#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৪৫
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
রাত ৮ টা
আয়ানের এখনো সেন্স ফিরে নি।আয়ানে মা মোটামুটি এখন ঠিক আছে কিন্তু তার চোখের পানি এখনো জড়ছে।আয়ানা আর ওর বাবা মা,অনিম বসে আছে আই.সি.ইউ এর সামনে।রাফসান গিয়েছে মারিয়াকে বাসায় দিয়ে আসতে।রাত হয়ে আসছে এখন বাড়ির বাহিরে থাকা ঠুক নয় তাই।
এদিকে আরুর ও এখনো সেন্স ফিরে নি।ওর সেন্স ফিরলে ও কী করবে সেটাও ভাবছে সবাই।ওদের এসব ভাবনার মাঝেই আরুর কেবিন থেকে একটা চাপা আওয়াজ আসছে।আওয়াজ আসতেই অনিম সেই দিকে ছুটে গেলো।গিয়ে দেখে আরু হাতের সেলাইন খোলার চেষ্টা করছে যার কারনে হাত থেকে রক্ত পরছে।অনিম তাড়াতাড়ি গিয়ে বোনকে ধরলো।ওকে শান্ত করতে।কিন্তু ওকে শান্ত করতে পারছে না।আরু সেলাইন খুলে বাহিরে এসে পরেছে।অনিম ওকে বারবার ধরার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।
আরুর এই অবস্থা দেখে আয়ানের মা আরো ভেঙে পরে।
আরু বারবার সবার কাছে হাত জোর করে বলছে ওকে ভিতরে যেতে দিতে কিন্তু ওকে আটকে রেখেছে।আরুর এমন বুক ফাটা আর্তনাদে সবাই কাঁদছে।ওর এমন কান্নায় আকাশ বাতাস মনে হয় ওর সাথে তাল মিলিয়ে চলেছে।আরু আই.সি.ইউতে ঢোকার জন্য বারবার চেষ্টা করছে।ওর এমন ব্যবহার পুরো পাগলের মতো।ও কাদছে আছে বলছে,
আরুঃ আমাকে ছেড়ে দাও।আমি আয়ানের কাছে যাবো।ওকে আর কোনো দিন কষ্ট দিবো না।আর কোনোদিন আমাকে ছাড়ার কথা বলবো না ওকে।আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ।….
আরুর কান্না করতে কারতে কিছুটা দুর্ভল হয়ে পরেছে।এখন আর জোরে জোরে কথা বলতে পারছে না।এর মাঝেই একজনের নার্স এসে বললো,
নার্সঃ এখানে এভাবে চিৎকার করবেন না।রোগীর সমস্যা হবে।আর তাড়াতাড়ি এ পজিটিভ রক্ত জোগাড় করুন।ওনার অবস্থা বেশি ভালো না।তাড়াতাড়ি।
নার্স তাড়া দিয়ে আবার ভিতরে চলে গেলো।আর আয়ানের মা এসব শুনে আবার কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
আফিয়া রাহমানঃ আল্লাহ আমার ছেলেকে বাচিয়ে দাও।আমি তুমি তুলে নাও।..আমার কোল খালি করে দিও না।আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
এসব বলতে বলতে তিনি আবারো কান্নায় ভেঙে পরলো।আর আরু একদম চুপ হয়ে আছে।কিন্তু চোখের কোল দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে তা বন্ধ নেই।রক্ত ও জোগাড় হয়ে গেছে।রাফসান আর ওর পরিচিত একজন দিবে।
———–
রাত ১০
