#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-০৯,১০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
৯
২ দিন পর আরু আজ কলেজে এসেছে।এই ২ দিন নিজের মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছে আয়ানকে ছাড়া ও থাকতে পারবে না।আরু জানে আয়ান ওকে ভালো বাসে কোনো কারণ আছে যার জন্য আয়ান এমন করছে।আরু ঠিক করলো আয়ানকে ও বুঝাবে।আয়ান যদি রাজি না হয় তাহলে পায়ে পরে হলেও ওকে রাজি করাবে কিন্তু তাও ও আয়ানকে ছাড়া থাকতে পারবে না।এসব ভেবে রেখেছে।আরু রেডি হয়ে নিচে নামলো।নিচে নেমে দেখলো ওর বাবা আর ভাই টেবিলে বসে আছে।ওর বাবা অফিসে যাবে আর ভাই মনে হয় আজ ভার্সিটি যাবে তাই নরমাল ড্রেসআপে।আরু টেবিলে এসে খেতে বসলো।আরু ওর ভাইয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অনিমের চুল টেনে দিলো।অনিম রাগী চোখে তাকাতেই আরু একটা হাসি দিয়ে বসে পরলো।আরুর বাবা আরুকে বললো,
আশরাফ আহমেদঃ আরু লেখাপড়া ঠিকঠাক চলছে তো?ভালো রেজাল্ট আশা করা যায়?
আরুঃ হ্যা বাবা একদম ঠিকঠাক চলছে আর ইনশাআল্লাহ ভালো রেজাল্ট আসবে😊।
আশরাফ আহমেদঃ যাক তাহলেই ভালো।
ওরা আর কেউ কথা বললো না চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো।আরুর বাবা চলে গেলো অফিসে।যাওয়ার আগে আরুকে বলে গেলো গাড়ি নিয়ে যাতে।এটা শুনে আরুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু বাবাকে কিছু বলতে পারলো না।আরু আর অনিম এক বের হলো।অনিম বাইক স্টার্ট দিতে দেখে আরুর মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো।আরু অনিমের কাছে যেয়ে বললো,
আরুঃ ভাইয়া ভালো আছো?
অনিমঃ কী লাগবে বল।আসার সময় নিয়ে আসবো।
আরু মনে মনে ভাবলো ধরে ফেললো নাকী।আরু বললো,
আরুঃ এভাবে বলছো কেনো।আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে পারি না?
অনিমঃ হুম পারিস যখন কোনো কিছুর প্রয়োজন।বা কোনো কাজ বাবা মা করতে বারন করে তখন।এবার ব্যাপার কী।
আরুঃ বুঝে যখন পেলেছো তাহলে আর কী😁।মেইন কথায় আসি।আমি গাড়ি দিয়ে কলেজ যাবো না🙁।
অনিমঃ এক থাপ্পড় মারবো। দু দিন আগে জ্বর থেকে উঠেছিস এমন অনিয়ম করে এখন সুস্থ হয়ে আবার শুরু করেছিস।আর বাবা তে বলে দিয়েছে।
আরুঃ প্লিজ ভাইয়া🥺
অনিমঃ নো মিনস নো।
আরুঃ আচ্ছা আসার সময় তো রোদ বেশি থাকবে তখন আমি ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলবো আমাকে নিয়ে আসতে এখন গাড়ি ছাড়া যাই প্লিজ।….আচ্ছা তুমি বাইক দিয়ে তনু দের বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসো আমি ওর বাসা থেকে ওর সাথে চলে যাবল।প্লিজ।।।
