তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡 #DcD_দীপ্ত #পর্ব__________67

0
582

#তৃপ্তিতে_আসক্ত_নিদ্র🧡
#DcD_দীপ্ত
#পর্ব__________67

রাত প্রায় ১২টা বাজে……………
চেয়ারম্যান বাড়ির গেটের কাছে এসে গাড়ি দার করালো তৃপ্তি । চোখ দু’টো অসম্ভব লাল হয়ে আছে তার । কান্না করতে করতে সারা রাস্তা ড্রাইভ করেছে । গাড়ির হনের শব্দ পেয়ে ধড়ফড়িয়ে বসা থেকে উঠে দারিয়ে গেল গেটের দারোয়ান আলম । চোখ দু’টো সবে বুজে আসছিল উনার । গেটের ছোট একটা ফুটো দিয়ে বাহিরে তাকালেন তিনি । গাড়ির ভিতরে তৃপ্তিকে দেখে তিনি বেশ অবাক হলেন । তাড়াতাড়ি গেট খুলে দিলো আলম । তৃপ্তি গাড়ি ড্রাইভ করে ভিতরে এনে পার্ক করলো । এরপর মুখে নিকাব পড়ে গাড়ি থেকে নেমে এলো । গাড়ি থেকে নামতেই আলম বলে উঠলো ।

:+কেমন আছো মামুনি ।(আলম)

তৃপ্তি আলমের কথা শুনে, মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বললো ।

:+ভালো আমি চাচা । আপনি কেমন আছেন ।(তৃপ্তি)

:+আমিও ভালো আছি । কিন্তু মামুনি আর কাওকে দেখছি না যে । তুমি একা এতো রাতে কি করে আসছো ।(আলম)

তৃপ্তি এবার কি বলবে বুঝতে পারছে না । সে বিষয়’টা এরিয়ে যাওয়ার জন্য বললো ।

:+গারি থেকে বেগ গুলো নামিয়ে আনুন চাচা । আমি বাড়ির ভিতরে যাচ্ছি ।(তৃপ্তি)

এই বলে তৃপ্তি আলমের সামনে থেকে সরে বাড়ির দরজার দিকে হাটা ধরলো । আলম তৃপ্তির দিকে তাকিয়ে ছোট নিশ্বাস ছারলেন । এরপর গাড়ি থেকে বেগ পত্র নামালেন । এদিকে তৃপ্তি বাড়ির কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু কেও দরজা খুলছে না । বাদ্য হয়ে বজলুরের ফোনে কল করলো তৃপ্তি । কয়েক বার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করলো বজলুর ।

:+তাড়াতাড়ি নিচে আসো আব্বু । আমি দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি ।(তৃপ্তি)

বজলুর চমকে শোয়া থেকে উঠে বসলো । চোখ দু’টো বা হাত দিয়ে ঢলে ফোনের স্কিনে তাকালেন তিনি । তৃপ্তির নাম্বার দেখে তিনি অবাকের চরম প্রর্যায় পৌছে গেলেন । তিনি ফোন হাতে নিয়েই বেড থেকে নেমে, নিচ তলায় দরজার সামনে আসলেন । এরপর দরজা খুলে দিলেন । ওমনি তৃপ্তি বজলুরকে জরিয়ে ধরে কেদে উঠলো । বজলুর থতো মতো খেয়ে গেলেন । তৃপ্তির মাথায় হাত বুলিয়ে বজলুর এলো মেলো চোখে বাহিরে তাকিয়ে বলে উঠলো ।

:+কি হয়েছে আম্মু । এতো রাতে তুমি কোথা থেকে আসলে । আর কাওকে দেখছি না যে ।(বজলুর)

বজলুরের কথা শুনে, তৃপ্তি নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করলো । কিন্তু গা ভেঙে যেনো চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে । কান্না ভেজা কন্ঠে তৃপ্তি বলে উঠলো ।

:+আমার কলেজ তো বন্ধ । তাই তোমাদের দেখতে চলে এলাম । আর তুমি তো যানো আমি এখন গাড়ি ড্রাইভ করতে পাড়ি । তাই আমি একাই গাড়ি ড্রাইভ করে চলে আসলাম তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে । নিদ্র ভাইয়া আসতে চেয়েছিল । কিন্তু ভাইয়া চলে আসলে বাড়ি পুরো ফাকা হয়ে যাবে । বড় আম্মু আর বড় আব্বু তো সিঙ্গাপুর গেছে, যানোই তো । তাই আমি নিদ্র ভাইয়াকে আসতে নিষেধ করেছি ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, বজলুর মেয়ের উপর একটু রাগ হলো । এরো রাতে একা আসলো । যদি পথে কোনো বিপদ হতো । তখন কি হতো । বজুলর কিছু’টা রাগ নিয়ে বললো ।

