#”মালিনী”পর্ব- ২৮+২৯

0
584

#”মালিনী”পর্ব- ২৮+২৯

(নূর নাফিসা)
.
.
পরদিন সকালে আন্টি এসে কাপড়চোপড় ধুয়ে দিয়েছে। ফরহাদ নিজেই নাস্তা তৈরি করেছে। অত:পর রেডি হয়ে অফিস চলে গেছে। আন্টির তাড়া আছে তবুও কিছু সময় থাকতে বললো ফরহাদ। অফিসে এসে তার জরুরি কাজকর্ম শেষ করে বাকিটা ম্যানেজারের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে ঘন্টা দু-এক পরেই বাসায় ফিরে এসেছে এবং আন্টি চলে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে নিজের হাতেই কফি বানিয়ে রুমে হেটে হেটে খাচ্ছে। এদিকে বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে আর মলি জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে। হটাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। ফরহাদ ব্রু কুচকে একটু শব্দের দিকে মনযোগ দিলো। এসময় কে এলো! অত:পর কফির কাপ টেবিলে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ফ্ল্যাটের মেইন দরজা খুলতেই চরম অবাক! নেয়ামত উল্লাহ তাকে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো পিছু পিছু ফারদিন ও জেরিন! কারো কোনো কথা নেই! ফরহাদ হতবাক হয়ে দরজার পাশেই দাড়িয়ে আছে! যেন দুদকের মতো তারা তদন্ত করতে ঘরে প্রবেশ করেছে! যেখানে নেয়ামত উল্লাহ লিডার আর বাকি দুজন তার সহকর্মী! নেয়ামত উল্লাহ প্রথমে ড্রয়িং রুমে উঁকি দিলেন। কাউকে না দেখতে পেয়ে আবার বেডরুমের দিকে এলো। দরজা খোলাই ছিলো আর তারা হুড়হুড় করে ঢুকে পড়লো। ফরহাদও দ্রুত পায়ে রুমে এলো। মলি পেছনে ফিরে তাদের দেখে চমকে উঠলো! অত:পর ফরহাদের দিকে তাকালো! নেয়ামত উল্লাহ বললেন,
– ফারদিন, জেরিন! বাচ্চাদের কাপড়চোপড় গুছিয়ে তারাতাড়ি উঠিয়ে নাও। আমার বংশের প্রদীপ নিয়ে আমি চলে যাবো।
জেরিন বললো,
– জ্বি, বাবা।
আলমারির উপর লাগেজ ও কাপড়ের ব্যাগ রাখা ছিলো। ফারদিন কাপড়ের ব্যাগ নামিয়ে দিলো আর জেরিন বাচ্চাদের কাপড়চোপড় ব্যাগে গোছাতে লাগলো। ফারদিন বাচ্চাদের দোলনাসহ বাকি আসবাব ভাজ করে গুছাতে লাগলো। মলি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে, চোখ তার ছলছল করছে। এদিকে ফরহাদ বলতে লাগলো,
– কি করছো এসব! কি শুরু করেছো! এগুলো গুছিয়ে নিচ্ছো কেন, ভাইয়া!
তার কথায় কারো সাড়া নেই। নেয়ামত উল্লাহ খাটের পাশে দাড়িয়ে বাচ্চাদের ঘুমন্ত মুখে তাকিয়ে আছে। তারা গোছগাছ করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে সব গাড়িতে তুলে এলো। ফরহাদ ফারদিনের পিছু পিছু যাচ্ছে আর তাকে বাধা দিচ্ছে কিন্তু কিছুই শুনছে না ফারদিন। অত:পর ফারদিন ও জেরিন দুজন দুই বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো। নড়াচড়া পেয়ে বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে গেছে আর তারা কান্না শুরু করেছে। ফরহাদ পিছু পিছু বলছে,
– এসব কি করছো তোমরা! ওরা কাদছে দেখছো না! আমার কাছে দাও!
তারা বেরিয়ে গেলো আর নেয়ামত উল্লাহ ফরহাদকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– আমার বংশের প্রদীপ আমার বাড়িতে থাকবে। অন্যকারো জায়গা হবে না! বাকিরা দূরেই থাকুক!
অত:পর ফ্ল্যাটের মেইন দরজা চাপিয়ে তিনি বেরিয়ে গেলেন। ফরহাদ স্থির হয়ে এখানেই দাড়িয়ে আছে! কেন জানি সে বাবার কথার উপর কোনো কথা বলতে পারলো না! সেই ছোট থেকে শিক্ষা পেয়ে এসেছে হয়তো সেজন্যই! কিন্তু ভেতরটা যে ফেটে যাচ্ছে! থাকবে কিভাবে এইটুকু বয়সের নিজ সন্তানদের ছাড়া! তার সন্তানরাই বা কিভাবে থাকতে পারবে বাবা-মা ছাড়া! মলি রুমের দরজার পাশে দাড়িয়ে ছিলো। ফরহাদ রুমের দিকে এগোতে লাগলে মলি কাদতে কাদতে তার শার্ট খামচে ধরে বললো,
– বাবুদের নিয়ে গেলো কেন তারা! আপনি আটকাতে পারলেন না! থাকবো কিভাবে ওদের ছাড়া! ওরা কাদছে তো, থামাতে পারবে না কেউ! নিয়ে আসুন না!
ফরহাদ তার হাত ছাড়িয়ে রুমে এসে ধপাস করে খাটে বসে পড়লো। হাটুতে কনুই ভর করে দু’হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে! নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে! কেন পারলো না আটকাতে! চোখের সামনে নিজের সন্তানদের কিভাবে নিয়ে চলে গেলো!
মলি ফরহাদকে এভাবে বসে থাকতে দেখে দ্রুত পায়ে জানালার পাশে এসে দাড়ালো। দেখলো তারা বাচ্চাদের নিয়ে গাড়িতে উঠে পড়েছে। উপর থেকে আওয়াজ শুনা যাচ্ছে না কিন্তু তার মনে হচ্ছে বাচ্চারা খুব কান্না করছে! ইচ্ছে করছে এখান থেকে লাফ দিয়ে ছো মেরে তাদের নিয়ে আসতে!
তিন-চার মিনিট অতিবাহিত হতেই ফরহাদের কানে ভেসে এলো গাড়ির ঘনঘন হর্নের শব্দ! ফরহাদ চমকে উঠে জানালার পাশে এলো। তাকিয়ে দেখলো গাড়িটা নিচেই আছে! সে মলিকে জিজ্ঞেস করলো,
– গাড়ি কি এতোক্ষণ এখানেই ছিলো?
মলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। ফরহাদ আবার বললো,
– এখান থেকে চলে যায়নি তখন?
মলি মাথা নেড়ে “না” জবাব দিলো। ফরহাদ এবার রেগে গিয়ে বললো,
– মাথামোটা একটা! গাড়ি যে যায়নি সেটা আমাকে বলবি না এতোক্ষণ! থাক তুই এখানে পড়ে! আমি গেলাম!
মলি না বুঝলেও ফরহাদ বুঝে গেছে তাদের জন্যই অপেক্ষা করছে গাড়ি। তারা নিচে যায়নি বলে ঘনঘন হর্ন বাজিয়ে তাদেরকেই ডাকছে। ফরহাদ দ্রুত লাগেজ নামিয়ে নিলো আলমারির উপর থেকে। অত:পর আলমারি খুলে সামনে যা কাপড়চোপড় ছিলো মলির জামাকাপড়সহ সবটা লাগেজে ভরতে লাগলো। লাগেজ ভরে গেলে আর নিলো না। লাগেজ আটকে দিলো। কিছু টাকা ছিলো তার সবটা নিজের ওয়ালেটে নিয়ে নিলো। আর ওদিকে হর্ন বেজেই চলেছে! একহাতে লাগেজ টেনে অন্যহাতে মাথার চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বেরিয়ে গেলো ফরহাদ। মলি দ্রুত পায়ে তার পিছু পিছু ফ্ল্যাটের দরজার সামনে এসে থেমে গেলো। পেছন থেকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জোর গলায় বললো,
– আমাকে রেখে আপনারা সবাই চলে যাচ্ছেন কেন এভাবে! আমি একা একা কিভাবে থাকবো এখানে!
