#Journey episode 43
#৪৩
সেলিম একটা ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়ফড় করে ঘুম থেকে জেগে ওঠে।শরীর ঘামে ভিজে চিতচিটে হয়ে আছে।এক হাতে ঘাম মুছে,পানির মত সারা শরীরে,মুখে ঘাম জমে আছে।চোখ কুঁচকে আশেপাশে তাকায়।কিরে ভাই,এটা সকাল না বিকাল?আর এখানে এসি নাই কেন?এরকম যায়গায় কিভাবে থাকবে?!বিছানার চাদর ওর ঘামে ভিজে গেছে।শুধু মাত্র ঘুমের মাঝেই যে ও এত ঘামায় তা ২৭ বছর পর এই প্রথম জানতে পারল বেচারা!
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বাথরুম চলে যায়,ঠাণ্ডা পানি দিয়ে আরেকবার গোশল করে শরীর ঝড়ঝড়া করে নেয়।টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে দেখে বিছানার একপাশে একজন পৌঢ় মানুষ বসে বসে ওর মাথার কাছে ফেলে রাখা বইটা দেখছে।সেলিমের আওয়াজ পেয়ে মুখ উলে তাকান তিনি। এই লোকটাই নিশ্চয়ই তার আলআমিন মামা,এখনো সে ছবির মতই রয়ে গেছে,খুব একটা বদলায়নি,শুধু বয়স বেড়েছে।শ্যামলা গায়ের রঞ ঠিক তার মায়ের মত, চাপ দাড়ি আর একটা বিরাট গোঁফ যা তার চেহারায় একটা ভারিক্কি ভাব নিয়ে এসেছে,মাথা ভর্তি চুল,ভাঙা নাক,চশমার আড়ালে চোখ জোড়া চকচকে,দৈহিক দিক থেকে মাঝারি গড়নের।সেলিম তাকে সালাম দেয়।
“আসসালামু আলাইকুম মামা,ভালো আছেন?”
“এইত বাবা,ভালোই।তুমি কেমন আছো?কোন সমস্যা হয়নি তো আসার সময়?”
“না মামা,সব ঠিক ছিল”
“এখানে কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি?”
“তেমন না,শুধু একটু গরম…”
“একটু না,দেশে তো এখন অনেক গরম!আর তুমি গরমে কষ্ট পাচ্ছ,এটা কোন কথা নাকি?এই তুলির মা,কোথায় তুমি? বলেছিলাম না অতিরিক্ত একটা ফ্যানের ব্যবস্থা কথা করতে ?কোথায় গেলা?!”
“মামা,আমি ঠিক আছি”
আলআমিন সাহেব হাসেন।মাথা চুলকে বলেন,
“এখানে যে কাজে এসেছ,সে ব্যাপারে আমি কি করতে পারি বলো?”
“মামা,আমি তো কিছুই চিনি না,এই দেশ নিয়ে কিছুই জানি না,আমি…আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না…”
“শুনো,আমার যে ড্রাইভার আছে,ওর নাম শিমুল।শিমুল তোমাকে যেখানে যেখানে যেতে হয় সব যায়গায় নিয়ে যাবে।তোমার যা যা লাগবে,শুধু ওকে বল্বে।আর খবরদার একা কোথাও যাবা না,নতুন কাউকে বিশ্বাস করবা না।”
সেলিম মাথা নাড়ায়।মুখ তুলে দেখে উনি একটা বিড়ি ধরিয়েছেন,আসলে এটা বিড়ি না,চুরুট।চুরুটে টান দিয়ে এক গাদা ধোঁয়া ছেড়ে সেলিমের দিকে তাকান।
“ধোঁয়ায় সমস্যা আছে নাকি?”
