#__ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ১৫ +১৬

0
232

#__ফাগুন_প্রেম_পর্বঃ ১৫ +১৬
#_লিখাঃ Bornali Suhana

💛
-“কিন্তু জানো, আজকে এটা আমার কাছে অন্যদিনের চাইতে বেশি ভালো লাগছে কারণ তুমি পাশে আছো।”
বলেই লজ্জামাখা একটা হাসি দিলো ইভান। বর্ণালীও কেন জানি কিছুটা লজ্জা পেলো। ওর কথায় হার্ট দ্রুত বিট করতে লাগলো। ইভানের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা রোমান্টিক গান চলছে যা এই পরিবেশকে আরো বেশি রোমান্টিক করে দিচ্ছে।

তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন
এক জনমের ভালোবাসা
এক জনমের কাছে আসা
একটু চোখের পলক পড়তে
লাগে যতক্ষণ
তুমি আমার এমনি একজন
যারে এক জনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ মন…….
ভালোবাসার সাগর তুমি
বুকে অথৈ জল
তবু পিপাসাতে আঁখি
হয়রে ছলছল….হয়রে ছলছল
আমার মিলনে বুঝি গো জীবন
বিরহে মরণ….বিরহে মরণ
তুমি আমার এমনি একজন….
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন।
প্রাণের প্রদীপ হয়ে তুমি
জ্বলছ নিশিদিন
কোন মোহরে শোধ হবে গো….
এত বড় ঋণ….এত বড় ঋণ
আমার ভালোবাসার ফুলে তোমার
ভরাবো চরণ….ভরাবো চরণ
তুমি আমার এমনি একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন।

`
বর্ণালী খাচ্ছে আর ইভান মুগ্ধ নয়নে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ওর খাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে। কত সুন্দর করেই না খায় ও। ইচ্ছে করে ও সারাদিন এভাবেই সামনে বসে খেয়ে যাক আর আমি দেখি।
-“এতো সুন্দর করে কেমন করেই খাও বর্ণালী?”
এমন কোন কথা ও আশাই করেনি। কথাটা শুনেই বর্ণালীর গলায় খাবার আটকে যায়। ইভান দ্রুত পানি এনে ওর হাতে দেয়। আর পিঠে ও মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আশেপাশের সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। বর্ণালীর প্রায় নিশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। চোখ লাল হয়ে পানি চলে এসেছে।
-“সরি বর্ণালী ভুল হয়েছে আমার। ধ্যাৎ খাওয়ার সময় কেন যে তোমাকে ডিস্টার্ব করতে গেলাম। এখন যদি কিছু হয়ে যেত।”
ওকে নিয়ে ইভানের এমন কেয়ার আর ব্যাস্ততা এই প্রথম দেখছে বর্ণালী। এসব ওকে মন থেকে খুব করে ভাবাচ্ছে। কেন হচ্ছে এসব!
– সরি বর্ণালী। তুমি ঠিক আছো তো?”
-“ইভান তুমি বসো প্লিজ। সবাই আমাদের দেখছে।”
-“তাতে আমার কি? তুমি ঠিক আছো? এই নাও পানি খাও।”
ইভানের চোখের কোনে জল জমে গেছে। চেহারার মাঝে স্পষ্ট ওকে নিয়ে টেনশনের ছাপ দেকতেই পাচ্ছে।
-“আমি ঠিক আছি ইভান। প্লিজ তুমি ঠিক হয়ে বসো।”
-“হুম বসছি। অ্যাম রিয়েলি সরি বর্ণালী।”
-“তুমি বারবার সরি কেন বলছো? এতে তোমার কি দোষ?”
-“আমারই তো দোষ। তখন আমি এমন কথা না বললে তো…”
-“ইভান ইট’স ওকেই। শান্ত হও। কিছুই হয়নি দেখো।”
-“হুম দেখেছি।”
বর্ণালী প্রসঙ্গ পালটাতে বলে,
-“আচ্ছা ইভান বিলটা দুজনে শেয়ার করে দেই?”
-“কেন? তুমি কি নিজের টাকা শেষ করতে চাও নাকি? আমাকে খাওয়াতে চাও না কিছু?”
-“মানে?”
-“মানে হলো এখানের খাবারটা আমার তরফ থেকে আর বাইরে বের হয়ে আমি যা চাইবো তুমি আমাকে তাই খাওয়াতে হবে। সো টাকাটা বাঁচিয়ে রাখো।”
বর্ণালী বরাবরই রেস্টুরেন্টে টাকা খরচ করে না। ও ভাবতো এই টাকা দিয়ে একটা মাছ বা মুরগী কিনে নিয়ে গেলে বাড়িতে সবাই মিলে খেতে পারবো। কিন্তু এখানে তো নিজে একা অল্প একটু খাবো আর টাকা যাবে বেশি। তারচেয়ে সবাই মিলেই খাওয়া ভালো। মাঝে মাঝে রুমুর সাথে আসলে রুমুই খাওয়াতো কখনোই ওকে বিল দিতে দিতো না। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলো দুজনে।
-“এভাবে রেস্টুরেন্ট না নিয়ে গেলেও পারতে।”
-“বারে তোমার না ক্ষুধা লেগেছিলো?”
-“না অতোটাও লাগেনি।”
-“তাই নাকি? আমাকে কি মিথ্যে বলা হয়েছিলো নাকি এখন মিথ্যে বলা হচ্ছে?”
-“কোনটাই না।”
ইভান হোহো করে হেসে দিলো। মনে এক মুখে এক তা খুব ভালো করেই টের পেয়েছে ও। বর্ণালী ব্রু কুচকে এই হাসি দেখছে। এই হাসিটা ওকে খুব করে টানছে ইচ্ছে করছে চেয়ে চেয়ে দেখতে। কিন্তু ও তা করতে পারবেনা। তাই আর বেশিক্ষণ না তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
-“তুমি না বলেছিকে কিছু খাবে?”
