#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৭,২৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
২৭
আরুঃ মানে?
অনিমঃ মানে হলো,,
অতীত,,ওইদিন তন্নির সাথে রেগে বাসায় এসে কী করবে ভেবে পাচ্ছিলো না।তন্নিকে তো বললো ওর খাঁচায় বন্দী করবে কিন্তু কী করে করবে তা বুঝতে পারছে না।তখন মাথায় এলো এই সমস্যার সমাধান।এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।অনিম চলে গেলো ওর মা’র কাছে।যেভাবেই হোক মা’কে রাজি করাতে হবে।অনিম ওর মা’র কাছে গিয়ে বললো,
অনিমঃ মা তোমাকে একটা কথা বলার আছে।
আদিরা আহমেদঃ হুম বল।কিন্তু তার আগে এটা বল তোর চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেনো?
অনিমঃ ওইটা কিছু না।তুমি আগে আমার কথা শুনো।
আদিরা আহমেদঃ বল।
অনিমঃ…………….
আদিরা আহমেদঃ কী হলো বল।চুপ করে আছিস কেনো?
অনিমঃ আমি যদি এখন একটা কথা বলি তুমি কী রাগ করবে বা আমাকে ভুল বুঝবে?
আদিরা আহমেদঃ হটাৎ এসব কথা কেনো?
অনিমঃ কারণ আছে।তুমি বলো?
আদিরা আহমেদঃ যদি তুই কোনো ভুল কাজ করিস তহলে অবশ্যই তোকে ভুল বুঝবো আর রাগ করবো।
অনিমঃ আমি একটা ডিসিশন নিয়েছি।আমার মতে এটা ঠিক।এখন তুমি আর বাবা মেনে নিলে এই বিষয়টা আগাবে।
আদিরা আহমেদঃ বিষয়টা কী সেটা তো বলবি?
অনিমঃ মা আমি বিয়ে করতে চাই।
অনিম চোখ বন্ধ করে কথাটা বলে দিলো।ও জানে ওর বাবা মা ওকে কিছু বলবে না এই বিষয়ে কিন্তু তন্নির কথার জানার পর যদি তন্নিকে মেনে না নেয়।তখন কী হবে এসব ভাবছে।
অনিমের মা অনিমের কথা শুনে পুরো অবাক।ছেলে বলে কী?বিয়ে করবে?কিন্তু কাকে?পরিচয় কী?বর ছেলে যদি নিজের পছন্দে বিয়ে করে তাহলে আমি যে আমার পুত্রবধূ পছন্দ করে রেখেছি তার কী হবে?এসব কথার ভবছে।কিন্তু নিজের ভাবনা পিছনে ফেলে গম্ভীর ভাবে বললেন,
আদিরা আহমেদঃ মেয়েটা কে?
অনিমঃ তোমরা সবাই ওকে খুব ভালো করে চিনো।
আদিরা আহমেদঃ কী?(বিস্ময় নিয়ে)
অনিমঃ হুম
আদিরা আহমেদঃ কিন্তু কে সে?আর পরিচয় কী?
অনিমঃ তন্নি।আমাদের আরুর ছোট বেলার বন্ধু।
আদিরা আহমেদ ছেলের কথা শুনে এবার যেনো আকাশ থেকে পরলেন।ছেলে কী বলছে?এটা কী সত্যি?কিন্তু কী করে হলো?ওদের দেখেতো মনে হয় না ওরা কোনো রিলেশনে আছে।তাহলে হটাৎ কিভাবে কী?কিন্তু তার ছেলেতো পুরো তার পছন্দ মতো বউ ঘরে আনছে।উনিতো নিজেই চেয়েছিলোন তন্নিকে এই ঘরের বউ করে নিয়ে আসবে।কিন্তু ছেলে মেনে নিবে কী না আর শুনলে যদি রাগ করে এই ভেবে কিছু বলতে পারে নি।কিন্তু ছেলেতো নিচে নিচে বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে গেছে।
অনিম মা’কে চুপ থকতে দেখে ভয় ঢুকে গেছে মনে।তাহলে কী মা মেনে নেয় নি তন্নিকে।যদি না হয় তাহলে তো ও বাঁচতে পারবে না।তাই অনিম সাহস জুগিয়ে আবার বলে,
অনিমঃ মা তুৃমি খুশি হও নি?
আদিরা আহমেদঃ…………
অনিমঃ আচ্ছা তোমরা খুশি না হলে আমি আর আগাবো না।তোমরা মেনে নিলেই সব হবে।
এই বলে অনিম উঠে যেতে নিলো আদিরা আহমেদ ছেলেকে ডেকে আবার পাশে বসান।তারপর বলেন,
আদিরা আহমেদঃ তুই জানিস তুই আমার মন থেকে কতো বড় একটা বোঝা নামিয়েছিস?
অনিমঃঃ মানে?