সেলিম দুপাশে মাথা নাড়ায়।ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলেন,
“আমার পাগলাটে বোনটা পাগলামী করেই তার জীবনটা কাটাল।কত বলেছি, পড়া শেষ করে চলে আয়,আসল না।উল্টো এমন এক ঝামেলায় জড়াল যে দেশে আসার দরজাটাও লেগে গেল।ওকে কত করে বললাম জিনিস গুলো ফেলে দে,বা সরিয়ে দে,কিন্তু শুনল না,তোমার জন্য নাকি এগুলো রেখেছে!! পুরো রহস্যটা সে নিজের হাতে সাজিয়েছে তোমাত জন্য।
জানি এটা তোমাত কাজ, তবুও যদি আমার কোন সাহায্য লাগে, জানাতে ভুলবে না…।আর হ্যাঁ,এখন খেতে এসো”
সেলিম মামার পিছে খেতে যায়।খাবার টেবিলে দেখা হয় দুই মামাত ভাই বোনের সাথে।একজনের নাম প্রান্তর,আরেকজন তৃণা।তৃণা এবার নবম শ্রেণীতে পড়ছে,আর প্রান্তর ভার্সিটিতেপ্রথম বর্ষে।প্রান্তরের সাথে সেলিমের বেশ খাতির হয়,বিশেষ করে ইংরেজীতে কথা বলতে পারায়।সবার সাথে টানা বাংলা বলে বেচারার জন্য ভালোই কষ্টকর।
খাওয়ার পর ছাদে বসে আড্ডা দিতে দিতে জাফরিনের ভিডিও কল আসে।ভাই বোন দুইজনের সাথে প্রান্তরের পরিচয় করিয়ে দেয়।সবাই মিলে মজা করার পর ১১টার কিছু পরে সেলিম বিছানায় চলে যায়।ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত নেয়,পরদিন থেকেই ওর যাত্রা শুরু করবে।
খুব সকালে ঘুম ভেঙে সেলিম তৈরি হয় বাইরে যাওয়ার জন্য।ড্রাইভারকে নিয়ে রওনা দেয় পাবনার সুজানগর গ্রামে।এখান থেকে সুজানগর যেতে সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা লাগবে যা আগের রাতেই জেনেছে।সেলিম ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। রাস্তায় এত ট্রাফিক মনে হয় ওর জীবনে কখনো দেখেনি! সেখানে পৌঁছাতে ওদের সাড়ে চার ঘন্টা লেগে যায়,তখন সেখানে দুপুর ১২টা।গ্রামে গিয়ে এদিক ওদিক মানুষকে জিজ্ঞাসা করে মাতবর আলীকে কোথায় পাবে।কেউ কেউ উত্তর দেয়,তারা জানেই না,কেউ আবার বলে, “মাতবর আলী নামে তো এই গেরামে কেউ নাই!”
সেলিম অবাক হয়।বারবার ক্লু মনে করে, “এই লোককে পাওয়া খুব সহজ না,তবে মন থেকে খুঁজলে তাকে পাওয়া কঠিন কিছুও না!” এই কথার মানে কি?একজন মানুষকে মন থেকে কিভাবে খুঁজে?সেই মানুষ কি মন পড়তে পারে??
সেলিম মাথা চেপে গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।সামনেই একটা চায়ের স্টলের বেঞ্চে বসে শিমুলকে জিজ্ঞাসা করে,
“আর কতক্ষণ লাগবে?”
“Sir,not much, little time take. I bring him u!”
সেলিম অনেক কষ্টে হাসি আটকায়।বেচারাকে বোধহয় মামা বলেছে ওর সাথে ইংরেজী বলতে।তাই ভাঙা ইংরেজী বলে যাচ্ছে সেই সকাল থেকে।
“তোমাকে ইংলিশ বলতে হবে না”
“No sir, I know english! I tell you,you understand”
“Ok,tell me why they are saying there is no Matbor Ali in the village?”
বেচারা শিমুল ড্রাইভার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।সেলিম কি বলেছে সেটা বুঝতেও পারে না,জবাব দিবে কি? ওকে বোকার মত তাকিয়ে থাকতে দেখে সেলিম বাংলায় আবার বলে,সাথে ক্লু এর মানেও জিজ্ঞাসা করে।এবার শিমুল দন্তবিকশীত হাসি দেয়।
“স্যার,মাতবর মানে কিন্তু সর্দার”
“মানে?”
“মানে গেরামের মাথা,চেয়ারম্যান ওগোরেও মাতবর ডাকে।হইতে পারে মাতবর বলে।
সেলিম উত্তেজনায় লাফিয়ে উঠে!ওকে লাফিয়ে উঠে দেখে পাশের লোকগুলো অবাক হয়ে তাকায়।সেলিম খুশিতে শিমুল জড়িয়ে ধরে,ঠিক এটাই হয়ত ওর মা বুঝিয়েছে আর শিমুল নিজের অজান্তেই সেলিমের কত বড় একটা উপকার করে ফেলেছে! পাশেই একটা পোস্টারে লিখা চেয়ারম্যানের নাম ‘আবুল হাসনাত আলী’
দ্রুত সেলিম ওকে গাড়িতে উঠতে বলে। গন্তব্য- গ্রামের চেয়ারম্যানের বাড়ি!
চলবে…
লেখনীতে #AbiarMaria