অনিম কিছু ভেবে বললো,
অনিমঃ চল তাহলে।
আরু খুশি খুশি মনে অনিমের বাইকে উঠে পরলো।উদ্দেশ্য তনুদের বাসা।যদিও তনুর বাসা ৫/৫ মিনিট।অনিম ভাবলো ৩/৪ দিন হলো তনুকে দেখে না।আজ যদি আরুর সাথে যায় তাহলে হয়তো একটু চোখের দেখা দেখবে।…কবে যে ওকে নিজের করে পাবে এটা ভেবেই অনিম এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো।এসব ভাবতে ভাবতে ওরা তনুদের বাসার সামনে এসে পড়লো।আরু বাইক থেকে নেমে তনুর বাসার কলিং বেল বাজাচ্ছে।ও তো তনুকে বলে এসেছে রেডি থাকতে এখনো বের হচ্ছে না কেনো।তনুকে আসতে দেখে আরু রাস্তার দিকে তাকালো ও ভেবেছিলো অনিম চলে গেছে কিন্তু না এখনো দাড়িয়ে আছো।অনিমকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরু গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আরুঃ ভাইয়া এখনো যাও নি🤨
অনিম আমতা আমতা করে বললো,
অনিমঃ আব…আসলে দেখলাম তুই দাড়িয়ে আছিস তনু এখনো আসছে না।তনু যতোক্ষন না আসে ভাবলাম এখানে দাড়িয়ে থাকি যদি তোর কিছু লাগে।
ওদের কথার মাঝে তনু এসে হাজির হয়েছে।তনুও অনিমকে দেখে অবাক হয়েছিল আবার খুশিও হয়েছিলো আজ ৩/৪ দিন পর দেখলো।ওদের কাছে আসতেই ওদের কথাও কিছুটা শুনলো।তখনই অনিমের ফোন বেজে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে দেখে জুহি নামে একটা কল এসেছে।তনুও আড়চোখে জুহি নাম দেখে ওইদিন রাতের কথা মনে পরে গেলো।তখনই চোখের কোনায় পানি এসে জমা হলো।অনিমকে ওপাশ থেকে কী বললো শুনা গেলো না কিন্তু অনিম বললো,
অনিমঃ আচ্ছা আমি যাই তোরা সাবধানে যাস।
একবার তনুর দিকে তাকিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো।তনু অনিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আরুর ডাকে হুস ফিরে এলো অন্য দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছে আরুর দিকে তাকিয়ে বললো,
তনুঃ হুম চল।
ওরা কলেজের দিকে রওনা দিলো।রাস্তায় আসতে আসতে তনু খেয়াল করলো আরু আজ একটু খুশি খুশি লাগছে।তনু একবার জিজ্ঞেস করবে ভেবেছিলো কিন্তু পরে ভাবলো হয়তো সব ভুলার চেষ্টা করছে।নতুন ভাবে বাচবে বলে কিন্তু মন থেকে কী সরাতে পারবে?তাই তনু ভাবলো এই কথা মনে করে ওর মন খারাপ করতে চায় না।হাসিখুশি আছে থাক।ওরা কলেজে আসার কিছুক্ষন পর মারু আসলো।আরুকে দেখে মরুকে বললো,
মারুঃ জানু কেমন আছিস?জানিস তোকে কতো মিস করেছি এইকদিন।
আরুঃ আমিও তোদের মিস করেছি।কতোদিন হলো আগের মতো দুষ্টামি করতে পারি না।
মারুঃ হুম।কিন্তু আজ সব হবে।চিল হবে আজ।
তনুঃ শুধু চিল হইবে কাউয়া হইবো না😁
মারুঃ চিল,কাউয়া,বগ সব হবে তাই না আরু জান😅।
আরুঃ হুম সব হবে।চল আগে ক্লাস করি।
