#রাত্রীপ্রিয়া
#পর্বঃ১০
লেখনীতেঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
বিয়ে বাড়িতে সারাটা দিন কনে পক্ষে’র সকলে কম-বেশি পরিশ্রম করেছে। বড়সড় একটা বিয়ে সামলানো তো আর চারটে খানিক কথা নয়! সবার মধ্যদিয়ে অনেকটা ধকল গিয়েছে। তাছাড়া,গতরাতে কারো ভালো ঘুম হয়নি। বাড়ির ছোট-বড় সবাই অনেকটা ক্লান্ত। তাই রাত এগারোটার মধ্যে সবাই যে যার খাওয়া-দাওয়ার পার্ট চুকিয়ে ফেললো।
কিন্তু, সমস্যা হলো ঘুমানো নিয়ে। রাত্রীপ্রিয়া চুক্তি করেছে, আজ রাতে সে সেতুর রুমে সবার সাথে ঘুমোবে। বড় বোনকে বিদায় দিয়ে সেতুর মনটা বড়ো খারাপ। দু’টি মাত্র বোন তারা। বোনের সাথে গলায় গলায় ভাব ছিলো তার। বোনকে বিদায় দিয়ে বাবা-মায়ের পাশাপাশি তারও নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু, তাঁকে মন খারাপ করে থাকতে দিচ্ছে না কাজিন গুলো। শয়তান গুলো এমন এমন কথা বলছে, মানুষ হাসতে বাধ্য।
তাছাড়া, তানহা, পায়েল, পরশও কেউ তাকে আজকে রাতে ছাড়তে চাইছে না। এতে রাত্রী’র ও কোনো অমত নেই। বরং তার ভালোই হয়েছে।
কিন্তু এতে ঘোর আপত্তি সানাম চৌধুরী’র। খাবার শেষ করে সে বউয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে সেই কখন থেকে। কিন্তু, মেয়েটা তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। খেয়েদেয়ে সে আবারো ননদদের সাথে বসার ঘরের সোফায় আয়েশ করে বসেছে। মেয়েরা গল্প-গুজব করছে। তাদের বিপরীতমুখী সোফায় বসেছে, সানাম চৌধুরী। দৃষ্টি তার প্রিয়তমা স্ত্রী’র মুখোপানে সীমাবদ্ধ। সবার অগোচরে কানে হাত রেখে, স্যরি বলছে বারকয়েক। চোখ দিয়ে বারবার ইশারা করছে,
“রুমে চলো, জান!”
রাত্রীপ্রিয়া সে দৃষ্টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এমন একটা ভাব করছে, যেন সে কিছুই বুঝতে পারছে না। বিরক্ত লাগছে সানাম চৌধুরী’র। এসব মেয়েলী প্যাচাল তার কোনোকালেই পছন্দ নয়। তবুও উঠতে ইচ্ছে করছে না আজ। মাঝেমধ্যে নিজের ফোন হাতে নিয়ে হুদাই ঘাটাঘাটি করছে। যাতে বোনেরা ভাবে তাদের ভাই ফোন ঘাঁটছে, তাদের’কে লক্ষ্য করছে না। তান্মধ্যে সেখানে উপস্থিত হলো, রোকসানা চৌধুরী। ফর্সা রোগা ধরনের মাঝবয়সী মহিলা। সানাম চৌধুরী’কে এখনো এখানে বসে থাকতে দেখে উনি বললো,
“কিরে সানাম, তুই এখনো এখানে বসে আছিস কেন?”
