#__ফাগুন_প্রেম__পর্বঃ ১৭ +১৮
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#
💛
হাসির সময় কখনো চোখ দুটো খুব ছোট ছোট হয়ে আসছে। বেশি হাসলে হাত দিয়ে মুখের উপর ঢেকে দিচ্ছে। এ কেমন সৌন্দর্য! ইস আমারই না নজর লেগে যায়। আমার শাশুড়ী মা ঠিকই বলেছিলেন ও একটু কালো হয়ে জন্ম নিলো না কেন! সবাই কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। পাশের স্যার তো প্রায় গিলেই খাচ্ছেন তার এই সৌন্দর্য। আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আবারো স্যার আর ম্যাডাম একজনের সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের দিকে চলে গেলো।
ইভান বর্ণালীকে ফলো করে ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ায়।
-“ইভান কই যাস?”
-“ক্যানটিনে তোরাও আয়।”
মালিহার গা জ্বলে যাচ্ছে। রাগে হাতে রাখা পানির বোতলটা চ্যাপ্টা করে মাটিতে ছুড়ে মারে। মিথি ভয় পেয়ে যায়। এমনিতেই বেচারি সবকিছুতে একটু শান্ত স্বভাবের। অল্পতেই আৎকে উঠে।
-“ক….কি হলো রে?”
-“দেখলি না কি হলো? ইভান আমাদের মানে আমাকে ইগনোর করে ওই বড় আপার পিছনে চলে গেলো। হাও কেন হি ডু দ্যাট!”
-“দেখ মালিহা ইভানকে ওর মতো থাকতে দে। তাছাড়া ম্যাম ওর জীবনে আগে এসেছেন। আমরা পড়ে এসেছি। তুই বোঝার চেষ্টা কর ও আসলেই ম্যামকে ভালোবাসে।”
-“ম্যাম? আর ভালোবাসা? ভালোবাসা মাই ফুট।’
মালিহা চিৎকার দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
-“চল ক্যান্টিনে। আর হ্যাঁ তুই যদি আর কোনদিন ইভান আর ওই বড় আপার সাইড নিয়েছিস না তাহলে ভুলে যাবো তুই আমার ফ্রেন্ড।”
মিথি থ হয়ে গেলো। মালিহা ওকে কিভাবে এই কথা বলতে পারলো! বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে আজ একটা ছেলের জন্য আমার সাথে এভাবে খারাপ ব্যাবহার করতে পারলো!
-“কি যাবি তুই ক্যানটিনে?”
-“হুম চল।”
মিথি মনে অনেক কষ্ট পেলেও মালিহাকে বুঝতে না দিয়ে ওর সাথে ক্যানটিনে চলে যায়। হয়তো বন্ধুত্বটা ওর কাছে বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
ইভান গিয়ে একটা টেবিলের চেয়ার টেনে বসে আছে। ক্যানটিনে স্কুল লেভেলের তেমন কোন স্টুডেন্ট নেই। টিফিন টাইম নয় তাই সবাই ক্লাসে। ইভান এক দৃষ্টিতে বর্ণালীর দিকেই তাকিয়ে আছে।
মালিহা আর মিথি এসে ওর পাশেই বসে। সামনে কফি রাখা কিন্তু ইভানের দৃষ্টি সম্পূর্ণ বর্ণালীর উপর। এসব দেখে মালিহার গা জ্বলে যাচ্ছে। সহ্য করতে পারছেনা ও এসব। ইভানের কেন জানি রাগ হচ্ছে খুব। ওই ম্যাডাম কখন উঠে ফোনে কথা বলতে অন্য আশে গিয়েছেন। তখন থেকেই স্যার বর্ণালীর সাথে কেমন চিপকে চিপকে কথা বলতে চেষ্টা করছেন। আর ও বেশ খুশি মনে স্যারের সাথে কথা বলেই যাচ্ছে।
বর্ণালী অন্য টেবিলে বসে থাকলেও আড় চোখে ইভানকে দেখছে। এভাবে কেন তাকিয়ে দেখছে ও! আজব তো! আজকাল ওর সাথে কি হয় ও নিজেই বুঝতে পারেনা।
বেশ লক্ষ্য করছে ইভান রেগে যাচ্ছে কোন বিষয়ের উপর। লাল হয়ে আছে চোখ-মুখ। কিন্তু কেন রেগে যাচ্ছে সেটা বর্ণালী বুঝতে পারছেনা।
ইভান ফোন বের করে বর্ণালীকে একটা মেসেজ পাঠায়।
-“বাহ! আমার সাথে তো কখনো এভাবে হেসে হেসে কথা বলো নি। কেন? আমি কি খুব খারাপ নাকি স্যার খুব ভালো?”
বর্ণালীর এমন কথা শুনে প্রায় শক লাগে। ইভান ওকে এমন কথা কেন বলছে! একবার ইভানের দিকে তাকালো। কেমন জানি লাগছে ওকে। শান্ত হয়ে বসে নি খুব দ্রুত পা ঝাকাচ্ছে বসে বসে। বর্ণালী রিপ্লে দেয়,
-“মানে কি? কি হয়েছে? কি বলছো বুঝতে পারছি না।”
ইভানের অনেক অস্বস্তি লাগছে। বর্ণালীকে ও কোনভাবেই অন্য কোন ছেলের সাথে দেখতে পারবে না। মেনে নিতে পারবে না সে যেই হোক না কেন। স্যার হলেও এতো কেন হেসে হেসে কথা বলা লাগবে!
ইভান মেসেজ দেখেও কোন রিপ্লে দিলো না। হনহনিয়ে ক্যানটিন থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। মালিহার যেনো খুশির শেষ নেই। ইভান ওই বড় আপাকে দেখেই রেগে বেড়িয়ে গেছে। যাক ভালোই হলো আমার জন্য।
কেন জানি বর্ণালীর এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না। ইভানও কিসব বলে চলে গেলো। কোথায় গেলো এই ছেলেটা! দেখতে হবে গিয়ে।
-“উঠছি স্যার ম্যামকে বলবেন আমার একটু কাজ আছে তাই গেলাম।”
-“আরে কিছুক্ষণ বসে যান না। খাবারটা শেষ করে যান।”
-“নাহ ইট’স ওকে। অন্যদিন খাবো এখন আসতে হবে আমাকে।”
-“আচ্ছা তাহলে যান। দেখা হবে।”
বর্ণালী কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দুতলা থেকে ইভানকে দেখতে পেলো পুকুর পাড়ের সিঁড়ির মাঝ বরাবর বসে পাথর ছুড়ে ফেলছে। ধীর পায় বর্ণালী সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রচুর জায়গা বিস্তৃত পুকুরটা বড্ড বেশি ভালো লাগে দেখতে। পুকুরের চারদিক ঘেরাও দেয়া ঝাউ গাছে। পানিটা ঘন সবুজ রঙের। সবসময় একটা নৌকা বাঁধা থাকে। কিন্তু প্রিন্সিপাল স্যার এই পাশে কোন ছাত্র-ছাত্রীদের আসতে দেন না। আগে এখানে প্রায়ই জোড়ায় জোড়ায় স্টুডেন্ট দেখতে পাওয়া যেতো তাই এতো কড়া আইন করা হয়েছে। কিন্তু ইভান হয়তো এই বিষয়টা জানেনা।
ও এখানে কেন এসেছে?
