আলো_আধারের_খেলা পর্ব_১৬

0
369

আলো_আধারের_খেলা
পর্ব_১৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ

সকালবেলা রুয়েল এখনো বিছানা থেকে ওঠে নি।কাল রাত থেকে সে জান্নাতের উপর বড্ড অভিমান করে আছে।তবে জান্নাতের সাথে সে তাহাজ্জুদ নামায আর সকালের ফজরের নামায পড়তে ভোলে নি।ফজরের নামায পড়ে রুয়েল ঘুমানোর জন্য আবার শুয়ে পড়লেও কিছুতেই দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না।জান্নাত নিজেও আর ঘুমিয়ে পড়লো না।সে কিছুক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করে তারপর বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সকালের সুন্দর আবহাওয়া উপভোগ করতে লাগলো আর ভাবতে লাগলো যেভাবেই হোক রুয়েলে কে বোঝাতে হবে সেও তাকে ভীষণ ভালোবাসে।ধীরে ধীরে চারদিকে আলোয় ভরে যেতে লাগলো।আর মানুষ জন যে যার কাজে বের হলো। জান্নাত তখন নিজেও আর বেলকুনিতে না দাঁড়িয়ে থেকে রুয়েলের কাছে চলে গেলো।রুয়েল জান্নাতকে তার কাছে আসা দেখে ঘুমানোর ভান করে থাকলো।জান্নাত সেজন্য আর বিরক্ত করলো না রুয়েলকে।তবে জান্নাত মনের অজান্তেই রুয়েলের কপালে একটা কিস করলো আর তার দুই হাত দিয়ে রুয়েলের মুখমন্ডল স্পর্শ করে বললো, আমিও আপনাকে ভীষনভাবে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু প্রকাশ করতে পারছি না।কিভাবে আপনাকে আমি বোঝাবো সত্যি বুঝতে পারছি না।আপনি দয়া করে নিজের থেকে বুঝে নিন।তা না হলে আমি নিজের মুখে কোনোদিন বলতেও পারবো না আর আপনি বুঝবেনও না কোনদিন।
রুয়েল জান্নাতের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে উঠলো।আর তা দেখে জান্নাত বললো,আপনি কি জেগে আছেন?কথা বলুন?
রুয়েল কোনো উত্তর দিলো না।জান্নাত তখন রুয়েলের কপালে আরেকটা কিস করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

জান্নাত সোজা রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো।রান্নাঘরে গিয়ে দেখে হেনা নাস্তা বানানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।কিন্তু ঊর্মিকে দেখতে পেলো না জান্নাত।

জান্নাতকে দেখামাত্র হেনা বললো,ভাবি আপনি আজ এতো সকালে উঠেছেন যে?যান ঘুমান গিয়ে।জান্নাত সেই কথা শুনে বললো ফজরের নামায পড়ে আর ঘুমাই নি আমি।সেই থেকে জেগেই আছি।সেজন্য ভাবলাম তোমাকে একটু নাস্তা বানাতে হেল্প করি।

–না ভাবি,আমার কোনো হেল্প লাগবে না।আপনি রুমে চলে যান।তা না হলে রুয়েল ভাইয়া আমাকে আজ আবার বকবে।
হেনার কথা শুনে জান্নাত বুঝতে পারলো ভালোই শিক্ষা হয়েছে হেনার।জান্নাত তখন বললো, কোনো সমস্যা নেই।আর তোমার রুয়েল ভাইয়াও কিছু বলবে না।এই বলে জান্নাত নিজেও হেনার সাথে রুটি বেলতে ধরলো। কিন্তু জান্নাতের এমন এবড়োখেবড়ো রুটি দেখে হেনার মুখে হাসি এলেও সে মুখ টিপে ধরে থাকলো,আর বললো,ভাবি আপনি না হয় রুটি গুলো ছেকুন,আর আমি তাড়াতাড়ি করে রুটি গুলো বানিয়ে দিচ্ছি।জান্নাত বুঝতে পারলো তার রুটি গুলো ভালো হচ্ছে না।সেজন্য সেও আর জিদ করলো না।হেনা রুটি করছে আর জান্নাত সেগুলো ছেকছে। ওদিকে ঊর্মি যখন রান্নাঘরের দিকে এলো,আর জান্নাতকে হেনার সাথে নাস্তা বানানো দেখলো সে আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না। আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ঊর্মি তো এটাই চাই যে এখন থেকে সংসারের সব কাজকর্ম জান্নাতই করবে।জান্নাতকে শুধু শুধু বসে থেকে খাওয়াবে নাকি?ঊর্মি সিদ্ধান্ত নিলো আজ থেকে সে আর কোনো কাজই করবে না।যেকোন একটা অজুহাত দেখিয়ে জান্নাতের দ্বারায় সব কাজ করাবে।এতোদিন তো অনেক করেছে পরিবারের জন্য,আজ থেকে জান্নাত কে সবকিছু বুঝিয়ে দেবে।আর সে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবে।

