#__ফাগুন_প্রেম___পর্বঃ ১১+১২

0
241

#__ফাগুন_প্রেম___পর্বঃ ১১+১২
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
আয়নার সামনে এসে চুলগুলো ঠিক করে হাতে, গলায়, পায়ে অল্প লোশন মেখে ঈশার দিকে ফিরে তাকায় বর্ণলী। ঈশা ওকে হা হয়ে দেখছে। এই মেয়েটা আসলেই অনেক সুন্দর তাই তো তার ভাই ওকে এভাবে ভালোবাসে। এই মুহুর্তে ইভান বর্ণালীকে দেখলে নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যেতো। হয়তো কবিতার কয়েকটা লাইন ও লিখে ফেলতো বর্ণালীকে উদ্দেশ্য করে।
-“কিরে এভাবে কি দেখছিস?”
-“তোকে অনেক সুন্দর লাগছে তাই দেখছি।”
-“হাহাহা পাগল নাকি? তুই তো আমার থেকেও সুন্দর।”
-“হয়েছে মিথ্যে বলতে হবে না। আচ্ছা বর্ণ একটু আগে যে রুমে এসেছিলেন উনি তোর ভাই?”
-“হ্যাঁ আমার বড় ভাই সজিব। আচ্ছা এখন খেতে চল অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
ঈশা আর কথা বাড়ালো না। বর্ণালীর সাথে এসে খাবার টেবিলে বসলো। সে সময় সজিবও চলে আসে।
-“ভাইয়া, ও আমার বান্ধবী ঈশা।”
-“ওহ। হাই।” (সজিব)
-“হ্যালো।” (ঈশা)
-“কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ।”
আর কোন কথা ছাড়াই সবাই চুপচাপ খেতে লেগে যায়। ঈশা সব খাবারে একবার চোখ বুলায়। ভর্তা দেখেই ওর জিহ্বায় জল এসে যায়। চট করে আগ পিছ না দেখে ভর্তার বাটিটা নিয়ে খাওয়া শুরু করে দেয়। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে কিন্তু সজিব তো পুরাই শক। সে ভাবছে কেউ কারো বাড়িতে নতুন এসে এভাবে খায় নাকি? হুট করে ঈশা খেয়াল করলো সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছেন। হাত থেকে বাটি রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে না করলেও পারতো ও। ছিঃ কি লজ্জাটাই না পেতে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটির নিচে ঢুকে যেতে। সবাই একসাথে হোহো করে হেসে উঠলো। বর্ণালী হেসে বললো,
-“তুই ভর্তা খুব পছন্দ করিস নাকি?”
-“আসলে বাসায় মা কখনো ভর্তা বানায় না। মা এই ভর্তা বানাতে পারেনা তাই। কিন্তু আমি এটা দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা।”
-“তোমার যখনি ইচ্ছে হবে তুমি চলে এসো মা। তোমার আরেক মা তো আছে যে তোমাকে এই ভর্তা করে খাওয়াবে।”
বর্ণালীর মায়ের এমন কথায় ঈশা এক রাজ্যের হাসি দিলো। ও যেনো এই প্রস্তাবের অপেক্ষায়ই ছিলো।
-“প্রতিদিন তো আসতে পারবো না আন্টি কিন্তু আমি যখনি আসি আপনি আমাকে এটা করে খাওয়াতে হবে বলে দিলাম।”
ঈশা কথাটা বলেই দেখলো সজিব ওর দিকে না তাকিয়েই মিটিমিটি হাসছে আর আপন মনে খাচ্ছে। এই ছেলেটা এমন কেন? কোন কিছুর দিকেই ওর কোন খেয়াল নেই! আজব তো! হুহ আমার কি। শারমিন বেগম নিজের মনেই ভাবছেন উনার ছেলেমেয়ে অনেক সময় ভালো খাবার খেতে পায়না। এই শুটকি ভর্তা উনাদের প্রায় নিত্যকার খাবার। আর ওদের মতো বড়লোকের ছেলেমেয়েরা ভালো খাবার থাকা সত্তেও খেতে চায় না। তারা এমন শুটকি ভর্তা খাবার জন্য পাগল ভাবা যায়?
একটু মৃদু হাসলেন শারমিন বেগম। খুব ভালো করে খাওয়াচ্ছেন ঈশাকে। কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছেনা বর্ণালীর। বারবার ইভানের মায়াবী আকুতিভরা চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে আসছে।
ওর সাথে কেন এমন হতে হলো?
ইভান তো অন্য কাউকেও ভালোবাসতে পারতো।
কেন এলো ইভান ওর জীবনে?
কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না ঠিকই কিন্তু ওর মনটা ছটফট করছে একবার জানার জন্য ইভান ওর হাতের ব্যান্ডেজ করেছে কিনা। অনেক রক্ত পড়ছিলো ওর হাত থেকে। একদিকে ইভানকে কষ্ট দিয়েছে আরেক দিকে রুমুকে।নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। বর্ণালীর চোখের কোনে জল টইটুম্বুর করছে। কেউ দেখার আগেই আঙুল দিয়ে পানি ঝেড়ে ফেলে দেয়। নাহ ওর খাওয়া আজ হবেনা। গলায় খাবার আটকে যাচ্ছে। অনেক্ষণ প্লেটে নাড়াচাড়া করে পানি ঢেলে দেয়। সবটাই ঈশা খুব ভালো করে খেয়াল করলো। কিন্তু কিছু বললো না।
`
ঈশা একা একা হেটে হেটে পুরো ঘর ঘুরে দেখছে। একটা রুমের সামনে আসতেই ওর পা থমকে যায়। হার্ট দ্রুত বিট করছে। কোন কিছু না ভেবেই রুমের ভেতর চলে গেলো। রুমটা খুব একটা গোছালো না আবার অগোছালোও না। রুমের মাঝখানে একটা খাট, খাটের পাশে সাইড টেবিল তার উপর একটা পানির জগ আর গ্লাস। কিন্তু ও ভাবছে এখানে একটা টেবিল ল্যাম্প হলে ভালো হতো। বালিশের পাশে হুমায়ুন আহমেদের অপেক্ষা বইটা রাখা।
ঈশা ভাবছে সজিব কার জন্য অপেক্ষা করছে?
আরেকপ্রান্তে একটা আলমিরা খুব একটা নতুন না হয়তো বছর দুয়েক আগ বানানো। একটা সোফা রাখা তার উপর টাওয়েলটা পরে আছে যেটা কিছুক্ষণ আগে সজিবের কাধে ছিলো। কি যেনো ভেবে ঈশা টাওয়েলটা হাতে নিলো। নাকের কাছে নিতেই একটা সুন্দর গন্ধ এসে নাকে লাগছে। আপনা আপনি চোখজোড়া বন্ধ হয়ে এলো। এতো ভালো লাগছে কেন এই গন্ধটা? পাগল করা স্মেলটা ওর সাথে মিশে যাচ্ছে। টাওয়েলটা নাকের সাথে লাগিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে বুকের মাঝে। আলতো করে চোখ খুলতেই চোখ গেলো এক পাশে রাখা স্কেচ বোর্ডের দিকে। যার মাঝে সাদা কাগজ টানানো। তার নিচে কয়েকটা কাগজ দেখতে পাচ্ছে। ঈশা টাওয়েলটা সোফায় রেখে স্কেচ বোর্ডের দিকে এগিয়ে গেলো। উপরের সাদা কাগজটা তুলে যা দেখলো তাতেই ওর চোখ থমকে গেছে। এক এক করে সবকটি কাগজ উলটে পালটে দেখতে লাগলো ঈশা। তখনি রুমে সজিবের প্রবেশ।
-“আপনি এখানে?”
