ফ্ল্যাট নাম্বার নয় ছয়।পর্বঃ ৩৭
লেখকঃ লামইয়া চৌধুরী।
শায়েরী এবার নক্ষত্রের সাথে সমান তালে হাঁটতে পারছে। নক্ষত্র কোনো কথা বলছে না। শায়েরী হঠাৎ খেয়াল করল নক্ষত্রের গায়ের শার্টটা আয়রন করা। শায়েরী কণ্ঠে রাজ্যের বিস্ময় ঢেলে বলল, “ভাই তুমি আয়রন করা শার্ট পরে আছো? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”
নক্ষত্র চরম বিরক্তিতে বলল, “তুমি’ই করে দিয়ে গিয়েছিলে। তুমি এত তাড়াতাড়ি সবকিছু কি করে যে ভুলে যাও। তোমার মতন আমিও যদি সব ভুলতে পারতাম।”
নক্ষত্রের শেষ বাক্যটার সাথে একরাশ বিষাদ আর মন খারাপ মিশেছিল। শায়েরী সেটা খেয়াল’ই করল না। তার হঠাৎ নক্ষত্রের বলা চিত্র আঁকার কথাটা মনে পড়ে গেল। লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গেল তার। নক্ষত্র শায়েরীর অমন মুখখানা দেখে মনে মনে বলল, “এত যেহেতু লজ্জা তবে এলে কেন? কথাটা তো ইচ্ছে করেই বলেছিলাম যেন আর কোনোদিন আমার কাছে না এসো। তুমি এলেই আমার পৃথিবী উল্টে যায়। আমি কোনোরকম পৃথিবীকে আকঁড়ে ধরে ঝুলে থাকি। কেন যেন মনে হয় তুমি এলেই আমি পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ব। তুমি হলে আমার জীবনের মাতাল হাওয়া। যে হাওয়া অভিকর্ষ বলের বিপরীতে কাজ করে আমাকে পৃথিবী থেকে ছিটকে ফেলার ধান্ধায় থাকে সারাক্ষণ। আই হেইট ইউ।”
নক্ষত্র শায়েরীকে নিয়ে নিজের ঘরে গেল না। সে গেল বাবা- মায়ের ঘরে। শায়েরী আতঙ্কে বলল, “মামী কোথায়?”
নক্ষত্র শায়েরীকে আশ্বস্ত করে বলল, “মা নেই। মা দেশের বাইরে গিয়েছে।”
“কোন দেশে?”
“নেপাল।”
“ওহ্ আচ্ছা”
নক্ষত্র বসল বিছানায়। আর শায়েরী বসল বিছানার পাশের ডাবল সোফায়। নক্ষত্র দায়সারাভাবে বলল, “বলো তোমার বান্ধবীর কি হয়েছে?”
শায়েরী খানিক ইতঃস্তত করে বলল, “ইয়ে মানে হচ্ছে গিয়ে সে না একটা ছেলেকে ভালোবাসে।”
নক্ষত্রর দৃষ্টি খানিক সরু হলো। প্রশ্ন করল, “ছেলেটা তাকে ভালোবাসে না এইতো?” শায়েরী নড়েচড়ে বসে বলল, “কথা এটা না কথা হলো তারা দুজন দুজনকেই ভালোবাসে। তবে তারা একটা কাজ করে ফেলেছে।”
নক্ষত্র হামি তুলে বলল, “লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে? ভেরি ব্যাড। মা- বাবার চেয়ে দুদিনের ছোকড়া ছোকড়ি বেশি ইম্পর্টেন্ট হয়ে গেল নাকি?”
শায়েরী কাঁচুমাচু হয়ে বলল, “না বিয়ে করেনি।”
নক্ষত্র মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “যাক বাঁচা গেল।”
শায়েরী অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, “তারা যা করেছে এরচেয়ে বিয়ে করে ফেললে ভালো হতো।”
নক্ষত্র ভ্রুজোড়া কুঁচকে ফেলল। কপালে ভাঁজ পড়ল খানিক। অবিশ্বাসের সুরে বলল, “মানে?”