-“নাহ আজ থাক এমনিতেই এসব খেয়ে পেট উপুর্যুপরি হয়ে গেছে। কাল খাওয়াবে তুমি।”
-“ঠিকাছে।”
`
ঈশা ফোন হাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করছে সজিবের সাথে কথা বলতে। কিন্তু সজিব ব্যাপারটা কিভাবে নেবে সেটা ভেবেই কল করছেনা। মনটা কোন কারণ ছাড়াই খারাপ লাগছে। নাহ আর থাকতে পারবেনা। ও যা ভাবে ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। কল দিয়েই বসে ইভানকে। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা। কয়েকবার রিং হয়ে কলটা কেটে গেলো। আরেকবার কল দিতে গিয়েও দিলো না। সামনের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানমগ্ন হয়ে। কত রকমের মানুষ যাতায়াত করছে এই রাস্তা দিয়ে৷ বুড়ো, যুবক-যুবতী, বাচ্চাসহ কিশোর-কিশোরীর আড্ডায় মেতে উঠে রাস্তা। প্রতিদিনই এমন ব্যাস্ত এই রাস্তা যদিও গাড়ির আনাগোনা খুব বেশি না। ভালোই লাগে পরিবেশটা বেশ শান্ত। চোখ বন্ধ করে নেয় ঈশা।
সজিবের কলটা রিসিভ করতে করতেই কলটা কেটে গিয়েছে। ভাবছে আবার কল দেবে। কিন্তু ঈশা আর কল দিচ্ছেনা। নিজেও কল দিবে তার ব্যালেন্স ওর ফোনে নেই। হুট করেই খেয়াল হলো ইমারজেন্সি ব্যালেন্স কবে কাজে আসবে? ইমারজেন্সি ব্যালেন্স এনেই ওকে কল ব্যাক করে।
একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতেই ফোনটা বেজে উঠে। ঈশার চোখে-মুখে রাজ্যের হাসি ফুটে ওঠে। ইভান ওকে কল ব্যাক করেছে! ভাবতেও পারছেনা।
-“আসসালামুয়ালাইকুম।”
-“ওয়ালায়কুম আস সালাম।”
-“কেমন আছেন?”
-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি?”
-“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কি করছেন? আমি কল দিতে রিসিভ করলেন না যে?”
-“ব্যস্ত ছিলাম একটু।”
-“আচ্ছা এক মিনিট আমি একটু পর কলটা ব্যাক করছি ওয়েট।”
-“কোন প্রব্লেম?”
-“না তেমন কিছুনা। ওয়েট প্লিজ।”
ঈশা না বুঝেই কলটা রিসিভ করে নিয়েছিলো। হঠাৎ করেই খেয়াল হলো সজিবের ফোনে তো ব্যালেন্স নাও থাকতে পারে। তাই কল কেটে দিলো। ২মিনিট অপেক্ষা করে আবারো কল দিলো। মিথ্যা বলতে হবে এখন ওকে নাহলে সজিব বুঝে যাবে ও ইচ্ছে করেই কল কেটে ব্যাক করেছে। সজিবের ফোনটা বেজে উঠতেই রিসিভ করে।
-“হ্যাঁ বলো।”
-“মনে হচ্ছে আমি কোন প্রয়োজনে আপনাকে কল দিয়েছি?”
-“না মানে আসলে এটা বুঝাতে চাই নি।”
-“কি করছিলেন?”
-“স্কেচ আঁকছিলাম।”
-“কিসের?”
-“এইতো খাঁচার ভেতর অচিন পাখির।”
ঈশা হেসে দেয় কথাটা শুনে। ও ভাবতেও পারেনি সজিব ওর সাথে এভাবে কথা বলবে। মন খারাপের কারণ অজানা থাকলেও মন ভালো হওয়ার একমাত্র কারণ তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বলা কয়েকটা কথা। এটা ঈশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
`
বর্ণালী সিএনজিতে যেতে চেয়েছিলো সিএনজিতে গেলে ভাড়া কম লাগে। আর এই সময় খরচ করার মতো এতো টাকা কাছে নেই। কিন্তু ইভান রিকশা ধরে দিয়ে দিলো। কিন্তু ধাক্কা খেলো ইভানকে রিকশা ভাড়া দিতে দেখে।
-“ইভান প্লিজ।”
-“কি প্লিজ?”
-“তুমি ভালো করেই বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি।”
-“না তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
বর্ণালী রিকশা থেকে নেমে আসে।
-“এদিকে এসো।”
ইভানকে হাত ধরে টেনে অন্যপাশে নিয়ে যায়।
-“আরে এভাবে টেনে আনলে কেন? লোকে কি বলবে? এতো ভালোবাসা পাব্লিক প্লেসে না দেখালেও চলবে। কোন পার্কে যাই চলো ওইখানে দেখিয়ে দিও সব ভালোবাসা।”
বলেই চোখ মারে ইভান। বর্ণালী চট করে ইভানের হাত ছেড়ে দিয়ে দাঁড়ায়। কোন এক্সপ্রেশন ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলেটা আসলেই পাগল। ও এই মুহুর্তে মজা করছে!
-“ইভান।”
-“আচ্ছা আচ্ছা সরি বলো কি বলবে?”
বর্ণালী ব্যাগ থেকে টাকা বের করে বলে,
-“ধরো এটা।”
-“কি এটা?”
-“যা দেখছো তাই। তুমি আমার রিকশা ভাড়া কেন দিলে?”