ঈশা কিছুটা হচকচিয়ে গেলো। ওর হাতের কাগজগুলো নিচে পড়ে গেলো। সজিব এসে কাগজগুলো তুলে নিয়ে ভাঁজ করে সাইড টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখে। সজিব যেনো কিছুটা অপরাধবোধে ভুগছে। খুব লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে এই মুহুর্তে।
এখন যদি ঈশা জিজ্ঞেস করে এগুলো কি?
তাহলে কি জবাব দেবে ও?
নিজের মনেই নিজের জবাবটা প্রস্তুত করছে। বেশিক্ষণ এভাবে আর গেলো না মনের আশংকাটাই সত্যি হলো।
-“এগুলো কি ছিলো?”
-“ভালোলাগাকে নিজের স্কেচের মাঝে বন্দি করা আমার অভ্যাস আর কিছু না।”
-“আমি কি আপনার ভালোলাগা?”
হ্যাঁ স্কেচগুলো ঈশারই। ও অবাকের সপ্তম আকাশে এই মুহুর্তে। কোন স্কেচে ওর চোখ, কোনটায় ওর ঠোঁট। কোনটায় চেহারার এক পাশ আর শেষের স্কেচে ওর সম্পূর্ণ একটা চেহারা। যে চেহারায় অফুরন্ত হাসি ফোটানো হয়েছে।
সজিব কেন আমার স্কেচ আঁকতে গেলো?
ওকি আসলেই আমায় নিয়ে ভাবে?
ওর ভালোলাগা আমি?
ভাবনায় ছেদ পরে বর্ণালী রুমে আসায়। বর্ণালী ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“চল তোকে আমাদের বাড়ির বাহির দেখিয়ে আনি। অনেক ভালো লাগবে দেখিস।”
-“হুম চল।”
ঈশা একবার সজিবের দিকে তাকিয়ে বর্ণালীর সাথে বাইরে চলে যায়।
`
-“আমাকে যেতে হবে রে দেখ ৫ঃ৪০ বেজে গেছে। যেতে যেতে সন্ধ্যার আজান হয়ে যাবে।”
-“কিন্তু এই বেলায় একা যাবি কিভাবে?”
-“আরে টেনশন নিস না। পারবো সমস্যা হবেনা।”
-“আরে তুই এমনিতেই এলাকায় নতুন। দাড়া আমি আসছি। দেখি ভাইয়াকে তোকে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে।”
সজিবের কথা শুনে ঈশা আর না করে না। ওর যেনো মনের মাঝে এমন কোন ইচ্ছেই ছিলো। কিভাবে যে বর্ণালী তা বুঝে নিলো? কিন্তু সজিব আমাকে পৌঁছে দিতে যাবে তো আমি কেন এতো খুশি হচ্ছি? আমি কেন চাইছি যে সজিবই আমায় পৌঁছে দিক!
তাহলে কি আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি?
আচ্ছা সজিবকি আমায় ভালোবাসে?
হ্যাঁ বাসে হয়তো নাহলে কি ও আমার স্কেচ আঁকতো নাকি? আর নিজের মুখেই তো বললো ভালোলাগাকে তার স্কেচের মাঝে বন্দি করে। ভালোলাগা থেকেই তো ভালোবাসা হয়।
ভালোবাসা শব্দটা ভাবতেই মনের অজান্তে ঈশার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।
-“কিরে চল।”
এতোক্ষণে ঈশার ভাবনার ঘোর ভাঙে।
-“হ্যাঁ হ্যাঁ চল। কি বললো তোর ভাইয়া?”
-“কি আর বলবে।”
ঈশার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তাহলে কি সজিব ওর সাথে যাবে না? ধ্যাৎ।
-“আসি আন্টি আবার দেখা হবে। আংকেল কে তো পেলাম না অন্যদিন আসলে দেখা করে নেবো।”
-“পারলে প্রতিদিন আসবে মা। রুমু আর তুমি আমার মেয়ের মতোই। কোন সংকোচ করবে না আসতে।”
-“জ্বি আন্টি। আসি আসসালামুয়ালাইকুম।”
-“কই ভাইয়া বিয়ে করতে যাচ্ছ নাকি যে এতো সময় লাগাচ্ছো আসতে? ওর দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।”
বর্ণালীর কথা শুনে ঈশার চোখ মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠে। তাহলে সজিব ওর সাথে যাচ্ছে। উফ কি যে খুশি লাগছে বলে বুঝাতে পারছিনা।
-“এইতো এসে গেছি। চলেন।”
-“আসি বর্ণ। ফোন দিয়ে যোগাযোগ রাখিস আর নিজের খেয়াল রাখিস।”
-“হ্যাঁ অবশ্যই। তুইও ভালো থাকিস।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
`
ঈশা আর সজিব পাশাপাশি হাটছে। দুজনেই খুব চুপচাপ।
সজিব ভেবে পাচ্ছেনা এই মেয়েটা এতো ধীরে কেন হাটছে? ওর কি বাসায় যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই নাকি ও এভাবেই হাটে?
মনের সাথে কথা বলে কোন উত্তর পাচ্ছে না সজিব হয়তো ঈশাকে জিজ্ঞেস করলেই জবাবটা পেয়ে যেতো। আর জবাবটা কিছুটা এরকম হতো যে,
“তোমার পাশে এভাবেই হাটতে চাই জনম জনম ধরে।”
ঈশা ইচ্ছে করেই ধীরে হাটছে কি জানি রাস্তাটা শেষ হয়ে যায়৷ তাহলে তো আর সজিবকে দেখতে পাবেনা এতো কাছে থেকে। সজিব ওর থেকে খুব বেশি লম্বা না। সজিবের কাঁধ বরাবর ওর উচ্চতা হবে। আড় চোখে এসব খেয়াল করছে ঈশা। হুট করেই ড্রেনের উপর উঠে গেলো ঈশা। হুম এখন দুজনের উচ্চতা সমান হয়েছে। অন্যপাশে তাকিয়ে লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো ঈশা। কেন জানি ওর ইচ্ছে করছে সজিবকে ঠিক আগের মতো খালি গায় দেখতে। ইচ্ছে করছে ওর উন্মুক্ত বুকের মাঝে নিজের মাথা রাখার জায়গা করে নিতে।
ইস কি নির্লজ্জ হয়ে গেছি৷ কখন কিভাবে ওর প্রেমে পড়লাম নিজেই বুঝতে পারলাম না! ডানা মেলে আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে। সজিব আমার প্রথম প্রেম। আহা এতো সুখ কোথায় রাখি!
