#”মালিনী”পর্ব- ১৭ ___২০
(নূর নাফিসা)
.
.
কাজ করে হাপিয়ে গেছে জেনিফা! মলির উপর সে খুব বিরক্ত হয়েছে। কেননা সে যদি বলে না দিতো সংসারের কাজকর্ম কি কি হয়, তাহলে আজ তাকে এতোকিছু করতে হতো না! যে কিনা নিজের প্লেট পর্যন্ত ধুয়ে খায় না সে আজ এতোকিছু করেছে! জেরিনের রুমে এসে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে জেনিফা। ফরহাদ উল্লাসিত হয়ে রুমে এসে বললো,
– জেনিফা তুমি তো দেখছি জিতে গেছো! চলো বেড়াতে যাবো আমরা। ডিনার করে আসবো রেস্টুরেন্ট থেকে। দ্রুত তৈরি হয়ে নাও।
– ফরহাদ, আজ ক্যান্সেল করে দাও। আমি টায়ার্ড! কাল যাবো।
ফরহাদ হতাশ ভঙ্গিতে বললো,
– কতো প্ল্যান করে রাখলাম আর তুমি বলছো ক্যান্সেল! ওকে, যেটা ভালো মনে করো তুমি সেটাই।
ফরহাদ জানতোই এমন কিছু হবে। বিয়ে করবে না, স্বাদ মিটে যাবে বিয়ের। এক বোনকে দেখেই সন্তুষ্ট! বাবা বললেই হবে নাকি! উনার বাড়ির বউ যে সংসার কেমন সামলাতে পারে সেটা কি আর বাবার চোখে পড়ে! এখন পর্যন্ত মা ই সবটা সামলায় আর বউ রাজরানী।
ফরহাদ বাগানে এসে দেখলো মলি পানি দিচ্ছে। গাছের পাতার সাথে খেলতে খেলতে বললো,
– তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম দুপুরে। আংকেলের অবস্থা বেশি ভালো না। ডাক্তার নাকি আরও আগেই বলেছিলো অপারেশন করাতে। টাকার সমস্যা ছিলো মায়ের কাছে ধারস্বরূপ কিংবা এডভান্স চাইলেও পেয়ে যেতে। আমি টাকা তুলতে যাচ্ছি ব্যাংকে। আজ থেকে যাও, কাল টাকা নিয়ে বাসায় যেও। যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন করাও।
– লাগবে না টাকা। ভাইয়ার দুমাসের বেতন আটকে আছে। সেটা পেলেই বাবার অপারেশন করাবো।
– বেশি বুঝো না। কবে তোমার ভাই বেতন পাবে আর কবে হবে অপারেশন! যা বলছি তা করো। আর আমি কাল সকালে চলে যাবো।
ফরহাদ চলে গেলো আর মলি গতদিনের মতো আজও কৌশলে থেকে গেলো। বাসায় ফোন করে জানিয়েও দিলো আজও ফিরবে না। তবে আজ ভয়টা একটু বেশি। কেননা জেনিফা বাড়িতে। সে যখন তখন রুমে আসতে পারে। কিন্তু ভয়টা তেমন ধরা পড়েনি। জেনিফা কাজ করে নিজেই অসুস্থ হয়ে গেছে তাই সে রেস্টে আছে। ফরহাদ রাতের খাবার প্লেটে নিয়ে রুমে এসে পড়েছে আজ। অর্ধেক খাবার মলির প্লেটে আর অর্ধেক তার নিজের। খুব অসস্তি লাগছে মলির তবুও একসাথে হলো তাদের ডিনার। এই রাতের বেলা গোসল করতে হলো মলিকে। গোসল ছাড়া রুমে জায়গা হবে না! নিজেই বলে থাকতে আবার নিজেই হুমকি দেয়! মহাজ্বালা! সকালে ঘুম ভাঙতে দেড়ি হয়েছে দুজনেরই! ফরহাদ ঘুমঘুম চোখে সময় দেখে চমকে উঠে বসলো! ফরহাদের নড়াচড়ায় মলিরও ঘুম ভেঙে গেছে।
বাইরে তাকিয়ে দেখলো বেলা অনেক হয়ে গেছে। ফরহাদ বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো,
“ওফ্ফ শীট! কাপড়চোপড়ও তো গুছানো হয়নি!”
ফরহাদ দ্রুত আলমারির কাছে গেলো। সামনে যা পাচ্ছে তাই নামাচ্ছে। মলি বললো,
– আমি গুছিয়ে দেই ব্যাগ। আপনি গোসল করে রেডি হন।
ফরহাদ বাথরুমে চলে গেলো। মলি বিছানা থেকে নেমে এসে কিছু জামাকাপড় , ল্যাপটপ আর খাটে নামানো ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখলো ব্যাগে। তারপর বিছানাপত্র গুছিয়ে রাখলো। ফরহাদ বেরিয়ে এলে সে ফ্রেশ হয়ে এলো। ফরহাদ নিচে চলে গেলো আর মলি ছাদে। আরেকটু সময় পার করতে সে ছাদটা ঝাড়ু দিয়ে দিলো। কাজ শেষ হতেই সে নিচে নেমে এলো। ফরহাদ মাত্রই নাস্তা শেষ করেছে। সে মাকে তাড়া দিয়ে আবার দোতলায় চলে গেলো। এদিকে মলি পড়লো জেনিফার সামনে। জেনিফা বললো,
– এই মালিনী, তুই কখন এলি?
– জ্বি ম্যাডাম। একটু আগে।
– একটু আগে তাহলে আমি দেখলাম না কেন তোকে!
– সেটা আমি কিভাবে বলবো ম্যাডাম। আমি একটু আগেই এলাম।
– এতো তারাতাড়ি এসেছিস কেন আজ?
– সকাল বেলা হাটতে হাটতে চলে এলাম ভালো লাগছিলো। তাছাড়া বাগানে খুব সকালেই পানি দেওয়া উত্তম।
– তাহলে সেটা প্রতিদিন হয় না কেন! আর তুই প্রতিদিন ছাদে চলে যাস কেন!
– ভালোলাগে ফুলগুলো উপর থেকে দেখতে। আপনিও দেখে আসুন।
– দেখতে হবে না। দেখেছি আমি। আর কখনো ছাদে উঠবি না। এসব ধান্দা ছেড়ে ভালো হয়ে যা। নিশ্চয়ই অন্য মতলব আছে তোর! কাজ করতে আসবি আর কাজ করে চলে যাবি। অন্যকে শিখাতে আসবি না।
মলি বেশ বুঝতে পারছে কালকের বিষয়াদি নিয়ে জেনিফা তার উপর রেগে আছে! তবুও সে বললো,
– আচ্ছা ম্যাডাম।
মলি পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে জেনিফা আবার থামিয়ে দিলো,
– এই দাড়া! কালকেও না তুই এই জামা পড়ে এলি! আজও এটা!
মলি এক ঢোক গিললো! একের পর এক রহস্যময় প্রশ্ন করে যাচ্ছে! কিভাবে দিবে এতো বানিয়ে উত্তর! সে কি আর বলবে, সারারাত ফ্যানের বাতাসে জামাকাপড় শুকিয়ে আবার সেটাই পড়েছে! এই জেনিফাটা অনেক ভয়ংকর! বাকিরাই ভালো, কেউ তার দিকে কোনো খেয়াল রাখে না! মলি ভেবে উত্তর দিলো,
– কাল সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরায় আর গোসল করিনি!
– ছি! ছি! এসব বস্তির মানুষ এজন্যই দেখতে পারিনা!
এদিকে ফাহিমার ডাক পড়লো কিচেন থেকে। মলি সুযোগ পেয়ে তারাহুরো করে সেখানে চলে গেলো। এক মুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো সে কোনো চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছে! ফাহিমার কাছে এলে ফাহিমা বললো, উনার কাজে একটু সাহায্য করতে। ফরহাদের জন্য কিছু খাবার দিয়ে দিবে মলি যেন একটু সাহায্য করে কাজ এগিয়ে দেয়। খুব তারাহুরো করে কাজ করছেন তিনি! কিছুক্ষণের মধ্যেই সবকিছু গুছিয়ে ফরহাদ বেরিয়ে গেলো চিটাগংয়ের উদ্দেশ্যে। মলি তারপর বাগানে এলো পানি দিতে। পানি দিতে দিতে একটা কথাই ভাবছে, “ফরহাদ তো বলেছিলো টাকা দিয়ে যাবে। সে তো আর দিলো না সেটা! ভুলে গেছে হয়তো! নাকি আবার পার্সে রেখে গেছে!”