ফরহাদ কোনো জবাব দিলো না। মলি অসুস্থ হওয়ায় আর এগিয়ে যাওয়ার সাহস পেলো না! দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে কাদতে লাগলো। এগিয়ে গেলেই কি হবে! কোথায় যাবে সে! তারা তো তাকে নিলো না! পরক্ষণেই দেখলো ফরহাদ দৌড়ে উপরে উঠছে সিড়ি দিয়ে। তা দেখে মলির কান্না থেমে গেলো। ফরহাদ দ্রুত রুমে এসে জানালার গ্লাস আটকে দিয়ে রুমের দরজায় তালা লাগিয়ে দিলো। কাজগুলো এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে যা মলির বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। ফরহাদ কিচেনে এসে একটু চেক করে অত:পর মলির হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ফ্ল্যাটের বাইরে। মেইন দরজা লক করে মলিকে কোলে তুলে নিলো। মলি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ফরহাদের মুখের দিকে। ফরহাদ সাবধানে সিড়ির ধাপগুলো পাড় হয়ে মলিকে নামিয়ে দিয়ে বললো,
– আস্তে আস্তে হেটে যাও গাড়ির কাছে।
হয়েছে আর আস্তে হাটা! বাচ্চাদের এতো অস্থির কান্নার আওয়াজ শুনে সে যতটা সম্ভব দ্রুত হেটেই গাড়ির কাছে চলে এলো। ফরহাদ গাড়ির দরজা খুলে মলিকে বসতে বললো। মলি বসতেই তাকে ঠেলে চাপিয়ে ফরহাদও বসে পড়লো মলির পাশে। জেরিন ওপাশে আগেই চেপে বসে ছিলো। দুজনের সিটে এখন তারা তিনজন বসে আছে। সবটা গুছিয়ে গাড়িতে তুলতেই ফারদিন গাড়ি স্টার্ট দিলো। জেরিনের কোলে একজন কান্না করছে আর অন্যজন নেয়ামত উল্লাহর কোলে! দুজনেই থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কাউকেই থামাতে পারছে না। মলি জেরিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো, জেরিন একবার মলির মুখের দিকে তাকিয়ে ছোটখাটো একটা নিশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে দিলো ছেলে বাবুটাকে। কান্নার বেগ দেখে বুঝতে পারছে তারা সেই তখন থেকে যে কান্না করছে এখনো থামেনি! মলি কোলে নিয়ে মুখে, মাথায় চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলো। এবার কান্না থেমে গেছে ছেলে বাবুটার। কিন্তু ওদিকে যে মেয়েটা কান্না করছে! মলি অসহায় দৃষ্টিতে ফরহাদের দিকে তাকালো। কিন্তু ফরহাদ যে বাবাকে কিছু বলতে পারছে না। আগে যা কথাবার্তা হতো তা তো সব মায়ের দ্বারা পরোক্ষভাবে! কিন্তু এখন বাচ্চার কান্না সহ্য করতে না পেরে বললো,
– ভাইয়া গাড়ি থামাও।
ফারদিন গাড়ি রাস্তার একপাশে থামাতেই ফরহাদ গাড়ি থেকে নেমে সামনের সিটের দরজা খুললো। হাত বাড়িয়ে তার বাবার কোল থেকে মেয়েকে নিতে গেলো কিন্তু তার বাবা এগিয়ে দিলো না, উল্টো নিজের সাথে আরও জড়ো করে রেখেছে। ফরহাদ অবাক হয়ে নিচু স্বরে বললো,
“বাবা!”
নেয়ামত উল্লাহ এবার ছেলের দিকে তাকালেন। ফরহাদ দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে বললো,
– কাদছে তো, পারবে না তুমি শান্ত করতে।
তবুও দিচ্ছেন না তিনি। ফরহাদ আবার দৃষ্টি উপরে তুলে ঢোক গিলে বললো,
– বাবা, আমার কাছে দাও।
এবার নেয়ামত উল্লাহ বাচ্চাকে তুলে দিলো ফরহাদের কোলে। বহুদিন পর আজ প্রত্যক্ষভাবে ডাকলো “বাবা” বলে। কথাও বললো, তাও শুধুমাত্র নিজ সন্তানের জন্য। ক’দিন হয়েছে সে বাবার আসনে বসেছে, এখনই সহ্য হয়না সন্তানকে কাদতে দেখে। সেই ভেবে নেয়ামত উল্লাহ এক বড়সড় নিশ্বাস ছাড়লো। ফরহাদ তার মেয়েকে নিয়ে আবার পেছনের সিটে চলে এলো। গাড়ি ছুটে চলেছে চিটাগং-ঢাকার রাস্তায়। এদিকে ফরহাদ আদুরে গলায় বাবা ডাকসহ আরও নানান কথায় মেয়েকে শান্ত করতে ব্যস্ত। যা পৌছে যাচ্ছে সবার কান পর্যন্ত। আর তার বাবা তো তার বরাবরই সামনের সিটে বসা। ফারদিন ড্রাইভ করতে করতে নেয়ামত উল্লাহর মুখের দিকে তাকালো। সে তার বাবার মুখে প্রশান্তির মৃদু হাসির রেখা দেখতে পেয়েছে। বুঝতে বাকি নেই সেটা, পেছনে বসে থাকা ফরহাদের আদুরে গলা শুনেই যে তার বাবার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। বাবার মুখে প্রশান্তির হাসি দেখে তার মুখেও ফুটে উঠেছে হাসির রেখা। অত:পর আবার ড্রাইভিংয়ে মনযোগ দিলো ফারদিন।
এদিকে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চুমু দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে ছেলেকে জড়িয়ে রেখেছে মলি। দুজনেই শান্ত হয়ে পরম আবেশে মিশে আছে বাবা-মায়ের বুকে। এতোক্ষণ কান্না করে যেন অস্থির হয়ে গেছে! উভয়ে শান্ত হতেই মলি একহাতে তার চোখের পানি মুছে নিলো। জেরিন পলকহীন তাকিয়ে দেখছে তার পাশে বসে থাকা একক পরিবারকে। সবচেয়ে বেশি নজর কেড়ে নিচ্ছে মলির চেহারা। ভেসে আছে সমুদ্র সমতুল্য মায়া ও ভুবনে উপস্থিত সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা। ফুটে আছে তার মাঝে মাতৃত্বের ছায়া। কিভাবে সন্তানকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে! কেউ বলবেই না একসময় সে বাগানের মালিনী ছিলো! সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে তার দৈহিক সৌন্দর্য। আজ প্রথম লক্ষ্য করলো মলির চেহারাও যেন অনেকটা ফারদিন ও ফরহাদের মতো। চাচাতো ভাইবোন হলে রক্তের মিল থাকতে পারে, তাই বলে চেহারারও এতো মিল হয়! না, একটুও বেমানান নয় ফরহাদের সাথে। একবারেই পারফেক্ট জুটি। আগের মালিনী হলে একটুও মানাতো না। কিন্তু এখন বেশ মানাচ্ছে তাকে।
মলি একবার তাকিয়েছে জেরিনের দিকে। পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজেই দৃষ্টি সরিয়ে এনেছে। এভাবে তাকিয়ে আছে কেন বুঝতে পারছে না। তবুও সেদিকে তোয়াক্কা করলো না।
ফরহাদ এতোক্ষণে খেয়াল করলো এটা তাদের গাড়ি! “তারমানে ঢাকা থেকে তারা এই গাড়িতে করে এসেছে। এখন সময় সাড়ে এগারোটা। তারা এসেছে এগারোটার দিকে! গাড়িতে এখানে আসতেও তো সাত-আট ঘন্টা বা তার অধিক সময় লাগবে! তাহলে কি তারা রাত দুটো বা তিনটার দিকে রওনা দিয়েছে বাসা থেকে! কিন্তু তারা জানলো কিভাবে! নিশ্চয়ই মা জানিয়েছে! কিন্তু বাবা ই বা কিছু বললো না কেন! সোজা বাসায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত! বাকিটা কি হয় কে জানে!”
গাড়ির ভেতরের পরিবেশটা খুব নিরব। বিরতিহীন ছুটে চলেছে গাড়ি। ফরহাদ তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাবুটা টগবগিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে। বাইরে থেকে তীব্র গতিতে বাতাস আসছে, যার সাথে ধুলাবালিও আসছে একটু আধটু। বাতাস ও ধুলাবালিতে বাচ্চাদের অসুবিধা হতে পারে। তাই গ্লাস লাগিয়ে দিলো ফরহাদ। এপাশের গ্লাস লাগাতে দেখে জেরিন ওপাশেরটাও লাগিয়ে দিলো। ফরহাদ আবার মলির কোলে ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা তার হাতদুটো মুঠো করে নাড়াচ্ছে আর তাকিয়ে আছে ফরহাদের মুখের দিকেই! ফরহাদ মুচকি হাসলো তার ছেলেকে এভাবে ঘনঘন পলক ফেলে তাকাতে দেখে। তার মনে হচ্ছে ছেলেটাও তার কোলেই আসতে চাইছে। তাই নিজেকে আর দমিয়ে না রেখে এক কোলে মেয়েকে নিয়ে হাত বাড়িয়ে মলির কাছ থেকে অন্য কোলে ছেলেকেও নিয়ে নিলো। মলি তার দিকে তাকিয়েছে কিন্তু কিছু বলতে পারলো না। তার এই অভ্যাস মলির মোটেও পছন্দ না! মাঝে মাঝে হলে মানা যায় কিন্তু সবসময় একই কান্ড ঘটালে কে মানবে! দুজনকেই একসাথে কোলে নিয়ে বসে থাকে! আরও কারো যে ইচ্ছে হয় সেটার কোনো মূল্য নেই! উভয়ে এখন তার কোলে হিসু কিংবা হাগু করে দিলে মলির চেয়ে বেশি খুশি কেউ হতো না! কিন্তু আফসোস, বের হওয়ার আগে জেরিন তাদের পাম্পাস পড়িয়ে এনেছে!