সজিব পেছনে তাকিয়ে দেখলো একটা রিকশা আসছে।
যাক ভালোই হলো এখন তাড়াতাড়ি যাওয়া যাবে। সজিব যেই রিকশাকে দাঁড় করালো ঈশার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো৷ কে বলেছে ওভাবে রিকশা ডাকতে। ওর এমন ভাব যেনো আমাকে বাসায় দিয়ে আসতে পারলেই বাঁচে। আমি গেলে তো তুমি রিকশায় উঠবে বাবু। দাঁড়াও উঠাচ্ছি তোমায় রিকশাতে।
-“আমি রিকশায় যাবো না।”
-“কেন?”
কিছুক্ষণ ভেবে মিথ্যা বলে দিলো।
-“আ….আমার কাছে ভা…..ভাড়া নেই।”
-“ভাড়া আমি দেবো উঠেন।”
-“আমি অন্যের কাছ থেকে টাকা নেইনা।”
-“আচ্ছা ধার নিয়ে নেন পরে আবার দিয়ে দিবেন।”
-“ছিঃ লজ্জা করেনা? আমাকে আপনি এই সামান্য কয়টা টাকা ধার দিয়ে আবার ফেরতও নিতে চান?”
ঈশা ন্যাকামি শুরু করে দিলো সজিবের সাথে৷ ইচ্ছে করেই এমন করছে যাতে হেটে যেতে পারে আর অনেকটা সময় ওর সাথে থাকতে পারে।
-“আচ্ছা এমনিতেও টাকা নিবেন না ধারও নিবেন না তাহলে কিভাবে নিবেন?”
-“রাখেন আপনার টাকা আমি যাবো না রিকশায়। আমি হেটেই যাবো।”
-“কিন্তু আপনার বাসা তো অনেক দূর আর যেভাবে হাটছেন সন্ধ্যার পর হবে বাসায় যেতে। তখন সবাই টেনশন করবে। দেখেন এমনিতেই সন্ধ্যা ৬টার উপর হয়ে গেছে।”
-“আমার টেনশন আমি করবো আপনাকে করতে হবে না৷ চলুন। আর মামা আপনি যান তো লাগবে না রিকশা।”
বলতে না বলতেই চারদিক থেকে আজানের ধ্বনি শোনা গেলো। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটা মসজিদের সামনে এসে থামলো সজিব।
-“আপনি কি এখানে একটু অপেক্ষা করতে পারবেন? আমি নামাজটা পড়ে আসতাম।”
ঈশার ঠোঁটে রাজ্যের হাসি চলে আসে। এমন ছেলে খুব কমই দেখা যায় যে কিনা সব ব্যাস্ততা রেখে ঠিকই নামাজ পড়ে। ঈশা এখন পুরো শিওর যে সজিবকেই ওর জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই।
-“কি হলো? তাড়াতাড়ি চলে আসবো জাস্ট ১০মিনিট।”
-“অবশ্যই যান। আমি অপেক্ষা করছি।”
-“ভয় পাবেন না তো?”
আসছে আমার টেনশনওয়ালা হুহ।
-“উহু ভয় পাবো না। নামাজ আদায় করে আসেন আপনি। আর হ্যাঁ আমার জন্য দোয়া করবেন।”
-“কি দোয়া?”
-“আমি এখন মন থেকে যা চাইছি তাই যেনো আল্লাহ আমাকে দেন।”
-“আচ্ছা ইনশাআল্লাহ। এদিকে এসে দাঁড়ান। আর এই নিন আমার ফোনটা রাখেন। কোন প্রব্লেম হলে জোরে একটা চিৎকার দিবেন।”
ঈশা একটু ব্রু কুচকে তাকালো। পরক্ষণেই হোহো করে হেসে দিলো। তারপর মাথা নেড়ে হুম বললো। সজিব মসজিদের ভেতর চলে গেলো। ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। আসলেই ও একটু বেশি কেয়ারিং। আঁধার নেমে আসছে চাঁদটা এখনো পুরো হয়নি। আজকাল চাঁদকে বিকেলের দিকেও আকাশে দেখা যায়। এমন কেন হয় বুঝিনা। চাঁদ তার আকাশকে এক মুহুর্তের জন্যও একা ছাড়তে চায়না মনে হয়। এতো ভালোবাসা এরা রাখে কেমনে?
সজিব নামাজ পড়ে আসতেই ঈশা আর সজিব আবারো হাটছে। ঈশা আনমনে একটা গানের কয়েকটা লাইন গেয়ে উঠে,

নীল আকাশের ওই দূর সীমা ছাড়িয়ে,
এই গান যেন যায় আজ হারিয়ে
প্রাণে যদি এ গানের রেশ হয়,
পৃথিবীটা যদি স্বপ্নের দেশ হয় ।।
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো

এ পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

-“বাহ! সুন্দর গান গাইতে পারেন তো।”
-“শুধু গানটাই দেখলেন?”
-‘মানে?”
-“ছোট মানুষ বুঝবেন না আগে বড় হোন তারপর বুঝবেন। হিহিহিহি।”
-“আচ্ছা আপনি কি সবসময় এমন?”
-“কেমন ছোট ভাই?”
-“ছোট ভাই?”
-“তা নয়তো কি? কখন থেকেই আপনি আমাকে আপনি করে বলছেন তাহলে তো সেই সম্পর্কে আপনি আমার ছোট ভাই হলেন।”
সজিব শব্দ করে হেসে উঠলো। মেয়েটা যতটা সুন্দর ততটাই রসিক। কি সুন্দর কথা বলে। ঈশা দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে সজিবের হাসি দেখছে। সজিবও থেমে এক হাত পেটের উপর ধরে হেসেই যাচ্ছে। বর্ণালীর হাসিটার মতোই সজিবের হাসি অনেক সুন্দর। ঈশা এক ঘোরের মাঝেই নিজের হাত নিয়ে সজিবের একটা গালে রাখলো। সজিব আচমকাই চমকে উঠলো। ওর শরীরে যেনো ৪৪০ভোল্টের শক লাগলো। একটা শিহরণ বয়ে গেলো পুরো শরীরে। সাথে তার হাসিটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ঈশার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই ঈশা বলে,
-“হাসি থামালে কেন? আগেই তো ভালো লাগছিলো। আমি তোমার ওই হাস্যজ্বল মুখটাই বারবার দেখতে চাই। কোন ছেলেদের হাসি এতো সুন্দর আমার জানা ছিলো না।”
সজিব ঈশা থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ালো। ওমনি ঈশার হাত ওর গাল থেকে আলগা হয়ে গেলো। ঈশার ঘোর যেনো এখন কাটলো। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা সজিবের দিকে। ঈশা স্বাভাবিক হতে পারছেনা।
কি করে দিলো ও এসব?
কিভাবে বললো এসব কথা?
শিট!!!! এমন কেনো করতে গেলি ঈশা!
না জানি সজিব কি ভাবছে এখন তোর ব্যাপারে। একটু জাস্ট একটুখানি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলিনা?