মলি তারাতাড়ি পানি দেওয়া শেষ করে এসে পার্সটা হাতে নিলো। কিন্তু অতিরিক্ত কোন টাকা পেলো না! মোবাইলটা নিয়ে দেখলো একটা মেসেজ আছে। দুতিনমিনিট আগেই এসেছে। “টাকাটা দিতে মনে ছিলো না। বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ারে রেখেছি। তুমি নিয়ে নাও। আর বারান্দায় যে শাড়ি রেখেছো সেটা গুছিয়ে আলমারিতে তুলে রেখো মনে করে।”
মলি সুযোগ বুঝে রুমে এলো। ভয় লাগছে খুব তবুও সাহস দেখালো। শাড়ি আলমারিতে তুলে ড্রয়ার থেকে টাকা নিলো কাপা কাপা হাতে। কত টাকা তা আর দেখার সময় নেই। সে রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। অফিস বন্ধ হওয়ায় বাসায় আজ সবাই আছে। কেন জানি সামনে কদম ফেলছে আর ভয় বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে! এতোগুলো টাকা হাতে থাকলে ভয় তো করবেই! তাছাড়া নিজ হাতে নিয়েছে! ভয়ে ভয়ে তার চেহারা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে! সে ফাহিমার কাছে বিদায় নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় জেনিফা তার হাত ধরলো।
– এই, তুই দোতলায় কি করছিলি?
মলির যেন শরীর কাপা শুরু হয়ে গেছে! সে বললো,
– দোতলায়! দোতলায় তো…!
মলির কথা শেষ না হতেই জেনিফা উচ্চস্বরে বললো,
– একদম মিথ্যে বলবি না! আমি ছাদ থেকে নামার সময় দেখেছি তুই ফরহাদের রুমের দরজা লাগাচ্ছিস! কি করছিলি বল! ফরহাদ তো রুমে নেই যে তোকে কাজের জন্য ডাকবে!
মলি কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না! এদিকে জেনিফা হুট করেই তার পার্স নিয়ে বললো,
– দেখি তোর পার্সে কি আছে!
সাথে সাথেই মলির আত্মা ধুক করে উঠলো! এতো টাকা এখন দেখে ফেললে কি হবে! কি জবাব দিবে সে! সত্যিটা বলতে গেলে তো তারা জেনে যাবে! ফরহাদ তো চায় না কেউ জানুক!
জেনিফা টাকা দেখে চরম অবাক! গননা করে দেখলো আঠারো হাজার টাকা আছে একসাথে! মলিকে জিজ্ঞেস করলো,
– এতো টাকা তুই কোথায় পেলি! চুরি করেছিস না!
মলি চোখ বড় বড় করে তাকালো! এই মুহূর্তে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না খুজে! জেনিফার উচ্চ কন্ঠ শুনে এতোক্ষণে তারা আশেপাশে সবাই জড়ো হয়ে গেছে! ফারদিন, জেরিন ও ফাহিমাও। ফাহিমা বললো,
– জেনিফা, এটা মলির পার্সে যেহেতু তাহলে মলিরই। তুমি ওকে চুরির অপবাদ দিতে পারো না।
– আন্টি আমি স্বচক্ষে দেখেছি ও ফরহাদের রুমের দরজা লাগাচ্ছে। এই তুই দরজা লাগাসনি? বল।
মলির দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জবাব দিতে দিতে বললো,
– কিন্তু আমি চুরি করিনি। আমি টাকা..
– চোর তো বলবেই চুরি করেনি।
জেরিন একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মলির গালে। ফাহিমা ধমক দিতেই জেরিন বললো,
– মা আপনি চুপ থাকুন। অনেক বেড়ে গেছে শুধু আপনার জন্যই! আগেই সন্দেহ হয়েছে এটা চোর টোর হবে। সব রেখে মায়ের সাথে ভাব জমিয়েছে। ফারদিন এর ব্যবস্থা করো।
– হ্যাঁ, একে পুলিশে দেওয়া দরকার! আমারও সুবিধার মনে হয়নি! কিসব কাজে নেয় কোনো বোধ নেই! কাজের নাম করে বাড়িতে চুরি করতে আসে। আমি পুলিশকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করছি।
জেনিফা বললো,
– ভাইয়া, এসব পুলিশে কিছু হবে না! এরা থানায় গিয়ে অভস্ত্য! এদের এমন শিক্ষা দেওয়া উচিত যাতে আর জীবনে চুরি না করে।
জেনিফা মলিকে টেনে কিচেনে নিয়ে গেলো। ফাহিমা আটকানোর চেষ্টা করছে তার কথায় কেউ কান দিচ্ছে না, ফারদিনও জেরিন আর জেনিফার সাথে মিলে যেন শাস্তি দেওয়ার পক্ষেই। তাদের থামাতে না পেরে ফাহিমা দৌড়ে রুমে গেলো নেয়ামত উল্লাহকে কল করে বাসায় আনতে। তিনিই পারবেন থামাতে। কেননা উনার উপরে কেউ মাতব্বরি করবে না। সঠিকটা জেনে বিশেষ বিবেচনা করেই তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন।
হঠাৎ করেই এক আর্তনাদ ভেসে এলো! ফাহিমা হাত থেকে ফোন ফেলে দৌড়ে কিচেনে এসে দেখলো গরম পানির পাতিলে মলির হাত ডুবিয়ে রেখেছে। চিৎকার করতে করতে সে ছুটার জন্য চেষ্টা করছে! এ কোন আজাব দিচ্ছে তারা! ফাহিমা দৌড়ে এসে জেনিফাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো। মলির হাত টেনে নিয়ে ভেসিনে ধরে রাখলো! মলি চিৎকার করছে, সাথে ফাহিমাও কাদতে কাদতে ঠান্ডা পানি দিচ্ছে মলির হাতে। ফারদিন কিছু বলতে এলে ফাহিমা সজোরে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো এতো বড় ছেলের গালে! সবাই হতবাক! ফারদিন রেগে বেরিয়ে গেলো কিচেন থেকে। জেনিফাও পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। জেরিন তাকে নিয়ে ব্যস্ত। শুধু চুরির শাস্তি নয়, গতকালের ঝাঝটাও যেন মিটিয়ে নিলো জেনিফা। ফাহিমা ফ্রিজ থেকে বরফ আনতে গেলো আর এদিকে কান্না করতে করতে মলি দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। আসার সময় মেঝেতে পড়া পার্স আর ফোনটাও নিয়ে এসেছে। ফাহিমা পিছু পিছু ডাকছিলো। মলি কান দিলো না সেদিকে! ফুটন্ত পানিতে পোড়া হাত নিয়ে সে বাড়ির পথে ছুটতে লাগলো। মাঝপথে রিকশা নিয়েছে সে। ভাড়া দিতে গিয়ে দেখলো জেনিফা তার পার্সের বাকি টাকাও নিয়ে নিয়েছে! পরিচিত এক দোকান থেকে ধার নিয়ে ভাড়া পরিশোধ করেছে।
মুহুর্তেই ঘটে গেছে এক অঘটন! জীবনটা কখনো সুখ দিয়ে যায় আবার কখনো দুখে পুড়িয়ে ঝাঝড়া করে দিয়ে যায়! গতদিনটা তো সুখেই কেটেছিলো আর আজ বয়ে গেলো ঝড়! তছনছ করে দিলো সুন্দর মুখুরিত শেষ সকালটা! তাহলে কি সুখ গুলোই দুখের পূর্বাভাস! জীবনে কেন এসে ধরা দেয় ক্ষনিকের সুখ! আবার কেনই বা পুড়ায় তা অপ্রত্যাশিত কাল হয়ে! মানুষের মন গুলো এতো নিকৃষ্ট কেন! এতো পাষাণ কেন তাদের মন! সবটা না জেনে না শুনে কেন করলো এমন! জল্লাদ হয়ে গেছে মানব! অসহায়দের শোষণ করতে করতে তারা পুরো জল্লাদ হয়ে গেছে যার ফলে অসহায় মনের আর্তনাদ পৌছায় না তাদের কানে! গিয়েছিলো দুটো পয়সা রোজগার করতে। সেখানে অবস্থান করে নিজেই ডেকে আনলো একের পর এক ধ্বংস!
কাচা ঘরের ছোট্ট জানালার ধারে আনমনা হয়ে ভাবছে সেই বাগানের মালিনী। আর দু চোখের অশ্রুপাতের বর্ষন হচ্ছে বিন্দুকণা হয়ে। বিকেলের ছায়া পড়ে গেছে প্রকৃতিতে। ভুবনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে এই ক্ষুদ্র মন! হঠাৎ করেই হুমরি খেয়ে দোর খুলে ঘরে প্রবেশ করলো কেউ। আর এমনি ঘটলো তার ভাবনায় ছেদ!
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল ফরহাদকে! সে বসা থেকে উঠে দাড়াতেই ফরহাদ দ্রুত পায়ে মলির দিকে এগিয়ে এলো। দৃষ্টি এক পলকের জন্য মলির চোখে পড়লেও এখন সেটা হাতের দিকেই আছে। সে মলির কাছে এসে মলিকে আবার খাটে বসিয়ে দিয়ে সেও বসে পড়লো। ভেজা গামছা দিয়ে প্যাচানো হাতটা ধরে ফরহাদ গামছার প্যাচ খুলতে লাগলো। মলি অপলক তাকিয়ে আছে ফরহাদের মুখের দিকে। ঘটনা এতো তারাতাড়ি ঘটছে যা তার বুঝতে খুব অসুবিধা হচ্ছে! “ফরহাদ এখানে কিভাবে! সে তো সকাল আটটা নয়টার দিকে বেরিয়েছে, এতোক্ষণ সময়ে চিটাগং যেতে পারবে কিন্তু সেখান থেকে ফিরে এলো কিভাবে! আর আমার খবরই বা পেলো কিভাবে! সে কি যায়নি তাহলে!”