ওরা ক্লাসে চলে গেলো।সবগুলো ক্লস ঠিকঠাক মতো করে ওরা বের হলো।এখন যাবে কলেজের পাশে একটা কফিশপে।কফিশপের সাথেই একটা মাঠের মতো আছে ওইখানে যাবে ওরা।কলেজ থেকে ২/৩ মিনিট হেঁটেই যাবে ওরা।আরুরা কলেজ থেকে বের হতেই একজন আড়ালে লুকিয়ে পরলো।আরুকে একনজর দেখতে এখানে এসে দাড়ানো তাও আবার লুকিয়ে।সেই ব্যাক্তি আরুকে দেখছে আর চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে যেনো কতো বছর দেখেনি।আরুকে দেখছে আর ভাবছে দুদিনের অসুস্থতায় কী হাল করেছে চেহারার।আরু হটাৎ পিছনে তাকালো মনে হলে ওকে কেউ দেখছে।আরুকে তাকাতে দেখে সেই ব্যাক্তি একটু সরে দাড়ালো।আরুর মনে হলো আয়ান ওর আশেপাশে আছে তাই চারদিক দেখছে।(জী ব্যাক্তিটি আয়ানই)।কিন্তু না কেউ নেই তাই মনের ভুল ভেবে এগিয়ে গেলো।
আরুদের ওইদিকে যেতে দেখে আয়ান ভ্রু কুচকে ভাবতে লাগলো ওই দিকে কেনো যাচ্ছে।আয়ানও ওদের পিছন পিছন গেলো একটু দূরত্ব রেখে।আয়ান ফলো করতে করতে দেখলো ওরা কফিশপের মাঠের দিকে যাচ্ছে।আরুরা ওখানে গিয়ে আশেপাশে কেউ নেই এমন একটা জায়গা দেখে বসে পরলো।ওরা গিয়ে বার্গার আর কোলড্রিংস অর্ডার করলো।আর কিছু বিষয় নিয়ে হসতে লাগলো।আরুর ভাবনা মতে আর একটু পর আয়ানের ভার্সিটির পাশে একটা জায়গা আছে ওইখানক গেলে আয়ানকে ফ্রি পাবে কিন্তু ছুটি হওয়ার এই সময়টা কী করবে তাই এখানে আসা।কিন্তু আরুর ভাবনার বাহিরে যে আয়ানের জন্য ওখানে যাবে সেই আয়ানি ওর কাছে।আয়ান ওদের হাসি মজা দেখে বুঝলো ওরা আড্ডা দিতে এখানে এসেছে।আয়ানও দূরে দাড়িয়ে আরুর হাসি মুখটা দেখছে।কতোদিন পর আজ এই হাসি দেখলো।যেই হাসি ওর হৃদয় শান্ত করতে যথেষ্ট।প্রায় অনেকক্ষন পর আয়ানের একটা কল আসে ওর ভার্সিটি থেকে।আয়ান কল রিসিভ করে কিন্তু নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে কথা ঠিকমতো বুঝা যাচ্ছে না।তাই আয়ান অন্য সাইডে চলে গেলো।এদিকে,আরুরা খাচ্ছে আর আড্ডা দিচ্ছে।ওদের আড্ডার মাঝে সোহান এলো ওদের কাছে।সোহানকে দেখে ওদের হাসি মুখে নেমে এলো একরাশ বিরক্ত।মরুতো মনে মনে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে।সোহান এসে ওদের কাছে বসে বললো,
সোহানঃ হাই তোমরা এখানে?
মারুঃ আমরা না আমাদের ভূত এসেছে 😬
সোহানঃ ওমা তাই নাকি?আমার ঘাড় মটেকে দিবে নাকী?আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি।(ভয় পাওয়ার অভিনয় করে)
মারু বিড়বিড় করে বললো,’ঘাড় না মটকালেও অন্য কিছু ঠিকই মটকে দিতে পারবো।শালা বেয়াদব’।মারুর কথা শুনে তনু পাশ থেকে দম পাটা হাসি আসছে কি হাসতে পারছে না।
সোহানঃ তুমি কিছু বললে?
