#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ২৪
#Lamyea_Chowdhury
শায়েরী তবুও সিদ্ধান্ত নিলো সে নক্ষত্রের সাথে দেখা করবে। লিফ্টে চলাকালীন’ই সে নক্ষত্রকে একের পর এক কল করলো। গ্রাউন্ড ফ্লোরে পায়চারী করতে করতেও ফোন দেওয়া অব্যাহত রাখলো। কিন্তু, ফলাফল সেই শূণ্যই। নক্ষত্র বারংবার কল কেটে দিতে লাগলো। এমনকি একসময় ফোন বন্ধও করে দিলো। চরম অসহায়ত্ব, দ্বিধা, আর উৎকণ্ঠা নিয়ে শায়েরী শেষ পর্যন্ত প্রহরকে ফোন করলো। প্রহর তখন এক মোটা সায়েন্স ফিকশন বইয়ে ডুবেছিল। ফোন বেজে উঠতেই সে বিরক্তবোধ করলো। চোখ মুখ কুঁচকে মোবাইল স্ক্রিণে তাকাতেই তার চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে উঠল। শায়েরী আপি ফোন করেছে! উফ্ ভাবতেই তার আনন্দে নেচে উঠতে মন চাইল।
সেই যে শায়েরী রেস্টুরেন্ট থেকে ক্ষত বিক্ষত হাত নিয়ে বের হলো তারপর আর প্রহরের সাথে যোগাযোগ নেই। প্রহর অসংখ্যবার শায়েরীকে ফোন দিয়েছে। কিন্তু শায়েরী একবারো ফোন ধরেনি। প্রহর ভীষণ ভীষণ অভিমানী হয়ে উঠেছিল এতদিনে। কিন্তু শায়েরীর একটা ফোনে তার অভিমানের পাহাড় গলে জল হয়ে গেল। সে বিগলতি গলায় বলল, “আপি, আপি, আপি! তুমি ফোন করেছ! কেমন আছো তুমি? আমাকে তুমি একটুও আদর করো না, একটুও ভালোবাসো না। তোমার কাছে দাভাই শুধু বড়। দাভাই’ই তোমার সবকিছু। আমি তোমার কেউ না, কেউ না!”
শায়েরীর কানে যেন এসবের কিছুই ঢুকলো না। সে আছে তার তালে। অস্হির হয়ে বলল, “ভাই কোথায় প্রহর? আমার খুব খুব জরুরী দরকার। নক্ষত্র ভাইকে কতবার করে ফোন দিচ্ছি কিন্তু ভাই ফোন বন্ধ করে বসে আছে। তুমি একটু ডেকে দাও না ভাইকে।”
শায়েরীর ব্যাকুল কণ্ঠে আকুতি ঝরে ঝরে পড়ছে। কিন্তু প্ররের ভীষণ বিরক্ত লাগলো। সে ইনিবিনিয়ে ইচ্ছে করেই শায়েরীকে বলেছিল যে, দাভাই’ই তোমার সবকিছু। কিন্তু শায়েরী সেকথায় পাত্তাই দিলো না। বরং জরুরী এক দরকারে এখন দাভাইকে চাই তার। প্রহর মনে মনে তেঁতে উঠে বলল, “কেনরে ভাই? সবসময় দরকারে, প্রয়োজনে কিংবা অভিযোগেই কেন আমার দাভাইকে তোমার চোখে পড়ে? কেন শুধু জরুরী দরকারেই তাকে চাই তোমার? আমার দাভাই কি দমকলবাহিনী যে জরুরী ভিত্তিতে তাকে তোমার চাই! তোমার কার্বন-ডাই- অক্সাইডের আগুনের লাভা নিভাতে কেন সে ছুটে যাবে তোমার কাছে? তুমি বরং অক্সিজেনের জন্য মানুষ যেমন তড়পায় তেমন তড়পিয়ে আমার ভাইয়ের কাছে ছুটে এসো। একটু অন্যচোখে, আলাদাভাবে, একান্ত কিছু অনুভূতি নিয়ে খুঁজতে পারো না আমার দা’ভাইকে? যত্তসব!”
