#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২০
#Lamyea_Chowdhury
বিপাশা নক্ষত্রকে ক্যাম্পাসেই খুঁজে পেল। হাত নেড়ে হাই বলল। নক্ষত্র গলা চড়িয়ে বলল, “কিরে বিপু দুই দিন কই ছিলি?”
বিপাশা কাছে এগিয়ে এসে বলল, “তোর রুমাল আছে? থাকলে বিছিয়ে দে, তোর পাশে বসব।”
নক্ষত্র ভেঙচি কেটে বলল, “আসছে আমার ঘষেটি বেগম। শখ দেখলে গা জ্বলে।”
বিপাশা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “দুদিন পর আমার বিয়ে হয়ে যাবে। এরপর বাতি দিয়ে খুঁজেও তো আমায় পাবি না।”
নক্ষত্র বিপাশার হাত ধরে টেনে নক্ষত্রের পাশে বসিয়ে বলল, “বিয়ে হলে তখন আরো ভালো। তোর জামাই আমাদের পাশে ময়লা, কর্দমাক্ত জায়গায় বসবে। তারপর তুই শুদ্ধতার প্রতীক তোর জামাইর কোলে বসে আমাদের সাথে আড্ডা দিবি।”
বিপাশার হাতে একটা ম্যাগাজিন ছিল। সে ম্যাগাজিন দিয়ে নক্ষত্রকে মারতে মারতে বলল, “তুই এত বড় বিটলা! বিটলামি কেউ তোর থেকে শিখুক।”
নক্ষত্র দুদিকে হাত প্রসারিত করে বলল, “দে দে এই বুক ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দে। আঘাতের পর আঘাত হান! বিপাশা দি ঘষেটি অফ দ্যা জাহান।”
বিপাশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “একদম চুপ।”
নক্ষত্র ভালো ছেলের মতন চুপ হয়ে গেল। তারপর উৎসুক হয়ে বলল, “তারপর বল দুইদিন কোন যুবকের বুকের গহীনে লুকিয়েছিলি?”
বিপাশা হাসবে না হাসবে না করেও হেসে ফেললো। বলল, “নানাবাড়ি গিয়েছিলাম। ছোট খালামণির ননদের ছেলের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। ছেলের সাথে সরাসরি কথা বলতে গিয়েছিলাম।”
নক্ষত্র হৈ হৈ করে উঠল। তাদের পাশ দিয়ে তাদের ডিপার্টমেন্টেরর জুনিয়র দুটো মেয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। নক্ষত্র হাতের ইশারায় তাদের কাছে আসতে বলল। মেয়ে দুটো আড়ষ্ট ভঙ্গিতে হেঁটে এলো। তাদের হাঁটা দেখেই বুঝা গেল মেয়ে দুটো প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থী। সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আসসালামু আলাইকুম আপু।”
বিপাশা সালামের জবাব দিলো। নক্ষত্র সালামের জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না। সে কৌতুক করে বলল, “তোমরা কি জানো আগামী কয়েকদিনেরর মাঝেই আমার পাশের সুন্দরী রমণীটি একজন অসহায় পুরুষের গলা ফাঁস হতে যাচ্ছে?”
মেয়ে দুটো কি বলবে ভেবে পেল না। বিপাশা নক্ষত্রের কান টেনে বলল, “সেই বলদের জন্য তোর এত দরদ কেন?”
নক্ষত্র কপট রাগ দেখিয়ে বলল, “জুনিয়রদের সামনে আমাকে এত বড় অপমান!তোর কান দুটো’ই আজ কেটে ফেলব। তারপর কান দুটো র্যাপিং করে তোর বিয়েতে তোর বরকে দিয়ে দাওয়াত খেয়ে আসব।”
জুনিয়র মেয়ে দুটো অসহায়ের মতন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হাসি পাচ্ছে কিন্তু হেসে ফেললে বেয়াদবি হয়ে যাবে। তখন কপালে শনি লাগবে। মস্ত বড় বিপদ নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বিনম্র ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েই রইলো দুজন।বিপাশা হাতের ইশারায় তাদের চলে যেতে বলল। মেয়ে দুটো দ্রুত গতিতে প্রস্হান করল। নক্ষত্র ইচ্ছে করে গলা চড়িয়ে মেয়ে দুটোকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল, “এই ঘষেটির বলদ ইঁদুর কপালে। তার গারোয়ান বড়ই নিষ্ঠুর। তোমরা কিন্তু ভবিষতে ভালো গারোয়ান হবে। নিজেদের বলদগুলোকে বেশি কষ্ট দিবে না।”
মেয়েগুলো অনেক কষ্ট করেও হাসি চেপে রাখতে পারলো না। ফিক করে হেসে দিলো। বিপাশা এবার নক্ষত্রের চুল টেনে দিলো। নক্ষত্র হায় হায় করে যতটুকু না ব্যথা পেল তারচেয়ে বেশি নাটক করলো। বিপাশা নক্ষত্রের সেই পাতানো নাটকে পাত্তা না দিয়ে মিটমিট করে হেসে বলল, “তোর গারোয়ানকে আজ দেখে এলাম।”
নক্ষত্র হকচকিয়ে গেল। বিপাশা চোখ পিটপিট করে বলল, “ইয়েস বলদ!”
নক্ষত্র চোখ কপালে তুলে বলল, “মানে কি?”
বিপাশা নক্ষত্রের এলোমেলো চুলগুলো হাত বাড়িয়ে আরো বেশি এলোমেলো করে দিয়ে বলল, “শায়েরীর সাথে দেখা হয়েছিল।”
নক্ষত্র ঘাবড়ে গিয়ে তোতলাতে শুরু করলো। “তো..তো কি হয়েছে? সে গারোয়ান হতে যাবে কেন? উল্টাপাল্টা বকবি না।”
বিপাশা মুখ টিপে হেসে বলল, “সে যদি গারোয়ান না হয় তাহলে কি তোর বোন হয়?”
তারপর সুর দিয়ে গান গাইবার চেষ্টা করলো।
“আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে
ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত্তুর ধুত শানাই বাজিয়ে
যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে….”
নক্ষত্র চোখ মুখ কুঁচকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর প্যান্টের ধুলাবালি ঝাড়তে ঝাড়তে বলল, “তোর বেসুরা গলার গান শুনে আমার কান দুটোর বারোটা বাজাতে চাই না। আমার কাজ আছে। প্রহরকে কলেজ থেকে আনতে যেতে হবে।”
বিপাশা ঠোঁট কামড়ে হেসে বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ সবই বুঝি। পালাতে চাচ্ছিস তো পালা। তবে আগে বলে যা তোর গারোয়ানের গানের গলা কেমন?”
নক্ষত্র বিপাশার কথায় কান না দিয়ে সোজা পথে হাঁটা শুরু করল। এখন এখানে দাঁড়ালেই ঝামেলা।
চলবে…