:+তোমার রাত করে আসা ঠিক হয়নি ।(বজলুর)

তৃপ্তি বজলুরকে ছেরে দারিয়ে বললো ।

:+রাগ করো না আব্বু । একা একা মানুষের পথ চলতে হয় । আমরা পৃথিবীতে আসছি একা । যাবোও একা । তাহলে এতো ভয় কিসের ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, বজলুর বেশ অবাক হলেন । বজলুর আবার রাগ দেখিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল । কিন্তু তৃপ্তি থামিয়ে দিয়ে বললো ।

:+আমার ভালো লাগছে না আব্বু । এতো’টা পথ ড্রাইভ করে আসছি, ক্লান্ত লাগছে । একটু রেস্ট নেওয়া দরকার ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, বজলুর চুপ হয়ে গেল । তৃপ্তি মাথা নিচু করে বললো ।

:+আম্মু কোথায় আব্বু ।(তৃপ্তি)

:+ঘুমিয়ে পরেছে । যাও তোমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও । আমি নিদ্রকে কল করে বলে দিচ্ছি, তুমি বাসায় ঠিক মতো আসছো ।(বজলুর)

:+না আব্বু । আমিই ভাইয়াকে কল করে বলে দিচ্ছি । তুমি বরং দরজা লাগিয়ে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো । কাল সকালে নাহয় আম্মুর সাথে আমি দেখে করবো । আম্মুকে একে বারে চমকে দেবো । তোমার মতো ।(তৃপ্তি)

বজলুরের কথা শুনে চট করে তৃপ্তি বললো । বজলুর মেয়ের শেষের কথা শুনে হেসে ফেললো । তৃপ্তি বজলুরের পাস কাটিয়ে দোতলায় নিজের রুমে চলে আসলো । রুমের ভিতর’টা বেশ অন্ধকার । বাম পাসে হাত বাড়িয়ে রুমের লাইট জ্বালিয়ে রুম’টা আলোকিত করলো তৃপ্তি । পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে, রুম’টা পর্যবেক্ষণ করে নিলো । সব কিছু পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা রুম’টা । তৃপ্তি বেডের পাসে এসে বসলো । এরপর স্থির নয়নে মেঝেতে তাকিয়ে রইলো । বজলুর আলমকে নিয়ে তৃপ্তির বেগ পত্র, তৃপ্তির রুমে নিয়ে আসলো । রুমে বজলুরের আগমন ঘটতেই তৃপ্তি বজলুরের দিকে তাকালো । বজলুর হাতের লাগেজ রুমের ভিতরে রেখে দাড়িয়ে বললো ।

:+এতো বেগ পত্র নিয়ে আসলি যে আম্মু । একে বাড়ে চলে আসছো নাকি ।(বজলুর)

:+এই নিয়ে কাল সকালে কথা বলবো আব্বু । এখন প্লিজ আমাকে রেস্ট নিতে দাও ।(তৃপ্তি)

বজলুরের কথা শুনে বলে উঠলো তৃপ্তি । বজলুর আর কিছু বললেন না । মেয়ের ব্যবহারের বেশ পরির্বতন লক্ষ করছেন তিনি । আগের সেই বাচ্চা সভাবের তৃপ্তিকে । আর এখন এই তৃপ্তিকে । কিছুতেই এক করে মিলাতে পারছে না বজলুর । তৃপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে নিচ তলায় আসলো বজলুর । গেটের দারোয়ান আলম আবার গেটের কাছে এসে বসে পড়লো । এই শীতের মধ্যেও তিনি গেটের পাসে ছোট ছাওনির নিচ থেকে সরেন না । বজলুর বাড়িতে চলে যেতে বললে । তিনি অভাস আছে বলে শীতের মধ্যে বসে থাকেন । বাড়ির দরজা লাগিয়ে নিজ রুমে এসে বজলুর আবার শুয়ে পড়লো । মাথার ভিতর অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুড় পাক খেতে সুরু করলো । সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিনি আবার ঘুমিয়ে পড়লেন । এদিকে তৃপ্তি ওয়াসরুমে এসে শাওয়ার নেওয়া সুরু করলো । ঠান্ডা পানি শরীরে পড়তেই, শরীর কাটা দিয়ে উঠলো । কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চোখের পানি ফেলছে আর শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছে ।