শায়েরী মাথা হেট করে মিনমিন করে বলল, “আমি সাধারণত দুপুরের দিকে বাসায় যাই না। একদিন একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে গিয়েছিলাম। আমার কাছে একস্ট্রা চাবি থাকে বাসার। সেই চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে তাদের আপত্তিকর অবস্হায় দেখেছি।”
নক্ষত্র চিন্তিত গলায় বলল, “কতটুকু আপত্তিকর?”
শায়েরী ধ্যাত বলে উঠে হাঁটা শুরু করল। শায়েরী যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে নেমে যাচ্ছিল। তখন নক্ষত্র শায়েরীর পেছন পেছন দৌড়ে এসে শায়েরীর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রাপথে বাঁধা হানলো। তারপর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে ঝঙ্কার দিয়ে বলল, “ছিঃ! তুমি এত বাজে মেয়েদের সাথে চলাফেরা করো? এমন মেয়েরা তোমার বন্ধু?”
শায়েরী করুণ চোখে তাকিয়ে বলল, “আমার বন্ধুদের নিয়ে কিছু বলবে না প্লিজ।”
নক্ষত্র আকস্মিক শায়েরীর গালে কষে চড় বসালো। দ্বিগুণ ধমকে বলল, “আজ থেকে তুমি আর ঐ বাসায় থাকবে না। তোমার জন্য আমি আলাদা জায়গা ঠিক করে দিব। গার্লস হোস্টেলে থাকবে। তোমাকে ভাড়াও দিতে হবে না।”
শায়েরী শান্তস্বরে বলল, “আম্মা বড়লোকদের কাছ থেকে টাকা নিতে নিষেধ করে রেখেছে।”
নক্ষত্র চিৎকার করে বলল, “আর বাজে মেয়েদের সাথে চলতে নিষেধ করেনি?”
শায়েরী দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “আমার বান্ধবী বাজে মেয়ে না। ভুল করে ফেলেছে একটা। ভালোবাসলে অমন একটুআধটু ভুল অনেকেই করে। আট বছর ধরে কাউকে ভালোবেসে তারপরও যদি শুদ্ধ থাকতে পারো তবে এসে বড় বড় কথা বলো।”
নক্ষত্রকে পাশ কাটিয়ে শায়েরী চলে যেতে চাইল। নক্ষত্র শায়েরীর হাত টেনে ধরে বলল, “দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমিও একজনকে ভালোবাসি। ভালোবাসার মানে আমাকে বুঝাতে এসো না।”
শায়েরী হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, “আমি আসছি। তোমার কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে। আমি এসেছিলাম তুমি একটু আমার বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড এর সম্বন্ধে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবে ছেলেটা ভালো কিনা।”
নক্ষত্র অট্টহাসি হাসি হেসে বলল, “মাই গড তোমার এখনও সন্দেহ আছে নাকি?”
শায়েরী কাতরস্বরে বলল, “প্লিজ এমন বলো না। অশুভ কথা বলতে নেই। মেয়েটা ভীষণ ভালোবাসে তাকে।”
নক্ষত্র কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, “আচ্ছা যাও ছেলেটা ভালো।”
শায়েরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “এমন করছ কেন?”
“কেন তুমিই তো বললে যে ছেলেটাকে খারাপ না বলতে তাই বললাম ভালো। এবার খুশি?”
শায়েরী কি বলবে খুঁজে পেল না। সটান দাঁড়িয়ে রইল। নক্ষত্র সিঁড়িতে বসে বলল, “তুমি প্রহরের ঘরে যাও। তোমাকে আর ঐ বাসায় যেতে দেওয়া হবে না। তোমার বান্ধবীদের ফোন করে বলো তোমার জামাকাপড় সব গুছিয়ে রাখতে। আমি এখনই গিয়ে নিয়ে আসব। যতদিন পর্যন্ত না তোমার কোনো থাকার জায়গা হচ্ছে তার আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবে তুমি।”
চলবে…