“মালিনী”
পর্ব- ২৯
(নূর নাফিসা)
.
.
মলি বাচ্চাদের হাত পা ধরে দেখলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। সাথে ছোট কাথা আছে তবুও বাচ্চাদের কম্বল কিংবা মোটা কাথার প্রয়োজন। তাই পেছনে তাকিয়ে ব্যাগ খুজলো। হ্যাঁ, তার পেছনেই রাখা আছে ব্যাগ। মলি একটু পেছনে ঘুরার চেষ্টা করতেই ফরহাদ বললো,
– কি খোঁজো?
– কাথা নিবো, তাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
– তুমি পারবে না, আমি নিয়ে দিচ্ছি। ধরো ওদের।
মলি হাত বাড়িয়ে তাদের নিতে গেলে জেরিন বললো,
– দাড়াও, আমি নিয়ে দিচ্ছি।
বলতে বলতে সে-ই উঠে ব্যাগ থেকে কাথা বের করলো। মলিকে জিজ্ঞেস করলো,
– আরও কিছু লাগবে?
– না।
একটু পরেই ফারদিনের ফোন বেজে উঠলো। জিহান কল করেছে, ফারদিন ড্রাইভ করছে তাই পেছনে জেরিনের কাছে দিয়ে দিলো। জেরিন বললো,
– হ্যাঁ, আব্বু বল।
– তোমরা কখন আসবে? বাবুদের নিয়ে আসছো না কেন!
– আসছি তো বাবুদের নিয়ে। অনেক দূর তো, তাই সময় লাগবে।
– বাবু তোমার কোলে?
– না, বাবুরা তোমার চাচ্চুর কোলে।
– বাবুর কাছে দাও, আমি কথা বলবো।
– বাবুরা তো কথা শেখেনি এখনো। আগে বড় হোক, পরে কথা বলো।
– কেন, চাচ্চু কথা শেখায়নি!
– বাবুরা তো ছোট, তারা এখন শিখবে না।
– ও, বড় কবে হবে?
– অনেক দিন পর। আর সেটা তো তুমি দেখবেই, এখন এতো কিছু জিজ্ঞেস করলে তো আমাদের ফিরতে আরও লেট হবে।
– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি এসো। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করছি না।
– ওকে। খেয়েছো তুমি?
– হ্যাঁ।
– দাদুর সাথে চুপচাপ থাকো। দুষ্টুমি করবে না।
– ওকে।
জেরিন কল কেটে দিলো। দুপুরের খাবারদাবার তাদের গাড়িতেই চললো। নামাজের সময় হলে গাড়ি পার্ক করে মসজিদে নামাজ পড়ে নিয়েছে ছেলেরা। দুপুরে খাওয়ার জন্য ফারদিন গাড়ি থামিয়ে ফাস্টফুড জাতীয় কিছু খাবার কিনে নিয়ে এসেছে। যদিও মলি অল্প খেয়েছে কিন্তু ফরহাদ কিছুই খায়নি। দীর্ঘপথ অতিক্রম করে তারা সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে। বাচ্চাদের দেখে জিহান লাফালাফি শুরু করেছে। একজন জেরিনের কোলে অন্যজন ফরহাদের কোলে। ফাহিমা এগিয়ে এসে ফরহাদের কোল থেকে বাবুকে কোলে নিলো। ফারদিন তাদের ব্যাগ নিয়ে ফরহাদের রুমে রেখে আসছে। এদিকে ফরহাদ তার মাকে বলতে লাগলো,
– আমি নিষেধ করেছিলাম তোমাকে কাউকে কিছু জানাতে। কেন জানালে?
– আমার নাতি-নাতনীদের কি আমি দূরে ফেলে রাখতে পারবো! আমি তোর কাছে চলে গেলে এদিকে জিহান পড়ে থাকে, এখানে থাকলে ওদিকে ফাইজা, মুবিন পড়ে থাকে। যতদিন বাচি, সবাইকে একসাথে নিয়েই বাচবো। এরপর তোরা যা ইচ্ছে করিস।
– মা, তুমি শান্তির আশায় সবটা ভুলে গেলেও আমি কিছুই ভুলিনি। যেমনটা ভাবছো তা কখনোই পূরণ হবে না। এ বাড়িতে তো মানুষের বসবাস নয়, সেটা তোমার অজানা হলেও আমার খুব ভালো জানা আছে। গতদিনগুলোতে কোনো কাজের লোকের উপর ঝর গিয়েছে, কোনো মনমালিন্য হলে আজ আমার বউ বাচ্চার উপর সেই ঝড় যাবে। মলির অবস্থান যে এ পরিবারে কিরূপ হবে তা আমার খুব ভালো জানা আছে। তোমাকে নিয়েই আমি খুব ভয়ে থাকি, তার উপর তাদের এখানে কিভাবে রাখি!
জেরিন মুখটা মলিন করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মলিও শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফরহাদের কথা শুনছে। কথার ফাকে ফরহাদ জেরিনের হাত থেকে তার সন্তান নিয়ে নিয়েছে। ফাহিমা ফরহাদকে বললো,
– যা হয়েছে হয়েছেই, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে এমন কিছু হবে না। মলি সম্পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে থাকবে এখানে।
– ভবিষ্যতে হবে না তার নিশ্চয়তা কি! চাচার বেলায় যে এমনটা হবে সেটা কি তুমি জানতে? তাহলে আজ উনার মেয়ে যে কতটা মর্যাদা নিয়ে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা কিভাবে দিচ্ছো! আমি এখানে থাকবো না।
– ফরহাদ, এই জেদ এর জন্য আমি এই প্রথম তোর বাবাকে বকেছি গত পরশু চিটাগং থেকে ফিরে। আর এর জন্যই তোদের ছেড়ে আমার চিটাগং থেকে আসার তাড়া। আমার একটুও ভালো লাগছিলো না নিজের বাড়ি ছেড়ে তোরা ভাড়াটিয়া বাসায় আছিস! মা, তো আমি। সহ্য হয়না সন্তানের কষ্ট, অশান্তি। এতো বছর যাবত তোর বাবাকে আমি শুধু বুঝিয়েই এসেছি। কিন্তু এই প্রথম দৃষ্টি উঁচুতে তুলে, জোর গলায় বকেছি তোর বাবাকে। সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সবটার জন্য। জেদ নিয়ে বসে থাকে সেই দোষ শুধু তোর বাবাকেই দিয়ে যাচ্ছিস, তোদের জেদ কম কোথায়! উনি তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে জেদ মাটিতে মিশিয়ে তোকে চিটাগং থেকে আনতে গেছে, তাহলে তুই আজ সম্মান দিচ্ছিস কোথায়? তোর সাহস কি করে হয় এখন আবার বাসা থেকে চলে যাওয়ার!
বাইরে থেকে নেয়ামত উল্লাহ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– যার ইচ্ছে চলে যেতে দাও ফাহিমা। কিন্তু আমার নাতিনাতনি যাবে না। এটা পরিষ্কার।
ফরহাদ এবার তার বাবার কথায় প্রত্যক্ষ জবাব দিলো,
– হুহ্! নাতিনাতনি! আপনজনদের মূল্য দিতে জানো তুমি? নিজের ভাইকেই তো জায়গা দাওনি সেদিন! আর নাতিনাতনির উপর এতো মায়া আসে কোথা থেকে?
নেয়ামত উল্লাহ কড়া কণ্ঠে বললো,
– এখন কি সারাজীবন তোদের মা ছেলের মুখে আমাকে এসবই শুনতে হবে! তাহলে শুন, ভাইয়ের প্রতিও আমার মায়া ছিলো! এখনো আছে। হ্যাঁ, সেদিন সম্মানে লেগেছিলো তাই রেগে গিয়ে বের করে দিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। সেটা তো ক্ষনিকের রাগ ছিলো। কিন্তু তার এতো অভিমান কিসের? আমার কথায় চলে গেলো কেন সেদিন! পারলো না নিজ দাবি আদায় করে নিজ বাড়িতে থাকতে! দ্বিতীয়বার কেন ফিরে এলো না বাড়িতে। কেন একবার নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো না! আমি তো তার অপেক্ষায়ই ছিলাম।
সেদিন থেকে আজও আমি অপেক্ষায় আছি, সে আসবে। আমাকে ভাই বলে ডাক দিবে, আর বাড়িতে এসে আবার বসত গড়ে তুলবে! কিন্তু আমার অপেক্ষার যে আর অবসান ঘটলো না! আমার ছেলে তার সন্ধান পেয়েও আমাকে তার মৃত্যুর সংবাদটা পর্যন্ত দিলো না! আজ এতোদিন পর আমাকে জানতে হলো আমার ভাইয়ের মেয়েকে লুকিয়ে বিয়ে করেছে আর ভাই নেই পৃথিবীতে!
