেছি আমি? সেই সকালে কলেজের নাম করে বের হয় আর রাতে ফিরে। সারাদিন কি করে কোথায় থাকে তার কোনো হিসেব রাকো তুমি? শুনলাম নাকি নেশাও করে ও। নিজেতো কোনো ইনকাম করেনা সারাদিন বাবার টাকায় ফুর্তি করা। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তোমার ছেলে।
– একধম পালতু কথা বলবে না পলি। আর আমার পর সব কিছু রাতেরই। তাই তাকে কথায় কথায় খোটা দেওয়া বন্ধ করো। আর তোমারও তো মা হওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। ওকে নিজের সন্তানের মতো দেখতে পারোনা। আর শুনো রাত আমার ছেলে আর ওর মুখে আমি সব সময় হাশিখুশিই দেখতে চাই। যদি এমনি চলতে থাকে থাকে, তাহলে ডিবোর্স পেপারে সাইন করে সোজা বেরিয়ে যাবে। আই হোপ আমি কি বলছি তা বুঝতেই পারছো। মাতৃত্ব সুলভ আচরন করবে তার সাথে।
ডিবোর্সের কথা শুনে আর কথা বাড়ালো না পলি। কারণ এর আগেও একটা সলসার ছিলো পলির। কখনো বাচ্ছা হবেনা শুনে স্বামী ডিবোর্স দেয় তাকে। আর একজন ডিবোর্সি নারি সমাজে কতোটা অবহেলিত।
রাত প্রায় দুইটার কাছাকাছি। একটা ফোন আসলো রাতের ফোনে। আন নোন নাম্বার। প্রথমবার দেখতে দেখতেই কেটে গেলো। পরের বার রিসিভ করলো রাত।
ওপাস থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠ ভেষে উঠলো,
– ফোন ধরছিলেন না কেনো? আর সেই এক ঘন্টা আগে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠালাম এখনো এক্সেপ্ট করেন নি যে?
– অনলাইনে তেমন একটা যাওয়া হয়না তাই হয়তো। আর আপনি কে বলছেন?
– আক্স করুন তো দেখি।
– সরি আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।
বলেই ফোন রেখে দিলো রাত। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে রাত। ফোনে একটা মেসেজ আসলো। দেকে সেই অচেনা নাম্বার টা থেকে।
– ভেরি এটিটিউট” বাই দ্যা ওয়ে, আমি “বৃষ্টি” ফোনে তো বলারই সুজুগ দিলেন না।
– ওহ আচ্ছা।
– আচ্ছা আপনি কি সব সময়ই এমন গম্ভির থাকেন?
– আমি আমার মতো যে যেমন ভাববে সেটা তার ইচ্ছা।
– বুঝিনি।
– কি জন্য ফোন দিয়েছিলেন?
– আপনি কি বিরক্ত?
– বিরক্ত কেনো হবো আজব? কারণ থাকতে পারেনা?
– আচ্ছা আমরা তো একই ক্লাসে পড়ি তাহলে আমরা কি তুমি করে বলতে পারি না?
– আপনার ইচ্ছা।
– আপনি নয় তুমি।
– ওহ্।
– ফ্রেন্ড?