বর্ণালী কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গিয়ে ওর পাশে গিয়েই বসে পড়লো। ইভানের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। ও আনমনে পাথর ছুড়ে মারছে পুকুরে।
-“প্রিন্সিপাল স্যার মানা করেছেন এখানে কোন স্টুডেন্টকে আসতে। তুমি এখানে কি করছো?”
ইভান ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে। পাশে বর্ণালীকে দেখে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। বর্ণালী ওর এমন তাকানোর কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা। কেন জানি ওকে এভাবে তাকাতে দেখলেই হার্ট দ্রুত বিট করতে শুরু করে। ইভান এভাবে তাকালেও ভালো লাগে। মন চায় এভাবেই তাকিয়ে থাকুক। কিন্তু অন্য কেউ তাকালে তো এমন হয়না আরো অসহ্য লাগে খুব বেশি। কেন এমন হয়? ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছি আমি!
-“ইভান এখানে কেন এসেছো?
-“তুমি এখানে কি করছো? তোমার ক্লাস নেই?”
-“নাহ এখন আমার ক্লাস নেই। কিন্তু তোমার ক্লাস নেই?”
-“আছে কিন্তু করছিনা।”
-“কেন সামনে না তোমার এক্সাম আর তুমি এভাবে ক্লাস মিস দিচ্ছো কেন?”
-“এমনিতেই। আচ্ছা তুমি এতো সুন্দর কেন?”
-“মানে?”
-“আজকে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। প্লিজ এভাবে তৈরী হয়ে আর এসো না।”
বর্ণালী কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায়। নিজেকে সামলে ব্রু কুচকে তাকালো ওর দিকে পরক্ষণেই হেসে দিলো।
-“হাহাহাহা পাগল নাকি?”
-“হ্যাঁ তুমি করেছো পাগল। আমি তোমার পাগল।”
ইভান বর্ণালীর হাত ধরে নিজের কাছে নিলো। বর্ণালী হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে বুঝতে পারছেনা। হুট করেই ইভান ওর হাতের তালুতে একটা চুমু খেয়ে বসে। বর্ণালী কিছুটা কেঁপে উঠে। ইভানের চোখ বন্ধ করে আছে। বর্ণালীর ওই হাত নিয়ে ওর গালের মাঝে ঘসে ঠোঁটের উপর এনে চুমু দিয়ে চেপে ধরলো। হার্টবিট যেনো তার সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়াচ্ছে। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা ও নিজেই শুনতে পাচ্ছে। কখন যে ও আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় তা সে নিজেই জানেনা। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।
-“আমাকে একটু ভালোবাসো না বর্ণালী প্লিজ। আমার তোমাকে চাই খুব করে চাই।”
বর্ণালী চোখ খুলে তাকায়। ইভানের হাত থেকে ওর হাত ছাড়িয়ে একটুখানি সরে যায়। কিভাবে যে তার এতো কাছে এসে বসেছে সে খেয়াল ওর ছিলো না।
-“ক্লাসে যাও ইভান। আমি গেলাম।”
-“দাঁড়াও বর্ণালী।”
-” পরে কথা হবে বাই।”
আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালায়। কিন্তু সামনে গিয়ে ওকে মালিহার সামনে পড়তে হয়। মালিহার চোখ দিয়ে যেনো আগুন ঝড়ছে। পাশ কাটিয়ে অফিসে চলে যায় বর্ণালী। চেয়ারে বসে দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।
কেন হয় এমন? ইভান কাছে আসলে কেন আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা?
কেন নিজের মাঝে থাকি না আমি?
ধ্যাৎ ইভানকে তো মেসেজের কথা জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গেলাম। ওইটা কি মেসেজ দিলো ও! পরে জিজ্ঞেস করতে হবে ওকে।
এদিকে ইভানের রাগটা আবারো বেড়ে যায়। বর্ণালী ওর কথা এভয়েড করে চলে যেতে পারলো?
^
বর্ণালী কোচিং-এ গেলো কিন্তু আজকের ক্লাসে ইভানকে দেখতে পেলো না। কেন জানি মনটা খারাপ হয়ে আছে। কোচিং করিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। বাসার সামনে এসে যা দেখে তাতে ওর চোখ যেনো ছানাবড়া হয়ে গেছে। ইভান এই সময় ওর বাড়ির সামনে কি করছে! রিকশা ছেড়ে দ্রুত ইভানের হাত ধরে বাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। কেউ এভাবে দেখে ফেললে নানা ধরনের প্রশ্ন করবে ওকে। ভয়ে চুপসে আছে।
-“ইভান তুত….তুমি এখানে কেন?”
-“কেন আমাকে দেখে তোমার মন খারাপ হয়ে গেলো নাকি?”
-“আরে না। কিন্তু এই সময় এখানে কেন তুমি?”
-“কেন আসতে পারিনা?”
-“তা না। আচ্ছা তখন একটা জিজ্ঞেস করতেই ভুলে গিয়েছিলাম।”
-“কি কথা”
-“ওইসময় তুমি এটা কি মেসেজ দিয়েছিলে?”
-“কেন? বুঝনি কি দিয়েছি? স্যারের সাথে তোমার এতো কেন হাসাহাসি?”
-“তুমি এসব কি বলছো? ওইটা জাস্ট নরমাল কথাবার্তা ছিলো ইভান।”
-“আচ্ছা আমার সাথে কখনো তো এভাবে হেসে হেসে কথা বলো নি। তাহলে স্যারের সাথে এতো কিসের হাসাহাসি?”
বর্ণালী না চাইতেও কেন জানি রেগে যাচ্ছে। ও ইভানের কাছ থেকে কখনোই এমন কথা আশা করেনি। নিজের উপর এমন বাজে কথা সহ্য করতে পারছেনা। তবুও ঠান্ডা কন্ঠেই বললো,
-“ইভান তুমি কি জানো কি সব আজেবাজে কথা বলছো? তুমি কখনোই এমন কথা বলতে পারো না। কখনোই আমি তোমাকে এসব বলার অধিকার দেই নি।”
ইভান যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর বর্ণালী ওকে অধিকার নিয়ে কথা শুনাচ্ছে। আসলেই তো ওকে তো বর্ণালী বন্ধু ছাড়া কোন অধিকার দেয় নি। রাগে মাথার শিরা টনটন করছে। ঘামছে ইভান মাথার ডান পাশ বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। এভাবেও বর্ণালীর ইভানকে যেন খুব ভালো লাগছে। ওই বেয়ে পড়া ঘামের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে। কিছুসময়ের জন্য ও ভুলেই গেছে যে ইভান ওর উপর রেগে আছে। ভুলে গেছে যে ইভান ওকে নানা ধরনের কথা শুনাচ্ছে। যা শুনতে ওর মোটেও ভালো লাগছেনা। ইভান রাগে কাঁপছে। ইচ্ছে করছে যা আছে ভেঙে ফেলতে কিন্তু এখন ও কি ভাঙবে ভাবতে না ভাবতেই পকেট থেকে ফোন বের করে রাস্তায় ছুঁড়ে মারে। সাথে ফোনের টুকরো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ে। বর্ণালী কেঁপে উঠে ওর এমন কান্ড দেখে। সেদিনের ইভানকে ও আরো একবার দেখতে পাচ্ছে।
তখনি তাদের মাঝে তৃতীয় ব্যাক্তির আগমন ঘটে৷ বর্ণালী যা কখনোই চায় নি তাই ওর সাথে হচ্ছে এই মুহুর্তে। ভয়ে হাত-পা কাঁপছে ওর। তৃতীয় ব্যাক্তিটি এসেই বললো,
-“কি হয়েছে বর্ণালী? এনি প্রবলেম?”