এদিকে ওদিক তাকিয়ে যাচ্ছে ঈশা আর এক হাতে আরেক হাত কচলে যাচ্ছে।
সজিব পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করার জন্য বললো,
-“চ….চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ আ….আর একটু তাড়াতাড়ি হাটো।”
বলেই হাটা ধরলো দুজনে।
ঈশার বাসার সামনে এসেই থামলো সজিব। ঈশা যে বাসায় চলে এসেছে সেদিকে ওর কোন খেয়ালই নেই।
-“আসি তাহলে। ভালো থাকবে।”
-“হু? ওহ চলে এসেছি? আরে ভেতরে চলেন। বাসার সামনে এসে বাসায় না গিয়েই চলে যাবেন সে কি করে হয়?”
-“অন্যদিন আসবো ইনশাআল্লাহ। আসলে আমার একটা টিউশন আছে স্টুডেন্ট হয়তো অপেক্ষা করছে।”
-“ওহ আচ্ছা তাহলে পরবর্তীতে আসলে অবশ্যই বাসায় যেতে হবে৷”
-“হুম আচ্ছা তাহলে আসি।”
সজিব চলে যাচ্ছে। ঈশার কেন জানি ইচ্ছে করছে খুব শক্ত করে সজিবকে জড়িয়ে ধরতে। খুব কষ্ট হচ্ছে আবার ওর সাথেই চলে যেতে মন চাইছে। আবার কবে দেখা হবে কে জানে! বুকটা ধুকপুক করছে। প্রতিটা হার্টবিট যেনো বারবার বলছে তোর সজিবকে আটকা ঈশা আটকা। বলে দে তোর মনের কথা।
-“সজিব।”
সজিব কিছুটা দূরে চলে এসেছিলো। ঈশার এমন ডাকে পেছন ফিরে তাকায়৷ ঈশা ওকে নাম ধরে ডাকছে! অবাক হচ্ছে সজিব এই মেয়ে কি চায়?
ঈশা আশেপাশে না তাকিয়ে দৌড়ে এসে সজিবের বুকে ঝাপটে পড়ে। সজিব পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়। ঈশা খুব ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। ওর উষ্ণ নিশ্বাস এসে সজিবের বুকে লাগছে। সজিব নিজেকে সামলে রাখতে পারছেনা। তবুও নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। ঈশা বুঝতে পারলো সজিব ওকে জড়িয়ে ধরে নি। ওর বুকে মাথা রেখেই আলতো করে হাত দুটো নিয়ে তার কোমড়ে রাখলো। পা মাটি থেকে একটুখানি আলগা করে সজিবের ঘাড়ে মাথা রেখে আরেকটু শক্ত করে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো ঈশা। সাথে সাথে আরেকটা ভারী নিশ্বাস নিলো ও। সজিবের স্পর্শ যে ওকে পাগল করে দিচ্ছে। সজিব বুঝতে পারছেনা ওর কি করা প্রয়োজন। কিন্তু এভাবেই থাকতে ভালো লাগছে ওর।
-“ভালোবাসে ফেলেছি সজিব তোমায়। হ্যাঁ আমি ভালোবাসি তোমায়।”
সজিব ঈশার দু’বাহু ধরে বুক থেকে তুলে সোজা করে দাঁড় করায়। ঈশা সজিবের দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে তার জবাবটা পাওয়ার আশায়। সজিব চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,
-“বাসায় যাও। আল্লাহ হাফেজ।”
-“কি…..কিন্তু আমার জবাব?”
সজিব আর একটা কথা বলার জন্যও সেখানে দাঁড়ালো না। দ্রুত হাটা ধরলো। ঈশা পেছন থেকে আরেকবার সজিব বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
-“তোমার জবাব না পাওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করবো। কিন্তু জবাবটা পজিটিভ আসা চাই।”
ঈশার কথাগুলো সজিবের কানে আসলো ঠিকই কিন্তু কোন উত্তর দিলো না। চোখের জল আড়াল করে হেটে চলে যাচ্ছে৷ গন্তব্য তার স্টুডেন্টের বাসা। আজকে বেতন দেয়ার কথা আছে৷ বেতন পেয়েই একটা মুরগী নিয়ে যাবে ভাবছে। অনেকদিন হলো মা মুরগী রান্না করেনা। একটা মৃদু হাসি চলে এলো ওর ঠোঁটে।

`
বেলকনির একপাশে রেলিঙ দেয়া নেই ইভান অনেক্ষণ ধরে সেই পাশেই গিয়ে ফ্লোরে বসে পা দুটো ঝুলিয়ে বসে আছে। আনমনে পা দুটো নড়ছে। দুপুরেও খায় নি রাতেও খাবার নামবে না ওর গলা দিয়ে এটা সে ভালো করেই জানে। সিগারেটের প্যাকেটটা হাতের মাঝে রেখে নেড়েচেড়ে দেখছে। কোনদিন খাওয়া তো দূরের কথা ছুঁয়েও দেখেনি। মানুষ নাকি খুব বেশি কষ্ট পেলে সিগারেট খায়। কেননা সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্টটাও উড়ে ছাই হয়ে যায়। রাত বাড়ছে সাথে কষ্টটাও বাড়ছে।
কেন এমন করছে বর্ণালী?
আমি কি আসলেই ওর এতোটা অযোগ্য?
আজ পর্যন্ত কত মেয়েই না ওর জন্য পাগল ছিলো কাউকে পাত্তা দেয় নি। আর ও কিনা যার জন্য পাগল হলো সে তাকে ফিরেও দেখছে না?
অনেক্ষণ নীরব হয়ে বসে থাকার পর হুট করেই ইভান উঠে দাঁড়ায়। নাহ ওকে আমায় ভালোবাসতেই হবে।
কি ভেবেছে ও এতো সোজা?
আমাকে পাগল করে নিজে অন্যের সাথে ভালো থাকবে?
আমি তা কখনোই হতে দিবো না৷ ও ভালো থাকলে আমার সাথেই থাকবে। ভালো না থাকলেও আমার সাথে থাকতে হবে। ইভান রুমের দরজা খুলতেই দেখলো ঈশা হাত উপরে তুলে মুঠি বেধে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো এখনি নক করতে চেয়েছিলো আর ও দরজা খুলে দিয়েছে।
ইভানের চেহারাটা কিছুটা কালো হয়ে আছে। চোখ এখনো লাল। নিচ কালো হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাইটা আমার খুব কেঁদেছে।
-“কোথাও যাচ্ছিস?”
-“হ্যাঁ।”
-“বর্ণালীর কাছে?”
-“হু।”
মাথাটা নিচু করে বললো ইভান।
-” ঠিক আছে যা। কিন্তু অল্প ভাত খেয়ে যা। সারাদিন থেকে তো কিছুই খাস নি।”
-“না বুমনি ক্ষুধা নেই আমার।”
-“আচ্ছা আমার কথাও রাখবি না?”
ইভান কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
-” এসে খাই?”
-“আচ্ছা ঠিকাছে যা।”
ইভান দাঁড়িয়ে আছে বর্ণালীর বাড়ির সামনে। রাতটা কেমন ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে আছে। একটুও জোছনা নেই। সন্ধ্যার দিকেও আকাশে চাঁদ দেখা গিয়েছিলো এতো তাড়াতাড়ি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেলো কেন?
