তপ্ত ভালোবাসা #লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_৬৮

0
669

#তপ্ত ভালোবাসা
#লেখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_৬৮

🍁
কথা বলেই রিদ বাঁকা হাসে। নিজের কোন খেলাই কাকে মার দিবে সেটা একমাত্র রিদই বলতে পারে। রিদের মাথায় কি চলছে একমাত্র রিদ নিজেই জানে। এমনে কথা গুলো ভেবেই টায় জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে রিদ। টানা দুই ঘন্টা জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের রুমে টাঙ্গানো বড় দেয়াল ঘুড়িটা দিকে তাকায় রিদ। সকাল ছয়টা ছুঁই ছুঁই। ঘুড়িটা দিকে কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কিছু একটা ভেবে নিয়ে আস্তে করে ফেস হতে চলে যায় ওয়াশরুমে। টানা ত্রিশ মিনিট লাগিয়ে গোসল সেরে রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের দাঁড়িয়ে পড়ে রিদ। সময় নিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে রুম থেকে বের হয় ডাইনিং টেবিলের উদ্দেশ্য সকালে নাস্তা করার জন্য। রিদ বুঝতে শিখার পর থেকে কখনো এতো সকালে উঠেনি, আর এই সকালে কিছু খাওয়া তো দূরের বিষয়। তবে আজ অন্য দিনের তুলনায় আজকে দিনটা একটু ভিন্ন রিদের কাছে। নিজের লক্ষ মাত্রা স্থির করে সবার উদ্দেশ্য সকালের লোক দেখানো নাস্তা টেবিলে বসতে যাচ্ছে রিদ। নাস্তা করাটা একটা বাহানা মাত্র চারপাশে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে সেই সাথে নিজের কার্য সিদ্ধি করতে লোক দেখানো নাস্তা টেবিলে বাসা। রিদ নিজের চেয়ারটা টেনে বসতে চোখ তুলে তাকায় উপস্থিত সবাই। ভূত দেখার মতো চমকে উঠে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে রিদের দিকে। রিদ সেই দিকে ততটা মনোযোগী না হয়ে নিজের প্লেট উল্টাতে থাকে। রিদকে সাত সকালে নাস্তা টেবিলে বসতে দেখে আশ্চর্য হন রুদ্র, আরাফ খান, হেনা খান ও রুদ্রের বাবা, মার সাথে নিধি ও তার বাবা মা উপস্থিত সবাই। তবে সবার আশ্চর্য হওয়ার সাথে সাথে বেশ খুশিও হন তাদের ছেলের পরিবর্তন লক্ষ করে। বিয়ে হলে আরও পরিবর্তন আসতে পারে সেটা চিন্তা করে হেনা খান আদুরে গতাগত হয়ে বলে উঠে…….

.
—” আজ এতো সকাল সকাল নাস্তা টেবিলে আমার সোনাবাবা! যাক আমি তো ধন্য আমার সোনাবাবার পরিবর্তন আসতে চলেছে।

.
হেনা খানের কথায় রিদ নিজের রহস্যতা নিয়ে এক কথায় বাক্যে বলে উঠে…….

.
—” হুমমম, তা তো বটে……

.
রিদের কথায় হেনা খানে(দাদী) সাথে সাথে উপস্থিত সবাই উল্টোটা বুঝলো। সবার ধারণা রিদ নিধিকে বিয়ে করছে বলে তার এই পরিবর্তনের সাথে এই কথা গুলোও বলছে। নিধি রিদের কথায় লাল হয়ে লাজুক হেঁসে নিচের দিকে তাকিয়ে পড়ে। নিধি এই লজ্জা লাল হওয়া ফেসটি চোখ এড়ায়নি কারওই। রুদ্র এক পলক নিধিকে দেখে নিজের প্লেটের নাস্তা নিজের মুখে তুলে দিতে দিতে দুষ্টুমী করে রিদকে উদ্দেশ্য করে বললো……

.
—” হুমমম, এখন তো আমাদের রিদ খানের পরিবর্তন দেখার পালা। সবে তো শুরু হলো বিয়ে করতে না করতেই পরিবর্তন এসে পরেছে বিয়ে করলে তো আমাদের রিদ খান আর আমাদের থাকবে না পুরোটায় তার বউয়ের হয়ে যাবে…….

.
রিদ নিজের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
.

—” বউকে ভালোবাসা খারাপ কিছু নয় রুদ্র……

.
রিদের এমন সমথর্ন মুলক বানীতে আরও উৎসাহিত পাই রুদ্র। সেও নিজের কথার ছলে বলে উঠে…….

.
—” বাবাহ! আমি কখন বললাম বউকে ভালোবাসা খারাপ কিছু। অবশ্যই বউকে ভালোবাসা ভালো লক্ষণ তাই নারে নিধি?