ঊর্মির ছেলেমেয়েদের জন্য নুডলস আর ডিম পোচ করে তারপর কমলার জুস রেডি করলো জান্নাত।রুবেল আর তার মায়ের জন্য রুটি আর সবজি সাথে আবার সালাদ রেডি করে রাখলো।অন্যদিকে ঊর্মি আবার দেশি বুটের ডালের সাথে পরোটা খায়।সাথে শসা আর টমেটোর সালাদ।রুয়েল আবার সকালে উঠেই আগে আদা,লেবু দিয়ে রং চা খায়।তারপর নাস্তা করে।
জান্নাত এই প্রথমবার এতো খাবার রান্না করলো।আজ যদিও হেনা তাকে সাহায্য করেছে তবুও তার ভীষণ দেরি হলো।কারণ জান্নাত রান্নায় তেমন চালু নয়।আর হেনা একা একা আর কতই করে।তবে ঊর্মি ভীষণ চালু ছিলো।সে চোখের পলকে সব কাজ করে ফেলে।আগে তো নিজেই সব করতো।কিন্তু নিজের আরাম আয়াশের জন্য হেনাকে নিযুক্ত করেছে।হেনাকে কাজের জন্য নিলেও সে শুধু হেনার উপর নির্ভর করে থাকে না।হেনার কাজে অনেক সাহায্য করে সে।সেজন্য হেনার কাজ করতে কোনো অসুবিধাই হতো না।

হেনা বুঝতে পারছে না কিছু।আজ ঊর্মি ভাবির কি হলো?তিনি কেনো এখনো আসছেন না?

হঠাৎ রুয়েল এলো রান্নাঘরে।সে যদিও জান্নাতকে খুঁজতে এসেছে, কিন্তু হেনাকে বললো,আমার জন্য তাড়াতাড়ি চা রেডি কর।জান্নাত রুয়েলের জন্য চা রেডি করে আগেই ফ্লাস্কে রেখেছে।যাতে রুয়েল ওঠামাত্র তাকে দিতে পারে।জান্নাত রুয়েলের কথা শুনে নিজেই চা নিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো।রুয়েল জান্নাতের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে রুমে চলে গেলো।একটা কথাও বললো না।হেনা তা দেখে বললো, ভাবি আপনি না হয় এখন চলে যান।বাকিটা আমি সামলে নিচ্ছি।রুয়েল ভাইয়ার চেহারা দেখে বেশি সুবিধার মনে হলো না।আপনাকে কাজ করা দেখে উনি মনে হয়ে রেগে গেছেন।
জান্নাত সেই কথা শুনে বললো, এখানে রাগের কি আছে?আমার সংসারের কাজ আমি না করলে আর কে করবে?

এদিকে এক এক করে বাসার সবাই উঠে এলো।যার যেটা প্রয়োজন জান্নাত নিজের হাতে নাস্তা সার্ভ করলো সবাইকে।আজ জান্নাতের শাশুড়ী ভীষণ খুশি হলেন জান্নাতকে দেখে।জান্নাত যে একদিনেই সংসারের কাজে এতো মনোযোগী হবে যা তিনি কল্পনাও করেন নি।
জান্নাত সবাইকে খাবার দিয়ে রুমে চলে গেলো।রুমে যেতেই রুয়েল বললো,আপনি সেই থেকে আর ঘুমান নি?
–না।
–ভালো।খুব ভালো।কিন্তু যদি আপনি অসুস্থ হয়ে যান তখন কিন্তু এর জন্য আপনিই দায়ি থাকবেন।
জান্নাত সেই কথা শুনে রুয়েলের কাছে এগিয়ে গেলো আর তার হাতের কাপটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে বললো,সকালে না ঘুমালে কেউ অসুস্থ হয় না।বরং সকালের ঘুমটা স্বাস্থ্যের জন্য বেশিই ক্ষতিকর।
–কিন্তু জান্নাত আপনি রাতে কতটুকু ঘুমিয়েছেন সে খেয়াল আছে?সকালে যদি আরেকটু না ঘুমান তাহলে তো শরীর খারাপ করবে।ঘুম কম হলে মাথা ব্যাথা করে এটা জানেন কি?
জান্নাত তখন বললো, আমার কথা বাদ দিন।আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো আপনি ঘুমিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।ঘুমাবো না কেনো?
–কিন্তু আপনাকে দেখে তো সেরকম মনে হচ্ছে না।আপনি যদি ঘুমাতেন তাহলে নিজের থেকে এভাবে উঠতেন না।তার মানে আপনি নিজেও সেই থেকে জেগে আছেন?