বর্ণালী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,
-“ন….নাহ কোন প্রব্লেম না।”
-“এই ছেলেটা কে?”
-“আ….আমার ফ্রেন্ড।”
-“ওহ!”
ইভান ভালো করে খেয়াল করে দেখলো সেদিনের সেই ছেলে। যেদিন প্রথম বর্ণালীকে ড্রপ করতে এসেছিলো সেই রাত্রে এই ছেলেকে দেখেছিলো ওদের দিকে অন্যরকম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে। ইভান নিজের কিউরিওসিটি ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই বসে,
-“আপনি কে?”
ছেলেটা ইভানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে জবাব দিলো,
-“আমি বর্ণালীর….”
-“আপনি বাসায় যান। আর ইভান তুমি এখন বাসায় যাও পড়ে কথা হবে।”
বর্ণালী ছেলেটাকে কিছু বলা থেকে থামিয়ে দিলো। ইভান তবুও দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণালী ওই ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-“আ…..আপনি যান বাসায় প্লিজ।”
-“হুম বাই।”
ইভানের দিকে একবার তাকিয়ে ছেলেটা সামনের গেট দিয়ে ঢুকে গেলো।
-“ছেলেটা কে?”
-“আমার বয়ফ্রেন্ড…..”
বর্ণালীর ফোন বেজে উঠতেই আর কথা বলতে পারলো না। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ঈশা কল করেছে। ঈশার সাথে কথা বলতে একটু দূরে সরে গেলো। কথা শেষ করে পিছন ফিরে দেখলো ইভান আর সেখানে দাঁড়িয়ে নেই। ওর ফোন সেখানেই টুকরো অবস্থায় পড়ে আছে। ফোনটা কুড়িয়ে সিমটা খুলে সাথে নিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো। এতো রাগ কেন এই ছেলেটার! বড়লোকের ছেলেরা সবসময়ই মনে হয় এমন ঘাড় ত্যাড়া হয়।
^
আজ ছেলেকে এতো তাড়াতাড়ি আসতে দেখে সাহারা ইসলাম অনেক খুশিই হলেন।
-“কিরে ইভান এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি আজ?”
-“কেন মা বাসায় আসবো না নাকি? না আসলে খুশি হতে নাকি?”
-“কি সব আজেবাজে বলছিস বাবা?”
সাহারা ইসলাম ভালো করেই বুঝতে পারলেন ছেলের মন মেজাজ কোন একটা কারণে খারাপ আজকে।
-“আচ্ছা যা তো ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খাবি।”
-“আমি খাবো না তোমরা খেয়ে নাও।”
-“খাবিনা মানে কি? সকালেও হালকা নাস্তা করে গেলি।”
-“মা বলেছি তো খাবো না মানে খাবো না।”
ঈশা উপরেই সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের কথাগুলো শুনছিলো। খুব করে বুঝতে পারছে কিছু একটা হয়েছে।
-“ইভু।”
-“বুমনি আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দাও। পরে খেয়ে নিবো আমি।”
ঈশা আর ইভানের পিছনে গেলো না। দ্রুত রুমুকে কল লাগালো।
-“রুমু বর্ণালীকে একটা কল করে একটু জানতে চেষ্টা করতো প্লিজ ইভানের সাথে ওর কিছু হয়েছে কিনা।”
-“কেন রে কি হয়েছে?”
-“ইভান বাসায় এসেই রুম লক করে বসে আছে। কারো সাথে ভালো করে কথাও বলেনি। দুপুরের খাবারটাও খেলো না।”
-“আচ্ছা রাখ আমি দেখছি।”
-“প্লিজ আমাকে জানাস একটু।”
^
সারাদিন ইভান রুম থেকে বের হয়নি। চোখ দিয়ে শুধু একনাগাড়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। পুরো রুমের নকশা বদলে গেছে। জিনিসপত্র ভেঙেচুরে একাকার করে ফেলেছে। বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। কখন যেনো ঘুম লেগে গিয়েছিলো খেয়ালই ছিলো না। বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে টেবিলে যায় খেতে।
-“রানীসাহেবা….”
ইভানের চিৎকার শুনে রানু রান্নাঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে।
-“জ্বি দাভাই”
-“আমার রুমটা পরিষ্কার করে দাও তো।”
-“জ্বি এখনি কইরা দিতাছি।”
রানু উপরে উঠতে গেলেই ইভান আবার বলে উঠে,
-“আগে আমাকে খাবার দিয়ে যাও।”
-“জ্বি দিতাছি।”
-“তুই যা রানু আমি ওকে খাবার দিচ্ছি।
পেছন থেকে সাহারা ইসলাম কথাটা বলে উঠেন।
রানু ইভানকে দেখেই বুঝতে পারছে যে ও খুব রেগে আছে। তাই দ্রুত উপরে গিয়ে রুম পরিষ্কার করে দিয়ে এলো। ইভান খেয়ে ঈশার রুমের দিকে পা বাড়ায়।
-“বুমনি আসবো?”
ঈশা আলমিরা গুছাচ্ছিলো। ভাইকে দেখেই গুছানো বন্ধ করে এসে বসে। ইভান চুপ করে বোনের পায়ের কাছে ফ্লোরে বসে যায়। আলতো করে তার কোলের উপর মাথা রাখে। মায়ের চাইতে ও বোনকে বেশি কাছে পেয়েছে তাই তো ছোট থেকে বড় সবকিছুই একে অপরের সাথে শেয়ার করে। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ঈশা।
-“ওর বয়ফ্রেন্ড আছে বুমনি।”
চোখের কোন বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ঈশার পায়ের উপর।
-“ও নিজে বলেছে?”
-“হ্যাঁ বুমনি।”
-“ওকে পাল্টা প্রশ্ন করিস নি কেন?”
-“কি করবো আমি?”
-“কেন? ভালো করে বিষয়টা বুঝে আসলি না কেন? ভালো করে শুনেছিলি কি বলেছিলো?”
-“হ্যাঁ বুমনি আমি শুনেছি ও আমাকে বলেছে ওর বয়ফ্রেন্ড ওই ছেলে।”
-“কিন্তু আমি তো অন্য কিছু শুনেছি?”
