#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________66
বেলা প্রায় ১২টা বাজে……….
পিঠে কেমন জ্বালা অনুভব হতে’ই, ঘুম ভেঙে গেল নিদ্রর । গায়ের উপর থেকে কম্বল’টা একটু টেনে সরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে । মাথা’টা যেন এখনো ঝিম ঝিম করছে । অনেক দিন পর পেটে এমন জিনিস পড়ায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে খুব কষ্ট হয়ে গেছে । মাথা’টা দু’হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে বসে রইলো কিছু সময় নিদ্র । হঠাৎ নিদ্রর কাল রাতের কিছু মূহুর্ত মনে পড়লো । সাথে সাথে বেড থেকে নেমে দাড়িয়ে পড়লো সে । এরপর আয়নার সামনে গিয়ে দারানো । এক পাসে ঘুড়ে পিঠ’টা আয়নার দিকে দিয়ে চমকে উঠলো নিদ্র । পিঠে নখের আঁচড় গুলো অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে আছে । সামনে ঘুরে দেখলো বুকের মধ্যেও কিছু নখরে আঁচড়ের দাগ । অজানা একটা ভয় এসে হানা দিলো নিদ্রর মনে । গায়ে টি’শার্ট জরিয়ে রুম থেকে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে তৃপ্তির রুমে আসলো নিদ্র । পুরো রুমে তৃপ্তিকে খুজে কোথাও পেলো না সে । নিচে কিচেনে আছে ভেবে দৌড় দিলো । সিরির কাছে আসতে’ই থমকে দাড়ালো নিদ্র । তৃপ্তি বাড়ির দরজা দিয়ে গুটি গুটি পায়ে হেটে ভিতরে প্রবেশ করছে । গায়ে বোরখা দেখে নিদ্র বেশ অবাক হলো । এই সময় তৃপ্তি কোথায় যেতে পারে নিদ্র ভেবে পাচ্ছে না । আর এই মেয়ে একা একা তো কোথাও যায় না । তবে মেয়ে’টাকে দেখে নিদ্র বেশ করে বুঝে গেছে । গত রাতে নিজের অজান্তে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে সে । সিরির কাছ থেকে’ই আবার নিজের রুমে বেক করলো নিদ্র । রুমের দরজা গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ধপ করে লাগিয়ে দিলো । এরপর দু’হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো খামছে ধরলো । নিশ্বস যেন আটকে আসছে নিদ্রর । চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে । খুব জোরে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে । বেডের পাসে টেবিলের উপর পানির বোতল দেখে সেখানে এসে পানির বোতল’টা হাতে নিলো নিদ্র । বোতলের মুখ’টা কোনো রকমে খুলে ঢকঢক করে সব পানি খেয়ে নিলো । পানি খাওয়ার সময় গলায় কেমন যেন ঝাজ লাগলো । নিদ্র পানির বোতল’টার দিকে ভালো করে তাকালো । বোতল’টা ভালো করে দেখে বুঝলো এটা কাল রাতে সে হাতে করে নিয়ে আসছিল । আর এটা তেও ড্রিংক(মদ) মিশানো ছিল । গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে বোতল টাকে দেয়ালে ছুরে মারলো নিদ্র । এরপর গায়ের শার্ট খুলে তাড়াতাড়ি ওয়াসরুমে ঢুকে গেল । শাওয়ার ছেরে দিয়ে তার নিচে দারিয়ে পড়লো নিদ্র । পুরো শরীর একটা যারা মেরে উঠলো ঠান্ডা পানি পড়তে । নিদ্র যথা সম্ভব চেষ্টা করছে নিজেকে শক্ত করতে । কিন্তু নেশা হয়ে উঠছে । ধিরে ধিরে নেশা ঘিরে ধরছে তাকে । নিদ্র নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারছে না । গায়ের সব শক্তি দিয়ে ওয়াসরুমের আয়নায় ঘুশি মারলো সে । আয়না’টা ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে ফ্লোরে পড়লো । হাত কেটে গেছে নিদ্রর । শাওয়ারের পানির সাথে রক্তও বেয়ে যাচ্ছে । এদিকে তৃপ্তি বাড়ির ভিতরে এসে সোজা নিদ্রর রুমের সামনে আসলো । দরজা’টা লাগানো । তৃপ্তির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিদ্র ঘুম থেকে উঠে গেছে । তবুও ক্লিয়ার হতে চায় তৃপ্তি । দরজা বন্ধ থাকলেও, অন্য রকম ভাবেও দরজা খোলা যায় । নিদ্র শিখিয়ে দিয়েছিল তৃপ্তিকে । দরজা’টা খুলে ভিতরে উকি দিলো তৃপ্তি । না রুমের ভিতরে কাওকে দেখা যেচ্ছে না । তবে ওয়াসরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসছে । তৃপ্তির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিদ্র ওয়াসরুমে । দরজা’টা আবার লাগিয়ে নিজের রুমে আসলো তৃপ্তি । এরপর নিকাব, হিজাব, বোরখা খুলে চেঞ্জ করে নিলো সে । নিদ্র ওয়াসরুম থেকে বেরোলে’ই সামনে গিয়ে দারাবে তৃপ্তি । প্রশ্ন করবে সে নিদ্রকে । দেখবে নিদ্র তার সাথে কি করে । এই ভেবে ফোন হাতে নিয়ে বেডের পাসে বসে রইলো তৃপ্তি । এদিকে বেশ অনেক’টা সময় শাওয়ার নিয়ে, কোনো মতে হাত’টা ওয়াস করে, ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসলো নিদ্র । নেশ এখনো কাজ করছে । তবে আগের চাইতে একটু কম । শরীর’টাকে কিছু’টা কন্ট্রোল করতে পারছে । তবে পুরো পারছে না । হাতে টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসলো নিদ্র ।
:+ভাইয়া তুমি আমায় রেপ করলা ।(তৃপ্তি)
সদ্র সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতে’ই হঠাৎ কারো এমন কথায় পিছনে ফিরে তাকালো নিদ্র । পিছনে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে কিছু’টা অবাক হলো সে । অশ্রু মিশ্রিত্র নয়নে নিদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে তৃপ্তি । নিদ্রকে ভাবান্তক দেখে তৃপ্তি আবার বললো ।
:+ভাইয়া বলো তুমি আমায় কেন রেপ করলা । বলো না ভাইয়া চুপ করে থেকো না ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির কোন কথার উওর না দিয়ে । নিদ্র আগে নিজের রুমের দরজা লাগালো । তারপর তৃপ্তির কাছে এসে তার দু’হাত তৃপ্তির দু’গালে রেখে তৃপ্তির চোখের পানি মুছে দিলো । চোখ দু’টো ঘোলাটে হয়ে আসছে নিদ্রর । নেশা তীব্র তায় রুপ নিচ্ছে । তৃপ্তি আবার বললে উঠলো ।
:+তুমি কি আমাকে রেপ করলা ভাইয়া । কেন করালা এটা ।(তৃপ্তি)
তৃপ্তির দিকে একটু যুকে তৃপ্তির গোলাপি রাংঙ্গা ঠোঁট দুটোকে নিজের দখলে করে নেয় নিদ্র । মাথা আবারো উল্টো কাজ করা সুরু করে দিয়েছে নিদ্রর । মাথার মধ্যে কি চলছে বুঝতে পারছে না সে । তৃপ্তি ঠাই দারিয়ে রয়, তার কোন হেল দোল নেই । বুকের ভিতর’টা কেপে উঠে । তবে কি সব শেষ । নিদ্র সুধু তার দেহ টাকে’ই ভালোবেসে আসছে এতো দিন । নিদ্র তৃপ্তির কোমরে এক হাত রেখে তৃপ্তির শরীরের সাথে নিজের শরীর মিশিয়ে নেয় । কিছু সময় পার হবার পর তৃপ্তির ঠোঁট দু’টো ছেরে দেয় নিদ্র । এতপর শক্ত করে নিজের বুকের সাথে জরিয়ে ধরে তৃপ্তিকে নিদ্র । সদ্র সাওয়ার নেওয়া নিদ্রর বুকে বিন্দু বিন্দু পানি লেগে থাকা লোমশো বুকে নাক ডুকিয়ে তৃপ্তিও জরিয়ে ধরে নিদ্রকে ।
:+বলো না ভাইয়া কাল তুমি আমাকে কি করছিলে ।(তৃপ্তি)