-“আরে আজকে আমি দিয়েছি কাল তুমি আমার ভাড়া দিয়ে দিও। এটা কোন বড় কথা হলো নাকি? ফ্রেন্ডদের মাঝে কি কখনো টাকা আসে নাকি? না তুমি আমাকে এখনো ফ্রেন্ডই ভাবো নি?”
-“ইভান তুমি যা ভাবছো তা নয়। আমি এভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নেই না।”
-“বাহ! ভালোই বললে। বলা শেষ হয়েছে?
এবার আমার শুনো, বর্ণালী আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি তুমি আমাকে এখনো ফ্রেন্ড ভাবতেই পারো নি।”
-“কি বলছো এসব ইভান?”
-“যাচ্ছি বর্ণালী। তুমি আমাকে যেদিন মন থেকে ফ্রেন্ড মনে করবে সেদিন আমাকে ডেকো তার আগে আমিও তোমার সামনে আসবো না।”
ইভান আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে হাঁটতে লাগলো।
-“ইভান শুনো প্লিজ। দাঁড়াও তুমি আমায় ভুল বুঝতেছো।”
ইভান শুনেও মিটিমিটি হেসে দ্রুত হেঁটে চলে গেলো। মনে মনে ভাবছে ঠিক জায়গায় ঢিল ছুঁড়েছে।
এবার বুঝা যাবে তুমি কি আসলেই আমার জন্য কোন টান অনুভব করছো কিনা।
বর্ণালী কিছুই বুঝতে পারলো না কিছুক্ষনের মধ্যেই কি থেকে কি হয়ে গেলো। কত করে ইভানকে ডাকলো কিন্তু ইভান শুনলো না।
মনটাই খারাপ হয়ে গেলো ধ্যাৎ। এতো বাচ্চামো কেন করে এই ছেলেটা! অবশ্য বাচ্চা ছেলে তো বাচ্চামো করবেই। বর্ণালী আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে রিকশায় চড়ে বসলো।
বাড়িতে আসতেই বর্ণালী মায়ের সামনে পড়লো। কেন জানি একটা ভয় পেয়ে যায়। এই প্রথম ও তার মাকে ভয় পাচ্ছে। এর আগে কখনোই এমন হয়নি। কিন্তু ও তো কোন খারাপ কাজ বা চুরি করেনি তাহলে কেন এতো ভয় পাচ্ছে?
-“কিরে এতো দেরি হলো যে?”
-“এ…এইতো মা ক….কোচিং-এ একটু দেরি হয়ে গেছে।”
মায়ের কাছ থেকে চোখ লুকিয়ে ব্যাগ সোফায় রাখতে রাখতে কথা বলছে বর্ণালী। কিন্তু কথাটা বলেই কিছুটা থমকে গেলো। ও আবারো মাকে মিথ্যে বললো আর এবারো ইভানের জন্য! কিন্তু কেন বলছে এসব মিথ্যে? মায়ের কথায় ভাবনায় ছেদ পরে।
-“যা হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়। তোর স্টুডেন্টরা এসে বসে আছে।”
-“ওহ হ্যাঁ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আজকে ওরা একটু তাড়াতাড়িই চলে এলো। আচ্ছা মা আমি খাবো না।”
-“কেন রে? এতোক্ষণে তো তোর পেটে ইঁদুর দৌড়ে কিন্তু আজ কি হলো যে খাবিনা?”
-“ক্ষিদে নেই মা। ইয়ে র….রুমু খাইয়েছে আমায়।”
আবারো মিথ্যে! এসব কি করছি আমি?
কেন বলছি এতো মিথ্যে? এতো কিছুর ভেতর রুমুর রাগ ভাঙানোর কথা ভুলেই গিয়েছিলো। এদিকে ইভানও রাগ করে বসে আছে। কার রাগ ছেড়ে কার রাগ ভাঙাবে! নাহ আর ভাবতে পারছেন ও।এখন এসব না ভেবে যাই আগে ওদের পড়িয়ে নেই।
বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ক্লাস ফাইভ ও ক্লাস এইটের ৬টা স্টুডেন্ট পড়ায়। আবার সন্ধ্যার পর ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ক্লাস নাইন ও টেনের ৮টা স্টুডেন্ট পড়ায়। সবাই ইংলিশ পড়ে ওর কাছে শুধু ফাইভের স্টুডেন্টরা গণিত ও ইংলিশ দুই সাবজেক্ট পড়ে। সপ্তাহে তিনদিন বিকেলে পড়ায় আর তিনদিন রাত্রে। এতে ভালোই ইনকাম হয় ওর সাথে রেস্টও নিতে পারে তিনদিন বিকেলে আর তিনদিন রাত্রে। আর আজকের প্রাইভেট বিকেলে। তাই ভাবলো রাতেই কল করে রাগ ভাঙানোর মিশনে নামতে হবে।
`
রাত প্রায় ১০টা বাজে।
রুমুকে কল দিতেই রুমু কম কেটে দেয়। বর্ণালী জানে এই কল কাটার মানে। রুমুর কল দেখেই বর্ণালী হাসছে। সবসময় এই মেয়েটা এমন করে। কখনোই ওর কল রিসিভ করেনা। সবসময় কল কেটে ব্যাক করে।
-“কেমন আছিস জানটা?”
-“হুম আছি।”
-“রেগে আছিস?”
-“না”
-“কি করছিস?”
-“ডান্স করছি করবি নাকি?”
-“উহু জানিসই তো আমি ডান্স করতে পারিনা জান। কিন্তু তোর বিয়েতে পারি আর নাই পারি ডান্স করবো ঠিকই।”
-“একদম ঢং করবিনা বলে দিলাম।”
-“আরে বাবা ঢংয়ের কি হলো? সত্যি বলছি দেখে নিস আমি আমার জানের বিয়েতে খুব করে নাচবো।”
-“মেজাজ খারাপ করিস না।”
-“সরি তো রে বাবা। দেখ তুই যাই বলবি তাই করবো তবুও প্লিজ রাগ করে থাকিস না। আর কোনদিন এমন হবেনা প্রমিজ।”
-“হুম ঠিকাছে আর সরি বলতে হবেনা। ইভানের সাথে আর কথা হয়েছে?”
