হারাতে_চাই_না_তোমায় #পর্ব-৫৩

0
651

#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-৫৩
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা

মানুষের জীবনে কখন কী হয় তা আগেই ঠিক হয়ে থাকে।সে চাইলেও নিজের ভাগ্য সে কোনোদিন পরিবর্তন করতে পারে না।খারাপ হলেও তার সাথে মানিয়ে নিতে হয় আর ভালো হলেও মানিয়ে নিতে হয়।এটাই দুনিয়ায় নিয়ম।আট এই নিয়মের জাতাঁকলে সবাইকেই পারতে।এটাই যে চরম সত্যি।
আরুর আজ বিয়ে।হ্যা বিয়ে ঠিক।ও রাজি হয়েছে।কিন্তু ছেলে কে তা ও জানে না,কী করে তা-ও ও জানে না।শুধু জানে ওর বাবা ওর যা করেছ ওর ভালোর জন্য।তাই মুখ ফুটে কিছু বলে নি।তবে আরু ওর বাবাকে বলেছিলো আগেই যেনো ওর আর আয়ানের বিষয়েটা জানানো হয়।এবং আরুর বাবা বলেছিলো সেই ছেলে সবটা শুনেই ওকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।এটা শুনে অনেকটাই অবাক হয়েছে।এইরকম কেউ আজো আছে এহ দুনিয়ায় এটাই আরু ভাবছে।আর এটাই ভাবছে।সেই ছেলে এতো সহজে সব মেনে নিলো এটার পিছনে কি কোনো কারন নেই তো?আরু ওর বাবাকে বলেছিলো ছেলের সব খোঁজ ভালোভাবে যেনো নেয়
ও বাবাও বলেছে সব খোঁজ নেওয়া হয়েছে।ও এরপর আর কিছু বলেনি।সবটা ওর ভাগ্যের উপর ছেড় দিয়েছে।আরেকটা ব্যাপার আছে,আয়ানের সাথে অনেকটা জেদের বসে ও রাজি হয়েছে।ওর ধারণা “আয়ান অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হতে পারলে আমি কেনো পারবো না”? এই ধারণা নিয়ে ওর রাজি হয়েছে।
তবে,বিয়ে হলেও আরেকটা জন্য ব্যাপার আছে।তা হলো,আজ ওর সাথে আয়ানের ডির্ভোস হবে।একটা মেয়ের কাছে এর থেকে বড় যন্ত্রণার আর মনে হয় কিছু নেই।একটা মেয়ে জানে স্বামী,সংসার,ভালোবাসা, নিজের গোছানো স্বপ্ন সব ছেড়ে দিতে কেমন কষ্ট হয়।কেউ কেউ আছে নিজের ইচ্ছেতেই সব ছেড়ে দেয়।তাদের হয়তো পাষাণ হৃদয়।কিন্তু যাদের অন্যের ইচ্ছায় ছাড়তে হয় সে বুঝে এর কতোটা যন্ত্রণা,কতোটা কষ্ট।
————-
তবে এই সেইদিনের পর থেকে আরু আর কোনো চিরকুট পায়নি।কিন্তু মাঝ রাতে যখন ওর ঘুম গাড়ো হয়ে আসে তখন ও অনুভব করতো ওর কাছে কেউ আছে।তখনই লাইট জ্বালিয়ে দেখতে নিলে কাউকে পায় না।পুরো রুম,বেলকনি সব ভালো ভাবে চেক করে আবার শুয়ে পরে।কিন্তু এই কয়েকদিনের ওর বাসার সবার আচরনে ওর সন্দেহ লেগেছে।ওর মনে হচ্ছে ওর কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছে ওর বাবা মা ভাই।কিন্তু কী সেটা আজো আরু জানতে পারেনি।এর মাঝে ইশিকারা চলে এসেছে সবাই ওর বিয়ে উপলক্ষে।ইশিকা এখন একজন গাইনোকোলজিস্ট।ওর দেশে একবারে সিফট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।শুধু ও না ওর পরিবার সহো।
———-
আরু বউ সেজে বসে আছে।এখনো আয়ান,বৃষ্টি আর আরুর যার সাথে বিয়ে হবে সে এখনো এসে পৌঁছে নি।ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সব ওদের আত্নীয় স্বজন আর যদের বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছে তারা।আর কেউ নেই।ও ভেবে পাচ্ছে না বৃষ্টি বা ওদের পরিবারের তেমন কেউ এখনো আসে নি কেনো?ছেলে পক্ষ না হয় দেরীতে আসবে কিন্তু কনে পক্ষ তো তাড়াতাড়ি আসার কথা তাহলে এখনো আসছে না কেনো?ওদের বিয়েটা সেন্টারে হবে।তাই সবাই এখানে আসবে।এটা ঠিক করেছে আয়ান।ও বলেছে ওর একটা ইচ্ছে আছে।কী সেই ইচ্ছা সবাই জানতে চাইলে ও বলে, “ওর আর আরুর বিয়েটা একই জায়গায়,একই সময়ে ও করতে চায়”। এটা শুনে প্রথমে সবাই না করলেও পরে একটা সময় সবাই রাজি হয়।
