#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৭
.
🍁
—” আপনি কখনো কিছু লক্ষ করে দেখার প্রয়োজন বোধ মনে করেননি। যদি আপনি ভালো করে চারপাশটা সবকিছু লক্ষ করতেন তো আপনার চোখে সবিই ধরা পরতো। আপনি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর পেতেন আজ আমাকে এখানে দাঁড়াতে হতো না। রিদ খান খুব বেশি অসহায় ছিল আপনাকে নিয়ে তাই চাইলেও কিছু বলতে পারতো না আপনাকে। রিদ খান যদি আপনাকে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করাতো তো আপনার মাথায় সেটা চাপ পড়তো দ্বিগুণ। ডক্টরা বলেছে ভাই যাতে কোনো ভাবেই যেন আপনার অতীতটা আপনাকে মনে করানোর চেষ্টা না করে। যদি করে তো আপনাকে হারাতে হবে। আর আপনি যদি নিজ থেকে খুঁজে বের করুন তাহলে সেটা আপনি করতে পারবেন। তখন আপনার ব্রেইন ততটা চাপ পরবে না। কারণ আপনার ব্রেইনই আপনাকে সমথর্ন করবে সবকিছুতে। আর সেটা জন্যই ভাই চুপ করে থাকে সবকিছুতে।
.
আসিফের কথার মধ্যে দিয়ে আমি ঠোঁট কামড়িয়ে কান্না আটকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে কান্না সিক্ত কন্ঠে বলে উঠি……
.
—” আমি কিছুই মনে করতে পারছি না কেন ভাইয়া? আমার যদি একটা অতীত থাকে তাহলে সেই সম্পর্কে হালকা হলেও তো মনে হওয়ার কথা। আমি একেবারে কিছু কেন মনে করতে পারছি না?
.
আমার এমন কথায় আবারও আসিফ বলে উঠে…..
.
—” কারণ আপনার ব্রেইন! আপনার মাথায় দুই দুইবার আঘাত পাওয়ার ফলে আপনার মস্তিষ্কের রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। সেই রক্ত অপারেশন করে পরিস্কার করলেও পুরোপুরি ভাবে সারাতে পারিনি ডক্টরা , যার ফলে আপনার ব্রেইন থেকে অতীতের সবকিছু মুছে গেছে একেবারে। চাইলেও আপনি সেটা মনে করতে পারবেন না কোনো ভাবে। কারণ আপনার ব্রেইনে আপনার অতীতের কিছুই নেই।
.
আসিফের কথা গুলো শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠি আসিফের সামনে। নিজের দু’হাতে মুখ চেপে ধরে ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠি……
.
—” আমার অতীতটা সম্পর্কে নাহয় আমার কিছু মনে নেই কিন্তু উনার তো মনে ছিল আমাদের অতীতটা। তাহলে উনি(রিদ) কিভাবে পারলো রুদ্রকে আমার লাইফে আসতে দিল? একটাবারও কি আমার কথাটা চিন্তা করলো না?
.
—” হুমমম, চিন্তা করেছে খুব বেশিই চিন্তা করেছে। আপনি যখন আপনার পরিবারে ফিরে এসেছেন আর আপনার পরিবার যখন আপনাকে ফিরে পেয়েছে তখন আপনাদের জীবনে সুখের অভাব ছিল না। কিন্তু রিদ খানের জীবনে ছিল অশান্তি ঢেউ। আর তার রেশ ধরেই রিদ খান সবসময় আপনাকে নজরে নজরে রাখতো লোক লাগিয়ে। আপনার ভাইকেও লোক লাগিয়ে নিজের অফিসে চাকরি দেয় রিদ খান যাতে করে খুব সহজেই আপনি অবধি পৌঁছাতে পারে। আর বাকি রইলো রুদ্র ভাই! তো রুদ্র ভাই আপনাকে দেখে এক বছর আগে কোনো একটা মেলাই। আপনি আপনার পরিবারের সাথে মেলাই গিয়েছিলেন আর সেখান থেকেই রুদ্র ভাই আপনাকে দেখে নিজের জন্য পছন্দ করে। আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে শুরু করে আর সেটা প্রথম প্রকাশ করে নিজের রিদ খানেই কাছে। রুদ্র ভাই আপনাকে ছাড়া নাকি থাকতে পারবে না আপনাকে উনার চাই-ই চাই। এখান থেকে রুদ্র ভাই ও আপনাকে মাঝে মধ্যে ফলো করতো। রিদ খান সবকিছু দেখেও চুপ থাকতো আসলে চুপ থাকতে হতো। একদিকে ভাই তো অন্য দিকে ভালোবাসা। কেউকেই ফেলাতে পারতো না। আপনার বয়সও অল্প হওয়ায় কিছু করতে পারছিল না। কিন্তু যখনই আপনার বয়স আঠারো হয় তখন বিয়ে করে নেই আপনাকে। কিন্তু বিয়ে করে ভাইয়ে সমস্যা শেষ হচ্ছে না। আপনার বিয়েটাকে না মানা দিন দিন আপনি পাগলামো করা, রুদ্র ভাইকে বিয়ে করার জন্য খুশি ভাবটা প্রকাশ করা সবকিছুই ছিল রিদ খানের জন্য হতাশ জনক মূহুর্ত। রিদ খান চাইলেই সবাইকে সবকিছু বলতে পারে কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে ভেবে চুপ করে আছে। আর রিদ খানের সেই চুপ করে থাকাটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে নিজের জীবনে।
.