– বাহ! কি চমৎকার বললে! বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো তুমি আর চাচা এসে আশ্রয় চাইবে তোমার কাছে? দ্বিতীয়বার তোমার দুয়ারে এসে দাঁড়াবে! কোন মুখ নিয়ে ফিরবে? সে কায়দা রেখেছো তুমি? সরাসরিই তো বলে দিয়েছো বাড়িতে জায়গা হবে না! তাহলে কোন আশা নিয়ে ফিরবে? আশায় থেকেছো অথচ খোঁজ নাওনি ভাই কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে! তোমার সম্মানের কথা ভেবেছো তুমি আর তাড়িয়ে দিয়েছো চাচাকে। আর চাচা নিজের সম্মান দেখেনি, দেখেছে জীবনকে! জীবন গুছিয়ে নিতে ঠাই নিয়েছে বস্তিতে। এতোকিছু থাকতেও জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে সংসারের ঘানি টানতে টানতে! ধনসম্পদ থাকতেও দিনের পর দিন ভুগতে হয়েছে ব্যাধিতে! চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে ছেলেমেয়ে উভয়ে নেমে গেছে উপার্জন করতে। বিয়ে করেছি মায়ের ইচ্ছে ছিলো বলে। সবটা জেনে একটু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আমি। সেটাও হতে দিলো তোমার জল্লাদ ছেলে আর ছেলের বউ! চাচার অপারেশনের জন্য টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে। সেখানে চোরের অপবাদ দিয়ে হাত পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
– ওরা কি জানতো, টাকা তুই রেখে গিয়েছিস!
– জানতো না যখন, সঠিকটা না জেনে এতোবড় জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারলো! তাদের ঘর থেকে কি টাকা নিয়েছিলো? হতেও তো পারতো সেটা তার নিজের উপার্জনের টাকা!
জেরিন বললো,
– ফরহাদ, ও তখন এমন কিছুই বলেনি। বিয়ের কিথা তো জানতামই না তাছাড়া এটাও জানতাম না ও তোমার চাচাতো বোন। তাই আমরা ভেবে নিয়েছি…
– কেন, সে বলছিলো না যে সে টাকা চুরি করেনি। শুনেছিলে তোমরা তার কথা? এতো বেশি ভাবতে পারো কিভাবে! আর চোর হলেই তাকে এভাবে শাস্তি দিবে! দেশে আইন বলতে কিছু নেই! আল্লাহর সৃষ্টিকে দগ্ধ করার স্পর্ধা কিভাবে হয় তোমাদের! আরে চোর ও তো চুরি করে তাদের পেটের দায়ে! সেটা কি বুঝো তোমরা! আর সে তো সাধারণ একজন মালিনী হিসেবেই ছিলো তোমাদের বাড়িতে। দেখিনি, কতটা নিচু চোখে দেখেছো! কতটা লাঞ্চিত হয়েছে তোমাদের দ্বারা। ভুলিনি কিছু, কিভাবে দাওয়াত করেছিলে জিহানের জন্মদিনে মনে নেই! আর এই বোকা মেয়ে শুধু আমার মায়ের মুখ চেয়ে এসেছে সেই দাওয়াতে! মুখ বুজে সবটা সহ্য করে মেনে নিয়ে গেছে! ভবিষ্যতে তাদের নিয়ে এমন ঝুঁকি নিতে রাজি না আমি। ভালো আছি আমি আমার দিকে।
সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনছে তাদের কথা। নিজের মানসম্মান ভেবে যা করেছিলো সবটা আজ ভুল হয়ে দাড়িয়েছে নেয়ামত উল্লাহর চোখের সামনে! ছেলের কথা তো একটাও ফেলে দেওয়ার মতো না! তার তো উচিত ছিলো এভাবে জেদ নিয়ে বসে না থেকে ভাইকে খুজে নিয়ে আসার! মনটা এতোটা পাষাণ কিভাবে হয়েছিলো! এভাবে আশায় আশায় কেন দিন পাড় হলো! আশায় থাকতে থাকতে তো আজ ভাইয়ের জানাজায়ও অংশ নেওয়া হলো না! ভাবতে ভাবতে স্থির হয়ে গেছে নেয়ামত উল্লাহ! ফরহাদ মলির কাছে তার কোলের বাচ্চাকে দিয়ে বললো,
– ধরো ওকে, আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি। তোমাদের বাসায় যাবো। আজ রাত কাটিয়ে কাল চিটাগং ফিরবো।
ফরহাদের কথা শুনে নেয়ামত উল্লাহ বললো,
– ফরহাদ! কোথাও নিয়ে যাবিনা তুই। ভাইকে তো পারিনি, তার পরিবারকে ফিরিয়ে আনবো আমি।
– তুমি বলবে আর তার পরিবার হুড়হুড় করে চলে আসবে! সবসময় এমন কেন ভাবো শুধু তোমার ভাবনাই সঠিক! একটু সেটার মূলে গিয়ে ভাবতে পারো না কেন! কিসের আশায় আসবে তারা এখানে! তাদের ফিরিয়ে আনবে আর যে দিনগুলো তারা পাড় করে এসেছে সেগুলোকে ফিরিয়ে আনবে না? সেই কঠিন মুহুর্তগুলোর সম্মুখীন হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে না?
– ফাহিমা, তোমার ছেলে এসব কি বলে যাচ্ছে! থামতে বলো তাকে! হারিয়ে যাওয়া দিন কি কখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব! সেগুলো ভেবে কি আমি আগামী দিনগুলো সুন্দর করার চেষ্টা করবো না! যেটা সম্ভব সেটা পূরণ করতে আমাকে কি একবার সুযোগও দেওয়া হবে না!
ফরহাদ আর কোনো কথা বললো না। ফাহিমা তার ছেলের দিকে তাকালো শুধু, তিনিও কিছু বললেন না। আর বাকিরাও শুধু শ্রোতা। সুতরাং সবটাই এখন নিরব! নেয়ামত উল্লাহ মলির কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
– তোর বাবার কাছে তো আর অভিমান ভাঙানোর সুযোগ পেলাম না। কিরে মা, তোরা মাফ করবি না আমাকে?
– আংকেল, কি বলছেন এসব! এসব বলবেন না, আপনি গুরুজন। মানায় না আপনাকে এসব কিছু!
তিনি প্রথমে মলির কোলে থাকা বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে পরক্ষণে মলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– থাকবি না এ বাড়িতে? এটা তোর শ্বশুর বাড়ি না, এটা তোর বাবার বাড়িও। থাকবি না?
এর জবাব নেই মলির কাছে। কেননা ফরহাদের বিপরীতে সে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না! তাই সে ছলছল চোখে ফরহাদের দিকে তাকালো। ফরহাদ কি বলবে সেও জানে না। ওদিকে ফাহিমার কোলে থাকা বাবুটা ফরহাদকে দেখে কান্না শুরু করেছে। ফরহাদ তাকে কোলে নিয়ে দোতলায় চলে যেতে লাগলো। ফাহিমাও পিছু পিছু গেলো। ফাহিমা তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করালো। এখানেই থাকবে তারা। এদিকে রুম পরিষ্কারই দেখা যাচ্ছে। ফাহিমা জানালো গতকাল নেয়ামত উল্লাহ তাদের আনতে যাবে বলার পর জেরিনই সবটা পরিষ্কার করে রেখেছে। ফরহাদ নিচে এসে দেখলো মলি সোফায় বসে আছে। মলিকে দোতলায় যেতে বললে ফাহিমা বললো রাতের খাবার খেয়ে তারপর যেতে। নেয়ামত উল্লাহও সোফায় বসে ছিলেন। তিনি সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
– জেরিন, মলি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের সেবাযত্নের দায়িত্ব এখন সম্পূর্ণ তোমার। সাথে মলির দেখাশোনাও। তোমার আম্মা তো আবার বারবার সিড়ি বেয়ে দোতলা একতলা করতে পারবে না।
– আচ্ছা, বাবা।
ফরহাদ বলে উঠলো,
– কোনো প্রয়োজন নেই। ওদের সেবাযত্ন করতে গিয়ে উল্টো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তার চেয়ে ভালো আমি যতটুকু পারবো করবো বাকিটা মলি সামলাবে।
জেরিনের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। ফারদিন বলে উঠলো,
– ফরহাদ! বারবার তুমি জেরিনকে দোষারোপ করছো কেন! সেদিন মা-ও কথা শুনিয়েছে তাকে, তার আগে তুমিও এসে উল্টাপাল্টা বলে গেছো সে নাকি বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য না। হ্যাঁ, সে চেয়েছিলো তোমার সাথে জেনিফার বিয়ে দিতে। কিন্তু এখন তো আর সেটা চাইছে না। কেননা এখন জানে তুমি বিবাহিত।
– দোষারোপ ওকে একা করতে যাবো কেন! তুমিই বা কম কিসে! তোমরা সবাই একজোটে বেধে আছো। কারো ভালো দেখতে পারো না। কুনজর পড়ে যায় তোমাদের!