আরুর মনের ভিতর যে কেমন ঝড় হচ্ছে তা শুধু ও জানে।ওর ইচ্ছে করছে এই যন্ত্রণা থেকে মরে যেতে পারলে ভালো হতো।আরু ওর হাতের মেহেদীর দিকে তাকিয়ে আছে।হাতের মাঝে সুন্দর করে ” A” লিখা।এটা লিখে দিয়েছিলো মারিয়া।কারণ ওর হবু স্বামীর নামের প্রথম অক্ষর নাকী এটা।এটা শুনে আরু একবার ভাবে, “যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার নামটাই এখন পর্যন্ত জানলাম না।সংসার করবো কীভাবে সেই মানুষ টার সাথে”?আরু আর পুরো নাম জানার ইচ্ছে করে নি।
———-
‘বর এসেছে’, ‘বর এসেছে’। শুনে আরুর ভাবনায় ছেদ ঘটে তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখের পানিটা মুছে ফেলে।ও কেনো কাদছে।আজ তো ওর খুশির দিন।কারন নিজের ভালোবাসার মানুষের ইচ্ছে পূরণ করবে ও আজ।আজ কী চোখের পানি মানায়।না কোনো মতেই না।ও একবার গেটের দিকে তাকায়।ও ভবছে কার বর এলো?ওর হবু বর নাকী আয়ান? কিন্তু আয়ান হলে বৃষ্টি তো এখনো আসে নি।সব মেয়েরা চলে গেলো জামাই কে গেইট থেকে নিয়ে আসতে।এদিকে মারিয়া,তন্নি আর ইশিকা আরুর সামনে এসে ওর কাঁধে হাত রেখে চোখের ইশারায় নিজেকে সামলাতে বলে বর শক্ত হতে এটাও বলে।আরু ওদের দিকে তাকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে মাথা নামিয়ে ফেলে।ওরাও চলে গেলো গেইটের কাছে।
—————
আরুর পাশে বসে আছে আয়ান।হ্যা তখন আয়ান এসেছিলো বর সেজে।আরুর এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছে সত্যি আয়ানের সাথে ওর বিয়ে হবে।আবার এক দুটি ভালোবাসার মানুষ।যেখানে তাদের মনে লুকিয়ে আছে একে-অপরের প্রতি আসীম ভালোবাসা।ভালোবাসা দিয়ে নিজেদের ছোট একটা জগত,সংসার গড়ে তুলবে তারা।যেখানে কোনো কষ্ট যন্ত্রণা ওদের কাছেও আসতে পারবে না।
কিন্তু না সব সময় সবাই যা চায় তা কোনো দিনই হয়না।আরুরও আজ একই অবস্থা।কারন ওর মনে সেই আশা থাকলেও অপর পাশের ব্যাক্তির কোনো আশা নেই তাই ওদের সামনে এখন আছে আরু আর আয়ানের ডির্ভোস পেপার।আরু ছলছল চোখে মাথা নিচু করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পেপারের দিকে।ও তো সবটা ফিরে পেতে চায়।তাহলে কেনো সব ওর থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।কেনো ও চাইলেও সব আটকাতে পারছে না।ওর তো চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে ও আয়ানকে ‘ভালোবাসে’ তহলে সেই কথাটা গলার কাছে এসে কেনো আর মুখে আসছে না।আরু চোখ বন্ধ করে নেয়।একটু আগের কথাটা মনে পরছে,
একটু আগে যখন সাবই বরকে নিয়ে মাতামাতি করছিলো তখন আয়ান সবাইকে বলে
আয়ানঃ আমি বর নই।…মানে আমি এই বউয়ের বর নেই।আমার যে বউ সে আসছে এখনো রাস্তায়।তবে এই বউয়ের সাথে আমার কিছু কাজ আছে।

সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ ব্যাপারটা বুঝছে আবার কেউ কেউ না।আয়ান সবার দিকে তাকিয়ে আবার বললো,
আয়ানঃ আসলে আমি চাই আগে ডির্ভোস হোক।তারপর দু’জনেই নতুন ভাবে জীবন শুরু করি।

আয়ানের কথা শুনে আরু স্তব্ধ।আজ এতোগুলা দিন পর ও আয়ানকে দেখেছে আর আয়ান ও তাই কিন্তু আয়ান তো একবারো ওর দিকে ফিরেও তাকালো না।ওর কী তাহলে এখন আয়ানের জীবনে কোনো মূল্যই নেই।আর ভালোবাসাও নেই।পরে আবার তাছ্যিলের হেসে মনে মনে ভাবে, যদি মূল্য থাকতো তাহলে ওকে ছেড়ে দিতো না,নতুন ভাবে ওকে ছাড়া বাঁচার আশাও করতো না।আর ভালোবাসা নেই বলেই ওকে ছাড়তে বিন্দু পরিমান কষ্ট নেই ওর মনে।আমিই কী যে আমাকে ভালোবাসে তার জন্যই আশায় ঘর বাধি।
আরু এসব ভেবে নিজেকে শক্ত করে সাবইকে বলে,
আরুঃ সমস্যা নেই এখনই ডির্ভোসের ব্যবস্থা করুন।

ওর কাথায় সবাই আর কিছু না বলে কাজে লেগে পরে।
পাশ থেকে মারিয়ার আলতো ধাক্কায় আরু হুস ফিরে।
ও সামনে তাকিয়ে দেখে উকিল ওকে পেপারে টা এগিয়ে দিয়েছে।আরুর হাত কাঁপছে।ও কাঁপা কাঁপা হাতে পেপারটা হাতে নিতে গেলে হটাৎ করেই সব অন্ধকার হয়ে গেলো।হটাৎ এমন হওয়াতে সবার মুখে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।কেউ সেন্টারের ম্যানেজারকে ডাকতে নিলেই আবার লাইট চলে আসে।সবাই চুপ হয়ে যায়।উকিল ও আরুর দিকে পেপার আর কলম এগিয়ে দিলে ও কাঁপা কাঁপা হতে ধরে।ও যখন সাইন করতে যাবে তখন মনে হয় ওর নিশ্বাস আটকে আসছে।এখনই ও মারা যাবে।এমন পরিস্থিতি কেনো হচ্ছে ওর।পাশ থেকে ইশিকা ওকে ধরলে আরু যেমন ছিলো তেমন ভাবেই সাইন করে দেয়।সাইন করার পর কলমটা হাত থেকে পরে যায়।ওর শরীর যেনো অবস হয়ে আসছে।চোখ বন্ধ করে দু’ফোটা পানি ফেললো।এর উকিল আয়ানের দিকে পেপার বাড়ালে আয়ান তাড়াতাড়ি সাইন করে দেয়।
সাইন শেষ হতেই আয়ান উঠে দাঁড়ায়।আর বলে,
আয়ানঃ বৃষ্টি যেহেতু এখনো এসে পৌঁছে নি তাহলে আমি পরে আসছি।