ঢাকা কমলাপুর রেল স্টেশনে এসে সিএনজি থেকে নেমে দারালো নিদ্র । এরপর ভাড়া মিটিয়ে স্টেশনের ভিতরে আসলো । টিটির কাছ থেকে যানা গেল একটা ট্রেন আধ ঘন্টা পড় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিবে । নিদ্র টিকিট কিনে সেই ট্রেনে উঠলো । এরপর নির্দিষ্ট সিটে গিয়ে কাধের বেগ’টা পাসে রেখে সিটে বসে হেলান দিলো । চোখ দু’টো বুঝে একে বারে অতীতে চলে গেল সে । আন মনে বলে উঠলো ।

:+তোর মতো করে কেও আমাকে বোঝে নারে রোজিনা । আমার ভুল’টা সে খুজে বের করার চেষ্টা করেনি । একটুও সময় দেয়নি বঝোনার । তোকে হাড়িয়ে ওকে পেয়েছি । ভেবেছিলাম তোর যায়গা কাওকে দেবো না । কিন্তু দেখ । এই মেয়ে’টা ধিরে ধিরে আমাতে মিশে ঠিকই তোর যায়গা দখল করে নিয়েছে । এবং তোর থেকেও বেশি যায়গা দখলে নিয়েছে । আমার সাথে প্রতি বার এমন কেন হয় বলতে পারবি । আমি যাদের চাই । তারাই আমার থেকে কোন না কোন ভাবে দুরে চলে যায় ।(নিদ্র)

:+এই যে হ্যালো মিস্টার । কৈ হারালেন । বেগ’টা সরান আমি বসবো ।(মেয়ে)

নিদ্রর ভাবনার মাঝে একটা মেয়ের কন্ঠ কানে এলো । অজানা কন্ঠ ওয়ালি মেয়েকে দেখার জন্য চোখ খুলে তাকালো নিদ্র । মেয়ে’টা নিদ্রর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । সামনে তাকিয়ে নিদ্র দেখলো । তার সামনের সিটে দু’টো ছেলে আর একটা মেয়ে বসা । নিদ্র নিজের সিটে দেখলো, একটা ছেলে বসা । আর মাঝ খানে তার বেগ । নিদ্র টান মেরে বেগ’টা হাতে নিয়ে কোলে চেপে নিলো । মেয়ে’টা ধপ করে সিটে বসে পড়লো । নিদ্র ট্রেনের জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো । স্টেশনে অনেক যাত্রী দেখা যাচ্ছে এখনো । ডিসেম্বর মাস চলছে । হয়তো সবাই কাজের ছুটি পেয়ে নিজেদের বাড়িরে যাওয়ার জন্য ছুটা ছুটি করছে । নিদ্র আবার সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে নিলো । বাহিরে থেকে জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে । নিদ্র বেশ ভালো লাগছে । নিদ্রর পাসের সিটের মেয়ে’টি তার বেচের একটা ছেলেকে বলে উঠলো ।

:+ওই সৈকত জানালা লাগিয়ে দে । কি ঠান্ডা আসছে বাবা । এখনি এতো ঠান্ডা লাগছে । আর না যানি ট্রেন ছুটলে কতো ঠান্ডা লাগবে ।(মেয়ে)

মেয়েটির কথা শুনে সৈকিত তার পাসের জানালা লাগিয়ে দিলো । কিন্তু নিদ্রর পাসের জানালা লাগানোর সাহস তার হলো না । মেয়েটি সৈকতের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+কিরে এটা লাগিলি না কেন । এটা দিয়েই তো ঠান্ডা বেশি আসছে । তোর পাসের’টা তো তুই লাগিয়ে দিয়েছিস । আবার আমাদের পাসের টাও লাগিয়েদে ।(মেয়ে)

:+দেখ ঝুমু উনি যদি,,,,,,,,,।(সৈকত)

