তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৪৯

0
514

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৪৯

.
🍁
এলোমেলো অবস্থায় রুমে বসে বুক ফাটা কান্না করছি আমি। নিজের কানে যেটা শুনেনি সেটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমি। তাই সেই তখন থেকে এলোমেলো অবস্থায় দেয়াল ঘেঁষে ফ্লোরে বসে কান্না করছি আমি। দুটো বিষয় আমাকে ভিতর থেকে কাঁপিয়ে তুলেছে বরাবরই। যেটা কখনোই আমি কল্পনাতে চিন্তা করিনি সেটা এখন বাস্তবে ঘটছে আমার সাথে আর তার জন্য কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। একদিকে যাদের আমার জ্ঞান ফিরার পর থেকেই দেখে আসছি, মেনে আসছি, বিশ্বাস করে আসছি, আজ তাঁরাই আমাকে বিক্রি করছে পশু সমতুল্য মানুষদের কাছে। এই আশ্রমটাকে আমাদের মতো মেয়েদের আসল ঠিকানা মনে করে আসছি আজ সেই আশ্রমেই নরকের কীট পতঙ্গ আমাদের জন্য। যাদের আমরা ফাদার -মাদার বলে থাকি, নিজের বাবা মা মেনে থাকি তারাই আসলে আমাদের মুখুশ দারী শত্রু। আর উনি (রিদ) উনার মধ্যে তো আমি নতুন করে
বাঁচতে শিখেছি। উনাকে তো আমি ভালোবাসতে শিখেছিলাম। উনাকে আমি আমার আপন জন মনে করেছিলাম সেই উনি আমাকে পূণ্য হিসাবে কিনেছেন ওদের থেকে তাও নিজের চাহিদার জন্য। উনি তো বলেছিল আমি নাকি উনার আপন জন। তাহলে কোনো মানুষ কি তার আপন জনের সাথে এমনটা করে তাকে কি কখনো কারো কাছ থেকে কিনে নিতে পারে। উনি কি করে পারলো এটা আমার সাথে করতে? কি করে?…………

.

কথাটা ভেবেই আমি আরও ফুপিয়ে কেঁদে উঠি। কান্না করতে করতে একটা সময় আমার মাথায় আসে কেয়া ও বর্ষার কথা যে ওরা তো এই বিষয়ে কিছুই জানে না। আমার মতো তো ওরাও এই আশ্রমের রিক্স এ আছে। ওদেরকে তো বিক্রি করতে চাই ওরা তাহলে ওদেরও আমাকে বাঁচাতে হবে এই পশুদের হাত থেকে কথাটা ভেবে আমি নিজের দু’হাতে চোখে পানি মুছে নিয়ে উঠে দাঁড়ায় কেয়া বর্ষার উদ্দেশ্য ওদের সত্যিটা জানাতে হবে বলে। আমি রুমের দরজার ধরে বাহিরে যাবো তার আগেই রুমে মধ্যে প্রবেশ করে রিদ খান। চোখ মুখে রাগ রাগ ভাব থাকলেও আমার দিকে তাকায় কাতর চোখে। দেখে মনে হচ্ছে সবকিছুর ওপর উনি অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আমি উনার এমন দৃষ্টি দেখে মূহুর্তে ক্ষেপে যায় কারণ আমি জানি এই চোখের পিছনে আসল চেহারাটা কি? আমিও চোখ মুখ শক্ত করেই দাঁড়িয়ে পরি টায় জায়গায়। উনি আমাকে এক পলক উপর থেকে নিচ পযন্ত চোখ বুলিয়ে নিয়ে কপাল কুচকে বলে উঠে……….

.

—” কি ব্যাপার তোমার এই অবস্থা কেন? নিজেকে এমন এলোমেলো অবস্থায় রেখেছো কেন?….

.