.
নিধিকে খুচা মেরে কথাটা বললো রুদ্র। লজ্জা লাল হওয়া ফেসটা এবার আরও বেশি টকটকে লাল হয়ে ওঠেছে নিধির। সবার সামনে রিদ এই ভাবে নিধিকে লজ্জায় ফেলবে সেটা কখনোই ভাবিনি নিধি। ভাববে বা কি করে রিদ তো কখনোই নিধি সাথে প্রেমময় কথা বলেনি। তাহলে আজ বুঝবে কি করে যে রিদ হঠাৎ করেই সবার সামনে তাকে বলবে তাকে সে ভালোবাসে। এটা কি ভাবে যায় নাকি। নিধি লজ্জায় মরি মরি ভাব নিয়ে টেবিলের সাথে মিশে যাচ্ছে। উপস্থিত সবাই রিদের কথায় মুচকি মুচকি হাতে থাকে আর বিষয়টা উপভোগ করতে থাকে। তবে এই মূহুর্তে সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়া ব্যক্তিটি হলো হেনা খান। অবশেষে তিনি রিদের সুখটা দেখে যেতে পারবেন সেটাই চিন্তা ভাবনা করে এতোটা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেছে। রুদ্র নিধিকে কথাটা বলে আবারও চোখ তুলে নিধি দিকে। নিধি অবস্থাটা বুঝতে পেরে খিয়ালি করে আবারও বললো…..

.
—” বুঝলি নিধি তোর তো সাত কপালরেরর। ভাবা যায় দ্যা রিদ খান মানে (ARK) তোকে তার সহ পরিবারের সামনে ডিরেক্ট প্রপোজ করে বসলো। তুই ভাগ্য করে স্বামী পেয়েছিস বলতে হবে……..
.

রুদ্রের এমন কথায় রিদ নাস্তা খেতে খেতে চোখ তুলে তাকাই রুদ্রের দিকে। একহাতে টিস্যু পেপার নিয়ে ঠোঁটে লেগে থাকা আঙ্গশিক খাবারটা মুছতে মুছতে একটা ভ্রুঁ উচু করে রুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে……

.
—” তোকে কে বললো আমি নিধি ভালোবাসি। আমার জানা শর্তে আমি কখনোই নিধির কথা উল্লেখ করেনি তাহলে তুই কিভাবে শিওর হচ্ছিস সেটা নিয়ে।

.
রিদের এমন কথায় আকাশ থেকে পড়ল মনে হয় ডাইনিং টেবিলের উপস্থিত সবাই। নিধি লজ্জা মাখানো ফেসটি মূহুর্তে একঝাক কালো মেঘ এসে ডেকে যায়। সবাই রিদের এমন কথায় আশ্চর্য হয়ে খাবার ছেড়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় রিদের দিকে। রিদ কি বলতে চাইছে এই মূহুর্তে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। আর হয়তো বুঝতে চাইও না কেউ। এসব কথা কোনো মানেই হয়না। রুদ্রের ক্ষেত্রে ও তাই রিদের কথার মানেটা বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ চুপ করে রই। কিন্তু বেশ খানিকটা সময় না থেকে রুদ্র রিদের কথাটা বুঝার জন্য সাথে সাথে কপাল কুঁচকে দ্রুত প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বললো……

—” মানে তুই তো এখন বললি যে তুই তোর বউকে ভালোবাসিস। আর তোর বউ তো নিধিই হবে তাই না? তাহলে?

.
রুদ্রের কথায় রিদ কোনো রকম বনিতা ছাড়ায় বললো……

.
—” রুদ্র আমি এখানে বউয়ের কথাটা মেনশন করেছি। মানে আমার বউকে ভালোবাসি। নিধি কিন্তু আমার বিয়ে করা বউ নয়। তাহলেটা মনে হয় এবার স্পষ্ট তোর কাছে?

.
রিদের এমন খাপছাড়া কথায় একেক জন এবার রাগে ফেটে পড়েবে পড়বে ভাব। আজ বাদে কাল নিধি সাথে যার বিয়ে সে বলছে তার বউ অন্য কেউ নিধি নয়। এমন গাঁজাখোর টাইপ কথা কি মানার মতো নাকি। রিদের এমন কথায় সবাই স্থির থাকতে পারছে না। কাল সকাল হলেই নিধি সাথে তার বিয়ে আর সে আজ সকালেই বলছে নাকি সে তাঁর বউকে ভালোবাসে নিধি নয়! বউ কি ওর আজ সকালেই আকাশ থেকে টপকালো নাকি ওর জন্য? এটা কি গাঁজাখোর টাইপ কথা নয় কি! হেনা খানের চিন্তা ভাবনা সাথে রিদের এমন কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানাতে খানিকটা রাগান্বিত ফেসে চাপা সুরে বললো…..

