#পূর্ণতা ”
#নন্দিনী_নীলা
১৩.
মায়ের হাতে চড় থাপ্পড় পূর্ণতা মাঝে মাঝে খায় কিন্তু বেশি ছিল এবার। প্রতিবার মাইর খেয়ে চিৎকার করে কিন্তু এবার তার কিছুই করেনি ওর তো গাল লাল হয়ে ফুলে গেছিল। আর সেদিন বিকেলে আগমন ঘটেছিল প্রভাতের।
রোজিনা বেগম প্রভাত কে পেয়ে অভিযোগের ডালা নিয়ে বসেছিল। আর প্রভাতের চোখ দুটি শুধু পূর্ণতা কে খুঁজছিল। নিজেও খুব রেগে ছিল কিন্তু সেইটা রোজিনা বেগমের কাছে প্রকাশ করতে পারেনি। কিন্তু ভেতরে রাগে ফেটে যাচ্ছিল মেয়েটা এতোটা জেদি যে এভাবে ফেইল করল। প্রভাত ভাবেই নি পূর্ণতা সত্যি এই কাজটা করে বসবে। রোজিনা বেগম নিজের আহাজারি শেষ করে বললেন উনি জানে না।
প্রভাত সারা বাসা পূর্ণতা কে খুঁজে না পেয়ে ছাদে এসে দেখল পূর্ণতা ছাদে বসে দোল খাচ্ছে।
পেছন থেকে প্রভাত রাগে কর্কশ কন্ঠে পূর্ণতা বলে ডেকে উঠল।
এতো জোরে ডেকে ছিল যে ছাদে কয়েকবার প্রতিধ্বনি হতে লাগে ডাকটা। পূর্ণতার বুক কেঁপে ওঠে কত দিন পর প্রিয় মানুষটা কণ্ঠস্বর শুনল। ও পিছু ঘুরে না ওভাবে চোখ বন্ধ করে প্রভাতের ডাক শুনতে লাগে। প্রভাত ছাদে পা দি ওকে ডাকা শুরু করে। ডেকে ডেকে এগিয়ে আসছে রাগে প্রভাতের মুখটাও লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু পূর্ণতা ওর ডাকে সাড়া দিচ্ছে না চোখ বন্ধ করে শুধু গভীরভাবে অনুভব করছে।
প্রভাত ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলল,,”ডাকছি শুনতে পারছ না?”
পূর্ণতা চোখ দুটো মেলে তাকালো প্রভাতের দিকে। অতঃপর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে এক গাল হেসে বলল,,”কেমন আছেন?”
প্রভাত রেগে কিছু বলতে যাবে ওর দৃষ্টি আটকে যায় ফর্সা দুই গালে পাঁচ আঙ্গুলের লাল দাগ পড়ে আছে দেখে। প্রভাতের কথা গলায় আটকে যায়। স্তব্ধ চোখে গালের দিকে তাকিয়ে আছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে থাপ্পড়ের দাগ।
প্রভাত পূর্ণতার গালে আঙুলের স্পর্শ করতেই পূর্ণতা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। প্রভাত বলল,,”কে মেরেছে আন্টি?”
পূর্ণতা দোলনা থেকে উঠে দাঁড়ালো তারপর প্রভাতের চোখে চোখে রেখে বলল,,”আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর পড়ালেখা করব না। আম্মুকে বলব তুমি তো আমাকে বিয়ে দিতে চাইছিলা এখনই বিয়ে দিয়ে দাও ভালো হবে না?”
পূর্ণতার কথা শুনে প্রভাতের মাথায় আগুন ধরে গেল। ও নিজে ও হাত উঁচু করে ফেলল থাপ্পড় মারার জন্য। পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে ফেলল। প্রভাত হাত গুটিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরল বুকের মাঝে। পূর্ণতা সারা অঙ্গে শীতল হাওয়া বয়ে গেল যেন নিমিষেই। বুকের ভেতর ঢকঢক করছে যেন হার্ট বের হয়ে যাবে ও থমকে গেছে।
প্রভাত পূর্ণতাকে বুকে থেকে উঠিয়ে ওর চিবুক ধরে মুখটা উঁচু করে নরম গালের দিকে তাকিয়ে বলল,,”এমন কাজ কেউ করে কত মার খেলে। খারাপ লাগছে না?”
” আপনি আমায় ভালো না বেসে যে কষ্ট দিছেন চার সামনে এই কষ্ট কিছুই না।”
” বয়সতো কেবল ১৬ কিন্তু কথা বলছো বিশ বাইস বয়সী মেয়েদের মতো। এই ছোট্ট মাথায় এতো রাগ জেদ কেন?”