উনার এমন কথায় ঘৃণিত চোখে তাকায় আমি। আমার সেই চোখে উনার জন্য শুধু রাশি রাশি ঘৃণায় ভরপুর হয়ে আছে অন্য কিছু নয়। আমি উনার দিকে ঘৃণিত চোখে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত পিষে চুপ করে টায় জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি কোনো রকম কথা না বলে। আমাকে এমন করতে উনি সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন আমার দিকে। কি হয়েছে জানার জন্য আবারও প্রশ্ন করে বলে উঠে…….

.

—” কি হয়েছে তোমার কথা বলছো না কেন?

.

উনার এমন কথায় এবারও আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি হালকা বিরক্তি নিয়ে কিছুটা এগিয়ে আসে আমার দিকে আমার সামনে দাড়িয়ে আমার গাল স্পর্শ করতে যাবে তার আগেই আমি দুকদম পিছিয়ে যায় উনার থেকে। আর উনাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলে উঠি…….

.

—” একদমই আপনার এই নোংরা হাতে আমাকে স্পর্শ করবেন না………

.
আমার এমন কথা শুনে টায় জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ে রিদ খান৷ আমি কি বলতে চাইছি সেটা বুঝতে না পেরে প্রশ্নো সিক্ত চোখে তাকিয়ে থেকে আপনা আপনিই বলে উঠে…….

.

—” মানেহহ?

.

উনাকে আমার সামনে অবুঝ সাজতে দেখে মূহুর্তে ক্ষেপে যায় আমি। উনি এতো কিছু করেও আজ অবুঝ সাজার চেষ্টা করছে আমার সাথে এতো বড় একটা জগন্ন কাজ করেও দিব্যি আমাকে প্রশ্ন করছে কি হয়েছে। এটা ভাবতেই তেল বেগুনের জ্বলে উঠি আমি। সেই পুড়া ভাবের রেশ ধরে উনাকে তেজি সুরে বলে উঠি……

.

—” মানেটা আপনি বুঝতে পারছেন না মিস্টার খান?

.

—” হ্যাঁ বুঝতে পারছি না বুঝাও আমাকে?( দাঁতে দাঁত পিষে)

.

উনার এমন কথায় রাগে গা রি রি করছে আমার। একটা মানুষ কতটা ন্যাকামো করতে পারে এসব বিষয়ের ওপর আল্লাহ জানে। উনি এই মাত্র ফাদারের রুম থেকে নারী পাচারের বিষয় নিয়ে কথা বলে এসেছে ওদের সাথে। আর এখন আমার রুমে আসতে আসতেই বলছেন সে এই বিষয় কিছুই জানে না আসলে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই লোক যে কতটা ক্রিমিনাল মাইন্ডের সেটা কারও বুঝার ক্ষমতা নেই। আর এখনো উনি আমার সাথে অবুঝ সেজে তাই প্রমাণ করছেন আমাকে। উনার এমন ভাব দেখে রাগে রি রি করতে করতে বলে উঠি…….

.

—” সেই তো আপনারই তো না বুঝার কথা এই বিষয়ে। আসলে আপনি এই বিষয়ে অবুঝ না সাজলে করবেন কি করে আমাদের নিয়ে ব্যবসা।

.

আমার এমন কথার মানে হয়তো উনি কিছু বুঝতে পেরেছে তাই তো চোখে মুখে সাথে সাথে ভয় চাপ ফুটে ওঠে। তাই ভয়াৎ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে উঠে……..

.

—” মানেহ?

.

—” এতো মানে মানে করছেন কেন মিস্টার খান। না বুঝার মতো তো কিছুই বলেনি আমি। আপনার আমাদের নিয়ে ব্যবসার কথা বলছি আমি। কতদিন যাবত করছে মেয়ে নিয়ে এই দেহ ব্যবসা আপনি..?

.

আমার এমন কথায় ভূত দেখা মতো করে চমকে উঠেন উনি। আমাকে বুঝানোর জন্য উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বিনিময় সুরে বললো…..

.