আদিরা আহমেদঃ মানক হলো।আমার পুরবধূ পছন্দ হয়েছে।কিন্তু এখন থেকে নয়।আরো অনেক আগে থেকে কিন্তু আমি তোকে বলতে পারি নি যদি তুই রেগে যাস তাই।কিন্তু আমি তো জানতাম না আমার ছেলে এমন করে আমাকে আবাক করে দেবে।
অনিমের খুশি এবার দেখে কে।মা মেনে নিয়েছে।অনিম খুশি হয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে।
আদিরা আহমেদ ছেলের খুশি দেখে হেসে দিলেন।তারপর বললেন,
আদিরা আহমেদঃ আচ্ছা তন্নির বাবা মা’র সাথে কথা বলবো।কবে কী করা যায় দেখি।
অনিমঃ সত্যি।
আদিরা আহমেদঃ হুম পাগল ছেলে।…..কিন্তু
অনিমঃ মেয়েটা তো এখন নেই।ওকে ছাড়া এসব করবো।ওতো মনক আঘাত পাবে।
অনিমঃ আরুর তো এখন আশাও সম্ভব না।
আদিরা আহমেদঃ কিন্তু মেয়েটাকে ছাড়া এসব করতেও মন সায় দেয় না।
অনিমঃ আচ্ছা একটা সলিউশন আছে।
আদিরা আহমেদঃ কী?
অনিমঃ আমরা এখন দুই পরিবার সহ এনগেজমেন্ট সেড়ে রাখি।আরু যখন আসবে তখন না হয় বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।ততোদিনে তন্নির পড়ালেখাও শেষ হোক।
আদিরা আহমেদঃ হুম এটাই ভালো হবে।
অনিমঃ কিন্তু মা।এই কথা যেনো আরু কিছু না জানে।
আদিরা আহমেদঃ সময় হলে ওকে সব বলবো।আর সারপ্রাইজও দেবো।
আদিরা আহমেদঃ পরে শুনলে যদি ও রাগ করে।
অনিমঃ কিছু হবে না আমি সাথে আমি সামলে নিবো।
আদিরা আহমেদঃ বেশ তোর যা ভালো মনে হয়।আমি বর তোর বাবা তন্নির বাবার সাথে কথা বলছি।
অনিমঃ হুম।
অনিমের মা চলে গেলো।তন্নির বাব মা’র সাথে কথা বলে ১ সপ্তাহ পর ওদের এনগেজমেন্ট হয়।
অতীত থেকে বেড়িয়ে এলো অনিম।(আরুরকে সব বলা হয়েছে শুধু তন্নির নাম ছাড়া)আরুর দিকে তাকিয়ে বললো,
অনিমঃ বুঝেছিস?এবার বল দোষ আমার না মা’য়ের?
আরুঃ অবশ্যই তোর।😤
অনিমঃ তাহলে মা’য়ের সাথে কেনো রাগ করলি।
আরুঃ সরি বলে দিবো🥺কিন্তু তুই এমন পাগলা আশিক হলি কবে থেকে🤨।আর এতো বড় অন্যায় করেছিা এমনি এমনি ছেড় দেবো তোকে?
অনিমঃ সব শাস্তি মানতে রাজি।বল।আর তার প্রেমে পরে সত্যি পাগল হয়ে গিয়েছি।
আরুঃ আহহহ!কী ভালোবাসা🤩আর তোর শান্তি হলো,তোর বিয়েতে আমি সব ডাবল ডাবল জিনিস কিনবো,ড্রেস,জুতা,অর্নামেন্টস সব।আর সেই সবগুলোর টাকা তুই দিবি।
অনিমঃ কী?এতো কিছু।
আরুঃ তা না হলে মাফ করবো না।
অনিমঃ বেশ মানলাম😩ফকির করে দিবি😣
আরুঃ হু😏আচ্ছা সব বললি কিন্তু আমি এখনো আমার ভবির নাম জানলাম না।
অনিমঃ নাম বলা যাবে না।কিন্তু এতোটুকু বলতে পারি তুই তাকে খুব ভলো করে চিনিস।
আরুঃ আমি খুব ভালো করে চিনি?কিন্তু কে🤔🤔
অনিমঃ এখন তো বলা যাবে না।গিয়ে দেখবি।আর এটাই তোর সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ।
আরুঃ বল না এমন করছিস কেনো?
অনিমঃ নো।
আরুঃ হু বলতে হবে না😏যা বাগ।
অনিমঃ আচ্ছা রেডি হয়ে নে।আসছি আমি।
অনিম চলে গেলো।আরুর ওর মা’র কাছে গিয়ে সরি বলে এলো।এসে রেডি হতে বসলো।আজকে ভাইয়ের বিয়ের তারিখ পরবে তাকে না সাজলে হয়।
——–
সন্ধ্যার একটু পর আরুরা বেরিয়ে পরে।আরু তখনো জানে না ও কোথায় যাচ্ছে।যেতে যেতে তন্নিদের বাসার সামনে চলে এলো।কিন্তু চিনতে পারলো না।কারণ এই ৫ বছরে রাস্তা অনেকটা পাল্টে গেছে।তন্নিদের বাসার রং ও পাল্টে ফেলেছে।তারউপর সন্ধ্যা।তাই আরুর চিনতে একটু অসুবিধা হচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে জায়গা চেনা।কিন্তু কোথায় তা মনে করতে পারছে না।আরুরা সবাই মিলে তন্নিদের বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো।ভিতরে গিয়ে আরু তন্নির বাবাকে দেখে বিস্ময়ে চেয়ে গেলো।উনি এখানে কেনো।তাহলে কী তন্নিদের কোনো আত্নীয়কে দেখতে এসেছে ওর ভাইয়ের জন্য?কিন্তু আরু মনে পরছে তন্নির সব কাজিন বিবাহিত।আর বাকী যারা আছে তার তন্নির ছোট।তাহলে কেনো এসেছে এখানে।আরু ভাবনা সাইডে রেখে তন্নির বাবাকে গিয়ে সালাম করলো।কেমন আছে জিজ্ঞেস করে ওদের বসতে বললো।আরুরা বসলে তন্নির বাবা আর আরুর বাবা মিলে গল্প জুড়ে দিলো।আরু এখনো কিছু বুঝতে পারছে না।তাই অনিমের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
আরুঃ এখানে হচ্ছেটা কী?আর তনুর বাবা এখানে কোনো?