আরু দাড়িয়ে আছে আই.সি.ইউ এর সামনে।কাচের দরজার বাহিরে দাড়িয়ে ও আয়ানকে দেখছে।আয়ানের মুকে অক্সিজেন মাস্ক,মাথায় ব্যান্ডেজ,হাত,পা,বুক,ডান পায়ের হাটুর নিচে সব জায়গায় ব্যান্ডেজে মোরানো।বলতে গেলে পুরো শরীরে শুভ্র রঙের ব্যান্ডেজে মুরানো যার উপর লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ।কিন্তু আয়ান এখনো সেন্সলেস।
আরুর দাড়িয়ে নিশ্বব্দে চোখের পানি ফেলছে।ওর চোখ মুখ ফুলে গেছে কান্নার কারনে।আরু চোখের সামনে পুরনো কিছু স্মৃতি ফুটে উঠছে।বিয়ের পর আয়ানের করা দুষ্টামি গুলো,ওর প্রতি ছোট ছোট কেয়ার,ভালোবাসা,সকালে ঘুম থেকে উঠে আয়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা,প্রতিদিন সকালে আয়ানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করা।আবার আয়ান যখন উঠে তখন অনেকটা সময় ধরে আয়ান ওর কপালে চুমু খাওয়া।এসব মনে পরে আরু ফ্লোরে বসে দু’হাতে মুখ ঢেকে আবার ঢুকরল কেদে উঠলো।
এই কয়েকদিনে আয়ানের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।ওকে নিজের থেকে দূরে রেখেছে।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ও সব হারিয়ে ফেলবে।ওর মনে হচ্ছে ও কলিজা কেউ টেনে নিয়ে যাচ্ছে।হটাৎ ওর মাথায় কারো হাতের ছোয়া পেলো।তাকিয়ে দেখে অনিম।আরু অনিমকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
আরুঃ এমন কেনো হলো ভাইয়া?এমনটা হওয়া কী খুব দরকার ছিলো?
অনিমঃ চিন্তা করিস না।কিছু হবে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু তার আগে তুই নিজেকে শক্ত কর।(বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে।)
এর মাঝেই ডাক্তার বের হলো।আতিক রহমান ডাক্তারের সামনে গিয়ে বললেন,
আতিক রহমানঃ ডাক্তার আমার ছেলে?
ডাক্তারঃ এখন আপাতত কোনো বিপদ নেই।রক্ত দেওয়া হয়েছে।আর কাচ গুলোও সব উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে।খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্টটদ হেয়েছল।তবে আশা করা এ যাত্রায় হয়তো বেচে যাবে।আর বাকীটা আল্লাহর উপর।
আরুঃ ডাক্তার আমার আয়ানকে ঠিক করে দিন।ওকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন।
ডাক্তারঃ মা বাঁচানোর মালিক আল্লাহ।আমরা শুধু চেষ্টা করতে পারি।আর আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
বলেই ডাক্তার চলে গেলো।আরু সবার সামনে এসে বললো,
আরুঃ ভাইয়া তুই সবাইকে নিয়ে চলে যা বাসায়।এখানে থেকে কী করবি?আমি এখানে আছি
অনিমঃ আমরা চলে গেলে তুই একা একা কী করবি?আর তের শরীরও ভালো না
আরুঃ আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।মা’য়ের শরীরটা খারাপ।মায়ান ওখানে একা আপুকে ছাড়া।আর বাবাও ভেঙে পরেছে।তাই বলছি সবাইকে নিয়ে চলে যাও।এখানে ভিড় বারিয়ে লাভ নেই।