আয়ান চলে গেলো।আরুর আর কোনো খেয়াল নেই।
————-
আয়ান যাওয়ার ঠিক ২/৩ মিনিট পর ‘বর এসেছে’ শুনল সবাই দৌড় লাগায়।এবার সত্যি বর এসেছে।কিন্তু সেদিকে আরুর হুস নেই।ও মাথা নিচু করে বসে আছে।সব কেমন বিষাদ লাগছে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে।অন্য কাউকে বিয়ে করার চেয়ে মরে যাওয়াও ভালে।আয়ানের জায়গা ও কাউকে দিতে পারবে না।কোনোদিন না।
এখন সময় এলো সেই কাঙ্ক্ষিত মূহুর্তের।আরু হয়ে যাবে এখন অন্য কারো।
কাজী ওকে কবুল বলতে বলছে।আরু ভাবছে এই বিয়ে ও করবে না।আয়ান করুক আর ও নাহয় সারাজীবন আয়ানের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবে।আরু মাথা তুলে “না” বলতে যাবে তখন দেখে ওর বাবা মা কতো খুশি।আরু থমকে গেলো।ওর কী উচিত হবে ওর বাবা মা’কে কষ্ট দেওয়া।সব বাবা মা’ই তো ভলো চায় সন্তানের আর সন্তান ও চায় যে কোনো মূল্যে তার বাবা মা’কে হাসি খুশি দেখতে। আর এখানে যাদি আরুর জন্য ওট বাবা মা খুশি হয় তহলে ও রাজি বিয়েতে।
এটা ভেবে আরু মাথা নিচু করে “কবুল” বলে দেয়।তারপর আর কি হয়েছ,কে কী বলেছে,করেছে তা আরু কিছু জানে না বা জানতে চায় না।
————-
গাড়ি এগিয়ে চলেছে আরুর নতুন ঠিকানায়।সেখানে ওর জন্য কী অপেক্ষা করছে ও নিজেও জানে না।ওর যখন বিদায় হবে তখন আরুর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানিও পরেনি।ও পুরো পাথরের মুক্তি হয়ে গিয়েছিলে ওকে দেখলে সবাই বলবে যার ভিতরে নেই কোনো অনূভুতি,নেই কোনো আবেগ।যেনো ওকে যেভাবে নাচাবে ও সেভাবে নাচবে।আরুর এমন রূপ দেখে ওর মা নিজেকে শান্ত রাখতে পারেনি।কাঁদতে কাঁদতে উনি সেন্সলেস হয়ে পরেছেন।পরে অনিমরা ওর মা’কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন আর এদিকে আরুর স্বামী সবাইকে আস্বস্ত করে আরুকে নিয়ে পারি জমায় তার ঠিকানায়।
আরু হটাৎ সিটে মাথা এলিয়ে দিলো।তা দেখে পাশের ব্যাক্তিটি আরুর মাথা টেনে কাঁধে রাখে।আরুও আগলে রাখা কাঁধ পেয়ে নিজেকে আরু গুটিয়ে নিয়ে সেই মানুষটার সাথে লেগে বসে।আরুকে এমন করতে দেখে লোকটা মুচকি হেসে আরুকে দু-হাত দিয়ে আগলে নেয়।আরুর মনে হচ্ছে এই পারফিউমের ঘ্রাণ ওর খুব পরিচিত।কিন্তু কোথায়,কীভাবে ও জানে না।আর ভাবতেও চায় না সেগুলো।তার কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমের দেশে চলে যায়।মনে হচ্ছে কতো দিন ও ঘুমায়নি।এখন ঘুমাবে আরামের ঘুম
————–
আরু হটাৎ লাফ দিয়ে উঠলো।ও তো ঘুমিয়ে পরেছিলো গাড়িতে ওই মানুষ টার কাঁধে মাথা রেখে তাহলে ও এখন কোথায়?পুরো অপরিচিত জায়গা।ওই মানুষ টা আবার ওকে বেঁচে টেচে দেয় নি তো।আরুর ভয় করছে।ও নিজের দিকে তাকালো না সব ঠিকই আছে।এবার ও আশেপাশে তাকলো একটা বড় রুমে মাঝে বেড যার উপর ও এখন বসে আছে দুইটা কর্ভাড,ড্রেসিং টেবিল,দুপাশে বেডসাইড টেবিল,একসেট সোফা,ছোট টেবিল আরো টুকিটাকি যা থাকা দরকার সবই আছে।দুটো দরজা দেখা যা একটা মনে হয় রুমের আর একটা ওয়াশরুমের।তাহলে বেলকনি নেই।শুধু একটা জানালা।কিন্তু এটা কোথায়।কোনো মানুষ নেই কেনো?ও বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।জানালার সামনে এসে জানালাটা খুলে দিলো।ঠান্ডা বাতাস বইছে।আরুর শরীরে সেই বাতাস স্পর্শ করতেই মনে হলো ওর সব খারাপ লাগা দূর হয়ে গেছে।আরু তাকিয়ে দেখলো আজ পূর্ণিমা।আকাশে থালার মতো বড় এক চাঁদ।আরু একমনে চাদের দিকে তাকিয়ে আছে।হটাৎ করে আবারো সবটা অন্ধকার হয়ে গেলো।তবে চাদের আলো এসে ঘরটা আলোকিত করছে।হটাৎ এমন আলো চলে যাচ্ছে কেনো আজ?হচ্ছে টা কী সেটাই আরু বুঝছে না।বাহিরে তাকিয়ে দেখলে ল্যাম্পপোস্টের লাইটগুলো জ্বলছে।কিছুক্ষন পর আরু শব্দ পেলো দরজা খোলার খট খট আওয়াজ।আরু দরজার দিকে তাকালো মনে হচ্ছে কেউ রুমে এসেছে।কিন্তু কে সেটা দেখা যাচ্ছে না।আরু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,
আরুঃ কে..কে ওখানে?…আরে কথা বলছো না কেনো?

