#”মালিনী”পর্ব- ২৭

0
656

#”মালিনী”পর্ব- ২৭

#(নূর নাফিসা)
.
.
রাতে ঘুমানোর সময় ফরহাদ বালিশ আর পাতলা কম্বল নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো। ফাহিমা আছে মলির কাছে। মাঝরাতে বাচ্চারা কান্নার রোল তুলেছে। একজনের কান্নার শব্দে অন্যজন জেগে উঠে আর শুরু হয় একসাথে! ওদিকে ফরহাদের চোখেও ঘুম নেই। একটু পরপরই এসে দেখে যায়। বাচ্চারা যখন কান্না করছিলো কান্নার শব্দ না পেলেও মন টেনে নিয়ে এসেছে এদিকেই। ফাহিমা একজনকে সামলাতে পারলেও আরেকজন মলির কোলে। মলির নড়াচড়া নিষিদ্ধ ফরহাদ এসে কোলে নিয়ে হাটাহাটি করছে। একটু পরপরই এতো কাদছে কেন ভেবে পাচ্ছে না মলি। ফাহিমা তুলে ধরলো নতুন জায়গায় এসেছে বিধায় এমন। মাত্র চারদিন থেকেছে হসপিটাল, এতেই যেন তারা হসপিটালের অভ্যস্ত হয়ে গেছে! যার ফলে এখানে মানিয়ে নিতে পারছে না! একটু পর আবার ঘুমিয়ে পড়লে ফাহিমার কথায় ফরহাদ কম্বল আর বালিশ নিয়ে আবার এ রুমে চলে এলো। সোফায় শুয়ে পড়লো সে। রাতভর কেউই তেমন ঘুমাতে পারেনি। বড়জোর দু-তিন ঘণ্টা ঘুমাতে পেরেছে। আর বাকি সময় তাদের ভাইবোনের ডিউটি!
সকালে আন্টি এলে বাচ্চাদের কাপড়চোপড় ধুয়ে দিলো, ফাহিমা রান্না করছে। মলির বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই আর ফরহাদ দুই কোলে দুজনকে নিয়ে জানালার পাশে বসে আছে। একপাশ দিয়ে জানালার গ্রিল ভেদ করে সকালের তাজা রোদ এসে উঁকি দিচ্ছে আর ফরহাদ বাচ্চাদের গায়ে সেই প্রভাতের রশ্মি মাখাচ্ছে। মলি খাটে হেলান দিয়ে পলকহীন তাকিয়ে আছে দুই কোল ভরে নিয়ে বসে থাকা এক পিতার দিকে। কেন জানি মনে হচ্ছে পৃথিবীর বুকে থাকা সবচেয়ে বেশি সুন্দর দৃশ্য এটা। ফরহাদও পলকহীন তাকিয়ে আছে বাচ্চাদের দিকে। মুখে তার অস্পষ্ট হাসির রেখা। বাচ্চারাও যেন উষ্ণ আর্দ্রতায় কোমলতা অনুভব করছে। তাই শান্ত হয়ে বসে আছে বাবার কোলে। মাঝে মাঝে শুধু দৃষ্টি এবং ওষ্ঠ নড়াচড়া চলমান। ফরহাদও যেন দৃষ্টিতে খেলা করছে সন্তানদের সাথে।
মলি বেশ কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে দেখলো এই দৃশ্যটা। একসময় বলে উঠলো,
– বাচ্চাদের নাম কি রাখবেন?
ফরহাদ বাচ্চাদের থেকে দৃষ্টি না সরিয়েই জবাব দিলো,
– মেহতাজ হোসাইন ফাইজা ও ফাইয়াজ হোসাইন মুবিন।
ফরহাদের বলার স্টাইল দেখে মলি বুঝে গেছে নাম আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে ফরহাদ। যাইহোক মলির খুব পছন্দ হয়েছে নামগুলো। তাই সেও হাসি মুখে একটু শব্দ করে উচ্চারণ করলো,
– মেহতাজ, ফাইয়াজ! ফাইজা, মুবিন!