অনিমঃ সে না হয় আমি সবাইকে পৌঁছে দিয়ে আসবো কিন্তু তোকে এখানে একা রেখে।
আরুঃ আমার সমস্যা হবে না।ডাক্তাররা তো আছেই।আর বেশি সমস্যা হলে আমি তোমাদের কল করবো।
আয়ানাঃ আরু তুমি খী বলছো?একা কীভাবে থাকবে?তারচেয় অনিম থাকুক।
আরুঃ আপু আমার চিন্তা করো না তোমরা।
শেষে আরুর কথা সবাই মানতে বাধ্য হয়েছে।সবাই এখন যাবে আরু দের বাসায়।কাল আবার সবাই আসবে।সবাই চলে গেলে আরু কিছু খেয়ে নিলো।কারণ ওকে সুস্থ থাকতে হবে।তা না হলে আয়ানকে সুস্থ করবে কী করে?আয়ানের সেন্স আসলে যদি দেখে ওর আরুপাখির এই অবস্থা তাহলে কী করবে কে জানে।তাই আরু অল্প কিছু খেয়ে নিলো।
—————-
মাঝে পুরো দিন চলে গেলো এখনো আয়ানের সেন্স ফিরে নি।সবাই এসেছে হসপিটালে।সবাই ভিষন চিন্তায় আছে এখনো সেন্স না ফিরাতে।ডাক্তারাও ভয়ে আছেন।এখনো কেনো সেন্স আসছে না।যদিও তারা ৪৮ ঘন্টা সময় দিয়েছে।কিন্তু তাও তাদের একটা চিন্তা হচ্ছে।ছেলেটা বেঁচে যাবো তো?এটাই এখন ওনাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।কিন্তু আরুর মন থেকে ওর বিশ্বাস,ওর আশা মুছে যায়নি।ওর বিশেষ আয়ান চোখ মেলে তাকাবে।আয়ান সুস্থ হবে।ওকে একা ফেলে আয়ান নিশ্চিন্তে কোথাও যেতে পারবে না।সবাই আরুর এই মনোবল দেখে যেমন খুশি তেমন মনে এক জাক ভয়।যদি ভুলক্রমেও আয়ানের কিছু হয়ে যায় তাহলে আরুকে সামলানো যাবে না।সবার এখন একটাই দোয়া আয়ান যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।
কিন্তু একসময় আরু ধারণাই ঠিক হয়েছে।যায়নি ওর আয়ান ওকে একা রেখে।ওর বিশ্বাস জিতেছে।আয়ানের মা’র কোল খালি হয়নি।ওনারা সন্তান ওনার কাছে ফিরে এসেছে।সবাই লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছে আল্লাহর দরবারে।আর আয়ান যে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয় এই দোয়াও করছে সবাই।
সন্ধ্যার পর আয়ানের সেন্স ফিরে এসেছে।কিন্তু পুরোপুরি না।শুধু রেসপন্স করেছে।এতেই ডাক্তার বলেছে বিপদ কেটে গেছে।কিন্তু তাও ওনারা একদিন দেখবেন।ওর মস্তিষ্ক ঠান্ডা করতে হবে।তাই ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলো।কিন্তু ওকে আজকেও আই.সি.ইউ তে রাখতে হবে।
সারাদিন থেকে সবাইকে আরু জোর করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।কাউকে থাকতে দেয় নি হসপিটালে।আবারো সবাই আরুর কথা মানতে বাধ্য হয়েছে।আরু ডাক্তারদের অনেক বলে কয়ে বহু কষ্টে রাজি করিয়েছে আরু আজ আই.সি.ইউতে থাকার।কিন্তু ও কথা দিয়েছে আয়ানে কোনো অসুবিধা হতে দিবে না।ডাক্তারও ওর এমন মিনতি শুনে না করতে পারেনি।
———