চাঁদ মনে হয় লুকোচুরি খেলছে। কিন্তু কার সাথে? সেটা ইভান জানেনা।
একবার মোবাইলটা বের করলো আবার কি যেনো ভেবে মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে চুপিচুপি বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো। বর্ণের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রেলিঙ ডিঙিয়ে বেলকনিতে এসে বর্ণের রুমের পাশে উঁকিঝুঁকি মারছে যদি একবার দেখা যায়। বেলকনির দরজাটা লাগানো। যদিও দরজাটা কাঁচের। ভেতর দিয়ে দরজার ওইপাশে সাদা পর্দা টানানো কিন্তু এখন পর্দাটা সামান্য সরিয়ে দরজার এক পাশে ফিতা দিয়ে বেঁধে রেখেছে। এই মেয়েটা কি রুমে নেই নাকি?
হঠাৎ ইভান যেনো কারো ছায়া দেখতে পেলো। চোখ লাগিয়ে ভালো করে দেখলো বর্ণালী আলমিরা থেকে সাদা টি-শার্ট আর লং টাউজার এনে বিছানায় ছড়িয়ে রেখেছে। দেখে মনে হচ্ছে ড্রেস চেঞ্জ করতে লাগছে। নো নো নো বর্ণালী ডোন্ড ডু দ্যাট।
ইভানের চোখ কপালে উঠে যায়৷
এখনই কেন ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে হচ্ছে?
বর্ণালী চুলগুলো খোঁপা বেঁধে বুকের ওড়না টা বিছানায় রেখে ড্রেস খুলতে যাচ্ছে।
💛
#_____চলবে______

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১২
ইভানের চোখ কপালে উঠে যায়৷
এখনই কেন ওর ড্রেস চেঞ্জ করতে হচ্ছে?
বর্ণালী চুলগুলো খোঁপা বেঁধে বুকের ওড়না টা বিছানায় রেখে ড্রেস খুলতে যাচ্ছে। ড্রেসের দু’পাশে ধরে উপরে তুলতেই ইভান দরজায় নক করে। আওয়াজ করে ডাকতেও পারছেনা। ড্রেস খানিকটা উপরে তুলে নিয়েছে বর্ণালী। কোমড়ের এক পাশ দেখা যাচ্ছে। ঠিক যেনো দুধে আলতা গায়ের রঙ। চোখ ধাধানো ধবধবে ফর্সা কোমড়। মুখ আর হাতের চেয়ে ওর কোমড় বেশি ফর্সা চাঁদের থেকেও সুন্দর। ইভান যেনো কিছুক্ষনের জন্য অন্য কোন ভুবনে হারিয়ে গিয়েছিলো। খালি গলায় ঢোক গিলে কিছুসময় চোখ বন্ধ করে রাখে। আবার খুলে অন্য দিকে তাকায়। বর্ণালী দরজায় নক শুনতে পেরে কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিলো। পরে ভাবলো হয়তো ওর মনের ভুল। তাই আবারো ড্রেস খুলতে লাগলো। ইভান এবার একটু জোরেই নক করলো দরজায়। বর্ণালী ড্রেস ঠিক করে ওড়না গায় দিয়ে সামনের রুমের দরজা খুলে দেখলো কে নক করলো। কিন্তু না কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছেনা।
-“মা আমার রুমের দরজায় কি তুমি ধাক্কাচ্ছিলে?”
-“কই নাতো।”
-“ভাইয়া বা বাবা?”
-“তোর ভাই তো টিউশনি থেকে এখনো আসে নি। আর তোর বাবা তো ঘুমাচ্ছেন।”
রান্নাঘর থেকেই শারমিন বেগম চেচিয়ে কথাগুলো বললেন। বর্ণালী কিছু না বুঝতে পেরে আসলেই ওর মনের ভুল মনে করে দরজা ভেতর থেকে লক করে নিলো। ইভান নিজের মাথা নিজেই চাপড়াচ্ছে। এই মেয়েটা এতো বোকা কেন? একবার তো এদিকেও দেখতে পারে কিন্তু তা না। ইভান ফোন বের করে বর্ণালীর মোবাইলে কল দেয়। বর্ণালী মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ইভানের নাম্বার। মোবাইল হাতে রেখে চুপ করে বিছানায় বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে বর্ণালী। এই কল কি ও ধরবে নাকি ধরবে না একরকম দ্বিধায় পড়ে গেলো। মোবাইলে রিং বেজেই যাচ্ছে। দিনের কথা মনে হতেই বর্ণালীর চোখ থেকে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। মোবাইল হাতে নিয়ে ঝাকাচ্ছে আর নিশ্চুপ চোখের জল ফেলছে। ইভান এটা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেনা।
বর্ণালী আমার কল দেখে কাঁদছে কেন?
কি ভাবছে ও? ওর মনের মাঝে আমাকে নিয়ে কি চলছে? কেন করছে এমন ও? নিশ্চই কোন কারণ আছে। এটা আমাকে জানতেই হবে। আমি বর্ণালীর চোখের জলের কারণ হতে চাই না। আমি ওর ঠোঁটের কোণের হাসির কারণ হতে চাই।
ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে যায়। বর্ণালী চোখ মুছে ফোন ভাইব্রেশন মুড অন করে বালিশের নিচে রেখে দেয়। ইভান এখনো তাকিয়ে আছে বর্ণালীর দিকে। বর্ণালীকে ড্রেস খুলতে দেখেই ইভান পিছনে মোড়ে যায়। খুব লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো। ইচ্ছে করছে বর্ণালীকে এভাবে চেয়ে দেখতে কিন্তু বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। এভাবে ওকে দেখলে যে পাপ হবে।
আমি ওকে তখন কি জবাব দিবো!
আমি যে তোমাকে একেবারে হালাল উপায়ে দেখতে চাই, হালাল ভাবে তোমাকে কাছ থেকে ভালোবাসতে চাই খুব বেশি ভালোবাসতে চাই।
এখনো যে তোর দেখার অধিকার হয় নি। না ইভান তুই বর্ণালীর দিকে তাকাবিনা। চোখ কুচকে বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করছে ইভান।
`
ঈশা ফোনটা হাতে নিয়ে বসে বসে ভাবছে সজিবকে কল দিবে কিনা। সজিব যখন ওর কাছে মোবাইল রেখে নামাজ পড়তে গিয়েছিলো তখনি ও নাম্বারটা নিয়ে নেয়। ভাবতে ভাবতেই কল দিয়ে বসে সজিবের নাম্বারে। কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ করলো।
-“আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?”
ঈশা নিশ্চুপভাবে ওর কথা শুনছে। মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছেনা।
-“হ্যালো কে বলছেন? কথা বলেন।”
ঈশা তখনো নিশ্চুপ।
-“কল দিয়ে কথা না বললে কেন দেন? রাখেন ফোন।”
বলেই কলটা কেটে দিতে লাগলো তখনি ঈশা বলে উঠে,
-“এ….এই যে কল কাটবেন না।”
-“আপনি?”
-“চিনলেন কিভাবে? আর আবার কেন আপনি বলছেন?”
-“ওহ সরি তুমি। এইতো এমনিতেই চিনে নিলাম।”
-“কি করছেন?”
-“বাসায় যাচ্ছি বাজার নিয়ে।”
-“এতো রাতে বাজার?”