অনিমঃ আস্তে আস্তে সব বুঝতল পারবি।এখন চুপ থাক।
আরুঃ আব….
আরুর আর বলতে পারলে না তার আগে আরুর বাবা বললো,
আশরাফ আহমেদঃ মেয়েকে নিয়ে আসুন।ওকে দেখে আজ বিয়ের পাকা কথা সেড়ে ফেলি।
তন্নির বাবাঃ হ্যা হ্যা ভাই ঠিক বলেছেন।দুজনেরর চার হাত তাড়াতাড়ি এক করতে পারলেই হয়।
আরু এবার অন্য দিকে তাকলো।ওর কথা কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না।কিছুক্ষন পর আরুর মা বললো,
আদিরা আহমেদঃ ওইতো আমার বউমা এসে গেছে।
সবাই ওই দিকে তাকলো।আরুও তাকালো।আর তাকিয়ে যাকে দেখলো তাকে দেখে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।এটা কাকে দেখছে?সত্যি দেখছে নাকি মিথ্যা?আর সত্যি দেখলে এখানে কেনো?আরুর এবার বিস্ময় নিয়ে বললো,
আরুঃ মারু তুই?তুই এখানে কেনো?আর এই পাশে ঘোমটা দেওয়া এটা কে?
মারুয়া আরুর কন্ঠ শুনে সামনে তাকালো।তাকিয়ে দেখে আরু আবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মারিয়া ভাবছে, ‘আরুর এলো কবে?আর এলোই যখন আমাদের জানালো না কেনো?’
মারিয়াঃ তুই দেশে এলি কবে?
আরুঃ সে সব পরে বলবো?তোর পাশে এটা কে?
আদিরা আহমেদঃ তন্নি।তোর ভাইয়ের হবু বউ।
এবার আরু যেনো অজ্ঞান হয়ে পরে যাবে।এসব কী শুনছে?আরুর মাথা ঘুরছে।এসব ঘটনা দেখে আর সবার কথা শুনে।ওর যেনল এসব কথা বিশ্বাস হচ্ছে না।এবার তন্নি মাথা তুলে তাকালো।আরু এবার হা হয়ে গেছে।এটাতো সত্যি তন্নি।তাহলে এসব সত্যি।আরু এবার তন্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।তন্নিকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বললো,
আরুঃ তুই সত্যি আমার হবু ভাবি?
আরুর কথা শুনে তন্নি চোখ নামিয়ে ফেললো।আরুর এবার সবার দিকে বললো,
আরুঃ এসব কথা আমাকে আগে জানানো হয়নি কেনো?
অনিমঃ বলেছিলাম তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।এটাই সেই সারপ্রাইজ।
আরুঃ কিন্তু তাই বলে…
অনিমঃ কোনো কথা না খুশি হয়েছিস কী না বল?
আরু এবার তন্নির কাছে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কী করবে আরু?তন্নিও ভয় পাচ্ছে।কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে।আরু তন্নিকে জড়িয়ে ধরে বললো,
আরুঃ আমি খুখুউউউউবব খুব খুশি হয়েছি।এতো খুশি বলে বুঝাতে পারবো না।সত্যি এটা বেস্ট সারপ্রাইজ ছিলো আমার জন্য।
সবাই আরুর কথা শুনে হেসে দিলো।
——–
অনিম আর তন্নি দাঁড়িয়ে আছে তন্নির রুমে।কিছুক্ষন আগে বড়রা ড্রয়িং রুমে বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করছে।তাই ছোটদের অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে।সেই সুবাদে অনিম আর তন্নি এক রুমে।দুজন দুজনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তন্নি মাথা নিচে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।নীরবতা ভেঙ্গে অনিম বললো,
অনিমঃ কেমন আছো?
তন্নিঃ ভলো।আপনি?(মাথা নিচে দিয়ে)
অনিম ভালো।…চোখ নামিয়ে রেখেছো কেনো?আমার দিকে তাকাও
তন্নিঃ……..
অনিমঃ আমাকে কী তুমি ভয় পাও?
তন্নিঃ ন….না
অনিমঃ তাহলে চোখে চোখ রেখে কথা বলো।
তন্নিঃ……………(নিচে তাকিয়ে চুপ করে আছে)
অনিমঃ কথা বলছো না কেনো?….বুঝেছি এভাবে কাজ হবে না।(বলেই তন্নির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো)
তন্নি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে অনিম এগিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।তন্নিও ঢোক গিলে পিছাতে লাগলো।পিছাতে পিছাতে এক সময় টেবিলের সাথে গিয়ে কোমর ঠেকে।পিছনে তাকিয়ে দেখে আর জায়গা নেই।তাই তন্নি কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
তন্নিঃ আ…আ..আপ..আপনি ক..কা..ছে আস..আসবেন না।
অনিমঃ কেনো আসলে কী করবে?