ফাহিমা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে বললো,
– ভাইবোন মিলে এতো শান্ত কেন এখন? ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?
ফরহাদ জবাব দিলো,
– না। মিষ্টি রোদের সাথে দুষ্টু খেলা করছে।
– সারারাত সবাইকে জাগ্রত রেখে এখন দুষ্টুমি! একেবারে বাবার মতোই দুষ্টু হবে নাকি তার চেয়েও আরও বেশি! দেখি…
ফরহাদ ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটিয়ে তুললো ফাহিমার কথায়। আর এদিকে নিচু স্বরে মলির উক্তি,
– বেশি আর কি হবে! বাবা কম কিসে!
নিচু স্বরে বললেও দুরত্ব বেশি না হওয়ায় তাদের কান পর্যন্ত পৌছে গেছে মলির কথা। ফরহাদ তার দিকে তাকালো শুধু আর ফাহিমা হাসলো। ফরহাদের চাহনি দেখে মলি অপ্রকাশ্যে জ্বিভ কামড়ে ধরলো আবার মনে মনে বললো, “হুহ্! ভয় পাই নাকি উনাকে! বাঘ না ভাল্লুক উনি, যে আমাকে খেয়ে ফেলবে!”
ফাহিমা ফাইয়াজ হোসাইন মুবিনকে কোলে তুলতেই বাবুটা কেমন চোখ কাচুমাচু করে ফেললো। কান্না করে দিবে এমন ভঙ্গি প্রকাশ করলো তা দেখে ফাহিমার উক্তি,
– এ তো দেখছি দাদার মতো জিদ্দিও হবে! বাবার কোল থেকে উঠিয়ে নিয়েছি বলে এখনই এতো জেদ! হুম? মলি, অনেক্ক্ষণ ধরে না খেয়ে আছে। নে ধর। ফরহাদ, হুজুর দাওয়াত করেছিস?
– হ্যাঁ, সন্ধ্যায় আসবে।
– আচ্ছা, অফিস যাবি না? রান্নাবান্না শেষ আমার। নাস্তা করে রেডি হয়ে যা। দে ওকে আমার কাছে।
ফরহাদ মেহতাজ হোসাইন ফাইজাকে ফাহিমার কোলে দিয়ে চলে গেলো গোসল করতে।
আরও সপ্তাহখানেক পাড় হতেই ফাহিমা বললো ঢাকায় চলে যাবে। ফরহাদ বললো আরও কিছুদিন কাটাতে কিন্তু ফাহিমা বললো সে চলে যাবে। তাকে যেন ট্রেনে তুলে দিয়ে আসে। মলি এখন পুরোপুরি সুস্থ না হলেও চলাফেরা করতে পারে। বাকিসব ভারি কাজ থেকে তাকে দূরেই রাখা হয়েছে। ফরহাদ তার মায়ের উপর আর কথা বললো না। চলে যখন যেতে চাইছে আর আটকে রাখবে কিভাবে। যেদিনগুলো কাটিয়েছে সেগুলোই অনেক। ফরহাদ আন্টিকে মলির কাছে রেখে ফাহিমাকে নিয়ে ট্রেনে যাত্রা শুরু করলো। যাই হোক, একা ছাড়তে রাজি না সে। ইচ্ছে ছিলো বিমানে অল্প সময় ব্যয়ে তারাতাড়ি যাবে আবার তারাতাড়ি ফিরে আসবে। কিন্তু ফাহিমা বিমানে যেতে রাজি না। আসার সময়ও তিনি ট্রেনেই এসেছেন। সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের শেষ দিকে ঢাকায় পৌছেছে তারা। ফাহিমাকে বাড়িতে রেখে সে আর অপেক্ষা করেনি এখানে, সাথে সাথেই আবার বেরিয়ে পড়েছে চিটাগং য়ের উদ্দেশ্যে। এবার তার যাত্রা