:+আরে ভাই তোর ভনিতা বাদ দে । উনি চোখ বুঝে আছেন । দেখতে পারছিস না । নিশ্চয়ই ঘুম চলে আসছে উনার । তুই জানালা লাগিয়ে দে । এই শীতের মধ্যে জানালা খোলা রেখে আমি ট্রাভেল করতে পারবো না ভাই । তোদের বলে ছিলাম এখন যাওয়ার দরকার নেই । কিন্তু তোরা শুনলি না আমার কথা । বলে ছিলাম এই কন্টাক্ট আমাদের নেওয়ার দরকার নেই C গ্রুপকে দিয়ে দে । শীতের মধ্যে আমি ফটো তুলতে যেতে পারবো না । আমার কথা কানে যায় না । অনেজ মজা হবে । অনেক আনন্দ করবো । শীতের মধ্যে আমার একটুও ভালো লাগে না । শীত কাল সুধু লেপের নিচে শুয়ে থাকার জন্য । কাজ করার জন্য না । এখন আমি কতো সুন্দর লেপের নিচে শুয়ে থাকতাম । ওয়াটার ফিলিংস ঊফ ।(ঝুমু)

এক দোমে কথা গুলো বলে সামনে তাকালো ঝুমু । সে দেখলো সবাই কানে হাত দিয়ে চোখ বুঝে আছে । ডান পাসে মাথা ঘুড়িয়ে নিদ্রর দিকে তাকালো ঝুমু । নিদ্র স্থির চোখে তাকিয়ে আছে ঝুমুর দিকে । ঝুমু তাড়াতাড়ি নিদ্রর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো । সে বুঝতে পারলো । আবারো সে বেশি পটর পটর করে ফেলেছে । নিদ্র হাত বাড়িয়ে জানালা লাগিয়ে নিলো । সাধারণ জানালার জন্য এতো কথা বললো এই মেয়ে । নিদ্র দ্বিতীয় বার আর এই মেয়ের এতো বড় বক্তব্য শুনতে চায় না । চোখ দু’টো বুঝে বেগ’টা জরিয়ে ধরে বসে রইলো নিদ্র । কিছুখন পর ট্রেন হন বাজিয়ে ছুটলো তার গন্তব্যে । নিদ্র চুপচাপ বসে রইলো । সামনের সিটের তিননো জন একে অপরের গায়ে পড়ে ঘুমিয়ে গেল । হঠাৎ নিদ্র তার কাধে করো মাথার স্পর্শ পেলো । মাথা’টা ভাড়ি হয়ে নিদ্রর কাঠে চাপলো । ট্রেনের লাইট গুলো অফ হয়ে গেছে । নিদ্র বুঝতে পারলো তার পাসে বসা মেয়ে’টা তার কাধে মাথা রেখেছে । মেয়ে’টা ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে । নিদ্র তার কাধ থেকে ঝুমুর মাথা সরিয়ে । ঝুমুর বাম পাসে বসা ছেলে’টার কাধে দিয়ে দিলো । এরপর নিদ্র ঠিক হয়ে বসে চোখ বুঝে নিলো । কিছু সময় পড় সে ঘুমিয়ে গেল ।

———————————————–

সকাল ৬টা বাজে……………..
কপালে কারো ছোঁয়া পেয়ে পিট পিট করে চোখ খুললো তৃপ্তি । সালমাকে দেখে তৃপ্তি চমকালো । সালমা তৃপ্তির মুখের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে । তৃপ্তি তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো । সালমা মেয়েকে নিজের কাছে টেনে এনে বুকের সাথে চেপে জরিয়ে ধরে মৃদুস্বরে হেসে উঠে বললেন ।

:+খুব বড় হয়ে গেছে দেখছি । একা একা এতোদুরে কেও আসে । পথে যদি কোনো বিপদ হতো । আমার তো শুনেই ভয়ে গা রিরি করে উঠেছিল ।(সালমা)

তৃপ্তি সালমাকে জরিয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বললো ।

:+তোমাদের চমকে দেওয়ার জন্য আসলাম । আমাকে দেখে চমকাওনি তুমি আম্মু ।(তৃপ্তি)

:+চমকাই নামে । তোর আব্বু যখন বললো তোর কথা । আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না । কিন্তু তোর রুমে এসে যখন তোরে শুয়ে থাকতে দেখলাম । তখন নিজের চোখকে যেন বিশ্বস হচ্ছিল না । আমার মেয়ে’টা এতো বড় হয়ে গেছে আমি ভাবতেও পারছি না । কোথাও গেলে যেই মেয়ে আমার হাত ছাড়তো না । আর আজ আমার সেই মেয়ে ঢাকা থেকে এতো দুর গাড়ি ড্রাইভ করে আসছে । আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ।(সালমা)

সালমার কথা শুনে, তৃপ্তি হাসলো । এরপর তৃপ্তি সালমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে বললো ।

:+আমি এখন আর কাওকে ভয় পাই না আম্মু । আমার অনেক সাহস হয়ে গেছে ।(তৃপ্তি)

