#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩৫

0
355

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩৫

#Lamyea_Chowdhury
“দেখ শায়ু, আদুরীর জন্য তোকে যেতেই হবে।”
“কেন ভাই দুনিয়াতে কি মানুষের অভাব পড়েছে যে নক্ষত্র ভাইয়ের কাছেই যেতে হবে?”
মৌন হতাশ গলায় বলল, “তোদের নিয়ে আমার জ্বালা হয়েছে। একটাও আমার কথা শুনে না।”
শায়েরী মুখ বাঁকিয়ে বলল, “আসছে আমাদের গুরুমা।”
মৌন আরেকবার শেষ চেষ্টা চালাল। বলল, “আদুরী যা কান্ড বাঁধিয়েছে সেকথা তো আর জনে জনে বলা যাবে না। আমাদের এমন একজনকে দরকার যে খুবই বিশ্বস্ত এবং আমাদের আপনজন হবে। আফটার অল আদুরী একটা মেয়ে। তার এসব কীর্তিকাহিনী বাইরে ছড়িয়ে পড়লে কি কি হতে পারে ভেবে দেখেছিস? তৈমুরের কিছুই যায় আসবে না।”
শায়েরী বলল, “সব খুলে বলার দরকারটা কি আমাদের? শুধু তৈমুরের আদ্যোপান্ত খুঁজে বের করে দিতে বলব। কেন, কি কারণে এসব বলার তো কোনো প্রয়োজন দেখছি না।”
মৌন গলায় জোর দিয়ে বলল, “অবশ্যই বলতে হবে কেননা কারণ না জেনে কেউ তোকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না। তাছাড়া, আমরা তো আর কোনো প্রাইভেট ডিটেক্টিভ ভাড়া করতে পারব না। সেটা করলে নাহয় আরেক কথা ছিল।”
শায়েরীর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। চিন্তিত গলায় বলল, “তুই সায়াহ্ন ভাইকে বল না। উনি তো কত ভালো। আমার ভাইটাকে বললে তো সবার আগে আমাকেই ওয়াশিং মেশিনে ধুবে।”
শায়েরী দু’দিকে মাথা নেড়ে নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, “ধুর ভুল বলে ফেললাম। আমাকেই ওয়াশিং মেশিন বানিয়ে ফেলবে।”
মৌন বিরক্ত হয়ে মুখ থেকে চ এর মতন শব্দ বের করে বলল, “ধ্যাত তুই আছিস তোর কাপড় কাঁচা নিয়ে। সায়াহ্ন ভাইয়ার কাছে যাওয়া যাবে না এখন। গেলেই ভাব বেড়ে যাবে ওর। আমার আবার মানুষের ভাব দেখলে গা জ্বলে।”
শায়েরী ঝঙ্কার দিয়ে বলল, “আহা আর আমার বুঝি ভাব দেখতে ভালো লাগে? তুই ঐ খেচরটার ভাব যদি একবার দেখিস তাহলে বুঝবি ভাব কাহাকে বলে। নাগা সন্ন্যাসী একটা! উনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন না। পড়েন তো ভাবদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর উনার সাবজেক্টও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং না, অহঙ্কারনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।”
মৌন হামি তুলতে তুলতে বলল, “উনার সামনে তো মুখে কুলুপ এঁটে থাকিস। আমাদের সামনে এত ফরফর করে কি লাভ!”
শায়েরী কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই মৌন বই খুলে পড়তে শুরু করে দিলো। শায়েরী রাগে গজগজ করতে করতে মৌনকে একটা গাট্টা মেরে উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেল। তারপর এসে বই খুলে পড়তে বসল। আদুরী ফিরে এলো ঘণ্টা দেড়েক পর। এসেই শায়েরীকে জিজ্ঞাসা করল, “কিরে তোর পরীক্ষা নাকি? পড়তে বসলি যে?”
শায়েরী পড়তে পড়তেই মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁসূচক জবাব দিলো। আদুরী হেসে বলল, “তাই তো বলি মেডাম এত ধুমছে পড়াশুনা করছে কেন!”
মৌন হাতের ইশারায় আদুরীকে নিজের কাছে ডাকল। আদুরী মৌনর পাশে বসে বলল, “কি বলবি তাড়াতাড়ি বল। আমি এখন বিউটি স্লিপ দিব।”
মৌন কোনোপ্রকার ভূমিকা ছাড়াই আদুরীকে বলল আদুরী পুনরায় একই কাজ করলে আদুরীর বাবাকে সব বলে দেওয়া হবে। আর তওবা কেটে ভালো হয়ে গেলে কখনো বলবে না। আদুরী মৌনর কাছে ওয়াদা করে বলল, আর কখনো এমন করবে না। এমনকি তওবাও কাটল। কিন্তু মৌন নিশ্চিন্ত হতে পারল না। বিছানায় ঘুমাতেও গেল একরাশ দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে।

