#__ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ০৯+১০

0
362

#__ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ০৯+১০
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
এভাবে কেউ কিস এর কথা জিজ্ঞেস করে নাকি যে কয়টা কিস দিয়েছে?
কোথায় কিস দিয়েছে?
না জানি কখন এটা জিজ্ঞেস করে বসে যে কিভাবে কিস করেছে?
`
পরিবেশটা খুব নীরব হয়ে আছে। পার্কে এই সময় তেমন কোন মানুষ নেই। একটু দূরে দূরে কয়েক জোরা কবুতর দেখা যাচ্ছে। একটা ফ্রেন্ডস গ্রুপও দেখা যাচ্ছে। চারদিকে গাছ আর গাছ। আর সেসব গাছে ফুটেছে রকমারি ফুল। বাহারি ফুলের গন্ধে পরিবেশটা খুব বেশি মোহময় লাগছে।
বর্ণালী এখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেনো ও খুব বড় অপরাধি। পাশে যে দুজন দাঁড়িয়ে আছে তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জারি করবে। আর সামনের বালকটি সেই জারি শুনে রায় জানাবে। ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠছে ওর। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যেতে। কিন্তু যেতে পারছে না। হালকা বাতাসে মাথার উপর থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের কিছু ফুল এসে সবার উপর ঝরে পড়লো। সেদিকে ওর কোন মাথা ব্যাথা নেই৷ কেননা মাথা ব্যাথা দেয়ার জন্য পাশের মানুষগুলোই যথেষ্ট। বর্ণালী একবার আড়চোখে রুমুর দিকে তাকালো কেমন গম্ভীরমুখে চেয়ে আছে ওর দিকে। হুট করেই রুমু হোহো করে হেসে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে। পাশ থেকে ঈশাও হাসছে ওর এমন অবস্থা দেখে। আর বেচারা ইভান সে তো বোনের সামনে লজ্জায় মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে আর ঠোঁট বাকা করে মুচকি মুচকি হাসছে।
ভাবছে যে এই মেয়েটা এতো বোকা কেন?
ও কি কখনোই কিস যে করেছিলো সে কথা বলতো নাকি!
পাগলী মেয়ে ভয় পেয়ে সব বলে দিয়েছে। ও তো ভেবেছিলো জাস্ট একটু মজা নেবে ভয় দেখাবে ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে। রুমু হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। আসলেই বর্ণালী অনেক বেশি সৎ। কখনো মিথ্যা বলতেই পারেনা। আর কিছু লুকালেও সেটা চাপা রাখতে পারেনা। ওর কাছ থেকে তো অবশ্যই পারেনা। একমাত্র রুমুই ওর সব ছোট বড় সিক্রেট জানে৷ বর্ণালী এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। রুমুকে উদ্দেশ্য করেই বললো,
-“এভাবে হাসছিস কেন?”
-“ওরে পাগলী সোনা আমার এতোটাও ভালো হওয়া ভালো না।”
বর্ণালী ব্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছে ও ভালোর কি করলো এখানে?
-“চল রুমু প্লিজ যাই। ঈশা চল।”
-“হ্যাঁ চল যাই।” (ঈশা)
-“আচ্ছা চল। ইভু পরে দেখা হবে।”(রুমু)
তিনজন যেতেই ছিলো তখনি বর্ণালী থেমে গিয়ে ইভানকে বললো,
-“ওয়েট এ মিনিট তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।”
-“হ্যাঁ বলো না আমি সারাজীবন তোমাকে শুনতে পারবো।”
ইভান ভাবছে এই মনে হয় আল্লাহ ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়েছেন। বর্ণালী ওর প্রেমকে গ্রহন করতে যাচ্ছে। ও খুব এক্সাইটেড হয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ করেই খেয়াল করলো বর্ণালীর চুলের মাঝে কৃষ্ণচূড়া ফুল লেগে আছে। ইভান একটু এগিয়ে এসে বর্ণালীর চুলের মাঝে হাত দিয়ে ফুলগুলো ছুটাতে লেগে যায়। এভাবে ইভানের এতোটা কাছে আসা যেনো বর্ণালী নিতে পারছেনা। ওর হার্টবিট যেনো হাজার কিলোমিটারে দৌড়াচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করছে। কেমন অস্বস্থি অনুভূতি হচ্ছে।
এই অনুভূতি কেন ইভান কাছে আসলেই হয়?
অন্য কারো বেলায় তো ওর এমন অনুভূতি হয়না!
ইভান ফুলগুলো চুলের উপর থেকে ফেলে একটুখানি সরে এসে বললো,
-“বলেন বসন্তপথিকের বাসন্তী।”
-“না মানে আসলে….”
-“হ্যাঁ বলো?”
-“এক মিনিট।”
বর্ণালী ওর ব্যাগ থেকে নথের বক্সটা বের করে ইভানের সামনে এগিয়ে ধরলো। এমন কিছু দেখবে ইভান ভাবতেই পারেনি। ওর চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে।
-“এসব কি বর্ণালী?”
