হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৩৫,৩৬

0
736

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৫,৩৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

৩৫
তন্নিঃ তুই চলে যাওয়ার ২ বছর পর,
অতীত,
আরু চলে গেছে শুনে আয়ানের সব যেনো উলট পালট হয়ে গেলো।কোথাও যেনো আরুকে মিস করার একটা অনূভুতি হচ্ছে।কিন্তু কেনো?ও তো নিজেই আরুকে বলেছিলো ওর সামনে যেনো আরু আর না আসে।তহলে এখন তো আরু নেই তাহলে কেনো এতো হাহাকার।কেনো কোথাও শান্তি নেই।কিন্তু মনের এক কোনায় আরুকে এখনো ভুল বুঝে এসেছে।এমন অস্থির ভাবেই আয়ানের ২ বছর চলে গেলো।
(চলুন কী হয়েছিলো তখন যেনে আসি)
আয়ান আজ এসেছিলো একটা রেস্টুরেন্টে।মিটিংয়ের জন্য।একটা ডিল সাইন হবে আজকে।খুবই গুরুত্বপূর্ণ।আয়ানের মিটিং খুব সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হলো।এখন চলে যাবে।চেয়ার থেকে উঠতে নিবে এমন সময় ওর চোখ গেলো পাশের ৩ টেবিল দূরে।একটা ছেলে আর মেয়ে।যদিও মেয়েটূ ওর খুবই চেনা।আর ছেলেটা…..
আয়ান ভালো করে ছেলেটা দেখলো।এবার চিনতে পারলো।হ্যা এই সেই ছেলে।একে কোনো দিন ভুলতে পারবে না আয়ান।কি করে ভুলবে?ওর ভালোবাসার মানুষটার সাথেই তো এই ছেলেটা মিশে আছে।কিন্তু ও এই মেয়ের সাথে কেনো?এদের মাঝে কী সম্পর্ক?…..তাহলে কী এদের জন্যই ওর আর আরুর সম্পর্কে এতোটা পাটলো ধরলো?তাহলে কী এদের জন্য ও আরুকে ভুল বুঝলো?তাহলে কী এদের জন্য আরু ওর থেকে এতো দূরে চলে গেলো।
(আচ্ছা ছেলে মেয়ে গুলো কে জানতে চাইবেন না?
হ্যা ছেলেটা রাজ আর মেয়েটদ রিয়া)
ওর এসব ভাবনার মাঝেই রাজ আর রিয়া উঠে চলে গেলো।আয়ানের এবার সন্দেহ হচ্ছে।
সেই দিনের পর থেকে আয়ান লোক লাগায় রিয়ার পিছনে।ভালো করে সব জানার জন্য।
কয়েকদিনে পর জানতে পারে রাজ আর রিয়া কাজিন।রিয়ার বাবা আর রাজের বাবা এক ভাই।রাজের বাবা মা মারা গেছে যখন রাজের ১২ বছর বয়স।তারপর থেকে রিয়ার বাবা রাজর দেখাশুনা করেছে।নিজের কাছে রেখেছে।ছোট বেলা থেকে আদরে আদরে বড় করতে করতে রাজ এক সময় হাত ছাড়া হয়ে গেছে।রিয়ার বাবা তখনো কিছু বলতে পারে নি কারণ ভাইয়ের ছেলে উনি কষ্ট দিতে চান নি।
এসব কথা শুনার পর আয়ানের মনে আরো খটকা লাগলো।আয়ান এমনিতেও রিয়াকে সয্য হয় না।আয়ান ওর লোক দিয়ে আরো খবর নেয়।কিন্তু তেমন কেনো ফল ও পায়নি।আশা একদম ছেড় দিয়েছিলো।কিন্তু একদিন সব আশা ফিরে পায় আয়ান নিজে।যদিও এর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে।রিয়ার সাথে মিথ্যে সম্পর্কে জড়িয়েছিলো।কারণ আয়ান যানে রিয়া ওর প্রতি দূর্ভল।আয়ান এই দূর্ভলতার সুযোগ নিয়েছে।রিয়ার সাথে মিথ্যে সম্পর্ক গড়ে ওর থেকে সব সত্যিটা যেনে নেয়।
একদিন পার্টিতে গিয়েছিলো আয়ান আর রিয়া।ওইখানে আয়ানের লোক আগে থেকে ছিলো।আয়ান ইচ্ছে করে রিয়ার জুসে বেশ করা ডোজের ড্রিংক্স মিসিয়ে দেয়।যা খেলে মনের সব কথা বেরিয়ে আসে।
রিয়া ও আয়ানের সাজানো জালে পা দিয়ে ফেসে যায়।
রিয়া ড্রিংক্স করার পর মাথা কেমন যেনো ঘুরে উঠে।তাই আয়ানকে বলে একটা রুমে যায়।আয়ানক বেশ সময় পর রিয়া যেই রুমে সেখানে যায়।গিয়ে দেখে রিয়া ছটপট।আয়ান বুঝতে পারলো রিয়ার নেশা হয়ে গেছে।তাই আয়ান কৌশলে সবটা জানতে চাইলো।এবং যা শুনলো তাতে আয়ানের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলে।এতো বড় ভুল,এতো বড় অন্যায় ওর দ্বারা হয়ে গেলো।কিন্তু এখন নিজেকে ক্ষমা করবে কীভাবে?এই অন্যায়,এই ভুলের।
রিয়া নিজের মুখে স্বীকার করেছে সব কিছুর পিছনে ও আছে?ওদের প্রথম ব্রেকআপের পিছনেও রিয়ার হাত আছে।কারন আয়ান আর আরু যেইদিন প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে রিয়ার লোকই বলেছে ওদের কথা।আরুকে প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে যাওয়ার আগে যেই মেয়েটা ওকে ভুল বুঝিয়েছে সেও রিয়ার লোক।এবং সব শেষ এতো দিন পর আবার ওদের সম্পর্কে বা হাত ঢুকিয়েছে রিয়া আর এবার সাথে যোগ দিয়েছে রাজ।রিয়া ভাইয়ের কাছে বলেছিলো আয়ানকে ওর যেভাবেই হোক চাই।তাই রাজ সবটা ঠিক করেদিবে বলেছিলো।রাজ যেইদিন আয়ানের সাথে দেখা করতে যাবে তখন গিয়ে দেখে আয়ানের সাথে আরুও আছে।আর আরুকে দেখে রাজের নজর পরে।রাজ তখনই মরিয়া হয়ে উঠে আরুকে পাওয়ার জন্য।একদিনের জন্য হলেও আরুকে ওপর বিছানায় চাই।তাই রাজ সেই ভাবে প্ল্যান করতে রাখে।(যার সবটা আপনারা যানেন।প্রথম পর্ব থেকে দেওয়া)
প্রথমত,আয়ানের কাছে আরুকে নিয়ে বাজে বাজে কথা বলা।তারপর আয়ান আরুকে যা না তা বলেছে।রাজ ভেবেছিলো ওদের প্ল্যান সাকসেসফুল।কিন্তু না।আয়ান আবারও আরুর কাছে গিয়েছিলো।আরুও সবটা ঠিক করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে।
দ্বিতীয়দিনও এরকম ফোন রাজ করেছিলো।আয়ান আবারও সেই আরুকে ভুল বুঝেছে।রাজের একটু হলেও সাকসেস হয়েছিলো।কিন্তু একদিন রাজের সব সুযেগ নিজে হাতে ধরা দেয়।
সেই দিন আরু এক্সিডেন্ট করেছিলো।আর রাজ আরুকে কোলে নিয়ে হসপিটাল গিয়েছিলো।আর তখনই রাজ সু্যোগ বুঝে ওর লোক দিয়ে ওর আর আরুর কয়েকটা ছবি তুলিয়ে নেয়।
এরপর আয়ানের সামনে এসেছিলো রাজ আর আরু হেসে হেসে কথা বলছে।সেটাও রাজের প্ল্যান।
এমন করতে করতে রাজের সাথে আরু একটু ফ্রী হয়েছিলো।তার সুযোগ নিয়েই আরুর কিছু ছবি রাজ কালেক্ট করে।কিন্তু পরে??
এই সমস্ত ছবি রাজ এডিট করে।যেখানে কিছু ছবিতে রাজের কোলে আরু,আরু রাজের হাত জড়িয়ে আছে,বসে আছে পাশাপাশি আরো বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি।যা দেখে আয়ানের মাথা গরম হয়ে গিয়েছিলো।এসব দেখে আয়ান নিজের মধ্যে ছিলো না।নিজের সব রাগ আরুর উপর ঝেরেছে।যেখানে আরুর কোনো দোষ ছিলো না।