কিছু’টা জোরালো কন্ঠে বললো তৃপ্তি । বুকের ভিতর’টা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে তার । এমন বাচ্চা বাচ্চা কথা বলতে’ই হবে । সে দেখতে চায় নিদ্র কি করে । তৃপ্তির মাথার কেশ কালো চুলে চুমু দিয়ে নিদ্র কিছু’টা ঘর লাগানো কন্ঠে বললো ।
:+কে বলছে তোকে । আমি তোকে রেপ করছি ।(নিদ্র)
:+আমার ফ্রেন্ড বলছে । কোন মেয়ের সাথে যদি জোর করে কোনো ছেলে শারীরিক সম্পর্ক করে, ওটাকে নাকি রেপ মানে ধর্ষণ করা বলে । একটু আগে আমি তার সাথে’ই ঘুরে বাড়ি ফিরেছি ।(তৃপ্তি)
:+হুম এটা সত্য কোন ছেলে যদি জোর করে কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে তাহলে ওটাকে রেপ বলে ।(নিদ্র)
:+তাহলে তুমি,,,,,,।(তৃপ্তি)
:+না আমি আমার এই পিচ্চি টাকে আদর করছি।(নিদ্র)
:+এটাকে আদর বলে । আমি অনেক ব্যথা পেয়েছি না ।(তৃপ্তি)
:+আমি আমার এই পিচ্চি টাকে ওই সময় এমন অবস্থায় দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি । তুই যে আমার কলিজার সাথে মিসে আছিস ।(নিদ্র)
:+তোমার কথার আগা গোরা কিছু আমি বুজতেচ্ছি না । তোমার কথা গুলো এমন কেন শুনাচ্ছে ।(তৃপ্তি)
:+তোকে বুঝতে হবে না ।(নিদ্র)
এই বলে নিদ্র তৃপ্তিকে কোলে তুলে নিলো । এরপর নিজের বেডের উপর এনে শুয়িয়ে দিল । তৃপ্তি সুধু নিদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে । তার চোখ দু’টো দিয়ে গল গল করে পানি গড়িয়ে পড়ছে । এদিকে নিদ্র আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না । তৃপ্তির উপর ঝাপিয়ে পড়ে সে । তৃপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে নেয় । এটাই হয় তো নিদ্রর সাথে কাটানো তার শেষ মূহুর্ত । আর হয় তো নিদ্র তাকে পাবে না । বা নিদ্রকে তার সামনে সে কখনো আসতে দিবে না । ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে তৃপ্তির । ইচ্ছা করছে এখন জীবন’টা দিয়ে দিতে । কিন্তু সৃষ্টি কর্তা যে আর্তহত্য মহা পাপ করে দিয়েছে । নিজের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে তৃপ্তির শরীরের উপর ঢলে পড়ে নিদ্র । তৃপ্তি পাথর হয়ে শুয়ে আছে । এখন আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না । ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে সে । এতদিন সে যাকে ভালোবাসলো । আজ সে তার আসল রুপ দেখলো । নিদ্রর শরীর টাকে নিজের শরীরের উপর থেকে ধাক্কা মেরে এক পাসে ফেলে দিলো তৃপ্তি । নিদ্র আবার অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে গেছে । তৃপ্তি নিজেকে ঠিক করে, দৌড়ে নিদ্রর রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে আসলো । এরপর বেডের উপর ঝাপিয়ে পড়ে চিৎকার করে কেদে উঠলো ।
:+এটা আমার সাথে কি হলো । আমি তো ভেবেছিলাম গত রাতে সে নেশার ঘড়ে আমার সাথে এমন করেছে । কিন্তু সুস্থ হয়েও সে কেন আমার সাথে এমন করলো । তবে কি সে আমার কাছে আসার কারন এটাই ছিল । আমার কাছে আসতো সুধু আমার দেহ টাকে পাবার লোভে । হে আল্লাহ,,। এটা কি হলো আমার সাথে ।(তৃপ্তি)