এদিকে গামছাটা সরানো মাত্রই ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো ফরহাদের! ডান হাতটা পুরো জ্বলসে গেছে! সে করুন দৃষ্টিতে তাকালো মলির দিকে! এ দৃষ্টি দেখে মলি ভয় পেয়ে গেছে! এটা স্বাভাবিক না! চোখ লাল বর্ণের হয়ে আছে! কেন জানি মনে হচ্ছিলো তার চোখের কোটরে পানি চিকচিক করছে! ফরহাদ মলির অন্যহাত চেক করলো সেটা ঠিক আছে। ফরহাদ খুব কঠিন একটা ঢোক গিললো! রাগে যেন তার গা ঝিমঝিম করছে! ফরহাদকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে এতোক্ষণে মলির মা ও ভাবিও এসে পড়েছে রুমে। ফরহাদ যেন সালাম দিতেও ভুলে গেছে। কোনো শব্দ নেই মুখে। গামছাটা আবার হাতে পেচিয়ে নিজে উঠে দাড়ালো এবং মলিকে টেনে দাড় করালো। মলি যে অবস্থায় আছে সেভাবেই তার হাত ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের হচ্ছে ফরহাদ। যাওয়ার সময় মলির মাকে উদ্দেশ্য করে শুধু একটা কথাই বলেছে, “আন্টি, মলি আমার সাথে যাচ্ছে। আর ফিরবে না বাড়িতে। টেনশন করবেন না ওকে নিয়ে।”
মলির মুখেও নেই কোনো শব্দ। ফরহাদ যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছে সে। পড়নে আধপুরোনো জামাকাপড়, পায়ে সেন্ডেল। চুলগুলো ঢিলেঢালা এক খোপা করা। মাথায় ওড়নাটাও তুলতে পারছে না ফরহাদের হেটে যাওয়া গতির কারনে। কোনো বিরতি নেই তার!
এই মুহূর্তে কোন পথের পথিক সে, তার জানা নেই। জানার ইচ্ছেও নেই কোনো! অপ্রত্যাশিত জীবন পাড় করতে করতে জীবনের প্রতিই বিরক্ত হয়ে পড়েছে মলি। আর নেই কোনো ইচ্ছে, আকাঙ্খা। আর স্বপ্ন! সেটা তো অনেক আগেই দেখা বন্ধ করে দিয়েছে! নতুন করে চাওয়া ও পাওয়ার মতো কিছুই নেই তার!
“মালিনী”
পর্ব- ১৮
(নূর নাফিসা)
.
.
অপ্রত্যাশিত জীবন পাড় করতে করতে জীবনের প্রতিই বিরক্ত হয়ে পড়েছে মলি। আর নেই কোনো ইচ্ছে, আকাঙ্খা। আর স্বপ্ন! সেটা তো অনেক আগেই দেখা বন্ধ করে দিয়েছে! নতুন করে চাওয়া ও পাওয়ার মতো কিছুই নেই তার!
ফরহাদ তাকে নিয়ে মহল্লা থেকে বেরিয়ে এক সিএনজিতে উঠলো। কিছু বলতে হলো না, সিএনজি চলা শুরু করে দিয়েছে। আগেই রিজার্ভ করে এনেছে বোধহয়। সিএনজি গিয়ে থামলো হসপিটালের সামনে। ডাক্তার দেখিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়েছে ফরহাদ। সেখান থেকে বেরিয়ে আবার সিএনজিতে উঠলো। অতিরিক্ত কোনো কথা বলছে না সে। ডাক্তারের সাথে প্রয়োজনভেদে একটু বলেছে আর ড্রাইভারের সাথে। তাছাড়া সে চুপই আছে। মাগরিবের আজান পড়ে গেছে। সিএনজি এসে থামলো এয়ারপোর্টে! মলি অবাক কিন্তু কিছু বলছে না! ফরহাদ তাকে নিয়ে প্লেনে উঠে গেছে। কোন দেশে নিয়ে যাচ্ছে সে! টিকিট কাটতেও দেখলো না। সেটাও কি আগেই করে রেখেছে! শুধু একজন লোকের কাছে থেকে কিছু নিতে দেখেছিলো। হয়তো লোকটি তার পরিচিত। মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট ভ্রমণ করে চলে এসেছে কোথাও। অজানা পথ, কিছুই চিনতে পারছে না মলি। দোকানের সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পেরেছে সে বাংলাদেশেই আছে এবং সেটা চিটাগং। ফরহাদ কি তাহলে প্লেনে গিয়েছিলো ঢাকায়! হবে হয়তো। কেননা তার কাছে তো ব্যাগ ট্যাগ কিছুই ছিলো না! কিন্তু সে জানলোই বা কিভাবে!
নেই কোনো জিজ্ঞাসা, আছে শুধু ভাবনা। নিজে নিজেই ভাবছে আর সব প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করছে। বাসে কিছুটা পথ ভ্রমণ করে ফরহাদ নিয়ে এলো এক বাসায়। ফ্ল্যাটের সামনে এসে মলির হাত ছেড়ে সে পকেট থেকে চাবি বের করে দরজা খুললো। মলিকে একটান দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো। আবার তার হাত ধরে এক রুমের ভেতর নিয়ে এলো। রুমের দরজাটা লাথি দিয়ে চাপিয়ে মলির গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে বললো,
“জেনিফার সাহস কি করে হয় তোর হাত পোড়ানোর? ”
অন্য গালে আরেকটা দিয়ে বললো, “কথা বল! ওর শক্তি ছিলো তোর শক্তি ছিলো না?”
মলির মুখে নেই কোনো শব্দ শুধু চোখে দেখা যাচ্ছে অশ্রু। ফরহাদ এবার দু’হাতে এলোপাথাড়ি থাপ্পড় দিতে দিতে চেচিয়ে বললো, ” বলছিস না কেন! আমার সম্পূর্ণ অধিকার থাকা সত্ত্বেও আমি কি আজ পর্যন্ত তোর গায়ে হাত তুলেছিলাম? তাহলে বিনা অধিকারে ওরা কিভাবে তোকে আঘাত করতে পারে! পারলি না কেন বাধা দিতে! বললি না কেন সত্যটা? এটা বলতে পারলি না যে, আমি দিয়ে এসেছিলাম টাকাটা! ফোনে যে মেসেজটা পাঠিয়েছিলাম সেটা দেখাতে পারলি না কেন! জেনিফা কিভাবে তোর হাত পোড়ায়, তুই ওর হাত পুড়িয়ে দিতে পারলি না! আগেই তো নিষেধ করেছিলাম এতো ভালো সাজতে! দেখতে পারিনা আমি এতো ভালো মানুষ! একদম দেখতে পারি না! এখানে পা ও রাখতে পারিনি, তোর এই অবস্থা শুনি! মা কল করে না বললে তো জানতেই পারতাম না কিছু! কেন হলো এসব, বল!”
মলি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছে না! মাথা ভনভন করে ঘুরছে তার! এতো জোরে জোরে কেউ থাপ্পড় দেয়! ব্যাথা লাগছে কিন্তু একটুও কষ্ট লাগছে না। কিন্তু দাড়িয়ে থাকার শক্তিটা যে হারিয়ে ফেলেছে! সকালে সংঘটিত ঘটনার পর থেকেই সে দুর্বল! তারউপর এতোটা পথ জার্নির পর এখন ফরহাদের হাতের থাপ্পড়, আর কতো সহ্য করতে পারবে এই জীর্ণশীর্ণ দেহ!
মলিকে হেলেদুলে পড়ে যেতে দেখে ফরহাদ তাকে ধরে বসে পড়লো ফ্লোরে। মলি নিভু নিভু চোখে তাকাচ্ছে। ফরহাদের ঝাপসা মুখ দেখতে পাচ্ছে আর কানে ভেসে আসছে কান্না জড়িত কন্ঠে কিছু শব্দ।
“আজ যদি আমি ও বাড়িতে যেতাম না, নিজ হাতে তিনটা লাশ ফেলে আসতাম! তিনটা খুন করে আসতাম আমি! বেচে গেলো শুধু তোর জন্য। এতো বোকা কেন তুই? কাউকে উপযুক্ত জবাব কেন দিতে পারিস না! আমি তো কতো কৌশল দেখিয়ে দেই তাও কেন একটু অনুসরণ করতে পারিস না! যখন মা বলেছিলো না, আমি দুনিয়ার খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিলাম! ভেবেছি শুধু তোর কথা। কিভাবে ছুটে গিয়েছি আমার অজানা! সবদিক ফেলে আমি তোর কাছে ছুটে গিয়েছি সবার আগে! মলি!… এই মলি! চোখ খুলো!”
