#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩৬

0
345

#ফ্ল্যাট_নাম্বার_নয়_ছয়পর্বঃ ৩৬
#Lamyea_Chowdhury

শায়েরীর মুখখানা হা হয়ে গেল। বিড়বিড় করে বলল, “দুরুক মেসেজও দিয়ে ফেলল?”
তবে মেসেজ দেওয়ার বিষয়টা শায়েরীর খুব একটা পছন্দ হলো না। বিরক্তমুখে মেসেজটা চেক করল। মেসেজে লেখা “হেই মিতা হোয়াটস আপ? ওয়ানা বি ফ্রেন্ডস আগেইন আহা? ইটস ওকে। ওয়েল, তোমার বরের খবর বলো? সে কেমন আছে? সে জানে তো যে তুমি তোমার এক্সকে রিকু পাঠিয়েছ?
শায়েরী ভ্রু কুঁচকে মেসজটার দিকে অনেক ক্ষণ তাকিয়ে রইল। মেসেজের আগা মাথা কিছুই বুঝল না সে। দুরুক তাকে কোন মিতা ভেবে বসে আছে? ফেইক আইডি খোলার সময় আর কোনো নাম মাথায় আসছিল না। ছোট বেলার “আমার নাম মিতা, চুলে বাঁধি ফিতা” লাইন দুটো ভেবেই চট করে “মিতা মিতা” লিখে আইডি খুলে ফেলেছিল। তার মানে মিতা নামের কেউ দুরুকের এক্স ছিল? ঠিক তখনই শায়েরীর মনে পড়ল সে দুরুককে সেদিন একটা মেয়ের সাথে দেখেছিল। তাও একেবারে জড়াজড়ি অবস্হায় আঠার মতন লেগেছিল। মনে পড়তেই শায়েরী কপাল চাপড়াল। নিজেকে নিজে বলল, “হ্যারে বলদী ঐ ছেলের তো গার্লফ্রেন্ড আছে। আবার এক্সও ছিল। তুই কোন দুঃখে এমন পাগল হয়েছিস? গাধী কোথাকার তুই তো বাদুরী থেকেও বেশি গাধী। বাদুরী তৈমুরকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখলে তৈমুরকে কুপিয়ে মারবে। আর তুই কিনা দুই চুইঙ্গামকে একসাথে দেখেও তিড়িংবিড়িং করতে করতে ঐ নীলচোখার কথা ভাবতে বসে গিয়েছিস? রিডিকিউলাস! তোর কি এসব করে ফিরে চললে হবে? ভালোভাবে পড়াশুনা শেষ করে একটা চাকুরী তো জোটাতে হবে। নয়তো কপালে ভাতও জুটবে না আবার নীলচোখা জামাই!”
শায়েরী মোবাইল রেখে মাথা ঠাণ্ডা করে আবার পড়তে বসল। সকালে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মৌনকে বলে গেল সে নক্ষত্রের সাথে দেখা করতে যাবে। আদুরীর কথাটা আসলেই সবাইকে বলা যায় না। তাছাড়া, নক্ষত্র ভাইয়ের চেয়ে বিশ্বাসযোগ্য আর কাউকে মনে পড়ছে না শায়েরীর। মৌন অবশ্য চমকাল না, সে যেন জানতই যে শায়েরী রাজি হবেই। এই মেয়েটার মাঝে অন্যকে নিয়ে ভাবনা বেশি। নিজে কি হারাবে, নিজেকে নিয়ে অন্যজন কি ভাববে, নিজের কতটা ক্ষতি হলো সেটা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকলেই হয়। মৌন হলে কখনই আদুরীর জন্য নিজের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সায়াহ্নের কাছে যেত না। কিন্তু শায়েরী ঠিকই যাচ্ছে। আদুরী হলেও যেত শুধু মৌনই খানিক আলাদা, একদম একার, নিজের।