মারুঃ না আপনাকে কিছু বলি নি।
সোহানঃ ওহ।তো তোমরা এখানে।
আরুঃ এমনি ভালো লাহছিলো তাই এখানে এসে একটু আড্ডা দিতে আসলাম
সোহানঃ তা আমাকে তোমাদের আড্ডায় নেওয়া যায়।
আরু কিছু বলবে তার আগে মারু বললো,
মারুঃ না নেওয়া যায় না। কারণ এখানে আমরা ৩ জন মেয়ে আপনি একটা ছেলে থাকলে সবাই হাসাহাসি করবে।মানুষ বলবে,৩ টা মেয়ের সাথে ১ টা ছেলে।না বাবা আমি মানুষের হাসির পাএি হতে চাই না।বুঝেছে ভাইয়া।হে হে।
সোহানকে মারু যে ইনডিরেক্টলি অপমান করলো তা সোহান বুজলো কী না বুঝা গেলো না।সোহান বললো,
সোহানঃ আরে দূর মানুষ কিছু বলবে না।আর এখন এগুলো চলে।
সোহান ওদের সাথে কথা বলতে লাগলো।ওরা না চাওয়া সও্বেও সোহানের সাথে কথা বলছে।ওদের এতো সুন্দর আড্ডা এভাবে নষ্ট হবে ভাবতে পারে নি।প্রায় ৫ মিনিট পর আরু ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে ওর সময় হয়ে গেছে।তাই ও উঠতে উঠতে মারু আর তনুকে বললো,
আারুঃ চল আমাদের যেতে হবে।
সোহানঃ এখনই চলে যাবে।আরেকটু থাকো।
আরুঃ না আর সম্ভব না বাসায় টেনশন করবে।
এই বলে আরু এক পা বাড়াতেই পায়ে পা বেজে পরে যেতে নিলে সোহান ওকে ধরে ফেলে।আরুকে পরে যেতে দেখে মারু আর তনু ঘাবড়ে যায় কারণ আরু যদি পরতো তাহলে আরুর মাথাটা একটা ইটের উপর পরতো।কিন্তু আরু পরার আগেই সোহান ওকে ধরে ফেলে।আরুও ইটটা দেখেছিলো তাই ও ভয়ে সোহানের শার্টের কলার আঁকড়ে ধরে।সেহানও ওর কেমড় জড়িয়ে ধরে আছে।আরু ভয়ে এখনো কাপছে।এদিকে,আয়ানের ভার্সিটিতে আয়ানদের এক গ্রুপ অন্য আরেকটা গ্রুপ।ওই গ্রুপের ২/৩ টা ছেলে নাকী আয়ানদের গ্রুপের একটা ছেলেকে মেরেছে।তা শুনে আয়ানের মাথা গরম।ওকে এখনই যেতে হবে।আয়ান ‘আসছি’ বলে কল কেটে এদিকে ফিরবে তখনই আরু ‘আয়য়’ বলে চিৎকারে আয়ান এপাশে এসে দেখে সোহান আরুকে জড়িয়ে ধরে আছে আর আরু সোহানের কলার।এটা দেখে আয়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো।পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে।হাত মুঠো করে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে ওই দিকে।আরুকে অন্য একটা ছেলের এতো কাছে দেখে ওর শরীরে যেনো আগুন ধরে যাচ্ছে।এমনিতেই মাথা গরম ছিলো।তারউপর এই কাজ।সোহান পানি এনে আরুকে যত্ন সহকারে খাইয়ে দিচ্ছে।মারু আর তনুও পাশে বসে ওকে ভয় না পাওয়ার শান্তনা দিচ্ছে।আয়ানের কল আসছে একনাগাড়ে।তাই আয়ান রেগে ওখান থেকে চলে আসলো।ওকে এখন যে দেখবে সে ভয় পাবে।আয়ান ভার্সিটি এসে ওই গ্রুপের ছেলে গুলোকে এমন ভাবে মারছে আজ মেরেই ফেলবে ওদের।ওদের মেরে আধমরা করার পর আয়ানের এক বন্ধু তুষার এসে ওকে সড়িয়ে নিয়ে আসলো।ওই ছেলে গুলোকে ওখান থেকে নিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্তা করছে।রাফসান এখানে নেই।ও অন্য কাজে একটা জায়গায় আছে।তুষার ওকে শান্ত হতে বলছে।কিন্তু আয়ানের চোখে বারবার আরুর আর সোহানের জড়িয়ে ধরা ভেসে উঠছে।এদিকে,আরু একটু শান্ত হতেই তনু ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।আরু আসতে চায় নি কারণ ওর আয়ানের কাছে যাওয়ার ছিলো কিন্তু যেতে পারছে না।….দুজন দুদিকে তাদের মনের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে।আয়ান আজ যা দেখলো তা কী ওদের জীবনে আবার কোনো ঝড় আসবে??…আয়ান যদি একবার এই ঘটনার সত্যিটা জানতো তাহলে হয়তো ওদের জীবনে ঝড় আসার চাঞ্চ থাকতো না।দেখা যাক সামনে কী আছে ওদের জীবনে।
আর এদিকে আরু কলেজ থেকে বের হওয়া শুরু করে এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে এমনকী আয়ান কী কী করেছে সব দেখলো একজন।সেই লোকটি এাব দেখে কাউকে কল করে বললো,
লোকঃম্যাডাম………………………………………
ওপাশ থেকেঃ ওকে তুমি সব সময় নজর রাখো।……… আর সন্ধ্যায় এসো একটা কাজ আছে।
লোকঃ ওকে মেম।
কল কাটার ওর ওপাশ থেকে হাসতে হাসতে বললো,এখনতো শুরু আরো অনেক আছে।অপেক্ষা শুধু।আয়ান-আরিশা।বলেই আবার হাসতে লাগলো।
রাতে….