– তুমি কি ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করছো!
– তুমি তো সেই সুযোগই খুজে বেড়াচ্ছো, আমি না হয় একটু সুযোগ করেই দিলাম।
– আমি মোটেও তেমন কিছু চাইছি না। এমনটা হলে কখনোই বাবার সাথে চিটাগং তোমাকে আনতে যেতাম না।
– বাবা বললে নিষেধ করতে পারবে নাকি! বাবা বলেছে বিধায়ই গিয়েছো।
– বাবা, ফরহাদ কি চাইছে! ও সবার সাথে এমন ব্যবহার শুরু করেছে কেন! আমি কারো সাথে কোনো ধন্দ চাইনা। তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাবেই চলবো। কিন্তু কারো কটূ কথা শুনতে চাই না।
নেয়ামত উল্লাহ নিরাশ হয়ে বললো,
– ফাহিমা, ছেলেরা আমার সংসারী হয়ে গেছে। কবে যে তারা এতো বড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম না! আমিই আজ অবুঝ হয়ে গেছি আর তারা এক একজন ব্যারিস্টার। কোথায় চাইছিলাম ভাইয়ের সংসার এনে বাড়িতে তুলবো অথচ এখন দেখছি নিজের ছেলেরাই পৃথক হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মলির খুব রাগ হচ্ছে ফরহাদের উপর। সবাই যখন মিল চাইছে তাহলে সে এতো আঁকাবাকা পথে চলছে কেন! ফারদিন তার বাবার কথার প্রসঙ্গে বললো,
– বাবা, আমিও তোমার ইচ্ছে মতো একত্রিত হয়ে থাকতে চাইছি। কিন্তু ফরহাদ এমন করছে কেন! হ্যাঁ, মানছি একটু বে-আইনি কাজ করেছি। এখন তো সবটা শুধরে নিতে চাইছি। জেরিন এতোদিন কাজকর্মে পিছিয়ে থাকতো কিন্তু পরশু দিন তো মা পরিষ্কারই বলে দিয়েছে বাড়িতে থাকতে হলে তাকে আদর্শ বউ হয়েই থাকতে হবে। সেটাও সে মেনে নিয়েছে, তাহলে সবকিছুই তো ঠিকমতো চলার কথা। এখানে ফরহাদ কেন অমত পোষণ করছে!
ফরহাদ এতোক্ষণে বুঝতে পারলো তার মা একটু কড়া আয়ত্তে এসেছে তাহলে। এতো বছর তো ছেলের বউকে মাথায় তুলে রেখেছে আর নিজে খেটেছে সংসারের পিছু! এজন্যই তাহলে জেরিনের এতো ভালো আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে! যেটা মলিও বুঝতে পেরেছে। তাই মলি মনে মনে “আলহামদুলিল্লাহ” বললো এই ভেবে যে, ফাহিমার যে শান্তির আশা করতো তা পূরণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ফরহাদের আচরণে সবাই একটু নারাজ। তাই এবার নেয়ামত উল্লাহ ফরহাদকে স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করলো,
– ফরহাদ, আমি আবারও বলছি, আমি কোনো ঝামেলা চাই না। পরিষ্কার বলো তুমি কি চাও।
– বেশি কিছু না। সবাই যেন তার নিজস্ব অবস্থানে থাকে আর কখনো লিমিট ক্রস না করে।
– হ্যাঁ, এখন থেকে সেটাই হবে। ফারদিন, ক্লিয়ার?
ফারদিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। নেয়ামত উল্লাহ প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
– সারাদিন ভ্রমণ করেছো, সবাই এবার ফ্রেশ হও।
জেরিন ফাহিমার উদ্দেশ্যে বললো,
– মা, কিছু রান্না করতে হবে?
– না, রান্না করেছি আমি। হাতমুখ ধুয়ে এসো। খাওয়াদাওয়া করে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকো। গত রাতে ঘুম হয়নি কারো।
জেরিন চলে গেলো তার রুমে। ফাহিমা মলির কাছ থেকে বাবুকে নিয়ে বললো তাকে হাতমুখ ধুয়ে নিতে। মলি নিচের বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার সোফায় এসে বসলো। ফরহাদ তার কোলে বাচ্চাকে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে গেলো। এদিকে চাচি আর দাদির কাছে বসে জিহান বাবুদের সাথে দুষ্টুমি করছে। ফাহিমা মলিকে বললো,
– জেরিনকে দেখে অবাক হচ্ছিস না?
মলি মাথা নেড়ে বললো,
– হুম, সেটা তো হচ্ছিই! কাজ না করলে বাড়িতে জায়গা হবে না সেই ভয়ে?
– উহুম। চিটাগং থেকে ফিরে মনে সাহস হয়েছে খুব! দোটানা আর ভালো লাগছিলো না। তাই তোর আংকেলকে বকেছি সংঘটিত ঘটনাগুলোর জন্য। সাথে জেরিন, ফারদিনকেও বকেছি তাদের কর্মের জন্য। জেরিন তো কান্নাকাটি করে একাকার! এরপর নিজেই ঠান্ডা হয়ে আবার বুঝিয়েছি তাকে। আমার বিশ্বাস, সেদিন একটা কথা হয়তো আমি স্পষ্ট বুঝাতে পেরেছি তাকে। বলেছিলাম,
“কিসের অহংকার তোমার?
রূপের?
তাহলে জেনে রেখো,
সেদিন বেশি দূরে নয়!
যেদিন তোমার রূপ পচে গলে মাটির সাথে মিশে যাবে!
এমনকি কঙ্কাল হয়ে হাড়ের জোড়াও লেগে থাকবে না একে অপরের সাথে!
চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে সবটা!
তাহলে অযথা অহংকার কেন!
মরণ আসবে না তোমার?
বিবেকহীন না তুমি।
কথা বুঝতে চেষ্টা করো এবং
এসব ছেড়ে আল্লাহর পথে চলো।
দেখে নিও, আখেরাতে খুব ভালো পুরষ্কার পেয়ে যাবে তুমি।
দুনিয়ার জীবন আর ক’দিন!”
মলি মুগ্ধ হয়ে শুনলো ফাহিমার কথা। শুধু শুনলোই না, নিজের মধ্যেও গেথে নিলো কথাগুলো। হুট করেই জিহান বললো,
– চাচি, বাবুরা কথা বলে না কেন?
মলি হেসে জবাব দিলো,
– বাবুরা তো তোমার মতো বড় হয়নি। আস্তে আস্তে বড় হবে তারপর কথা বলা শিখবে।
– আমাকে তখন ভাইয়া ডাকবে?
– হ্যাঁ।
– আমি কি ডাকবো?
– তুমি নাম ধরেই ডাকবে।
– আচ্ছা।
জেরিন টেবিলে খাবার দিয়ে ডাকলো তাদের। নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিন টেবিলের কাছে এসে বসলো। ফরহাদ এসে তার মায়ের পাশে বসলো। ফাহিমা বললো,
– খেতে যাস না কেন?
– ওদের আমার কাছে দিয়ে মলিকে নিয়ে যাও তুমি। আমি পরে খাবো।
– এতো রাগ করলে কিভাবে হবে! সবটা সহজভাবে মেনে নিচ্ছিস না কেন তুই!
– রাগ কোথায় করছি! আমি স্বাভাবিকই আছি, যাও তোমরা।
মলি বললো,
– আপনিই আগে খেয়ে আসুন। সেই সকালে একটু খাবার মুখে দিয়েছেন আর কিছু খাননি। আপনি খেয়ে এলে ওদেরকে আপনার কাছে রেখে আমি বড়মার সাথে খাবো।
ফরহাদ আর কিছু না বলে জিহানকে সাথে নিয়ে উঠে গেলো টেবিলের কাছে। জেরিন দাড়িয়ে সার্ভ করে দিচ্ছে আর তারা খাচ্ছে। খাওয়ার সময় তাদের বাবাছেলের মাঝে একটু আধটু কথা হলো মলির পরিবার নিয়ে। অত:পর ফরহাদের কাছে বাবুদের রেখে তারা মেয়ে তিনজন খেয়ে নিলো। কিন্তু বাবুরা মহা পাজি! নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিন দুজনেই একটু কোলে রাখার চেষ্টা করলো, কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও থাকতে রাজি না! কান্না করে মহা প্রলয় সৃষ্টি করে ফেলে! সেই ভয়েই সবাই দূরে!
https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318
“মালিনী”
পর্ব- ২৯
(নূর নাফিসা)
.
.
