#মনের কোণে পর্ব_১৭,১৮

0
300

মনের কোণে পর্ব_১৭

আফনান লারা
.
মামি টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন আর দূরে বসে থাকা নাবিলকে দেখছিলেন।তার মন ভীষণ খারাপ,যেন হাত তার নিজের পুড়েছে।লিখির হাত পুড়েছে বলে সে নিজেকে দোষারোপ করছে এখন।মামি শেষে সব কাজ ফেলে বললেন,’নাবিল??’

নাবিল অন্যমনস্ক ছিল বলে উত্তর দিলো না।মামি আবারো ডাকলেন,এবারও সাড়া আসেনি বলে কাছে এসে বসে বললেন ‘নাবিল?মেয়েটা তো নিজের হাতে খেতে পারবেনা।তুই গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে দিয়ে আয় না বাবা’

নাবিল গাল ফুলিয়ে বললো,’পারবোনা।ওর জেদ নিয়ে থাকুক,আমি এত ছোট হতে পারবোনা আর’

‘রাগ এক পাশে রেখে আগে মেয়েটার কথা ভাব।তুই না খাওয়ালে সে কি আমার হাতে খাবে?বলবে রেখে দেন পরে খেয়ে নিব,এটা বলে আর পরেও খাবেনা।তোরা তো এখন চলে যাবি বাসায়।তোদের দুজনের যে রাগ!এমন করে মেয়েটা না খেয়েই রয়ে যাবে’

বাধ্য হয়ে নাবিল খাবার প্লেট নিয়ে চললো রুমের দিকে।লিখি ওখানে হেনার সাথে কথা বলছিল।লিখির বাবার লোকেরা নাকি অন্য এলাকায় খোঁজ পেয়েছে ওর তাই সবাই দল বেঁধে ওদিকেই আসছে।লিখির ভয় হলো।
না জানি এখানে এসে পড়ে!বিছানা ছেড়ে ছুটতে গিয়ে নাবিলের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো ওর।

‘কোথায় যাচ্ছো?’

‘ভাইয়ারা নাকি আমার খোঁজ পেয়ে দলবল নিয়ে আসতেছে’

‘তোমার খোঁজ পেলো কি করে?এটা তো অসম্ভব ‘

কলিংবেল বেজে উঠলো তখনই।নাবিলের ভয় হলো,তাই খাবারের প্লেট রেখে লিখির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো পিছনের দরজার দিকে।তারপর বাসার পাশ দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো পাঁচ/ছয়জন ছেলে লিখির খোঁজ করছে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে।
এত তাড়াতাড়ি এই বাসার খোঁজ পেলো কি করে সেটাই মাথায় ধরছেনা।
নাবিল চটজলদি ওকে নিয়ে বাসায় চলে আসলো।তারপর ফ্ল্যাটে ঢুকে দরজা আটকে দুজনে একসাথে ফ্লোরে বসে হাঁটু ভাঁজ করে চুপ করে আছে এখন।
লিখি ফিসফিস করে বললো,’যদি এখানেও এসে পড়ে?’

‘আসবেনা।আমি আছি কিনকরতে?মে*রে ভূত বানিয়ে দেবো। তাও তোমায় নিয়ে যেতে দেবোনা’

‘আপনি পারবেননা,আমার ভাইয়া কুস্তিগির ‘

‘আর আমি বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। আচ্ছা খিধে পেয়েছে তোমার?’

‘হুম’

‘ওনারা যাক তাহলে মামির থেকে খাবার নিয়ে এসে খাইয়ে দিবো’

‘লাগবেনা।আমি আমার হাতে খেতে পারবো।আপনি যান না ঐ চিকনি চামেলির সাথে পুতুপুতু করেন”

‘আবার?আচ্ছা যাও আর কোনোদিন ঐ মেয়েকে নিয়ে কথা তুলবোনা।তাও খোঁচা দিওনা তো।’

কলিংবেল বাজছে।লিখি ভয়ে নাবিলের হাত খাঁমছে ধরলো।নাবিল ওর হাতটা ছাড়িয়ে দরজার কাছে গিয়ে বললো,’কে?’

‘আমি’

‘আমি কে?’

‘মনিশা,আহসান হোসেনের মেয়ে’

‘ওহ!’