-“মানে?”
-“তুই নিজেই জিজ্ঞেস করে নে বর্ণালীকে। ওর কাছ থেকে শুনলেই ভালো হবে। যা কল কর ওকে।”
-“আমি তো ফোন ভেঙে ফেলেছি।”
-“ওর বাড়ি তো এখান থেকে দশ মাইল দূরে না।”
ইভান ঈশার দিকে তাকিয়ে একটা ম্লান হাসি দিলো। ঈশা ভাইয়ের চোখ মুছে দিলো।
-“যা না বসে আছিস কেন?”
-“হু যাচ্ছি।”
^
বর্ণালীর কেমন একটা অপরাধবোধ কাজ করছে। ইভানের সাথে এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।
কিন্তু ইভান কেন ওকে এভাবে কথা বললো?
ইভান কি আমাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছিলো?
হয়তো তাই হবে। এই রুমুটা কল দিয়ে ইচ্ছেমত বকে দিলো আমাকে সাথে তো আরেকটা টেনশন ফ্রি-তে দিয়ে দিলো। ইভানের জন্য আমার কেন টেনশন হচ্ছে? ও তো আমার ফ্রেন্ড তাই হয়তো ওর জন্য এভাবে টেনশন হচ্ছে। তখন তো আমার সামনেই কত রেগে গেলো। এতো দামি ফোনটাও ভেঙে ফেললো। বাসায় গিয়ে না জানি কি করছে। ফোন দিয়েও লাভ নেই ওর তো এখন ফোনটাও নেই। ইভান কি সত্যিটা শুনে আর আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপটাও রাখবে না?
বর্ণালীর চোখের কোন মুছে নিজেই অবাক হয়ে গেলো।
ওর চোখে জল? কিন্তু কেন?
অশান্তি করছে মনটা। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলো। আকাশে আজ পূর্ণ চাঁদ উঠেছে। কেমন ধবধবে সাদা গোলগাল চাঁদটা জ্বলজ্বলে হয়ে আছে পাশের তারাগুলো মুক্তোর মতো ঝলমল করে আলো ছড়াচ্ছে। আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে সামনে দৃষ্টি পড়তেই তখনি চোখ যেনো কারো উপর গিয়ে থমকে গেলো। কারো ছায়া দেখতে পেলো ও।
আসলেই কি ও ইভান নাকি? না না ইভান কেন এখানে আসবে! কিন্তু না ওর চোখ কে সত্যি করে দিয়ে সেই ছায়াটা ওর দিকেই এগিয়ে আসছে। ইভানের চোখে জল স্পষ্ট চিকচিক করছে। রেলিঙের পাশে এসে ইভান থমকে গেছে।
-“তুমি?”
-“ছেলেটার নাম কি?”
-“কার নাম?”
-“তোমার বয়ফ্রেন্ড।”
-“ভেতরে এসো ইভান।”
-“এখানেই ঠিক আছি।”
-“প্লিজ ভেতরে এসো কেউ দেখলে প্রবলেম হয়ে যাবে।”
-“এই কেউটা কি তোমার বয়ফ্রেন্ড?”
-“তুমি যা ভাবছো তা একদমই নয়।”
-“তাহলে কি?”
-“তুমি শুনতে ভুল শুনেছো আর বুঝতেও ভুল বুঝেছো।”
-“তাহলে বুঝিয়ে দাও।”
-“ভেতরে এসো আগে।”
ইভানকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বর্ণালী আবারো বললো,
-“প্লিজ এই কথাটা রাখো। ভেতরে এসো।”
ইভান রেলিঙ টপকে ভেতরে আসে। বর্ণালী বেলকনির দরজাটা লাগিয়ে ঠিক অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইভান এই তাকানোটা সহ্য করতে পারছেনা। চুপ না থেকে বলেই ফেললো,
-“আগে কেন বলোনি তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে? তাহলে তো আমি আর তোমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করতাম না।”
-“ও আমার বয়ফ্রেন্ড না।”
-“মানে?”
ইভানের মুখে যেনো একটুখানি হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
-“আসলে…..”
-“আসলে কি বর্ণালী?”
-“ওর নাম জয়। স্কুল থেকেই আমাকে পছন্দ করতো। আমাকে বলেও ছিলো আমাকে যে ভালোবাসে। আমিও ওকে কিছুটা পছন্দ করতাম। কিন্তু লজ্জায় আর ভয়ে কখনোই সাহস হয়নি বলার। বাবা যখন নেশা করা শুরু করেন তখনই আমি আমার পছন্দকে আমার মনের মাঝে দাবিয়ে দেই। হুট করেই একদিন সে বিয়ে করে নেয়। তার মা অসুস্থ হওয়ার তাকে বিয়ে করতে হয়। বি….বিয়ের কয়েকমাস পর জয় একদিন আবারো আমার কাছে আসে ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে।”
-“কিহহহহ? মাথা খারাপ নাকি এই ছেলের? বিয়ের পর কোন সাহসে তোমার কাছে আসে তাও ভালোবাসার প্রস্থাব নিয়ে?”
-“ইভান ধীরে কথা বলো প্লিজ। কেউ শুনতে পাবে।”
-“তারপর তুমি কি করলে?”
-“ধীরে ইভান।”
-“ওকে বলো।”
-“সেদিন আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। আমি কখনোই কারো সংসার ভাঙতে পারতামনা। কিন্তু সে আবারো ফিরে আসে বারবার ফিরে আসে। একসময় মরে যাওয়ার হুমকি দিতে শুরু করে। বলে যে আমাকে না পেলে মরে যাবে। নিজের জান দিয়ে দিবে। আমি ভয় পেয়ে যাই। আর….”
-“আর? আর কি বর্ণালী?”
-“আর তখন আমি রাজি পেয়ে যাই।”
-“বর্ণালীইইইই।”
বর্ণালী ইভানের চিৎকারে কেঁপে উঠে। ভয় পেয়ে যায়। ওকে তো ভয় পায়ই সাথে এই ভয়ও পায় কেউ যদি ওর কথা শুনে ফেলে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইভান বর্ণালীর দু’কাঁধে ধরে ঝাকিয়ে বলে,
-“কীভাবে পারলে তুমি? কীভাবে?”
-“ইহ…..ইভান মাথা ঠা….ঠান্ডা করো পি…..প্লিজ। আ….আগে পুরোটা শুনো তারপর।”
-“তারপর কী? আর কী শুনার বাকী রয়েছে?”
বর্ণালী ইভানের হাত ধরে বলে,
-“আ…আমাকে একটাবার বলার সুযোগ তো দাও।”
ইভান চুপ হয়ে যায়। বিছানায় বসে হাঁটুর উপর ভর দিয়ে মাথায় দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে। বর্ণালী আলতো করে ইভানের পাশে এসে বসে পড়ে।
-“আসলেই আমার কিছু করার ছিলো না। আমি ভয়ে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।”
-“জয়ের সাথে তোমার এখনো কোন সম্পর্ক আছে?”