হতচকিত হয়ে তাকালো, সানাম চৌধুরী। মাথা চুলকিয়ে আমতা আমতা করে বললো,
“এইতো একটু ফোন দেখছিলাম, কাকি মনি।অফিসের কিছু ফাইল চেক করছি।”
“ওসব রেখে দে এখন। সারাদিন অনেক ছোটাছুটি করেছিস। এখন রুমে যা। তোদের বিছানা গোছগাছ করে রেখে এসেছি আমি। রাত্রী’তো আজ সেতুর রুমে থাকছে। তাহলে, তুই আর সায়মন গেস্ট রুমে চলে যা।”
সানাম চৌধুরী বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। বউয়ের দিকে একবার ধারালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।রাত্রীপ্রিয়া সঙ্গে সঙ্গে মুখ বাঁকালো। যার অর্থ,
” নেতা সাহেব! আমি আপনাকে একদমই ভয় পাই না। ওসবে কাজ হবে না গো! এবার বুঝেন, বউ কি জিনিস! তার সাথে বাজে আচরণ করার শাস্তি কেমন!”
সানাম চৌধুরী দাঁতে দাঁত চেপে, গটগট পায়ে জায়গা ত্যাগ করলো। সেদিকে তাকিয়ে বিজয়ী হাসি হাসলো, রাত্রীপ্রিয়া । এমন করে হাসলো, যেন খুব বড়সড় কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পূর্ণ করে ফেলছে সে। সানাম চৌধুরী যেতেই বোনেরা সকলে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো। তানহা বললো,
“ইশশ! কোথা থেকে যেন পোড়া পোড়া গন্ধ বেরিয়ে আসছে।”
সেতু কুটিল হেসে বললো, “আমাদের মন্ত্রী সাহেবের হৃদয় পো’ড়া’র গন্ধ। বেচারা বউয়ের জন্য দিওয়ানা, মজনু প্রেমিক! কেমন পাগল-পাগল অবস্থা তার।”
ওর কথা শুনে বাকিরা একসাথে খিলখিল করে হেসে উঠলো। হাসির চোটে একজন আরেক-জনের গায়ে পড়ছে। রাত্রীপ্রিয়া মেয়েটা পড়লো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। ছোট মামনী’র সামনে তার বেশ লজ্জাই লাগছে। আমতা আমতা করে ওদের থামাবার চেষ্টা করছে।
“এ্যাই চুপ কর না তোরা। এতো হাসা-হাসির কি আছে?”
তার কথা অগ্রাহ্য করলো সকলে। রাত্রীর লাজুকতা দেখতে তাদের মজাই লাগছে। এতে তাদের হাসি বাড়লো বৈকি কমলো না।
এরিমধ্যে মেয়েদের ধমকে উঠলো, রোকসানা চৌধুরী। বললো,
“ছি! ছি! বড় ভাইকে নিয়ে এগুলো কোন ধরনের বেয়াদবি? মুখবন্ধ কর, নয়তো চাপকে সবকটার দাঁত ফেলে দিবো। বেয়াদব গুলা,যা এখান থেকে। রুমে যা সব-কয়টা।”
সবার হাসি থেমে গেলো। তানহা মুখ গোমড়া করে বললো,
“আম্মু তুমি আমাদের মাঝে আসছো কেনো? যাও তো এখন থেকে।”
“তোরা নিজেদের রুমে গিয়ে যতো পারিস হাহা-হিহি কর। বড়োরা শুয়ে পড়ছে সকলে, উনাদের অসুবিধা হচ্ছে। এখন থেকে সকলে দ্রুত বিদায় হ। যাওয়ার সময় এখানকার আলো নিবিয়ে যাস। আমিও যাচ্ছি রুমে। তোর বাবা’র জন্য পানি নিতে এসেছিলাম।”
বলতে বলতে উনিও চলে গেলো নিজের রুমে। মেয়েরাও আর এখানে বসলো না। একে একে সবাই চলে গেলো তাদের বেড রুমে।
.
.
সানাম চৌধুরী ও সায়মন চৌধুরী দুই ভাই একসঙ্গে শুয়েছে আজ। সায়মন শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে। তার পাশে শুয়ে বারবার আশপাশ করছে, বাজেভাবে নড়াচড়া করছে সানাম। যা দেখে একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে সায়মন বললো,
“তোর কি ডেলিভারি পেইন উঠছে, ভাই? খুব ব্যাথা?
ডক্টর-নার্স খবর দিবো, এম্বুল্যান্স ডাকবো?