– আচ্ছা বাই রাত অনেক হয়েছে, এখন ঘুমাবো, গুড নাইট।
ফোন রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বৃষ্টি। মুখে বরাবরের মতোই প্রশারিত হাসিটা বিদ্যমান। কিন্তু পূর্ব পুরুষ রা একটা কথা বলে গেছে, অতি হাসলে পরে দুখের সাগরে ভাষতে হয়।
,
,
,
আজ ৭ ই এপ্রিন। তার বাবা মায়ের এ্যানিভার্সারি। ছোটবেলায় এইদিনটায় কতোি না আনন্দ হতো তার। ঘুরা হতো কতো জায়গায়। কেক কাটার সময় তাদের দুজনের মাঝখানেই রাতের স্থান ছিলো। হারিয়ে গেছে আজ সেই দিন গুলো। সব সৃতির পাতায় রয়ে গেছে। আর সেই সৃতি মনে রাখতেও চায়না সে। সৃতির পাতা উরিয়ে দিতে চায় কবুতরের পায়ে বেধে উরো চিঠির খামের মতো।
কিন্তু সেই সৃতির পাতাগুলোই প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায় তাকে।
গালে হাত দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে রাত। জুয়েল স্যার ক্লাস করা্ছে সেদিকে কোনো মন নেই রাতের। ভাবনার সমাপ্তি ঘটলো স্যারের ডাক শুনে। আদেশ এলো, এতোক্ষন স্যারে কি পড়ালো তা বোর্ডে গিয়ে সকলকে বুঝিয়ে দেওয়া। রাতের হাতে মার্কার ধরিয়ে ইশারা করলো বোর্ডে দিকে। রাত হেটে সামনে গেলো।
স্যার হেটে হেটে বুঝাচ্ছে সকলকে।
” ক্লাসের মাঝে অমনোয়োগি হওয়াটাও কিন্তু রেজাল্ট খারাপের অন্যতম কারণ।
কিছুক্ষন পর সকলের চোখ পরে আছে বোর্ডের দিকে।
রাত লিখতে লিখতে পুরু বোর্ড কালো করে ফেলেছে। একটা কথাই বার বার লিখা, I hate mom, I hate mom, I hate mom, I hate mom…………………..
,
,
ছুটির পর একটা মেয়ের সাথে বসে আছে বৃষ্টি। মেয়েটার চোখে শুধু অঝর ভাবে গড়িয়ে পরছে জল। মেয়েটার নাম কেয়া। রুশানের সাথে সম্পর্ক ছিলো তার। গত এক সাপ্তাহ ধরে রুশানের সাথে কোনো জোগাযোগ করতে পারেনি সে। অনেক খুজে আজ রুশানকে পেয়েছে তাও রুশান নানান অপমান করে ব্রেকআপ করে চলে গিয়েছে। হয়তো কেয়া তার প্রিয়জন নয়, প্রয়োজনেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
বৃষ্টি তার পাশে বসে বুঝাচ্ছে তাকে,
– আরে তুমি বাচ্চাদের মতো কাদছো কেনো? ওসব মিথ্যা ভালোবাসার জন্য চখের জল ফেলাটাও বৃথা। কারণ এই জলেরও একটা বিষেশ মুল্য আছে। আজ তোমার খুশি থাকার কথা কারণ এমন একটা ছেলের কাছ থেকে তুমি মুক্তি পেয়েছো যে কিনা তোমার ভালোবাসাটা কখনোই বুঝেনি। যে তোমাকে ভালোবাসবে তাকে তুমি খুজে বেড়াতে হবেনা সে নিজেই তোমাকে আগলে রাকতে চাইবে। সকল পরিস্থিতিতে আশ্বাস দিবে, কিচ্ছু হবেনা আমি আছি তো। দেখবে এর চাইতে বেটার কেও তোমার লাইফে আসবে। যারা ভালোবাসার মুল্য দিতে জানেনা তাদের জন্য চোখের পানি ফেলাটাও বোকামি।
আর তোমাকে এমন কান্না কান্না ভাবে একধম দেখতে ভালো লাগছে না। একটু হাসো।
দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলো রাত। বৃষ্টির সাথে নিজের চিন্তা ভাবনা গুলোকে মিলিয়ে দেখার চেস্টা করছে। ভালোবাসার প্রতি সকল মানুষেরই সম্মান থাকা উচিৎ। প্রেম করা সহজ কিন্তু সারা জীবন চারটি হাত একজোটে বেধে রাখাটা খুবই কঠিন।
মেয়ের প্রতি তার বরাবরই অবিশ্বাস থেকলেও। কেনো জানি বৃষ্টির প্রতি অদ্ভুত একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো। আর এটা ভালো লাগা নয় বৃষ্টির প্রতি তার সম্মান।
,
,
ইদানিং বৃষ্টির সাথে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে রাতের।
রাত তখন ১২ টা বাজে। রাতের ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখে বৃষ্টি। একটু অবাক হলো রাত।
এতো রাতে বৃষ্টি ফোন দিয়েছে? এতো রাতে ফোন করে কথা বলার মতো কোনো ঘনিষ্টতা নেই তাদের মধ্যে। কোনো সমস্যা হলোনা তো আবার?