চলবে….
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-১০
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
রাত ১০ টা আয়ানরা আড্ডা দিচ্ছে।আয়ান দুপুরের কারণে এখনো আরুর উপর একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করছে।আয়ানের একবার ইচ্ছে করছে আরুকে জাস্ট খুন করে ফেলতে আবার ইচ্ছে করছে সোহানকে খুন করতে ওর সাহস হয় কী করে ‘আমার আরুকে’ এভাবে টাচ করার।কালকেই আরুর সামনা সামনি হবে।আজকের বিষয় নিয়ে আরুর সাথে কথা বলতে হবে আরুরও সাহস হয় কীভাবে অন্য ছেলের উপর এভাবে ঢলে পরা।এর জবাব ওকে দিতেই হবে।আয়ানের এসব ভাবনা রাফসানের কোথায় ব্যাঘাত ঘটে।রাফসান কাঁধে হাত রেখে বলে,
রাফসানঃকি রে কি ভাবছিস
আয়ানঃ হু না তেমন কিছু না।
রাফসানঃ আমার তো মনে হচ্ছে তুই কোন বিষয় নিয়ে টেনশনে আছিস।
আয়ানঃ আরে দূর!কিছু হয় নি।
তারপর ওরা আড্ডায় মন দিলো।
এদিকে আরু ভাবছে,আজকে কী ভেবে বাসা থেকে বের হল আর কি হলো।না এভাবে থাকলে হবে না আমাকে চেষ্টা করতে হবে আমি যে আয়নকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কিন্তু ও যদি আমাকে ফিরিয়ে দেয় তখন।….ফিরিয়ে দিলে দিবে তাও আমি হাল ছাড়বো না।আমি যে ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না।আমি যে আয়ানকে #হারাতে_চাই_না।আরু এসব ভাবছে।
এদিকে আয়ানদের আড্ডা শেষ হতেই ও বাসায় আসে।মাথাটা ধরেছে।কতো কিছু হলো আজ।মারামারি,আরুর উপর ক্ষোভ এসব কথা আয়ানের মাথায় আজ সারাদিন ঘুরপাক খাচ্ছে।আয়ান বসায় এসে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ড্রেসিং টেবিলে আরুর দেওয়া শোপিসটা চোখে পরলো।শোপিসাটার ভিতরে একটা ছেলে একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।আরু এই শোপিসটা আয়ানকে দিয়ে বলেছিলো,’যখন আমার কথা মনে পরবে তখন এটার দিকে তাকাবে আর ভাববে ছেলেটা তুমি আর মেয়েটা আমি।এটা কিন্তু কোনো দিন নিজের থেকে দূরে সরাবে না ভবিষ্যতে আমি তোমার পাশে থাকি বা না থাকি এটা তোমার কাছে সবসময় রাখবে আমার কথা তোমায় মনে পরাবে।তখন আয়ান বলছিলো,কোথায় যাবে তুমি?আমি তোমাকে কোথাও যেতে দিবো না।