রুয়েল সেই কথা শুনে চুপ করে রইলো।

জান্নাত রুয়েল কে এভাবে চুপ করে থাকা দেখে মনে মনে ভীষণ লজ্জিত হলো।রুয়েল কি তখন তাহলে জেগেই ছিলো।জান্নাত রুয়লকে কিস করে তখন কি সব ভালোবাসার কথা বললো এসব আবার শুনলো না তো?কি হবে এখন?উনি কি ভাবছে তাকে কে জানে?

হঠাৎ রুয়েল জান্নাতের হাত ধরে টেনে তার কাছে আনলো।আর বললো,তাহলে এখন কি করা উচিত আমার?
জান্নাত রুয়েলের দিকে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বললো,বুঝলাম না আপনার কথা।কি করা উচিত?

রুয়েল তখন জান্নাতকে তার আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো, বোঝেন নি এখনো?আচ্ছা বুঝিয়ে দিচ্ছি।এই বলে রুয়েল জান্নাতকে হঠাৎ কিস করতে লাগলো।রুয়েল কিস করতেই আছে।জান্নাত কোনো কথা বলার সুযোগই পাচ্ছে না।রুয়েল এবার কিস করা থামিয়ে দিয়ে বললো, জান্নাত!এখন কিছু বুঝছেন?

জান্নাত এবার আর একটা কথাও বললো না।সে আরো বেশি লজ্জা পেতে থাকলো।জান্নাতকে এরকম লজ্জা পাওয়া দেখে রুয়েল বললো,জান্নাত!আমার ভালোবাসার বউ!আমার একমাত্র আদরের জীবনসঙ্গিনী।আমি কখনো ভাবতেই পারি নি আপনি এতো তাড়াতাড়ি আমাকে এতোটা ভালোবেসে ফেলবেন।আমি সত্যি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি আপনার কথাগুলো শুনে।
জান্নাত সেই কথা শুনে অন্য মুখ হলো।আর বললো,আপনি তাহলে সব কথা শুনেছেন তখন।তাহলে কেনো ঘুমানোর অভিনয় করছিলেন?
রুয়েল তখন জান্নাতকে আবার তার কাছে টেনে নিলো আর বললো, ঘুমানোর অভিনয় না করলে আপনি কি আপনার মনের কথাগুলো এভাবে বলতেন আমাকে।এভাবে সকাল সকাল আদর করে জড়িয়ে ধরতেন?
জান্নাত আর এক মুহুর্ত দেরী করলো না।ওড়না টা ভালো করে গায়ে মাথায় দিয়ে রুম থেকে বের হলো।রুয়েল নিজেও বের হলো জান্নাতের সাথে সাথে।

রুম থেকে বের হতেই জান্নাতের চোখ কপালে উঠে গেলো।জান্নাত তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না।এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো।জহির সাহেব সকাল বেলাই এসেছে মেয়ের বাড়িতে।
আর বাসার সবার সাথে বসে গল্প করছে।

জান্নাত তার বাবাকে দেখামাত্র ছোট বাচ্চাদের মতো দৌঁড়ে চলে গেলো।আর সবার সামনেই জড়িয়ে ধরলো। জহির সাহেব নিজেও বেশ আনন্দ অনুভব করতে লাগলেন।জান্নাতের মুখ টা হাত দিয়ে স্পর্শ করে ভাবতে লাগলেন,যে মেয়েটা তাদের ছাড়া একরাত কোথাও কাটাতো না সে আজ স্বামীর বাড়িতে সংসার করছে!
জান্নাত বললো,বাবা কেমন আছেন আপনি?দাদী কেমন আছে?জাহান কেমন আছে আর আম্মুই বা কেমন আছে?ওরা কেনো আসলো না?
জহির সাহেব তখন জান্নাতকে বললো,সবাই ভালো আছে মা।আমি তোকে বাড়িতে নিয়ে যেতে এসেছি।সেজন্য ওরা আর কেউ আসলো না।
জান্নাত বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে ভীষণ খুশি হলো।তার আর কিছুতেই দেরী সইলো না।