-“হ্যাঁ আজকে টিউশনির বেতন পেয়েছি।আর শেষ রাতের বাজারে দাম কম হয় জিনিসের তাই শেষ এতো রাতে বাজার। অবশ্য বেশি রাতও হয়নি মাত্র ১২টা বাজছে।”
ঈশার মনটা খচ করে উঠলো। সজিবের কথায় অনেক কষ্ট। এমন অনুভূতি হচ্ছে যেনো ওর মনের মাঝে কষ্টের সাগর জমা হয়ে আছে। সজিবের কথায় ওর ঘোর কাটে।
-“তা এতো রাত্রে তুমি কেন কল দিলে?”
-“কেন কল দিতে পারিনা?”
-“না তা নয়। তবুও মেয়ে মানুষের এতো রাতে কোন ছেলেকে কল দেয়া ঠিক না।”
-“তাই নাকি? কিন্তু আমি তো দিবো আর প্রতিদিন দিবো।”
-“কেন দিবে?”
-“ওই যে বললাম না ভালোবাসি।”
-“আমাদের মত মানুষের সাথে এসব যায় না ঈশা।”
ঈশা বুঝতে পারছে সজিব কি বুঝাতে চাইছে। ঈশারই কিছু একটা করতে হবে।
-“আচ্ছা রাখছি। বাসায় চলে এসেছি।”
-“অপেক্ষায় থাকবো। আল্লাহ হাফেজ।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
দু’দিকেই দুজনে গভীর নিশ্বাস নিলো। ঈশা বুঝে গেছে ওর কি করতে হবে। কাল সকালেই বাবার সাথে কথা বলতে হবে ওর।
সজিবের ফোনে কখন থেকেই সেই আননউন নাম্বার থেকে কল আসছে। ঈশার সাথে কথা বলার সময়ও বারবার কল আসছিলো। প্রতিদিনই ওর ফোনে এই এক নাম্বার থেকে ঠিক রাত ১২টার পর একটা আর সকাল ৬টার দিকে একটা কল আসে। কিন্তু রিসিভ করলে কথা বলেনা। ফোন কাটার পর শুধু একটা মেসেজ আসে “Good Night” আর “Good Morning”. আজ আর রিসিভই করবে না। ফোন সাইলেন্ট করে বাড়িতে ঢুকে গেলো।
`
প্রায় মিনিট দশেক পর ইভান ধীরে ধীরে পেছনে মোড়ে রুমের দিকে তাকালো। হ্যাঁ ওইতো বর্ণালীকে দেখছে। সাদা টি-শার্ট আর টাউজারে ওকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। চোখে চশমা পড়েছে। এই চশমা মনে হয় ও শুধুমাত্র পড়ার সময়ই চোখে লাগায়। অনেকটা স্কুলের কিশোরী মেয়ে দেখা যাচ্ছে। যে কিনা সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছে। অথচ এই মেয়েই কিনা বারবার আমাকে তা ছোট বলে আমার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করছে!
আসছেন আমার বড় আপা! ওপ্স সরি সরি বাসন্তী আমার বাসন্তী। কোন বড় ছোট মানিনা আর মানবো না। ওর লম্বা চুলগুলো পিঠের দিকে প্রায় টি-শার্টটা পেড়িয়ে গেছে। বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় কি একটা বই নিয়ে পড়ছে। আর এক পাশে মোবাইল রেখেছে। একবার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো দু’বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে। ইভান ভাবলো একটু মজা নেয়া যাক। ওকে আজ এমন ভয় দেখাবো না জীবনেও আমার নাম ভুলবে না। ভাবতেই একটা মেসেজ লিখে বর্ণালীকে সেন্ড করলো।
-“এভাবে মোবাইলে তাকিয়ে না থেকে পড়ায় মন দাও। আর আগে কল দেখেও রিসিভ করলে না। এখন আবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছো আমি আবার কল দিচ্ছি কিনা তা দেখার জন্য না?”
বর্ণালী মেসেজটা পড়ে আধশোয়া হতে বসে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মোবাইলের দিকে। সাথে সাথে আরেকটা মেসেজ দেয়।
-“এভাবে ভয় পাচ্ছ কেন? ধীরে বসলেও পারতে। জানতাম তুমি আমার মেসেজের অপেক্ষাই করছিলে।”
বর্ণালী এবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ও শিওর ইভান এখানেই এসেছে। আর ওকেই দেখছে। ভয়ে রুমের ভেতর পায়চারি করছে ও। ইভান এবার দরজায় নক করলো। বর্ণালী এবার আর কনফিউজড হলো না৷ সোজা বেলকনির দরজার দিকে তাকালো। হুম কিছু একটার ছায়া ও দেখতে পাচ্ছে। আবারো মোবাইলটা ভু ভু করে কেঁপে উঠলো। মেসেজ এসেছে আরেকটা।
-“দরজা খুলো তাড়াতাড়ি। আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবো?”
বর্ণালী দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। সামনে তাকিয়ে দেখে ইভান নেই। আশেপাশে তাকিয়েও নেই। হঠাৎ দরজার পেছন থেকে কেউ এসে ভুউ বলে ভয় পাইয়ে দেয়। বর্ণালী ভয়ে কেঁপে ওঠে। চোখ বন্ধ করে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে নেয়। পড়েই যাচ্ছিলো ইভান ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ফেলে। ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ইভান ওকে ধরে মিটিমিটি হাসছে। হুড়মুড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো ও। ইভানকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে গেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। নেশাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইভান। এ যেনো হাজার বছরের নেশা। হাজার বছর দেখলেও দেখার সাধ মিটবে না। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে। এমন তাকানো দেখে ওর কেমন যেনো লাগছে।
-“আচ্ছা তোমাকে কি একমাত্র আমিই ওড়না ছাড়া দেখেছি না অন্য কেউ দেখেছে?”
এবার বর্ণালী চোখ তুলে তাকায় ইভানের দিকে৷ চোখ ছোট ছোট করে কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে এক রকম দৌড়ে রুমে গিয়ে ড্রেসের সাথের ওড়নাটা গায় জড়িয়ে নেয়। যা গরম পড়েছে ভেবেছিলাম এসব পড়লে একটু গরম কম লাগবে তাই তো পড়া। আর এসব পড়েই কিনা আমাকে ইভানের সামনে পড়তে হলো?
ইভান রুমে ঢুকে বেলকনির দরজা বন্ধ করে নিলো। বর্ণালী ভয় পেয়ে গেছে। এই ছেলে কি করতে চাচ্ছে? ইভান ওর দিকে আগাচ্ছে আর ও ভয়ে থরথর কাঁপছে।
-“দে…..দেখো আ….আর এক পা এগোলে আমি চিৎকার করবো বললাম।”
-“আচ্ছা চিৎকার করবে নাকি? বাহ! ভালোই তো করো প্লিজ। তাহলে আমারই ভালো হবে। এভাবে তোমাকে আমার সাথে দেখে সবাই মিলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।”
এসব বলে বলে ইভান বর্ণালীর দিকে আগাচ্ছে। মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চেপে যায় ইভানের। ডান হাতে শার্টের একটা একটা বোতাম খুলছে আর বর্ণালীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্ণালীর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।
-“প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। তুমি এমন আমি কখনোই ভাবিনি।”
-“দেখো বিনা ড্রেসে তো তোমাকে দেখেই নিয়েছি এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না৷ তার চেয়ে বরং বাসর রাতটা সেরেই ফেলি।”
-“বি….বিনা ড্রেসে দেখে ফেলেছো মানে?”
