প্রণয়ের_বন্ধন #সাদিয়া_শওকত_বাবলি #পর্ব_১৮

0
581

#প্রণয়ের_বন্ধন
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_১৮

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

তাহসিন শান্ত অথচ গম্ভীর কন্ঠে বলল – আপনি কি ঠিকভাবে হাঁটতেও জানেন না? একবার আমার কোলে পড়েন তো একবার মাটিতে।

চোখ বড় বড় করে তাকালো মেঘা, বলল – আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি মাটিতে পড়েছি?

তাহসিন বোতলের ছিপিটা খুলতে খুলতে বলল – আপনার গায়ে মাটি লেগে আছে।

মেঘা নিজের দিকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বলল – কিন্তু আমি তো ঝেড়ে ফেলে দিলাম মাটি।

তাহসিন বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি পান করলো। এক নিঃশ্বাসেই বোতল খালি। বোতলটা ছুঁড়ে মারলো পাশে রাখা ময়লার ঝুড়িতে। অতঃপর একটা চেয়ার টেনে মেঘার দিকে তাকালো, বলল – বসুন।

মেঘা আশে পাশে তাকিয়ে তর্জনী আঙ্গুলটা নিজের দিকে তাক করে বলল – আমি!

তাহসিন কপাল টান করলো, বলল – আর তো কাউকে দেখছি না।

মেঘা নিঃশব্দে বসলো চেয়ারে। তাহসিন নিজের ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করতে করতে বলল – হাতটা বাড়ান।

– কেন?

তাহসিন থামলো একটু, মেঘার দিকে তাকিয়ে বলল – আমি বলেছি বলে।

মেঘা হাতটা সামনের দিকে বাড়িয়ে দিল। তাহসিন ওয়ান টাইম একটা ব্যান্ডেজ বের করে মেঘার হাতের দিকে হাত বাড়ালো। কিন্তু যে কাজটি করার জন্য হাত বাড়ালো তা আর করতে পারলো না। ভীষণ ইতস্তত লাগছে তার। এভাবে হুট করে মেঘার হাত ধরতে কেমন যেন লাগছে। সারাদিন কত কত রোগীর চিকিৎসা করে সে কই তখন তো এমন লাগে না। তবে কেন মেঘার বেলায়ই তার এমন লাগে। মেঘার হাতে হাত দিতেও হাত কাঁপছে তার। এক অজানা অনুভুতি হচ্ছে মনের গহীনে। ঢোক গিলল তাহসিন, ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজটা মেঘার দিকে বাড়িয়ে রেখেই বলল – হাতে এটা লাগিয়ে নিন।

মেঘা হাতে নিল ব্যান্ডেজটা। এক হাতে চেষ্টা করলো কিছুক্ষণ কিন্তু ভালোভাবে লাগাতে পারলো না। অসহায় চোখে তাকালো তাহসিনের দিকে, বলল – ঠিকভাবে পারছি না স্যার।

ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো তাহসিন । মেঘার হাত থেকে ব্যান্ডেজটা নিল । ইতস্তত লাগছে কিন্তু তার থেকেও বেশি মেঘার জন্য মন পুড়ছে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেঘার হাতে ব্যান্ডেজটা লাগিয়ে দিল তাহসিন। মেঘা উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়ালো অন্য দিকে, ভ্রু কুঁচকালো তাহসিন, বলল – কোথায় যাচ্ছেন?

– এই তো সামনেই।

– কোথাও যেতে হবে না পরে দেখা যাবে কোথায় গিয়ে আবার উল্টে পড়ে আছেন। আমি আর আপনাকে খুঁজে মরছি। আপনি তো আবার ঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না যেখানে সেখানে ঠাস ঠুস পড়ে যান।

– মোটেই না স্যার একবার পড়েছি বলে কি আবার পড়বো?