কিন্তু মুখে এসবের কিছুই সে বলল না। শান্তস্বরে কণ্ঠে অসহায়ত্ব ঢেলে বলল, “আপি, তুমি তো জানোই দাভাই কেমন। আমি যতই বলি না কেন কোনো কাজ হবে না। সে উল্টো আমাকে বকে দিবে।”
শায়েরী তারপরেও বলল, “আপির যে খুব দরকার! একটাবার একটু বলে দেখো না। আপি তোমাকে পরের মাসে তোমার ভীষণ পছন্দ হবে এমন একটা বই কিনে দিব।”
প্রহর মাথা চুলকে বলল, “বই লাগবে না। তুমি বলো কি বলতে হবে।”
“তুমি বলবে, আপি তোমার সাথে দেখা করতে চায়। খুব জরুরী কথা বলবে তোমায়।”
জরুরী শব্দটা শুনেই প্রহর মুখ বাঁকালো। কিন্তু একটা বুদ্ধি আসায় ঝট করে তার চোখজোড়ায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। নরম গলায় বলল, “আপি এক কাজ করো না। তুমি বরং বাসায় চলে এসো। মা তো বাসায় নেই। মা আজ বিকেলের ফ্লাইটেই নেপাল চলে যাচ্ছে। এতক্ষণে বোধহয় এয়ারপোর্টে পৌঁছেও গেছে।বাসায় এসে পড়লে দাভাই আর ব্যস্ততা দেখিয়ে তোমাকে এড়াতে পারবে না। বুঝতে পারবে সত্যিই সত্যিই ভয়ানক কোনো ব্যাপারস্যাপার ঘটেছে।”
শায়েরী নিষেধ করতে গিয়েও থমকে গেল। ভাবলো খেচর ভাইয়ের যা ভাব! বাসায় গিয়ে উনার সাথে এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় আর নেই। তাছাড়া, ওই জাঁদরেল মহিলা যখন নেই তখন যাওয়া যেতেই পারে। খানিক দ্বিধাগ্রস্তও হয়ে পড়ল। মামানী নেই এখন বাসায় যাওয়া কি ঠিক হবে? তিলকে মানুষের তাল বানানোর স্বভাব।
প্রহর ফোনের ওপাশে কানে মোবাইল চেপে রুদ্ধশ্বাসে শায়েরীর হ্যাঁ শুনবার অপেক্ষায় ছিল। তাই শায়েরীর জবাবের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে প্রহর আর নিজের উৎকণ্ঠা চেপে রাখতে পারলো না। অস্হির হয়ে বলল, “কি হলো? আসবে কিনা বলো আপি!”
শায়েরীর চিন্তিত হয়ে বলল, “মামা কি বাসায় আছেন?”
প্রহর চট করে মিথ্যা কথা বলে ফেলল। “হ্যাঁ বাবা বাসায়।”
শায়েরী কিছুটা স্বস্তিবোধ করল। বলল, “ঠিক আছে আমি সন্ধ্যার পর আসছি। এখন টিউশনিতে যাচ্ছি। ফিরবার পথে তোমাদের বাড়ি হয়ে বাসায় ফিরব।”
প্রহর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ইয়েস ইয়েস করে উল্লাসে ফেটে পড়ল। শায়েরী ততক্ষণে মোবাইল রেখে দিয়েছে। প্রহর চোখের চশমাখানা খুলে খুব ভাব নিয়ে বুকের কাছে চশমা গুঁজে বলল, “আমাদের বাড়ি বলো আপি। এটা তো তোমারও বাড়ি হবে। তাছাড়া, আজ যেতে দিল তো!”
চলবে…