পূর্ণতা উত্তর দিল না গভীর চোখে তাকিয়ে আছে প্রভাত এর দিকে।
সময়টা সুন্দর ছিল প্রভাত ওকে ভালোবাসি বলেছিল এতো মিষ্টি ছিল সময় টা যে পূর্ণতা খুশিতে কেঁদে দিয়েছিল।
বর্তমান
পূর্ণতা বাস্তবে ও যেন কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে সে সময়টায় আবার ফিরে গিয়েছে। সেই আনন্দ ক্ষণে ফিরে গিয়েছে যেখানে প্রথমবারের মতো প্রিয় মানুষের বক্ষস্থলে ও ঠাঁই পেয়েছিল। ওর হৃদয়ে প্রেমের বর্ষণ শুরু হয়েছিল প্রিয় মানুষের থেকে ভালোবাসার আহ্বান পেয়েছিল। ব্যথিত শূন্য হৃদয়টা নিমিষে ই পূর্ণ হয়ে গেছিল।
পূর্ণতা অতীত থেকে ফিরে আসলো হঠাৎ করেই ওর কানের কাছে কেউ চিৎকার করছে। ও ছিটকে উঠে তাকাল সামনে ওর সামনে দুইজন বসে আছে মাঝ বয়সী পুরুষ আর মহিলা। দুজনে স্বামী স্ত্রী হবে দুজনেই মোটামুটি বয়স্ক। এরা হিন্দু হবে কারণ লোকটা ধুতি আর পাঞ্জাবি পড়ে আছে। আর মহিলাটা শাড়ি পরা তার কপালে সিঁদুর। পূর্ণতা দেখল লোকটা কানে বাটন ফোন ধরে রেখেছে ওপাশে থেকে একটা ছেলের আওয়াজ ভেসে আসছে। ফোনের স্পিকার অন করা। লোকটা সেই ছেলেটাকে বকাঝকা করছে চিল্লিয়ে। পূর্ণতা নিজের পাশে তাকাল একটা ছেলে হেডফোন কানে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। পূর্ণতা সাথে সাথে একদম কিনার ঘেঁষে বসলো। একটা ছেলের সাথে বসেছে ওর খেয়ালই ছিল না। ও যে অতীত হাতড়াচ্ছিল ওর কি আর কোন ধ্যান- জ্ঞান ছিল?
পাক্কা ১০ মিনিট সামনে বসা লোকটা চিৎকার করে ধমকালো নিজের ছেলেকে ফোনে। তার ধমকে আশেপাশের সবাই ওদের কেবিনের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল। লোকটা নিজের কথা এতোটাই জোরে বলছিল যে পূর্ণতা মাথা ব্যথায় নিজের কানে হাত দিয়ে রেখেছিল।
লোকটা কথা শেষ করতেই পূর্ণতা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। লোকটার পাশে বসা মহিলাটি ফোনের লোকটাকে এতো বকাঝকা করার জন্য বকতে লাগল।
পূর্ণতা তাদের দুজনের কথা বার্তা শুনছে হা করে। ও এতোটাই ধ্যানমগ্ন ছিল উনারা কোন স্টেশন থেকে উঠেছে ও জানে না।
পূর্ণতাকে বড়ো বড়ো ডাগর চোখ দুটো মেলে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে তুষার পাশ থেকে ফোড়ন কাটল,,”ও মাই গড আপনি সজ্ঞানে ফিরেছেন তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম ট্রেনের যাত্রা শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আপনার হয়তো আর সজ্ঞানে আসা হবে না। বসে ছিলেন তো আমার পাশে কিন্তু কোন রাজ্যে যে হারিয়ে গিয়েছিলেন আল্লাহ জানে। আচ্ছা আপনার কি খিদে টিদে কিছু লাগে না তিন ঘন্টা পার হয়ে গেল আপনি এক ঢোক পানি খেয়ে পার করে দিলেন।”
পূর্ণতা তুষারের দিকে তাকিয়ে আছে ফ্যালফ্যাল করে ও তুষারের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না। পূর্ণতা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে তুষারের দিকে।
তুষার পূর্ণতার তাকানো দেখে বলল,,” আপনি মনে হয় কথা খুব কম বলেন তাই না?”