তন্নিঃ প..প্লিজ আসব..ন না।দরজা খোলা যে কেউ এ…এসে প….পর..পরতে পারে।
অনিমঃ তাহলে বলছো দরজা লাগিয়ে কাছে আসতে?(দুষ্ট হেসে)
তন্নিঃ ন..না তা ব..বলিনি।প্লিজ সরুন।
অনিমঃ কেনো সরবো?
তন্নিঃ আমার অস্বস্তি হচ্ছে।
অনিমঃ তাই?
তন্নিঃ হুম(ইনোসেন্ট ফেইস করে)
অনিমঃ আচ্ছা বেশ।
অনিম সরে আসলো।তন্নিও হাফ ছেড়ে বাচলো।তন্নি যখন বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস ছাড়ছে তখন অনিম করে বসলো এমন এক কাজ করে বসলো যা তন্নির ভাবনার ১০০ হাত দূরে।তন্নি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অনিমের দিকে।এটা কী হলো?আসলে কাহিনী হয়েছে কী?
তন্নি যখন নিশ্বাস নিচ্ছিলো তখন অনিম টুক করে তন্নির গালে ‘চুমু’ খেয়ে বসলো।সেই জন্যেই তন্নি গালে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অনিমের দিকে।তন্নিকে এভাবে তাকাতে দেখে অনিম বললো,
অনিমঃ এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমার হবু স্বামীই তোমাকে ছুঁয়েছে।
তন্নিঃ………..(চোখ নামিয়ে ফেললো)
অনিমঃ আবার চোখ নামিয়েছো?…..যাক কয়েকদিন পর ঠিক হয়ে যাবে।আজ আসি।
বলে চলে যেতে নিতেই আনার ফিরে এসে বললো,
অনিমঃ আমার ঘরের ঘরণী হওয়ার জন্য তৈরি হও জান।
বলে আরেক গালে ‘চুমু’ খেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।আর রুমে ফেলে গেলো তন্নিকে।যে এখনো আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে আছে আর অনিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
——-
অনিমের যাওয়ার পর আরিশা আর মারিয়া রুমে এলো।এসে দেখে তন্নি গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।তন্নিকে এভাবক দাড়িয়ে থাকতে দেখে মারিয়া তন্নির কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
মারিয়াঃ ওই গালে হাত দিয়ে আছিস কেন?
তন্নিঃ………
মারিয়াঃ চুপ করে আছিস কেন?বল?
আরুঃ কোনোমতে এটা নয়তো ভাইয়া তোকে মেরেছে?
মারিয়াঃ সেটাই হবে।তুই নিশ্চয়ই আবার ভাইয়াকে কিছু বলে রাগিয়ে দিয়েছিস?
আরুঃ আবার কিছু বলে মানে?আগেও এমন হয়েছিলো না কী?
মারিয়াঃ আরে তুই তো কিছু জানিস না।কতো কিছু হয়ে গেছে এদের লাভ স্টোরি তে।
আরুঃ সব শুনতে হবে তো।
মারিয়া আচ্ছা বলবো নি।
আরুঃ না এখনই বল।
মারিয়াঃ বেশ বলবো কিন্তু তার এটাকে (তন্নিকে) দেখ।এটা এমন খাম্বার মতো দাড়িয়ে আছে কেনো?(তন্নির কাধে ধরে)ওই মরে টরে গেলি নাকী?
তন্নি এবার কান্না করে দিলো।কান্না করছে ঠিক কিন্তু চোখের পানি পরছে না।মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ ওই ছেমরি ওভার এক্টিং রাখ।বল কী হয়েছে?
তন্নি গালে হাত দিয়ে বললো,
তন্নিঃ ও আমাকে…এ্যা এ্যা এ্যা
আরুঃ এই ‘ও’ আবার কে
তন্নিঃ তোর ভাই।
আরুঃ ওহ।কিন্তু ভাই তোকে কি করেছে?মেরেছে নাকী?তুই ভাইয়াকে রাগিয়ে দিয়েছিস?
তন্নিঃ মারলেও তো হতো।ও তো আমাকে কি…..
মারিয়াঃ ‘কি’ কী?…….😳তনু ভাইয়া তোকে কিস করেছে?
তন্নি মাথা নিচে দিয়ে ভ্যা করে কেদে দিলো।তন্নিকে কাঁদতে দেখে আরু আর মারিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো।একবারে দম পাটানো হাসি।ওদের হাসতে দেখে তন্নি আরো রেগে গেলো।বললো,
তন্নিঃ তোরা কথা বলবি না আমার সাথে।সবাই বেঈমান।আর সবচেয়ে বড় বেঈমান তুই(আরুকে দেখিয়ে)
আরুঃ আমি আবার কী করলাম?
তন্নিঃ কী করলাম মানে আসার আগে একবারো বলেছিস?আর এসেও এক বার যোগাযোগ করেছিস?
আরুঃ ওলেলেলে আমার ভাবি রাগ করেছ।(তন্নির গাল টেনে)
তন্নিঃ হুহ😒
আরুঃ আচ্ছা শুন,,,এবার আরু একে একে সব বলতে লাগলো কীভাবে আসা,এসে কী হলো আর ওদের সারপ্রাইজের কথা। সব শুনে মারিয়া আর তন্নি খুশি হলো।এবার আরুও তন্নিকে বললো কীভবে ওর ভইয়ের সাথে এতো কিছু হলো?তন্নি আর মারিয়াএকে একে সব বললো।সব শুনে আরু বললো,
আরুঃ আমার ভাইতো আমার ভাবির প্রেমে পুরা পাগল।
আরুর কথা শুনে তন্নি লাজুক হাসলো।মারিয়া বললো,
মারিয়াঃ আচ্ছা আরু আবার কী চলে যাবি?