আরু বলেছিলো,যদি আমি মরে যাই?আয়ান চোখ গরম করে তাকাতেই আরু বললো,আচ্ছা দূরে কোথাও চলে যাই তখন বা মনে করো আমার পরিবার তোমাকে বা তোমার পরিবার আমাকে মেনে না নিলো তখন তো আমাদের আলাদা হতে হবে তাই না?আয়ান তখন কিছু না বলে শুধু আরুকে স্বান্তনা দিয়ে বলেছিলো,এমন কিছু হবে না।সব ঠিকঠাক হবে।বি পজিটিভ।আর তাছাড়া আমার বাবুদের মাম্মা হতে হবে না তোমাকে।(দুষ্টু হেসে)আরুও লজ্জা পেয়ে বলেছিলো,যাহ অসভ্য’।আয়ান আরুর এসব কথা ভাবছে আর মুচকি হাসছে।..আবার কিছু মনে করতেই আরুর একটা ছবির দিকে তাকিয়ে আয়ান একা একা বললো,
আয়ানঃ কেনো আরু?কেনো এমন করো তুমি বারবার।১ বছর আগে যা করেছো তা আমি তোমার ভুল ভেবে ক্ষমা করে দিয়েছি।কারণ তুমি তখন ছোট ছিলে আমি জানি তুমি তখন ভয় পেয়ে এমন করেছিলে কিন্তু এখন,,এখন তো তুমি ছোট নেই তাহলে কী করে এমনটা ভাবলে?আমার মনে কী তেমার জন্য একটুও জায়গা নেই?এতো বছরে কী একটুও ভালোবাসতে পারো নি আমাকে?আমি তো তেমাকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি।তোমার করা ভুলটাও ক্ষমা করে দিয়েছি।
আয়ান এসব ভাবছে তখনই আয়ানের ফোনে একটা কল এলো।আননোন নাম্বার দেখে কপাল কুচকে এলো।ভাবতে লাগলো এটা কার হতে পারে।ঘরির দিকে তাকালো রাত ১১.৪৫ এতো রাতে কার এতো কথা থাকতে পারে আয়ানের সাথে।এসব ভাবতে ভাবতেই কল কেটে গেলো।আার এলো সেই একই নাম্বার।আয়ান কিছুক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে হটাৎ মনে হলো এমন রাতে কয়েকদিন আগেও কল এসেছিলো তখনই বলেছিলো আরু নাকী আবার……………না আয়ান ভাবতে পারলো না তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো।
আয়ানঃ হ্যালো
ওপাশঃ কেমন আছো আয়ান।
আয়ানঃ কে আপনি?বার বার আমাকে কেনো কল করছেন
ওপাশঃ এতো অস্থির হচ্ছো কেন।আর আমি কে?ওইদিনই তো বললাম আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী।
আয়ানঃ সোজা কথায় আসুন।কেন বারবার বিরক্ত করছেন? কী চান আপনি?
ওপাশঃ(হাসতে হাসতে) আমি কী চাই? হা হা!আমি চাই ধংস।তোমার আর আরুর বিচ্ছেদ।আমি আরুকে চাই আর তোমাকে চায়….হা হা।
আয়ানঃ আমাকে চায় মানে?কী বলতে চাইছেন?