মলি বাচ্চাদের হাত পা ধরে দেখলো ঠান্ডা হয়ে গেছে। সাথে ছোট কাথা আছে তবুও বাচ্চাদের কম্বল কিংবা মোটা কাথার প্রয়োজন। তাই পেছনে তাকিয়ে ব্যাগ খুজলো। হ্যাঁ, তার পেছনেই রাখা আছে ব্যাগ। মলি একটু পেছনে ঘুরার চেষ্টা করতেই ফরহাদ বললো,
– কি খোঁজো?
– কাথা নিবো, তাদের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
– তুমি পারবে না, আমি নিয়ে দিচ্ছি। ধরো ওদের।
মলি হাত বাড়িয়ে তাদের নিতে গেলে জেরিন বললো,
– দাড়াও, আমি নিয়ে দিচ্ছি।
বলতে বলতে সে-ই উঠে ব্যাগ থেকে কাথা বের করলো। মলিকে জিজ্ঞেস করলো,
– আরও কিছু লাগবে?
– না।
একটু পরেই ফারদিনের ফোন বেজে উঠলো। জিহান কল করেছে, ফারদিন ড্রাইভ করছে তাই পেছনে জেরিনের কাছে দিয়ে দিলো। জেরিন বললো,
– হ্যাঁ, আব্বু বল।
– তোমরা কখন আসবে? বাবুদের নিয়ে আসছো না কেন!
– আসছি তো বাবুদের নিয়ে। অনেক দূর তো, তাই সময় লাগবে।
– বাবু তোমার কোলে?
– না, বাবুরা তোমার চাচ্চুর কোলে।
– বাবুর কাছে দাও, আমি কথা বলবো।
– বাবুরা তো কথা শেখেনি এখনো। আগে বড় হোক, পরে কথা বলো।
– কেন, চাচ্চু কথা শেখায়নি!
– বাবুরা তো ছোট, তারা এখন শিখবে না।
– ও, বড় কবে হবে?
– অনেক দিন পর। আর সেটা তো তুমি দেখবেই, এখন এতো কিছু জিজ্ঞেস করলে তো আমাদের ফিরতে আরও লেট হবে।
– আচ্ছা, তাড়াতাড়ি এসো। আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করছি না।
– ওকে। খেয়েছো তুমি?
– হ্যাঁ।
– দাদুর সাথে চুপচাপ থাকো। দুষ্টুমি করবে না।
– ওকে।
জেরিন কল কেটে দিলো। দুপুরের খাবারদাবার তাদের গাড়িতেই চললো। নামাজের সময় হলে গাড়ি পার্ক করে মসজিদে নামাজ পড়ে নিয়েছে ছেলেরা। দুপুরে খাওয়ার জন্য ফারদিন গাড়ি থামিয়ে ফাস্টফুড জাতীয় কিছু খাবার কিনে নিয়ে এসেছে। যদিও মলি অল্প খেয়েছে কিন্তু ফরহাদ কিছুই খায়নি। দীর্ঘপথ অতিক্রম করে তারা সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরেছে। বাচ্চাদের দেখে জিহান লাফালাফি শুরু করেছে। একজন জেরিনের কোলে অন্যজন ফরহাদের কোলে। ফাহিমা এগিয়ে এসে ফরহাদের কোল থেকে বাবুকে কোলে নিলো। ফারদিন তাদের ব্যাগ নিয়ে ফরহাদের রুমে রেখে আসছে। এদিকে ফরহাদ তার মাকে বলতে লাগলো,
– আমি নিষেধ করেছিলাম তোমাকে কাউকে কিছু জানাতে। কেন জানালে?
– আমার নাতি-নাতনীদের কি আমি দূরে ফেলে রাখতে পারবো! আমি তোর কাছে চলে গেলে এদিকে জিহান পড়ে থাকে, এখানে থাকলে ওদিকে ফাইজা, মুবিন পড়ে থাকে। যতদিন বাচি, সবাইকে একসাথে নিয়েই বাচবো। এরপর তোরা যা ইচ্ছে করিস।
– মা, তুমি শান্তির আশায় সবটা ভুলে গেলেও আমি কিছুই ভুলিনি। যেমনটা ভাবছো তা কখনোই পূরণ হবে না। এ বাড়িতে তো মানুষের বসবাস নয়, সেটা তোমার অজানা হলেও আমার খুব ভালো জানা আছে। গতদিনগুলোতে কোনো কাজের লোকের উপর ঝর গিয়েছে, কোনো মনমালিন্য হলে আজ আমার বউ বাচ্চার উপর সেই ঝড় যাবে। মলির অবস্থান যে এ পরিবারে কিরূপ হবে তা আমার খুব ভালো জানা আছে। তোমাকে নিয়েই আমি খুব ভয়ে থাকি, তার উপর তাদের এখানে কিভাবে রাখি!
জেরিন মুখটা মলিন করে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। মলিও শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফরহাদের কথা শুনছে। কথার ফাকে ফরহাদ জেরিনের হাত থেকে তার সন্তান নিয়ে নিয়েছে। ফাহিমা ফরহাদকে বললো,
– যা হয়েছে হয়েছেই, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে এমন কিছু হবে না। মলি সম্পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে থাকবে এখানে।
– ভবিষ্যতে হবে না তার নিশ্চয়তা কি! চাচার বেলায় যে এমনটা হবে সেটা কি তুমি জানতে? তাহলে আজ উনার মেয়ে যে কতটা মর্যাদা নিয়ে থাকবে সেটার নিশ্চয়তা কিভাবে দিচ্ছো! আমি এখানে থাকবো না।
– ফরহাদ, এই জেদ এর জন্য আমি এই প্রথম তোর বাবাকে বকেছি গত পরশু চিটাগং থেকে ফিরে। আর এর জন্যই তোদের ছেড়ে আমার চিটাগং থেকে আসার তাড়া। আমার একটুও ভালো লাগছিলো না নিজের বাড়ি ছেড়ে তোরা ভাড়াটিয়া বাসায় আছিস! মা, তো আমি। সহ্য হয়না সন্তানের কষ্ট, অশান্তি। এতো বছর যাবত তোর বাবাকে আমি শুধু বুঝিয়েই এসেছি। কিন্তু এই প্রথম দৃষ্টি উঁচুতে তুলে, জোর গলায় বকেছি তোর বাবাকে। সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সবটার জন্য। জেদ নিয়ে বসে থাকে সেই দোষ শুধু তোর বাবাকেই দিয়ে যাচ্ছিস, তোদের জেদ কম কোথায়! উনি তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে জেদ মাটিতে মিশিয়ে তোকে চিটাগং থেকে আনতে গেছে, তাহলে তুই আজ সম্মান দিচ্ছিস কোথায়? তোর সাহস কি করে হয় এখন আবার বাসা থেকে চলে যাওয়ার!
বাইরে থেকে নেয়ামত উল্লাহ ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
– যার ইচ্ছে চলে যেতে দাও ফাহিমা। কিন্তু আমার নাতিনাতনি যাবে না। এটা পরিষ্কার।
ফরহাদ এবার তার বাবার কথায় প্রত্যক্ষ জবাব দিলো,
– হুহ্! নাতিনাতনি! আপনজনদের মূল্য দিতে জানো তুমি? নিজের ভাইকেই তো জায়গা দাওনি সেদিন! আর নাতিনাতনির উপর এতো মায়া আসে কোথা থেকে?
নেয়ামত উল্লাহ কড়া কণ্ঠে বললো,
– এখন কি সারাজীবন তোদের মা ছেলের মুখে আমাকে এসবই শুনতে হবে! তাহলে শুন, ভাইয়ের প্রতিও আমার মায়া ছিলো! এখনো আছে। হ্যাঁ, সেদিন সম্মানে লেগেছিলো তাই রেগে গিয়ে বের করে দিয়েছিলাম বাড়ি থেকে। সেটা তো ক্ষনিকের রাগ ছিলো। কিন্তু তার এতো অভিমান কিসের? আমার কথায় চলে গেলো কেন সেদিন! পারলো না নিজ দাবি আদায় করে নিজ বাড়িতে থাকতে! দ্বিতীয়বার কেন ফিরে এলো না বাড়িতে। কেন একবার নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলো না! আমি তো তার অপেক্ষায়ই ছিলাম।
সেদিন থেকে আজও আমি অপেক্ষায় আছি, সে আসবে। আমাকে ভাই বলে ডাক দিবে, আর বাড়িতে এসে আবার বসত গড়ে তুলবে! কিন্তু আমার অপেক্ষার যে আর অবসান ঘটলো না! আমার ছেলে তার সন্ধান পেয়েও আমাকে তার মৃত্যুর সংবাদটা পর্যন্ত দিলো না! আজ এতোদিন পর আমাকে জানতে হলো আমার ভাইয়ের মেয়েকে লুকিয়ে বিয়ে করেছে আর ভাই নেই পৃথিবীতে!