-“হ্যাঁ আজকে দেখাও হয়েছে আবার রাগ করে চলেও গেছে। কিন্তু জানিস ওর সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে।”
-“কিভাবে?”
বর্ণালী সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললো রুমুকে।
-“সেদিন তো খুব বড় বড় কথা বললেন ম্যাডাম। আর এখন এক মাসের সময়ও দিয়ে দিলেন?”
-“আসলে ও এমন ভাবে বলছিলো যে না করতে পারছিলাম না।”
-“আচ্ছা সেটা না হয় মানলাম। কিন্তু রাতে রুমে ঢুকানো, হাত ব্যান্ডেজ করে দেয়া, মুখে তুলে খাওয়ানো এসব কি ছিলো হুম?”
-“আরে ওইসব তো আমার জন্যই হয়েছে তাই এটুকু হেল্প তো করতেই পারি না?”
-“হুম বুঝতেছি জান সবই বুঝতেছি। কিন্তু এখন আমার সাথে কথা না বলে যাও প্রান পাখির সাথে কথা বলে রাগ ভাঙাও।”
-“আরেই হি ইজ জাস্ট মাই ফ্রেন্ড ইয়ার।”
-“বুঝি বুঝি। আচ্ছা বর্ণালী একটা সত্যি কথা বলবি?”
-“তোকে কখনো মিথ্যে বলেছি?”
-“হুম তা না। সত্যি করে বলতো এক মাসের ভেতর যদি তোর মনে ওর জন্য ভালোবাসা জাগে তাহলে কি করবি?”
বর্ণালী এমন কথা শুনে চুপ হয়ে গেছে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা। কিন্তু এমনটা তো কখনোই হবেনা। না না শুধু শুধু কেন ভয় পাচ্ছি আমি!
-“আরে না এমনটা হবেনা।”
-“আর যদি হয়?”
-“হবেনা বলেছি তো।”
-“আচ্ছা রাখছি তুই ইভানের সাথে কথা বলে নে।”
-“হ্যাঁ ওর রাগ ভাঙাতে না জানি এখন কত কাঠখড় পোহাতে হয়।”
-“হাহাহা আচ্ছা দেখ। কথা হবে অন্যসময় রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”
-“আল্লাহ হাফেজ।”
তুই যতই বলিস না কেন বর্ণালী এই অল্প কয়দিনেই তোর মনে ইভানের জন্য জায়গা হয়ে গেছে। আজকে ওর রাগের জন্য এত টেনশনে আছিস আর সেদিন রাতে ওর জন্য এতোকিছু করলি। আন্টিকেও এতো মিথ্যে বলছিস। সব কিছুই তোর ভালোবাসায় পদার্পণের লক্ষণ। যদিও তুই এখনো এসব বুঝতে চাইছিস না। কয়েকদিনেই এই অবস্থা একমাসে তো তুই ইভানের জন্য পাগল হয়ে যাবি। হাবুডুবু খাবি ওর ফাগুন প্রেমে।
`
ইভান ফোন হাতে নিয়েই অপেক্ষা করছে ও জানে বর্ণালী ওকে ফোন দেবে।
-“কিরে ইভু আসবো?”
-“হ্যাঁ বুমনি এসো না।”
-“কার কলের অপেক্ষা করছিস?”
-“যার ভাবছো তারই।”
-” ও কি কল দেবে?”
-“আলবাত দেবে। একটু অপেক্ষা করো।”
-“বাহ! ভালো। কনফিডেন্ট থাকা ভালো।”
-“হু সে না হয় বুঝলাম ভালো। বাই দা ওয়ে এই সজিবটা কে বুমনি?”
-“যা ভাবছিস তাই।”
-“হাহাহাহা বাহ! আমার কথা আমাকেই ফেরত। তা কবে থেকে চলছে?”
-“চলছে না চলবে বিয়ের পর।”
-“তাই নাকি? তাহলে শপিংয়ে লেগে যাই?”
-“তা পারিস। জানতে চাস না কে এই সজিব?”
-“হ্যাঁ বললে তো জানবো।”
-“তোর বাসন্তীর ভাই।”
-“কিহ?”
-“জ্বিহ।”
ইভান প্রায় অনেকটা অবাক হয় সাথে অনেক খুশিও। বুমনিরটা হয়ে গেলেই যে ওর পথ ক্লিয়ার। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।
-“এতো আনন্দ করো না ওকে?”
-“তুমি কীভাবে বুঝলে যে আনন্দ কাজ করছে?”
-“তোর বোন হই। চেহারা দেখলেই বুঝতে পারি।”
-“হুম কিন্তু একটু তো আনন্দ করতেই পারি।”
-“তা পারিস। তবে এখনো বসন্তপথিকের পথ ধরে চলতে শুরু করেনি বাসন্তী শুধুমাত্র সে পথে পা বাড়িয়েছে।”
-“পা বাড়ালেই তো চলার শুরু তাই না বুমনি?”
-“হুম চলতে তো হবেই। পথ তো এই একটাই।”
ইভানের ফোন বেজে উঠে। চিরচেনা নামটি ভেসে উঠেছে স্ক্রিনে “বাসন্তী”।
-“আসসালামুয়ালাইকুম।”
ইভান ফোন রিসিভ করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। টুপ করে ঈশা ফোনটা ওর কাছ থেকে নিয়ে নেয়। একটু দুষ্টুমি করলে মন্দ হয়না। ইভান হা হয়ে তাকিয়ে আছে ঈশার দিকে। কি করছে বুমনিটা? বর্ণালী ওইপাশ থেকে বার বার হ্যালো হ্যালো বলেই যাচ্ছে।
-“হ্যালো ইভান আছো? কথা শুনা যাচ্ছেনা? রেগে আছো এখনো?”