-“আমি এই জিনিসটা রাখতে পারবো না।”
ঈশা বর্ণালীর এমন কান্ডে ভয় পেয়ে গেছে।
কেন এমন কাজ করছে বর্ণালী?
ঈশা একবার বর্ণালীর দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার ইভানের দিকে। ও খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ইভান রেগে গেছে। আর ইভান রেগে গেলে যে একরকম পাগলামো শুরু করে দেয়। রেগে গেলে ইভান যা মাথায় আসে তাই করে। সামনে কি আছে না আছে কিছুই বুঝে না। ভাংচুর শুরু করে দেয়। একবার তো মায়ের সাথে রেগে ব্যাট দিয়ে ঘরের ফ্রিজ, টিভি, কাচের টেবিল, শোকেস, এয়ারকন্ডিশনসহ আরো অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস ভেঙে ফেলেছিলো। নিজের ল্যাপটপ আর মোবাইল কতবার ভেঙেছে তার কোন হিসেব নেই।
ইভানের চোখ লাল হয়ে গেছে। রাগ চরম মাত্রায় উঠে গেছে ওর। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে বললো,
-“রুমু তোমরা কি একটু ওইদিকে যাবে প্লিজ?
আমি ওর সাথে একটু একা কথা বলতাম।”
-“না ওরা কেন যাবে? ওরা যাবে না।”
রুমু আর ঈশা কোন কিছু না বলেই ওদের থেকে একটু দূরে যেতে লাগলো।
-“ওই তোরা কোথায় যাচ্ছিস?
তোরা কোথাও যাবি না।”
কথাটা বলেই বর্ণালী রুমু আর ঈশার হাত ধরে ফেলে। ইভান এবার প্রচন্ড রেগে গিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,
-“বলেছি না তোমরা ওইদিকে যাবে?
কথা কানে যায় না?”
বর্ণালীর ভয়ে কেঁপে উঠে ওদের হাত ছেড়ে দেয়। রুমু আর ঈশা ওদের থেকে খানিকটা দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্ণালী ভয়ে বক্স হাতে রেখেই চেপে ধরে আছে। ইভানের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। তৎক্ষনাৎ ও চোখ নামিয়ে নেয়। ইভান চোখ বন্ধ করে দু’হাত উপর নিচে নেড়ে নিজেকে নিজেই বলছে,
-“Ufff…. Cool Ivan just cool.”
তারপর খুব শান্ত গলায় বললো,
-“হুম তো জানতে পারি কি কেন রাখতে পারবে না?কেন ফিরিয়ে দিচ্ছ আমার দেয়া উপহার?”
-“আমি কারো কাছ থেকে কোন কিছু নেই না।”
ইভান দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কথা বলছে।
-“আমিও কি তোমার কাছে যে কারো মতো?”
-“তুমি আমার কাছে এমন স্পেশাল কেউ নও। আমার উপর তোমার বা তোমার উপর আমার কোন অধিকার নেই। তাছাড়া এতো এক্সপেন্সিভ গিফটের যোগ্য আমি নই। আমি নিতেও পারবো না। তাই প্লিজ এটা ফিরিয়ে নাও।”
-“কি সব বাজে কথা বলছো হু?
তুমি জানো এই নোজ পিনটাও তোমার যোগ্য নয়। তুমি আরো বেটার কিছু ডিজার্ভ করো।
আর তুমি কিনা বলছো তুমি এটার যোগ্য নও? নিজেকে এভাবে ছোট করে দেখার সাহস কোত্থেকে পাও?”
-“যাই বলো আমি এসব নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না। আই এম সরি আমি এটা নিতে পারবো না।”
-“কেন নিতে পারবে না ড্যাম ইট।”
কথাটা বলেই ইভান হাত মুঠি বেধে গাছের মাঝে ঘুষি মেরে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। ইভান বর্ণালীর দুই কাঁধে হাত দিয়ে ধরে খুব কাছে নিয়ে আসে। ইভানের নিশ্বাস এসে ওর মুখে ছড়িয়ে পড়ছে। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। ওর ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। হৃদস্পন্দন খুব দ্রুত চলছে। এমন অনুভূতি থেকে বাঁচার জন্য ও চোখ বন্ধ করে নিলো। ইভান ওকে ঝাকিয়ে বলে,
-“তাকাও আমার দিকে বর্ণালী।”
ঈভান খুব নরম গলায় কথাটা বললো। বর্ণালী সাথে সাথে চোখ খুলে ওর দিকে তাকায়। এক পলক ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আর তাকাতে পারেনা। ওই চোখের দিকে তাকালে যে সে ঘায়েল হয়ে যাবে এটা নিশ্চিত। নিজেকে সামলে রাখতে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে নিলো।
-“প্লিজ বর্ণালী এমন কেন করছো?
কি দোষ করেছি আমি?