-“জয় আর আমার মাঝে সম্পর্ক নেই এখন। সেদিন শুধু আমি ভয়ে ওকে ভালোবাসি বলে দিয়েছিলাম। ওর প্রতি আমার কোন ফিলিংসই কাজ করেনা। যখন আমি রুমুকে সব খুলে বলি রুমু আমাকে প্রচুর বকাবকি করে। অনেকটা রেগে যায় আমার উপর। পরেরদিন এসে জয়কেও প্রচুর বকাবকি করে যায়। ওয়ার্নিং দিয়ে যায় আমার আশেপাশে যেনো না দেখে।”
-“তারপর?”
-“কিন্তু তারপরও সে আমার পিছু ছাড়ে নি। ফোন করা যেখানে সেখানে দেখা করতো এভাবে প্রায়ই কথা হতো। আমি বাধ্য হয়ে কথা বলে নিতাম। কিন্তু যেদিন জানতে পারলাম জয়ের স্ত্রী প্রেগন্যান্ট সেদিন থেকে আমি আর ওর সাথে কোন যোগাযোগ রাখি নি। মুখের উপর না করব দিয়েছিলাম যাতে আমাকে আর কখনোও ডিস্টার্ব করে না। কিন্তু ও এখনো আমার প….পিছু ছাড়েনি। এখনো বলে আমাকে ভালোবাসে। নিজের বউকে ডি…ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বি….বিয়ে করবে বলে।”
ইভান সম্পূর্ণ নিশ্চুপ হয়ে আছে। কোন কথা বলছে না। মাথা এখনো নিচু করে আছে। বর্ণালী ভয়ে ভয়ে ইভানের কাঁধে হাত রাখে,
-“ইহ…..ইভান।”
-“তুমি ওকে ভালোবাসো?”
-“না ইভান আমি কেন ওকে ভালোবাসতে যাবো? বললাম না ওর প্রতি আমার কোন ফিলিংসই কাজ করে না।”
-“ও কি কখনো তোমার শরীরে হাত দিয়েছে?”
বর্ণালীর গলার পানি যেনো শুকিয়ে যাচ্ছে। ইভান এমন প্রশ্ন কেন করছে।
-“কি হলো বলো? তোমাকে কি ও কখনো ছুঁয়েছে?”
-“হু।”
বর্ণালী মাথা নিচু করে জবাব দিলো। ইভান বিছানার কাছে রাখা সাইড টেবিলে পানির জগ হাত দিয়ে এক ধাক্কায় ফেলে দেয়। খানিকটা পানি বর্ণালীর উপর এসে পড়ে। শরীরটা ভয়ে কেঁপে উঠে ওর।
এমন আওয়াজ শুনে শারমিন বেগম রান্নাঘর থেকে বের হয়ে আসেন। সজিব নিজের রুম থেকে বের হয়।
-“কি হলো মা? কিছু কি ভেঙেছে?”
-“কি জানি বর্ণালীর রুম থেকে আওয়াজ এলো।”
-“দেখো তো কি হলো।”
-“হ্যাঁ দেখছি তুই যা।”
শারমিন বেগম বর্ণালীর রুমের বাইরে এসে দরজায় ধাক্কা দিয়ে ডাক দেন।
ও এমনিতেই ভয়ে চুপসে আছে মায়ের ডাকে ভয়ের পরিমাণ আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
-“কি হলো রে বর্ণালী?”
-“ক….কই মা। ক….কিছু না তো।”
-“দরজা খোল। কিসের আওয়াজ এলো?”
বর্ণালী একবার নিজের দিকে তাকালো। গোলাপি রঙের জামাটা বেশ অর্ধেকটাই ভিজে গিয়েছে। এভাবে মায়ের সামনে যাওয়া যাবেনা।
ইভানের দিকে চোখ তুলে তাকালো ওর চোখ লাল হয়ে আছে।
-“কিরে দরজা খোল। কিসের আওয়াজ ছিলো রে? কিছু কি ভেঙেছে?”
মায়ের ডাকে বর্ণালী আবারো দরজা দিয়ে তাকালো।
-“মা পানি খেতে উঠেছিলাম হাত লেগে জগ ফ্লোরে পড়ে গেছে সেটারই আওয়াজ ছিলো। তুমি যাও আমি ঠিক আছি।”
-“আচ্ছা শুয়ে পড়।”
-“হ্যাঁ।”
-“জয় তোমার কোথায় কোথায় ছুঁয়েছে বর্ণালী?”
-“ইহ….ইভান প্লিজ এমন কিছু নয়।”
-“তাহলে কেমন বর্ণালী? বলো?”
-“ও জাস্ট একদিন আমায় জ….জড়িয়ে ধরেছিলো আর হাত ধরেছিলো কয়েকবার।”
-“ও কেন তোমাকে জড়িয়ে ধরবে? আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরবো। আমার যা ইচ্ছে তাই করবো। ওর এমন সাহস কেন হবে? তুমি কেন ওকে জড়িয়ে ধরতে দিলে? কেন? আমাকে তো কখনো এভাবে জড়িয়ে ধরতে দাও না। ভালো না বাসলে কেন তুমি ওকে জড়িয়ে ধরতে দিলে?”
-“ও আমাকে আচমকাই জড়িয়ে ধরেছিলো ইভান। আমি ইচ্ছে করে ওকে জড়িয়ে ধরতে দেই নি।”
ইভান বর্ণালীর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে একেবারে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বর্ণালীর বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে গেছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ইভানের চোখে প্রচন্ড রাগ দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী।
💛
#_____চলবে……..
#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১৮
💛
ইভান বর্ণালীর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে একেবারে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা বেড়ে গেছে। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। ইভানের চোখের দিকে তাকাতেই প্রচন্ড রাগ দেখতে পাচ্ছে বর্ণালী। এই রাগের কারণ খুঁজে পাচ্ছেনা ও। ইভান বর্ণালীর হাত পেছনে মুড়িয়ে পিঠের মাঝে ঠেকিয়ে শক্ত করে ধরে আছে। হাতের ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নেয় বর্ণালী।
-“ইভান ব্যাথা পাচ্ছি আমি।”
ইভানের কানে যেনো ওর কথাই পৌঁছাতে পারছেনা। এখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ডান হাতটা তুলে বর্ণালীর কানের পেছনে রাখলো। ইভানের কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছে। এমনিতেই বর্ণালীর ড্রেস আর প্লাজো ভিজে শরীরের সাথে চিপকে আছে। আর এদিকে ইভান এভাবে ধরে আছে। ইভান আলতো করে ওর কানের পেছনে বৃদ্ধাঙ্গুলী দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। ধীরে ধীরে মুখটা কানের কাছে নিয়ে আসে। বর্ণালীর যেনো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারউপর এমনভাবে হাত ধরেছে যে হাতের ব্যাথায় নড়তে পারছেনা। ওকে আটকানোর আর কোন পথ খোলা না দেখে বলে,
-“ই…..ইভান তুমি তোমার প্রমিজ ব্রেক করছো। আমার লাগছে খুব।”
বর্ণালীর চোখে জল দেখে ইভানের চোখগুলো শান্ত হয়ে আসে। চোখের এক ফোটা জলের সাথে কেমন যেনো একটা মায়া ঝড়ে পড়লো। বর্ণালীর হাত ছেড়ে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। কেমন অপরাধবোধ অনুভব করছে। রাগের মাথায় এসব কি করে ফেললো ও! এতো বড় ভুল কিভাবে করলো ও?