বাহ তা ভাই আমার রেগে থাকার অভিনয় করছে। ভালোই অভিনয় করতে পারে। ও গলাটা একটু ভারী করে বললো,
-“হ্যালো কাকে চাই? এতো রাতে কি কোন ভালো মানুষ কল করে নাকি? কেন কল দিয়েছেন? কি চাই?”
বর্ণালী ভয়ে টুপ করে কল কেটে দেয়। বাপরে এই কোন মেয়ে কল রিসিভ করলো? তাও ইভানের? ওহ হ্যাঁ বোনই হবে হয়তো। ওর বোন আর মা ছাড়া তো আর কেউ নি এত রাতে কল রিসিভ করার জন্য। ভয়ের জ্বালায় কথাগুলো ভালো করে শুনতে পায়নি বর্ণালী। হাত পা কাঁপছে এখন। কেন যে কল করতে গেলাম। বর্ণালীর মোবাইলটা ভু ভুউ শব্দ করতেই চমকে উঠে ও। হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা। কল রিসিভ করবে কি করবে না দ্বিধায় পড়ে গেলো।
💛
#______চলবে………..

#__ফাগুন_প্রেম__
#_লিখাঃ Bornali Suhana
#_পর্বঃ ১৬
💛
ভয়ের জ্বালায় কথাগুলো ভালো করে শুনতে পায়নি বর্ণালী। হাত পা কাঁপছে এখন। কেন যে কল করতে গেলাম। বর্ণালীর মোবাইলটা ভু ভুউ শব্দ করতেই চমকে উঠে ও। হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা। কল রিসিভ করবে কি করবে না দ্বিধায় পড়ে গেলো।
ভাবছে ইভান কল করলো নাকি ওই মেয়েটা?
ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে যায় কিন্তু আবারো কল আসে। এবার আর দেরি না করে কলটা রিসিভ করে চুপ করে শুনতে চায় ওপর প্রান্তে কে কথা বলছে। একটা নিশ্বাসের শব্দ শুনতেই বর্ণালী বুঝতে পারে আর কেউ নয় ইভানই আছে ওইপাশে। পরক্ষণেই ইভানের কন্ঠ ভেসে আসে।
-“কথা বলবেন নাকি কল রেখে দিবো?”
-“বাহ তুমি থেকে আপনিতে চলে এলাম?”
-“হুম।”
-“আগে কে কল রিসিভ করেছিলো? জানো ভয়ে আমার প্রাণ বেড়িয়েই যাচ্ছিলো।”
-“বুমনি ছিলো।”
-“ভেবেছিলাম এমনটাই হবে।”
-“হুম শেষ কথা?”
-“রেগে আছো এখনো?”
-“রেগে থাকার মতো কি অধিকার হয়েছে?”
-“হয়েছে তো।”
-“তাই? তা কি অধিকার?”
-“কেন আমরা তো বন্ধু।”
-“আচ্ছা? তা দিনে কি অপরিচিত ছিলাম?”
-“সরি আর এমনটা করবো না।”
-“হয়তো এখন বলছো কিন্তু পড়ে ঠিকই আবার এমন করবে।”
-“সত্যি করবো না।”
-“আচ্ছা ঠিকাছে সরি এক্সেপ্টেড।”
বর্ণালী ইভান দুজনেই হেসে দিলো।
-“ইভান একটা কথা বললে রাগ করবে না তো?”
-“বলো আগে শুনি তারপর দেখবো রাগ করবো কি করবো না।”
-“দেখো ইভান আমি জানি বন্ধুত্তের মাঝে কখনোই টাকার কোন প্রশ্ন আসেনা। কিন্তু আমার নিজের একটা আত্মসম্মান আছে। আর তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না যে আমার আত্মসম্মানবোধের এতটুকু পরিমান আঘাত আসুক।”
-“উহু আমি কখনোই চাইবো না। আমি তোমাকে এবং তোমার আত্মসম্মানের সবসময় সম্মান করবো কিন্তু আমার সামনে তুমি প্লিজ কখনো আমাকে ছোট করো না আর নিজেকে তো অবশ্যই না।”
-“আচ্ছা বাবা আমরা না হয় সবকিছু শেয়ার করে নিবো।”
-“ঠিকাছে সময় হলে দেখা যাবে।”
-“পড়া শেষ?”
-“হুম পড়তে তো মন বসেনা।”
-“দেখো ইভান সামনে তোমার অনেক বড় পরীক্ষা সো ভালো করে পড়াশোনা করো। একটা ভালো রেজাল্ট তোমার মা-বাবা অবশ্যই আশা করেন।”
-“হাহাহাহা মা-বাবা কখনোই তা আশা করেন না আমার কাছ থেকে। জানো আমি যখন এসএসসিতে ফেল করি বাবা তখন এই বাইকটা কিনে দিয়েছিলো।”
বর্ণালী যেনো আকাশ থেকে পড়লো। এটা কোন কথা হলো? আট-দশটা সাধারণ পরিবারে রেজাল্ট একটু খারাপ হলে কত কথাই না শুনান তারউপর অনেকের পড়াও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এখানে উল্টো বন্যা বইছে। এ কেমন পরিবার রে বাবা! ইভানের কথায় মনযোগ দেই আবারো।
-“একটা জিনিস বুঝতে পেরেছো?”
-“কি?”