আমি সত্যিই তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।”
ইভানের কন্ঠস্বর অন্যরকম শুনাচ্ছে। ওর কন্ঠে অনেক বেশি আবেগ মিশে আছে। এভাবে কখনোই কথা বলেনি ইভান। বর্ণালী একটু চোখ তুলে তাকাতেই দেখে ইভানের চোখে জল টলমল করছে। ব্রু কুচকে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। এদিকে ইভান এভাবে ওর কাঁধ চেপে ধরায় অনেক ব্যাথা পাচ্ছে। আশেপাশে তেমন কোন লোক নেই তবুও যে কয়জন আছে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
-“কি ক….করছো কি? চা….ছাড়ো পি….প্লিজ। সবাই দেখছে।”
-“দেখুক আই ডোন্ট কেয়ার।”
বর্ণালী চোখ খিচে বন্ধ করে বলে,
-“আ…..আমি ব্যাথা পা….পাচ্ছি ইভান।”
-“আর আমার ব্যাথাটা তোমার চোখে পড়ছে না? আমাকে কি তোমার এতোটাই খারাপ মনে হয় বর্ণালী? আমার মতো কি তোমাকে কেউ ভালোবাসবে বলে মনে হয়?”
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে ইভান ওকে ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। বর্ণালীর দিকে হাত তুলে আঙুল ঝাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে যায়।
-“প্লিজ রাগ করো না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। আর এটাও নিতে পারবো না। প্লিজ এটা ফেরত নিয়ে নাও আর আমার সাথে কোন যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না তাহলে তোমার আমার দুজনের জন্যই ভালো হবে।”
ইভান আবারো রেগে বর্ণালীর কাছে এগিয়ে আসে। তার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। চেচিয়ে উঠলো,
-“তুমি আমার ভালো চাও হে?
সত্যি ভালো চাও নাকি অন্য কিছু?
কেন বুঝতে পারছোনা যে আমার ভালো তোমাতেই।”
-“জা….জানিনা আমি। কিন্তু আমার আর তোমার মাঝে কোন কিছু কখনোই সম্ভব না।”
ইভান রেগে হাতে রাখা ওর চশমাটা চেপে ধরে ভেঙে ফেলে। ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। দূর থেকে ঈশা আর রুমু খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে ওদের মাঝে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। কিন্তু ওদেরও কিছু করার নেই৷ রুমু ইভানের বড় হলেও ইভানের রাগকে ও ভয় পায়। কখনো তো মনে হয় ইভান ওর বড় ভাই আর ও ইভানের ছোট বোন।
ইভানের বর্ণালীকে কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ওর ফোন বেজে উঠে। ইভান রক্তমাখা হাত থেকে ভাঙা মুচড়ানো চশমাটা ফেলে মোবাইল হাতে নেয়।
বর্ণালী সেদিকে খেয়াল না করে ইভানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আমি যেতে চাচ্ছি প্লিজ তোমার জিনিসটা তুমি নিয়ে নাও। আর তোমার মনের মতো কাউকে এটা গিফট করো।”
-“What the hell are you talking?”
এই কথাটা বলেই ইভান ঠাস করে মাটির মাঝে মোবাইল ছুড়ে মারে। বর্ণালী ভয়ে কেঁপে দু’কদম পিছিয়ে যায়। ওর পুরো শরীর থরথর কাঁপছে।
মোবাইলটা মাটিতে পড়ে না ভাঙলেও সবকিছু খোলে ছড়িয়ে যায়। ঈশা আর রুমু এসব দেখে দৌড়ে আসে ওদের কাছে। ঈশা তো ভয় পেয়েই আছে এখন রুমুও ভয় পেয়ে যায়। তবুও রুমু কাঁপা গলায় বলে,
-“ক…..কি হয়েছে ইভান?
এ…..এভাবে রেগে আছো কেন?”
ইভান রুমুর সাথে কোন কথাই বললো না। ওর চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“ডোন্ট ডো দ্যাট বর্ণালী প্লিজ ডোন্ট। আই রিয়েলি লাভ ইউ। তুমি আমার জীবনের সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে গিয়েছো। আমি তোমাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতে পারবো ঠিকই কিন্তু সেই নিশ্বাসটা দূষিত নিশ্বাস হবে যা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে।”
বর্ণালী চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এই মুহুর্তে কি বলবে ও কিছুই বুঝতে পারছেনা।
আসলেই কি ইভান ওকে এতোটা ভালোবাসে?
কিন্তু কেন এতো ভালোবাসে?
কি আছে ওর মাঝে? কিছুই তো নেই।
যতই ভালোবাসুক না কেন বর্ণালী কখনোই ইভানকে ভালোবাসতে পারবেনা এটা সম্ভব না ওর পক্ষে। এর পেছনের কারণ গুলোও অনেক বড়। একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললো,
-“আমি পারবো না। রুমু আমি গেলাম তুই উনার জিনিসটা উনাকে ফিরিয়ে দিস। চল ঈশা।”
কথাটা বলেই বর্ণালী বক্সটা রুমুর দিকে এগিয়ে দিতে গেলেই ইভান ওর হাত থেকে বক্সটা কেড়ে নেয়। বর্ণালী, ঈশা আর রুমু এখন খেয়াল করে ওর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
-“ইভান তোর হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে?”