আরু এখন আয়ানের সামনে বসে আছে।ওর চোখ দুটি বারবার ভিজে আসছে কিন্তু আরু তা নিচে পরতে দেয়নি।ও কাদবে না।ও কাঁদলে যদি আয়ানের কোনো সমস্যা হয়।না তা ও হতে দিবে না।আরু আস্তে আস্তে আয়ানের মাথায় ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আয়ানের এক হাতে সেলাইন লাগনো আর আরেক হাতে নেই কিন্তু সেই হাতে ব্যান্ডেজ করা।রাত গভীর হয়ে আসছে।আরু এতোক্ষন জেগে ছিলো কিন্তু আর পারছে না।ওর চোখ ভিষণ জ্বালা করছে।তাই আরু আস্তে আস্তে চেয়ারে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।
———
সকাল ৭ টা
আয়ানের হাত আস্তে আস্তে নড়ছে।চোখ খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।অনেক চেষ্টার কর চোখ খুলতে সক্ষম হন।২ দিন পর ও চোখ খুলছে।অনেকটা সময় নিয়ে চারপাশ তাকালো।ঘুমের রেশ এখনো যায় নি।নিভু নিভু চোখ দিয়ে সব দেখার চেষ্টা করছে।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র রঙের দেওয়ালে,চারপাশে বিভিন্ন মেডিকেল যন্ত্রপাতি।শরীর নাড়াতে গিয়ে বুঝলে পুরো শরীর ব্যান্ডেজ।তার জন্য ব্যাথ হয়ে আছে পুরো শরীর।হটাৎ ওর মনে পরলো ওর এক্সিডেন্টের কথা।তাহলে ও এখন হসপিটালে আছে।কিছুক্ষন খেয়াল হলো পর বেডের পাশে কেউ আছে।ওর হাতের সাথেও কারো হাত লাগছে।আয়ান তাকিয়ে দেখলো সে আর কেউ না তার ‘আরুপাখি’,তার ‘বউ’।
আয়ান হাত বাড়িয়ে আরুকে ছুঁতে গেলে হাতে টান পরে ব্যাথায় গুঙিয়ে উঠে।আবার হাত আগের জায়গায় রেখে দেয়।
আরু হটাৎ কিছুর শব্দ হতে চোখ মেলে তাকায়।তাকিয়ে দেখে আয়ান চোখ মুখ খিচে আছে।আরু তাড়াতাড়ি আয়ানের সামনে এসে উত্তেজিত হয়ে বললো,
আরুঃ কী হয়েছে?কষ্ট হচ্ছে?আমি ডাক্তার ডাকবো?দ..দাঁড়াও আমি ডাক্তার ডেকে আনছি।
আরু ছুটে চলে গেলো।আয়ান ওকে আটকাতে পারলো না।আসলে ও ব্যাথার জন্য কিছু বলতে পারছে না।এর মাঝেই আরু ডাক্তার নিয়ে এলো।ডাক্তার আয়ানকে দেখে বললো চিন্তার কোনো বিষয় না।আবার একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি।৩/৪ ঘন্টা পর উঠে পরবে তখন ঠিক হয়ে যাবে।ডাক্তারের কথা শুনে আরু স।সস্তির নিশ্বাস নিলো।
আরু গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
———–
দুপুর ১২টা
আয়ান চোখ মেলে তাকালো।এবার ও তাকিয়ে দেখে আগের মতো সেই রুমে নেই।এটা অন্য রকম।এখানে মেডিকেল যন্ত্রপাতি অনেকটাই কম।আয়ান চারপাশ তাকিয়ে দেখলো জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে তার আরু পাখি।এক সাইড হয়ে ছিলো তাই পর মুখটা আয়ান কিছুটা দেখতে পাচ্ছে।আয়ান দেখে আরুর চোখের নিচে কালো দাগ পরে আছে।চোখ মুখ সব ফুলে আছে গালেও পানির কিছু বিন্দু।নিশ্চয়ই এখনো কাঁদছে।অনেকটা শুকিয়ে গেছে।আয়ান ভাবছে আয়ানের এই অবস্থায় আরু ওর পাশে ও তো চাইলে চলে যেতে পারতো কিন্তু না ও যায়নি।ওর পাশে আছে পর জন্য কাঁদছে।তাহলে কী আরু সত্যি আয়ানকে এখনে আগের মতো ভালোবাসে।এসব ভেবেই আয়ান একটু উঠতে নিলেই আরুর চোখ আসে আয়ানের দিকে।আরু দেখে আয়ান উঠার চেষ্টা করছে।আরু দৌড়ে এসে বলে,