ওর জন্য সে কাঁদছে! হ্যাঁ ওর জন্যই কাঁদছে।
কিভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমার বর্ণালীকে? কিভাবে?
ইভান নিজেকে সামলে বিছানায় বসে গেলো। বর্ণালী চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে এক হাতে আরেক হাতের মাঝে নিয়ে ঘসে যাচ্ছে। ব্যাথা করছে খুব। ধবধবে ফর্সা হাতের কব্জির পাশে লাল হয়ে গেছে।
-“একটু পানি পাওয়া যাবে?”
ইভানের কথা শুনে বর্ণালী চোখ মুছে ধীর পায় এগিয়ে ওর পানির বোতলটা পড়ার টেবিল থেকে নিয়ে আসে। অল্প একটু পানি আছে ইভানের দিকে এগিয়ে দেয়। এক নিশ্বাসে পানি খেয়ে তারপর লম্বা একটা নিশ্বাস নেয়।
-“আ…….আই এম সরি। আ…..আসলে তোমাকে ছোঁয়ার কোন অধিকার নেই আমার কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।”
বর্ণালী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। চুপ হয়ে আছে। ইভানের চোখের কোনে জল দেখতে পাচ্ছে ও।
-“স…সরি বর্ণালী তোমার সাথে এমন ব্যাবহার করা একদমই ঠিক হয় নি। আই এম রিয়েলি সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও বর্ণালী প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
ইভান এই প্রথম কারো কাছে মাথা নিচু করেছে। কাউকে সরি বলেছে। ভুল করলেও কখনো কাউকে সরি বলে নি। নিজের জন্য না ভেবে আজ বর্ণালীর জন্য ভেবেছে ও। আজ যে সত্যিই সে ভুল করে ফেলেছে। না চাইতেও তার ভালোবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সরি তো বলারই ছিলো। ইভান ফ্লোরে বসে পড়ে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ওর। কিভাবে বর্ণালীকে এতোটা খারাপ কথা শুনাতে পারলো ও? কিভাবে? বর্ণালী কি আমাকে মাফ করবে? নাহ যতক্ষণ না মাফ করছে ততক্ষণ তো ক্ষমা চাইতেই হবে।
-“ক্ষমা করবে না? এইযে প্রমিজ করছি আর কোনদিন আমি তোমাকে কোন কিছু প্রশ্ন করবো না। কোন বাজে কথা বলবো না। জানি অধিকার দাও নি তবুও আজকে ভুলটা করে ফেলেছি তার ক্ষমা কি পাবো না?”
বর্ণালী ইভানকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। ও কেমন পাগলের মত ব্যাবহার করছে এখন। ফ্লোরে বসে ওর দিকে তাকিয়ে দু’হাত জোর করতে যেতেই বর্ণালী হাত ধরে ফেলে।
-“প্লিইইজ।”
-“ইভান ইট’স ওকে। আমি তোমার কথায় কোন কিছুই মনে করিনি। প্লিজ উঠে দাঁড়াও।”
-“আগে বলো ক্ষমা করেছো?”
-“হ্যাঁ করেছি।”
-“সত্যি ক্ষমা করেছো?”
-“হ্যাঁ তো প্লিজ উঠো এখন।”
ইভান উঠে দাঁড়ায়।
-“চলি।”
-“কই?”
-“বাসায় যাবো না নাকি?”
-“ওহ হ্যাঁ যাবেই তো। দাঁড়াও এক মিনিট।”
বর্ণালী ইভানের সিম এনে ওর সামনে ধরে।
-“তোমার সিম কার্ড।”
-“ওহ থ্যাংকস ভালোই হলো আর তুলতে হবে না সিম কার্ডটা।”
-“হুম। ইভান একটা কথা বলার ছিলো।”
-“হ্যাঁ বলো।”
-“ইয়ে মানে…… নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার একটু চেষ্টা করো প্লিজ। কোন কথায় কার কখন কতটা কষ্ট লাগে তা যে কষ্ট পায় সে ছাড়া অন্য কেউ আন্দাজও করতে পারেনা।”
-“জানিনা পারবো কিনা কিন্তু চেষ্টা করবো। আসি।”
ইভান দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ভালো লাগছেনা আর।
কিভাবে বর্ণালীকে এসব কথা বলতে পারলাম? কিভাবে ওকে ভুল বুঝতে পারলাম? কিছু বলার আগে কেন একটাবার ভেবে দেখলাম না?
কিভাবে ওর সামনে মুখ দেখাবো? নাহ আমি আর ওর সামনে আসবো না। কিন্তু আমি কি পারবো ওকে না দেখে থাকতে?
ইভানের পিছু পিছু বর্ণালী বেলকনি পর্যন্ত এগিয়ে যায়। রেলিঙ টপকে ওইপাশে গিয়ে একবার বর্ণালীর দিকে তাকায় ইভান।
-“সরি। ক্ষমা করে দিও। আ…..আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না। আসলে হয়তো কষ্ট দেয়ার মত কোন পরিস্থিতি আসবেই না। চলি। ভালো থেকো খুব বেশি।”
বর্ণালী ইভানের কথার ঠিক অর্থটা বুঝতে পারলো না। ইভান ততক্ষণে সেখান থেকে চলে গেলো। চোখ মুছে বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার দিকে রওয়ানা দিলো। তার জন্য বর্ণালী কষ্ট পায় এটা সে চায় না। কখনোই না। এতে যদি নিজে কষ্ট পেতে হয় সেটাও সে মেনে নিবে। নিঃশব্দে ইভানের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বার বার হাতের উল্টো দিক দিয়ে জল মুছে যাচ্ছে কিন্তু পরক্ষনেই আবারো জল গড়িয়ে পড়ছে। হ্যাঁ এটা তার প্রাপ্য। বর্ণালীকে কষ্ট দেয়ার ফল এটা।
`
সজিব অনেক্ষণ ধরে বসে চাকুরী বার্তা পড়ছে। কোন একটা ভালো সার্কুলার এসেছে কিনা দেখছে। অবশ্য এতো ভালো সার্কুলারও খুঁজছে না। কোনরকম একটা জব হলেই হতো সেটাও তো পাচ্ছেনা। বোনটাও বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে ওকে আর এভাবে কত দিন বসিয়ে রাখবে। অনেক দ্বায়িত্ব রয়েছে ওর উপর। সেগুলো কবে কিভাবে পালন করবে ভেবে পাচ্ছে না। ফোনটা সারাদিনে একবারও বের করে দেখা হয় নি। বিছানা এপার ওপার করে মোবাইল খুঁজে যাচ্ছে ও। অবশেষে বিছানায় এক যুদ্ধের পর মোবাইল খুঁজে পেলো সজিব। কিন্তু ফোন হাতে নিয়েই এতোটা কল দেখে মাথাই হ্যাং হয়ে গেলো। প্রতিরাতে আসা সেই আননউন নাম্বার যেটা Unknown লিখেই সেইভ করে রেখেছি সেটা থেকে ৫টা কল, ঈশার দুটো কল আর আরেকটা নতুন একটা আননউন নাম্বার থেকে দুটো কল এসেছে। সবার আগে এই নতুন আননউন নাম্বারে কল দিলাম।
-“আসসালামুয়ালাইকুম কে বলছেন?”