এখন আর ঈশা নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। টেনশনে ভাইয়ের হাত ধরতে এগিয়ে যেতে নিলেই ইভান মাথা নেড়ে না সূচক ইশারা করে। ঈশার চোখে পানি এসে গেছে ভাইয়ের এতো কষ্ট দেখে। কিন্তু কিছুই করতে পারছে না ও। এর মাঝেই রুমু বলে উঠে,
-“ইভান চলো প্লিজ আগে তোমার ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।”
-“আমার কিচ্ছু হবে না আই এম ওকে ডোন্ট ওরি।”
এই ছেলেটা এমন কেন?
বর্ণালীর চোখেও জল।
কিন্তু কেন?
তা সে এখনো জানেনা।
আমার কি ইভানের জন্য কষ্ট হচ্ছে নাকি?
না না এমন কেন হবে?
আমি তো ইভানকে ভালোই বাসিনা।
কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
বর্ণালী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
-“প্লিজ ইভান ডাক্তারের কাছে চলো। তোমার হাত….”
ইভান ওর পুরো কথা শেষ না হতেই থামিয়ে দিয়ে বললো,
-“আমার জন্য ভেবো না বর্ণালী। আর এটা নিবে না তো না? ঠিক আছে। তুমি না নিলে এটাতে অন্য কারো অধিকার নেই।”
ইভান বক্স থেকে নথটা বের করে একবার চোখ বুলালো। নথটায় আলতো করে চুমু দিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে নথের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুই কারো যোগ্য হয়ে উঠতে পারলি না। আর যার যোগ্য ছিলি সে তোকে গ্রহণ করলো না। তাই তোকে অন্য কারো ভাগে দিতে পারলাম না রে।”
খুব জোরে বক্স ও নথ মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার আপন গতিতে। আজ ইভান কেন জানি তার চোখের জলকে থামাতে পারছে না।
💛
#______চলবে……….

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১০
💛
-“তুই কারো যোগ্য হয়ে উঠতে পারলি না। আর যার যোগ্য ছিলি সে তোকে গ্রহণ করলো না। তাই তোকে অন্য কারো ভাগে দিতে পারলাম না রে।”
খুব জোরে বক্স ও নথ মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিলো। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তার আপন গতিতে। আজ ইভান কেন জানি তার চোখের জলকে থামাতে পারছে না। ইভান আর এক মুহুর্তের জন্যও সেখানে দাঁড়ালো না। হনহনিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। পরিবেশটা যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। কারো মুখে কোন একটা শব্দও নেই। মাঝে মাঝে কয়েকটা পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যাচ্ছে। পাখিদের তো আর এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা দিব্যি তাদের মনের মতো করে গান গেয়েই যাচ্ছে।
বর্ণালী ইভানের যাওয়ার পথে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।
-“যে যাওয়ার সেতো চলেই গেছে এখন আর ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন?”
নীরবতা ভেঙে রুমু কথাটি বলে বর্ণালীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ও চোখ তুলে একবার রুমুর দিকে আরেকবার ঈশার দিকে তাকালো। চোখে জল টলমল করছে।
-“তোর চোখে জল কেন বর্ণ?”
-“ক….কই? চ….চোখে কি….কিছু প….পড়েছে হয়তো।”
-“আচ্ছা? তোর কাছ থেকে আমি এটা কখনোই আশা করিনি। আজ তোকে কেমন যেনো অচেনা লাগছে রে। এতো বছরেও মনে হচ্ছে আমি তোকে ঠিক চিনতে পারলাম না। তুই সেই আগের বর্ণ না। যে কিনা মানুষকে পালটে একটা কটু কথা বলে না সে আজ একটা মানুষের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।”
-“রুমু তুই আমায় ভুল বুঝতেছিস। তুই তো সব জানিস। যে বুকে কষ্ট জমে পাহাড় হয়ে গেছে সে বুকে আমি আর নতুন কোন কষ্ট বয়ে বেড়াতে পারবো নারে।”
-“আচ্ছা? কষ্ট তুই নিজে কিনেছিলে কেউ তোকে যেচে দেয় নি বর্ণ। ধ্যাৎ আমি কার সাথে কি বলি? তুই তো একটা মরা গাছ যার গোড়ায় হাজার বছর পানি ঢাললেও জীবিত হবেনা।”
বর্ণালী রুমুর এমন কথার কোন জবাব দিতে পারবে না কেননা ও যাই বলছে সব সত্যি বলছে। ও তো নিজেই কষ্টগুলোকে দাওয়াত করে এনেছিলো। কাকেই বা দোষ দেবে?
