#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-৮
তামান্না বের হওয়ার আগে শেষবারের মত নিজেকে আয়নায় দেখল… ঘড়িতে বাজে ৭.২৭,,,, ৯টায় অফিস…. প্রথমদিন অবশ্যই লেট হওয়া যাবে না…. তাই ব্যাগটা হাতে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির বাহিরে….. সকালের নাস্তা খুব কম সময়ই ওর কপালে জুটে…. সুতরাং অফিসে যেয়েই কিছু একটা খাওয়া যাবে…… তামান্না বাসের বদলে একটা রিকশা নিয়ে নিলো…. কেনো যেনো আজ ওর খুব খরচ করতে ইচ্ছে করছে…..
অফিসে পৌছে… প্রথম যেই কথাটা জানতে পারলো…. যে তামান্নার স্যার অলরেডি অফিসে এসে বসে রয়েছে…. এবার তামান্নার ভয় করতে লাগলো… যদিও ও ৯টার আগেই অফিসে পৌছেছে… কিন্তু স্যারতো তারও আগে অফিসে বসে…… এখন তামান্না কি আর্লি এসেছে নাকি লেট!!!!
তামান্না নিজের ডেস্কে বসতেই এক মধ্যবয়স্ক লোক…. সম্ভবত জনাব কাজীর বয়সী হবেন…. ওর ডেস্কের সামনে এসে দাড়ালো….
-স্যারের সাথে এখনো পরিচিত হও নি তো, তাই না?? চলো….কাজ শুরুর আগে তোমার সাথে স্যারের পরিচয় হওয়া জরুরি….
তামান্না বাধ্য মেয়ের মত লোকটার পিছন পিছন রওনা হলো……
রুমের ভিতর প্রবেশ করে তামান্নার মুখ হা হয়ে গেলো!!! আচ্ছা মানুষের অফিস রুম এতো ফ্যান্সি ডিজাইং-এর কি প্রয়োজন…..তামান্নার সামনে বরাবরই ফ্লোর টু সিলিং বিশাল বড় কাচের দেয়াল…. এবং বড়সড় একটা মাহগানী ডেস্ক….. ডেস্কের অপর পাশে চেয়ারে যেই লোকটা বসা তার চেহারা তামান্না দেখতে পারছে না…. কারন ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মধ্যবয়স্ক লোকটি.. এবং তখন তামান্নার মনে পড়ল ওরা স্যারের রুমে দাঁড়িয়ে…….
-বর্ন, ইনি হচ্ছেন তোমার এক্সিকিউটিভ এসিস্টেন্ট মিস তামান্না সুলতানা…. তোমার সিডিউল থেকে শুরু করে মিটিং এবং ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলা সব ওর দ্বায়িত্বে..।
তামান্নার দৃষ্টি এতক্ষন ফ্লোরের দিকে ছিলো….কিন্তু লোকটার কথা শেষ হওয়া মাত্রই তামান্না চোখ তুলে স্যারের দিকে তাকালো…এবং তৎক্ষনাতই তামান্নার মনে হলো,,, ওর জীবনে এটাই ছিলো ওর সবচেয়ে বড় ভুল….. এটা কি আদৌ সম্ভব!!!! চেয়ারে বসা ছেলেটা যাকে ওর স্যার হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে…যাকে তামান্না ঠিক দু’দিন আগেই নীলক্ষেত মোড়ে বেদমসে ঝেড়ে এসেছে…. সেই ছেলেটা খুব অতি ভদ্রতার হাসি নিজের ঠোটে ঝুলিয়ে রেখেছে….
তামান্নার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো… হাতের তালু ঘামতে শুরু করল..
ছেলেটা অর্থাৎ ওর স্যার অর্থাৎ মি. বর্ন বেশকিছুক্ষন তার প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করে,
-গুড মর্নিং মিস তামান্না..…. কেমন আছেন আপনি..?
তামান্না ভ্রু কুচকে তাকালো….. ইনি কি ভুলে গেছেন দু’দিন আগের ঘটনা!!!
-জ্বী,,,জ্বী স্যার ভালো….
তামান্নার ভাংগা কন্ঠে জবাব…. ইশ!! পানি খাওয়া প্রয়োজন জলদি…..
-আচ্ছা তাহলে… আমরা এখন আসি বর্ন…. মিস সুলতানার ডেস্ক ঠিক তোমার রুমের বাহিরেই….অন্য কিছু লাগলে ডেস্কের উপরই বেলটা প্রেস করো…..
বর্ন হালকা হেসে মাথা নাড়লো….
রুম থেকে বের হয়েই ফোস করে একটা শ্বাস ছাড়লো…. নিজের ডেস্কে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো….. একেই কি বলে ভাগ্যের নিরমম পরিহাস!!!! প্রথমে বাপকে অপমান করলো….. এরপর ছেলেকে…. যাও টেনেহেচড়ে জবটা হয়েছিলো…. কিন্তু এবারতো গেছে..… শেষ!!! এবার পুরোই শেষ….. টিউশনিগুলো আবার কনফার্ম করা প্রয়োজন।
বর্ন হাতের বইটা টেবিলে রাখলো…। সামনের দিকে তাকালো….. ওর রম বলতে গেলে পুরোই কাচের দেয়ালে আবৃত। তাই সামনে বসা চিন্তিত তামান্নাকে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে….. বর্নর মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল। মেয়েটা এতোটা ভয় পেলো কেনো!!!! অবশ্যই বর্নকে এই জায়গায় এবং এই পোস্টে মেয়েটা কখনোই আশা করে নি…বর্ন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের ডেস্কের টেলিফোন রিসিভার হাতে নিয়ে বাটন প্রেস করল… এবং সাথে সাথেই তামান্নাকে ফোন রিসিভ করতে দেখা গেলো….
-মিস তামান্না….. একটু আমার রুমে আসুন….
(আসছে)