শায়েরীর আগামীকাল পরীক্ষা আছে তাই সে রাত জেগে পড়তে লাগল। মৌন আর আদুরী ঘুমিয়ে তখন লাশ। শায়েরীও ভীষণ অবসাদগ্রস্ত আর ক্লান্ত। ঘুমে ঢুলছে সে তবুও বসে বসে পড়তে লাগল। ঘড়িতে তখন রাত পৌনে তিনটা বাজে। শায়েরী ঘুমে প্রায় ঢুলে পড়ছিল। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়লে পড়া শেষ হবে না তাই ঘুমের রেশ কাটানোর জন্য মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুঁ মারলো। নিউজফিডে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ তার দুরুকের কথা মনে পড়ল। ভাবল ইশ্ দুরুকের ফেসবুক আইডিটা যদি জানা থাকত তাহলে কত ভালোই না হতো। সায়াহ্ন তো ইন্স্টাগ্রাম থেকে ছবি বের করে দেখিয়েছিল। শায়েরী তো ইন্সটাগ্রাম চালায় না। ফেসবুক আইডিটা যদি একটাবার জানতে পারত! শায়েরী মনোস্থির করল খুব শীঘ্রই সে ইন্স্টাগ্রাম ইন্সটল করবে। পরীক্ষাটা শুধু শেষ হোক। তারপর দুরুককে খুঁজে বের করবে। শায়েরী মোবাইলটা টেবিলে রেখে চেয়ার ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। তারপর আকাশের রূপালী থালার মতন চাঁদটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল, “তোমার কথা ভাবতে আমার এত ভালো লাগে কেন দুরুক? তুমি এত দারুণ কেন বলো তো।”
শায়েরী বারান্দার গ্রিলে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে রইল। ঝিরিজিরি হাওয়া বইছে চারিদিকে। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকছে কোথাও। শায়েরীরএই মুহূর্তে একটা গান বারবার মনে পড়ছে। শায়েরী গুনগুন করে একসময় গানটা গাইতে শুরু করল।
“আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারাদিন।
আজ ঐ চোখে সাগরের নীল…”
গানেরর মাঝেই শায়েরী আচমকা চোখ মেলে তাকাল, গান গাওয়া বন্ধ করে দৌড়ে ঘরে গেল। তারপর মোবাইল এর লক খুলে ফেসবুকে দুরুক খান লিখে সার্চ দিলো এবং সাথে সাথে দুরুকের আইডি পেয়েও গেল। ইন্স্টাগ্রাম আর ফেসবুক আইডি একই নামে খোলা। অনেকেই এমন করে। এতক্ষণ কেন এটা মাথায় এলো না? শায়েরী উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে মোবাইল হাতে নিয়ে পাশের ঘরে চলে গেল। তারপর দরজা আটকে দুরুকের আইডি দেখতে লাগল। প্রোফাইল পিকের ছবিটা দেখে শায়েরী এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেল যে একটানা অনেকটা সময় সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইল সে। চোখের পলকও ফেলতে ভুলে গেল। শায়েরী তৎক্ষণাৎ একটা কাজ করে ফেলল। নতুন একটা ফেইক আইডি খুলে দুরুককে রিকুয়েস্ট পাঠাল। আর দুরুকও সাথে সাথেই এক্সেপ্ট করে ফেলল। শায়েরী খুশিতে নেচে উঠল পুরোপুরি। তখন টুং করে একটা মেসেজ এলো মেসেঞ্জারে। দুরুকের মেসেজ!
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here