– একবার নয় দুবার।

থতমত খেল মেঘা। এভাবে সামনা সামনি বিষয়টা ধরিয়ে না দিলেও তো পারতো। মেঘা আমতা আমতা করে বলল – ঐ একই হলো।

– এক আর দুই এক কিভাবে হলো? যাই হোক এখানেই থাকুন, রোগী আসবে রোগীর সেবা করুন। কোথাও যেতে হবে না আপনাকে।

মেঘা আর কোথাও গেল না ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাহসিনের হাতে এটা ওটা এগিয়ে দিচ্ছে। মিনিট বিশেক পর রোগী যেতেই তাহসিন ফিরে তাকালো মেঘার দিকে, শান্ত কন্ঠে বলল – আপনাকে দাঁড়িয়ে কাজ করতে বলিনি বসে করুন। পাশেই চেয়ার আছে তো।

তাহসিনের কথা মোতাবেক বসে পড়লো মেঘা। এবার বসে বসেই কাজ করতে শুরু করেছে সে।

*

তনু দৌড়ে ঝাঁপিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কাজ করতে করতে ঘেমে নেয়ে একাকার সে। গৌরব এক বোতল পানি এনে বাড়িয়ে দিল তনুর দিকে, বলল – নে খা এটা, অনেক কাজ করেছিস আজ।

তনু পানির বোতলটা হাতে নিতে নিতে বলল – আমার আছে তো।

– তোর কাছে আছে বলে কি আমারটা নিতে পারবি না। আচ্ছা নিতে হবে না ফেরত দে আমার পানির বোতল।

মেকি হাসলো তনু, বলল – আমি সেটা কখন বললাম? শুধু শুধু রাগছিস কেন?

তনু বোতলের ছিপিটা খুললো। বোতলের মুখে মুখ লাগিয়েই পানি পান করতে শুরু করলো সে। পাশেই দাঁড়ালো গৌরব। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আকাশের দিকে তাকিয়েই প্রশ্ন করলো – ভালোবাসিস কাউকে?

তনুর মুখ ভর্তি পানি ছিটকে বেরিয়ে এলো। খুক খুক করে কেশে উঠলো সে। গৌরব অস্থির হয়ে পড়লো। তনুর মাথায় ছোট ছোট থাপ্পর দিতে দিতে বলল – কি হলো? সাবধানে পানি খাবি তো?

তনু কাশতে কাশতেই বলল – আমি তো সাবধানেই খাচ্ছিলাম। মাঝখান থেকে তুইই তো ঝামেলা বাঁধালি।

ভ্রু কুঁচকালো গৌরব, বলল – আমি আবার কি করলাম।

অনেক কষ্টে কাশি থামালো তনু। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলল – আমার সেরকম কেউ নেই।

– কোন রকম?

তনু পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো গৌরবের পানে, বলল – ভালোবাসার মানুষ। কিন্তু তুই হঠাৎ এ কথা জিজ্ঞেস কেন করছিস?

– এমনি কিছু না।

গৌরব আর বলল না কিছুই। শুধু শান্ত দৃষ্টিতে একবার তনুর মুখ পানে তাকিয়ে প্রস্থান করলো ঐ স্থান থেকে।