মলির চোখ বন্ধ হয়ে গেছে। ফরহাদ ভয় পেয়ে গেছে! দ্রুত হাত ধরে পালস চেক করলো। মলিকে খাটে এনে দ্রুত কাউকে কল করে বললো ডাক্তার পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। পাতলা কম্বলটা টেনে দিলো মলির উপর। সারামুখ লাল হয়ে আছে যেন টোকা পেলেই রক্ত বের হয়ে আসবে! কাছে এসে বসে মুখখানায় হাত বুলালো ফরহাদ। সম্পূর্ণ মুখে ঠোঁটের ছোয়া দিয়ে যাচ্ছে আর চোখের পানিতে ভিজিয়ে দিচ্ছে মলির মুখ! মলি কি একটুও উপলব্ধি করতে পারছে ফরহাদের পাগলামো!
কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার এসেছে। তিনি জানিয়েছেন রোগীর শরীর দুর্বল। হয়তো খাওয়াদাওয়া করেনি তাই বেহুশ হয়ে গেছে। ফরহাদ নিশ্চিত সে সকাল থেকে কিছুই খায়নি। গত রাতে তো তার সাথেই অল্প খেয়েছে, এখনো সেটুকুতেই আছে। ডাক্তার চলে গেলো কিছু ওষুধ দিয়ে আর যত্ন নিতে বললো। ফরহাদ দরজা লাগিয়ে জুতা খুলেছে। মলির কাছে এসে ডান হাতটা নিয়ে অসংখ্যবার চুম্বন করলো। অত:পর ডান হাতটা সাবধানে রেখে কম্বলের নিচে মলিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো ফরহাদ। ক্লান্ত নয়ন জোড়ার কখন ঘুম নেমে এসেছে জানা নেই!
মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো গোঙানির আওয়াজে! তাপও লাগছে বেশ! চোখ খুলে দেখলো মলি কেমন যেন করছে। হাত পা গুটিয়ে কুকড়ে মিশে যাচ্ছে ফরহাদের সাথে! ফরহাদ তার শরীর স্পর্শ করে দেখলো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে! মলির দেহের তাপে তার নিজের শরীর ঘেমে একাকার! ফরহাদ মলিকে ছাড়িয়ে উঠে পড়লো এবং আলমারি থেকে মোটা কম্বলটা এনে তার উপর দিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ বসে বসে জলপটি দিলো। মলির শরীর কাপা থেমে গেলে ফরহাদ জলপটি কপালে রেখেই শার্ট খুলে বাথরুমে চলে গেলো। ঢাকা থেকে ফিরে হাতমুখও ধোয়নি সে! মধ্যরাতে এখন একেবারে গোসল করে বেরিয়েছে সে। ব্যাগ খুলে দেখলো মায়ের দিয়ে দেওয়া খাবার। মাংস ভালো থাকলেও পোলাও নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো ফেলে মাংসের বাটি ফ্রিজে তুলে রাখলো। একটা কেক নিয়েছিলো খাওয়ার জন্য, সেটাও যেন গলা দিয়ে নামছে না! তাই আর খাওয়া হলো না।
সকালে জ্বর একটু কম মনে হচ্ছে। চোখ খুলেই ফরহাদকে দেখতে পেল মলি। ফরহাদ পাশেই শুয়ে আছে আর পলকহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে চোখ রাখা দায়! মলি আখিজোড়া বন্ধ করে ফেললো। ফরহাদ একটা গেঞ্জিও রাখেনি দেহে! ভয় ও লজ্জার সংমিশ্রণে এক অজানা অনুভূতির জন্ম হয়েছে মলির মনে! ঠোঁটের উপর কোমল ছোয়া পড়তেই এক মনোমুগ্ধকর শিহরণ বয়ে গেলো সর্বাঙ্গে! কিন্তু চোখ খোলার সাহস একেবারেই নেই। হঠাৎ টুংটাং শব্দ ভেসে এলো মলির কানে। ফরহাদের দুরত্ব অনুভব করতে পেরে চোখের পাতা হালকা ফাক করে দেখলো ফরহাদ শার্ট পড়তে পড়তে বেরিয়ে যাচ্ছে রুম থেকে। মনে হলো কেউ এসেছে আর ফরহাদ তার সাথেই কথা বলছে। অত:পর ফরহাদ আবার রুমে এলো পিছু পিছু এলো এক মধ্যবয়সী মহিলা। মহিলাটি মলির পাশে বসে কাপালে হাত দিয়ে বললো,
“জ্বর কমছে আম্মাজানের?”
মলি কিছুই বুঝতে পারছে না, একবার মহিলার মুখে তাকাচ্ছে আবার ফরহাদের দিকে। ফরহাদ আলমারিতে ফাইল টাইল ঘাটতে ঘাটতে বললো,
– আন্টি, ভাত বসিয়েছি আমি। দেখুন হয়ে গেছে হয়তো। আর ফ্রিজে মাংস রাখা আছে, একটু গরম করে দিন।
– আইচ্ছা।
মহিলাটি চলে গেলো। খাবার রেডি হলে ফরহাদ নিজে খেলো এবং মলিকে খায়িয়ে ওষুধ দিলো। সে রেডি হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বললো,
– কিছুর প্রয়োজন হলে নিজে মাতব্বরি করতে যেও না। আন্টিকে বলো, সব করে দিবে।
ফরহাদ চলে গেলো। মলি আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে রুমটা পর্যবেক্ষণ করলো। রুমে বড়সড় একটা খাট, সূক্ষ নকশা করা কাঠের আলমারি আর ড্রেসিং টেবিল, দেয়াল ঘেষে রাখা আছে শুয়ে থাকার উপযোগী এক সোফা! ফরহাদ তাহলে এখানেই থাকে। এটা ও বাড়ির রুমের চেয়েও খুব সুন্দরভাবে সজ্জিত। সারাদিন তার এই রুমে বসেই কাটালো। শুধু বাথরুমে গিয়েছে যেটা রুমের সাথেই সংযুক্ত। মাথাটা ভারি হয়ে আছে, মনে হচ্ছে মাথায় বোঝা রাখা! মহিলাটি কাজের ফাকে ফাকে মলির সাথে এসে টুকটাক গল্প করে যায়। দুপুরের পরে ফরহাদ বাড়িতে ফিরেছে হাতে এতোগুলো শপিং ব্যাগ! মলি খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে, ব্যাগগুলো ফরহাদ খাটে রেখে মলির কপালে আর গলায় স্পর্শ করে খালি হাতেই জ্বর মাপলো।
কি আছে ব্যাগে! মলির খুব দেখতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। ফরহাদ ঘড়ি, শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
– এখান থেকে একটা নিয়ে বাথরুমে যাও। গোসল করলে ভালো লাগবে সাথে জ্বরও কমে যাবে।
এবার মলি ব্যাগগুলো কাছে টেনে ভেতরের জিনিসগুলো দেখতে লাগলো। একে একে সব প্যাকেটে দেখলো শাড়ি আর শাড়ি সাথে ম্যাচিং পেটিকোট আর ব্লাউজ! তাহলে কি এখন থেকে শুধু শাড়িই পড়তে হবে! একটা গাউন ও তো আনতে পারতো! একটা সালোয়ার কামিজ সেটও তো আনতে পারতো!
এতোগুলো শাড়ি পেয়েও মলির মুখে হাসি কাশি কিছুই নেই। কেননা ভাবনার সাথে সাথেই ফরহাদ তাকে উদ্দেশ্য করে বলে দিয়েছে এখন থেকে সবসময় শাড়িই পড়তে হবে। আর পড়নে যেই সালোয়ার কামিজ সেট আছে সেটা যেনো আজকেই গায়েব করে দেয়!
মলি চুপচাপ বসেই আছে। ফরহাদ তাকে টেনে নামিয়ে ডান হাতে একটা পলিথিন বেধে দিলো। অত:পর নিজের জামাকাপড়সহ মলির একটা শাড়ি নিয়ে বাথরুমে রেখে এলো। মলি এখনো যাচ্ছে না। ফরহাদ দরজার সামনে দাড়িয়ে বললো,
– এখন কি কোলে করে উঠিয়ে এইটুকু নিয়ে আসতে হবে?