-“ওয়ালায়কুমআসসালাম। আপনি কি সজিব হাসান?”
-“জ্বি হ্যাঁ।”
-“আপনার কুরিয়ারযোগে একটা চিঠি এসেছে দয়া করে কালেক্ট করে নেবেন।”
-“জ্বি আচ্ছা। ধন্যবাদ।”
আমার নামে কুরিয়ার কোথা থেকে আসবে? হ্যাঁ কয়েকদিন আগেই তো HSBC ব্যাংক আর পূবালী ব্যাংকে চাকুরির আবেদন করলাম হয়তো চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছে। অবশ্য এ আর নতুন কি। প্রায়ই তো চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকে কিন্তু ঘুষের অভাবে চাকুরীটা তো আর হয়ে ওঠে না। আজকাল চাকুরী যে সোনার হরিণ। মামা-চাচা থাকলেই চাকুরী পাওয়া সম্ভব নাহলে কোন ব্যাবসা বা সিএনজি কিনে ড্রাইভিং অথবা বিদেশে পাড়ি জমাতে হবে। যাই হোক সকালে গিয়েই কালেক্ট করতে হবে চিঠিটা। আরো কয়েকবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। এতো দ্রুত ভেঙে গেলে চলবেনা। হুম ঈশা ঠিকই বলে সোনার হরিণ বলে কথা এতো দ্রত ধরা দেবে নাকি! unknown নাম্বারে আর কল দিলাম না। ঈশাকেও কল দিলাম না। কি প্রয়োজন শুধু শুধু কারো উপর মায়া বাড়ানোর। ভালোই তো আছি। সে না হয় তার মতোই কাউকে খুঁজে নেবে। ঈশার মতো বড়লোকের মেয়ে আমার জন্য নয়।
`
বর্ণালী চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। মনটাকে কেন জানি শান্ত করতে পারছেনা। ঘুম ভেঙে গেছে সেই ৩টার দিকে আর ঘুম আসলোই না। তার চেয়ে বরং তাহাজ্জুদের নামাজটা পড়ে নেই। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ তেলাওয়াত করতেই ফজরের আজান কানে এলো। ফজরে নামাজটা আদায় করে চলে গেলো রান্নাঘরে। শারমিন বেগম খুব মনযোগ দিয়ে রান্না করছেন। এই তো সেই মা যে কিনা ভালোবেসে বিয়ে করে আজ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কষ্ট করে যাচ্ছেন। একটাদিন অল্প একটুও সুখের দেখা পেলেন না। যেখানে মা ভালোবেসে বিয়ে করে সুখের দেখা পান নি সেখানে মেয়ে পাবে এই আশা কিভাবে করা যায়! নাহ আমি এই আশা করিনা। তাই তো এসব থেকে যতদূর সম্ভব দূরেই থাকার চেষ্টা করছি আর দূরেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
-“কিরে ওইখানে দাঁড়িয়ে কি করিস? আজ যে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলি?”
মায়ের আওয়াজে ঘোর কাটে আমার।
-“এইতো মা ঘুম ভেঙে গেলো তাই উঠে গেলাম। তুমি কি করছো?”
-“খিচুড়ি রান্না করি। তোর আর সজিবের তো খুব পছন্দ খিচুড়ি ভুনা তাই তো রান্না করছি।”
-“আর ডিম সিদ্ধ?”
-“ওই দেখ ভুলে গিয়েছিলাম। এখনি বসিয়ে দিচ্ছি।”
-“আমি বসাচ্ছি মা। তুমি তোমার কাজ করো।”
অনেকদিন পর খিচুড়ি ভুনা আর ডিম সিদ্ধ খাবো। সাথে শসা আর লেবু হলে তো হয়েই গেলো। বেশ লাগে খেতে। ইভানের কথা মাথা থেকে সরাতেই পারছিনা। এই ছেলেটা মাথার মাঝে পোকার মতো ঢুকে বসছে। নাহ আজেবাজে ভাবনা রেখে কাজে মনযোগ দেই।
`
দরজায় কারো নক শুনতে পাচ্ছে ইভান।
-“হেই হ্যান্ডসাম কয়টা বাজে দেখেছো? উঠে যাও বাবা। দরজা খোল তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
ইভান টিপটিপ করে চোখ খুলে তাকায়। সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো কাল রাতে বলতেই পারেনা। বাবা আজ এই সময় আমাকে ডাকছেন! বাবা তো কোনদিন আমায় ডাকেন না। হুড়মুড় করে উঠে ইচ্ছাকৃতভাবে বিছানাটা একটু এলোমেলো করে দরজা খুলে দেয় ইভান। চোখ কচলে বাবার দিকে তাকায়। ফারহান আহমেদের মুখে এক পশলা হাসি ঝুলে আছে। এই হাসির রহস্য অনুমান করতে পারছেনা ইভান। বাবা খুব খুশি হলেই এমন হাসি দেন। কিন্তু আজকে এমন কি যে বাবাকে এতো খুশি লাগছে!
-“কয়টা বাজে ইভান সাহেব?”
-“এতোবড় কোম্পানির মালিকের বাড়িতে একটা ঘড়ি নেই? তিনি কিনা আমাকে এসে টাইম জিজ্ঞেস করছেন?”
-“ছাড় বজ্জাত ছেলে। দুপুর ২টা বেজে গেছে আজকে ঘুম থেকে উঠার কোন নাম নেই কেন?”
-“রুমের ভেতর দুপুর না রাত কিছুই বোঝা যায় নাকি? আর আমাকে তো কেউ ডাকেও নি আজকে। তাই আর ঘুম ভাঙেনি।”
-“আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে এসো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
-“আমার জন্য এখন আবার কিসের সারপ্রাইজ বাবা?”
-“আসলেই তো দেখবি। কাম ফাস্ট মাই চাইল্ড।”
ইভান কিছুটা হাসার চেষ্টা করলো। ফ্রেশ হয়ে নীচে এসে দেখে সবাই দুপুরের খাবার নিয়ে বসেছেন। ও চুপচাপ একটা প্লেট নিয়ে বসে গেলো।
-“বুমনি কোথায় মা?”
-“ও তো ভার্সিটি গেলো আজকে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
-“বাবা এই সময় বাড়িতে যে?”