ফোন রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে বৃষ্টি বলে উঠলো,
– ঘুমিয়ে পরেছো?
– নাহ,,
– তাহলে একটু নিচে আসো।
– এতো রাতে নিচে কেনো?
– ওফ আসোনা। অনেক্ষন ধরে দারিয়ে আছি ভয় ভয় ও করছে কেমন।
– মানে কি তুমি এতো রাতে আমার বাসার নিচে?
রাত বারান্দায় গিয়ে দেখে বৃষ্টি দাড়িয়ে আছে নিচে।
দৌড়ে নিচে চলে গেলো রাত।
– কি ব্যপার বৃষ্টি তুমি এতো রাতে এখানে?
বৃষ্টি একটা গিটার আর একটা গিফ্ট বক্স এগিয়ে দিলো রাতের দিকে।
– হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
রাত হা করে আছে আছে বৃষ্টির কথায়। হটাৎ মনে পরলো আজ তো ২৫ তারিখ ঠিকি তার বার্থডে। অথচ তারই মনে নেই। কতোটা বেখেয়ালি ভাবে জীবন যাপন করছে সে।
তাহলে এই জন্যই কি বৃষ্টি সেদিন রাতকে তার বার্থডে কবে জিজ্ঞেস করেছিলো?
কিন্তু সব ঠিক আছে। বৃষ্টির এই পাগলামির মানে কি? এতো রাতে একা একটা মেয়ে, কতো রকম বিপদ হতে পারতো।
– কি হলো নাও, গিটার তো তোমার খুব প্রিয় যা সব সময় তোমার সাথে থাকে। ভাবলাম এটা দিলে তুমি খুশি হবে। কি হওনি খুশি?
– তাই বলে এতো রাতে আর এভাবে একা? এখন দেশের পরিস্থিতির ব্যপারে জানোনা?
– এতো কিছু জানিনা অনেক কষ্টে বাসা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে এসেছি।
রাত বৃষ্টিকে ঘরে নিয়ে যেতে চাইলেও আবার থমকে গেলো। কারণ তার সৎ মা এটা কিভাবে নিবে কে জানে? হয়তো তিলকে তাল বানিয়ে পরিবেশন করবে বাবার কাছে।
– একা একা আসতে তেমন ভয় হয়নি। তোমাকে সারফ্রাইজ দিবো এই চিন্তা মাথায় ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি। এখন ভিষন ভয় করছে। আমাকে কি বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে?
রাত বুঝতে পারলো বৃষ্টি কায়দা কারেই তার সাথে হাটতে চাইছে। গাড়িও নেই রাস্তায় হেটেই যেতে হবে পুরুটা পথ। যাই হোক, বৃষ্টি তার জন্যই এখানে এসেছে। এখন বৃষ্টিকে বাসা অব্দি পৌছে দেওয়া তার কর্তব্য।
রাত হ্যা সুচক সম্মতি জানালে, বৃষ্টি মনে মনে খুশিতে ডান্স করতে ইচ্ছে করছে। সে তো এটাই চাইছিলো। ফিন ফিনে নিরব রাতে, রাতের সাথে অনেকটা পথ হাটতে।
বৃষ্টিকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য পা বাড়ালো রাত। পাশাপাশি হাটছে দুজন। উপর থেকে সব একনজরে দেখে যাচ্ছে রাতে সৎ মা পলি চৌধুরি। তার দৃঢ় বিশ্বাস রাতের প্রতি তার বাবা রুদ্রের অন্ধ বিশ্বাসটা এবার ভাঙতে কোনো প্রব্লেম হবে না। রুদ্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে, রাত কতোটা নিচে নেমে গেছে।
To be continue……….