নাবিল দরজা খুলে দিলো এবার।মনিশা মুচকি হেসে বললো,’গল্প করতে এলাম আপনাদের সাথে।গল্প করা যাবে?’

লিখি রাগে শেষ হয়ে যাচ্ছে,তাও কিছু বলছেনা।মনিশা জোর করে ভেতরে ঢুকে গেলো।গিয়ে বললো,’ওমা!আপনারা দেখি কোনো ফার্নিচার আনেননি।শোবেন কিসে?’

‘তোমার মাথায় বিছানা পেতে’

‘কিছু বললেন আপি?’

‘না কিছুনা বসো না।ফ্লোরেই বসো গল্প করতে।

মনিশা ধপ করে লিখির পাশে বসে গেছে।নাবিল আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল।লিখির চাহনি দেখি অন্যরুমে চলে যাচ্ছিল কিন্তু মনিশা ওকে থামিয়ে বললো,’আমাদের সাথে গল্প করবেন আসুন।’

লিখি জোর গলায় বললো,’না! উনার ফোনে একটা কাজ আছে।তাই না??যান কাজটা সেরে আসুন’

‘আরে না না।কিসের কাজ?ওসব কাজ পরে হবে।আসুন না ভাইয়া আমরা একসাথে গল্পগুজব করি’

নাবিল পড়েছে বিপাকে।মনিশা পারছেনা জোর করে বসিয়ে দিচ্ছে।নাবিল হাজার মানা করার পরেও সে কথার জোরে আটকে ফেলছে বারবার।

শেষে নাবিল লিখির হাত টেনে ধরে উঠিয়ে বললো,’আমরা দুজন একটু মামার বাসায় যাব।তুমি পরে এসো কেমন?’

মনিশার জবাবের আশা না করে নাবিল লিখিকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেছে।দরজায় হাত রেখে বললো,’তুমি কি যাবে নাকি আমাদের বাসায় থেকে যাবে?’

মনিশার তো মেজাজ গেলো বিগড়ে।হনহনিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।লিখি হাসতে হাসতে শেষ।

‘মামার বাসায় একটু পর যাবো।আপাতত এখানেই বসে থাকি।ওরা গেছে কিনা বাবুকে কল করে জেনে নিতে হবে আগে।’

নাবিল তাই ফোন বের করে বাবুকে কল করলো।

‘হ্যালো বাবু?’

‘তুই কে?

‘আপনি কে?’

‘এই বাবু ছেলেটার কি হস তুই?’

‘আপনি কে বলছেন?’

‘আমি ওসমান।লিখিকে চিনিস?তোর সাথে বাবুর কি সম্পর্ক?তুই লিখির ব্যাপারে কিছু জানিস?জানকে বলে ফেল, নাহলে ফোনের উপর দিয়ে তোর গলা টিপে ধরবো’

নাবিল লিখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,’লিখির জামাই আমি।কার গলা টিপবা চিন্তা করো ওসমান ভাইয়া।ওহ হো!শালা আমার!!’
ওসমান তো রেগে মেগে আরও কত কি বলতে চাইলো কিন্তু নাবিল ততক্ষণে ফোন অফ করে ফেলেছে। লিখির ভয় আরও বেড়ে গেলো।চিন্তিত হয়ে বললো,’কি দরকার ছিল এত সব বলার? ভাইয়া এখন অনেক রেগে যাবেন।কি না কি করে বসে!যদি আপনার মামা মামির কিছু করে ফেলে?’

‘আমার মামা রিটায়ার্ড আর্মি।কি করবে তারা?মামার পেশার কথা শুনে পালাবে।এই জন্য আমি এত নিশ্চিন্ত। নাহলে তাদের জীবন রিস্কে ফেলতাম না’

এরপর দরজা বন্ধ করে রেখে আবারও ফ্লোরে বসে থাকলো দুজনে।লিখি ওড়না দিয়ে আঙ্গুল বাঁধছে আর খুলচে।নাবিল ফ্লোরে আঙ্গুল দিয়ে নিজের নাম লিখতে লিখতে বললো,’আমার বাবা যখন ধাওয়া করবে তখন আমি যেখানেই লুকিয়ে থাকিনা কেন,ঠিক ধরে ফেলবে। তোমার ভাইয়ার লিংক তেমন স্ট্রং না,দূর্বল।আমার বাবার লোকেরা হলে এতক্ষণে ধরে ফেলতো আমাদের।এত কাছে হয়েও মিস করতোনা’