ওপাশঃ মানেটা খুব সোজা।কিন্তু এখন তোমাকে আমি বোঝাতে পারবো না।নিজ ইচ্ছায় বুঝে নাও।আর তুমি আরুকে এখনো পুরো পুরি ছারতে পারো নি।এখনো ওর পিছনে পরে আছো।ওইদিন কী বলছিলাম মনে আছে নাকী মনে করিয়ে দিতে হবে।
আয়ানঃ আপনি আরুর কোনো ক্ষতি করবেন না।আপনার সমস্যা আমার সাথে তো? আমি ওর সাথে আর কোনে যোগাযোগ বা দেখা করার চেষ্টা করবো না।তবুও ওকে কিছু করবেন না।
ওপাশঃ বাবা!!রোমিও তো দেখি এখনো জুলিয়েটের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।(উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো)
আয়ান খেয়াল করলো কন্ঠটা পুরুষের হলেও পাশ থেকে একটা মেয়ের ও হাসির শব্দ আসছে।ওপাশ থেকে আবার বললো,
ওপাশঃ তা জুলিয়েট এতো কিছু করলো তাও ওর প্রতি এতো প্রেম।ওইদিন বলছিলাম না ও তোমাকে ১ বছর আগের সেই যন্ত্রণা আবার ফিরিয়ে দিবে।তবুও ওর পিছনে পরে আছো।আচ্ছা কাহিনী কী বলো তো ও কী ভালো সার্ভিস দেয়?অবশ্য দিতেই পারে ১৮ বছরের কিশোরী মাএ।এখন তো ওর পুরো শরীর জুড়েই হট।ইসস!কবে যে আরুর শরীরের আগুনে আমি জ্বলবো আর আমার জ্বালা মিটাবো আর অপেক্ষা করতে পারছি না জানো আয়ান।উম..আচ্ছা এক কাজ করো তুমি আরুকে ছেড়ে দাও আমি ওর থেকেও আরো বেশি হট কাউকে পাঠাবো।কী এবার ছাড়বে তো ওকে।
বলেই আবারও হাসতে লাগলো।যেনো মনে হলো ওদের সামনে কেউ হাসির কথা বলেছে।আর আয়ান ওই লোকটার আরুকে নিয়ে এসব কথা বলায় আয়ানের মাথায় রক্ত উঠে গেছে।চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে।আয়ান হাতের কাছল ফ্লাওয়ার ভাসটা ছুড়ে মেরে দাতে দাত চেপে বললো,
আয়ানঃ ইউ বার্স্টাড।শাট ইউর মাউথ।আই উইল কিল ইউ।আর একটা বাজে কথা না।তোর সাহস কী করে হয় আমার আরুকে এসব বলার।তোর বাপের ভাগ্য ভালো তুই এখন আমার সামনে নেই।
ওপাশ থেকে আয়ানের কথায় রেগে গিয়েছিল কিন্তু নিজের রাগকে দমন করে আয়ানকে আরো রাগিয়ে দিতে ওপাশ থেকে বললো,
ওপাশঃ মুখ সামলে আয়ান।আর কার জন্য এতো বাড়াবাড়ি করছো।তোমার আরুর জন্য।হা হা আচ্ছা ও যদি তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে ওইদিনের ঘটনার পর একবারও তোমার কাছে এসেছিলো তোমাদের সম্পর্কে ঠিক করতে।আসেনি তো।ওই ঘটনার এক সপ্তাহ না যেতে আরু আজ এতো খুশি ছিলো কেনো যেখানে ওর মন খারাপ করে বসায় বসে থাকার কথা ছিলো।আজ তো আবার একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেও দাড়িয়ে ছিলো।তাহলে ওর ভালোবাসা কোথায় তোমার প্রতি।ওর জন্য তুমি আবার লড়াই করছো।হা হা।
কথা গুলো বলেই কল কেটে দিলো।ওপাশের লোকের আগের কথাগুলোতে যতো রাগ আয়ান করেছিলো পরের কথা গুলোয় একদম দমে গেলো।আয়ান ভাবলো সত্যিই তো আরু তো এখন পর্যন্ত এমন কিছু করলো না।তাহলে কী এই লোকটার কথা সত্যি।না আয়ান আর ভাবতে পারছে না।হাতের ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিলো।হাতে একটা সিগারেট নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলো।এখন এটাই পারবে ওকে শান্ত করতে।
ওইদিকে,
লোকটা কল কেটে দিয়ে পাশের মেয়েটাকে বললো,
লোকঃ বুঝলি ছুটকি ডোজটা মনে হয় ভলো ভাবেই পরেছে।এবার এই ডোজের এফেক্ট খুব তাড়াতাড়ি পরবে ওদের ওপর।
