#Journey episode 24
#২৪
জেসমিন আর রাইফের বিস্ময়ের পরিমাণ এখন তুঙ্গে,ওদের শত্রু কোথা থেকে আসবে? জেসমিন অফিসারের কথার পুনরাবৃত্তি করে।
“আমাদের শত্রু? আমাদের শত্রু আসবে কোথা থেকে? আর আমাদের শত্রুর প্রসঙ্গই বা কেন আসবে?”
“কারণ আপনাদের গাড়ির ব্রেক কাটা ছিল”
“কি!”
“শুধু তাই না,মি.জাফারকে ছুরি দিয়ে পেটে খুচিয়ে আঘাত করা হয়েছে।মিসেস জেসমিন,আপনার লাগেজও খোলা ছিল,সেখান থেকে আমার ধারণা অনেক কিছুই মিসিং,তবে সেগুলো কি কি আমার মনে হয় আপনিই ভাল বলতে পারবেন।”
ওদের জন্য আরেকটি শক।জেসমিন কান্না করতে ভুলে গেছে।ভাগ্যিস সেলিম ইংরেজী তেমন কিছু বুঝে না,তা না হলে এতক্ষণে ও সবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত।রাইফ উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলে,
“আমরা নির্ভেজাল মানুষ,আমাদের গাড়ির ব্রেক কাটার মত শত্রু কোথা থেকে আসবে!”
অফিসা হাত চুলকায়।
“মি ড়াইফ,আপনি ভাবছেন শত্রুকে আলাদা করে চেনা যায়?বা তারা বলে কয়ে আসে যে সে আপনার শত্রু?কক্ষণো না।মানুষের আচার ব্যবহার থেকে বুঝে নিতে হয় কে শত্রু আর কে মিত্র।তা বলুন,আপনাদের কাউকে সন্দেহ হয়?”
স্বামী-স্ত্রী দুজনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।সন্দেহ করার মত সেরকম কেউ আছে কি?জেসমিন এসময় অফিসারের দিকে ফিরে।
“আমি আমার লাগেজ,ব্যাগেজ দেখতে চাই।”
“এগুলো আপাতত পুলিশ কাস্টডিতে আছে।আপনারা সুস্থ হোন,তারপর আমরা সেদিকে আগাতে পারব”
“আমি সুস্থ বোধ করছি অফিসার।”
জেসমিনের এরূপ শক্ত কথা শুনে রাইফ ওর মুখের দিকে তাকায়।কে বলবে এই কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা হাউমাউ করে প্রায় বিলাপ করছিল?রাইফ কিছু বলতে মুখ খুললেই জেসমিন হাত তুলে ওকে থামিয়ে দেয়।অফিসার শীতল দৃষ্টিতে দুজনকে দেখে।
“ঠিক আছে,আপনি আমার সাথে আসুন”
জেসমিন শক্তপায়ে দাঁড়ায়।এখন ওর ব্যাথার অনুভূতি কমে গেছে।আমাদের ব্যথার অনুভূতি হয় কারণ আমাদের আঘাতপ্রাপ্ত অঙ্গ ব্রেনে সিগনাল পাঠায়।কিন্তু যখন ব্রেনে এরচেয়ে বড় কোন আঘাতের সিগনাল আসে,তখন আগের সিগনাল অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে যায়।জেসমিনের এখন তাই হয়েছে,ওর মাথা,হাত পায়ের ব্যথা সেভাবে আর অনুভূত হচ্ছে না।
জেসমিন উঠে দাঁড়িয়ে সেলিমকে বলে,
“বাবা,তুমি আংকেলের কাছে থাকো,আন্টি একটু আসছি।ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই,আমি এসে তোমাকে তোমার পাপার কাছে নিয়ে যাব।”
সেলিম মলিনমুখে মাথা নাড়ায়,ওর ছোট্ট মনে জাফারকে নিয়ে উদ্বিগ্নতা কাজ করছে।রাইফ জেসমিনের হাত চেপে ধরে,
“এ অবস্থাতেই পুলিশের সাথে যাবে?ওদিকে জাফার ভাইয়ের কি অবস্থা জানি না আমরা।আমিও উঠতে পারছি না।এভাবে যাওয়া ঠিক হচ্ছে?”
“দেখ,আমাদের যদি সত্যিই শত্রু থেকে থাকে,সে নিশ্চয়ই এখন বসে থাকবে না?আমরা যদি বসে থাকি,তাহলে সে আমাদের অসহায় আরো বড় বিপদ ঘটাবে।তুমি শুধু সেলিমকে দেখো,এটুকু করো।আমি আসছি”
জেসমিন অফিসারের সাথে সাথে বের হয়ে যায়।রাইফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেলিমকে বুকে চেপে ধরে।জীবন,সংসার শুরুও করতে পারল না,এর মাঝেই এসব কি হচ্ছে চারপাশে?জীবনটা কি নির্ভেজাল হতে পারে না?সব কিছুরই একটা সীমা থাকে,জীবনের ভেজালগুলোর,সেগুলো সহ্যেরও!