-“ওই যে একটু আগে যখন তুমি ড্রেস চেঞ্জ করছিলে তখন দেখলাম তো।”
বর্ণালী কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে। চোখে জল টইটুম্বুর করছে। কিন্তু ইভান ভেতরে ভেতরে হেসেই মরে যাচ্ছে।
-“কি ব….বলছো এসব?”
-“হ্যাঁ ঠিকই তো বলছি। এখন কি করবে বলো? তোমার সব কিছুই তো দেখে ফেললাম।”
উপর থেকে নিচে চোখ বুলিয়ে কথাটা বললো ইভান। এবার বর্ণালী কেঁদেই দিলো।
-“দেখো কেঁদে লাভ নেই। এখন তোমার সবকিছু যখন দেখেই ফেলেছি তাহলে তো সব আমারই তাই না? চলো বিয়ে করে নেই। আচ্ছা আগে বাসররাতটা করে নেই তারপর বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।”
ইভান বর্ণালীর খুব কাছে চলে এসেছে। বর্ণালী এক পাশে যেতে চাইলেই ইভান ওর হাত ধরে এনে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় ফেলে দেয়। বর্ণালীর চোখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট বুঝতে পারছে ইভান। এবার আর পারলো না একটু জোরেই কেঁদেই দিলো মেয়েটা। চোখ ছোট ছোট করে ঠোঁট উলটে কেঁদে দিলো। দু’হাতে মুখ ঢেকে কান্না করে যাচ্ছে ইভান ওর পাশে শুয়ে এই মায়াভরা মুখটা দেখার চেষ্টা করছে কিন্তু মুখ দু’হাতে ঢেকে রাখায় দেখতে পারছেনা৷ ইভান আলতো করে বর্ণালীর দু’হাত ধরে মুখ থেকে সরিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ করেই বারবার বলছে,
-“প্লিজ প্লিজ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। ছেড়ে দাও আমায়। তুমি তো চাইলেই অনেক মেয়ে পাবে। আমাকে এভাবে শেষ করে দিও না।”
কথাটা শুনেই ইভান ফিক করে হেসে দিলো। বর্ণালী এবার চোখ খুলে তাকাতেই দেখলো ইভান ওর পাশে শুয়ে আছে। উঠে বসলো ও। ইভানের হাসির আওয়াজ বড় হতেই মুখ চেপে ধরলো ইভানের৷ তখনি মায়ের নক পড়লো দরজায়।
-“বর্ণালী এই বর্ণালী কার সাথে কথা বলিস? কে হাসে তোর রুমে?”
ভয়ে কাঁপছে মেয়েটা। ইভান চোখ মেরে ব্রু নাচিয়ে ইশারা করলো কিছু একটা ওকে। সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করলো না বর্ণালী। মাকে এখন কি জবাব দেবে সেই চিন্তাই করছে ও। তখনি আবারো শারমিন বেগমের আওয়াজ ভেসে আসে দরজার ওইপাশ থেকে,
-“কিরে কিছু বলছিস না কেন? কি হয়েছে?”
-“আ….মা আমি মোবাইলে ছবি দেখছিলাম। তাই হয়তো আওয়াজ পেয়েছো।”
-“ওহ আচ্ছা। দুপুরেও খেলি না রাত্রেও খেলি না। কি হয়েছে রে তোর? অল্প একটু খেয়ে নে না।”
ইভান বর্ণালীর হাতের তালুতে আলতো করে একের পরে এক কামড় দিয়ে যাচ্ছে। সব সহ্য করতে হচ্ছে এখন মায়ের জন্য। কথা বলারও শক্তি পাচ্ছেনা এই মুহুর্তে। ইভানের এমন স্পর্শগুলো কেমন যেনো লাগছে ওর। কাঁপা গলায় মাকে জবাব দিলো,
-“ম….মা প্লিজ আ….আমি খাবো না যাও তুমি খেয়ে ঘু……ঘুমিয়ে পড়ো।”
-“দরজাটা খুলনা এভাবে কথা বলছিস কেন?”
ইভান আলতো করে বর্ণালীর টি-শার্টের নিচে কোমড়ে হাত রাখতেই বর্ণালীর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। হার্টবিট যেনো দ্রুত দৌড়াচ্ছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মায়ের আবারো আওয়াজ ভেসে আসতেই নিজেকে কিছুটা সামলে বললো,
-“ম….মা আমি শু…..শুয়ে পড়েছি এ…..এখন ইচ্ছেহ করছেনা উঠে দরজা খুলতে।”
-“তোদের কিছুই আমি বুঝিনা বাবা। দেখ সব রাখা আছে ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিস। আর ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি আবার উঠতে হবে তোকে সকালে। এমনিতেই ৩টা প্রাইভেট পড়াস কত করে বললাম এই কোচিংটা নিস না তাও তো শুনলিনা।”
বর্ণালীর এখন খারাপ লাগছে। মা কেন এসব কথা বলছে এখন৷ এদিকে ইভানের মুখ সেই কখন থেকে চেপে ধরে বসে আছে ও। তার উপর ইভানের এমন এমন স্পর্শে ও ঠিক থাকতে পারছেনা। এমন কেন হচ্ছে ওর সাথে। কোনদিন তো আর কারো স্পর্শে ওর এমন অবস্থা হয়নি। ইভান এবার ওর কোমড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ধীরে ধীরে স্লাইড করতে লাগলো। বর্ণালীর চোখ দুটো কুচকে বন্ধ করে নিলো। দাঁতে দাঁত চেপে মাকে উত্তর দিলো,
-“মাহ যা…..যাও ঘুমিয়ে পড়ো। তু….তুত….তুমি টেনশন নিও না তো। আ….আমার ভালোর জন্যই আমি কো…..কোচিংটায় জ….জয়েন করেছি।”
-“আচ্ছা ঘুমা গেলাম আমি।”
মা যেতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ইভানের মুখ থেকে হাত সরিয়ে উঠতে চাইলেই ইভান ওর হাত ধরে শুইয়ে দিলো ওর উপর। বর্ণালীর সব চুল এসে পড়লো ওর মুখে। ইভান আলতো করে ওর চুলগুলো হাতের মাঝে নিয়ে নাকের কাছে নিলো। গন্ধ নিতে লাগলো চুল থেকে। বর্ণালী চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিলো।
-“ক….কি করছো কি?”
-“ভালোবাসছি।”
কথাটা শুনতেই বর্ণালীর হার্টবিট আরো বেশি বেড়ে গেলো। ওর বুকের ধুকপুকানিটা ইভানও শুনতে পাচ্ছে। ইভান তার হাত দিয়ে বর্ণালীর গালে আলতো করে ধরে বললো,
-“তোমার হার্টবিটগুলো কার কথা বলছে জানো? শুধুই আমার কথা। শুধুই বলছে সে আমাকে ভালোবাসে। তুমি কি তোমার হৃদয়ের কথাগুলো বুঝতে পারছো না?”