আরুঃ হটাৎ এই কথা?
মারিয়াঃ কেনো জিজ্ঞেস করতে পারি না?
আরুঃ না তা পারিস।
মারিয়াঃ তাহলে বল?
আরুঃ জানি না।এখনো কিছু।পরে দেখা যাবে।
মরিয়াঃ আচ্ছা আরু তোর অতী….
মারিয়া আর বলতে পারলো না।তন্নি মারিয়ার হাত চেপে ধরলো আর ইশারা করলো না বলতে।আরু ওদের দেখে বললো,
আরুঃ মারু কী বলতে চাইছিস তুই?আর তনু তুই ওকে আটকালি কেনো?
তন্নিঃ আব…কিছু না।আ…
আর বলতে পারলো না।ওদের ডাক আসলো।বাহিরে যেতে।আরু আর কথা না শুনে বাহিরে এলো।আরুকে যেতে দেখে তন্নি আর মারিয়া দম ছাড়লো।তন্নি বললো,
তন্নিঃ এখন না।সময় হলে সব জানবেও।
মারিয়াঃ হুম।
তন্নিঃ চল।ওই রুমে যাই।
তন্নিরা বাহিরে এসে শুনে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে।যেহেতু তন্নিদের এখন এক্সাম চলছে।তাই এক্সাম শেষ হলে বিয়ে।আর সেট হলো আর ‘১’ পর।
বিয়ে নিয়ে সবাই খুশি।তন্নির চোখ গেলো অনিমের দিকে।যে এখন তন্নির দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে।তন্নিকে তাকাতে দেখে অনিম সবার অগোচরে তন্নিকে চোখ টিপ দিলো (😉)তন্নি তা দেখে লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো।আর মুচকি হাসছে।
আরুরা আরো কিছুক্ষন থেকে চলে গেলো।
চলবে.……
#হারাতে_চাই_না_তোমায়
#পর্ব-২৮
#লেখিকাঃ_উম্মে_বুশরা
[আজকে গল্প সম্পর্কে একটা তথ্য দিবো সবাই নিচের লেখাটা পরবেন]
আরুরা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।ডিনার যেহেতু করে এসেছে তাই আর খাওয়ার ঝামেলা নেই।আরু আজ অনেক খুশি কারন ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ওর ভাবি হবে।এর চেয়ে বড় খুশি আর কী হতে পারে।আরু ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে চলে গেলো।ওরা প্ল্যান করেছে কাল ওরা ওদের পুরানো জায়গায় ঘুরতে যাবে।সকাল সকাল উঠতে হবে তাই এখন তাড়াতাড়ি ঘুমানো দরকার।
অনেকক্ষন এদিকওদিক করার পরও ঘুম আসছে না।কেমন যেনো লাগছে।ফোন হাতে নিয়ে এফবি তে গেলো।কিছুক্ষন নিউজফিড ঘুরার পরও ভালো লাগছিলো না।কী করবে ভাবছে।কিছু সময় পর কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে বেলকনিতে এসে বসলো।বাহিরের মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নেওয়ার পর এখন ভালো লাগছে।আকাশে আজ তারার মেলা।আরু এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।আর ভাবছে,আবার অতীত কী ফিরে আসবে?অনেক চেষ্টার পরও সফল হতে পারে নি অতীত ভুলতে।তবে যেটুকু ভুলল্লে চলা যায় সেটুকু ভুলেছে।কিন্তু এখন এতো বছর পর যদি আবার ফিরে আসে তাহলে সামলাবে কী করে নিজেকে?….না না আমি আর সেই অতীতে ফিরে যেতে চাই না।কিছু হওয়ার আগেই আমি আবার ব্যাক করবো আমেরিকা।এই জীবনে আর কারো সাথে ও জোড়াবে না।জীবন এভাবেই চালিয়ে যাবে।একজনকে তো চেয়েছিলো নিজের সবটা দিয়ে আটকিয়ে রাখতে কিন্তু সে তাকলো কই।তাই কাউকে জড়াবে না।ও চলে যাবে।শুধু ভাইয়ার বিয়েটা শেষ হোক তারপর আমি চলে যাবো।কিন্তু এই কথা এখন কাউকে জানানো যাবে না।এই কথা শুনলে সবাই কষ্ট পাবে।
এসব ভাবছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
———-
এদিকে আরু যখন বেলকনিতে এসেছে তখন থেকে কেউ ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে।প্রায় ৫ বছর পর নিজের ভালোবাসাকে,নিজের অস্তিত্বকে দেখছে।এই মুখটি সারাদিন দেখলেও মনে হবে দেখা শেষ হয় নি।আগে থেকে চেহারায় একটা ম্যাচুরিটি এসেছে।আগে চেহারায় বাচ্চা বাচ্চা একটা ভাব ছিলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে অনেক বড় হয়ে গেছে।কিন্তু চোখের মালিকের কাছে এখনো সেই আগের বাচ্চা মেয়েটাই আছে।সেই কখন থেকে বসে ছিলো আরুকে এক নজর দেখার জন্য কিন্তু অনেকটা সময় যাওয়ার পর যখন দেখলো আরু আসছে না তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো আরুর রুমে চলে যাবে কিন্তু লোকটা,আর আরু লোকটার অপেক্ষায় কাটিয়ে এসেছ নেলকনিতে।