‘আমার খিধে পেয়েছে ভীষণ। চলুন না আপনার মামার বাসায় যাই’

‘যদি তোমার ভাইয়েরা থেকে থাকে?কল তো দিলাম।দেখলে তো তোমার ভাইয়া ধরেছে।আর একবার দিলে যদি ওরাই ধরে তাহলে সন্দেহ করবে যে আমরা আশেপাশে আছি।’

‘আমার খিধে সহ্য হয়না।বাহিরে থেকে কিছু এনে দিননা।ভাইয়ারা তো আপনাকে চিনেনা’

‘ আচ্ছা বোসো’

নাবিল তৈরি হয়ে চলে গেছে।লিখি নাবিলের বাছাই করা রুমটাতে ঢুকেছে দেখার জন্য।রুম পেরিয়ে বেলকনিতে ওর কালকের রাখা ভেজা টিশার্টটা দেখতে পেলো আগে।ওটা এখন শুকিয়ে গেছে।তাই রেলিং থেকে হাতে নিয়ে নিচে তাকালো লিখি।দশতলা দালানটার চার তলায় তারা থাকে।নাবিলকে দেখা গেলো হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছিলো।লিখি এক দৃষ্টিতে ওর চলে যাওয়া দেখছে।কি ব্যাপার ফোন বাজছে কোথায়?

লিখি পেছনে ফিরে দেখলো ফ্লোরে নাবিলের ফোন।ভুলে রেখে গেছে মনে হয়।এগিয়ে এসে দেখলো নিকনেম সেভ করা ‘আম্মু’

কৌতুহল নিয়ে রিসিভ করেছে লিখি।

‘হ্যালো ভাইয়া,আমি নাহিদ,এটা তোমার নাম্বার জানি আমি।আম্মু সবসময় এই নাম্বার থেকে তোমায় কল করে।আমার কথা কি তোমার মনে পড়েনা?কতবার একসাথে আইস্ক্রিম খেয়েছি, কতবার একসাথে পুকুরে গোসল করেছি (হ্যাঁ তারপর কি বলবো?আচ্ছা আচ্ছা!)কতবার একসাথে ঘুমিয়েছি।আমাকে ভুলে গেলে?একবার কি বাসায় আসতে ইচ্ছে করেনা তোমার?হার্ট এটাক হয়েছে আমার জানো?’
সেই কি বুকে ব্যাথা।আহ হা!!এখনও ব্যাথা।
(কি বলছো?আমার না তোমার??ওহ ওহ!!)
সরি সরি, ভাইয়া আমার বুকে ব্যাথা না,আব্বুর বুকে ব্যাথা,তুমি প্লিজ চলে আসো।বাবা আইজেকেএলে ভর্তি, না না!!!আইসিইউতে ভর্তি।জলদি চলে এসো’

লিখির মাথার উপর দিয়ে গেলো সব।তবে যা বুঝলো, মনে হচ্ছিল বাচ্চা ছেলেটাকে কেউ একজন সব শিখিয়ে দিচ্ছিলো।সে সব রিপিট করছিল শুধু।এসব মনে করে খুব হাসি পাচ্ছে লিখির।কি বোকা ছেলেটা!!

চলবে♥

মনের কোণে পর্ব_১৮
আফনান লারা
.
পথে নাবিলের দেখা হয়ে গেলো বাবুর সাথে।বাবু তো ভীষণ এক্সাইটেড হয়ে ছিল।নাবিল ভেবেছে সে হয়ত একাই মামা মামিকে বাঁচিয়ে উদ্ধার করে ফেলেছে।তাই জানাতে ছুটতে ছুটতে আসছিল।তার উত্তেজনা ছিল বিশাল।ছোটকালে আমরা যখন বড় খবর আগে শুনলে বাবা অথবা মাকে জানাতে আসতাম,তখন আমাদের যে উত্তেজনা কাজ করতো ঠিক সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটছিল বাবুর সারা মুখ জুড়ে।
তার নাম বাবু রাখা তবে সার্থক হলো।হাঁপাতে হাঁপাতে সে বললো ‘ভাইয়া জানো ঐ গুন্ডাগুলোকে আমি তাড়িয়েছি’

‘আচ্ছা তাই?তা কিভাবে?’