মেয়েঃ যাই করো না কেন ভাই আমার কিন্তু আয়ানকে যে কোনো মূল্যে চাই।ওই আরু আমার পথের কাটা ওকে উপরে ফেলো।যে করেই হোক।ওকে যে করেই হোক তোমার বেডে আনো।ওকে সড়ালেই আমার রাস্তা ক্লিয়ার।
লোকঃ হয়ে যাবে।এবার গিয়ে শুয়ে পড়।অনেক রাত হয়েছে।
মেয়েটি চলে গেলো।এবার লোকটি আরুর একটা ছবি বের করে ছবির দিকে তাকিয়ে বললো,
লোকঃ তোমাকে যে আমর পেতেই হবে জান।আমি যা চাই তা পাই না পেলে ছিনিয়ে আনি তবুও আমার করে ছাড়ি।কতো মেয়ের সাথে এই পর্যন্ত আমার বেডে আসলো কিন্তু কারো উপর আমার চোখ মন কোনটাই পড়ে নি কিন্তু তোমাকে একবার দেখে আমি সব হারিয়ে ফেলেছি।তোমাকে তো আমি আমার বেডে একবার হলেও চাই।আমার একরাতের বিছানার সঙ্গী তোমাকে হতেই হবে।
বলেই উচ্চ স্বরে হাসতে থাকলো আর ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিতে থাকলো।
এদিকল আয়ান বেলকনির ফ্লোরে বসে অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে পানি পরছে আর সিগারেট টানছে।মনে চলছে ওর ঝড়।কেনো আরু এরকম করলো ওর সাথে কী শান্তি পায় ও।আয়ান এসব ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে।একসময় মাথার যন্ত্রণায়,সারাদিনের ক্লান্তিতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পরলো।ঘুমানোর পরও ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
পরদিন সকালে আরু ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে চলে গেলো কিছু দিন পর ওদের টেস্ট পরীক্ষা।এখন একদম কলেজ বন্ধ করা যাবে না।আরু,তনু,আর মারু কলেজে এসে টুকটাক কথা বলে ক্লাসে চলে গেলো।
সকাল ১০.৩০
আয়ানের চোখে মুখে তীব্র আলো পড়তো চোখ কুচকে আসে কিছুক্ষন পর পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে বেলকনির ফ্লোরে ঘুমিয়ে ছিলো কিন্তু এখানে কী করে এলো।…..কিছুক্ষন ভাবার পর কাল রাতের কথা মনে পরলো।মনে পরতেই রাগ,ক্ষোভে,কষ্টে চোখ গুলো লাল হয়ে আসে।আয়ান উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে।আয়ানের মা আয়ানকে দেখে বলে,
আফিয়া রহমানঃ আয়ান কী হয়েছে তোর?
তোর চোখ এতো লাল কেনো আর চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আয়ানঃ কিছু হয়নি মা।রাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।তুমি ব্রেকফাস্ট দাও তাড়াতাড়ি।
আফিয়া রাহমানঃ কিন্তু……..
আয়ান বসা থেকে উঠে চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বলে,
আয়ানঃ তোমার ব্রেকফাস্ট দিতে হলে দাও না হলে আমি চলে যাচ্ছি এতো প্রশ্নের উওর দিতে পারবে না।
আফিয়া রাহমান ছেলের জীদের কাছে হার মেনে চুপ হয়ে গেলেন।চুপচাপ আয়ানকে খেতে দিয়ে চলে গেলেন।যেতে যেতে ভাবলেন,এই ছেলের এতো জেদ কার কাছ থেকে পেয়েছে।।পরে ভাবলো,ওহহ আমার শশুরের তো এমন জেদ ছিলো।আল্লাহ এই ছেলের জীদ,একরোখা কথা বার্তা,চলাফেরা এসব থেকে ওকে বের করো আনো।।
আয়ান নাস্তা করে বাসা থেকে বের হয়ে যায় ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।ওর মন এখনো অশান্ত হয়ে আছে।এখনো মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।
দুপুর….
চলবে….।