রুমু ঈশার ফোন নাম্বার নিয়ে বললো,
-“বান্ধবী হিসেবে একটা ভালো পরামর্শ দিতে চাচ্ছি। জীবন নিজের হাতে নষ্ট করা যায় আবার সুন্দর করে সাজানোও যায়। সাজাবি না নষ্ট করবি এখন এটা সম্পূর্ণ তোর হাতে। কেউ ভরসার হাত বাড়িয়ে দিলে সেই হাত ধরে এগিয়ে যেতে হয়। সব ভরসায় ছলনা থাকেনা। আর ইভানকে দেখে এটুকু ভরসা আমার প্রথম দিনেই হয়েছে। বাকিটা তোর উপর আমার কথা একটাবার ভেবে দেখিস।”
বর্ণালী এখনো নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ঈশাও নিশ্চুপ। ওদের কোন কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছেনা বেচারি।
বর্ণালীর কি এমন কষ্ট যার জন্য ও প্রেমের পথে এগুতে চায় না? আমাকে এই সত্যি জানতে হবে।
-“শুন ঈশা আমি গেলাম। আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই রুমু সামনের দিকে হাটা ধরলো। কি ভেবে যেনো আবারো ফিরে এসে বর্ণালীর ব্যাগ নিয়ে কিছু একটা ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে চুপচাপ চলে গেলো। বর্ণালীর চোখের জলের মাত্রা যেনো আরো বেড়ে গেলো। এই কান্নার কোন শব্দ কেউ শুনতে পাচ্ছে না। শুধু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে হাজারো অশ্রুজল। বর্ণালীর চোখ, মুখ ও কান লাল হয়ে গেছে। ঈশা এসে বর্ণালীর দু’হাত ধরলো।
-“কি হয়েছে বর্ণালী? এমন কি হয়েছে যা তোর মনকে বেঁধে রেখেছে? এমন কি হয়েছে যার জন্য তুই ইভানের হাত ধরতে পারছিস না?”
বর্ণালী ঈশার দিকে তাকিয়ে এবার শব্দ করেই কেঁদে দিলো। ঈশাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে মেয়েটা। ঈশার ফোনে টুং করে আওয়াজ হতেই ও ফোন বের করে দেখলো একটা আননউন নাম্বার থেকে মেসেজ৷
-“বর্ণালী হয়তো এখন অনেক কাঁদছে। মেয়েটা কাউকে কিছু বলেনা নিজেই সব সহ্য করে। নিজেকেই কষ্ট দেয়। তুই প্লিজ ওর একটু খেয়াল রাখিস। ওকে খেয়াল করে বাসায় পৌঁছে দিস। *রুমু*”
ঈশা মোবাইল রেখে বর্ণালীকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ আর বর্ণালী ইশার কাঁধ ভিজিয়ে দিচ্ছে চোখের জলে। ঈশা কিছুই বললো না। মেয়েটা একটু কেঁদে নিক। কেঁদে নিজেকে শান্ত করুক।
খানিক সময় পরে বর্ণালী ইশাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
-“আ…..আই এম স…..সস…সরি ঈ….ঈশা।”
কথা বলতে পারছে না কথার মাঝে মাঝে নাক টেনে হেচকি তুলছে। হেচকি তোলার সাথে সাথে বর্ণালীর পুরো শরীর নড়ে উঠছে। ঈশা ব্যাগ থেকে দিকে একটা পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-“নে পানি খা।”
বর্ণালী গটগট করে অর্ধেক বোতল পানি খেয়া নিলো। তারপর কিছুটা শান্ত হলো।
-“আমাকে সরি কেন?”
-“আসলে তোর ড্রেস খারাপ করে দিয়েছি কেঁদে।”
-“ড্রেস একটা খারাপ হলে আরেকটা আসবে। কোন সমস্যা নেই। চল এখন বাড়ি যাই। আর তোর তো ক্ষুধাও পেয়েছে।”
বর্ণালী শুধু মাথা নাড়লো।
`
এখানে তেমন একটা অটো রিকশা পাওয়া যায় না। পা রিকশা করেই যেতে হয়। পা রিকশাটা কুইং-কুং আওয়াজ করে চলছে। শব্দটা শুনতে খারাপ লাগছে না। বর্ণালী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যটা মাথার উপর থেকে খানিকটা ঢলে পড়েছে। ঘড়িতে না তাকিয়েই আন্দাজ করা যাচ্ছে যে দুপুর ২টা বাজছে হয়তো বা তার কম।
ঈশা ইভানকে কল দিতেই আছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছেনা। না জানি এই ছেলে উলটাপালটা কিছু করে বসে। খুব টেনশন হচ্ছে ওর। একবার ভাবলো মাকে কল দেবে কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলো যদি ও বাসায় না যায় তাহলে তো মা আরো টেনশন করবে তাই আর দিলো না। বাসায় গিয়েই দেখা যাবে। এসব চিন্তাই যখন ও বিভোর ছিলো তখনি বর্ণালী বললো,
-“নামিয়ে দেন।”
রিকশাওয়ালা থেমে যায়। ঈশাও নামে বর্ণালীর সাথে। চাচা আপনি একটু দাঁড়ান আমি আসছি। ঈশা বর্ণালীর দিকে এগিয়ে এসে বলালো,
-“চল আজকে তোর বাড়ি যাবো। নিবি তো নাকি নিবি না?”