এই সমস্ত কথা শুনে আয়ান ধপ করে মাটিতে বসে পরে।কী করেছিলো ও?আরুর কোনো,ভুল,অন্যার,দোষ কিছু ছিলো না।কিন্তু শুধু শুধু আরু শাস্তি পেলো।শাস্তি যদি পেতে হয় তাহলে সেটা তো আয়ানের পাওয়া দরকার।অন্যের কথার জন্য আরুকে ভুল বুঝেছে।ওর ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।নিজের হাতে।এর কোনো ক্ষমা হয় না।
—-
পরে আয়ান এইসব কথা রিয়ার বাবাকে জানায়।ওই খানে তখন আয়ান সবটা রেকর্ড করেছিলো।তাই কেউ অবিশ্বাস করতে পারেনি।আর করবেই বা কী করে সব প্রমান যে আয়ানের হাতে।আয়ান সব প্রমান পুলিশের হাতে তুলে দেয়।পুলিশও রাজকে নিয়ে যায়।রাজের বিরুদ্ধে আরো প্রমান জোগাড় করেছে আয়ান।সেগুলো হলো মেয়েদের সন্মান নষ্ট করা।যাকে এক কথায় বলে ধর্ষক।যে মেয়েগুলো সাথে এসব হয়েছে তারা নিজের সাক্ষী দিয়েছে।এতো দিন এই মেয়ে গুলো কিছু করতে পারে নি কারন রাজ ভয় দেখাতো সবাইকে।ওর কাছে ভিডিও আছে।যা ও পাবলিক করতে ২ সেকেন্ড সময় লাগবে না।সে সব প্রমান আয়ান পুলিশের হাতে দেয়।আর অপরাধের শাস্তি হিসাবে রাজকে যাবত জীবন জেল দেয়।আর রিয়াকে এক মাসের মতো রেখে ছেড়ে দেয়।ছাড়া পাওয়ার পর ওর বাবা ওকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়।
————-
তারপর থেকে ৩ বছর এভাবেই চলে এসেছে আয়ানের জীবন।আরু বিহীন।আর ও অপেক্ষায় থাকতো কবে আরু দেশে আসবে।এর মাঝে আয়ান দুবার আমেরিকা গিয়েছিলো আরুর খোঁজে কিন্তু পায়নি।শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।