-“তোমার সারপ্রাইজ নিয়ে এলাম। দ্রুত খাওয়া শেষ করো।”
ইভান অল্প একটু খেয়ে নেয়। মায়ের জন্য না খেয়ে থাকতে পারবে না। জোর করে হলেও খেতে হয়। তাই আর জোরাজুরিতে না গিয়ে নিজেই খেতে বসে গেলো।
ফারহান আহমেদ ডাইনিং রুমে বসে আছেন। ছেলে খেয়ে আসার অপেক্ষা করছেন বসে বসে। আজকে যে তিনি তার ছেলেকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্যই এই সময় বাসায় এসেছেন।
-“বাবা কি সারপ্রাইজ?”
-“সোজা হেঁটে বাইরে চলে যাবে যা দেখবে তাই তোমার সারপ্রাইজ।”
ইভান কিছুটা ব্রু কুচকে তাকালো বাবার দিকে। বাবা এখন আবার এসব কি শুরু করলেন! সাহারা ইসলাম সোফায় বসে মিটিমিটি হাসছেন বাপ ছেলের কাণ্ড দেখে। তখনি ফারহান আহমেদ বলেন,
-“কি হলো যাও।”
-“হুম যাচ্ছি।”
ইভান বারান্দায় আসতেই বড়রকমের একটা ধাক্কা খায়। ব্ল্যাক কালারের কার দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে মডেল দেখলাম “মার্সিডিজ বেঞ্জ মেব্যাচ এক্সেলেরো” আরেকবার তাক লেগে গেলাম। এতো এক্সপেন্সিভ গাড়ি কেন আনলেন বাবা! দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবা চাবি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। বাবার কাছে এগিয়ে গিয়ে টাইট একটা হাগ দিলাম। বাবা আদর করে পিঠের মাঝে কয়েকটা চাপড় মেরে দিলেন।
-“এখন আর তার তোমার সাথে ড্রাইভে যেতে কোন প্রব্লেম হবে না।”
বাবার কথা শুনে ভেতরটা খচ করে উঠলো। বাবা যাকে নিয়ে ড্রাইভে যাওয়ার কথা বলছেন আমি তো তাকে এই মুখ দেখাবো না বলে নিয়ত করেছি।
-“কি হলো? পছন্দ হয়েছে?”
-“বাবা! অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে কিন্তু এতো এক্সপেন্সিভ গাড়ি কেন আনতে গেলে?”
-“আমার ছেলের মুখের হাসির চাইতে এটা কোন বড় কিছু নয়।”
গাড়িটা গিফট পেয়ে ও যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়ে গেছে। বর্ণালী তো কখনোই ওর সাথে গাড়িতে উঠবে না। আর ও কিভাবে বর্ণালীর সামনে গিয়ে দাঁড়াবে! বড় বেশি অপরাধী লাগছে যে নিজেকে। না না বর্ণালীর সামনে কিছুতেই যাওয়া যাবে না।
-“কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? যা ড্রাইভ দিয়ে আয় একটা।”
-“কিন্তু বাবা…”
-“কোন কিন্তু না যাও।”
তখনি ঈশা বাসায় এসে ঢুকে। গাড়িটা ভালো করে ঘুরে দেখে নিলো। গাড়ির সামনের দরজা খুলে হ্যান্ড ব্যাগটা গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে নিজেও বসে গেলো।
-“এটা কি হলো?”
-“আরে নতুন গাড়ি পেলি ড্রাইভে নিয়ে যাবিনা? আমার তো কপাল মন্দ এতো এক্সপেন্সিভ গিফট জোটে না।”
সবাই একসাথে হেসে দেয়।
-“আমার মামনির কি লাগবে বলো?”
-” বারেহ বাহ!!!! না চাইতেও নিজের ছেলেকে দিয়ে দিলে আর আমি চাইবো তারপর দিবে?”
-“আচ্ছা! আমার মামনির জন্য আরো বেশি স্পেশাল গিফট রেডি করছি। কয়েকটা দিন সময় দাও তোমার বাবাইকে।”
ঈশা কিছুটা অবাক হয়। বাবাই ওকে কি এমন গিফট দিতে চাইছেন। থাক যখন দেবেন তখন জেনে নেয়া যাবে। এখন ইম্পর্ট্যান্ট হলো একটা লং ড্রাইভ।
ইভান একবার বাবা আর মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা দৌড় দিয়ে উপরে চলে গেলো। ক্যামেরা হাতে নিয়ে নিচে নেমে এসে বাবা আর মাকে টেনে গাড়ির সামনে যায়। গাড়ির দরজা খুলে বলে,
-“উঠে বস।”
-“মানে?”
-“মানে আমরা সবাই এখন লং ড্রাইভে যাচ্ছি।”
-“আরে আমরা গিয়ে কি করবো? তোরা ভাইবোন যা গিয়ে ঘুরে আয়।”
-“আরে না না প্লিজ মা-বাবাই চলো একসাথে অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না। দেখো অনেক মজা হবে।”
বলেই ঈশা গাড়ি থেকে বের হয়ে মা বাবাকে জোর করে গাড়িতে তুলতে যায়। তখনই ফারহান আহমেদের কল আসে। উনি কথা বলে এসে বলেন,
-“সরি ডিয়ার আমি যেতে পারছিনা আমার ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং পড়ে গেছে। আমাকে এখনি অফিসে যেতে হবে।”
কথাটা শুনে সবার একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।
-“আরে মন খারাপ করছো কেন? আমি না হয় পরে একসময় যাবো। দ্রুত একটা ফ্যামিলি ট্রিপের ব্যাবস্থা করছি। এখন যাও তো তোমরা।”
সাহারা বেগম বললেন,
-“তাহলে আমি গিয়ে কি করবো?”
-“তোমাকে তো যেতেই হবে।”
ইভান জোর করে মাকে গাড়তে তুলে দিতে যায়।
-“আরে এই বেশেই যাবো নাকি?”
-“মা তোমাকে এভাবেও দারুণ লাগছে। আরেকটা বিয়ে দেয়া যাবে।”
-“যাহ ফাযিল মেয়ে।”
সাহারা ইসলাম মেয়ের গাল টেনে দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। ইভান ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে তখনি ঈশা বলে,
-“রানীসাহেবা আর রাজাসাহেবকে ছাড়াই যাবো?”
-“আরে হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম ওদের কথা।”
-“আমি যাচ্ছি নিয়ে আসছি ওদের।”
-“হুম যা ওদের ডেকে নিয়ে আয়।”
ঈশা গিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে আসে। দুজন আসার সাথে সাথেই ইভান গাড়ি স্টার্ট দেয়। কুড়িল বিশ্বরোড দিয়ে গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে উদ্দেশ্য পূর্বাচল যাওয়া। সেখানের হাটে বাজার করবে আর ভালো কোন রেস্তোরাঁয় চাইনিজ খাবে সবাইকে নিয়ে। শা শা করে বাতাসগুলো কেমন এসে গভীরভাবে ভেতরটা ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। ঈশা ইচ্ছে করেই গাড়ির জানালাটা খুলে দিলো।
💛
#_____চলবে………