– বাহ! কি চমৎকার বললে! বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছো তুমি আর চাচা এসে আশ্রয় চাইবে তোমার কাছে? দ্বিতীয়বার তোমার দুয়ারে এসে দাঁড়াবে! কোন মুখ নিয়ে ফিরবে? সে কায়দা রেখেছো তুমি? সরাসরিই তো বলে দিয়েছো বাড়িতে জায়গা হবে না! তাহলে কোন আশা নিয়ে ফিরবে? আশায় থেকেছো অথচ খোঁজ নাওনি ভাই কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে! তোমার সম্মানের কথা ভেবেছো তুমি আর তাড়িয়ে দিয়েছো চাচাকে। আর চাচা নিজের সম্মান দেখেনি, দেখেছে জীবনকে! জীবন গুছিয়ে নিতে ঠাই নিয়েছে বস্তিতে। এতোকিছু থাকতেও জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে সংসারের ঘানি টানতে টানতে! ধনসম্পদ থাকতেও দিনের পর দিন ভুগতে হয়েছে ব্যাধিতে! চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে ছেলেমেয়ে উভয়ে নেমে গেছে উপার্জন করতে। বিয়ে করেছি মায়ের ইচ্ছে ছিলো বলে। সবটা জেনে একটু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আমি। সেটাও হতে দিলো তোমার জল্লাদ ছেলে আর ছেলের বউ! চাচার অপারেশনের জন্য টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম তার কাছে। সেখানে চোরের অপবাদ দিয়ে হাত পুড়িয়ে দিয়েছে তারা।
– ওরা কি জানতো, টাকা তুই রেখে গিয়েছিস!
– জানতো না যখন, সঠিকটা না জেনে এতোবড় জঘন্য কাজ কিভাবে করতে পারলো! তাদের ঘর থেকে কি টাকা নিয়েছিলো? হতেও তো পারতো সেটা তার নিজের উপার্জনের টাকা!
জেরিন বললো,
– ফরহাদ, ও তখন এমন কিছুই বলেনি। বিয়ের কিথা তো জানতামই না তাছাড়া এটাও জানতাম না ও তোমার চাচাতো বোন। তাই আমরা ভেবে নিয়েছি…
– কেন, সে বলছিলো না যে সে টাকা চুরি করেনি। শুনেছিলে তোমরা তার কথা? এতো বেশি ভাবতে পারো কিভাবে! আর চোর হলেই তাকে এভাবে শাস্তি দিবে! দেশে আইন বলতে কিছু নেই! আল্লাহর সৃষ্টিকে দগ্ধ করার স্পর্ধা কিভাবে হয় তোমাদের! আরে চোর ও তো চুরি করে তাদের পেটের দায়ে! সেটা কি বুঝো তোমরা! আর সে তো সাধারণ একজন মালিনী হিসেবেই ছিলো তোমাদের বাড়িতে। দেখিনি, কতটা নিচু চোখে দেখেছো! কতটা লাঞ্চিত হয়েছে তোমাদের দ্বারা। ভুলিনি কিছু, কিভাবে দাওয়াত করেছিলে জিহানের জন্মদিনে মনে নেই! আর এই বোকা মেয়ে শুধু আমার মায়ের মুখ চেয়ে এসেছে সেই দাওয়াতে! মুখ বুজে সবটা সহ্য করে মেনে নিয়ে গেছে! ভবিষ্যতে তাদের নিয়ে এমন ঝুঁকি নিতে রাজি না আমি। ভালো আছি আমি আমার দিকে।
সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুনছে তাদের কথা। নিজের মানসম্মান ভেবে যা করেছিলো সবটা আজ ভুল হয়ে দাড়িয়েছে নেয়ামত উল্লাহর চোখের সামনে! ছেলের কথা তো একটাও ফেলে দেওয়ার মতো না! তার তো উচিত ছিলো এভাবে জেদ নিয়ে বসে না থেকে ভাইকে খুজে নিয়ে আসার! মনটা এতোটা পাষাণ কিভাবে হয়েছিলো! এভাবে আশায় আশায় কেন দিন পাড় হলো! আশায় থাকতে থাকতে তো আজ ভাইয়ের জানাজায়ও অংশ নেওয়া হলো না! ভাবতে ভাবতে স্থির হয়ে গেছে নেয়ামত উল্লাহ! ফরহাদ মলির কাছে তার কোলের বাচ্চাকে দিয়ে বললো,
– ধরো ওকে, আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি। তোমাদের বাসায় যাবো। আজ রাত কাটিয়ে কাল চিটাগং ফিরবো।
ফরহাদের কথা শুনে নেয়ামত উল্লাহ বললো,
– ফরহাদ! কোথাও নিয়ে যাবিনা তুই। ভাইকে তো পারিনি, তার পরিবারকে ফিরিয়ে আনবো আমি।
– তুমি বলবে আর তার পরিবার হুড়হুড় করে চলে আসবে! সবসময় এমন কেন ভাবো শুধু তোমার ভাবনাই সঠিক! একটু সেটার মূলে গিয়ে ভাবতে পারো না কেন! কিসের আশায় আসবে তারা এখানে! তাদের ফিরিয়ে আনবে আর যে দিনগুলো তারা পাড় করে এসেছে সেগুলোকে ফিরিয়ে আনবে না? সেই কঠিন মুহুর্তগুলোর সম্মুখীন হয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবে না?
– ফাহিমা, তোমার ছেলে এসব কি বলে যাচ্ছে! থামতে বলো তাকে! হারিয়ে যাওয়া দিন কি কখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব! সেগুলো ভেবে কি আমি আগামী দিনগুলো সুন্দর করার চেষ্টা করবো না! যেটা সম্ভব সেটা পূরণ করতে আমাকে কি একবার সুযোগও দেওয়া হবে না!
ফরহাদ আর কোনো কথা বললো না। ফাহিমা তার ছেলের দিকে তাকালো শুধু, তিনিও কিছু বললেন না। আর বাকিরাও শুধু শ্রোতা। সুতরাং সবটাই এখন নিরব! নেয়ামত উল্লাহ মলির কাছে এগিয়ে এসে বললেন,
– তোর বাবার কাছে তো আর অভিমান ভাঙানোর সুযোগ পেলাম না। কিরে মা, তোরা মাফ করবি না আমাকে?
– আংকেল, কি বলছেন এসব! এসব বলবেন না, আপনি গুরুজন। মানায় না আপনাকে এসব কিছু!
তিনি প্রথমে মলির কোলে থাকা বাচ্চার মাথায় হাত বুলিয়ে পরক্ষণে মলির মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– থাকবি না এ বাড়িতে? এটা তোর শ্বশুর বাড়ি না, এটা তোর বাবার বাড়িও। থাকবি না?
এর জবাব নেই মলির কাছে। কেননা ফরহাদের বিপরীতে সে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না! তাই সে ছলছল চোখে ফরহাদের দিকে তাকালো। ফরহাদ কি বলবে সেও জানে না। ওদিকে ফাহিমার কোলে থাকা বাবুটা ফরহাদকে দেখে কান্না শুরু করেছে। ফরহাদ তাকে কোলে নিয়ে দোতলায় চলে যেতে লাগলো। ফাহিমাও পিছু পিছু গেলো। ফাহিমা তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করালো। এখানেই থাকবে তারা। এদিকে রুম পরিষ্কারই দেখা যাচ্ছে। ফাহিমা জানালো গতকাল নেয়ামত উল্লাহ তাদের আনতে যাবে বলার পর জেরিনই সবটা পরিষ্কার করে রেখেছে। ফরহাদ নিচে এসে দেখলো মলি সোফায় বসে আছে। মলিকে দোতলায় যেতে বললে ফাহিমা বললো রাতের খাবার খেয়ে তারপর যেতে। নেয়ামত উল্লাহও সোফায় বসে ছিলেন। তিনি সোফা থেকে উঠে রুমের দিকে যেতে যেতে বললেন,
– জেরিন, মলি সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের সেবাযত্নের দায়িত্ব এখন সম্পূর্ণ তোমার। সাথে মলির দেখাশোনাও। তোমার আম্মা তো আবার বারবার সিড়ি বেয়ে দোতলা একতলা করতে পারবে না।
– আচ্ছা, বাবা।
ফরহাদ বলে উঠলো,
– কোনো প্রয়োজন নেই। ওদের সেবাযত্ন করতে গিয়ে উল্টো ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। তার চেয়ে ভালো আমি যতটুকু পারবো করবো বাকিটা মলি সামলাবে।
জেরিনের মুখটা মলিন হয়ে গেছে। ফারদিন বলে উঠলো,
– ফরহাদ! বারবার তুমি জেরিনকে দোষারোপ করছো কেন! সেদিন মা-ও কথা শুনিয়েছে তাকে, তার আগে তুমিও এসে উল্টাপাল্টা বলে গেছো সে নাকি বাড়ির বউ হওয়ার যোগ্য না। হ্যাঁ, সে চেয়েছিলো তোমার সাথে জেনিফার বিয়ে দিতে। কিন্তু এখন তো আর সেটা চাইছে না। কেননা এখন জানে তুমি বিবাহিত।
– দোষারোপ ওকে একা করতে যাবো কেন! তুমিই বা কম কিসে! তোমরা সবাই একজোটে বেধে আছো। কারো ভালো দেখতে পারো না। কুনজর পড়ে যায় তোমাদের!