আরুঃ একদম নড়ার চেষ্টা করবে না।আমি ডাক্তার ডেকে আনছি।
[উম্মে বুশরা]
আরু চলে গেলো।আয়ান ভাবছে আরু কী বললো?তুমি করে বলেছে ওকে।আজ এতোগুলো দিন পর ওর মুখে তুমি ডাক শুনেছে।আয়ান এটা ভেবেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো।ডাক্তার এসে ওকে একবার চেক-আপ করে গেলো।ডাক্তার বকর হলে আয়ানের মা বাবা,আয়ানা,আরুর মা বাবা,অনিম,তন্নি,রাফসান,মারিয়া সবাই একসাথে কেবিনে ঢুকে।আয়ানের এসে আয়ানের সামনে বসে কেঁদেই দিলেন।আয়ান বলে,
আয়ানঃ আহহ,মা কাঁদছো কেনো?ঠিক আছি তো আমি।কান্না বন্ধ করো।
আফিয়া রাহমানঃ চুপ কর তুই।আমি তোকে হারাতে বসেছিলাম।আর তুই বলছিস তুই না কাঁদতে।এভাবে কেউ গাড়ি চালায়?…আজ থেকে তোর গাড়ি চালানো বন্ধ।
আয়ানঃ এ্য..আমি কী বাচ্চা নাকী।এভাবে ভয় দেখাচ্ছো?আর আমার কিছু হয়নি তো।তুমি কাদছো কেনো এভাবে?(মাকে হাসানোর জন্য)
আফিয়া রাহমানঃ এক থাপ্পড় খাবি।সারা শরীরে ব্যান্ডেজ আর বলছিস কিছু হয়নি।
একদিকে রাগ দেখাচ্ছে আবার চোখের পানি ফেলছে আবার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।সাবই ওর সাথে টুকটাক কথা বলছে।কিন্তু আরু নেই।কিছুক্ষন পর অনিম আর আয়ানের বাবা বের হয়ে গেলেন।আয়ান হটাৎ বললো,
আয়ানঃ মা আমার পা…?
আফিয়া রাহমানঃ ও কিছু না বাবা একটু রেস্ট নিলে ঠিল হয়ে যাবে।
আয়ানঃ সত্যি মা ঠিক হবে তো?আমি আবার হাঁটতে পারবো তো?
আয়ানাঃ আরে পারবি রে বাবা পারবি।এবার তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাতো।
এদিকে আরু অনিম আর আয়ানের বাবা বসে আছে ডাক্তারের সামনে।ডাক্তার বললো,
ডাক্তারঃ মেডিসিন গুলো সময় মতো খাওয়াতে হবে,একটুও যাতে অনিয়ম না হয় ওর ব্যান্ডেজ ৫ দিন পরপর চেঞ্জ করতে হবে,ভালো করে ড্রেসিং করিয়ে তারপর ব্যান্ডেজ করবেন,গোসল করাবেন না শরীর মুছিয়ে দিলে হবে,আর সবচেয়ে বড় কথা কোনো রকম স্ট্রেস দেওয়া যাবে না,সবসময় ওকে চিন্তামুক্ত রাখবেন কারণ অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে ফিরেছে।সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে আর ১ মাস পর পা নাড়ানের চেষ্টা করবেন।কিন্তু জোর দেওয়া যাবে না।আস্তে আস্তে সময় হলে হাঁটানো চেষ্টা করবেন।
আরুঃ বুঝেছি ডাক্তার।কি ওকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবো কবে?