মলি এই অসভ্য কথাবার্তা শুনে চোখ কুচকে তাকালো। দৃষ্টি সরিয়ে এবার বললো,
– আপনি তো মনে হচ্ছে এখন গোসল করবেন। তাহলে আপনি করে আসুন আমি পরে যাই।
ফরহাদ কোনো জবাব না দিয়ে মলির হাত ধরে টেনে বাথরুমে নিয়ে গেলো।
জীবনের প্রথম এমন গোসল হয়েছে আজ তার! ফরহাদের সাথে ওবাড়িতে গোসল করেছিলো কিন্তু সেটা স্বাভাবিক ছিলো! আর আজ! ছি! ভাবতেই লজ্জা লাগছে মলির! দশ পনেরো মিনিটের গোসল পুরো ঘন্টাখানেক সময়ের কাছাকাছি! তাও আবার শরীরে জ্বর! বাথরুমে যাওয়ার আগে তো শরীর গরম ছিলো! আর এখন বের হওয়ার পর! কনকনে ঠান্ডা, মনে হচ্ছে যেনো ফ্রিজ থেকে নেমে এসেছে! মলি আর এক মিনিটও দেড়ি করেনি, অতি দ্রুত খাটে এসে আবার কম্বলের নিচে চলে গেলো! কম্বল এখনো গরম আছে বিধায় খুব আরাম লাগছে! গোসলের পর মনটাও ফুরফুরে মনে হচ্ছে। দুপুরেও ফরহাদের হাতেই খাবার খেতে হলো। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকেনি, বদহজম হয়ে বেরিয়ে এসেছে সব! আর যেই তেতো ওষুধ! সেবন তো দূরে থাকুক, দেখলেই গা গুলিয়ে আসে! মহিলাটি একটু পরেই আবার এনে দিলো এক বাটি স্যুপ! মলির পাশে রাখতেই মলি বা’হাতে চামচ নেড়েচেড়ে বুঝে নিলো এবার ভাত রেখে তাকে ডাল খাওয়াতে এসেছে! বাহ! কি সেবাযত্ন তার! মনে হচ্ছে কোনো রাজ্যের রানী সে। পরক্ষণেই মনে হলো প্রত্যেকটা সুখের মুহূর্তের পরেই তার জীবনে দুখ আসে। ভাবতেই এবার বিষন্ন হয়ে গেছে মুখখানা! বিষন্নতা কাটাতে এক চামচ মলির উক্তিতে “ডাল” মুখে দিতেই মনে হলো কাচা চিংড়ি মাছ ধোয়া পানি মুখে দিলো। পুচ করে কুলি করে মুখ থেকে সব ফেলে দিলো ফ্লোরে! সাথে শব্দ করলো, “ওয়াক, থু! কি বিশ্রী গন্ধ!” ফরহাদ জানালার পাশে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছিলো। এমন শব্দ শুনে মলির দিকে তাকালো। মুখে বিরক্তির ছাপ এনে যত তারাতাড়ি সম্ভব কথা শেষ করে কল কেটে তেজি কন্ঠে “আন্টি” বলে এক ডাক দিলো। বাইরের দিক থেকে মহিলা সাড়া দিতেই ফরহাদ আবার বললো,
– আন্টি, শুকনো মরিচের গুঁড়ো আর লেবু নিয়ে আসুন।
মলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো! যেভাবে ডাক দিয়েছিলো, সে ভেবেছে মোটা লাঠি এনে বুঝি তাকে পেটাবে এখন! মহিলাটি সব এনে দিলো আর ফ্লোর মুছে দিয়ে গেলো। মলির খুব কষ্ট লাগছে, কেন শুধু শুধু ফ্লোরে ফেলতে গেলো! বাথরুমেও তো চলে যেতে পারতো! পরক্ষণে জোর করেই ফরহাদ সবটুকু স্যুপ খাওয়ালো সাথে টক আর ঝাল মিশিয়ে! যেটাকে মলি “চিংড়ি মাছ ধোয়া পানি” উপাধিতে ভূষিত করেছে। আর জোর বলতে ফরহাদের কাজে সায় দিয়ে মলি ঢকঢক করে গিলতে বাধ্য!
আজ ফরহাদ আর বের হয়নি বাসা থেকে, কিন্তু কাজের বিরতি নেই। এই ফোন, এই ল্যাপটপ এটাসেটা নিয়ে ব্যস্ততা আছেই! আর মলির সময় কাটছে খাটে শুয়ে বসে। রাতের রান্না বিকেলেই সেড়ে মহিলা চলে গেলো।
https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318
“মালিনী”
পর্ব- ১৯
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে নাস্তার পরপরই ফরহাদ বেরিয়ে গেছে। আজও নিষেধ করে গেছে রুম থেকে বের হতে। কোনো প্রয়োজন হলে যেন আন্টিকে ডেকে বলে। দরজা খোলাই আছে। বললেই হলো নাকি! এক জায়গায় স্থির হয়ে বসে থাকতে কি আর ভালো লাগে! তাছাড়া আজ নিজেকে অনেকটা সুস্থ অনুভব করছে মলি। শুধু মাথা একটু ভারি হয়ে আছে আর মুখে তেতো ভাবটা রয়ে গেছে! ইচ্ছে করছে বাড়িটা ঘুরে দেখতে। ফরহাদ যে দুইটা দরজা ভেদ করে তাকে এখানে এনেছিলো এটাই মনে আছে শুধু। আর কিছু দেখার সুযোগ হয়নি। মলি রুম থেকে বাইরে পা রাখলো। রুমের সামনের দিকটা ডান থেকে বামে লম্বাটে ফাকা জায়গা। শুধু একপাশে ডাইনিং টেবিল রাখা আছে। একজন মানুষের জন্য আবার ডাইনিং টেবিলের প্রয়োজন হয়! ওটা সড়িয়ে দিলে ছোট বাচ্চাদের খেলার জন্য সুন্দর মাঠ হয়ে যাবে এই ফাকা জায়গাটা। তাদের রুমের ডানদিকে একটা দরজা আছে। সে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো এটাও একটা রুম। সোফা রাখা আছে এখানে। কৃত্রিম কিছু ফুলও রাখা আছে। খুব সুন্দরভাবে গুছানো সব! এখানেও বাথরুম সংযুক্ত। মলি সেখান থেকে বেরিয়ে তাদের রুমের বামদিকে দরজা দিয়ে প্রবেশ করে দেখলো মহিলাটি রান্না করছে। এটা কিচেন। প্রয়োজনীয় হাড়িপাতিল সবই আছে। এতোকিছু কেন! কেউ দেখে বলবেই না এখানে শুধু একজন পুরুষ মানুষ থাকে! যেন গুছানো এক সংসারের অবস্থান এ বাড়িতে! মলি মহিলাটির কাছে এসে বললো,
– আন্টি আপনি কি সবসময় এখানে কাজ করেন?
– না, ফরহাদ বাবা যহন অফিসের মানুষ বাড়িতে আনে মিটিং করে তহন ঘর পরিষ্কার কইরা রান্নাবান্না কইরা যাই।
– বাড়িতে মিটিং!
– হ। দূরের অফিসাররা আইলে বাড়িতে আনে, খাওয়াদাওয়া ও গল্পগুজব করে।
– ওহ, আচ্ছা।
– জ্বর কমছে তোমার?
– হ্যাঁ।
মলি আবার রুমে চলে এলো সেখান থেকে। আজও ফরহাদ বাসায় ফিরলো হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে। আজকেও কি কিছু এনেছে মলির জন্য! কি এনেছে, দেখতে ইচ্ছে করছে মলির। ব্যাগগুলো রেখে আবার রুমের বাইরে গেলো ফরহাদ। ফিরলো ৩/২ ফিট লম্বা একটা ফ্রেম হাতে নিয়ে। এটা কিসের ফ্রেম বুঝতে পারছে না মলি। ফরহাদ সোফায় দাড়িয়ে সেটা দেয়ালে আটকাতে আটকাতে বললো,
– মাতব্বরি করে যেন কেউ এটা কখনো পরিষ্কার করতে না আসে।
মলি জবাব দিলো,
– আচ্ছা।
কিন্তু তার চোখ সরছে না ফ্রেম থেকে! ভাবনার মাঝে কখনো কখনো মনে হচ্ছে ফরহাদ পাগল! না হলে কি কেউ আর সাদা একটা ফ্রেম এনে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখে! এটা আবার তৈলচিত্রের ভুত গল্পের মতো রুপার ফ্রেম নয়তো! কিন্তু সেটাতে তো নগেনের মামার ছবি ছিলো, আর এটাতে তো শুধু সাদা কাগজ! যাইহোক, নিষেধ যেহেতু করেছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকা যাক! শকড লাগলে আবার প্রাণ হারাতে হবে!
ফরহাদ সেটা আটকে দিয়ে একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে উপুড় করে ঢেলে দিলো। সাথে সাথেই বেরিয়ে এলো কতগুলো ছোট বড় বাক্স! সেগুলো রেখে ফরহাদ শার্ট খুলতে খুলতে বললো,
– ব্যাগে জুতা আছে, পড়ে দেখো সাইজ ঠিক আছে কি-না।
মলি হাত বাড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে দেখলো দুই জোড়া খুব সুন্দর ডিজাইনের জুতা! মলি পায়ে দিতেই মুখে ফুটে উঠলো হাসি! একবার ফরহাদের দিকে তাকিয়ে আবার জুতার দিকে তাকালো। সাইজ একদম পারফেক্ট! পছন্দও হয়েছে বেশ! কিন্তু সে তো সারাজীবন সস্তা স্লিপার পড়েই অভ্যস্ত। এসব কি পড়তে পারবে!
মলির কোন জবাব না পেয়ে ফরহাদ নিজেই ফিরে তাকিয়ে দেখলো জুতার সাইজ ঠিক আছে। আর মলি দুই জোড়া থেকে দু পায়ের জুতা পড়ে মুখে হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার পায়ের দিকে। ফরহাদের ঠোঁটের এক কোনে স্বল্প সময়ের জন্য হাসির রেখা ফুটে উঠলো। সেটা বিলীন করে ফরহাদ বললো,
– এতো দেখলে জুতায় আগুন ধরে যাবে!