– তুমি কি ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করছো!
– তুমি তো সেই সুযোগই খুজে বেড়াচ্ছো, আমি না হয় একটু সুযোগ করেই দিলাম।
– আমি মোটেও তেমন কিছু চাইছি না। এমনটা হলে কখনোই বাবার সাথে চিটাগং তোমাকে আনতে যেতাম না।
– বাবা বললে নিষেধ করতে পারবে নাকি! বাবা বলেছে বিধায়ই গিয়েছো।
– বাবা, ফরহাদ কি চাইছে! ও সবার সাথে এমন ব্যবহার শুরু করেছে কেন! আমি কারো সাথে কোনো ধন্দ চাইনা। তুমি যেভাবে বলবে আমি সেভাবেই চলবো। কিন্তু কারো কটূ কথা শুনতে চাই না।
নেয়ামত উল্লাহ নিরাশ হয়ে বললো,
– ফাহিমা, ছেলেরা আমার সংসারী হয়ে গেছে। কবে যে তারা এতো বড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম না! আমিই আজ অবুঝ হয়ে গেছি আর তারা এক একজন ব্যারিস্টার। কোথায় চাইছিলাম ভাইয়ের সংসার এনে বাড়িতে তুলবো অথচ এখন দেখছি নিজের ছেলেরাই পৃথক হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মলির খুব রাগ হচ্ছে ফরহাদের উপর। সবাই যখন মিল চাইছে তাহলে সে এতো আঁকাবাকা পথে চলছে কেন! ফারদিন তার বাবার কথার প্রসঙ্গে বললো,
– বাবা, আমিও তোমার ইচ্ছে মতো একত্রিত হয়ে থাকতে চাইছি। কিন্তু ফরহাদ এমন করছে কেন! হ্যাঁ, মানছি একটু বে-আইনি কাজ করেছি। এখন তো সবটা শুধরে নিতে চাইছি। জেরিন এতোদিন কাজকর্মে পিছিয়ে থাকতো কিন্তু পরশু দিন তো মা পরিষ্কারই বলে দিয়েছে বাড়িতে থাকতে হলে তাকে আদর্শ বউ হয়েই থাকতে হবে। সেটাও সে মেনে নিয়েছে, তাহলে সবকিছুই তো ঠিকমতো চলার কথা। এখানে ফরহাদ কেন অমত পোষণ করছে!
ফরহাদ এতোক্ষণে বুঝতে পারলো তার মা একটু কড়া আয়ত্তে এসেছে তাহলে। এতো বছর তো ছেলের বউকে মাথায় তুলে রেখেছে আর নিজে খেটেছে সংসারের পিছু! এজন্যই তাহলে জেরিনের এতো ভালো আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে! যেটা মলিও বুঝতে পেরেছে। তাই মলি মনে মনে “আলহামদুলিল্লাহ” বললো এই ভেবে যে, ফাহিমার যে শান্তির আশা করতো তা পূরণ হতে যাচ্ছে। কিন্তু ফরহাদের আচরণে সবাই একটু নারাজ। তাই এবার নেয়ামত উল্লাহ ফরহাদকে স্পষ্টভাবে জিজ্ঞেস করলো,
– ফরহাদ, আমি আবারও বলছি, আমি কোনো ঝামেলা চাই না। পরিষ্কার বলো তুমি কি চাও।
– বেশি কিছু না। সবাই যেন তার নিজস্ব অবস্থানে থাকে আর কখনো লিমিট ক্রস না করে।
– হ্যাঁ, এখন থেকে সেটাই হবে। ফারদিন, ক্লিয়ার?
ফারদিন মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো। নেয়ামত উল্লাহ প্রশান্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,
– সারাদিন ভ্রমণ করেছো, সবাই এবার ফ্রেশ হও।
জেরিন ফাহিমার উদ্দেশ্যে বললো,
– মা, কিছু রান্না করতে হবে?
– না, রান্না করেছি আমি। হাতমুখ ধুয়ে এসো। খাওয়াদাওয়া করে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকো। গত রাতে ঘুম হয়নি কারো।
জেরিন চলে গেলো তার রুমে। ফাহিমা মলির কাছ থেকে বাবুকে নিয়ে বললো তাকে হাতমুখ ধুয়ে নিতে। মলি নিচের বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আবার সোফায় এসে বসলো। ফরহাদ তার কোলে বাচ্চাকে দিয়ে নিজেও ফ্রেশ হতে গেলো। এদিকে চাচি আর দাদির কাছে বসে জিহান বাবুদের সাথে দুষ্টুমি করছে। ফাহিমা মলিকে বললো,
– জেরিনকে দেখে অবাক হচ্ছিস না?
মলি মাথা নেড়ে বললো,
– হুম, সেটা তো হচ্ছিই! কাজ না করলে বাড়িতে জায়গা হবে না সেই ভয়ে?
– উহুম। চিটাগং থেকে ফিরে মনে সাহস হয়েছে খুব! দোটানা আর ভালো লাগছিলো না। তাই তোর আংকেলকে বকেছি সংঘটিত ঘটনাগুলোর জন্য। সাথে জেরিন, ফারদিনকেও বকেছি তাদের কর্মের জন্য। জেরিন তো কান্নাকাটি করে একাকার! এরপর নিজেই ঠান্ডা হয়ে আবার বুঝিয়েছি তাকে। আমার বিশ্বাস, সেদিন একটা কথা হয়তো আমি স্পষ্ট বুঝাতে পেরেছি তাকে। বলেছিলাম,
“কিসের অহংকার তোমার?
রূপের?
তাহলে জেনে রেখো,
সেদিন বেশি দূরে নয়!
যেদিন তোমার রূপ পচে গলে মাটির সাথে মিশে যাবে!
এমনকি কঙ্কাল হয়ে হাড়ের জোড়াও লেগে থাকবে না একে অপরের সাথে!
চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে সবটা!
তাহলে অযথা অহংকার কেন!
মরণ আসবে না তোমার?
বিবেকহীন না তুমি।
কথা বুঝতে চেষ্টা করো এবং
এসব ছেড়ে আল্লাহর পথে চলো।
দেখে নিও, আখেরাতে খুব ভালো পুরষ্কার পেয়ে যাবে তুমি।
দুনিয়ার জীবন আর ক’দিন!”
মলি মুগ্ধ হয়ে শুনলো ফাহিমার কথা। শুধু শুনলোই না, নিজের মধ্যেও গেথে নিলো কথাগুলো। হুট করেই জিহান বললো,
– চাচি, বাবুরা কথা বলে না কেন?
মলি হেসে জবাব দিলো,
– বাবুরা তো তোমার মতো বড় হয়নি। আস্তে আস্তে বড় হবে তারপর কথা বলা শিখবে।
– আমাকে তখন ভাইয়া ডাকবে?
– হ্যাঁ।
– আমি কি ডাকবো?
– তুমি নাম ধরেই ডাকবে।
– আচ্ছা।
জেরিন টেবিলে খাবার দিয়ে ডাকলো তাদের। নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিন টেবিলের কাছে এসে বসলো। ফরহাদ এসে তার মায়ের পাশে বসলো। ফাহিমা বললো,
– খেতে যাস না কেন?
– ওদের আমার কাছে দিয়ে মলিকে নিয়ে যাও তুমি। আমি পরে খাবো।
– এতো রাগ করলে কিভাবে হবে! সবটা সহজভাবে মেনে নিচ্ছিস না কেন তুই!
– রাগ কোথায় করছি! আমি স্বাভাবিকই আছি, যাও তোমরা।
মলি বললো,
– আপনিই আগে খেয়ে আসুন। সেই সকালে একটু খাবার মুখে দিয়েছেন আর কিছু খাননি। আপনি খেয়ে এলে ওদেরকে আপনার কাছে রেখে আমি বড়মার সাথে খাবো।
ফরহাদ আর কিছু না বলে জিহানকে সাথে নিয়ে উঠে গেলো টেবিলের কাছে। জেরিন দাড়িয়ে সার্ভ করে দিচ্ছে আর তারা খাচ্ছে। খাওয়ার সময় তাদের বাবাছেলের মাঝে একটু আধটু কথা হলো মলির পরিবার নিয়ে। অত:পর ফরহাদের কাছে বাবুদের রেখে তারা মেয়ে তিনজন খেয়ে নিলো। কিন্তু বাবুরা মহা পাজি! নেয়ামত উল্লাহ ও ফারদিন দুজনেই একটু কোলে রাখার চেষ্টা করলো, কিন্তু এক মুহুর্তের জন্যও থাকতে রাজি না! কান্না করে মহা প্রলয় সৃষ্টি করে ফেলে! সেই ভয়েই সবাই দূরে!
https://www.facebook.com/profile.php?id=100058759920318

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here