বিমানে। সন্ধ্যার আগেই সে বাসায় হাজির। ফরহাদ এলে আন্টি চলে গেলেন। কাজকর্ম যা ছিলো আগেই সম্পাদন করে রেখেছেন। ফরহাদ এখনো মলির সাথে তেমন একটা কথাবার্তা বলে না। রাতে ফরহাদ খাবার এনে টেবিলে রাখলো। অত:পর রুমে এসে দেখলো বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে। মলি বাথরুমে। সে বাচ্চাদের দুপাশে কোল বালিশ রেখে সোফার রুম থেকে টিটেবিল নিয়ে এলো। তার আর মলির খাবার এনে আবার টি টেবিলে রাখলো। মলি দেখে বললো,
– আমি এখন খাবো না। মাগরিবের একটু আগে খেয়েছি। আপনি খেয়ে নিন।
ফরহাদ তাকালো তার দিকে কিন্তু কিছু বললো না। মলি তার তাকানোর ভঙ্গি দেখেই বললো,
– পেট ভরা থাকলে খাবো কি করে!
অত:পর ফরহাদ একা একাই খেতে লাগলো। একপাশের কোলবালিশ সরিয়ে মলি বাচ্চাদের পাশে শুয়ে পড়লো। ঘুম পেয়েছে খুব তার। হঠাৎ মনে হলো সে শুন্যে ভাসছে! স্বপ্ন দেখছে ভেবে চোখ খুললো না। আবার মনে হলো কোথাও তলিয়ে যাচ্ছে এবার চোখ খুলে ফেললো। তাকিয়ে দেখলো ফরহাদ নামক লোকটা হেটে হেটে খাটের দিকে যাচ্ছে। সে দ্রুত উঠে বসে দেখলো তার অবস্থান সোফায়! এটা কি হলো! কেন করলো এমন! ভাত খায়নি বলে! ফরহাদ এসে বাচ্চাদের পাশে শুয়ে পড়লো। বাচ্চারা যে কখন জেগে গেছে মলি খেয়ালও করেনি। খেয়ালই বা করবে কিভাবে। তারা তো কান্না করেনি! কিন্তু ফরহাদের কীর্তি দেখে মলির খুব রাগ হলো! তাকে সোফায় রেখে কি সুন্দর করে বাচ্চাদের পাশে খাটে শুয়ে আছে! মলি বিরক্তি নিয়ে সোফায়ই হেলান দিয়ে শুয়ে পড়লো। যাবে না সে তাদের কাছে। থাকুক যেভাবে ইচ্ছে! কতটা খারাপ লোক, একটা কাথাও দিয়ে যায়নি! মলি এভাবেই কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে। আর ওদিকে ফরহাদ বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। এর মাঝে একবার মলির দিকে তাকাতেই মলি বিরক্তি নিয়ে চোখ বুজে ফেললো।
একটু পরেই বাচ্চাদের একটু আধটু কান্নার শব্দ আসছে মলির কানে। কিন্তু চোখ খুলে তাকালো না সে। যাবে না সেখানে। সামলাক এবার! পরপরই মনে হলো সে আবার শুন্যে ভাসছে! নিশ্চয়ই এখন আবার ফরহাদ তাকে উঠিয়ে নিয়েছে সোফা থেকে। ফরহাদ তাকে এনে খাটে বাচ্চাদের পাশে শুয়িয়ে দিলো। মলি এমন ভঙ্গিতে আছে যেন সে গভীর ঘুমে মগ্ন। বাচ্চাদের কান্না যেন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। ফরহাদ দেখলো মলি তাকাচ্ছে না তাই মলিকে ঝাকিয়ে ডাকতে শুরু করলো।
– মলি, এই? মলি উঠো। বাচ্চারা কাদছে তুমি শুনতে পাচ্ছো না!