সালমা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো ।

:+তা তো দেখতেই পারছি ।(সালমা)

:+আমি আর ঢাকা যাবো না আম্মু । ঢাকা আমার ভালো লাগে না । এতোদিন তোমাদের ছেরে থাকতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে । আমি এখন থেকে এখানে থাকবো । ঢাকা আর যাবো না ।(তৃপ্তি)

তৃপ্তির কথা শুনে, সালমা চমকালো । মেয়ে তো নিজে ইচ্ছে ঢাকা গিয়েছে । আর ওখানে খুব খুশি ছিল । তিনি নিজে চোখে দেখে আসছেন । কিন্তু এখন কি হলো । সালমা একটু সময় ভেবে বলে উঠলেন ।

:+নীলার তো বিয়ে হয়ে গেছে । এখন আর দুষ্টুমি করতে পারো না । তাই ভালো লাগছে না । ঠিক আছে তোর আর ঢাকা যাওয়ার দরকার নেই । আমারও তোকে ছারা ভালো লাগছিল না । সারাখন টেনশনে থাকি তোকে নিয়ে ।(সালমা)

:+ঊফ আম্মু খিদে পেয়েছে । কাল রাতে কিছু খাওয়া হয়নি ।(তৃপ্তি)

:+আরে আমি তো ভুলেই গেছি । তোর আব্বু বলেছিল কাল রাতে তুই কিছু খাসনি । আমি নিচে যাচ্ছি । তুই ফ্রেশ হয়ে আয় ।(সালমা)

:+আচ্ছা ।(তৃপ্তি)

সালমা দুরুত পায়ে তৃপ্তির রুম থেকে বেরিয়ে গেল । মেয়ে তার অনেক দিন পড় বাড়িতে আসছে । মেয়েকে ভালো মন্দ কিছু খাওয়াতে হবে । ওখানে কি খেয়েছে না খেয়েছে কে যানে । তৃপ্তি সালমার যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো । এরপর বাম হাত দিয়ে চোখের কোনে আসা পানি মুছে বেড থেকে নেমে ওয়াসরুমে চলে গেল । ফ্রেশ হয়ে তৃপ্তি রুমে এসে দেখলো, তার পিচ্চি ছোট ভাই তার বেডের উপর বসে আছে । তৃপ্তিকে ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে সজিব দৌড়ে তৃপ্তিকে গিয়ে জরিয়ে ধরলো । তৃপ্তিও ভাইকে জরিয়ে ধরে কোলে তুলে নিলো ।

:+কেমন আছো আপু ।(সজিব)

তৃপ্তি সজিবের কপালে চুমু খেয়ে বললো ।

:+আমি ভালো আছি । তুই কেমন আছিস ।(তৃপ্তি)

:+আমিও ভালো আছি ।(সজিব)

দুই ভাই বোন পটর পটর করতে করতে নিচ তলায় নামছে । তৃপ্তি সজিবকে কোলে নিয়েই দুষ্টুমি কররতে করতে নামছে । সজিব খিলখিল করে হাসছে তৃপ্তির কথা শুনে । তৃপ্তিও সজিবের কথা শুনে হাসছে । ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো তৃপ্তি আর সজিব । বজলুর নিজ রুমে এখনো ঘুমচ্ছে । ভোড়ে নামাজ পড়তে উঠে ছিলেন তিনি । তখনিই সালমাকে সব বলেন । সালমা তৃপ্তির অসময়ের আগমনে থমকায় । মেয়েকে দেখতে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন । ভোর থেকেই তৃপ্তির রুমে ছিল সালমা । একটুও বের হয়নি । সমস্থ কাজ ফেলে মেয়ের পাসে বসে ছিল এতোটা সময় ।

ট্রেন থেকে নেমে দারালো নিদ্র । এরপর স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল । অনেক টেবিলেই দুই একজন করে বসা । সকালের নাস্তা সারছে সবাই । কোনার একটা টেবিল খালি দেখলো নিদ্র । দেরি না করে সেখানে গিয়ে বসলো । এমন সময় এক বেচ লোক ঢুকলো রেস্টুরেন্টে । নিদ্র সেদিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো । এই ঝুমু নামের মেয়ে’টাকে একদম সহ্য হচ্ছে না । কাল রাতে তো জ্বালিয়েছে । তার উপর সকালে চিৎকার চেচামেচি করে ট্রেনের বগি মাথায় তুলেছে । নিদ্রর ভাবনার মাঝেই সেই বেচের কিছু ছেলে এসে বসলো নিদ্রর টেবিলে । নিদ্র কিছু বললো না । সে যা অডার করে ছিল । সেগুলো খেতে লাগলো । সৈকত নামের ছেলেটা নিদ্রকে দেখেই বলে উঠলো ।

