ছায়া নীল পর্ব-১৮

0
189

ছায়া নীল!

১৮.

সৌরভ বলল
– ঘুম আসছে না?
– নাহ।
ও মুচকি হাসলো। এই মুহূর্তে ওকে খুব ভালো লাগছে। কেনো যেন মন বলছে ও আমার সাথে খারাপ কিছু করতে পারেনা।
– আজকে ঘুমালে তোমার স্বপ্ন কেমন হবে আমি বলতে পারবো।
– ভবিষ্যৎ জানো টানো নাকি??
– নাহ অনুমান। স্বপ্নে বাবাকে বা মাকে দেখবা। কান্দাকাটির স্বপ্ন মূলত।
– কীভাবে বুঝলে??
– আজকে তোমার বিয়ে হয়েছে। বাবা কোথায় গেছে সেটা জানো না। মার কথা তো বাদ দিলাম। আর তোমার স্বপ্ন দেখার অভ্যাস টা পুরাতন।
– তুমি শিওর কীভাবে??
– আমি শিওর কখন বললাম? হতেও পারে নাও পারে।
– যাও ঘুমাবোই না।
– সত্যি??
– হ্যা, আমি তোমার মতো মিথ্যা বলি না।
– আমি এটাই চাচ্ছিলাম। চাচ্ছিলাম দুজনে রাত জেগে অনেক গল্প করবো কিন্তু তোমার শরীরের যে,অবস্থা তার উপর তুমি আমার উপর কিছুটা রেগে আছো তাই বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।
– আমাদের গল্প করার কিছু আছে??
– না থাকলে দুজনে সারারাত একে অপরের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো।
আচ্ছা, আমার চেহারা তোমার ভালো লাগে??
– তোমার ছায়া ভালো লাগে আর তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে ভালবাসা মানে তোমার সকল দোষগুণ সব কিছুকে ভালবাসা।
– যুক্তি আছে। তবে সত্যি কথা বলতে আমি তোমার চেহারার প্রেমে পড়েছিলাম।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে…..
– কী মনে হচ্ছে??
– তোমার রূপ যেমন আছে ঠিক তার পাশাপাশি খুব রূপবতী একটা মন আছে। সেটার প্রেমে পড়ছি আমি।
স্বাভাবিক ভাবে সুন্দরী মেয়েদের মন এতোটা রূপবতী হয়না। তুমি ব্যতিক্রম। আজ মনে হচ্ছে সেদিন কার ব্রেকাপ টা হওয়া জরুরী ছিলো।
জানো, আমাদের জীবনে অনেক ঘটনা ঘটে যেটা আমরা চাই না। কিন্তু ঘটে ঠিকি তখন আমরা ভাগ্যকে দোষারোপ করি। তখন যদি জানতাম তোমার মতো একজনকে পাবো তাহলে তখন কষ্ট পেতাম না।
– এতো কথা বলতে পারো??
– হ্যা পারি।
সৌরভ বলল
– আমি এতো বেশি কথা বলতে পারি যে, মাঝেমধ্যে মনে হবে আমি একজন শিক্ষক। শিক্ষকসম্প্রদায় এমন এক সম্প্রদায় যারা প্রচুর কথা বলতে পারে।
– তুমি ঘুমাও।
– আচ্ছা শারলিন একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখবা??
– নাহ।
– বিয়ের শাড়ীটা একটু পড়বা?? মাত্র ৫ মিনিটের জন্য।
– নাহ।
ও আমার হাত ধরে বলল
– আমাদের মাঝে রাগ, অভিমান চলছে কিন্তু ভাল তো বাসি একে অপরকে!আজকে কিছু সময়ের জন্য রাগ, অভিমান টা ভুলে যাও না।
– তুমি যা করেছো সেটা ভুলে যাওয়ার মতো না।
– কিছুক্ষণের জন্য? একসময় তো আমাদের মাঝে এসব ছিলো না। মনে করো এখন সেই সময় টা চলছে। ভাবো অনেক পিছিয়ে গেছে সময়।
– কীভাবে? মাথা খারাপ নাকি তোমার?তুমি যা করেছো আমি যদি তোমার সাথে করতাম তাহলে তুমি আমাকে মেনে নিতে পারতে??
– হ্যা পারতাম কারণ ভালবাসি।
– তুমি কোন কথাটা সত্যি বলো আর কোনটা মিথ্যা বলো আমি বুঝিনা। এই বলো ভালবাসি আর এই বলো যে ভালবাসিনা।
সৌরভ আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হোটেলের রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ও চলে যাবার পর কেনো যেন মনে হলো রিকুয়েস্ট টা রাখলে কী এমন হতো? সত্যি বেশি করে ফেললাম। বিয়ের দিন শাড়ী না পড়লে পড়বো কবে? কাটা হাতেও তেমন ব্যথা নেই। লাগেজ খুলে শাড়ীটা বের করলাম। অনেক বেশি সুন্দর একটা শাড়ী। গাঢ় গোলাপি শাড়ী, পুরো শাড়ীতে লতাপাতার নকশা। আমি শাড়ী তেমন ভালো চিনি না। হয়তোবা বেনারসি কাতান হবে। আমাকে গোলাপি রঙ টা ভালো মানায়। গহনাগাঁটি যা দেখলাম তাতে মনে হলো ওর পছন্দ ভালো।
ছায়া, ব্লাউজ সাথেই ছিলো। শাড়ী কোনোরকম পড়লাম। এতো ভার শাড়ী একা পড়া কষ্ট আর ফাজিল টা গাল ফুলিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।
কোনোরকম পড়লাম শাড়ীটা। গহনাগাঁটি যা আছে সব পড়া সম্ভব না। গলার হার, হাতের চুড়ি আর কানে দুল পড়লাম। চুলের অবস্থা করুণ। খুব কষ্টে নিজের আয়ত্তে আনলাম।
প্রায় ১ ঘণ্টার মতো লাগলো। ফাজিলটা এখনো এলো না।
রুমের লাইট অফ করে দিয়ে বিছানার উপর ঘোমটা টেনে বসলাম।
দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম। অন্ধকারে ওর ছায়া দেখা যাচ্ছে। চিরচেনা সেই ছায়া। যার জন্যে আমি নিজেকে তুচ্ছজ্ঞান করেছি।
লাইট জ্বালানোর পর ঘোমটার ভেতর থেকে দেখলাম ও আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আবার লাইট অফ করে দিলো।
অন্ধকারে ওর ছায়া দেখতে পারছি। কিছু একটা খুঁজছে।
তারপর ও মোমবাতি জ্বালিয়ে হাতে নিয়ে বিছানার উপর উঠে এলো। এক হাতে মোমবাতি নিয়ে আরেক হাত দিয়ে ঘোমটা খুললো।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ওর চোখের দৃষ্টি আমার চোখে আবদ্ধ হয়ে গেলো।ওর দৃষ্টিতে মুগ্ধতা, বিস্ময়, প্রীতি, অভিমান একসংগে খেলা করছে।
আচ্ছা একজন মানুষের চোখে একসাথে এতো কিছু খেলা করতে পারে?

আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। ও বলল
– চোখ কেনো নামিয়ে নিলে ? কাটুক না এইরাত চোখের জগতে।
– বোকা চোখের আবার জগত হয় নাকি?
– হয়তো। কেনো আমার চোখে কিছু কি দেখতে পারছো না?
– হ্যা পারছি।
– সেটাই তো জগত।

চলবে……!

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here