এসব কথা বর্ণালীকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন একটা তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে। যা একমাত্র বর্ণালীই অনুভব করতে পারছে। ইভান ওর একটা আঙুল বর্ণালীর থুতনিতে স্লাইড করতেই বর্ণালী খেয়াল করলো ওর হাতে বেন্ডেজ করেনি এখনো। রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে।
-“ইহ…..ইভান পি…..প্লিজ ছাড়ো।”
ইভানের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। বৃদ্ধাঙুলি দিয়ে ওর গালে স্লাইড করছে। ওর এমন স্পর্শে শিউরে ওঠে বর্ণালী। উঠার জন্য ছটফট করতে লাগে। ইভান ঠোঁট বাকা করে হেসে ছেড়ে দেয়। বর্ণালী উঠে বসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে আর চুল ঠিক করছে। বুক খুব দ্রুত উঠানামা করছে ওর। ইভান উঠে বসতেই ও গিয়ে একগ্লাস পানি খেয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে তার পাশে বসলো।
-“হা….হাতটা দেখি।”
-“কেন কষ্ট দিয়ে এখন আবার তার ঔষধ লাগাতে চাও?”
-“প্লিজ ইভান।”
ইভান আর কোন কথা বললো না হাতটা বাড়িয়ে দিলো। বর্ণালী খুব ধীরে ধীরে হাত পরিষ্কার করে মেডিসিন লাগিয়ে বেন্ডেজ করে দিলো।
ওর মনে যে আমার জন্য কিছু একটা আছে তা ভালো করেই আঁচ করতে পারছি। কিন্তু মুখে কিভাবে কথাটা বের করবো সেটাই ভেবে পাচ্ছিনা।
ইভানের চেহারাটা কেমন শুকিয়ে গেছে মনে হচ্ছে সারাদিন কিছু খায় নি। মনটা খারাপ হয়ে গেলো বর্ণালীর আজ ওর জন্য একটা মানুষ কতটা কষ্ট পাচ্ছে। যেখানে আমিই সারাদিন খেতে পারিনি সেখানে ও কিভাবে খাবে? ও তো আমার চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছে।
-“তুমি এখানে চুপচাপ বসবে। আমি আসছি।”
-“কোথায় যাচ্ছ?”
-“প্লিজ একটু বসো আসছি আমি। বাইরে বের হবে না প্লিজ।”
-“আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো।”
বর্ণালীকে রান্নাঘরে দেখে ওর মা কিছুটা চমকে যান।
-“কিরে এখানে কি করিস? ঘুমাস নি?”
-“আ….আসলে মা ক্ষুধা লেগেছে।”
-“আচ্ছা বস আমি খাবার দিচ্ছি।”
-“না মা আমি নিয়ে নিচ্ছি। তুমি কি করছিলে কর।”
বর্ণালী একটা প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায়।
-“খাবার নিয়ে কই যাস?”
-“ইয়ে….মা রুমে খেয়ে নিবো।”
-“আচ্ছা যা।”
বর্ণালী রুমে এসেই খাবার প্লেটটা সাইড টেবিলের উপর রেখে দরজা লক করে দিলো।
-“এটা কি?”
-“তোমার জন্য খাবার এনেছি প্লিজ খেয়ে নাও।”
ইভান অনেকটা অবাক হয়৷ এই পাগলী কিভাবে বুঝলো যে ও খায় নি? একটু জ্বালানো যাক ওকে।
-“আমি খাবো না।”
-“আসলে তোমাদের মতো এতো ভালো বড়লোকি খাবার না। আমরা যা খাই এগুলোই খেয়ে দেখতে পারো খারাপ লাগবেনা।”
ইভান কিছুটা রেগে গেলো এমন কথা শুনে।
বিছানা ছেড়ে বর্ণালীর একদম কাছে এসে,
-“একদম চুপ। কে বলেছে আমি বড়লোক? আর কে বলেছে আমি সবসময় ভালো খাবার খাই হুম?”
-“না মানে।”
ইভান আর কিছু না বলে খাবার প্লেট হাতে নিলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটালো সেখানেই। ওর যে হাত কাটা কিভাবে খাবে! আমার দিকে কেমন অসহায়ভাবে তাকালো।
-“থাক আমার ক্ষিদে নেই।”
খেতে পারবে না বলে মিথ্যে বলছে ইভান। সবকিছুর জন্য আমিই দায়ী। ওর হাত তো আমার জন্যই কেটেছে। আমি এগিয়ে গিয়ে খাবার প্লেট হাতে নিলাম। খাবার ওর মুখের সামনে ধরে হা করতে বললাম। ও আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে যেনো আমি এই কাজ করবো তা সে স্বপ্নেও ভাবে নি।
বাহ! এ যে মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বউয়ের হাতেই অনেক স্বামী খেতে পায় না আর যে মেয়েটা এখনো আমার প্রেমিকা হয় নি আমার কিনা তার হাতেই খাওয়ার সৌভাগ্য হয়ে গেলো।
-“কি হলো হা করো।”
ইভান এবার চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে যাচ্ছে আর বর্ণালীকে। বর্ণালীও ইভানকে দেখছে কিন্তু যখনি ওর দিকে তাকাচ্ছে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে।
এই ছেলেটা এভাবে দেখে কেন আমায়?
বিরতিহীনভাবে তাকিয়েই আছে। কেমন বাচ্চা ছেলেদের মতো করে খাচ্ছে ও। ইয়া বড় হা করে আর অল্প একটু ভাত যায় মুখে। হুট করেই ইভান আমার হাত ধরে ফেললো।
-“কি হলো?”
-“এটুকু তুমি খাবে।”
-“নাহ আমি খেয়েছি। তুমি খাও।”
-“হুম তা তো একটু আগেই শুনলাম শাশুড়ী মায়ের মুখে।”
বর্ণালী অবাক চোখে ইভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“শাশুড়ী মা মানে?”
-“আরে বাবা তুমি আমার বউ হলে তো তোমার মা আমার শাশুড়ী তাই না?”
এই কথাটা ইভান বর্ণালীর একদম কাছে মুখ এনে আস্তে করে বললো। বউ কথাটা শুনে বর্ণালীর পুরো ভেতরটা নড়ে উঠলো। আসলেই কি ইভানের সাথে ওর বিয়ে হবে নাকি? ইভান যেভাবে বলছে তাতে তো মনে হচ্ছে ও একদম শিওর।
-“বর্ণালী শেষ করো খেয়ে।”
ও আর কথা না বাড়িয়ে বাকি খাবারগুলো খেতে লেগে গেলো। ইভান পাশে বসেই ওর খাওয়া দেখছে৷ খাবারগুলোও কত সুন্দর করে খায় এই মেয়েটা। পাঁচ আঙুলের মাথায় অল্প অল্প করে ভাত ধরে দুই ঠোঁটের ভেতর নিয়ে তারপর মুখে ঢুকায়। ঠোঁট দুটো কি সুন্দর একটা আরেকটার সাথে চেপে ধরে তখন। এই মেয়েটা কখন জানি আমায় পাগল করে ছাড়ে। অবশ্য পাগল হওয়ার কি আর বাকি আছে!
#______চলবে ……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here