চলবে……

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৩৬
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

তন্নি অতীত থেকে বেরিয়ে আসে।তন্নি আরুর দিকে তাকিয়ে দেখে আরু এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।কাদছে কী না তাও বুঝা যাচ্ছে না।তন্নি আরুর কাঁধে হাত রাখলো।আরুর তন্নির দিকে না তাকিয়ে বললো,
আরুঃ আমি একটু একা থাকতে চাই প্লিজ।

এটা শুনে তন্নিও আর জোর করেনি আরুকে।তন্নিরও মনে হয়েছে আরুকে একটু একা থাকতে দেওয়া দরকার।তাই তন্নি নিচে চলে গেলো।
———
তন্নি চলে যাওয়ার পর আরুর চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।কষ্ট পেতে পেতে আয়ানের জন্য সে পাথর হয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু এখন কেনো আয়ান সেই পাথরে ফুল ফুটাতে চাইছে?আরু তো ভেবেছিলো আয়ান নামের মানুষটা তার জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে।আরু ওর ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে।কিন্তু এখন আরু ধারনা ভুল।তাই আরু এখন পারছে না আয়ানকে দূরে ঠেলে দিতে না পারছে কাছে টেনে নিতে।খুব দোটানায় ভুগছে ও।
———–
আয়ান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।ওর মন আজকে ভালো না।আরুর বাসায় আজ যা যা হয়েছে সবটা তন্নি আয়ানকে জানিয়েছে।সব শুনে আয়ান কোনো কতা বলে নি।ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে আছে।এমন সময় ওর মা এলো।আফিয়া রহমান এসে দেখে তার ছেলে সটান হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তাই তিনি তার ছেলের মাথার কাছে গিয়ে বসলেন।আয়ান তার মা’য়ের উপস্থিতি টের পেয়ে ওর মা’কে বসতে বললো।আয়ানের মা বসতেই ও ওর মা’য়ের কোলে মাথা রাখলো।আফিয়া রহমান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আফিয়া রাহমানঃ তোর কী মন খারাপ বাবা?
আয়ানঃ না তো।
আফিয়া রাহমানঃ মিথ্যে বলে লাভ নেই আমি সবটাই বুঝতে পারি।কারণ আমি তোর মা।