‘আমি বলেছি আমার বাবা আর্মি।ফটো ও দেখিয়েছি’

নাবিল ঠাস করে নিজের কপালে নিজে বাড়ি মে*রে বললো,’আর আমি তোর উত্তেজনা দেখে ভাবলাম হয়ত মা*রামা*রি করে এসেছিস’

‘ “””আকালমান কে লিয়ে ইশারাই কাফি হে”” বাবার পেশার কথা শুনে তারা যদি টাইটই হতো তবে আমি কেন খামোকা ঝগ*ড়া,মা*রামা*রি বাঁধাবো?’

‘খুব বুদ্ধির কাজ করেছিস’

‘আমি এদিকে এ কারণে আসছিলাম না তো।আম্মু এই টিফিন বক্সটা দিয়ে বললো ভাবীকে দিয়ে আসতে।ভাবী তো কিছুই খায়নি।আচ্ছা ভাবীর রাগ কমেছে তো?ভাবী হয়ত তার ভাই এসেছে ভেবে কিছু সময়ের জন্য রাগ- টাগ সব স্থগিত রেখে ছিল তাই না?’

‘বুঝলি,মেয়ে মানুষের রাগ হলো ধুমকেতুর মতন।কত কাল পর আসবে তা আমরা জানি,কিন্তু ঐদিন কোন সময়ে আসবে তা আমরা জানিনা।’

‘ভাল একটা পয়েন্ট বললে; আমার বিয়ের পর কাজে দেবে’

‘তোর আবার বিয়ে?জানিস তোর বিয়ে নিয়ে আমার কত কগ গবেষণা জমে আছে।’

‘কিরকম?’

‘ধর, তোর ঘরে তোর বিয়ের পর একটা ছেলে হলো।ছেলে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর বিয়েও দিলি’

‘হুম,তারপর?’

‘তারপর তোর পুত্রবধূকে কেউ শ্বশুরের নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলবে “বাবু”।হাহাহাহাহা’

বাবু ব্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো।নাবিল সবসময় তার নামটা নিয়ে রসিকতা করে।একদিন এক কৌতুক বানিয়ে আনে ওর নাম দিয়ে।
—-
বাবুর সাথে আরও কিছু সময় গল্প করে নাবিল যখন ফিরছিল ঠিক সেসময় লিখির ভাই তার দলবল নিয়ে ওদের দুজনের পথ আটকে দাঁড়ালো।
বাবু ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।ওসমান নাবিলের দিকে তাকিয়ে বললো ‘এই আর্মির ছেলেটার কি হও তুমি?ওর সাথে কিসের আলাপ জুড়েছো?’

নাবিল কিছু বলার আগে বাবু বললো,’আমার বাবা আর্মি, আর ও হলো আর্মির ভাগ্নে পুলিশ’

‘এই তুমি পুলিশ?’

‘হাইট দেখে কি মনে হয় তোমাদের?’

ওসমান দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে চলে গেলো চুপচাপ।পেছনে ফিরে আর তাকায়নি।
নাবিল বাবুর কাঁধে হাত রেখে বললো,’তোর তো ভালই উপস্থিত জ্ঞান হয়েছে।বিয়ে করিয়ে দিব ভাবছি।’
—-
লিখি নাবিলের একটা টিশার্ট নিয়ে রুমে এসে দরজা লক করে ওটাকে ব্লাউজ বানিয়ে শাড়ী পরার শেষ চেষ্টা করছে।
ফোন অন করে ইউটিউব দেখে মোটামুটি ভাল ভাবেই শাড়ীটা সে পরে নিলো অবশেষো।যখন পরা শেষ হলো ঠিক তখন কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে কুচি ধরে দৌড় দিয়ে এসে দরজা খুললো সে।
নাবিল ভেতরে ঢোকার আগে লিখিকে দেখে থমকে গেছে।প্রথমে খেয়ালই করেনি শাড়ীর সাথে এটা তারই টিশার্ট। লিখি আঁচল ঘুরিয়ে বললো,’শাড়ী পরা কেমন হয়েছে আমার?’