কথা গুলো বলেই থামে আসিফ। দাড়িয়ে থেকে আমার দিকে চুপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে করুন কন্ঠে বললো…….
.
—” আমি রিদ খানকে খুব কাছ থেকে চিনি। রিদ খানের যতটুকু করার সে করবে আপনার জন্য। কিন্তু এরপর পরের কদমটা আপনাকেই নিতে হবে। আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কি করবেন। এখন সবটা আপনার হাতে। আশা করি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছেন। আজ আসি ভাবি ভালো থাকবেন।
.
কথা গুলো বলেই আসিফ আমাকে এক পলক দেখে বিনা বাক ভয়ে হনহনিয়ে চলে যায় নিজ গন্তব্যের উদ্দেশে। আমি আমি একা ছাঁদের ওপর বসে বুক ফাটা আতৎনাত চিৎকার করি ওঠি নিজের দু-হাতে মুখ চেপে ধরে। কি করবো আমি এখন? কি করা প্রয়োজন আমার। উনি আমাকে তিন বছর ধরে ভালোবাসে এসেছে নিরবে। আমার জন্য প্রতিনিয়ত এতো কষ্ট প্রহাতে হচ্ছে আর আমি? হ্যাঁ আমিও রিদ খানকে এখন ভালোবাসতে শুরু করেছি। কিন্তু এতো কিছুর মধ্যে আমি রুদ্র বা আমার পরিবারকে জবাব দিব?
.
.
🍂
মায়া থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে আসিফ। ড্রাইবিন সিটে বসে বাম হাতে ফোনটি তুলে নেই সে। পূর্ব থেকেই চলা কল লাইনটি এক পলক দেখে নেয় সে। একঘন্টা নয় মিনিটের কলটি দেখে আস্তে করে কানে তুলে নেই আসিফ । কানে ধরেই কোনো রকম বনিতা ছাড়ায় স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে……..
.
—” ভাই আপনার কথা মতো কাজ করা হয়েছে গেছে।
.
আসিফ কথাটা বলার সাথে সাথে রিদ ফোনের ওপাশ বাঁকা হাসে। পরে রহস্যময় কন্ঠে বললো…….
.
—” হুমমম। চলে আয় বাসায়। বাকিটা এবার রিতকে করতে দে।
.
রিদের কথায় আসিফ সাথে সাথে সুমতি প্রকাশ করে বলে উঠে…….
.
—” জ্বিই ভাই….
.
কথা শুনার সাথে সাথে রিদ কোনো রকম বাক না ভয়ে আসিফের কলটি কেটে দেয়। রিদ নিজের ফোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে রহস্যময় হাসে নিজে নিজেই। হাতো থাকা ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে ওঠে দাঁড়িয়ে চলে আসে বেলকনিতে। প্রায় সকাল হয়ে এলো বলে চারপাশে হালকা হালকা আলো ছড়িয়ে পড়েছে। রিদ নিজের রুমে কাঁচ বিশিষ্ট দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে পরে একটা হাত আলতো ভাবে রাখে সেখানটায়। অন্য হাত নিজের পকেটে গুজিয়ে তাকায় হালকা আবছা আলোময় আকাশে দিকে। নিজের দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থির করে রহস্যময় ভাব নিয়ে নিজের নিজেই বলে উঠে………
.
—” সাতরাজ খেলাই কার জিদ কার হার হলো সেটা দেখার বিষয় না। সেটা কেউ দেখতেও চাই না। মুখ্য বিষয় হচ্ছে কে রাজা মেরে রানী হাজিল করল সেটা।
.
কথা বলেই রিদ বাঁকা হাসে। নিজের কোন খেলাই কাকে মার দিবে সেটা একমাত্র রিদই বলতে পারে। রিদের মাথায় কি চলছে একমাত্র রিদ নিজেই জানে।
.
.
.
চলবে……….
Accha apni kothakar bangla likhechen? Apnar bangla porle bangla bhasar jonno sohid ra abar sohid hoye jeto.. Eto kharap bangla, bhasar opomam