আয়ান আর কী বলবে।ওর মা’য়ের কথা শুনে ওর চোখ টা ছলছল করে উঠলো।এতোক্ষনে ও একটা আশ্রয় পেলো।আয়ানের চোখে যেনো বন্ধ করলেই করলেই টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পরলো।
আয়ানের মা আয়ানকে স্বান্তনা দেয়।এতো বড় ছেলেকে কাঁদতে দেখে আয়ানের কী করবে বুঝতে পারছে না।সন্তানের কষ্টে তিনিও কষ্ট পাচ্ছেন।তিনি একটাই দোয়া করেন আল্লাহ যেনো তার ছেলের মনের সব আশা পূরন করে।
—————-
রাতে তন্নি আরুর রুমে এসে দেখে আরু ঘুমিয়ে আছে।একবার ডাকতে গেলেও পরে আর ডাকলো না।ভাবছে ঘুমাচ্ছে যখন ঘুমাক।
তন্নি আরুর রুম থেকে বেরিয়ে এলে তন্নির ফোনে আয়ানের কল আসে।তন্নি আয়ানকে কাল কী কী করতে হবে সবটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।
——–
এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।এরপর সবটা আরুর উপর ডিপেন্ড করে।
সকালে কী হবে তা নিয়ে টেনশনে আছে আয়ান।টেনশনের কারনে ওর চোখের ঘুম উধাও।
যপ করেই হোক আরুকে ওর চাই।আরুর থেকে দূরে থাকতে আর পারবে না।অনেক হয়েছে।এবার সে আরুরকে আপন করে নিবেই।ওর জীবনে আরুকে খুব প্রয়োজন।কারন আয়ান #হারাতে_চায়_না আরুকে।
——————
পরদিন সকালে,,,,,,,,
আরু বেলকনিতে হাতে কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আরু কফিতে চুমুক দিয়ে বাহিরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
কোনো এক সকাল যদি আয়ান আর আরুর এভাবে কাটতো।….এসবই ভাবছে আরু।
তখনই তন্নি এলো।এসে দেখে আরু বাহিরে তাকিয়ে আছে।তন্নি আরুর পাশে গেলো।আরুও ওর পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে তন্নি।আরু আর কিছু বললো না।তাই তন্নি বললো,
তন্নিঃ মন খারাপ?
আরুঃ উহু….
তন্নিঃ তাহলে কাল থেকে কথা বলছিস না কেনো?
আরুঃ এমনি ভালো লাগছে না কিছু।
তন্নিঃ হুম…….তোর ফোন কোথায়?
আরুঃ রুমেই আছে।কেনো?
তন্নিঃ মারু তোকে কল দিচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না।
আরুঃ কেনো কোনো দরকার?
তন্নিঃ হুম বললো একটু শপিংয়ে যাবে।আমরা কেউ যাতে ওর সাথে একটু যাই।তাই বলছিস তুই যা।ভালো লাগবে বাহির থেকে ঘুরে আসলে।
আরুঃ তো তুই যা।
তন্নিঃ না আসলে আমি যেতে পারবো না।
আরুঃ কেনো?
তন্নিঃ আসলে তোর ভাইয়া আজকে লাঞ্চ নিয়ে যায়নি।তাই ভাবছি আমি দিয়ে আসবে😇(লজ্জা পেয়ে)
আরুঃ ওহহ..হোওওও..তাই বলো😉
তন্নিঃ ধুর😌
আরুঃ কিন্তু আমার ভালো লাগছে না।
তন্নিঃ প্লিজ যা না।এতো করে ও বললো।
আরুঃ আচ্ছা যাবো।
তন্নিঃ ওকে তুই রেডি হ।একটু পর হয়তো মারু এসে পরবে।
আরুঃ আচ্ছা।
————
আরিশা আর মারিয়া শপিং মলের এদিক ওদিক ঘুরছে।কোনো কিছু আরুর পছন্দ হচ্ছে না।ভালোও লাগছে না।তাও মারিয়ার রিকোয়েস্ট এসেছে।
প্রায় অনেকক্ষন পর মারিয়ার শপিং শেষ হয়েছে।এবার ওরা একটা রেস্টুরেন্টে যাবে।
——–
মারিয়া ওকে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।রেস্টুরেন্টে দেখে আরু বেশ অবাক হলো।কারন পুরো রেস্টুরেন্টে ফাঁকা।আশেপাশে কোনো মানুষ নেই।আরুর মনে এবার খটকা লাগলো।মারিয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মারিয়া একটা কাপড় দিয়ে ওর চোখ বেধে দেয়।মারিয়ার কাজে আরু পুরো শকড।তাই আরু বললে,
আরুঃ আরে মারু চোখ বাঁধলি কেনো?
মারিয়াঃ কারণ আছে।চল আমার সাথে।
আরুঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস সেটা তো বল।আর চোখই বা বাঁধলি কেনো?
মারিয়াঃ তোকে মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছি।চুপ থাক নিজের চোখেই একটু পর দেখতে পারবি।