পূর্ণতা নিজের কুঁচকে রাখা ভ্রু সোজা করল তারপর ফোন বের করল ব্যাগ থেকে। এদিকে তুষার হা করে তাকিয়ে আছে পূর্ণতার কথা শোনার জন্য। কিন্তু পূর্ণতা ওর কথাকে সম্পূর্ণ ইগনোর করল। ব্যাগ হাতড়ে একটা ছোট টিফিন বক্স বের করল যেখানে আশালতা ওর পছন্দের খিচুড়ি রান্না করে দিয়েছিল। চামচ দিয়ে পূর্ণতা এক চামচ খিচুড়ি মুখে দিল। মায়ের হাতের রান্না জাস্ট অমৃত ও মজা করে খাচ্ছে আর এদিকে হাবলার মতো তুষার ওর দিকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণতা ওকে যে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না সেটা তুষার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। আর মানুষ ও সেদিকে বেশি আকর্ষণিত ও আগ্রহ প্রকাশ করে যেদিক থেকে তারা পাত্তা কম পায়। তুষারের ক্ষেত্রেও সেম জিনিসটা ঘটছে। ট্রেনে ওঠার পর থেকেই পূর্ণতাকে দেখছে তুষার। হঠাৎ একটু অসুস্থ হওয়া, তখন যাই একটা দুইটা কথা হয়েছিল। মাঝে মাঝে হাসা, কাঁদা বিড়বিড় করে নিজের মনেই কথা বলা সমস্তটাই তুষার লক্ষ্য করেছে। আর ও কথা বললে যেন রাজ্যের সমস্ত বিরক্ত এসে ভর করে মেয়েটার মধ্যে। মেয়েটার নাম পরিচয় জানার জন্য অনেক বেশি কৌতুহল তুষারের। মেয়েটা কে দেখে কেন যেন অনুভূতি শুন্য লাগে মনে হয় বুকে অনেক কষ্ট জমে আছে। বিশেষ করে যখন সেই হাঁপানি রোগীর মতো কেঁদে উঠেছিল নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না ও নিজেই ভয় পেয়ে গেছিল তারপর বাকি সময়টা যেভাবে নির্জীবের মতো পড়ে আছে। পূর্ণতাকে দেখলেই তুষারের মনে হয় মেয়েটা একটা রহস্যে ভান্ডার। আর তুষারের রহস্য অনেক পছন্দের তাইতো এই রহস্যময়ী নারীকে জানার জন্য এতোটা আগ্রহী।
খিচুড়িটা ঝাল ঝাল ছিল পূর্ণতা মজা করেই খাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ করে ওর আবার গলায় আটকে যায় খেতে খেতে। আর ও পানির বোতল খুঁজতে লাগে নিজের ব্যাগে। লক্ষ্য করল ওর ব্যাগে পানির বোতল নেই পাগলের মতো বোতল খুঁজতে পূর্ণতা। তুষার নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দেয় পূর্ণতার দিকে।
লজ্জায় পূর্ণতার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। লোকটা যে পরিমাণ বিরক্ত করছে আর লোকটার সাথে কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না কেমন জানি গায়ে পড়া টাইপের। আমার এখন এই লোকটার থেকে পানি নিতে হবে।
পূর্ণতা পানির বোতল নিচ্ছে না দেখে তুষার বলল,,”আমার কাছে দুইটা পানির বোতল। এইটার পানি আপনি একবার খেয়েছেন। মনে আছে?”
পূর্ণতা মনে করার চেষ্টা করল ওর সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল। ও কিছুটা লজ্জা পেয়ে পানির বোতলটা হাতে নিয়ে খেল।
পানি খেয়ে যখন ফেরত দিতে যাবে তখন তুষার বলল,,”লাগবে না আমার কাছে পানি আছে আপনি এটা রেখে দিন। আর এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু হয়নি সামান্য পানিই তো নিয়েছেন। আমাকে তো আর নেননি। আর পানি দিয়েছি বলে যে আপনাকে খোঁচা দেব সেই মন-মানসিকতা আমার নেই তাই আনইজি ফিল করবেন না।”
পূর্ণতা পানির বোতল ব্যাগে রেখে একপলক তাকাল তুষারের দিকে। ছেলেটাকে যতটা খারাপ ও ভেবেছিল ততটা নয়। ও অযথাই খারাপ আচরণ করেছে।
#চলবে…..
গতকাল পোস্ট করতে চেয়েছিলাম কিন্তু গতকাল তো শবে বরাত ছিল সবাই তেমন একটা এক্টিভ থাকবে না তাই পোস্ট করিনি।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/