‘বাহ!নাহ!’

‘বাহ আবার নাহ?কেন?’

‘ব্লাউজের জায়গায় ওটা কি আমার টিশার্ট? ভুল দেখছি নাকি এটাই সত্যি?’

‘ঠিক দেখলেন’

নাবিল হাসতে হাসতে ভেতরে ঢুকে দরজা লাগালো।লিখি ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।ওর হাতে খাবার ধরিয়ে দিয়ে নাবিল কিছুদূর চলে যাবার পর থেমে পেছনে ফিরে বললো ‘তোমার না হাত অনেকটা পুড়ে গেছিল?তবে শাড়ী পরলে কি ভাবে?’

নাবিল ফেরত এসে ওর হাতটা উপরে ধরে দেখলো হাত থেকে বেশ রক্ত ঝরছে।তার যে হাত পুড়ে গেছে সেদিকে তার খেয়ালই নেই।ডেং ডেং করে দুনিয়ার সব কাজ করে যাচ্ছিল।ফলস্বরুপ এত এত রক্ত ঝরছে এখন।

‘তুমি এত বেখেয়ালি কেন?’

‘আপনার কি তাতে?’

‘হ্যাঁ আমার অবশ্য কিছুইনা।তবে তোমার এই মূহুর্তে থেকে কিছু হলে নারী নির্যাতনের কেসে ফাঁসবো’

‘কেস তো আমি করবোনা’

‘তোমার যে গুষ্টি!বলবে স্ত্রীকে মে*রে স্বামীর আ*ত্নহ*ত্যার চেষ্টা,।স্বামী হাসপাতালে ভর্তি’

লিখি অনেক হাসলো।নাবিল তখন ওকে নিচে বসিয়ে বললো,’ঘরে তো ফার্স্ট এইড বক্সের একটা অক্ষর ও নেই।তোমায় বাহিরেও নেওয়া যাবেনা, তোমার ভাই আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।কি করি বলোতো?
আচ্ছা আগে খেয়ে নাও।’

নাবিল ওর পাশে বসে টিফিন বক্সটা খুলে চামচ দিয়ে খাবার তুলে ওর মুখের সামনে ধরলো।লিখির খেতে ইচ্ছে করছিলনা,তাও এক চামচ খাবার গিলেছে।নাবিলকে না করলে এক দফা লেকচার শুনিয়ে দেবে তাই চুপ হয়ে রইলো।টু শব্দ ও করলোনা।
নাবিল বুঝতে পারলো সে কিছু একটা বলতে চায়।জোর করে খেতে বসালে খাদকের এক কথা-“”আমার খেতে ইচ্ছে করেনা।””
এটা নাবিল জানে তাই সেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি।
—-
বেলা বারোটার সময় নাবিল বেলকনির রেলিংয়ে হাত রেখে নিচে দেখছিল,নিচে কলোনির বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছে,নাহিদ থাকলে ছুটে যেতো ওখানে।লিখি দূর থেকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল এক দৃষ্টিতে।কিছুক্ষণ পর চোখের পলক ফেলে বললো,’আপনার ভাই নাহিদ ফোন করেছিল’

‘হাসলে?’

‘অনেক,তবে মনে হলে আপনার বাবা ওকে দিয়ে কল করিয়েছে।’

কথাটা শুনে নাবিল নিজের ফোন খুলে সিম বের করে দাঁত দিয়ে দু টুকরা করে ফেললো।লিখি হা করে চেয়ে আছে।

‘বাবা এই সিম ধরে এখানে চলে আসতে পারবে জানো?’

‘আপনার বাবা এত চালু?? ‘

‘চালুর আর কি দেখলে।বিয়ের কথা জানলে দাঁড়িয়ে থেকে ডিভোর্স করাবে’

লিখি লাফ দিয়ে উঠে বললো,’তাহলে তো অনেক ভাল হয়।আমি আমার মতন থাকবো আগের মতন।আর আপনিও আপনার মতন’

নাবিলের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো ওর কথা শুনে।হয়ত লিখির থেকে এ কথা সে আশা করেনি।বেশ কিছুক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিল সে,তারপর কি যেন ভেবে চাহনি সরিয়ে নিলো।
লিখি হয়তবা বুঝলো।ধীরে জিজ্ঞেস করেছে,’আপনার বাবা দাঁড়িয়ে থেকে ডিভোর্স করাতে চাইলে আপনি কি করতেন তখন?’