হসপিটালে যাবি? তা না গেলে চুপচাপ আল্লাহর-ওয়াস্তে একটু শুয়ে থাক। তোর মোচড়া-মুচড়িতে একদম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি ।”
সানাম চৌধুরী ততক্ষণাৎ লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ভাইয়ের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো। শক্ত কণ্ঠে বললো,
“একদম মে’রে বডি ফেলে দিবো, শা’লা! আর একটাও বাজে কথা বলবি না, সায়মন। আমি তোর ভাই হই, ভাবি না। ওসব আমার হবে কেন? তোর ননস্টপ বকবকানি বন্ধ কর, ভাই। একটুর জন্য হার্ট অ্যা’টা’ক করিনি। আমার চোখে প্রচুর ঘুম। ক্লান্ত লাগছে শরীর।”
“তো ঘুমা। তোকে ধরে রাখছে কে?”
বিরক্ততে কপাল কুঁচকে বললো, সায়মন। সানাম চৌধুরী পরমুহূর্তে অসহায় মুখো ভঙ্গিমায় বললো,
“সমস্যা তো একটাই। বউ ছাড়া আমার ঘুম আসছে না!”
“তো যা বউয়ের কাছে। তা-ও আমাকে একটু শান্তি দে।”
“তোর বোন রেগে আছে। কথা বলছে না, আমার ধারেকাছেও আসছে না। এই মুহূর্তে একটু তার সাথে দেখা করার ব্যাবস্হা করে দে, ভাই।”
কেমন সরল আবদার। বউকে কাছে পাওয়ার আকুলতা। সায়মনের বড় মায়া হলো। তবুও সে গম্ভীর কণ্ঠে শুধালো,
“এতে আমার লাভ কি?”
“দ্রুত চাচা ডাক শুনতে পারবি। এটাই তোর লাভ।”
উদাস কণ্ঠে বললো, সানাম চৌধুরী। যা শুনে সায়মন হেসে ফেললো। বললো,
“ছাদে যা। পাঠিয়ে দিচ্ছি, রাত্রী’কে।”
ধড়ফড়িয়ে উঠে বিছনা ছাড়লো, সানাম চৌধুরী। ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। আর একমুহূর্তও রুমে দাঁড়িয়ে দেরী করলো না সে। হাসি-হাসি মুখে রুম ছাড়লো।
সায়মন ততক্ষণাৎ কল করলো, রাত্রী’কে। রাত্রী সাথেসাথেই রিসিভ করলো। সায়মন গম্ভীর মুখে বললো,
“আমায় এক কাপ কফি করে দে, বোন। বড় মাথাটা ধরেছে আজ। আমি ছাদে আছি এখন। কষ্ট করে একটু ওখানে দিয়ে যাস।”
বলেই চট করে কল কেটে দিলো সায়মন। প্রত্যুত্তর করার সময় দেয়নি রাত্রী’কে। রাত্রী অবাক হলো না। কেননা তার সায়মন ভাই এ কাজ নতুন করে না। ডিউটি করে রাত-বিরেতে বাসায় আসলে তার কাছে কফির আবদার করে। কেননা, রাত্রী খুব ভালো কফি বানাতে পারে। সায়মন ভাই খেয়ে তৃপ্তি পায়। ততক্ষণাৎ রাত্রী সাবধানী পায়ে উঠে দাঁড়ালো। বাকিরা সবাই ঘুমিয়ে গেছে বোধহয়। তাই আর ওদের জাগালো না। কিন্তু হলো কি। পায়েল জেগেই ছিলো। রাত্রী’কে রুম থেকে বের হতে দেখে মৃদু কণ্ঠে বললো,
“এ্যাই, কই যাচ্ছিস তুই?”
রাত্রী পিছনে ঘুরে আলতো হেসে বললো,
চলবে…….
[আপনাদের কেমন লাগছে গল্প? সবাই রেসপন্স করবেন পেজে। আর হ্যাঁ, ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। ]