—” রিত প্লিজ শান্ত হও। যাহ কিছু হচ্ছে সেটা তুমি বুঝবে না তুমি এখনো অনেক ছোট। আমি আছি তো সঠিক সময়ে আসলে সব খুলে বলবো তোমাকে। রিত প্লিজ আমার ওপর ভরসা রাখ আমি আছি তো তোমার পাশে। তোমার কিছুই হবে না…….

.

কথা গুলো বলেই উনি আমার দুই কাত হালকা হাতে চেপে ধরেন বুঝানো চেষ্টা করতে করতে। আমি উনাকে আমাকে স্পর্শ করতে দেখে সাথে সাথে রাগে ফেটে পরি। আজ যেন রাগটা আমার বেশিই পাচ্ছে বরাবরই মতোই। তাই আমি উনার সামান্য স্পর্শটা সয্য করতে না পেরে নিজের দু’হাতে সর্বোচ্চ জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয় উনাকে। উনি হঠাৎ এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। আমার হঠাৎ ধাক্কায় দুই কদম পিছিয়ে যায় রিদ খান। আর আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠি…….

.

—” একদমই স্পর্শ করবেন না আমাকে। আপনার প্রতিটা ছুয়া আমার ঘৃণ ঘৃণ লাগে একদমই সয্য করতে পারিনা আপনাকে আমার থেকে দূরে থাকুন। আমার মতো কতটা মেয়েকে আপনি কিনেছেন নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য। কয়টা মেয়ের জীবন আপনি নষ্ট করেছেন আমার মতো করে। প্লি…………

.

আমার বাকি কথা গুলো শেষ করার আগেই রিদ খান সাথে সাথে আমার গালে কষে ঠাস শব্দ করে চড় মারে। বামে জোকে গিয়ে ডান গালে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকি জিম ধরা অবস্থায়। কারণ উনি হঠাৎ আমায় চড় মেরে বসবেন সেটা ভাবতেও পারিনি। আমি জিম ধরা অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতেই উনি আবারও আমার কাধ ধরে টেনে তুলে অন্য গালে চড় মেরে বসে। এবার আগের চেয়ে আমার জিম ধরা ভাবটা দুই গুণ হয়। দুই গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই উনি শক্ত হাতে একহাতে আমার চুলে মুটি ও অন্য হাতে আমার গলা চেপে ধরে সাথে সাথে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে ঠাস করে। চোখ দিয়ে যেন তার রাগে টগবগিয়ে আগুন বেড় হচ্ছে। চোখে মুখে সাথে সাথে হিংস্রতা ফুটে ওঠে যাহ আমি আজ পযন্ত দেখিনি উনার চোখে আমার জন্য কিন্তু আজ দেখতে পারছি। এটা দেখেই আমি ভয়ে আরও সিটিয়ে যায়। উনি সেই হিংস্রতার রেশ টেনে আমাকে বলে উঠে………..

.

—” তোর কি মনে হয় আমি মেয়েদের জীবন নষ্ট করে বেড়ায়। তোর যাহ মনে হয় তাই আমি করি। এবার বল তুই আমার কি করতে পারবি। তুই পুলিশের কাছে যাবি চল তোকে আমিই নিয়ে যাচ্ছি সেখানে। তোর সেখানে গিয়ে আমার নামে কমপ্লেন করার সাথে সাথে ওরা তোকেই জেলে ভরে দিবে কোনো কথা ছাড়ায়। কারণ রিদ খান এমনি এমনি মাফিয়া কিং হয়েছে না। বাংলাদেশ পুরো প্রত্যেকটা থানার পুলিশ আমার পকেটে রাখা। তুই যার কাছে যাবি ঘুরে ফিরে আমাকে পাবি। বাকি রইলো আমার শারীরিক চাহিদা কথা তাই না, তোর কথা মতো তোকে তো আমার ইউস করা কথা আমার তাই তো। কারণ তুই তো আমার টাকা কিনা নারী চল আজই সেই কাজটাও করে ফেলি তোর সাথে আমার শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে নেই………

.

.

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here