মলি চোখ কুচকে তাকালো তার দিকে। ফরহাদ বললো,
– অনেক্ক্ষণ ধরে না খেয়ে আছে। তোমার ক্ষুধা না থাকলেই কি ওদের ক্ষুধা আছে।
মলি তার উপর থেকে ফরহাদের হাত সরিয়ে দিয়ে একজনকে কাছে টেনে নিলো। আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
– অযথা মেজাজ দেখায় আমাকে। বিনা অপরাধেই সর্বদা শাস্তি লেখা আমার কপালে! প্রয়োজন হলেই আমার ডাক পরবে শুধু আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে ছুড়ে ফেলে দিবে। যেন খেলনার পুতুল আমি!
কথা বলতে বলতে মলির চোখে অশ্রু ভীড় জমিয়েছে। এদিকে কথাটা ফরহাদের বুকে বিধলো। শুনলো কিন্তু কিছু বললো না। অন্যজনকে কোলে নিয়ে একটু হাটাহাটি করলো রুমের মাঝেই।
বাচ্চাদের ক্ষুধা মেটাতেই মলি সোফায় চলে যাওয়ার জন্য বিছানা ছেড়ে নামতে লাগলো। ফরহাদ অন্যপাশে থেকে তার হাত টেনে ধরে বাধা দিলো। মলি তার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আবার কি! শেষ তো আমার কাজ।
ফরহাদ এক হাতে তার নিজের জায়গায় কোলবালিশ রেখে মলির পাশে চলে এলো। মলিকে খাটে শুতে ইশারা করতেই মলি বললো,
– হাত ছাড়ুন, আমি সোফায়ই থাকতে পারবো। আপনার এখানে আশ্রয় পেয়েছি আমি সেটাই তো সাত কপালের ভাগ্য!
মলির অভিমান একটু কড়া-ই হয়ে যাচ্ছে তাই ফরহাদ জোর করেই শুয়িয়ে দিলো সাথে সে-ও পেছন থেকে ঝাপটে ধরে কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো। মলি আর উঠার জন্য বৃথা চেষ্টা করলো না। চেষ্টা করে কি হবে! ফরহাদ তার হাত পা মলির উপর তুলে দিয়ে আটকে রেখেছে। সাথে চলছে অভিমান ভাঙ্গানোর খুনশুটি!
সকালে মলি গোসল করতে গেছে আর ফরহাদ বসে আছে বাচ্চাদের পাশে। বাচ্চারা কিছুক্ষণ খেলা করে ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন তাদের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আঠারো থেকে বিশ ঘন্টা কাটে ঘুমে। মলি এতোদিন পর আজ মেক্সি নামক ড্রেস ছেড়ে আবার শাড়ি পড়েছে। বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো ফরহাদ জানালায় হেলান দিয়ে দুহাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে এবং তার দিকেই তাকিয়ে আছে। খাটের দিকে তাকিয়ে দেখলো বাচ্চারা ঘুমাচ্ছে। মলি মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এলো। মাথা আঁচড়াতে গেলে আয়নায় ফরহাদকে দেখলো। সে এখনো সেভাবেই পলকহীন তাকিয়ে আছে মলির দিকে! এই মুহূর্তে তার চাহনীর ধরন ভিন্ন রকম! কেমন যেন নেশা লাগানো দৃষ্টি! মলি তার শাড়ি টেনেটুনে ঠিক করে দ্রুত মাথা আচরানো শেষ করলো। অত:পর আবার বাথরুমে এলো। বাথরুমে এসে মনে হলো তার, “বাথরুমে কেন এলো!” মলি আবার বেরিয়ে গেলো। ফরহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে এখনো তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মলি রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই মনে হলো, “সেদিকে কোথায় যাবে! কিচেনে তো তার কোনো কাজ নেই! ফরহাদের ছুটির দিন হওয়ায় সে নিজেই রান্না করেছে।” তা ভেবে আর মলি বের হলো না রুম থেকে। আবার সে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো তার দিকেই দৃষ্টি! মলির অসস্তি লাগছে খুব! সে হেটে হেটে বাচ্চাদের কাপড়চোপড়ের তাকের দিকে এলো। ভাজ করা কাপড়চোপড়ই নেড়েচেড়ে আবার ভাজ করলো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো ফরহাদ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে! মলি মনে মনে বললো, ” এটা কি আদৌ কোন মানুষ নাকি রোবট! অন্যকোনো প্রতিক্রিয়া নেই শুধু দৃষ্টিতে কাজ করছে তাও আমাকেই তাক করে রেখেছে! ওফ্ফ! আমার কেমন লাগছে সেটা কি একটুও বুঝতে পারছে না! এভাবে তাকিয়ে আছে কেন!”