তাই এখন দূর থকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।আরু যখন কাপে চুমুক দিচ্ছিলো তখন লোকটার এক প্রবল ইচ্ছা জাগলো,’যদি এই কাপটা আমি হতাম তাহলে এখন আরুর প্রতিটা ঠোটের স্পর্শ আমি পেতাম’।’এই ঠোঁট গুলো যে প্রচন্ড টানছে লোকটাকে।এখন তো কাপের উপরই জেদ হচ্ছে ‘কাপ টা কেনো আরুর ঠোঁট স্পর্শ করছে?যদি কেউ করার হয় তাহলে সেটা নিজে হবে অন্য কেউ না’।এইসব আবোলতাবোল ভাবনা এই লোকটার মাথায় আসছে।আর তখন থেকে মশার কামড় খেয়ে যাচ্ছে।একটা ঝোপের পিছনে ছিলো বলে কিছুক্ষন পর পর ঝোপটা লড়ছে।আর লোকটাও মশা গুলোকে ইচ্ছা মতো গালাগাল করছে।আর বলছে,’কী দিনকাল এলো আমি কী’না এই রাতের বেলা এমন ঝোপের মাঝে এসে দাড়িয়ে আছি।আর এই মশার কামড় খাচ্ছি।এতো কষ্ট করে শরীরের রক্ত বানালাম এই মশা কে খাওয়ানোর জন্য।হায় রে কপাল।থাকতাম কোথায় আর এখন আছি কথায়?সব নিজের দোষে হারিয়েছি’।এই বলে কিছুক্ষন মন খারাপ করে মশা গুলো তাড়িয়ে আবার আরুর দিকে তাকালো।কিন্তু এখন তো ভয় করছে ‘আরু তো এইদিকে তাকিয়ে আছে।সন্দেহ করলো না’কী?এখন কী করবে🙆♂️?’
এসব চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে।দেখা যাক আরু কী করে।
———–
আরু অনেকক্ষন ধরে দেখছে একটু দূরে ঝোপটা কেমন লড়েছরে উঠছে কতোক্ষন পর পর।যেহেতু লম্প পোস্টের আলো ছিলো তাই শুধু দেখেছে ঝোপটা লড়ছে আর কিছু দেখতে পাচ্ছে না।এখন আরুর ভয়ও করছে কিছুটা ভূত টুত না’তো আবার।’বাবাগো ভূত হলে তো ঘাড় মটকে দিবে এখনো বিয়ে হয়নি,বাচ্চা কাচ্চা হয়নি এতো তাড়াতাড়ি ভূতের পেটে যেতে চায় না।এখানে না থাকাই ভালো।ভূতের পেটে যাওয়ার আগে আমি রুমে চলে যাই।’
কিন্তু আরু কী ভেবে যেনো আবার ভালো করে তাকালো ‘না এখন আর ঝোপটা লড়ছে না।যাক আমার তাহলে মনে ভুল’।যাক বাবা থাকা যায় এখানে।কিন্তু চেহারা থেকে এখনো ভয়ের ছাপটা সরে নি।তাই আশেপাশে তাকাচ্ছে।
———–
আরুকে এমন ভয় পেতে দেখে লোকটা হেসে যাচ্ছে।’এখনো কেমন ভয় পায় সব কিছুতে’ এটাই ভবাছে লোকটা।আরুকে আরেকটু ভয় দেখানোর জন্য লোকটা একটা প্ল্যান করলো।যেই ভাবা সেই কাজ।
‘পকেট থেকে ফোন বের করে একটা হরর মুভির সুর দিয়ে ফোনের ফ্লাশ জালিয়ে মুখের নিচে ধরে যার ফলে লাইটের আলোটা মুখে পরলে একটু অন্য রকম হয়।’লোকটা তাই করলো।
আরুর নজর এই দিকে আসতেই আরু ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে দাড়ালো।যখন দেখলো আলোটা লড়ছে তখন খানিকটা চিৎকার করে ভৌ দৌড় রুমের দিকে।
আরুকে যেতে দেখে লোকটা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে।আর বলছে,ঠিক আগের মতো বাচ্চাই আছে।’
লোকটা অনেকক্ষন দাড়লো যখন দেখলো আরু আরু আসছে না তখন নিজের গালে নিজে একটা থাপ্পড় মপরে বললো,’কী দরকার ছিলো ওকে ভয় দেখানোর এখন তো ভয়ের চোটে আর আসবে না।দূর!মিজের পা’য়ে নিজেই কুড়াল মারলাম’
এবার লোকটা চলে গেলো।
(এই লোকটা কে?🤔)
এদিকে আরু রুমে এসে ভয়ে কাপছে।দরজা জানলা সব বন্ধ করে দিয়ে কম্বলের নিচে বসে আছে।আর ভাবছে,’এই ৫ বছরে কী ভূতেরা বাসা বাধলো না কী?যদি তাই হয় তাহলে আমি এখানে থাকবো কীভাবে?😫’
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।
————————-
সকালে আরু ঘুম থেকে উঠে ফ্রশ হয়ে নিলো।ব্রেকফাস্টের জন্য টেবিলে আসতেই দেখলো অনিম বসে আছে।ওর বাবা এখনো আসে নি।যদিও উনার এখন কোনো তাড়া নেই।অফিসে যায় না।সবটা অনিম সামলায়।তবে মাঝে মাঝে অনিম যখন সবটা সামাল দিতে পারে না তখন আরুর বাবা গিয়ে অনিমকে হেল্প করে।আরু টেবিলে বসতেই অনিমের দিকে চোখ গেলো।অনিম আরুর দিকে তাকিয়ে আছে।আরু তা দেখে একটা ভেঙ্গচি (😏) দিয়ে চেয়ারে বসে পরলো।তারপর মা’কে বললো,
আরুঃ মা নাস্তা দাও।
অনিমঃ নিজে নিয়ে খেতে পারিস না।মা’কে জালাচ্ছিস কেনো?বিয়ের পরও শাশুড়ীকে এভাবে জ্বালাবি না কী?