রুয়েল তার শশুড় কে সালাম দিয়ে বললো,বাবা আপনি কেমন আছেন ?আর বাসার সবাই কেমন আছে?
জহির সাহেব বললেন,বাবা সবাই ভালো আছে।আমি জান্নাতকে নিয়ে যেতে এসেছি।তোমার দাদী বললো জান্নাত কয়েকদিন একটু আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকুক।হঠাৎ সবাইকে এভাবে ছেড়ে এসেছে, ওকে দেখার জন্য সবাই খুব অস্থির হয়ে আছে।আর জান্নাতেরও নিশ্চয় সবার কথা মনে হচ্ছে।

রুয়েল সেই কথা শুনে বললো, হ্যাঁ বাবা।আমিও এটাই ভাবছিলাম।কিছুদিন একটু বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসলে ওর মনটাও ভালো হয়ে যাবে।সারাদিন শুধু কাঁদে।জাহান আর দাদীর কথা সারাক্ষণ বলে।

রুয়েলের মা তখন বললো,বাবার বাড়ি বেশিদিন যেনো না থাকে জান্নাত।এখন যেহেতু বিয়ে হয়েছে,স্বামীর বাড়িতেই বেশি থাকবে জান্নাত।বাবার বাড়িতে বেশি যাওয়ার অভ্যাস করলে সংসারে তেমন মনোযোগ দিতে পারবে না।কাজে ফাঁকি দিতে চাইবে।এমনিতেই জান্নাত তেমন সংসারের কাজকর্ম করতে পারে না।

জহির সাহেব সেই কথা শুনে বললো,এখন যেহেতু নতুন বিয়ে হয়েছে,এখন একটু ঘন ঘন বাবার বাড়িতে যেতেই হবে বেয়াইন সাহেব।তা না হলে মন খারাপ হয়ে যাবে ওর।এখানেও থাকবে আবার ওখানেও থাকবে।এক জায়গায় বেশিদিন থাকলে মেয়েটা আমার মানসিক ভাবে ভেংগে পড়বে।আর কাজকর্মের কথা বলছেন!মেয়েটাকে কখনো কাজ করতে দেই নি বাড়িতে।সেজন্য সংসারের কাজকর্ম বিষয় এ তেমন কোনো অভিজ্ঞতা নেই।তবে ধীরে ধীরে সব শিখে যাবে।মেয়ে আমার চালাক আছে।

রুয়েল এবার তার মায়ের কাছে গিয়ে ওনার হাত ধরে বললো, মা এভাবে বলছো কেনো?জান্নাত এখন বাবার বাড়ি থাকবে না তো কখন থাকবে?এখনি তো ওর বাবার বাড়ি যাওয়ার সময়।ঊর্মি ভাবিকে দেখো না।হিয়া আর হৃদয়ের স্কুলের জন্য বাবার বাড়ি গিয়ে এক রাতও থাকতে পারে না।আর তুমি সংসারের কথা বলছো?সেটা এমনিতেই শিখে নেবে।
এই বলে রুয়েল জান্নাতকে বললো যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।

ঊর্মি চুপচাপ থাকলো।সে একটি কথাও বললো না।সে সচারাচর সবার সামনে কিছু বলে না।যা কথা বলে সব মনে মনে।আর প্লানও করে মনে মনে।ঊর্মি মনে মনে ভাবলো কই একটু আরামে বসে থেকে খেতে চাইলাম,তার আগেই বাবার বাড়ি পালাচ্ছে।

জান্নাত রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে তার ব্যাগ গুছিয়ে নিলো।তার আর তর সইছে না।রুয়েল দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে জান্নাতের রেডি হওয়া দেখতে লাগলো।এতোক্ষণে টের পেলো জান্নাত।সে রুয়েলকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বললো, আপনি এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?আপনি কখন রেডি হবেন?

রুয়েল তখন জান্নাতের কাছে এগিয়ে এসে বললো, কেনো?আমি রেডি হবো কেনো?

–কেনো আপনি যাবেন না?

–না।আমি যাবো না।আপনার বাবা তো আমাকে নিতে আসে নি।আপনাকে নিতে এসেছে সেজন্য আপনি একাই যাবেন।

#চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here