কাদতে কাদতে বেড থেকে নেমে দৌড়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো তৃপ্তি । থাকবে না আর সে এই যঘ্ন মানুষ’টার কাছে । তার সাথে পাতানো সপ্নের সংসার করবে না সে । মানুষ টাকে বড্ড ভালোবেসে ভুল করেছে সে । কাছে’ই আসতে দেওয়া উচিত হয়নি মানুষ টাকে । সব ভেঙে চলে যাবে সে আজ ।
———————————————-
প্রথম পর্বের অংশ কিছু’টা তুলে ধরা হলো উপরে ।
কিছু’টা আবার বর্তমান থেকে লেখা হয়েছে ।
কেও আবার বলবেন না । যে বর্তমানের এই
লেখা গুলো অতিতে প্রথম পর্বে ছিল না কেন ।
তাদের বলছি । সব তো আর এক বারে লেখা যায় না । কিছু’টা রহশ্যও তো রাখতে হয় । প্রথম অংশের সমাপ্তি ঘটল এখানে ।
————————————————
রাত ঘড়ির কাটা ১০টা ছুই ছুই……………
আড়মোড়া ভেঙে ধিরে ধিরে শোয়া থেকে উঠে বসলো নিদ্র । মাথা’টা ঘুরাচ্ছে । ডান পাসে মাথা কাত করে তাকালো নিদ্র । বেডের পাসে ছোট টেবিলের উপর একটা ডাইড়ি রাখা । অবাক দৃষ্টিতে ডাইড়িটার দিকে তাকালো নিদ্র । হাত বারিয়ে ডাইড়িটা হাতে নিলো সে । ডাইড়ি’টা খুলে পড়া সুরু করলো ।
ডাইড়ির লিখা ।
ভেবেছিলাম তোমার সাথে সারা’টা জীবন পার করে দেবো । তিন বছর ধরে তোমাকে চেয়ে আসছি আমি । ভাবছলো তিন বছর কি করে । তাহলে শুনো । তিন বছর আগে যখন আমি বড় আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলছিলাম । ঠিক তখন তুমি বড় আম্মুর পাসে এসে বসেছিলে । টিভি দেখছিলে তুমি তখন । ফোনের এপাস থেকে তোমার ওই খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়ি, জোরা ভ্র, বাম পাসে সিতি করা লম্বা চুল । দেখে একটা শকড খাই আমি । তাকিয়ে থাকি কিছু সময় তোমার দিকে অপলোকে । বড় আম্মু ওখান থেকে উঠে চলে আসতে’ই অনেক বিরক্তি লাগে আমার । বান্ধবীদের কাছে শেয়ার করি বিষায়’টা । যে আমার একজনকে ভালো লেগেছে । কিন্তু সে যে তুমি, এটা ওদের বলিনি । ওরা আমাকে বলে ভালো লাগা মানে আমি ক্রাশ খেয়েছি । হ্যাঁ সত্যি আমি তোমার উপর ক্রাশ খেয়েছি । তোমার ওই হালকা লালচাটে চোখ দু’টো আমার ভালো লেগে যায় । সপ্ন দেখতে থাকি তোমাকে নিয়ে । প্রতি’টা খনে, প্রতি’টা মূহুর্তে তোমাকে নিয়ে ভাবতে সুরু করি । তোমাকে কাছে পাওয়ার আখাংকা যেগে উঠে আমার । কোনো ভাবে SSC পাস করে’ই ঢাকায় তোমাদের কাছে চলে আসবো এটা’ই প্ল্যান ছিল আমার । হ্যাঁ তাই হলো ঢাকায় চলে আসলাম আমি । আর তুমি কি বুঝলে আমি ক্রাশ বুঝি না । আরে ওটা তো ছিল তোমার কাছে কাছে থাকার আমার একটা প্ল্যান । আমার বান্ধবীরা-ও ওইদিন কিছু বুঝে উঠতে পারেনি আমার ব্যবহারে । আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলো তো । এই পৃথিবীতে লেখা পড়া করা কোনো মেয়ে বা ছেলে এমন বোকা হয় । তোমার একটুও মনে হয়’নি আমি একটু বেশি’ই তোমার সাথে বাচ্চামো করেছি । একবার ভেবে দেখো তো আমার বাচ্চামো ব্যবহার গুলো । ধিরে ধিরে তোমাকে আমার কাছে আসতে দেওয়া । ধিরে ধিরে তোমার সাথে জরিয়ে যাওয়া । একবার ভাবো তো সব কিছু । যানো ঢাকায় আসার পড় প্রথম যেদিন কলেজে ভর্তি হতে গিয়েছিলাম । বৃষ্টি নামের ওই আপু’টার কথা গুলো শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছি । কিন্তু পড়খনে তুমি যখন আপুটাকে চড় মাড়লে । একটা ভালো লাগা ছুয়ে গেল আমার মনে । ভেবেই নিয়ে ছিলাম তুমি’ই আমার শেষ জীবনের সেই আশ্রয়, যাকে বেছে