মুহুর্তেই মলির মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেলো এবং সে দ্রুত জুতা খুলে ফেললো। ফরহাদ আলমারি খুলে দেখলো সামনেই মলির সালোয়ার কামিজ সেট! হাতে নিয়ে বললো,
– এটা এখানে কেন?
– সবসময় কি আর শাড়ি পড়ে থাকা যায়! রেখেছি, মাঝে মাঝে পড়া যাবে।
সাথে সাথেই ফরহাদ কামিজটা দুভাগ করে ফেললো! মলি হতবাক হয়ে গেছে তার কান্ডে! এটা কি করলো সে! একটা মাত্র জামা এনেছে তাও শেষ! এই মুহূর্তে ফরহাদকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে মলির! কিন্তু সাহস ও ইচ্ছেটা মনের ভেতরেই থেকে গেলো। বাইরে বেরিয়ে আসার কোন রাস্তা খুঁজে পেলো না!
ফরহাদ তা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। কোথায় ফেলে এসেছে জানা নেই মলির! মলিন মুখ নিয়ে ছোট বড় বাক্সগুলো খুলে দেখলো, ক্রিম, পাউডার, লোশনসহ কসমেটিকস এর সমাহার! কাজল লিপস্টিকও বাদ রাখেনি! মলি সব গুছিয়ে রাখলো ড্রেসিং টেবিলে।
আজও একই রকম গোসল হলো মলির। খাওয়াদাওয়াও ফরহাদের হাতে। নিজের হাত যে অকেজোই হয়ে আছে! সব সইলেও জ্বরের ওষুধটা পেটে সয় না! এতোক্ষণের খাওয়াদাওয়া সব ব্যর্থ! তবে এবার মলি রুম পরিষ্কার রেখে বাথরুমেই এসেছে বদহজমের জন্য!
রাতে ঘুমানোর সময় মলির ভেতরটা কেমন যেন ছটফট করছে! এদিকে ফরহাদের মুখও চিন্তিত! সে জানালার পাশে এসে দাড়িয়ে আছে। মলিকে এপাশ ওপাশ ফিরে ছটফট করতে দেখে সে পাশে এসে শুয়ে পড়লো। ফরহাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকার পর দেহ শান্ত থাকলেও মলির মনের ছটফট বন্ধ হচ্ছে না! কেন জানি খুব অশান্ত লাগছে ভেতরটা! এক পর্যায়ে চোখে ঘুম নেমে আসতে বাধ্য হয়েছে। মলির চোখে ঘুম নেমে এলেও ফরহাদের চোখে ঘুম নেই! মাথায় ঘুরছে টেনশন নামক চক্র আর দৃষ্টি অপলক তাকিয়ে আছে শান্ত মলির ঘুমন্ত মুখে! একপর্যায়ে সে মলিকে আস্তে আস্তে ডাকতে শুরু করলো। মলি ঘুমঘুম চোখে তাকাতেই ফরহাদ বললো,
– মলি উঠো। দু রাকাআত নফল নামাজ পড়ো।
মলি জেগে আছে না স্বপ্ন দেখছে কিছুই বুঝতে পারছে না! দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুটো বাজতে চলেছে। ফরহাদ কি ঠিক আছে, নাকি সত্যিই পাগল হয়ে গেছে! এই মধ্যরাতে উঠে নামাজ পড়তে বলছে কেন! মলি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফরহাদ উঠে বসে বললো,
– পারবে না বসে বসে নামাজ পড়তে? বসে পড়লে তো হাতে চাপ পড়বে না। এক হাতে ওযুও করতে পারবে। কবুল করার মালিক আল্লাহ।
ফরহাদের কথাবার্তা সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে মলির! ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফরহাদ বিছানা ছেড়ে নামতে নামতে বললো,
– পড়লে ওঠো। নামাজ পড়ে তোমার বাবার জন্য দোয়া করো।
বাবার কথা শুনতেই ভেতরটা ধুক করে উঠলো মলির! সে ঝটপট উঠে বসে বললো,
– কি হয়েছে বাবার?
ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে ফরহাদ পেছনে তাকিয়ে বললো,
– আংকেল যে অসুস্থ, ভুলে গেছো? মাঝরাতে নামাজ পড়ে দোয়া করলে নাকি তা কবুল হয়ে থাকে। আমার ইচ্ছে হলো তাই পড়বো ও বাবামায়ের জন্য দোয়া করবো। বাবা-মা তো তোমারও আছে, ইচ্ছে হলে পড়ো।
ফরহাদ ওযু করতে বাথরুমে চলে গেলো। মলি এখানেই বসে আছে, কিন্তু ঘুম তার বিলীন হয়ে গেছে। ফরহাদ বেরিয়ে এলে যেভাবে সম্ভব হয়েছে মলি ওযু করে দীর্ঘ সময় নিয়ে নফল নামাজ আদায় করলো ফরহাদের সাথে। বাবা-মা সহ পরিবারের সবার জন্যই দোয়া করলো। ফরহাদ আগেই নামাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর আবার রুমে এলো। মলি বন্ধ জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। গ্লাস লাগানো হলেও পর্দা সরানো। ভেতরে কেমন যেন অদ্ভুত ভয় কাজ করছে! কেন এমন লাগছে তার কোনো উপায় খুজে পাচ্ছে না। ফরহাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে মলি বললো,
– বাবামায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে। একটু কল করতে পারবো?
– তোমার কলের অপেক্ষায় নিশ্চয়ই তারা রাত জেগে নেই। এখন কল করলে বিরক্ত হতে পারে, কাল সকালে কথা বলো।
– আচ্ছা।
– এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? ঘুমাও।
মলি পর্দা টেনে চুপচাপ খাটে এসে শুয়ে পড়লো। চোখের পাতা লেগে আছে কিন্তু ঘুম নেমে আসছে না এবার চোখে। যদিও ফরহাদ কাছেই আছে! সে কি ঘুমিয়ে পড়েছে! তাকেও কেন জানি চিন্তিত লাগছিলো মলির কাছে। তবুও একবার চোখ খুলে তাকালো না ফরহাদের দিকে। বেশ কিছুক্ষণ পর কানে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি। আজান শেষ হতেই ফরহাদ উঠে পড়লো। একটু পর মলিও চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো ফরহাদ বাথরুমে। পরক্ষণে সে ও উঠে পূর্বের ন্যায় ফজরের নামাজ আদায় করলো। কেটে গেছে মলির অর্ধ ঘুমন্ত রাত আর ফরহাদের নির্ঘুম রাত!
সকাল সাতটার দিকে মলির হাতে ফোন দিলো ফরহাদ। ফরহাদ ভিডিও কল দিয়েছে মুহিতের ফোনে। মুহিত কোথায় আছে কিছু বুঝতে পারছে না মলি। শুধু জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে, মুহিত জানালো ভালো আছে। পরক্ষণেই তার মায়ের কাছে ফোন দিলো মুহিত। মলি জিজ্ঞেস করলো,
– কেমন আছো মা?
– আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছোস?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা কোথায় আছো?
– হাসপাতালে।
– হাসপাতালে কেন?
– তোর বাপের অপারেশন হইলো যে রাইতে।
– বাবার অপারেশন! কেমন আছে বাবা?
– ডাক্তার কইছে অপারেশন ঠিকঠাক মতো হইছে। ভালা হইয়া যাইবো। দেখবি তোর বাবারে?
– হ্যাঁ।
মলির মা ফোন নিয়ে গেলো তার বাবার সামনে। হসপিটালের বেডে ঘুমিয়ে আছে তার বাবা। ভেতরটা শান্তি লাগছে মলির কাছে। এ জন্যই হয়তো কাল থেকে ছটফট করছিলো তার মন! পরক্ষণেই মলি জিজ্ঞেস করলো,
– মা, ভাইয়া কি বেতন পাইছে?
– না। এইমাসে দিবো কিনা কেডা জানে!
– তাহলে অপারেশন হলো কিভাবে! টাকা কই পাইছো?
– ক্যান, তুই জানোস না? জামাই না কেমনে জানি টাকা পাঠাইলো মুহিতের কাছে! জামাই কইলো দেইখাই তো হাসপাতাল আনছি অপারেশন করতে। রাইতে কতবার কল দিয়া খোঁজ নিছে!
মলি ছলছল চোখে ফরহাদের দিকে তাকালো যে কিনা এখন সোফায় বসে আছে ফাইলে দৃষ্টি রেখে! মুহুর্তেই লাখো গুনে বেড়ে গেছে তার প্রতি মলির সম্মান! শুধু অজানা রয়ে গেছে একটা বিষয়, বিনা স্বার্থে কেন ফরহাদ এতো কিছু করছে তার জন্য! মুখ ফুটে জিজ্ঞাসাও করতে পারে না তার কারণ! থাকুক সেটা না হয় অজানা! ফরহাদ স্বেচ্ছায় জানাতে চাইলেই না হয় জানবে সেটা। এদিকে ভিডিও কল রেখেই মলি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে তার মালিক ও মহারাজের দিকে! এজন্যই তাহলে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মাঝরাতে নামাজ পড়িয়েছে! এজন্যই কি তাহলে তার মুখে চিন্তার ছাপ ভেসে উঠেছিলো! সারারাত ঘুমায়নি তো সে! মানুষটার মনটা তো একদিন কুৎসিত বলে আখ্যায়িত করছিলো মলি। কিন্তু আজ তো সেটা সম্পূর্ণই ভুল হয়ে সামনে উপস্থিত হয়েছে!