‘তুমি যেহেতু মুক্তি চাও আমি আর কি করতাম?কিছুই করতাম না’

“ওহ”
—–
সারাটা দিন কেটে গেলো দুজনের দু-রুমে বসে।এত চিন্তায় বিভোর ছিল দুজনে যে দুপুরের খাবার বলে একটা কথা আছে তা ভুলে গেছে তারা।মাথা থেকে সরে গেছে একেবারে।লিখি তার বাছাই করা সেই ফাঁকা রুমটার ফ্লোরে বসে মাথা পিলারের সঙ্গে হেলান দিয়ে রেখে জানালার দিকে চেয়ে বসেছিল সারাটা সময়।
নাবিল ছিল তার রুমে।

“বিয়ে কেমন না??কদিন আগেও দুটো মানুষ একজন আরেকজনকে চিনতো না,পরিচয় হয়েছিল অন্যরকমভাবে। এরপর হয় অপছন্দের খেলা,প্রতিযোগিতা।
এর মাঝে বিয়ের বন্ধন জুড়ে সম্পর্কটাকে এমন জায়গায় জুড়ে দিয়েছে,এখন ছেড়ে যাওয়ার কথা উঠলে বুকের ভেতর ফাঁকা ফাঁকা লাগে।এই তো কাল সকালেই বিয়ে হয়েছে।মনের ভেতর শত শত ক্রোধ,রাগ,অভিমানের জড়তা প্রকাশ পেয়েছিল নকল নামের বিয়েটা আসল নাম পাবায়।মন চাইছিল মূহুর্তেই ডিভোর্স পেপারে সই করে দিতে।অথচ আজ সেই পেপারের নাম ওঠায় বুকের ভেতর খালি লাগছে।বিয়ের বন্ধন বুঝি এত গাঢ় হয়??
তবে কি অপছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকা মানুষটাকে নিজের সবটা বানানোর জন্যই বিয়েটা হুট করে হয়ে গেলো?
তবে পরিবার যদি মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়, এই বন্ধনের কি সেই শক্তি আছে দেয়াল ভাঙ্গার?

দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর মন যদি হয় ডিভোর্সের জন্য ইচ্ছুক তবে দেয়াল আরো মজবুত হবে,ভাঙ্গবে না।”

দুপুর শেষ,বিকাল শেষ।দুজনের কথা নেই,খাওয়া নেই।
রুমের আলো জ্বলে উঠতেই লিখি মাথা ঘুরে তাকালো।নাবিল হাই তুলতে তুলতে বললো,’জানো এমন ঘুম দিয়েছি নাওয়া- খাওয়া সব ভুলে বসে আছি’

লিখি এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললো,’হাই তুললেই ঘুমের ভান হয়না’

নাবিলের চেহারার ভাব বদলে গেলো লিখির কথা শুনে।ও কেমন করে যেন বুঝে গেলো তার মিথ্যে হাই তুলার দৃশটা।লজ্জা পেলো সে।মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো ‘হাই নিয়ে কেউ মজা করে নাকি?’

‘আমি জানতাম কেউ করেনা,তবে আপনাকে দেখে বুঝলাম কেউ অন্তত করে’

‘চলে হাঁটতে বেরুবে’

‘আমার ইচ্ছে নেই’

‘আজও মামার বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে।ফাঁকা ফ্ল্যাটে চাইলেও এখন থাকা যাবেনা’

‘তা নাহয় রাতে ঘুমানোর সময় হলে যাওয়া যাবে’

নাবিল চলে আসলো ওখান থেকে।লিখির ইচ্ছে নেই তো জোর করে কি লাভ?দরজা খুলে যেতে যেতে বলে গেলো সে একাই হাঁটতে যাচ্ছে।লিখি শুনলো।কিন্তু উঠে দরজা লাগাতে আসলোনা।নাবিল ভেবেছে সে হয়ত দরজা লাগাতে আসবে।তার এমন চুপ হয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারছেনা সে।
মেয়েটা বড় উদ্ভুত প্রকৃতির।তার মন কি চায় তা শুধু সে জানে।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here