আমি ঠিক করেছি । এবং তুমি সে প্রমানও করে দিয়েছিলে । যখন ওই বৃষ্টি আপু’টা আমাকে মারার জন্য লোক ভাড়া করেছিল । একটা ছেলে তবুও আমার হাতে ছুরি গেথে দেয় । সুস্থ হবা প্রর্যন্ত তুমি আমাকে সাপোর্ট করেছো । এই অসুস্থতার মাঝে আমি যানতে পারি, আমি তোমার লাইফে দ্বিতীয় ভালোবাসা । রোজিনা নামের একজন আপু তোমার লাইফের প্রথম ভালোবাসা ছিল । যানো খুব কষ্ট হয়েছিল তোমার মুখে রোজিনা নামের আপু’টার প্রতি ভালোবাসার কথা শুনে । দরজার পাসে দাড়িয়ে সব’ই শুনেছিলাম আমি । কিন্তু দুরভাগ্য বসতো তুমি আমার ছায়া দেখে ফেলো । তুমি কিছু বুঝে উঠার আগে’ই আমি রুমে ঢুকে পড়ি । তুমি রুম থেকে বেরিয়ে চেক করছিলে, আমি রুমে আছি কিনা । যানি তুমি আমাকে সজাক দেখলে সন্দেহ করবে । তাই তো বেডের উপর শুয়ে পড়ে ঘুমনোর নাটক করি । কিছুখন পড় নীলা আপু আসে । আর বড় আম্মু নীলা আপুকে সন্দেহ করে । আচ্ছা এসব বাদ দাও । এই তো কিছুদিন আগের কথা । লিয়া আপু যখন দেশে আসে । আমি বুঝতে পারি না কিছু । কিন্তু একদিন পানি খাওয়ার জন্য নিচে নামছিলাম । তখনি বড় আম্মু আর বড় আব্বুর কিছু কথা কানে আসে । সব শুনে আমি বুঝতে পারি । লিয়া আপুর সাথে দুই বছর আগে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে বড় আম্মু আর বড় আব্বু । খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার কথা গুলো শুনে । পানি খাওয়া বাদ দিয়ে । দৌড়ে নিজের রুমে এসে বালিশে মুখ গুজে কান্না করেছি অনেক’টা সময় । কিন্তু সকালে সেই সবার সাথে হাসি খুশি থাকতে হতো । ভিতরের দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন বাহিরে প্রকাশ করতে পারিনি আমি । কিন্তু শেষে লিয়া আপু বিয়ে’টা ভেঙে দেয় । তুমি নাকি তাকে বলেছিলে আমাকে ভালোবাসো । তাই সে বিয়ে’টা ভেঙে দিয়েছে । হতো তুমি এটা যানোই না যে লিয়া আপুর সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল । বিয়ে’টা ভেঙে লিয়া আপু অনেক কান্না করেছিল । যেদিন তিনি চলে যাবেন । তার আগের দিন রাতে আমি তার রুমে গিয়েছিলাম । উনি আমাকে একটা লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা দিয়েছেন । যেটা উনি লন্ডন থেকে বিয়ের জন্য কিনে এনে ছিলেন । লিয়া আপু যখন দেশ ছেরে চলে যায় । ঠিক তার তিন দিন পর’ই আমি রাতে পানি খাওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম নিচে । তখনি আমি শুনতে পাই বড় আম্মু বলছে তোমার আমার বিয়ের কথা । লজ্জায় আর পানি খাওয়া হয়ে উঠে না । নিজের রুমে’ই ফিরে আসি আবার । সেদিন খুশির সীমা যেন আকাশ ছুয়ে গেছে আমার । অনেক কিছুর পর তোমাকে পাওয়া হবে আমার । ভেবে’ই খুশিতে রুমের ভিতরে লাফিয়েছি কিছু সময় । প্রথম আমার বেস্ট ফ্রেন্ড মিম, তারপর আমার মামাতো ভাই নিরব ভাইয়া, এরপর বৃষ্টি আপু, শেষে লিয়া আপু । এতো দুর পথ অতিক্রম করে তোমাকে আমি পাবো । সেই খুশিতে রুমের ভিতরে অনেক লাফালাফি করছি আমি । রোজিনা আপুর কথা বাদ দিলাম । কারন উনি আমার অজানা ছিলেন । হয় তো আরো অনেক কিছু’ই আমার অজানা । এসব বাদ আসল কথায় আমি । সব কিছু শেষ হবার পড় বড় আম্মুরা দেশের বাহিরে যাবে বলে । আমার তখন অভিমান হয়ে উঠে । আমাদের