-“লেখাপড়া অনুযায়ী আমি এইবার অনার্স প্রথম বর্ষে থাকতাম। কিন্তু বুমনি বলে আমি হয়তো ছোটবেলায় ড্রপও দিয়েছি পড়ালেখায় যে পরিমান গাধা হয়তো কয়েক ক্লাস ফেলও করেছি। সেদিক হিসেব করলে হয়তো আমি তোমার বড় বা সমবয়সীই হবো।”
-“আচ্ছা জনাব তাই নাকি? তা আপনার জন্মের সালটা একটু বলেন তো।”
-“কেন?”
-“আরে বলেন না। সত্যি বলতে হবে কিন্তু।”
-” আসলে ১৯৯৯সাল।”
-“হাহাহাহা আর আমার জন্মের সাল শুনবেন?”
-“হু বলো।”
-“১৯৯৭সাল।”
-“ভালো। এটা কোন বড় বিষয় না। সো ড্রপ দিজ ম্যাটার। তা এখন নিজে কেন আমাকে আপনি করে বলছো?”
বর্ণালী হোহো করে হেসে দিলো। ওর হাসি যেনো থামছেই না।
শারমিন বেগম বাইরে থেকে টেনশনে পড়ে গেলেন উনার মেয়ে এতো রাতে একা একা হাসছে কেন? এমনিতেই মেয়েটাকে কত করে বলি অসময়ে বাইরে যাস নে তাও কথা শুনেনা। ইয়া আল্লাহ আমার মেয়েটাকে এতো সুন্দর করে দেয়ার কি প্রয়োজন ছিলো? কোন জ্বিন-পরী ধরে নিতো!
-“বর্ণালী? এই বর্ণালী শুনছিস?”
-“হ্যাঁ মা বলো।”
-“দরজা খোল।”
-“ইভান আমি রাখছি পরে কথা হবে।”
-“না না রাখবে না কল থাকুক তুমি শুনে আসো গিয়ে কি বলছেন আমার শাশুড়ী মা।”
বর্ণালী আর কথা না বাড়িয়ে দরজা খুলে দিতেই শারমিন বেগম রুমে ঢুকেন।
-“এভাবে একা একা কার সাথে হাসছিলি?”
-“ক….কই মা? আমি তো শুয়ে ছিলাম। হাসিনি তো। তুমি মনে হয় ভুল কিছু শুনেছো।”
-“যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে।”
-“মানে কি মা?”
-“নিশ্চয়ই তোর উপর কোন জ্বিন পরীর নজর লেগেছে রে। কত করে বলি সময়ে অসময়ে বাইরে যাস নে। তুই তো আমার কোন কথাই শুনিস না।”
-“কিই মা? এসব কথা নিশ্চয়ই বেতাল চাচী শিখিয়েছে তোমাকে?”
-“আরে তুই কথায় কথায় ভাবীকে কেন টেনে আনিস?”
-“আনবো না তো কি করবো মা? সবসময় সবাইকে এইসব উল্টো পাল্টে কথা শিখিয়ে বেড়ান।”
-“ভালো কথাই বলেন ভাবী আর সবসময় ঠিক কথাই বলেন।”
-“মা এসব কুসংস্কার থেকে প্লিজ তুমি দূরে থাকো।”
-“হয়েছে এখন তোকে আমার মা হতে হবেনা। এদিকে আয় তো। আল্লাহ যে কেন আমাকে এতো সুন্দর মেয়ে দিতে গেলেন। কেন রে তুই কি একটু কালো হয়ে জন্ম নিতে পারলি না?”
বর্ণালী এবার মায়ের কথায় থ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ওর মায়ের মুখে এমন কথাও শুনতে হলো? পৃথিবীর বুকে এমন কোন মা নেই যে চায় না তার মেয়ে সুন্দর না হোক। সবাই চায় মেয়েটা একটু সুন্দর হোক তাহলে বিয়ে দিতে সমস্যা হয় না। আর আমার মা মনে হয় একমাত্র মা যে কিনা চায় আমি কেন একটু কালো হলাম না। ভাবা যায় এমন কিছু?
ইভান ফোনের ওপাশ থেকে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে।
শারমিন বেগম মেয়েকে বিছানায় বসিয়ে মাথা নিচু করে ধরে কিসব ঠোঁট নেড়ে জপতে লাগলেন। উনার ঠোঁট নাড়াটাই বর্ণালী দেখছে কি পড়ছেন তা বুঝতে পারছেনা।
-“মা এসব কি করছো?”
মায়ের চোখ রাঙানো দেখেই বর্ণালী চুপ মেরে যায়। শারমিন বেগম কিসব বলে মেয়ের মাথা থেকে পা পর্যন্ত লম্বা একটা ফুঁ দিয়ে দেন।
-“মা কি করছো এগুলো?”
-“চুপ কর তো। একদম নড়বি না আমি আসছি।”
২মিনিটের ভেতর শারমিন বেগম কতগুলো আস্ত লাল মরিচ এনে আবারো কি সব জপে মরিচ মেয়ের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছুঁইয়ে মরিচের উপর থুথু ছিটিয়ে চুলোয় পুড়িয়ে ফেলেন। বর্ণালী রিতীমত অবাকের সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। ওর মা এসব কোত্থেকে শিখলেন! এই মুহুর্তে বেতাল চাচীকে এক মগ পানিতে চোবাতে ইচ্ছে করছে। এসব শিখিয়ে বেড়ান পাড়ার মহিলাদের। সবাইকে নিজের মতো করে নিচ্ছেন। শারমিন বেগম আবার এসে মেয়েকে বলেন,
-“শুন অবেলায় আর বাইরে যাবিনা। কোন কোচিং ফোচিং-এর প্রয়োজন নেই। লাগবে না এতো টাকা। টাকা টাকা করে নিজের ক্ষতি কেন করতে চাচ্ছিস? যেভাবে খাই খাবো যেভাবে চলার চলবো তবুও তোর নিজের এভাবে ক্ষতি করার প্রয়োজন নেই।”
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে অনেকটা খারাপ লাগে ওর। এতো কেন ভাবেন মা আমাকে নিয়ে! এদিকে না জানি ইভান এসব কথা শুনছে কিনা! নিজের আত্মসম্মান কখনোই কারো কাছে বিসর্জন দিতে রাজি না। কারো সামনে মাথা নিচু করে বা ছোট হয়ে বাঁচতে চায় না ও। মাকে থামিয়ে বলে,
-“মা প্লিজ এসব বেতাল চাচীর মতো কাজকর্ম করো না তো।”
-“কিরে তুই ভাবীকে এভাবে কেন বলিস?”