ডাক্তার ১ সপ্তাহ যাক তারপর শরীরের কন্ডিশন দেখে।
আতিক রহমানঃ ওকে ডাক্তার আজ উঠি।
ডাক্তারঃ বেশ।
———-
দুপুর থেকে আরু আয়ানের সাথে একটা কথাও বলেনি।শুধু নিশ্চুপে আয়ানের সব কাজ করে দিয়েছে।এর মাঝে আয়ান ৩/৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে উটেছে।কিন্তু আরু ঘুমাতে পারেনি।এমনিতেই এই কয়দিন আয়ানপর চিন্তায় ঠিক মতো ঘুম, খাওয়া কিছুই হয়নি।তাই আরুর এখন প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।আরু এখন একটু ঘুমাতে চায়।ঘুমানোর জন্য আরু চুপচাপ সব ব্যাবস্থা করছে।এর মাঝে আয়ানের সাথে কথা বলা তো দূর ফিরেও তাকায় নি।কেনো তাকাবে?ও না হয় জেদের বসে বলে ফেলেছে ওকে ছেড়ল দিতে তাই বলে নিজের এমন ক্ষতি করে কেউ?আয়ানের এই অবস্থা দেখে আরুর বুঝি কষ্ট হয় না?না আয়ান তে মনে করে সে একাই কষ্ট পায় আরুর কোনো কষ্ট নেই।সেই অভিমানে আয়ানের সাথে কথা বলছে না।
আয়ানও চুপচাপ নিখুঁত ভাে আরুর কাজ দেখছে।আয়ান স্পষ্ট দেখছে আরুর মুখে জেদ,অভিমান,কষ্ট,ক্লান্তি সবটাই ফুটে উঠেছে।আরু ফ্রেশ হয়ে সোফায় শুয়ে পরলো।আয়ানের চোখে ঘুম নেই।কী করে থাকবে এই কয়দিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।আরু কথা বলছে না এটা আয়ান মেনে নিতে পারছে না।তাই আরুকে জ্বালাতে বললো,
আয়ানঃ বউ??ও বউ…
আরুঃ…….(আরু জানে ইচ্ছে করে এমন করছে।ও ভালো করে জানে এখন কোনো দরকার নেই।আর আয়ানে গলার স্বর বলে দিচ্ছে)
আয়ানঃ ঘুমিয়ে পরলে?বউ…..
আরুঃ……
আয়ানঃ স্বামী ডাকলে স্ত্রীরা শুনতে হয়।তা না হলে পাপ হয়।
আরুঃ……
আয়ানঃ ইশ যদি আমার পায়ের সাথে,মুখ,কান সব অকেজো হয়ে যেতো তাহলে ভালো হতো।কী দরকার কান ঠিক থেকে যে কান দিয়ে বউয়ের কথা শুনতে না পাই।আমার তো…….
আরুঃ আর একটা কথা বললে মাথায় এমন বারি মারবো মুখ দিয়ে আর কথা বের হবে না।
আয়ান মাথা নেড়ে বুঝায় আর কিছু করবে না।আরু আবার গিয়ে শুয়ে পরে।আয়ানের হটাৎ কিছু মনে হলে আবার বলে,
আয়ানঃ আচ্ছা বউ?মাথায় বারি মারলে মুখের কথা বন্ধ হয় কীভাবে?🤔
আরু আবার রেগে তাকালে আয়ান🤫 মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে শুয়ে পরে।আরু বলে,
আরুঃ আমার মাথা ব্যাথা করছে আর একটাও কথাও যে না শুনি।আর যদি শুনি তাহলে এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো।
আয়ানঃ ঠিক আছে।যাওয়ার সময় একটা সুন্দরী নার্স রেখে যেও।
আরুঃ কীহ😠?তোর এতো সাহস?মেয়ে দেখলে মনে পাখনা মেলে?
আয়ানঃ আরে তুমি তো বললে চলে যাব।তো আমাকে সময় দেওয়ার জন্য তো কাউকে দরকার তাই না?
আরু কিছু বলতে নিয়েও বললো না।চুপচাপ শুয়ে পরলো।আয়ানও ওর ব্যাপারটা বুঝে আরুকে আর জ্বালালো না।আয়ান নরম গলায় বললো,
আয়ানঃ বেশি ব্যাথা করছে?
আরুঃ হুম।
আয়ানঃ আমার এখানে আসো মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আরুঃ আপনার শুতে কষ্ট হবে।
আয়ানঃ তোমাকে আসতে বলেছি।(রাগি গলায়)
আরু এলে আয়ান একটু কষ্ট করে বেডের এক সাইডে চলে যায়।আর আরুও শুয়ে পরে।আয়ান আস্তে আস্তে আরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
চলবে…….