-“পাগল হয়েছিস? নিবো না কেন? চল। আচ্ছা দাঁড়া রিকশাটা ছেড়ে দেই। তুই কিছুক্ষণ বসে একেবারে বিকেলে যাবি।”
-“কিন্তু দেরি হয়ে যাবে রে। মা টেনশন করবে আরেকদিন আসবো নে।”
-“আরে আন্টিকে ফোন করে বলে দে ফ্রেন্ডের বাসায় আছিস দেড়ি হবে।”
ঈশা আর কথা বাড়ালো না। বর্ণালী রিকশা ভাড়া দেয়ার আগেই ঈশা ভাড়া দিয়ে দেয়। বর্ণালী যেনো ঈশার মাঝে রুমুর ঝলক দেখতে পাচ্ছে। রুমুটা আজ অনেক রাগ করেছে। ওর রাগ যে কিভাবে ভাঙাবে সে টেনশনে এখন আর শান্তি লাগবে না। ঈশা খেয়াল করলো সামনেই একটা ছেলে রিকশা থেকে নামছে ছেলেটা বেশ স্মার্ট। কাঁধে ল্যাপটপ ব্যাগ ঝুলানো। কিন্তু অবাক করা বিষয় ও এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকেই তাকিয়ে আছে। রিকশা ভাড়া দেয়ার জন্য মানি ব্যাগ বের করছিলো। তখন বর্ণালীর দিকে দৃষ্টি থাকায় কখন যে টাকা নিচে পড়ে যায় সেদিকে খেয়ালই নেই। রিকশাওয়ালা না বললে টেরই পেতো না। ছেলেটা এভাবে কেন ওর দিকে তাকিয়ে আছে? বর্ণালীর সেদিকে চোখ পড়তেই কেমন হচকচিয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে ঈশার হাত ধরে ভেতরে চলে আসে। ঈশা বিষয়টা খুব ভালো ভাবেই খেয়াল করেছে। এই ছেলের সাথে কি বর্ণালীর কিছু আছে নাকি? কিন্তু বর্ণালীকে দেখে তো মনে হলো না যে কিছু আছে। মনে হলো যেনো ও ভয় পেয়েছে।
`
সাহারা ইসলাম সেই কখন থেকে ছেলেমেয়ের অপেক্ষা করছেন। স্বামী তো কাজের চাপে দুপুরের খাবার বাসায় খেতে পারেন না এই ছেলেমেয়েগুলাও তার মতো হয়েছে। তাদের যেনো ব্যাস্ততা আরো অনেক বেশি। ভাবতে ভাবতেই ইভানের বাইকের হর্ণ শোনা যায়। দারোয়ান দৌড়ে গেট খুলে দিলো। কোনমতে বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে ঘরের ভেতর ঢুকে ইভান। ওমনি ধপ করে বাইক পড়ে যায়। দারোয়ান অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। দেখেই মনে হচ্ছে ইভান অনেক রেগে আছে। তাইতো বাইকটাও ঠিকমতো স্ট্যান্ড তুলে পার্ক করে নি। ইভান ফ্রিজ থেকে আইস আর এক বোতল পানি নিয়ে উপরে যেতে লাগে। সাহারা ইসলাম খেয়াল করেন ইভানের হাত কাটা। ভয় পেয়ে কেঁদে দেন উনি। দৌড়ে এসে ইভানকে ধরলেন।
-“ইভু তোর হাত কাটলো কিভাবে? কি হয়েছে বাবু তোর? তুই ঠিক আছিস?”
-“মা কিছুই হয়নি। আমি ঠিক আছি। আমি উপরে যাচ্ছি আমাকে প্লিজ কেউ যেনো ডিস্টার্ব না করে।”
-“কিন্তু বাবু তোর হাত থেকে যে……”
ইভান আর এক মুহুর্তও আর সেখানে দাঁড়ালো না। মায়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই হনহনিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে ঢুকেই ঠাস করে রুম লক করে নিলো। সোফায় বসে পড়লো। রেগে লাল হয়ে আছে ইভান। অতিরিক্ত রাগে শরীর কাঁপছে ওর। সামনের টেবিলে রাখা ফুলের টব এক ঝটকায় ফ্লোরে ফেলে আ..আ..আহ বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলো।
`
বর্ণালী ঈশাকে তার মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ঈশাকে দেখে ওর মা অনেক খুশি হলেন।
-“তোমার বাসা কোথায় মা?”
-“এইতো আন্টি এখান থেকে প্রায় ২০মিনিটের রাস্তা হবে। আমরা এখানে নতুন এসেছি।”
-“ওহ বাসা ভাড়া নিয়েছো নাকি?”
-“না আন্টি আমাদের এখানে বাসা আছে।”
-“ওহ বাবা-মা কি করেন তোমার?”
-“আব্বু বিজনেস করেন। এখানে আব্বুর নতুন একটা কোম্পানি খুলছেন তাই আমাদের এখানে আসা। আর আম্মু আগে টিচার ছিলেন এখন আমাদের ঘরের মিনিস্টার।”
বলেই একগাল হেসে দিলো ঈশা সাথে সাথে শারমিন বেগমও হেসে দিলেন।
-“তোমার ভাই-বোন কয়জন?”