আরুঃ 😏😏(চুপ)
অনিমঃ বড় ভাইকে ভেঙ্গাচ্ছিস লজ্জা করে না।
আরুঃ ভেঙ্গানোর জন্য আজকাল লজ্জা প্রয়োজন তা জানতাম না।
অনিমঃ আবার মুখে মুখে কথা বলছিস?
আরুঃ আমার মুখ দিয়ে আমি বলছি।এটা মুখে মুখে হলো কী করে?
অনিমঃ এই যে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা বলছিস।
আরুঃ আমার মুখটাই এমন ত্যাড় ত্যাড়া।কী করবো বল
অনিমঃ তাই না?(চুল টেনে ধরলো)
আরুঃ আহহ!ভাইয়া ছাড়।লাগছে।
অনিমঃ এতোক্ষন কথা বলার সময় লাগে নি।
এবার আরুর মা এলো কিচেন থেকে।এসে দেখে ছেলে মেয়ের এই কান্ড।একটা ধমক দিলেন।ধমক খেয়ে অনিম ছেড়ে দিলো আরুকে।উনি দুজনকে বললেন,
আদিরা আহমেদঃ আরে থাম তোরা।কী শুরু করেছিস বাচ্চাদের মতো।
আরুঃ তোমার ছেলে আগে শুরু করেছে।
অনিমঃ না মা।তোমার আগে আমার সাথে বেয়াদবি করেছে।
আদিরা আহমেদঃ আহ!থাম।আমি জানি কে কী করতে পারে।
অনিমঃ মা,আমি শুধু ওকে বলেছি মা’কে না জ্বালিয়ে কিছু কাজ শিখ।শশুর বাড়ি গিয়ে যানো তোর জন্য আমাদের শুনতে না হয় আমরা তোকে কিছু না শিখিয়ে পাঠিয়েছি।
আরুঃ হু😏।আমি বিয়েই করবো না।
আদিরা আহমেদঃ ওমা সে কী কথা।মেয়ে হয়ে জন্মেছিস বিয়ে করবি না।
আরুঃ কেনো?মেয়ে হলেই বিয়ে করতে হবে এটা কেমন কথা?কতো মেয়ে তো আছে বিয়ে না করে দিব্যি চলাফেরা করছে।
আদিরা আহমেদঃ কিন্তু সমাজ কী বলবে?
আরুঃ এই-যে আমাদের একটা সমস্যা জানোতো।সমাজ কী বলবে সমাজ,কী করবে এটাই ভাবি।কিন্তু আমরা কিসে ভালো থাকবো কিসে খারাপ থাকবো এটা ভাবি না।সমাজ কী বলবে এটার জন্য আমরা কেনো নিজের সুখ,ইচ্ছা বিষর্যন দিবো।
আদিরা আহমেদঃ কী বলছিস তুই?
আরুঃ ঠিকি বলছি।আর বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো উঠে পরে লেগেছো কেনো?
অনিমঃ তো কী এভাবে বসে থাকবি নাকি?