-“তো কিভাবে বলবো মা? সারাক্ষণ বেতালের মত এর ঘাড় হতে ওর ঘাড়ে চেপে বেড়ান ভাল্লাগেনা। আর তুমি আমায় নিয়ে এতো ভেবোনা তো আমার কিছুই হয় নি দেখো আমি একদম ফিট এন্ড ফাইন।”
-“কেন আমার কথা কানে নিস না? একবার নিজেকে আয়নায় দেখেছিস? আগে কত সুন্দর স্বাস্থ্য ছিলো আর এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছিস।”
-“মা গো মা এসো আজকে তোমার সাথেই ঘুমাই দেখবে তোমার মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ।”
-“হয়েছে আর আমাকে জ্বালাস নে। তোর বাবার শরীর সবসময় ভালো থাকেনা। আমাকে উনার পাশেই থাকতে হবে।”
বর্ণালী আর কিছুই বললো না। মায়ের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো কল কেটে গেছে। ভালোই হয়েছে ইভান কিছু শুনতে পারেনি। নাহলে না জানি কি থেকে কি ভেবে বসতো।
ইভান ফোন ইচ্ছে করেই কেটে দিয়েছে। ও কখনোই চায় না বর্ণালী নিজেকে ওর কাছে ছোট মনে করুক। কখনোই চায় না ওর আত্মসম্মান ক্ষুন্ন হোক। তাই তো সব শুনেও না শোনার ভাব নেয়। ছোট্ট করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেয় বর্ণালীকে।
-“ঘুমিয়ে পড়ো বাসন্তী। কাল দেখা হবে সেই পর্যন্ত ভালো থেকো। আল্লাহ হাফেজ।”
মেসেজটা দেখেই বর্ণালী একটুখানি হেসে দেয়। সাথে সাথে একটা রিপ্লে ও করে দেয়।
-“তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো পিচ্চি ছেলে। আর সকালে উঠে পড়তে বসো। সামনে এক্সাম এভাবে বসন্তপথিক হয়ে ঘুরে বেড়ালে হবে না। ভালো রেজাল্ট করতে হবে। নিজের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।”
^
ইভান এক দৃষ্টিতে বাইকের দিকে তাকিয়ে আছে৷ বর্ণালী এই বাইকে উঠতে চায় না। তাহলে এটা রাখার মানে কি? নাহ আজ থেকে আর বাইক সাথে নেবো না।ফারহান আহমেদ চা হাতে নিয়ে বেলকনি থেকে ছেলের এই দৃষ্টির কারণ খুঁজছেন। ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলেন।
-“হেই হ্যান্ডসাম?”
ইভান পিছন ফিরে হেসে দেয়। বাবার একটু একটু করে তার দিকেই এগিয়ে আসছেন।
-“হেই বুড়ো।”
-“বেয়াদব ছেলে বাবাকে বুড়ো বলিস কেন?”
-“বুড়োকে বুড়ো বলবো না তো কি যুবক বলবো নাকি?”
-“হ্যাঁ বলবিই তো আমি এখনো তোর থেকে ইয়াং আছি।”
-“তাহলে কনে দেখবো নাকি?”
-“সে তোর মায়ের সাথে আলাপ করে দেখতে পারিস।”
বাপ ছেলে দুজিনেই একসাথে হোহো করে হেসে দেয়।
-“তা বাইক কি নতুন একটা লাগবে নাকি?”
-“না বাবা।”
-“তাহলে এভাবে দেখছিলি কেন?”
-“এমনিই বাবা।”
-“বাবাকে বলবি না ভালো কথা ফ্রেন্ডকে তো বলতেই পারিস।”
-“হাহাহা তেমন কিছুনা বাবা।”
-“আমি তো আমার বন্ধুর চোখে অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি। তা কে রিজেক্ট করেছে বাইকে উঠতে?”
-“হু!”
ইভান অনেকটা অবাক বাবা কিভাবে বুঝলো যে কেউ ওর বাইকে উঠতে রিজেক্ট না ঠিক রিজেক্ট না বর্ণালী তো আশেপাশের মানুষের কথা ভেবে তার সাথে বাইকে উঠতে চায় না।
-“না বাবা আসলে।”
-“আরে বেটা তোর বয়সে আমি কত মেয়েকেই বাইকের পেছনে তুলেছি জানিস?”
-“কি বলো বাবা?”
-“তোর মাকে বলিস না প্রতিদিন তো আমি ২-৩টা মেয়েকে ডেট করতামই।”
-“হাহাহাহা তাই নাকি?”
-“হ্যাঁ আর আমার ছেলে হয়ে তুই কারো কাছ থেকে রিজেক্ট হয়ে এলি?”