আরু আর কিছু বললো না।চুপচাপ মারিয়ার সাথে হেঁটে চলেছে।কিছু সময় পর মারিয়া হাটা থামিয়ে দেয়।আরুও।মারিয়া কোনো কথা বলে আরুকে দাড় করিয়ে চলে যায়।আরু আশেপাশে মারিয়ার উপস্থিতি টের না পেয়ে মারিয়াকে ডাকতে লাগলো।কিন্তু কারো কোনো সাড়াশব্দ পেলো না।আরুর এবার একটু ভয়ও লাগছে।তাই আস্তে করে ওর চোখের কাপড়টা সরালো।।

চোখ থেকে কাপড় সরাতেই আরু দেখলো একটা বড় রুম।আর পুরো রুমের দেওয়ালে,ফ্লোরে সব জায়গায়,বিভিন্ন ভাবে,মোমবাতি,বেলুন,ফুল দিয়ে ”SORRY” লেখা।আরু পুরো রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।রুমটা খুব চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে।
আরু বুঝতে পারলো না মারিয়া ওকে কেনো ‘সরি’ বললো।
এমন সময় আরুর চোখ গেলো বেলকনিতে কেউ দাড়িয়ে আছে।জানালায় তার ছায়া দেখতে পাচ্ছে।কিন্তু ছেলে না মেয়ে তা বুঝা যাচ্ছে না।ছায়াটা আস্তে আস্তে রুমের দিকে আসছে।আরু এবার একটু হলেও বুঝতে পারলো এটা ছেলে।আরুর এবার একটু অস্বস্তি হচ্ছে।কোনো ছেলে কেনো ওকে এখানে এনেছে আর কেনোই বা ‘সরি’ বলছে।ওর মাথায় কিছু আসছে না।
আরু এবার বিছলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
আরুঃ কে আপনি?
………………
আরুঃ কী হলো কথা বলছেন না কেনো?
………………
আরুঃ আরে বাবা কথা বলছেন না কেনো?
বোবা নাকী?
………………
আরুর এবার অনেকটাই রাগ হলো।এভাবে চুপ করে থাকার মানে কী।আর ওকেই বা কেনো বলছে।আরু এবার রেগে বললো,
আরুঃ দেখন মিস্টার আপনি যেই হন না কেনো?এসব ‘সরি’ বলার মানে কী😠

লোকটা এবার আরুর সামনে এসে দাঁড়ায়।লোকটাকে দেখে আরু পুরো ‘থ’ মেরে গেছে।কারন এই মানুষটা হলো আয়ান।জ্বী এটা আয়ান।
আয়ানকে দেখে আরু পুরো অবাক।ওর চেহারা এমন হয়ে গেছে কেনো এই কয়েকদিনে।চেহারায় একটা অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে।মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।আয়ানকে এভাবে দেখে আরুর বুকটা হুহু করে উঠলো।হাজার হোক ভালোবাসার মানুষ।আয়ান এবার আরুর পুরো কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়।ওদের দূরত্ব হয়তো ২/৩ ইন্সি।আয়ান বললো,
আয়ানঃ আমাকে কী ক্ষমা করা যায় না আরু?