খট শব্দে দরজা আবার লেগে গেলো।এবং সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো।আরু একটু না অনেকটাই অবাক এমন কাজে।হটাৎ নজর যায় বিছানায় একটা ব্যাগের আর সাথে ট্রে ভর্তি খাওয়ার দিকে।এগুলো তো এতোক্ষন ছিলো।এখন এখানে এলো কীভাবে?আরু গুটিগুটি পায়ে ব্যাগটার কাছ গেলো।
ব্যাগটা খুলে দেখে তাতে সাদা একটা শাড়ি।শাড়িটা সাদা হলেও এক কথায় অনেক সুন্দর।অন্ধকার এই শাড়ি পরে থাকলে শুধু শাড়ির সাদাটাই ভেসে উঠবে আর সেই সাথে শাড়ি স্টোনগুলো।সাথে মেচিং স্লিভলেস ব্লাউজ,সাদা কাচের চুরি চার মুঠো,আলতা,একটা কাজল,আর লাল কালার লিপস্টিক।আরু এসব দেখে পুরো হা।কে দিয়ে গেলো ওকে এসব।আর এসব দেওয়ার মানেই বা কী?হটাৎ শাড়ি ভাজে একটা কাগজ পেলো।আরু হাতে নিয়ে এপিট ওপিট করলো।এটা কী ওর জন্য?হ্যা ওর জন্যই নাহলে এখানে আসবে কেনো?আরু কাগজটা খুলে পরতে লাগলো,
ডিয়ার ওয়াইফ,
জ্বী এগুলো আপনার স্বামীর দেওয়া উপহার।আমি চাই আমার সামনে আমার বউ আমার পছন্দ মতো সেজে আসুক।বিয়ের সাজে তো সবাই দেখেছে কিন্তু এই সাজ একান্ত আমার জন্য।শুধু আমি দেখবো আর কেউ না।ওই কাজল কালো চোখে আমি আমার সর্বনাশ দেখতে চাই।ওই লাল ঠোঁট গুলোতে আমি আমার মাদকতা দেখতে চাই।ওই চুরির রিনঝিন আওয়াজে আমি আমার কানকে স্বার্থক করতে চাই।…….উহু না করতে পারবে না।তোমাকে পরতেই হবে।তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।তাই খাওয়া দাওয়া করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।সময় ৩০ মিনিট।এর মাঝে যদি রেডি না হও তখন আমি এসে নিজে হাতে রেডি করাবো।আশা করি ত তখন ভালো লাগবে না।তাই বলছি রেডি হয়ে নাও।আর একটা খাওয়াও যেনো বাকী না থাকে।যদি থাকে তাহলে তোমার খবর আছে।
লাভ ইউ।