শায়েরীর পরীক্ষা মোটামুটি রকমের হয়েছে। পরীক্ষা থাকায় আজ সব টিউশনি বন্ধ দিয়েছিল। তাই পরীক্ষা শেষে ফ্রি ছিল বিধায় নক্ষত্রকে মেসেজ দিলো। লিখল, “নক্ষত্র ভাই, ভীষণ বিপদে পড়েছি। তুমি যদি একটু সাহায্য না করো তবে আমার থাকার জায়গাটা নিয়ে সমস্যা হয়ে যাবে। ফোন দিলে ধরবে না বলেই মেসেজ দিলাম।”
নক্ষত্র তার বন্ধুদের সাথে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিল। টুং করে মেসেজ বেজে উঠতেই পকেট থেকে মোবাইল বের করল। স্ক্রীণে “আজু” লেখা দেখে রাগে তার মুখ তেতো হয়ে গেল। বিড়বিড় করে বলল, “এই মেয়ে পুরুষ মানুষদের চাইতেও বেশি বেহায়া। এত বড় কথা বললাম সেদিন অথচ মেয়ে লাজ লজ্জা ভুলে গিয়ে ফের যোগাযোগ করছে।”
বিপাশা নক্ষত্রের পাশেই বসেছিল। নক্ষত্রকে মোবাইল এর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে দেখে মোবাইলের দিকে ঝুঁকে এলো। তারপর “আজু” লেখা দেখেই নক্ষত্রের পিঠ চাপড়ে বলল, “আরে বলদ তোমার গারোয়ান দেখি!”
নক্ষত্র তেঁতে উঠে বলল, “তুই গাভী তোর জামাই বলদ।”
তারপর উল্টো করে পরা মাথার ক্যাপটা মাথা থেকে পাশে খুলে রেখে শায়েরীকে মেসেজ লিখল, “পৃথিবীতে তোমার মতন বেহায়া মেয়ে তো দূরের কথা, কোনো পুরুষ মানুষও আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে। আমি একটু পর বাসায় যাচ্ছি, তুমি এসে পড়ো।”
মেসেজটা দেখে শায়েরী মুখখানা হাঁড়ির মতন করে তার মামার বাসায় গেল। প্রহর তখন কলেজে। বাসায় শুধু মালা ছিল। শায়েরী ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে নক্ষত্রের অপেক্ষা করছিল। নক্ষত্র আসতেই কাঁচুমাঁচু হয়ে উঠে দাঁড়াল। নক্ষত্র ড্রয়িংরুমেরর দরজায় দাঁড়িয়েই গমগম করে বলল, “কি বলবে বলো।”
শায়েরীর আঙুলে ওড়না পেঁচিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বলল, “এখানে এভাবে বলা যাবে না। তোমার ঘরে চলো।”
নক্ষত্র চোয়াল শক্ত করে কর্কশ কণ্ঠে বলল, “ইউ নো হোয়াট তুমি একটা যা তা মেয়ে।”
তারপর গটগট করে নিজের রুমের দিকে হেঁটে চলে গেল। শায়েরী দৌড়ে নক্ষত্রের পিছন পিছন গিয়ে বলল, “আমি এখন যেখানে থাকছি সেখানে থাকা বাবদ আমার একটা টাকাও দিতে হচ্ছে না। আমার বন্ধুরাই আমরটা দিয়ে দিচ্ছে। এই বন্ধুদের মাঝে একজনের ভীষণ বিপদ ভাই। সে আমার বিপদেআপদে অামাকে যেমন করে আগলে রাখে আজ যদি আমি তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিই তাহলে আমি কি আর মানুষের কাতারে পড়ব? তুমি’ই বলো।”
নক্ষত্র দায়সারাভাবে জবাব দিলো, “তো সাহায্য করো না, আমাকে কেন বলছ? আমি কি তোমাকে আটকে রেখেছি নাকি?”
শায়েরী পিছন পিছন দৌড়াতে দৌড়াতেই বলল, “তোমাকে সাহায্য করতে হবে ভাই।”
নক্ষত্র কাঠ কাঠ গলায় বলল, “এভাবে দৌড়াচ্ছ কেন? মেয়েদের হাঁটতে হয় ধীরে সুস্হে। ফুফুর মেয়ে হয়ে কি করে যে তুমি এমনতর হলে একমাত্র আল্লাহপাকই জানে।”
শায়েরী এবার স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে বলল, “তোমার সাথে হেঁটে পারা যায় না। একটু আস্তে হাঁটো না।”
নক্ষত্র সে কথার জবাব দিলো না তবে হাঁটার গতি কিছুটা হ্রাস হলো তার।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here