:+আরে ব্রো আপনি ।(সৈকত)

সৈকতের কথা শুনে, নিদ্র তাকালো সৈকতের দিকে । সৈকত আবার বলে উঠলো ।

:+এখানে কি কোনো কাজে আসছেন ব্রো । না মানে,,, ট্রেন থেকে নেমে তো সবাই বাড়িতে যায় । আর আপনি রেস্টুরেন্টে তাই এমনি জিজ্ঞেস করলাম ।(সৈকত)

:+কিছু দিনের জন্য ঘুরতে আসছি ।(নিদ্র)

:+মানে বুজলাম না । আপনি এর আগে আর আসেন-নি চট্রগ্রামে ।(হাবিব)

নিদ্রর কথা শুনে, সৈকতের পাসে বসা হাবিব বললো । নিদ্র হাবিবের দিকে তাকিয়ে বললো ।

:+না এটাই আমার ফাস্ট ঢাকা থেকে কোথাও ঘুড়তে আসা ।(নিদ্র)

নিদ্রর কথা শুনে, সবাই একে অপরের মুখ দেখা দেখি করলো । নিদ্রর পাসে বসা অপূর্ব ছেলে’টা নিদ্রকে সোজা অফার দিয়ে বসলো ।

:+ব্রো আপনি যেহেতু একা । আর আমাদেরও একজনকে দরকার । সেহেতু আপনি আমাদের সাথে চলুন । সবাই এক সাথে ঘুড়া ফেরা করবো, আনন্দ করবো ।(অপূর্ব)

অপূর্বর কথা শুনে, নিদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না । নিদ্র নিজ খাওয়ায় মন দিল । পাস থেকে সবাই নিদ্রর উওরের অপেক্ষা করতে লাগলো । নিদ্র কিছু সময় নিজের মধ্যে ভেবে বললো ।

:+কতো দিন তোমরা চট্রগ্রামে থাকবে ।(নিদ্র)

:+তা ঠিক যানা নেই । মানে এই এক বছর আমাদের কোনো ছুটি নেই । এখন চট্রগ্রামে আসছি । এরপর চলে যাবো কুমিল্লা রাঙগা মাটি । এরপর বান্দর বন । এরকম করে এখন থেকে ওখানে ওখান থেকে আরেক খানে । এভাবেই পুরো বছর কেটে যাবে । আমাদের সাথের একজন আসেনি । মানে ও নতুন বিয়ে করেছে তো তাই । আপনি যদি কিছু সময়ের জন্য আমাদের সাথে থাকতেন তাহলে ভালো হতো । ভয় পাবেন না । আপনার এক টাকাও লাগবে না । যা যাবে সব কোম্পানি থেকে যাবে । আর আপনি যদি চান তাহলে আপনাকে বেতনও নিয়ে দিতে পারবো ।(অপূর্ব)

অপূর্বের বক্তব্য শুনে নিদ্র ভাবনার মাঝে পড়লো । তবে ভালোই হলো । একা একা ঘোড়ার চেয়ে বেচ নিয়ে ঘোড়া ভালো । নিদ্র রাজি হয়ে গেল । তবে পাসের টেবিলে বসে থেকে ঝুমু সবই শুনছিল । নিদ্রকে বেচের মধ্যে নেওয়ায় রাগ হলো ওর । তবে অপূর্বের কথার উপরে কিছু বলতে পারবে না । কারন অপূর্ব হলো গ্রুপের বেচ লিডার । রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিদ্র এই গ্রুপের সাথেই রওনা দিলো । রেস্টুরেন্টে খাওয়ার টাকা নিদ্রর দিতে হয়নি । গ্রুপ থেকেই দিয়েছে । একটা সিএনজিতে নিদ্র, সৈকত, অপূর্ব, হাবিব,আরো দুইজন ছেলে উঠলো । সিএনজিতে উঠার পর নিদ্র মূলত এখানে কেন এলো সব শুনতে লাগলো সিএনজির সবাই । নিদ্র উপায় না পেয়ে সব বলতে লাগলো । আর এটাও বললো, এই কথা গুলো যেন এই পাঁচ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে । ওরাও মেনে নিলো ।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

[।কপি করা নিষেধ।]

[।বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here