_________________________________________

নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারদিক। আকাশটাও আজ কালো বেশ। কোথাও তারাদের দেখা নেই। হয়তো অমাবস্যা নেমেছে ধরনীতে। রাস্তার ধারের কৃত্রিম সোডিয়ামের বাতিগুলোও আজ কেন অন্ধকার নির্জীব লাগছে। নিজের ঘরের ঝুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে নির্জীব চোখে প্রাকৃতির এই অন্ধকারকেই পর্যবেক্ষণ করছে তাহসিন। তার মনেও যেন আজ অমাবস্যার অন্ধকার নেমেছে। প্রাকৃতির সাথে তার মনও যেন এক সূত্রে বেঁধেছে আজ। ক্ষনে ক্ষনে বুক ফেটে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে তাহসিনের। ক্যাম্পিং থেকে ফিরে কিছুতেই মেঘাকে মন থেকে সরাতে পারছে না সে। ক্ষনে ক্ষনে মেঘার অবাক হওয়া মুখশ্রী, বোকা বোকা মুখশ্রী, ব্যথায় কাতর মুখশ্রী, হাস্যজ্জ্বৌল মুখশ্রী ভেসে উঠছে তার চোখের সামনে। এই মেয়েটা আর কতভাবে মুগ্ধ করবে তাকে? কখনও অভিমানে ঘায়েল করেছে তাকে কখনও রাগে আবার কখনও হাসি দিয়ে। এই পর্যন্ত সবটা ঠিকই ছিল কিন্তু মেঘাকে মনে পড়ার পরক্ষনেই মনে পড়ে সেই বাসের ঘটনা, সেই বাসের মেয়েটিকে, সেই মাস্কে ঢাকা মুখমন্ডলে দৃষ্টিকাড়া মায়াবী চোখ জোড়া। পাগল হয়ে যাচ্ছে তাহসিন। ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে তার হৃদয়। সে কোন দিকে যাবে কার কাছে যাবে? নিজেকে চরিত্রহীন মনে হচ্ছে ভীষণ। এক মনে কিভাবে দুই নারীর বসবাস হতে পারে? আর ভাবতে পারছে না তাহসিন। কেন তার ঐ মেয়েটি আর মেঘাকে এক নারীই মনে হচ্ছে বার বার? উফফফ এবার কি তাহলে সে কলিজার ডাক্তার থেকে মানসিক রোগী হয়ে উঠছে? অস্থিরভাবে পা চালিয়ে বারান্দা থেকে রুমে গেল তাহসিন। অন্ধকার রুম, আলো জ্বালায়নি একটুও। তবে এই রুমের কোনা কোনা তাহসিনের চেনা। নিজের রুম নিজেই যদি না চিনে তাহলে কি হয়? অগোছালোভাবে হেঁটে বিছানার কাছে গেল তাহসিন। ধপাস করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো সে। ফোঁস ফোঁস করে কয়েকটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করলো। আজ যে তার আর ঘুম হবে না তা তার জানা। তবুও একটু ঘুমানোর, একটু সময় এই দিন দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনাকে ভুলে থাকার ব্যর্থ চেষ্টায় ভীষণভাবে লিপ্ত হলো সে।

_______________________________________

আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশটা। হয়তো বর্ষার আগমনী বার্তা দিচ্ছে। তবে এই গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে যেন এই একটু শান্তির পরশ এই বৃষ্টি। মেঘ ডাকছে গুরু গুরু শব্দ করে। মেঘা জানালা থেকে বাইরের দিকে দৃষ্টি মেলে বসে আছে তাহসিনের কেবিনে। মনে তার হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করছে। আচ্ছা এখন হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সে বাড়ি ফিরবে কিভাবে? আজও তো ছাতা আনেনি সে। সেদিনের মতো আজও কি তাহসিনের ছাতাটা ধার দিবে তাকে? তাহসিনের ছাতার কথা মনে পড়তেই মেঘার মনে পড়লো সেদিনের তাহসিনের ছাতাটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা। এই কয়েকদিন এত এত ঝামেলার ভিতরে সে কথাটা তো মেঘা ভুলতেই বসেছিল। তাহসিন সেদিন তাকে চূড়ান্ত অপমান করেছিল ছাতাটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে। অভিমানেরা জেঁকে ধরলো মেঘাকে। সে অভিমানী চোখে তাকালো তাহসিনের দিকে। তাহসিন চেয়ারে বসে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। এতক্ষন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছিল মেঘাকে। হঠাৎ মেঘা তার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল দুজনের। তাহসিন বিব্রত হয়ে পড়লো, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার মতো করে দ্রুত চোখ নামিয়ে নিল। কপাল কুঁচকালো মেঘা। কিছু বলতে উদ্যত হলো কিন্তু মুখ থেকে শব্দ বের হওয়ার আগেই কেবিনে হুড়মুড়িয়ে ঢুকলো একজন নার্স। তাহসিন ভ্রু কুঁচকে তাকালো সেদিকে, বলল – কি সমস্যা? আপনি এভাবে?

চলবে….
পরের পর্বটি পেতে পেইজে ফলো দিয়ে রাখুন। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here