মলি আবার বাথরুমে চলে গেলো। অযথা দুতিন মিনিট কাটিয়ে আবার বেরিয়ে এলো। এখনো ফরহাদ তাকিয়ে আছে! ফরহাদ এবার নিজ হাতের বাধন ছেড়ে দিয়ে মুখে অস্পষ্ট হাসির রেখা ফুটিয়ে মলির কাছে এলো। মলি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফরহাদ তার হাত ধরে জানালার পাশে এনে দাড় করালো এবং ফোন নিয়ে ছবি তুলে নিলো। মলি নিজের দিকে একবার তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো আজ তাকে অন্যদিনের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে কিনা! তা না হলে ছবি তোলার কারণ কি!
মলিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ফরহাদ এবার তার মুখে স্পষ্ট মুচকি হাসির রেখা ফুটিয়ে ফোন পকেটে রাখলো। অত:পর মলিকে টেনে জানালার পাশে দাড় করিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রাখলো। মলির অসস্তি যেন মুহুর্তেই দূর হয়ে গেছে এবং ভালো লাগা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। তার মুখেও ফুটে উঠেছে মুচকি হাসির রেখা! কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই একজনের ঘুম ভেঙে কান্না শুরু হয়ে গেছে। তারা দুজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো বাচ্চার দিকে অত:পর মলি মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো আর ফরহাদ কাউকে কল করে বললো, “পাঠিয়ে দিয়েছি। কাজ করে রাখুন, দুপুরে নিতে আসবো।”
বাকিটা সময় বাসায় থেকেই দুপুরে ফরহাদ বের হয়েছে। বাসায় ফিরেছে সাথে ২/৩’ আকৃতির এক ফ্রেম নিয়ে! মলি অবাকই হলো, কেননা সেদিনও এক ফ্রেম নিয়ে এসেছে, আজও আবার একটা নিয়ে এসেছে! এটা দিয়ে কি করবে শুধু শুধু! বাচ্চাদের দোলনায় রেখে ফরহাদ মলিকে এনে দাড় করালো দেয়ালে টানানো সেই সাদা ফ্রেম বরাবর। অত:পর আজকে আনা ফ্রেমটা সাদা ফ্রেমের পাশে টানিয়ে দিলো। মলি এবার আরও বেশি অবাক! কেননা আজ আনা ফ্রেমের মধ্যে তার ছবিটা বড় করে আটকানো। যেটা আজ সকালে তুলেছে! এদিকে ফরহাদ সাদা ফ্রেম থেকে টিস্যুর আবরণ তুলে নিলো আর দৃশ্যমান হলো এক চমৎকার দৃশ্য! সেটাতেও মলির ছবি! কিন্তু সেটা ছিলো বিয়ের আগের ছবি! তোলা হয়েছে যখন সে বাগানে কাজ করছিলো! ফরহাদ তার কাজ শেষ করে সোফা থেকে নিচে নেমে দাড়ালো। ফরহাদ কেন দুটি ছবির ফ্রেম পাশাপাশি আটকে দিয়েছে সেটা বুঝতে মলির খুব কম সময়ই