বিয়া’টা হবার পর গেলে কি হতো । সবাই মিলে সিঙ্গাপুরের ঘুরতে যেতাম । কিন্তু ওই যে বলে না । ভাগ্য কিছু পরিক্ষার জন্যও রেখে যায় । আমার সাথেও তাই হলো । তোমাকে দুরে দুরে রাখার চেষ্টা করতে সুরু করেছি । আর তুমি গত রাতে নেশা করে এসে আমার উপর ঝাপিয়ে পর । বিশ্বাস করো জীবন’টা দিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে । সব কিছু হাতের কাছে গুছিয়ে এনে এক মূহুর্তে সব ফসকে বেরিয়ে গেল । বেরিয়ে আসলো তোমার আসল রুপ । আজ সকালে জুইর সাথে একটু পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম । কথায় কথায় জুইকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম । কোনো ছেলে নিজের অজান্তে, কোনো মেয়ের সাথে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করলে । মেয়ে’টা বুঝবে কি করে ছেলে’টা তাকে সত্যি ভালোবাসে কি না । যানো জুই কি বলেছে আমার কথা শুনে । বলেছে, ছেলে’টা সুস্থ হওয়ার পর মেয়ে’টা ছেলে’টার সামনে গিয়ে দাড়ানো উচিত । এতে যদি ছেলে’টা মেয়ে’টার উপর আবার ঝাপিয়ে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে । ছেলে’টা মেয়ে’টাকে কখনো ভালোবাসে নি । সুধু মেয়ে’টার শরীরকে ভালোবেসেছে । ওর কথা মতো আমি বাড়িতে এসে তোমার সামনে বাচ্চা ভাব নিয়ে দাড়াই । যেন আমি কিছু বুঝি না এমন ভাবে তোমাকে প্রশ্ন করি । কিন্তু তুমি কি করলে । আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লে । ঘেন্না হচ্ছে আমার নিজের উপর । কেন আমি তোমাকে ভালোবাসতে গেলাম । ভেবেছিলাম গতকাল রাতে নেশার ঘোড়ে মধ্যে আমার সাথে এমন করেছো । সুস্থ হয়ে তুমি ঠিক হয়ে যাবে । আমার কাছে এসে মাপ চাইবে । নতজানু হয়ে বলবে । “কিউটি আমার ভুলয়েছে । আমি নিজের মধ্যে ছিলাম না । আমাকে এবারের মতো মাপ করে দে”। আমি তোমার কথা শুনে, তোমাকে জরিয়ে ধরবো । কিন্তু তুমি কি করলে, আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লে । চলে যাচ্ছি তোমার লাইফ থেকে । আর ফিরবো না তোমার লাইফে । খবরদার আমার কাছে আর আসার চেষ্টা করবে না । তাহলে আমি সুইসাইড মহাপাপ এটা ভুলে যাবো । নিজেকে শেষ করে দেবো আমি । বড় আব্বুর গাড়ি’টা নিয়ে গেলাম । গ্রামে গিয়ে আব্বুকে দিয়ে গাড়ি’টা পাঠিয়ে দেবো । শেষ বারের মতো বলছি । আর আমার ধারে কাছে আসার চেষ্টা করবে না । তাহলে এর পরিনাম ভালো হবে না । তুমি যতখনে এই ডাইড়ির লেখা গুলো পড়বে । ততখনে হয়তো আমি ঢাকা শহর থেকে বেরিয়ে পড়বো । ঘুম ভাঙতে তোমার বেশি দেরি হবে না আসা করছি । ফোন’টা নিয়ে গেলাম । আবার ভেবো না এটা তুমি দিয়েছো বলে নিয়ে গেছি । এই ফোনের দাম তোমার বেডের পাসে রাখা আছে ।
ইতি
তোমার না পাওয়া ভালোবাসা তৃপ্তি ।
লেখা গুলো পড়ছিল আর চোখের পানি ফেলছিল নিদ্র । ডাইড়ি’টা অফ করে দৌড়ে নিজ রুম থেকে বেরিয়ে তৃপ্তির রুমে আসলো । পুরো রুম ফাকা, কাবাডে কোনো জামা কাপড় নেই । ড্রেসিং টেবিলে কোনো কসমেটিক নেই । বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেটের কাছে আসলো নিদ্র । গাড়ি নেই । দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে যানতে পারলো, বেলা ৩টা বাজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে তৃপ্তি । এখন বাজে প্রায় ১১টা । তাহলে এতোখনে নিজ বাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে তৃপ্তি । পিছনে ঘুরে বাড়ির ভিতরে এসে রুমে চলে আসলো নিদ্র । এরপর একটা কাগজে লিখা সুরু করলো ।