আয়ানের চোখ দুটি ছলছল করছে।আয়ানের এমন দেখে আরুও গেলে যাচ্ছিলো কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নেয়।ওর এখন মারিয়ার উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।কেনোনা আরু সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলো আয়ানকে আর নিজের জীবনের সাথে জড়াবে না।
আরু কোনো উত্তর দিচ্ছে না।আরুকে চুপ থাকতে দেখে আয়ান বললো,
আয়ানঃ কিছুতো বলো আরু?
আরুঃ আমার কিছু বলার নেই।
আয়ানঃ আমি অন্যায় করেছি জানি।ক্ষমাও চাইছি বারবার।কিন্তু তোমার কাছে কী আমার ক্ষমা পাওয়ার যেগ্যতা নেই?আমি কী একটা সুযোগ আর পেতে পারি না?
আরুঃ যে করেছিলেন বেশ করেছেন।যা আপনার করার কথা ছিলো তাই করেছেন।ক্ষমা চাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।উল্টো ক্ষমা আমার চাওয়া উচিত আমার মতো মেয়ের মুখ আপনাকে আবার দেখতে হলো।

আয়ান বুঝতে পারলে আরু ৫ বছর আগের কথা ওকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।আরুর মনে রাগ,অভিমান সব বাসা বেধেছে।আয়ানের খুব কষ্ট হচ্ছে আরুর মুখে এমন কথা শুনে।আরু যে একা কষ্ট পেয়েছে তা তো নয়।আয়ান ও তো কষ্ট পেয়েছে।এখন সব ভুল বুঝাবুঝি,মান অভিমান মিটিয়ে নিয়ে একটু সুখে থাকতে চাইছে তাও আয়ানের ভাগ্যে হচ্ছে না।আয়ান অসহায় চোখে আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়ানঃ আরু……🥺
আরুঃ আরিশা।আরিশা বলে ডাকবেন😊……আর আমার চেহারা আমি ইচ্ছে করে আপনাকে দেখাই নি।আমি জানতাম না আপনি এখানে আছেন।জানলে আসতাম না।মাফ করবেন আমাকে🙏

আরু চলে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই আয়ান আরুর হাত ধরে আটকায়।এতোদিন পর আয়ানের আদুরে ছোয়া পেয়ে আরু মনে এক দমকা হাওয়া বইলো।কিন্তু পরক্ষনল নিজেকে সামলে আয়ানের দিকে ফিরে বললো,
আরুঃ হাতটা ছাড়ুন।
আয়ানঃ আরু আমাকে ছেড়ে যেও না। আমার কথাটা একবার শুনো প্লিজ….🥺
আরুঃ আমি করো কোনো কথা শুনতে চাই না..

বলেই আয়ানের হাত থেকে ছাড়া দিয়ে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।আরু আর এক সেকেন্ডও ওখানে দাড়ায় না।সোজা চলে আসে সেখান থেকে।আরু এমন পরিস্থিতিতে পরবে তা কখনো চায়নি।ও মন থেকে চাইতো এমন যাতে না হয় ওর সাথে। কিন্তু এখন…..

আয়ান অনেক বার আরুকে ডেকেছে কিন্তু আরু একবারো ফিরে তাকায় নি।
——–
আরু যাওয়ার পর আয়ান হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছে।এমন সময় রাফসান এলো।রাফসানও ভাবতে পারেনি আরু এমনটা করবে
এদিকল আয়ান কাঁদছে।ছেলেদের তো কাঁদতে নেই।রাফসান আয়ানকে কী বলে স্বান্তনা দিবে তা বুঝতে পারছে না।রাফসান আয়ানের কধে হাত রাখলে আয়ান মাথা তুলে তাকায়।তারপর নিজেকে সামলে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ায়।রাফসানকে বললো ‘চল’।
আয়ান হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।
————
আরু বাসায় এসে কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে পার্স টা বিছানায় ছুড়ে মেরে দরজার সামনে ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগে।কীভাবে পারলো আয়ানের সাথে এমন বিহেভ করতে।ও তো করতে চায়নি এমন।কিন্তু আয়ানকে দেখে কেমন যেনো হয়ে গিয়েছিলো।রাগ,অভিমান,ঘৃণা,ভালোবাসা,কষ্ট সব একসাথে ওর মনে ও মাথায় ঝেকে বসেছিলো।
আরুর এভাবে নিচ থেকে চলে আসাতে আরুর মা বর তন্নি ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।আরুকে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলে ও ‘কিছু হয়নি’ বলে চলে এসেছ।কিন্তু তা ওরা বিশ্বাস করেনি।তাই তন্নি রাফসানকে কল করে জানতে চায় কী হয়েছে সেখানে।রাফসানও সবটা বলে আরুকে।সবটা শুনে আরুর মা আর তন্নি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।এ বিষয়ে ওনারা কিছুই করতে পারবে না।
—————–
আরু কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিলো।যা খুব তাড়াতাড়ি ফুলফিল করতে হবে।এবার আর করোর দিকে তাকাবে না।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here