লেগেছে। ছবি দুটির মধ্যে বেশ তফাত রয়েছে! আগের ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে যে এটা কোনো এক বস্তির অগোছালো, অপরিচ্ছন্ন মেয়ে! আর আজকের তোলা ছবিতে দেখাচ্ছে কোন এক বিত্তশালী ও মার্জিত মেয়ে। যে কিনা সর্বদা সৌহার্দপূর্ণভাবে চলাচল করে। মলি খুবই অবাক হচ্ছে। সে তার নিজের দিকে একবার তাকাচ্ছে আবার ছবি দুটোর দিকে! আগের চেয়ে তার স্বাস্থ্য অনেকটা ভালো হয়েছে, আগে ছিলো জীর্ণশীর্ণ আর এখন পরিপূর্ণ অর্থাৎ পারফেক্ট! আগে ছিলো শ্যামাকালো পেত্নী আর এখন ফর্সা ধবধবে! এতোটা পরিবর্তন কিভাবে সম্ভব! তার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! সবটাই কি তাহলে ফরহাদের কেয়ারনেস! সে এতোকিছু ভাবতে ভাবতে ফরহাদের কাছে এগিয়ে এলো এবং ফরহাদের হাত টেনে নিয়ে তার হাত পাশাপাশি রেখে দেখলো সে ফরহাদের মতোই ফর্সা! এতোটা ফর্সা কবে হলো, সে তো খেয়ালই করেনি! ফরহাদ তার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে। মলি উৎফুল্ল হয়ে ফরহাদকে বললো,
– আমি এতো ফর্সা হয়ে গেলাম কেন?
– ফর্সা হয়ে যাওনি, ফর্সা আগেই ছিলে কিন্তু যত্ন ছিলো না। যত্নের অভাবে ছিলে পেত্নী!
– হুহ্!
মলি খুশিতে একটু ভেঙচি কেটে বাচ্চাদের কাছে এসে বললো,
– তোরা তোদের বাবার মতোই শুধু ফর্সা হসনি, মায়ের মতোও ফর্সা হয়েছিস! তোদের মা-ও ফর্সা!
কথাটা বলে মলি অল্প শব্দে হিহিহি করে হাসলো। সেই হাসি দেখে ফরহাদ তার মুখে হাসি ফুটিয়ে বাচ্চাদের কোলে নিতে নিতে বললো,
– হুহ্! ফর্সা হয়ে গেছে! কার যত্নে ফর্সা হয়ে গেছে তার আর খবর নেই!
– আপনি দুজনকে একসাথে নিলে আমি নিবো কাকে!
– আয়না দেখেই তো সময় পাড় করবে, বাচ্চাদের নেওয়ার সময় হবে নাকি!
– আমি আয়না দেখেছি একবারও! শুধু বেশি বেশি! আমার কাছে একজনকে দিন।
– ডাক্তার পুরো একমাস বেড রেস্টে থাকতে বলেছে। একমাস হয়নি এখনো।
বাচ্চাদের একসাথে কোলে নেওয়া ফরহাদের যেন অভ্যাস হয়ে গেছে! মলিকে আর কোলে নিতে দিলো না। তাই মলি দাড়িয়ে দাড়িয়েই ফরহাদের কোলে থাকা বাচ্চাদের সাথে হাত নেড়ে কথা বলে খেলছে সাথে যেন বাচ্চারাও তার সাথে তাল মিলিয়েছে। আর ফরহাদ তাদের তিনজনকেই দেখছে।
.
.
ভয় পেয়েছি আমি!😵😵 তাই করলাম না আজ সবার আগে মন্তব্য! 😅 😅
যাইহোক, বাচ্চাদের নাম পছন্দ হয়েছে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here