আরু পুরো শকড।এগুলো কী লেখা।তার চেয়েও বড়কথা এই লেখা গুলো আর বিগত দিন গুলোর দেওয়া চিরকুটের হাতের লেখা পুরো এক।তাহলে কী সেই ব্যাক্তিই এই ব্যাক্তি?উফ!…মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে পরলো।আরু আর ভাবতে পারছে না কী হচ্ছে ওর সাথে এসব?আবার কাগজটার দিকে নজর গেলো।তারপর ভাবলো এখন রেডি না হলে যদি সত্যি ওই লোকটা এসে রেডি করায়।না না নিজে নিজে রেডি হয়ে যাওয়াই ভালো।আরু খেয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
——–
আরু শাড়ি পরে ড্রসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।না খারাপ লাগছে না।বরং অনেকটা সুন্দর লাগছে।আরুকে দেওয়া সেসব জিনিস আরু পরে নিলো সাথে গাড়ো কাজল আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।আরু নিজেকে যতোই রেডি করুক ও ভেবে নিয়েছে লোকটার সাথে কথা বলতে হবে।ও এই স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক মানতে পারবে না।এসব নিয়ে কথা বলবে।
আরু রেডি এখন।ও ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৩০ মিনিট চলে গেছে সাথে আরো ২ মিনিট।মানে ৩২ মিনিট কিন্তু এখনো এলো না কেনো কেউ?হটাৎ আবার সব লাইট চলে গেলো।এবার আরু ভয় পেলো না।কারণ ও বুঝল গেছে এই লেক সহজে তাকে দেখতে দিবে না।কিন্তু কেনো?
ওর কেনে ভাবনার মাঝেই লোকটা ওর চোখ বেধে দিলো কিছু দিয়ে।আরু হচকিয়ে গেলো।ওর চোখ বাঁধছে কেনো?ও বিচলিত হয়ে বললো,
আরুঃ আরে আরে চোখ বাঁধছেন কেনো? খুলুন।…আরে খুলুন চোখ।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।

লোকটা আরুর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ”হুস কোনো কথা নয়।আমি আছি সাথে”।আরুও পুরুষালী গম্ভীর কন্ঠ পেয়ে চুপ করে গেলো।কিন্তু লোকটা আরুকে অবাক করে দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।কিন্তু তাও আরু কিছু বললো না।
———
লোকটা আরুকে নিয়ে একটা রুমে ঢুকে গেলো।আরুকে কোল থেকে নামিয়ে নিলো।লোকটা ওকে নামিয়ে দরজা লক করে দিলো।আরু শব্দ পেয়ে ভয় পেলো।লোকটা যদি খারাপ কিছু করে।তারপরও নিজের সাহস জেগালো।আরুর নাকে মিষ্টি ঘ্রণ ভেসে আসছে।আরু আস্তে করে চোখের বাঁধন খুলে পিটপিট করে চারপাশ তাকালো।তাকিয়ে দেখে পুরো রুমে মোমবাতি,ফুল দিয়ে সাজানো।যার কারনে এই মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে।আরুকে যেখানে দাড়িয়ে আছে তার সামনে দিয়ে ফুলের রাস্তা বানানো।আর এই রাস্তা গিয়েছে বিছানা থেকে কিছুটা দূরে একটা ছোট টেবিলের দিকে।সেখানে টেবিলে কিছু একটা ঢাকা আছে।আরু আস্তে আস্তে হেঁটে গেলে সেখানে।টেবিলে একটা কাগজ রাখা তাতে লেখা,
“ঢকনা সরাও”
আরু কাগজের কথা মতো ঢাকনা সরালো।সরানের সাথে সাথেই আরু দেখলো একটা কেক।আর তাতে লেখা,
❤️ Happy Anniversary AruPakhi❤️

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here