-“এক ভাই আছে আর এই আমি আপনার সামনে বসে আছি।”
-“মা ইন্টারভিউ শেষ হলে ওকে আমি আমার রুমে নিয়ে যেতাম।”
বর্ণালী কথাটা বলেই মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরে।
-“যাহ কি সব পাগলামি কথাবার্তা বলিস? কিসের ইন্টারভিউ আমি তো এমনিতেই ওর কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে করো না মা।
-“আরে না আন্টি এতে মনে করার কি আছে? আপনি না জিজ্ঞেস করলেও আমি বলতাম। হিহিহি।”
-“ভারী মিষ্টি মেয়েগো তুমি। আচ্ছা যাও বর্ণের সাথে যাও।”
বর্ণালী ঈশাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। বর্ণালীর রুমটা অনেক সুন্দর। খুব বেশি জিনিস নেই তবুও দেখতে ভালো লাগছে।
-“তুই বস আমি আসছি।”
-“হুম আচ্ছা যা। আমি এই ফাঁকে মাকে কল কর নেই।”
ঈশা মাকে ফোন করে যাচ্ছে একি মাও রিসিভ করছে না কেন। খুব ভেবে ল্যান্ডলাইনে কল দেয়।
-“আসসালামুয়ালাইকুম রানু হেয়ার। হুজ ইস্পিকিং?”
-“ওয়ালায়কুমআসসালাম রানীসাহেবা ইট’স মি।”
-“ওহ বুমনি হো কন আপনে কই আসেন নাই কেন এহনো?”
-“আচ্ছা সে বলছি আগে বল মা কোথায় কখন থেকে কল দিচ্ছি আর ইভান কোথায়?”
-“আম্মাজান তো অনেক্ষণ ধইরা ছোটভাইকে ডাইকা যাইতাছেন। সেই যে আইসা দরজা লাগাইসেন আর খুলতেছেন না। বার বার কইতাছেন যে উনারে নাকি ডিস্টাব না করনের লাইগা।”
-“আচ্ছা মাকে একটু ডেকে দাও।”
-“হু হোল্ড জান ডাইকা দিতাছি।”
ঈশা এই সময়েও কাঁদবে না হাসবে বুঝতেছে না। একে তো রানুর এমন ইংলিশ, আর শুদ্ধ+বেশুদ্ধ বাংলা ভাষা শুনে হাসি আসছে আবার ভাইয়ের কথা শুনে কান্না। রানুকে ও কতবার করে বলেছে এইরকম ভাষায় কথা না বলতে তবুও বলে।
-“হ্যালো কিরে ঈশু তুই কই? দেখ না ইভু সেই কখন থেকে দরজা খুলছে না।”
-“মা তুমি চিন্তা করো নাতো। ওর যখন ইচ্ছে খুলবে। আর হ্যাঁ তুমি খেয়ে নিও। আমি আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় আছি। আসতে দেরি হবে।”
-“এখানে আসতে না আসতেই কোন ফেন্ডের বাসায় চলে গেলি?”
-“আছে মা আমার অনেক প্রিয় একটা ফ্রেন্ড অনেক মায়াবী। একদিন আমাদের বাসায় নিয়ে আসবো ওকে। একবার দেখলে না তুমি বলবে প্রতিদিন যেনো নিয়ে যাই ওকে। বর্ণ অনেক সুন্দর আর অনেক বেশি ভালো আম্মু।”
-“তাই নাকি এখনি দেখার ইচ্ছে করছে তো।”
-“হাহাহা দেখবে মা খুব শিঘ্রী। আর আল্লাহর হুকুম হলে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় নিয়ে নিবো ওকে।”
-“নিয়ে নিবি মানে?”
-“না মানে নিয়ে আসবো আরকি।”
-“আচ্ছা সন্ধ্যার আগে চল আসিস।”
-“ওকে মা রাখছি।”
`
বর্ণালী রান্নাঘরে মায়ের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
-“মা কি রান্না করেছো?”
-“তুই মেহমান নিয়ে আসবি আগে বলবি না? এখন কি দিয়ে মেয়েটাকে খাওয়াই বল তো। ভালো কিছু রান্না করতাম আগে বললে। বড়লোকের মেয়ে আমাদের এসব খাবে নাকি?”
বর্ণালীর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে। আগে বললেও ভালো কিছু আসতো না সেটা সে ভালো করেই জানে। মা সে টাকাই কোথায় পাবে যে ভালো কিছু রান্না করবে। কিন্তু এখন করবেটা কি?
-“কি রান্না করেছো?”
-“এইতো ডাল, আলু ভাজি, আর ভর্তা।”
-“ফ্রিজে কিছু নেই?”