এদিকে জেসমিন পুলিশের সাথে এসে নিজের লাগেজগুলো দেখে।যদিও লাগানো ছিল,কিন্তু খোলার পর দেখে সবকিছু একেবারে উলটপালট। কাপড় থেকে শুরু করে ছোট যত বাক্স আছে,প্রতিটা ঘাটা হয়েছে মোটকথা।জেস্মিন সব ঠান্ডা মাথায় দেখে।ওর দুটো জুয়েলারি বক্স গায়েব,যদিও দামী জুয়েলারী ও এখানে রাখেনি,সাথে টুক টাক ছোট ছোট খুটি নাটি কিছু মিসিং।অফিসারের দকে তাকাতেই তিনি উত্তর দেন,
“এগুলো এক্সিডেন্টের স্পটের ওখানে খোলা অবস্থায় পড়েছিল।এমনও হতে পারে,যেসব মিসিং আছে,তার কিছু ওখানেই রয়ে গেছে,খোয়া যায়নি।তবে আমরা যেটুকু পেরেছি এনেছি।শহরের এমন এক যায়গায় এটা ঘটল যে আমাদের পুলিশের এক্সপার্ট লোকজন কম পড়ে গেছে।”
জেসমিন মাথা নাড়ায়।
“কি কি মিসিং আছে?সেখান থেকেই অনেক কিছু ধারণা করা যাবে”
জেসমিন ব্যাপারটা লুকায়
“তেমন কিছু হারানো যায়নি,সব ঠিক আছে”
“তার মানে যা খুঁজছিল আপনাদের অজানা শত্রু,তা সে পায়নি”
“হতে পারে”
জিনিসগুলো গুছিয়ে অফিসারের সামনে বসে।
“জাফার ভাইয়ের কি হয়েছে? How badly is he injured?”
“প্রথমত,গাড়ি উল্টেপাল্টে পড়ে যাওয়ার সময় তিনি মাথায় আঘাত পান।মাথা থেকে রক্তক্ষরণ ততটা গুরুতর না হলেও দুর্বল হয়ে যান।পরবর্তীতে ছুরি দিয়ে উনার পেটে আঘাত করা হয়।হসপিটালে আনতে আনতে এই দুই স্থান থেকে প্রচুর রক্ত পড়েছে।বড় কথা হল তার পেটের ইঞ্জুরিটাই তাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট।”
জেসমিন ইন্নালিল্লাহ বলে ডান হাতে কপাল চেপে ধরে।অফিসার মার্টিন
আবার মুখ খোলেন।
“একটা সুযোগ আছে আপনাদের শত্রুকে চেনার,তবে ভাগ্যের উপর সেটা নির্ভর করে”
“কি সেটা!”
“জাফার সাহেব দেখেছিলেন আপনার শত্রুকে সম্ভবত,কারণ তার কাপড়ের অবস্থা দেখে বোঝা গিয়েছিল যে তার সাথে কারো ধস্তাধস্তি হয়েছিল।উনার কাছ থেকে জানা যাবে কে এসেছিল না তার হাব ভাব কি ছিল।দুঃখজনক হল,উনি অনেক ক্রিটিকাল অবস্থায় আছেন,আমরা জানি না উনার সাথে কথা বলার মত সুযোগ হবে কিনা,তার জ্ঞান আদৌ ফিরবে কিনা”
জেসমিন মুখ নিচু করে হাতের দিকে তাকিয়ে কান্না নিবারণের চেষ্টা চালায়। জাফার ভাইয়ের এ কি হয়ে গেল?এখন সেলিমের কি হবে?ওদের দুজনের কি হবে?সবেমাত্র সুখের ঘরে পা রেখেছিল,ওম্নি দাবানলের মত দাউ দাউ করে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।জেসমিন কোনমতে উঠে দাঁড়ায়।
“স্যার আমি হসপিটালে যাব,সেখানে যাওয়া দরকার বেশি।আর লাগেজগুলোও নিতে হবে।”
“সে ঠিক আছে,কিন্তু আপনাদের তো পুলিশের কাছে রিপোর্ট লিখাতে হবে। কিছু ফর্মালিটীজ পালন করতে হবে।বাই দা অয়ে,আপনি কি চাচ্ছেন না এটা পুলিশ ইনভেস্টিগেট করুক?”
“চাইলে কি হবে?কে শত্রু,কার শত্রু,সে কি চায়,কিছুই জানি না আমরা।কার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করব?”
“একটা জেনারেল কেস আপনাদের করে রাখা উচিত,তাতে ভবিষ্যতে আবার কোন সমস্যা হলে তাতে হেল্প হবে।আপাতত আমাদেরও আর কিছু করার নেই”
“সেটা করা যেতে পারে।ভাল কথা,প্রাইভেট প্রপার্টিতে আমাদের গাড়ি চলে গিয়ছে বলেছিলেন,সেটার কোন রিপোর্ট হয়েছে?”
“নাহ,ঐ লোক তেমন কিছু বলেনি,সে রিপোর্ট করেনি”
“আর আমাদের গাড়িটা?”
“সেটাও ট্রাফিক পুলিশ কাস্টডিতে আছে।”
“অহ,ঠিক আছে,এটা নিয়ে পরে দেখা যাবে।দিন,আমার কাজ গুলো শেষ করি”
জেসমিনের মাথায় কিছুই কাজ করছে না।তবে অফিসারের কথা যুক্তিযুক্ত মনে হওয়ায় সেইমত কাজ করে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসে।
হাসপাতালের সামনে এসে একপাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে কল করে,
“হ্যালো,আমি একটু আমার একাউন্ট চেক করতে চাই…সব ঠিক আছে?…আচ্ছা,তাহলে আমার একটা কাজ করতে হবে।একজন আসবে কয়েকদিনের মাঝে,তার কাছে এটা হস্তান্তর করতে হবে,আর যেটা নিয়ে আসবে,সেটা রেখে দিবে।আমি কল দিয়ে সেটা কনফার্ম করব…হুম,ঠিক আছে…আর কেউ যদি খোঁজ নিতে আসে,বলবে সব ঠিক আছে…আমার কাজে যেন কোন গাফেলতি না হয়।একটু উলট পালট হলে জানো আমি কি করতে পারি…”
কথা শেষ করে জেসমিন হসপিটালের আইসিইউ এর দিকে পা বাড়ায়।জাফারের অবস্থা দেখাটা খুব জরুরী।
চলবে…
লেখনীতে, #AbiarMaria