-“না বাবা রিজেক্ট না। ওর আত্মসম্মান খুব বেশি। আর ওর অনেক রেস্পেক্ট আছে সমাজে। তাই ও আমার সাথে বাইকে উঠতে চায় না। সে না বললেও আমি বুঝি যে ও চায় না শুধু শুধু কেউ ওকে নিয়ে বাজে কথা ছড়াক।”
-“হুম এসব শুনে যেটা বুঝলাম যে মেয়েটা আর সবার মতো না। ভদ্র ফ্যামিলির মেয়ে বলেই মনে হচ্ছে।
দেখো হ্যান্ডসাম এখন আমি তোমাকে বন্ধুর মতো না একজন বাবা হয়ে বলছি, কাউকে ভালোবাসলে মন থেকে ভালোবেসো। এমন মেয়ে কিন্তু হাজারে একজন। ভালোবাসতে নাই পারো অন্ততপক্ষে কারো সম্মান নষ্ট করো না। কারো মন ভাঙা যে মহাপাপ। আমি জানি আমার ছেলে কখনোই এমন ভুল করবে না। তবুও বলছি ভালোবাসলে ওর সম্মান করবে। কখনো সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ করবে না।”
ইভান বাবার বলা কথাগুলো মন দিয়ে শুনছে। আজ পর্যন্ত কোন বাবাকে সে এভাবে কোন ছেলেকে বুঝাতে দেখে নি। সবসময়ই ভালো মন্দ যাচাই করার আগেই বকতে দেখেছে ও। নিজের বাবাকে নিয়ে আজ ও গর্ব অনুভব করছে। ইভান কখনোই এমন কাজ করবে না যাতে ওর কারণে বর্ণালীর বা নিজের বাবার সম্মান নষ্ট হয়।
ফারহান আহমেদ রুমে গিয়ে ফোন হাতে নিলেন ছেলে মেয়ের সুখ কেনার জন্য।
-“হ্যালো ফাহিম।”
-“জ্বি স্যার বলুন।”
-“কাজটা কি হয়েছে?”
-“জ্বি স্যার আজকে বিকেলেই কল যাবে।”
-“গুড। এজন্যই তোমাকে আমার ম্যানেজার হিসাবে এতো ভালো লাগে ফাহিম। তোমার কাজ 6G গতিতে চলে। কিন্তু এখন তোমার জন্য আরেকটা কাজ আছে। আর এই কাজটা কাল সকালেই করতে হবে।”
-“অর্ডার দিন স্যার।”
ফারহান আহমেদ প্রয়োজনীয় কথাগুলো শেষ করে বলেন,
-“শুনো ফাহিম আমার কিন্তু বেস্ট টাই চাই। টাকার কোন টেনশন করবে না।”
-“অবশ্যই স্যার আমি বেস্ট টাই করবো।”
^
-“চুপচাপ বসে আছিস যে?”
-“কোন কথা কি বলার ছিলো?”
-“প্লিজ ইয়ার ওইদিনের জন্য সরি। ফ্রেন্ডদের সাথে রাগ করে থাকবি নাকি?আর সত্যি বলছি আমি কখনোই ভাবিনি তুই বর্ণালী ম্যামের সম্পর্কে এতো সিরিয়াস।”
-“এখন তো বুঝে গিয়েছিস?”
-“হ্যাঁ সে জন্যই সরি বললাম। আমি আমার ফ্রেন্ডশিপটা নষ্ট করতে চাই না।”
-“হুম ঠিকাছে। বাকী সবাই কোথায়?”
-“রাহাত আজকে আসেনি। হিমেল আর আসাদ এখানেই কোথাও আছে।”
-“মিথি কই?”
-“হাই মালিহা, হাই ইভান। আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছিলো নাকি?”
-“তুই কোন সেলিব্রিটি নাকি যে তোকে নিয়ে কথা বলবো?”
-“মালিহা! এখনি না শুনলাম ইভান আমার কথা জিজ্ঞেস করছে। ঠিক না ইভান?”
-“হ্যাঁ তোকে দেখছিলাম না তো তাই জিজ্ঞেস করেছিলাম।”
ইভান কথাটা শেষ করতেই দেখে বর্ণালী ওর সামনে দিয়ে হেটে আসছে। চোখ ওখানেই থমকে গেছে ওর। কালো লং ড্রেসের সাথে কালো প্লাজো আর কালো ওড়না দিয়ে আলতো করে মাথা ঢেকে রেখেছে। কালো হ্যান্ড ব্যাগটা হাতের ঠিক কনুইয়ের উল্টো পাশে ঝুলিয়ে রেখেছে। সিল্কি চুলগুলো ওড়না ভেদ করে বারবার বেড়িয়ে আসছে আর ও আনমনে সেই চুলগুলো দু আঙুল দিয়ে কানের পিছনে গুজে দিচ্ছে। কাছে আসতেই দেখলাম আজকে বর্ণালী চোখে কাজল লাগিয়েছে তাও অন্য এক ডিজাইনে। চোখের মাঝখান থেকে টেনে চোখের কোনায় অবধি কাজল লাগিয়েছে। চোখ দুটো টানাটানা হয়ে আরো বেশি মায়াবী দেখচ্ছে। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলেই আছে। হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে আর হেসে যাচ্ছে। হাসির সময় কখনো চোখ দুটো খুব ছোট ছোট হয়ে আসছে আবার আগের মতো বড় হয়ে আসছে। বেশি হাসলে হাত দিয়ে মুখের উপর ঢেকে দিচ্ছে। এ কেমন সৌন্দর্য! ইস আমারই না নজর লেগে যায়। আমার এখনো না হওয়া শাশুড়ী মা ঠিকই বলেছিলেন ও একটু কালো হয়ে জন্ম নিলো না কেন! সবাই কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। পাশের স্যার তো প্রায় গিলেই খাচ্ছেন তার এই সৌন্দর্য। ও আমার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে আবারো স্যার আর ম্যাডাম একজনের সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের দিকে চলে গেলো।
💛
#_____চলবে……..
[লেখার ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here