কথাটা বলেই মায়ের জবাবের অপেক্ষা না করে ফ্রিজ খুলতে গেলো বর্ণালী। ভাগ্যটা ভালোই সেদিন পুকুরে মাছ মারানো হয়েছিলো ৪টুকরো মাছ মা হিসেব করে রেখেছিলেন। বর্ণালী তা বের করে এনে ফ্রাই করে নিলো। মা এই ফাঁকে গাছ থেকে শিম এনে শুটকি দিয়ে রান্না বসিয়ে দিলেন। বর্ণালী এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত আর একটা প্লেটে কিছু চানাচুর নিয়ে গেলো ঈশার জন্য।
-“কি রে তুই তো ঘেমে একাকার হয়ে গেছিস। যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
-“হ্যাঁ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। তুই শরবত খা।”
বর্ণালী একটা কালো রঙের থ্রী পিচ নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ঈশা বিছানায় বসে একটু একটু চানাচুর খাচ্ছে আর রুমটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে।
-“কিরে স্বরবর্ণ না ব্যঞ্জনবর্ণ পানির ট্যাপ বন্ধ করবি? আমার ওয়াশরুমে পানি আসছে না।”
কথাটা বলেই সজিব বর্ণের রুমে ঢুকে। থ্রী কোয়াটার টাউজার পড়ে খালি গায়ে কাঁধের এক পাশে টাওয়েল ঝুলিয়ে রেখেছে। পায়ে একজোরা স্যান্ডেল। চুলগুলো কেমন এলোমেলো। ঈশা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ওর বুকটা কেমন কেঁপে উঠে। বুকের ধুকপুক আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ও। ফর্সা বুকের মাঝে ছোট ছোট লোমগুলো কেমন অন্যরকম একটা সুন্দর লাগছে। এর আগে ও কখনো কোন ছেলেকে খালি গায়ে দেখে নি। ইভানকে যতদিনই দেখতো খালি গায় একশটা কথা শুনিয়ে নিজেই ওকে টি শার্ট পড়িয়ে দিতো। কিন্তু আজ সজিবকে খালি গায় দেখে ওর এমন কেন হচ্ছে। হাতের চানাচুরগুলো শক্ত করে চেপে ধরে আছে। সেগুলো গুড়ো হয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সজিবের থেকে চোখ সরাতে পারছেনা। নির্লজ্জের মতো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
সজিব অনেক অবাক হয় ঈশাকে ওর বাড়িতে দেখে। এই মেয়ে এখানে কিভাবে? কিন্তু পরক্ষনেই কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। এভাবে খালি গায় একটা বাইরের মেয়ের সামনে পড়তে হলো ওকে? কিন্তু সিচুয়েশানটা নরমাল রাখার চেষ্টায় ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“আপনি এখানে?”
এতোক্ষনে ওর ঘোর কাটে। চট করে সজিবের বুক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়।
ওর হার্টবিট খুব দ্রুত বিট করছে। নিচের দিকে তাকিয়ে সামনে আসা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দেয়। কিছু চানাচুরের গুড়ো ওর গালে আর কানের কাছে লেগে যায়। সজিব ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর কাছে এই মুহুর্তে ঈশাকে একটা ছোট বাচ্চার মতো লাগছে। ইচ্ছে করছে ওগুলো মুছে দিতে কিন্তু সে তা কখনোই করবে না। সবজি না চাইতেও একটু হেসে দিলো। ঈশা এই হাসির মানে জানেনা। ও আবারো সজিবের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাসিটাও অনেক সুন্দর ছেলেটার। এর মাঝেই বর্ণালী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। বর্ণালীকে দেখে সজিব ঈশার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
-“কিরে স্বরবর্ণ বিয়ের গোসল করছিলি নাকি?”
-“ভাইয়া প্লিজ আবার এভাবে ডাকবেনা। আর আমি গোসল করতে আজকে না প্রতিদিনই সময় লাগে।”
-“হ্যাঁ প্রতিদিনই তো বিয়ের গোসল করিস তাও তোর বিয়ে হচ্ছেনা।”
-“ভাইয়া…..”
সজিব একপলক ঈশার দিকে তাকিয়ে রুম ছেড়ে চলে যায়। বর্ণালী ঈশার দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো ও দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।
-“কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
-“না মানে কই কোথাও না তো।”
-“চানাচুর তুই খেয়েছিস নাকি তোর গাল, চুল, আর কান খেয়েছে?”
-“মানে?”
বর্ণালী একটুখানি এগিয়ে রুমুর গাল, কান আর চুলে লেগে থাকা চানাচুরের গুড়োগুলো মুছে দেয়। তারপর মৃদু হেসে চুল থেকে টাওয়েল খুলে বেলকনিতে গিয়ে মেলে দেয়। আয়নার সামনে এসে চুলগুলো ঠিক করে হাতে, গলায়, পায়ে অল্প লোশন মেখে ঈশার দিকে ফিরে তাকায়। ঈশা ওকে হা হয়ে দেখছে। এই মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর তাই তো তার ভাই ওকে এভাবে ভালোবাসে। এই মুহুর্তে ইভান বর্ণালীকে দেখলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেতো। হয়তো কোন কবিতার কয়েকটা লাইন ও লিখে ফেলতো বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে।
💛
#______চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here