ওপাশে মলির মায়ের ডাকাডাকিতে মলির ধ্যান ভাঙলো। সে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দিলো। বিকেলে আবার কল করে কথা বলেছে তার বাবার সাথে। ফরহাদও বলেছে কিছুটা। দুদিন পর ফরহাদ তাকে রেডি হতে বললো ব্যান্ডেজ খুলতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে বলে। মলি ঝটপট রেডি হয়ে গেলো। জুতা পড়ে এক কদম এগিয়ে যেতেই পা মচকে পড়ে যেতে নিলো এবং ফরহাদকে ধরে ফেললো। ফরহাদ মুখে বিরক্তির ছাপ এনে বললো,
– আমারই ভুল! শুধু শুধু টাকা নষ্ট করে এই জুতা কিনতে গেলাম কেন! এটা তো একটুও খেয়াল ছিলো না, সে যে প্লাস্টিকের সেন্ডেলের উপযুক্ত!
মলি মুখটা মলিন করে ফেললো। অসাবধানতার সাথে পা ফেলতে গিয়ে এমনটা হয়েছে, তাই বলে এভাবে বলবে! মলি এবার ঠিকভাবে হাটার চেষ্টা করলো। তারপর বেরিয়ে গেলো ফরহাদের সাথে। ব্যান্ডেজ খোলার পর হাত ধবধবে সাদা দেখাচ্ছে কিন্তু চামড়া কেমন যেন হয়ে গেছে! যেটা একটুও পছন্দ হচ্ছে না মলির। সেদিনটার কথা মনে হলে এখনো মলির গায়ে কাটা দিয়ে ওঠে আর মনে মনে বকে জেনিফা জেরিনকে।
👇
👇
👇
👇
😁
“মালিনী”
পর্ব- ২০
(নূর নাফিসা)
.
.
বারো-তেরো দিন পাড় হতেই ফরহাদ মহিলাকে তার পাওনা পরিশোধ করে কাজের অব্যাহতি দিয়ে বিদায় করলো। এখন থেকে মলি নিজেই সামলাবে তার সংসার। কেননা সে এখন যথেষ্ট সুস্থ। তবুও ফরহাদ হ্যান্ড গ্লাভস এনে দিয়েছে কাজ করার আগে পড়ে নেওয়ার জন্য। আজ সকাল থেকে সকল কর্মই মলির হাতে সম্পাদিত হচ্ছে। সবই ভালো লাগছে কিন্তু ফরহাদ বাইরে থাকাকালীন ফাকা বাড়িতে ভয়ে ভয়ে সময় কাটছিলো। বিকেলের প্রথমভাগে ফরহাদ বাড়িতে ফিরেছে সাথে ব্যাগ ভর্তি বাজার! মলি সেগুলো নিয়ে গেলো কিচেনে। সবজিগুলো ফ্রিজে তুলে রাখলো, মাছের প্যাকেট খুলে দেখলো কেটেই এনেছে মাছ। কিন্তু তেমন নিখুঁতভাবে কাজ হয়নি। গ্লাভস পড়ে কি সব কাজ করা যায়! সকালে রান্না করেই বিরক্ত হয়ে গেছে গ্লাভসের উপর! এখন সে গ্লাভস রেখেই কাজ করছে। মাছগুলো ভালোভাবে আশ ছাড়িয়ে কাটলো এবং সেগুলো ধুয়ে ফ্রিজে রেখে দিলো। এর মাঝে ফরহাদ এসেছিলো একবার কিচেনে। মলিকে কাজ করতে দেখে কিছু না বলেই আবার চলে গেছে। ফরহাদের গোসল হয়েছে কিনা দেখতে এলো সে। ফরহাদ খাটের মাঝামাঝি বালিশ ছাড়া শুয়ে আছে হাতে মোবাইল নিয়ে। এখনো গোসল করেনি কেন সে! মলি জিজ্ঞেস করলো,
– গোসল করবেন না?
ফরহাদ শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বললো,
– গোসল করার জন্যই তো বসে আছি। এতোক্ষণ লাগে মাছগুলো রাখতে!
– আমি গোসল করেছি তো দুপুরে।
– দেখে তো মনে হয় না!
ফরহাদ মলির কাছে এসে আধ ভেজা চুলের খোপা খুলে দিলো। পরক্ষণে গলায় মুখ লুকাতেই এক হাত দূরে সরে এলো ফরহাদ! নাক ছিটকে বললো,
– ছি! মাছ ধুয়ে এসেছে নাকি মাছের পানিতে গোসল করে এসেছে কে জানে! সারা শরীরে লেগে আছে মাছের গন্ধ! কোনো পেত্নীর জায়গা হবে না ঘরে!
– আমি তো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে এসেছি!
– তাহলে শরীরে মাছের গন্ধ লেগে আছে কেন! এই মুহূর্তে গোসল সেড়ে আসো। যাও!
মলি নিজের হাত শুকতে শুকতে জামাকাপড় নিয়ে আবার বাথরুমে গেলো। কই সে তো তার শরীরে কোন মাছের গন্ধ পাচ্ছে না! সাবান দিয়ে হাত ধুয়ায় সাবানের গন্ধ লেগে আছে হাতে। সে বাথরুমে আসার সাথে সাথেই ফরহাদ এসে পড়লো!
এই বিকেলের ঘন্টাখানেক সময় গোসলেই পাড় করলো। আসরের আযান পড়ে গেছে। ফরহাদ ওযু করে এলে মলিও ওযু করতে গেলো এবং উভয়ই নামাজ আদায় করে নিলো। ফরহাদের সাথে এখানে থাকতে থাকতে মলির পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার অভ্যাসটা হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। বাসায় থাকতে কাজের চাপে নামাজ মিস হয়ে যেতো তার। কিন্তু সেই অভ্যেস পাল্টে যাচ্ছে। দুপুরের খাবার খাওয়া হলো তাদের শেষ বিকেলে। খাবারের পরপরই ফরহাদ কফি চাইলো। মলি কফি এনে দিলো ফরহাদকে। বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড়চোপড় মলি রুমে এনে গুছাতে লাগলো। কারো ফোন আসতেই ফরহাদ নিশ্চুপ হয়ে ওপাশে থাকা ব্যক্তির কথা শুনতে লাগলো। কল কাটতেই ফরহাদ বিড়বিড় করতে লাগলো,
– আমার উপার্জন আছে, আর কারো যেন উপার্জন নেই। এদিকে নিজের সংসারও সামলাবো আবার তাদেরকেও দেখতে হবে আমার! টাকা কি গাছ থেকে পড়ে! উড়ে এসে সব আমার ঘাড়েই কেন জুড়ে বসে থাকে টাকার জন্য!
কথাটা তীরের মতো বিধলো মলির বুকে! ফরহাদ কাকে বলছে এসব! সে তাকিয়ে দেখলো ফরহাদের হাতে ফফি। তাহলে কি কথাগুলো তাকেই বললো! সে তো কিছু চায়নি, ফরহাদ স্বেচ্ছায়ই বাবার অপারেশনের টাকা দিয়েছে, তাকে পোশাকাদি এনে দিয়েছে। তাহলে এখন আবার খোটা দিচ্ছে কেন! কষ্টটা মলির মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো,
– আমি কি টাকার জন্য আপনার ঘাড়ে জুড়ে বসেছি! নাকি বিয়ে করে আপনিই এনেছেন এখানে! আমি কি কখনো টাকা চেয়েছিলাম আপনার কাছে? নাকি আপনি নিজেই আমার জন্য খরচ করেছেন এতো টাকা! এখানে রেখে রেখে খাওয়াচ্ছেন পড়াচ্ছেন আবার খোটা দিচ্ছেন কেন! আমি তো ইচ্ছে করে আসিনি!
এই মুহূর্তে মলির মুখে এসব কথা শুনে ফরহাদের মেজাজ গরম হয়ে গেলো! যখন কথা বলা প্রয়োজন তখন কিছু বলে না আর এখন হুট করেই কি থেকে কি বলে ফেললো! ফরহাদ ধমকের সুরে বললো,
– বের হ! এই মুহূর্তে বের হ আমার বাড়ি থেকে! আল্লাহ, তোর মতো গণ্ডমূর্খ কেন রাখলো আমার ভাগ্যে! যা বের হ!
মলির দুচোখে ঝড়ছে অশ্রু। ফরহাদের ধমকে ভয়ে কেপে উঠেছে সে!
“চলেই যাবো আমি থাকবো না কারো খোটা শুনার জন্য! কে চায় কারো মুখ থেকে এমন ঝাঝালো কথা শুনতে! ভাগ্যে যে দুর্গতি লেখা আছে তা তো জানিই। এর পরেও বেহায়ার মতো সুখ খুজি!”