কাগজের লেখা ।
তুমি পাকনা ছিলে । আর আমি ভেবেছিলাম তুমি কাচা বাচ্চা । ঠিক নিশপাপ একটা শিশু । কি অভিনয় টাই নাই করলে । নিখুদ অভিনয় । একটুও বুঝতে পারিনি আমি তোমার এটা অভিনয় ছিল । তবুও আমাকে না বুঝেই চলে গেলে জান । একটুও বুঝার চেষ্টা করলে না, আমি তখনও সুস্থ আছি কিনা । ঘুম থেকে উঠার পর গত রাতের কথা ভেবে পাগল পাগল লাগছিল । না বুঝে’ই কাল রাতের আনা পানি আবার খেয়ে ফেলেছি । বুঝতে পারিনি ওই সময় তুমি আবার এসে আমার সামনে দাড়াবে । দরজা তো লাগনো ছিল । কি করে ভিতরে এলে আমি বুঝতে পারছি না । হয়তো তুমি সিকোরেটি লক খুলে ভিতরে এসেছো । তুমি আমাকে ছেরে চলে গেলে । ঠিক আছে যাও । এই নিদ্র আর তোমার সামনে গিয়ে দাড়াবে না । ভালোবাসি তোমায়, তোমার মৃত্যু আমি সহ্য করতে পারবো না । অপরাধ তো আমি করেছি । তাই শাস্তি তো আমার’ই প্রাপ । ঠিক করছো তুমি । আমিও একটা ঠিক করবো । সবাইকে ছেড়ে চলে যাবো । ওই যে তুমি বললে । সুইসাইড মহাপাপ, তাই তুমি ওটা করবে না । আমিও ওটা করবো না । তবে চলে যাবো তোমাদের সবাই ছেড়ে নতুন কোনো শহরে । যেখানে আমাকে কেও চিনবে না । তুমি হয়তো এক সময় সব যানতে পারবে । কিন্তু তখন আর আমাকে পাবে না । আমি থাকবো কোনো এক শহরের, কোনো এক কোনায় । রোজিনাকে হারিয়ে যত’টা না পাগল হয়েছি । তার থেকেও এখন বেশি নিজেকে পাগল লাগছে । অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে । কিন্তু ভয় নেই আমি শক্ত আছি এখনো । এই যে দেখো, লেখা গুলো লিখতে আমার কেমন হাত কাপছে । তবুও লিখছি সুধু তোমার জন্য । ভালো থেকো । আমার ভুল’টা যায়নার পর কষ্ট পেয়ো না ।
ইতি
তোমাকে না বোঝা তোমার মনের মানুষ ।
কাগজে লেখা গুলো লিখে টেবিলের উপর রেখে দিলো নিদ্র । এরপর আরো একটা কাগজে কিছু লিখে টেবিলের উপর রাখলো । তারপর ওয়াসরুমে ঢুকে ফ্রেশ হলো । গায়ে কালো শার্ট,পড়নে কালো পেন্ট, পায়ে সাদা সুজ পড়ে, কাধে বেগ ঝুলিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো নিদ্র । গেটের দারোয়ান নিদ্রকে দেখে বলে উঠলো ।
:+কোথায় যাচ্ছেন স্যার ।(দারোয়ান)
নিদ্র সামনের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে বলে উঠলো ।
:+কোনো অজানা গন্তব্যে চাচা । একটু সুখের আসায় । বাড়ি’টার দিকে খেয়াল রাখবেন । MOM..পাপা না আসা প্রর্যন্ত একটু ভালো করে খেয়াল রাখবেন । আসছি ।(নিদ্র)
এই বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লো নিদ্র । দারোয়ান নিদ্রর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । নিদ্র তার চোখের সামনে একটা রিকশায় উঠে চলে গেল । দারোয়ান ভেবে নিলো নিদ্র হয়তো কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে । কয়দিন পর চলে আসবে ।
#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
[।কপি করা নিষেধ।]
[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]