.
—” রিদ তোর কি মনে হচ্ছে না তুই তোর হেয়ালি পূণাটা একটু বেশি করে ফেলছিস। কোথায় কি বলতে হবে সেটা তোর দিন দিন লোভ পাচ্ছে। আর তাছাড়া নিধি সাথে আজ বাদে কাল তোর বিয়ে। সেই সুবাদে নিধিই তোর বউ মানে আজ হবু বউ কাল শুধু বউ হবে তোর।

.
হেনা খানের কথায় রিদ হালকা বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে…….

.
—” হেয়ালিপোলাও চিন্তা ভাবনা তোমাদের থাকতে পারে কিন্তু সেটা আমার কোনো কালেই ছিল না। দাদী আমি হবু বউয়ের কথা বলেনি আমি শুধু বউয়ের কথাটাই মেনশন করেছি। তাহলে এখানে নিধি কোথায় থেকে আসবে। নিধি তো আমার বউ নয়! আমি বউকেই বউ বলছি অন্য কাউকে নয়….

.
রিদের এমন কথায় রেগে ফেটে পড়বে পড়বে ভাব হেনা খানের। তাই তিনি রেগে নাক মুখ শক্ত করে রিদকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে…..

.
—” মানে তুই কি এখন বলতে চাইছিস তোর বিয়ে করা বউও আছে?

.
কোনো রকম বনিতা ছাড়া বলে উঠে রিদ……
.

–” বলতে চাইসি কখন সেটাই তো বললাম!

.
নাক মুখ শক্ত করে বললো……..

.
—” মানেহ তোর বউ আছে….

.
নিজের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো…..

.
—” হুমমমম……

.
—” কিহহহহ,

দাদীর উচ্চ চিৎকারে চোখ তুলে তাকাই রিদ। চোখ মুখে হালকা বিরক্তি ভাব নিয়ে এক পলক দেখে আবারও মুখে চামচ দিয়ে নাস্তা তুলে দেয় রিদ। নিজের দাদীর আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রয়োজন বোধ না করায় আরাফ খান পাশ থেকে হঠাৎই রাগান্বিত ফেসে রিদের দিকে তাকিয়ে কটমট করতে থাকে। তিনি এতক্ষণ যাবত রিদের সব কথা গুলো নিরব দর্শকের মতো বসে বসে শুনেই যাচ্ছিল কিছু না বলে। কিন্তু এখন হঠাৎ রিদের চুপ করে যাওয়াতে ক্ষেপ্ত হন আরাফ খান । তিনি রিদের অসম্পূর্ণ কথাটি সম্পূর্ণ করার তাগিদে রাগী ফেসে চাপা সুরে বলে উঠে…….

.
—” রিদ তুই কি জানিস তুই কি বলছিস?

.
—” হুমমমম…..

.
—” তার মানে তোর বউ আছে?

.
—” হুমমমমম….

.
রিদের বারবার বউ আছে বলে সমুতি জানাতে দেখে মূহুর্তেই রুদ্র মনে সন্দেহ দৃষ্টি হয়। রুদ্রের ধারণা রিদ নিধি বিয়ে করতে চাই না বলে হুট করে এই প্লেনিং করে রিদের বউ আছে বলে। তাই পাশ থেকে রুদ্র সন্দেহ পূণতা নিয়ে আরাফ খানকে বাকি কথা গুলো শেষ করতে না দিয়ে রিদকে প্রশ্ন সিক্ত কন্ঠে বলে উঠে……..

.
—” তাহলে কই তোর বউ? আমাদের সামনে প্রেজেন্ট কর তাঁকে! আমরা তো দেখি রিদ খান কাকে নিজের বউ বলে দাবি করছে।

.
রুদ্র কথাটা সাথে সাথে রিদ সাথে সাথে বললো…..

.
—” She is on tha way……..
.

রিদের এমন কথায় এবার মূহুর্তেই কপাল কুঁচকে এলো রুদ্রের কারণ রিদ কখনোই এসব বিষয়ে মজা করে না। এবারও হয়তো তাই করছে না তারপর কেন জানি রুদ্রের কিছুই ঠিক মনে হচ্ছে না। কোনো একটা কিন্তু কিন্তু ভাব থেকেই যাচ্ছে। আর সেই জন্য রুদ্র নিজের ঘাড় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রিদের ওপর। আর রিদ তখনো চুপচাপ নিজের নাস্তা শেষ করায় মহা ব্যস্ত। এমন একটা ভাবে খাচ্ছে যেন কিছু হচ্ছে না এখানে…….
.

(কাল নেক্সট পার্ট দিব)

.

.

.
চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here