চোখের জল ফেলতে ফেলতে ও বিড়বিড় করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে! ফ্ল্যাটের মেইন দরজার কাছে এসে আর সাহস হচ্ছে না বেরিয়ে যাওয়ার! কিন্তু থাকবেই কোন স্বার্থে, ফরহাদ যে নিজেই বললো তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে!
ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে মলির! তবুও দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। খুব কান্না পাচ্ছে তার, কোথায় যাবে এখন! এখানকার কিছুই তো চিনে না সে! অবশেষে কি রাস্তায়ই কাটবে তার দিন! ভাবতে ভাবতে দুই ধাপ সিড়ি অতিক্রম করতেই হাতে টান পড়লো! ঘুরে তাকানোর আর সুযোগ নেই! ফরহাদ টানতে টানতে আবার ফ্ল্যাটে নিয়ে এলো। দরজা লক করে একটানে মলির শাড়ি খুলে ফেললো! মলি পুরো স্তব্ধ! শাড়ি খুলে নিয়ে রুমে যেতে যেতে ফরহাদ বললো,
– না জেনে না বুঝে দু’লাইন বেশি বুঝে যায় এমন মেয়ে মানুষ একদমই দেখতে পারিনা! ফোনে যে কথা বলছিলাম সেটা কি চোখে পড়েনি! যেদিকে ইচ্ছে, যেখানে খুশি চলে যা। আমার কোনো জিনিস সাথে নিতে পারবি না।
এতোক্ষণে মলির মাথায় হোচট খেলো ফরহাদ তাহলে অন্যকাউকে বলেছে সেসব! কিন্তু, এটা কি করে করতে পারলো ! একদিকে দরজায় লক লাগিয়ে দিলো অন্যদিকে শাড়ি নিয়ে গেলো! এটা কি যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে গেলো সে! এ অবস্থায় বেরিয়ে যাবে! যেতে দেবে না সেটা মুখে নিষেধ না করলেই নয় কি! ভাগ্যিস, আন্টিটা আজ বাসায় নেই! ছি! নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে! মলি তাড়াতাড়ি রুমে এসে খাটে কম্বলের নিচে চলে গেলো। শাড়ি আর নিবে কিভাবে! ফরহাদ আলমারিতে ঘাটাঘাটি করছে! চোখমুখ মুছে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো মলি। কিন্তু বিড়বিড় আর বন্ধ হয় না! যেটা ফরহাদের কান পর্যন্ত চলে গেছে।
“এভাবে ইঙ্গিত করার কি আছে! এটা বললেই হতো অন্যজনের কথা বলছে! একজনের রাগ এনে অন্যজনের উপর ঝাড়ে! মানুষের মন আর বুঝে না কেউ! সবাই আঘাত করতে প্রস্তুত!”
মলি চোখ বন্ধ করে আছে তবুও যেন স্রোত মানছে না কোনো বাধা! অনবরত ঝরছে অশ্রু! দুমিনিট পরেই ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পড়লো পেটে! আস্তে আস্তে মলির গা ঘেঁষে কম্বলের নিচে চলে গেছে ফরহাদ। মলি আবার বিড়বিড় করছে “এতোক্ষণ শাড়ি কেড়ে নিয়ে এখন ফিরিয়ে দিতে এসেছে! কই দিচ্ছেনা কেন! আমি তো রাগ করিনি কারো উপর। সেই সাহস ও অধিকার কি আছে আমার!”
এদিকে ফরহাদ কোনো জবাব না দিয়ে আস্তে আস্তে আরও জড়ো হয়ে যাচ্ছে! মলির লজ্জা লাগছে খুব! চোখ বন্ধ রেখেই হাত বাড়িয়ে ফরহাদের দিকে শাড়ি খুজতে লাগলো। শাড়ির গোষ্ঠীও পেলো না খুজে! উল্টো উপলব্ধি করলো ফরহাদের দেহের টিশার্টও গায়েব! অসময়কে সময় বানিয়ে নিতে যেন লোকটা সর্বদা প্রস্তুত থাকে! সেই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তার মালিনীও তার বাধ্য হয়ে থাকতে সর্বদা প্রস্তুত!
কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই মলির সব অনুরাগ বিলীন করে উঠে পড়লো ফরহাদ। মলি কম্বল আঁকড়ে ধরে উঠে বসলো। ফরহাদ আলমারি থেকে শাড়ি নিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে রাখলো আর নিজে পড়ার জন্য টিশার্ট নির্বাচন করতে লাগলো। মলি বললো,
– শাড়ি দিবেন না?
– নিতে নিষেধ করলো কে!
মলি কম্বল পেচিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফরহাদের কাছে এলো শাড়ি নিতে। ফরহাদ মলির এতো লজ্জা দেখে দুষ্টুমি হাসি ফুটিয়ে তুললো ঠোঁটের কোনায়। মলি তার মুখে হাসি দেখে আরও পিছিয়ে গেলো। ফরহাদ টিশার্ট রেখে মলির কাছে এগিয়ে গেলো এবং কম্বলটা কেড়ে নিয়ে খাটে ছুড়ে মারলো। অত:পর নিজ হাতে শাড়ি পড়িয়ে দিলো মিসেস মলি ফরহাদকে! শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই লজ্জামাখা চেহারায় একখানা চুম্বন করে নিজের দেহে টিশার্ট চাপালো। মলি দেহে মাখা লজ্জিত পরশ নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো কিচেনের উদ্দেশ্যে।
সকালের শুরুটা হলো প্রিয় মানুষটার হাতপায়ের বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ রেখে!
চোখের পাতা ফাক করতেই দৃষ্টিতে উপস্থিত মহারাজের ঘুমন্ত মুখখানা!
এলোমেলো চুলে, গম্ভীরমুখে দারুণ লাগছে তার সেই বাগানের মালিককে যেখানে নিয়োজিত ছিলো সে এক মালিনী হিসেবে!
বিনা পূর্বাভাসে হুট করেই করে নিয়েছে আপন,
আজও অজানাই রয়ে গেছে তার কারণ!
মনে গভীর অনুভূতি নিয়ে, হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করলো মলি সেই ঘুমন্ত মুখখানা।
চক্ষু পাতা থেকে শুরু হয়ে নাকের ডগা, অত:পর চিবুকের নিচ থেকে ওষ্ঠের উপর!
ওষ্ঠের দু কোনে দু আঙুলে টেনে, প্রশস্ত করে ফুটিয়ে তুললো গম্ভীর মুখে কৃত্রিম হাসি।
উৎফুল্ল হয়ে এবার মালিনী, হাত বাড়িয়ে দিলো মাথার দিকে!
এলোমেলো চুলগুলো খুব সাবধানে আরও এলোমেলো করে খেলতে লাগলো মজার খেলা!
যে খেলায় না আছে তৃপ্তি আর না আছে সমাপ্তি,
না জানি চক্ষু খুলে ফেলে, তা নিয়ে আছে শুধুই সংশয়!
ফরহাদের কাধে তার হাত রেখে পরিমাপ করে নিলো দেহের উজ্জ্বলতা! ফরহাদ তার থেকে আরও তিন ধাপ বেশি উজ্জ্বল! সবাই খুঁজে নিজের চেয়ে আরও বেশি ফর্সা সঙ্গীনী কিন্তু তিনি উল্টো পথে কেন এগিয়ে গেলেন! সাধারণত সামাজিক নিয়মে যেটা দেখা যায়, ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ফর্সা হতেই হবে! ছেলেরা লম্বা ও মেয়েরা খাটো হবে তাহলেই কেবল মেনে নেওয়া যায় তারা একে অপরের জন্য উপযুক্ত! উচ্চতা না হয় ঠিক আছে কিন্তু উজ্জ্বলতা তো অনেক নিম্ন! তবুও ফরহাদ এই মালিনীর উপর কেন আসক্ত হলো!
মলি ভাবনায় বিলীন হলেও ফরহাদ সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতে দিলো না! ঘুম ভেঙে গেছে তার! মলির দৃষ্টি তার ঘুমঘুম চোখে পড়ে গেছে। যতদ্রুত সম্ভব হয়েছে সে দৃষ্টি নিচু করে ফেলেছে সেই নেশাগ্রস্ত দৃষ্টি থেকে। ফরহাদের হাত ছাড়িয়ে এবার নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে গেলে ফরহাদ যতটা সম্ভব শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
– এতো সাহস আসে কোথা থেকে আমার চুল নিয়ে খেলার! এখন কঠিন শাস্তি পেতে হবে!
মলির কোনোরকম প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা করেনি ফরহাদ! সাথে সাথেই দিয়ে দিয়েছে তার কঠিন শাস্তি! যেটাতে ছিলো না কোন ব্যথা আর ছিলো না কোনো দুখ! ছিলো শুধুই মধুমাখা অনুভব আর অপরিচিত সুখ!
পিছুটান, সব পর্বের লিংক https://www.facebook.com/134546008438296/posts/313685820524313/?app=#