আরুঃ কেনো আমাকে বসে খাওয়াতে কী তোদের সমস্যা হচ্ছে?তাহলে বলে দে আমি নিজেরটা নিজে চলাফেরা করতে পারবো।
অনিমঃ আরে আমি তা বলতে চাই নি।ভুল বুজচ্ছিস তুই আমাকে।
আরুঃ হয়েছিলো আর বলতে হবে না কিছু।
আরু উঠে দাঁড়ালো।চলে যেতে নিতেই আবার তাকিয়ে বলে,
আরুঃ আমি তন্নিদের সাথে বের হচ্ছি।কোথায় যাবো আর কখন আসবো তা-ও জানি না।
আরু চলে গেলো।
————–
আরুরা আজ এসেছে ওদের স্কুলের পাশে সেই পার্ক টাতে।এখানে এসে পা দিতেই ওর আগের সেই বিষাক্ত অতীত মাথায় লাড়া দিয়ে উঠছে।ও যতো ভুলতে চাইছে ততো যেনো আরো জেঁকে বসছে।আরুকে এমন অস্থির হতে দেখে তন্নি কিছুটা বুঝলো।আর বললো,
তন্নিঃ চল আমারা অন্য কোথাও গিয়ে বসি।
আরু জেদ নিয়ে বললো,
আরুঃ না আমি এখানেই বসবো।চল সামনে
তন্নি আর মারিয়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আরুর সাথে চললো।আরুর মেজাজ যে আজ হাই তা তন্নি জানে।কারণ এখানে আসার আগে অনিম তন্নিকে ফোন দিয়ে বলেছে আজ সকালের সব কথা।এবং ওকে যে একটু বুঝায় এটাও বললো।তন্নি শুধু ‘ঠিক আছে’ বলে কল কেটে দিলো।তন্নি এতোদিন অনিমের সাথে রাগে,অভিমানে কথা না বললেও কাল থেকে লজ্জায় কথা বলতে পারছে না।অনিমও তন্নির ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আর কথা বাড়ায়নি কল কেটে দিয়েছে।
আরুরা একটা বেঞ্চে বসে পরলো।এবার তন্নি বললো,
তন্নিঃ তুই কিন্তু আন্টি আর তোর ভাইয়াকে ভুল বুজছিস।
আরুঃ ওহহ তোর কানে খবর পৌছে গেছে।
তন্নিঃ তাই মনে কর।
আরুঃ খবর যেহেতু পেয়েছিস তাহলে তো বুজেছিস আমার রাগের কারণ।
তন্নিঃ কিন্তু তোর ভইয়া কথাটা ওভাবে বলতে চায় নি।
আরুঃ বুঝেছি আমি।আর বলতে হবে না।
কিছুক্ষন চুপ থাকার পর তন্নি আবার বললো,
তন্নিঃ আরু একটা কথা বলি রাগ করবি নাতো?
আরুঃ হুম বল।
তন্নিঃ আব…….
আরুঃ আরে বল।
তন্নি এবার একবার মারিয়ার দিকে তাকালে মারিয়াও চোখের ইশারায় বলতে বললো।আরু ওদের কাহিনী দেখে ভ্রু কুচকে এলো।তন্নি বলতে লাগলো
তন্নিঃ যদি কখনো দেখিস তোর অতীত তোর কাছে আবার ফিরে আসতে চায় তখন কী করবি?
আরুঃ মানে কী বলতে চাইছিস তুই?
তন্নিঃ আহা রাগ করিস না।বল একসেপ্ট করবি?
আরুঃ কখনো না।যেই আঘাত আমি পেয়েছি তা তোরা কখনো পাসনি।তাই আমার ব্যাপার কেউ বুঝবি না।
মারিয়াঃ আমরা না বুঝলেও তোর কষ্ট দেখে কিছুটা হলেও অনুভব করেছি।
আরুঃ পারিসনি কিছু।আমি কিসের ভিতর দিয়ে গিয়েছি তা আমি জানি।আপমান আর অবহেলা গুলো এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আর কানে বাজে।ওই গুলো কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে।না কোনোদিন পারবে না।
তন্নিঃ আমি জানি কেউ পারবে না।শুধু দূর থেকে স্বান্তনা দিতে পারবে।
আরুঃ তাহলে আর কোনোদিন বলবি না।আমি ওই অতীত মনেও করতে চাই না আর কাউকে ক্ষমাও করতে চাই না।
মারিয়াঃ আচ্ছা বেশ এসব বাদ দে এখন।
ওরা আরো কিছুক্ষন গল্প করপ চলে যায়।পার্কের গেটের কাছে আসতেই একটা বছর ৭/৮ একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো আরুর সামনে।বাচ্চাটার হাতে ছিলো অনেকগুলো বেলীফুল।ফুলগুলো দেখে আরুর মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো।আরু নিচু হয়ে বাচ্চাটাকে বললো,
আরুঃ নাম কী তোমার?
বাচ্চটাঃ মূসা।
আরুঃ বাহ খুব সুন্দর নাম তো।কিসে পরো তুমি?
মূসাঃ আমিতো পারার একটা স্কুলে টু’তে পরি।
আরুঃ বাহ! খুব ভালো তো।তোমার হাতে এই ফুল গুলো কিসের?
মূসাঃ দেখেছো ভুলে গুছি।এই ফুল গুলো তোমার জন্য।নাও।(ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে)
আরুঃ আমার জন্য? কিন্তু আমিতো এই ফুল গুলো কিনি নি।
মূসাঃ না এগুলো তোমারই।
আরুঃ না বাবু তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।এগুলো আমার না।
মূসাঃ আমাকে একটা ভাইয়া এগুলো দিয়ে বললো তেমাকে দিতে আর এটা দিতে।(একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে)
আরুঃ কোন ভাইয়া?
মূসাঃ জানি না।একটা লম্বা ভাইয়া।
মারিয়াঃ বাহ তোর নাম দেওয়াটা তো সুন্দর।লম্বা ভাইয়া😅
আরুঃ মারু চুপ কর।
মারিয়া চুপ হয়ে গেলো।বাচ্চা টাও আরুর হাতে কাগজ আর ফুল দিয়ে চলে গেলো।আরু ডেকেও আর নাগাল পেলো না।তন্নি বললো কাগজটা খুলে দেখতে।আরুও কাগজটা খুললো,
তাকে হাসলে মানায়,
কান্নাতে না।
তাকে অভিমানে মানায়,
রাগলে না।
তার হাসির কারনও আমি হতে চাই,
তার কান্নার কারনও।
সে অভিমানে কারনও আমি হতে চাই,
তার রাগের কারনও।
💕ভালোবাসি💕
চলবে……